হৃদয়ে রক্তক্ষরণ পর্ব-০৩

0
5

#হৃদয়ে_রক্তক্ষরণ
#পর্বঃ৩
#লেখিকাঃমেহের_আফরোজ

“ম্যাসেজ দেখে তো নির্জনের মাথা পুরো গরম হয়ে মনে হয় টগবগ করে ফুটতে থাকলো।কপালে চার আঙ্গুল দিয়ে স্লাইড করে গম্ভীর কন্ঠে বললো, ‘এই জ**ঘন্যতম, অ**সভ্য কাজ টা যে করেছে,তাকে কঠিন থেকে কঠিনতম শাস্তি পেতে হবে।”

“দিগন্তের সাথে কথা শেষ করে নাদিয়া ফেইসবুক থেকে ছবিগুলো ডিলিট করে দিয়েছিলো।কিন্তুু ততক্ষণে ছবিগুলো অনেকের কাছেই পৌঁছে গিয়েছে। নির্জনের কয়েকজন বন্ধু নির্জন কে হোয়াটসঅ্যাপ,ম্যাসেঞ্জারে ছবিগুলো দিয়ে বিভিন্ন ধরনের কথা বলে মজা করছে।এদিকে নির্জনের তো এগুলো দেখে রাগে মস্তিষ্ক ফেটে যাওয়ার মতো উপক্রম হয়েছে।রাতে বাসায় ফিরে নির্জন সরাসরি নিজের রুমে গিয়ে বিছানায় হাত-পা ছড়িয়ে শুয়ে পড়ে।সিলিং এর দিকে গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে ভাবতে থাকলো,’ কাজ টা কে করলো?তার কেমন শাস্তি হওয়া উচিত?উহুমম তাকে স্পেশাল পানিশমেন্ট দিতে হবে।হয়তো আমার সম্পর্কে সে কিছুই জানে না।তাইতো নির্জন খানের সাথে এতো বড় দুঃসাহস দেখিয়েছে।”

“নির্জন খান।তার যখন ১০বছর বয়স,তখনই তাকে আর তার মা কে এই নশ্বর পৃথিবীতে একা করে, পরলোকগমন করেছে তার বাবা সাজিদ খান।তারপর থেকে তারা বিভিন্ন সংগ্রামের মধ্যে জীবন অতিবাহিত করেছে।ঢাকায় বাবার পৈতৃক সম্পত্তি এবং একটি বাড়ি থাকার কারণে, সেখানেই স্থায়ী ভাবে বসবাস করছে।এখন এই বাড়িতে বসবাস করছে নির্জন এবং তার মা সায়রা বেগম।নির্জনের মা সায়রা বেগম কয়েক বছর আগেই প্যারালাইজড হয়ে শয্যাশায়ী হয়েছেন।ধীরে ধীরে তার বাকশক্তি ও লোপ পেয়েছে।এখন উনি ইশারা-ইঙ্গিতে মনের ভাব প্রকাশ করেন।তার জন্য আলাদা মেইড রাখা হয়েছে।সে সায়রা বেগমের যাবতীয় দেখাশোনা করে।কোনো একটি তিক্ত বিষয় কে কেন্দ্র করে নির্জনের সাথে তার মায়ের সম্পর্ক দৃঢ় নয়।তাছাড়া ঘর-বাড়ি দেখাশোনা এবং রান্না করার জন্য আলাদা মেইড রাখা হয়েছে।নির্জন একটা আইটি কোম্পানি তে আইটি ম্যানেজার পদে কর্মরত রয়েছে।নির্জনের হাইট লম্বা,গায়ের রং উজ্জ্বল শ্যাম বর্ণ।চেহারার গঠন সুন্দর।নির্জন চোখে চকচকে রিমলেস চশমা পড়ার কারণে চেহারার মধ্যে ইনোসেন্ট ভাব স্পষ্ট।বাহ্যিকভাবে কেউ একবার দৃষ্টিপাত করলেই অকপটে বলে দিবে, ‘যুবকটি খুব সুদর্শন এবং ভদ্র।”

“উজ্জ্বল শ্যামবর্ণের এই পুরুষ টি কে দেখলে যে কারো ভালো লাগবে।অফিসে কয়েকজন মেয়ে কলিগ তাকে প্রপোজ করেছে।কিন্তুু সে তার ভ**য়ং**কর অতীতের কথা ভেবে কাউকেই এই ছন্নছাড়া জীবনে জড়াতে চায় না।তবে তার উপস্থিত বুদ্ধি এবং অভিজ্ঞ সম্পন্ন দক্ষতার জন্য অফিসে তার বেশ নাম-ডাক আছে।”

“নির্জনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো সে আর ৫জন সাধারণ মানুষের মতো এক্সট্রোভার্ট নয়;সে ইন্ট্রোভার্ট(অন্তর্মুখী) টাইপের।প্রয়োজন ছাড়া বেশি কথা বলেনা।সবসময় গম্ভীর হয়ে থেকে কিছু একটা ভাবে।অফিসের অন্যান্য কলিগ তার সাথে বন্ধুত্বমূলক সম্পর্ক গড়তে চেয়েছে।কিন্তুু সে কারো সাথেই অফিসিয়াল কাজের বাইরে কথা বলে না।তাই ধীরে ধীরে সবাই তাকে অ্যাভয়েড করে চলে।এতে তার আরও বেশি ভালো লাগছে।জীবন টা কে একা উপভোগ করতেই সে বেশি পছন্দ করে।”

“নির্জনের ছোটবেলার বেস্ট ফ্রেন্ড দিগন্ত। আর বাকিগুলো ক্লাসমেট;শুধু মুখে মুখে বন্ধু বলে।তবে দিগন্ত ব্যতীত কারো সাথেই তেমন যোগাযোগ নেই।তাছাড়া দিগন্তের সাথেও সে কম কথা বলে।তবে দিগন্ত প্রতিদিন নিয়ম করে নির্জনের খোঁজ-খবর নেয়।কারণ দিগন্ত জানে,নির্জন ইন্ট্রোভার্ট স্বভাবের হলেও তাকে খুব ভালোবাসে।”

————
“সিলিং এর দিকে এতক্ষণ এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে নিজেকে নিয়ে আপন মনে কিছু একটা ভাবছিলো নির্জন।তখনই ফোনে রিংটোনের আওয়াজ কর্ণকুহরে ভেসে আসতেই, নির্জন ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে দেখে দিগন্ত কল করেছে।নির্জন কানের কাছে ফোন নিয়ে কথা বলতে পারে না,অতীতের কিছু দুর্ঘটনার কারণে কানের কাছে ফোন বা হাই ভলিউম শুনলে তার কানে প্রচন্ড ব্যথা অনুভব করে।সবসময় লাউডস্পিকার দিয়ে ভলিউম কমিয়ে কথা বলে।তবে অফিসের কলিগদের সাথে বেশির ভাগ টেক্সট এ কথা বলে।নির্জন ফোন টা রিসিভ করে লাউডস্পিকার দিয়ে বললো, ‘হুম বল।’

“দিগন্ত নির্জনের গম্ভীর কন্ঠ শুনে শুকনো ঢোক গিলে বললো,’কেমন আছিস নির্জন?”

“নির্জন ক্ষুদ্র নিঃশ্বাস ছেড়ে বললো,’ভালো-খারাপের মাঝামাঝি আছি।একজন কে শাস্তি দেওয়ার প্ল্যান করছি।ফেইসবুকে একটা অপরিচিত মেয়ের সাথে আমার ছবি এডিট করে আপলোড করেছে।কাজ টা যে করেছে তাকে ভ**য়ং**কর শাস্তি পেতে হবে।”

“নির্জনের কাটকাট কন্ঠে কথাগুলো শুনে দিগন্তের গলা শুকিয়ে যেনো কাঠ হয়ে গেলো।দিগন্ত টি-টেবিলে রাখা এক গ্লাস পানি ঢকঢক করে খেয়ে,কয়েক সেকেন্ড পর বললো,’দোস্ত তোর কি কাউকে সন্দেহ হয়?”

‘নাহ।তবে খুব তাড়াতাড়ি তাকে খুঁজে বের করবো।’

“দিগন্ত বেশ চিন্তায় পড়ে গেলো।কারণ সে জানে,’নির্জন যেটা বলে সেটাই করে।আর নির্জন মোবাইলের সফটওয়্যার সম্পর্কে খুবই দক্ষ।খুব তাড়াতাড়ি নাদিয়া কে পেয়ে যাবে।তাছাড়া নাদিয়া তো প্রায় ১ঘন্টা পর পোস্ট ডিলিট করেছে।একবার যদি কেউ লিংক দিয়ে দেয়,তাহলে সব শেষ।কতো কষ্ট করে ৬মাস ঘুরে নাদিয়াকে পটিয়েছে।নাদিয়ার কিছু হলে, সব কষ্ট বিফলে যাবে।’ভেবে দিগন্ত আরেক গ্লাস পানি খেলো।”

“অপরপাশ থেকে নির্জন রুক্ষ স্বরে বলে উঠলো, ‘ কিরে চুপ করে আছিস কেনো?”

“দিগন্ত ভাবলো,’ এক কাজ করি নাদিয়ার কথা টা গুছিয়ে ওকে বুঝিয়ে বলি, তাহলে আমার খাতিরে বেচারি হয়তো শাস্তি থেকে মাফ পেয়ে যাবে।’ভেবে বললো,’দোস্ত তোকে একটা সত্যি কথা বলি?”

‘হুমম বল।’

“দোস্ত এই বিখ্যাত অ**সভ্য কাজ টা আমার দুষ্টু গার্লফ্রেন্ড নাদিয়া করেছে।ওর বেস্ট ফ্রেন্ড নিধি ওর বিয়ে ভাঙার জন্য নাদিয়া কে একটা ছেলের সাথে ছবি এডিট করে দিতে বলেছিলো।সেই ছবি পাত্র কে দেখিয়ে এই বিয়ে ভাঙবে তাই।নাদিয়ার কাছে তোর আর আমার ছবি ছিলো।তো ও তোর ছবির সাথে নিধির ছবি ক্লোজ করে এডিট করেছে।আসোলে ও বাচ্চা মানুষ, ভুল করে ফেলেছে।ও তোর সম্পর্কে জানতো না।ওর হয়ে আমি তোকে সরি বলছি দোস্ত। আমি জানি তুই কোনো না কোনোভাবে বিষয়টি জেনে যাবি।তাই আমিই বলে দিলাম।”

“নির্জনের কপালের রগগুলো রাগে দপদপ করছে।উজ্জ্বল শ্যাম রঙা মায়াবী মুখস্রিতে অতিরিক্ত রাগের কারণে মৃদু লাল আভা ফুটে উঠেছে।দাঁত কিড়মিড় করে বললো,’কাজ টা যে করতে বলেছে,আর যে কাজ টা করেছে দু’জনেই সমান অপরাধী। সেটা জেনে হোক বা না জেনে হোক।তোর গার্লফ্রেন্ড ও শাস্তি পাবে।যেহেতু তুই আমার বেস্ট ফ্রেন্ড তাই কিছুটা ছাড় পাবি;যদিও সেটা দুর্নীতি হবে।তবে বেস্টফ্রেন্ডের গার্লফ্রেন্ড হিসেবে ১০০% এর মধ্যে ৯৮%শাস্তি পাবে।আর কাজ টা যে করতে বলেছে,তার জন্য আমার তরফ থেকে ধামাকাদার স্পেশাল শাস্তির ব্যবস্থা করবো।
আর হ্যা, তোর গার্লফ্রেন্ড ফিডার খায় না, যে বাচ্চা বলছিস।সে বড় না হলে তোর সাথে প্রেম করতে পারতো না।এইসব মন ভুলানো কথা তোর জি এফ কে বলবি।
এনিওয়ে,থ্যাংকস ফর দিস ইনফরমেশন।গুড নাইট;হ্যাভ আ নাইস ড্রিম।’
বলেই কট করে ফোন টা কেটে দিয়ে বিছানায় ল্যাপটপ নিয়ে বসলো নির্জন।ল্যাপটপে কিছুক্ষণ ঘাটাঘাটি করে কু**টিল হাসি দিয়ে বললো,’বি রেডি ফর মাই স্পেশাল পানিশমেন্ট..প্রিটি গার্ল।”

————–
“নির্জনদের বাড়িটি বেশ পুরনো।ঘরের বাইরের দিক টা দেখলেই মনে হয় ২-৩যুগ আগে বাড়িটি নির্মাণ করা হয়েছে।১বছর আগে নির্জন বাড়িটির ভেতরে অফ-হোয়াইট রং করিয়েছে।বাড়িটি এক তলা বিশিষ্ট।আশে-পাশে কিছু দূরে বিল্ডিং থাকায় বাড়িটি দিনের বেলা বেশ আলোকিতো থাকে।পুরো বাড়িটিতে কিচেনরুম সহ মোট ৬টি রুম আছে।দু’টি মাস্টার বেডরুম,একটি ডাইনিং রুম এবং দু’টি রুম সবসময় তালাবদ্ধ থাকে।সেই রুমে নির্জন ব্যতীত অন্য কারো প্রবেশ নিষেধ। ওই ২টি রুমের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন সবকিছু নির্জন একা করে।নির্জনের যখন ১৮বছর বয়স, তখন থেকেই ওই রুম দু’টো নিজের দখলে নিয়েছে।এখন নির্জনের বয়স ২৭বছর।প্রতিদিন অফিস থেকে আসার পর কিছুক্ষণ রেস্ট করে একে একে দু’টি রুমে গিয়ে পুরনো দিনের স্মৃতিচারণ করে।শৈশব এবং কিশোর বয়সের অনেক স্মৃতি এই রুম দু’টি তে আবদ্ধ করে রেখেছে নির্জন।নির্জনের জীবনে এমন কিছু লোমহর্ষক অতীত আছে যেটা নির্জন এবং সৃষ্টিকর্তা ছাড়া কেউ জানে না।আজও সেই রুম দু’টো তে ৫-১০মিনিট করে সময় কাটিয়ে পুরনো দিনের কিছু কথা স্মৃতিচারণ করে,রুমের আসবাবপত্র গুলো সযত্নে পরিষ্কার করে,রুম দু’টিতে পুরনো দু’টি তালা ঝুলিয়ে; ভারাক্রান্ত মন নিয়ে বেরিয়ে গেলো।রুম থেকে বেরিয়ে কষ্টের কথাগুলো নিজের আপন মনেই বিড়বিড় করে বলতে থাকলো নির্জন।কিছুক্ষণ পর ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে একা একাই ডিনার করলো।”

“সায়রা বেগম এবং মেইড রাত ৯টা বাজে ঘুমিয়ে গেছে।তবে নির্জন রাত ১-২টার আগে ঘুমায় না।ঘুমের মেডিসিনেও তার কাজ হয় না।রাতে দেরি করে ঘুমালেও, সকালে ৮টার আগেই উঠে যায় সে।ঘুম থেকে উঠে ফ্রশ হয়ে মর্নিং ওয়াক করে।জিম করা বডি না হলেও, তার শরীরের গঠন খুব সুন্দর।শরীরে এক্সট্রা মেদ নেই।তৈলাক্ত জাতীয় খাবার বেশিরভাগ সময় অ্যাভয়েড করে চলে।”

“আজ শুক্রবার।সকালে ব্ল্যাক কফি খাচ্ছিলো নির্জন।ঠিক তখনই দিগন্তের ফোন এলো।একবার রিং হতেই কল রিসিভ করে বললো,’হুম বল।”

“অপরপাশ থেকে দিগন্ত বললো,’দোস্ত আজ তো অফ ডে।চল না আজ একটু বাইরে ঘুরে আসি।তুই তো বলেছিলি,তুই একটা নতুন রিমলেস চশমা কিনবি আর হ্যান্ডওয়াচ কিনবি।আমিও টুকটাক শপিং করবো।”

“ওকে তাহলে বিকালে বের হবো।আমি তোকে তোর বাসার সামনে থেকে পিক করবো।”

“দিগন্ত হাসি মুখে বললো,’ওকে দোস্ত।”

————-
“এদিকে বিকাল ৪টার পরে নিধি এবং তোহা বের হয়েছে শপিং করার উদ্দেশ্যে।রাস্তার মোড়ে দাঁড়াতেই আগে থেকে ঠিক করা উবার চলে আসতেই দু’জনে উঠে পড়লো ।শপিংমলের সামনে আসতেই নিধির চোখ পড়লো নির্জনের বাইকের পেছনে বসে থাকা দিগন্তের দিকে।নিধি নাদিয়ার সাথে দিগন্ত কে কয়েকবার দেখেছে,তবে কখনোও কথা হয় নি।দিগন্ত কে দেখে নিধি এগিয়ে গিয়ে বললো,’কেমন আছেন দিগন্ত ভাইয়া?আমি নিধি;নাদিয়ার বেস্ট ফ্রেন্ড।”

“নির্জন নিধি কে দেখে মনে হয় মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি পেয়ে গেলো।নির্জন মেয়েদের থেকে সবসময় দূরত্ব বজায় রাখার চেষ্টা করে।তাই নিজের নজর কেও কন্ট্রোল করার চেষ্টা করে।কিন্তুু যেই মেয়েটিকে ঘিরে এতো গুজব,সেই মেয়েটির দিকে অবশ্যই তাকাবে নির্জন।নির্জন নিধির দিকে তাকিয়ে আপাদমস্তক ভালো করে দেখলো।নিধি আজ কালো রঙের গাউন পড়েছে,সাথে কালো হিজাব।তোহা হালকা হলুদ রঙের গাউন পড়েছে,সাথে ম্যাচিং করে হিজাব।”

“নির্জন কে নিধির দিকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে, দিগন্ত বুঝে ফেলেছে নির্জনের মনে কিছু একটা চলছে।দিগন্ত নিধির দিকে পিটপিট করে তাকিয়ে ভাবলো, ‘আহারে বেচারি নিজের অজান্তেই বাঘের খাঁচায় পা দিলো।আল্লাহ বাঁচাও তাকে।”

“নিধি সামনে থাকা নির্জন কে একবার দেখে;দিগন্তের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো,’কি হলো ভাইয়া এমন স্ট্যাচু হয়ে গেলেন কেনো?অবাক হয়েছেন বুঝি?আমরা ২বোন আজ কে শপিং করতে এসেছি।আপনি আসবেন জানলে নাদিয়া কেও সাথে নিয়ে আসতাম।বাই দ্য ওয়ে আপনি কি নাদিয়া কে এখানে আসার কথা বলেন নি?”

“দিগন্ত নিধির দিক থেকে চোখ সরিয়ে,হাবলার মতো নির্জনের দিকে তাকিয়ে আছে।নির্জনের মন পড়ার চেষ্টা করছে।কিন্তুু নির্জনের মন পড়া কি এতোটাই সহজ?সবার ভাবনা যেখানে সমাপ্তি হয়;নির্জনের ভাবনা সেখান থেকে সূচনা হয়।কারণ, তার মন-মানসিকতা তো আর ৫জন সাধারণ মানুষের মতো নয়।”

“নিধি এইবার কিছুটা বিরক্তবোধ করে বললো,’ভাইয়া আপনি মনে হয় আমার সাথে কথা বলতে আনইজি ফিল করছেন।ওকে সরি।”

“এতক্ষণে দিগন্তের হুশ ফিরলো।নিধির দিকে তাকিয়ে বললো, ‘সরি সরি সরি..আমি আসোলে অন্য কিছু ভাবছিলাম।এনিওয়ে নাইস টু মিট ইউ।’বলেই হ্যান্ডশেক করার জন্য নিধির দিকে হাত বাড়িয়ে দিলো দিগন্ত।”

“নিধি খুশি হয়ে যখনই হাত বাড়াতে যাবে,তখনই নির্জন দিগন্তের হাত সরিয়ে রুক্ষ স্বরে বললো,’তোর গার্লফ্রেন্ড আছে না?পর নারীর সাথে হাত মেলানো টা কি খুব জরুরি?তোর গার্লফ্রেন্ড যদি জানতে পারে যে তুই অন্য একটি মেয়ের সাথে এভাবে হাত মিলিয়েছিস,ও কি একটুও কষ্ট পাবে না?হতে পারে এটা আধুনিক যুগ,কিন্তুু নিজের একান্ত ব্যক্তিগত মানুষটিকে নিয়ে সবাই একটু পজেসিভ থাকে।’তারপর নির্জন নিধির দিকে তাকিয়ে বললো,’আপনিই বা কেমন মেয়ে?নিজের বান্ধবীর বি এফ এর সাথে এতো হাত মেলানোর শখ কেনো হুমম?জানেন না, আজকাল বান্ধবীরাই বান্ধবীর শত্রু হয়?যদিও সবাই এক না;কিছু বন্ধু তো বন্ধুর জন্য নিঃশ্বার্থ ভাবে নিজের জীবন বিসর্জন দিতেও সদা প্রস্তুত থাকে।তবে তার পরিমাণ বর্তমান যুগে খুব কম।”

“নির্জনের এহেন কথায় নিধি,তোহা এবং দিগন্ত হকচকিয়ে গেলো।ওরা কখনোও ভাবতে পারেনি নির্জন এই ধরনের কথা বলবে।দিগন্ত ইতস্তত বোধ করে বললো,’সরি ইয়ার এতো টা গভীরে ভাবিনি।”

“নিধি এবং তোহা রিমলেস চশমার আড়ালে থাকা ধূসর রঙা চোখজোড়ার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে।নির্জনের ফেইস টা কতো টা ইনোসেন্ট।দেখলে মনে হয় ভাজা মাছ উল্টানো তো দূরের কথা,কাটা বেছেও খেতে পারে না।অথচ গড়গড় করে কতোগুলো জ্ঞানমূলক বাণী শোনালো।অবশ্য প্রতিটি কথাই যুক্তিযুক্ত।”

“নিধির নির্জনের দিকে তাকিয়ে কেমন চেনা চেনা লাগলো।কিন্তুু মস্তিষ্ক স্মরণ করতে সাড়া দিচ্ছে না।যার পরিপ্রেক্ষিতে নির্জন কে চিনতে ব্যর্থ হলো নিধি।কিন্তুু তোহার সিক্সসেন্স খুবই ভালো।তোহা নির্জন কে এক দেখাতেই চিনে ফেললো।কিন্তুু কিছু বললো না।”

“নিধির ভাবনার মাঝেই, নির্জন বাইক পার্ক করে দিগন্ত কে নিয়ে সেখান থেকে প্রস্থান করলো।নিধি এবং তোহা সেদিকে কিছুক্ষণ পূর্ন দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো।”

“নির্জন এবং দিগন্ত চলে যাওয়ার পর তোহা নিধি কে বললো,’আপু তুমি ওই চশমিস লোকটাকে চিনতে পেরেছো?”

‘হুমম চেনা চেনা লাগছে, তবে কোথায় দেখেছি সেটা মনে করতে পারছিনা।’

‘আরে উনি তো সেই লোক,যার সাথে নাদিয়া আপু তোমার ছবি এডিট করেছে।’

“তোহার কথা শুনে নিধির মুখ হা হয়ে গেলো।অবাক হয়ে বললো,’হা…বলিস কি?এই সেই লোক?এইজন্যই তো চেনা চেনা লাগছিলো।কিন্তুু সেদিন তো বাসায় এসে ফোল্ডার টাই ডিলিট করে ফেলেছিলাম,আর তাকে এতোটা ভালোভাবে দেখিনি।আরে বাহ!হানি নাটস খেয়ে তোর স্মৃতি শক্তি তো প্রখর হয়ে গেছে,গুড।”

‘আপু আমি হানি নাটস খাইনি।তুমি তো পুরোটাই শেষ করে ফেলেছো।’

‘ওহ তাই নাকি?ওকে তাহলে আজকেই কিনে নিয়ে যাবো।’

“তোহা বললো,” আচ্ছা আপু লোকটা যদি কোনোভাবে জেনে যায়, যে তুমি তার ছবি তোমার সাথে এডিট করে
এই অকাজ করেছো,তখন কি হবে?”

“নিধি একটু ভেবে বললো,’আরে ধুর চিন্তা করিস না।লোকটা কিছুই জানবে না।এই নাদিয়ার বাচ্চা টা কে ইচ্ছে করছে কলা গাছের সাথে বেঁধে রাখি।পৃথিবীতে কি ছেলেদের অভাব পড়েছিলো?বেছে বেছে ওই কাঠখোট্টা লোকের সাথে আমার ছবি জুড়ে দিলো।উফফ..আচ্ছা এই সাবজেক্ট বাদ দে,এখন ভেতরে চল।”

——————–
“নির্জন এবং দিগন্ত তাদের প্রয়োজনীয় জিনিস কেনাকাটা করলো।এদিকে নিধি এবং তোহা যা যা প্ল্যান করে এসেছিলো সবকিছুই কিনলো।শপিং শেষে নিধি এবং তোহা কথা বলতে বলতে এস্কেলেটর (চলন্ত সিড়ি)দিয়ে নামছিলো।এদিকে নির্জন এবং দিগন্ত অলরেডি শপিং শেষ করে গ্রাউন্ড ফ্লোরে নেমে গেছে।হঠাৎ কিছু একটা মনে করে নির্জন পেছন ফিরে তাকাতেই দেখলো,নিধি এবং তোহা হেসে হসে কথা বলছে আর এস্কেলেটর দিয়ে নামছে।তৎক্ষনাৎ নির্জনের মাথায় শ**য়*তানি বুদ্ধি খেলে গেলো।মনের এই দুষ্ট বুদ্ধি টাকে বাস্তবে রূপান্তর করার জন্য নির্জন দিগন্ত কে বললো,’শপিং ব্যাগ টা ধর, আমি আসছি।দিগন্ত শপিং ব্যাগ টা ধরতেই, নির্জন ঠোঁটের কোণা হালকা প্রসারিত করে মুখে মাস্ক পড়ে এস্কেলেটরের নিচ থেকে উপরে উঠে নিধির একটু কাছাকাছি এসে, ওর কাঁধে আলতো করে একটা ধাক্কা দিলো।”

“বেচারি নিধি সাধারণত কথা বলার সময় কোথায় আছে সেটাই ভুলে যায়।নির্জন এভাবে আকস্মিক ধাক্কা দেওয়াতে টাল সামলাতে না পেরে,চলন্ত সিড়ি থেকে হুরমুর করে নিচে পড়ে যায় নিধি।”

“নিধিকে এভাবে পড়ে যেতে দেখে, তোহা মুখে দুই হাত দিয়ে হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে থাকে।এদিকে শপিংমলের গ্রাউন্ড ফ্লোরে হৈচৈ পড়ে যায়।ততক্ষণে নির্জন চোখের চকচকে চশমা টা ঠিকঠাক করে দিগন্তের কাছে গিয়ে বলে,’চল চল আমার ইম্পর্ট্যান্ট কাজ আছে।এখানে বেশিক্ষণ সময় কাটালে দেরি হয়ে যাবে।”

“দিগন্ত পুরো ঘটনাটাই বিস্ময়ের দৃষ্টিতে দেখলো।একটা মানুষ একজন মেয়েকে এভাবে আ**ঘাত করে,কিভাবে এতোটা স্বাভাবিক ভাবে কথা বলতে পারে,সেটা দিগন্তের মাথায় আসছে না।দিগন্ত নির্জনের দিকে ভ**য়ার্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বললো,’হ্যা রে তুই কি কোন স্বাভাবিক মানুষ নাকি অন্যকিছু?”

“নির্জন ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে চোখের চশমা টা খুলে, শুভ্র রঙা সফট রুমাল দিয়ে ভালো করে মুছে আবার পড়ে বললো,’কেনো তোর কোনো সন্দেহ আছে?”

“অবশ্যই সন্দেহ আছে।এভাবে একটা মেয়েকে চলন্ত সিড়ি থেকে নিচে ফেলে দিলি?মেয়েটার যদি হাত-পা ভেঙে যায়,তখন কি হবে?”

“নির্জন আশে-পাশে তাকিয়ে দেখলো, গ্রাউন্ড ফ্লোরে সবাই নিধি কে বৃত্তের মতো ঘিরে ফেলেছে। ওকে এখন দেখা যাচ্ছে না।নির্জন দিগন্তর হাত ধরে দ্রুত বাইরে নিয়ে গিয়ে বললো,’মেয়েটা কে মাত্র ৩টা সিড়ির ওপর থেকে ফেলেছি।আমি এতোটাও বোকা নয়, যে উপর থেকে ফেলবো।এতে ওর হাত-পা ভাঙার প্রশ্নই আসে না।হয়তো হাত-পা একটু কে**টে যেতে পারে।ডাজন’ট ম্যাটার।তুই তো ওর সাথে প্রেম করিস না।তোর এতো মায়া কেনো হচ্ছে বলতো?”

“আজব তো একটা সাধারণ মানুষের জন্য একটা সাধারণ মানুষের যেমন মায়া হয় তেমনই হচ্ছে।কাজ টা তুই ঠিক করিস নি নির্জন।প্রতিশোধ টা অন্যভাবেও নেওয়া যেতো।তুই ওকে কয়েকটা কড়া কথা শুনিয়ে দিতি।কিন্তুু এভাবে আ**ঘাত করা ঠিক হয় নি।মেয়েটা তো আর জেনে-বুঝে তোর ছবি এডিট করতে বলেনি।”

“নির্জন ক্ষিপ্ত কন্ঠে বলে উঠলো, ‘এই শোন এইসব থার্ড ক্লাস জ্ঞানের বাণী অন্য কাউকে শোনাবি।জেনে হোক বা না জেনে হোক মেয়েটা ঘোর অন্যায় করেছে।তুই জানিস,আজ আমি পুরুষ মানুষ বলে আমাকে তেমন কেউ অপমান বা হ্যা’রা’স করার সুযোগ পায় নি।কিন্তুু এই ক্ষেত্রে যদি একজন মেয়ে মানুষ হতো,তাহলে এই মিথ্যা এডিটিং এর কারণে একটা মেয়ের ক্যারিয়ার হয়তো নষ্ট হয়ে যেতো।তার পরিবার এবং আত্মীয়-স্বজনের মাথাও হেট হয়ে যেতো।ফলে মেয়েটা পরিবার এবং সমাজ উভয় দিক থেকেই সম্মান হারাতো।বর্তমানে মজার ছলে মানুষগুলো একে অপরের মনের বি**কৃত স্বাদ মেটানোর জন্য, গুগল থেকে পিকচার কালেক্ট করে ছেলে-মেয়ে উভয়ের বা**জে ছবি এবং ভিডিও এডিট করে লিংক তৈরি করে।আজকাল যুবসমাজের সৃজনশীলতার বিকাশ এবং তথ্য-প্রযুক্তির আধুনিক বিকাশ গুলো যুবজমাজ কে ইতিবাচকের থেকে নেতিবাচক দিকেই বেশি আকর্ষিত করছে।হয়তো মেয়েটা বিপদে পড়ে এইরকম একটা কাজ করেছে।আগামীকাল ওর থেকে ইন্সপায়ার হয়ে আরেকজন করবে;এটার সিকিউরিটি তুই দিতে পারবি?নাহ!পারবি না।এটা তো ওর জন্য জাস্ট ট্রেইলার ছিলো।এরপর আরও নবাগত শাস্তি অপেক্ষা করছে।আমার শাস্তি দেওয়া পরিপূর্ণ হলে ওকে আমি সবকিছু বলবো।বাইকে ওঠ,তোকে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে আমিও বাসায় যাবো।একটা সফটওয়্যার ডেভলপমেন্টের জন্য ডকুমেন্টস তৈরি করতে হবে।”

“নির্জনের একাধারে বলা কথাগুলো শুনে দিগন্ত স্তব্ধ হয়ে গেলো।একটা কথাও অযৌক্তিক নয়।মাঝে মাঝে দিগন্ত নির্জনের রাগী এবং গম্ভীর স্বভাব কে যেমন ভ**য় পায়,তেমনি তার সৃজনশীলতায় বেশ মুগ্ধ এবং অবাকও হয়।’ভেবে দিগন্ত বাইকে উঠে পড়লো।নির্জন তৎক্ষনাৎ বাইক স্টার্ট দিয়ে সেখান থেকে প্রস্থান করলো।”

#চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে