হৃদয়ে রক্তক্ষরণ পর্ব-০২

0
74

#হৃদয়ে_রক্তক্ষরণ
#পর্বঃ২
#লেখিকাঃমেহের_আফরোজ

“নিধি বিস্ময়ের শীর্ষে পৌঁছে গিয়ে মৃদু স্বরে চেঁচিয়ে
বললো,”হোয়াট?”

“মাহতিম মুচকি হেসে বললো,’এনিথিং রং মিস নিধি?”

“নিধি রাগী মুখ করে,’অবশ্যই রং।ভ**য়ং**কর রং।আপনি তো দেখছি ভারি বেহায়া পুরুষ!আমি আপনাকে সবকিছু বুঝিয়ে বলার পরেও আপনি আমাকে বিয়ে করার কথা বলছেন?”

“হুমম যেটা ভালো মনে করেছি সেটাই বলেছি।”

“মাহতিমের গম্ভীর কন্ঠে স্ট্রেট ফরওয়ার্ড কথা শুনে নিধি এবং তোহা দু’জনেই থতমত খেয়ে গেলো।তোহা নিধিকে কনুই দিয়ে গুতা দিয়ে চোখের ইশারায় বোঝালো,’এখন কি হবে?”

“নিধি ভাবলো,’এই ছ্যাচড়া মার্কা ব্যাটা তো সিভিল ইঞ্জিনিয়ার।তার জন্য কি মেয়ের অভাব?অবশ্য প্রবাদ আছে,’ যার নয়নে যারে লাগে ভালো।’তবে আমি এই বিয়ে ভাঙবোই।তার জন্য নতুন বুদ্ধি খুঁজে বের করতে হবে।’কথাগুলো ভাবতেই নিধির মাথায় উপস্থিত বুদ্ধির উদয় হলো।নিধি ঠোঁটের কোণা হালকা প্রসারিত করে মাহতিমের দিকে তাকিয়ে বললো,’আমি একটু ওয়াশরুমে যাবো।আপনারা দু’জন গল্প করুন।আমি আসছি।”

“তোহা তড়িঘড়ি করে বললো,’আপু আমারও ইমার্জেন্সি ওয়াশরুমে যেতে হবে, আমিও যাবো।”

“ওকে আয়।’ বলে মাহতিমের দিকে তাকিয়ে বললো,’আপনি একটু অপেক্ষা করুন; আমি এসে ঠান্ডা মাথায় আপনার সাথে কথা বলবো।”

“মাহতিম মুচকি হেসে মাথা নাড়লো।”

“নিধি এবং তোহা ওয়াশরুমের দিকে ছুটলো।ওয়াশরুমে ঢুকে নিধি তোহা কে বললো,’আরে এখন কি হবে?আগের গুলো কে তো এভাবেই মিথ্যা বলে ভাগিয়েছি।কিন্তুু এটা তো দেখি ঘাড়ের ওপর উঠে বসেছে।আচ্ছা শোন আমার মাথায় একটা বুদ্ধি এসেছে।দেখি কাজে লাগে কি না।আমি নাদিয়া কে একটা কল করি।ওকে বলে দেখি।”

” হ্যা আপু তাড়াতাড়ি কল করো।”

“নিধি নাদিয়া কে ফোন করলো।একবার রিং হয়ে কেটে গেলো।নিধি বিরক্তিতে ঠোঁটে ঠোঁট চেপে আবারও কল করলো।এইবার নাদিয়া কল রিসিভ করে ‘হ্যালো’ বলতেই,নিধির কলিজায় মনে হয় পানি এলো।খুশি হয়ে বললো,’বান্দুপি..ও বান্দুপি আমার ইন্সট্যান্ট একটা উপকার করতে হবে।”

“নাদিয়া কিছুক্ষণ আগেই ঘুমিয়েছিলো।নিধির ফোন পেয়ে রিসিভ করে হাই তুলে বললো,’হুমম বল শাঁকচুন্নি কি উপকার করতে হবে।”

“নিধি খুব সংক্ষেপে নাদিয়া কে সবকিছু বুঝিয়ে বললো।তারপর অনুনয়ের সুরে বললো,’বান্দুপি ছেলেটা তো কাঁঠালের আঠার মতো লেগে আছে।তুই তো এডিটে খুব এক্সপার্ট। মনে নেই কিছুদিন আগে রিশিতার সাথে অন্য একটা ছেলের ছবি অ্যাড করে,ওর বয়ফ্রেন্ডের সাথে ওর কিভাবে ব্রেকআপ করিয়ে দিয়েছিলি?আমাকেও এই হেল্প টা কর প্লিজ।তোকে আমি ম্যাংগো ফ্লেভারের ফালুদা খাওয়াবো,প্লিজ।আর হ্যা, বর্তমানে আমি আর তোহা ওয়াশরুমে আছি;তাড়াতাড়ি কর।নইলে, ওই খচ্চর ব্যাটা সন্দেহ করে বসবে।আর আমার ছবি তো তোর কাছে আছে।কোনো একটা ছেলের সাথে একটু ক্লোজ করে খুব সূক্ষ্ম ভাবে এডিট করবি।উনি কিন্তুু সিভিল ইঞ্জিনিয়ার বুঝতেই পারছিস।”

“নাদিয়া মুচকি হেসে বললো,’ওকে বান্ধবী নো প্রবলেম। এগুলো আমার কাছে চুনোপুঁটি। আমি কয়েক মিনিটের মধ্যে তোকে হোয়াটসঅ্যাপে পাঠাচ্ছি।’বলেই নাদিয়া ফোন কেটে দিয়ে, তৎক্ষনাৎ একটা ছেলের ছবির সাথে নিধির কয়েকটা ক্লোজ পিকচার এডিট করে নিধির হোয়াটসঅ্যাপে পাঠালো।নিধির তো পিকচার গুলো দেখে খুশি তে লুঙ্গি ডান্স দিতে ইচ্ছে করছে।নিধি তোহা কে ছবিগুলো দেখালো।তোহা বললো,’হুমম একদম পার্ফেক্ট হয়েছে। দেখে বোঝাই যাচ্ছে না যে এটা এডিট করা।তবে এই ছেলেটার সাথেও তোমাকে হেব্বি মানিয়েছে হিহিহি।যাইহোক চলো আপু এখানে বেশিক্ষণ থাকার দরকার নেই।তুমি লোক টা কে পিকগুলো দেখিয়ে বলো।আমার মনে হয় না সে অবিশ্বাস করবে।আর যদি অবিশ্বাস করে,তাহলে ফেইসবুকে আমার একটা ছেলে ফ্রেন্ড আছে।তার সাথে কথা বলিয়ে দিবো ডোন্ট ওয়ারি।”

“নিধি চটজলদি ছবিগুলো ডাউনলোড করে গ্যালারিতে ‘জান’ নাম দিয়ে ফোল্ডার তৈরি করলো।তারপর তোহার দিকে হাসি মুখ করে তাকিয়ে বললো,’হুম হুমম চল।”

“নিধি এবং তোহা গিয়ে দেখলো, মাহতিম থাই স্যুপের বাটিতে চামচ ঘুরাচ্ছে।নিধি কে দেখে মুচকি হেসে বললো,’আরে বাহ!আপনাদের দুই বোনের টাইমিং টাও দেখছি সেইম।”

“নিধি ফিচেল হেসে বসলো।তারপর গ্যালারিতে ‘জান’ দিয়ে সেভ করা ফোল্ডারে গিয়ে কয়েকটি পিকচার মাহতিমের সামনে ধরে বললো,’দেখুন আমার বি এফ কে।কত্তো কিউট না?আমরা একসাথে লং ড্রাইভেও গিয়েছিলাম।সেটাও আবার রাতে।তবে সেগুলোর পিকচার তুলি নি।বোঝেনই তো একটা লজ্জার বিষয় আছে না?”

“মাহতিম ভ্রু জোড়া কুঁচকে একের পর এক ছবিগুলো দেখতে থাকলো।কিছু ছবিতে জড়িয়ে ধরা,চুমু দেওয়া,কাছাকাছি বসে থাকা আরও কতো রকমের পিকচার আছে।আবার গ্যালারি তে ‘জান’ দিয়ে ফোল্ডার তৈরি করা।এইরকম পিকচার দেখলে যে কেউ এক দেখায় বিশ্বাস করবে।একটুও সন্দেহ করবে না।মাহতিম ভেবেছিলো, নিধি হয়তো বিয়ে না করার জন্য মিথ্যা বলছে।তাই মাহতিম ও একটু চালাকি করেছে।”

“কিন্তুু ছবিগুলো দেখে মাহতিমের মন টা মুহূর্তের মধ্যেই দুমড়ে-মুচড়ে ভেঙে গেলো।”

“নিধি আড়চোখে মাহতিমের ভাবভঙ্গি দেখে ঠোঁটের কোণা প্রসারিত করে ডেভিল হাসি দিলো।মনে মনে ভাবলো,’চুু চু চু
যতোই ঘুড়ি উড়াও রাতে,
লাটাই তো আমার হাতে।’
হুহ আমার সাথে চালাকি করা।নাও এইবার ঠ্যালা সামলাও।”

“মাহতিম করুণ দৃষ্টিতে নিধির দিকে তাকিয়ে পাশে থাকা সফট ড্রিংক ঢকঢক করে খেয়ে ফেললো।তারপর মৃদুস্বরে বললো,’আ’ম সরি নিধি।আমি বুঝতে পারিনি যে আপনাদের সম্পর্ক টা এতোটা ক্লোজ।আমি আপনার বাবাকে বলে বিয়ের বিষয়টা ক্যান্সেল করে দেবো।আর আপনার এই বিষয়টিও বলবো না।আপনি নিশ্চিন্তে বাসায় যান।”

“নিধি অবাক হয়ে ভাবলো,’এতো দেখছি মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি!অবশ্য সিভিল ইঞ্জিনিয়ার বলে কথা।’ভেবে বললো,’ঠিকাছে আমি কিছু মনে করিনি।আপনার ‘সরি’ আপনার কাছেই রেখে দিন।যেখানে আমি কিছু মনেই করিনি, সেখানে সরি এক্সেপ্ট করে কি হবে?আচ্ছা এখন আমরা যাই হ্যা?আর হ্যা, বিল টা আমি পে করে দিচ্ছি।”

“মাহতিম সৌজন্যমূলক হাসি দিয়ে বললো, ‘না না কি বলছেন,আমিই পে করে দেবো।আপনারা যান।”

“হাউ সুইট!আপনার জন্য দোয়া করে দিলাম, আপনি যেনো কিউট একটা বউ পান।আল্লাহ হাফেজ।”

“মাহতিম গম্ভীর কন্ঠে বললো,’হুমম।”

” নিধি এবং তোহা দু’জনেই সেখান থেকে তাড়াতাড়ি করে কেটে পড়লো।রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে তোহা বললো,’আপু সত্যি তুমি খুব ব্রিলিয়ান্ট। উপস্থিত বুদ্ধির জন্য তোমাকে নোবেল দেওয়া উচিত।ওই মুহূর্তে আমার মাথায় তো কিছুই আসছিলো না।”

“নিধি একটু ভাব নিয়ে বললো,’এইসব টক-ঝাল ফুচকা-টুচকা না খেয়ে বেশি করে পেস্তা বাদাম,কাজু বাদাম আর হানি নাটস খাবি।তাহলে শক্তিও বাড়বে আর বুদ্ধিও বাড়বে।আমাকে দেখে তো বুঝতেই পারছিস।”

“ওকে আপু এখন থেকে ফুচকা অ্যাভয়েড করার চেষ্টা করবো।এগুলোই বেশি বেশি খাবো।আর
ছেলেদের ডিগবাজি খাওয়াবো হিহিহি।”

“নিধি এবং তোহা বাসায় এসে দেখলো,ওদের বাবা-মা এখনও ঘুমাচ্ছে।তোহা খুশি হয়ে বললো,’আজ মনে হয় বাবা-মায়ের ঘুম দিবস চলছে।দরজা লক করে গিয়েছি,তারা বুঝতেও পারেনি হিহিহি।’বলে দুজনে রুমে চলে গেলো।”

“এদিকে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে নিধি হিজাবের পিন খুলছে আর বলছে,’এই আমার বিনুনি টা না সবসময় খুব বিরক্ত করে।হিজাব ভেদ করে বেরিয়ে যায়।দেখলিনা তখন মাহতিমের সামনে কেমন হিজাবের বাইরে কাঁধের কাছ দিয়ে বেরিয়ে গেলো?”

“আপু তুমি তো চুলগুলো খোপাও করতে পারো,তাহলে তো আর এই ঝামেলা হয় না।”

‘হুমম ঠিক বলেছিস।তবে আমি বিনুনি করতেই বেশি পছন্দ করি।যারা তোর মতো অলস,তারাই শর্টকাটে খোপা করে বের হয়।’

“তোহা অন্যদিকে ফিরে মুখ ভেংচি কেটে ভাবলো,’ইশশ আমার পরিশ্রমী এসেছে।মা একটু অসুস্থ হলে এত্তো ক্ষুধা নিয়েও না খেয়ে পেটে বালিশ চাপা দিয়ে রাখে,তবুও একটা ডিম ভেজে খায় না।মা অসুস্থ হলে বেশিরভাগ কাজ তো আমিই করি।একটু বিনুনি করে ভাব নিচ্ছে।এখন ঝগড়া করলেই আবার কা**টা*কু**টি শুরু করবে।তার থেকে নীরব থাকাই শ্রেয়।’ভেবে তোহা ওয়াশরুমে চলে গেলো।”

—————
“রাতে তোহা স্টাডি টেবিলে বসে পড়ালেখা করছে।তোহা অনার্স ২য় বর্ষে পড়ে।তোহা নবাব সিরাজউদ্দৌলার কাহিনী মনযোগ দিয়ে পড়ছে।তখনই ওর কানে হঠাৎ বেজে উঠলো,

🎶কেমন কইরা চাও
আমার দিকে কেমনে চাও,
আমি পা**গল হইলে পরে কিন্তুু
পিছু ছাড়বো না।

যদি একবার জায়গা দাও
তোমার মনের উঠোন টাও,
আমি দখল করলে
পরে বাইরে আসতে পারবানা..🎶

“তোহা দেখলো, নিধি বেলকনির গ্রীল ধরে ফোনে গান শুনে তাল মেলাচ্ছে।তোহার খুব ডিস্টার্ব ফিল হচ্ছে।তাই ও উঠে গিয়ে বললো,’আপু দেখছোনা আমি পড়াশোনা করছি?সামনে আমার ফাইনাল এক্সাম।তুমি এতো জোরে সাউন্ড দিয়ে গান শুনছো,আমি মনযোগ দিতে পারছিনা।”

“নিধি তৎক্ষনাৎ গান বন্ধ করে বললো,’কি পড়ছিলি শুনি?”

“ওই তো নবাব সিরাজউদ্দৌলার কাহিনী।”

“নিধি কোমরের দুই পাশে দুই হাত রেখে বললো,’ওহহ এই পড়া পড়ছিলি?আচ্ছা শোন, তোর এতো কষ্ট করে পড়া লাগবে না।আমি বুঝিয়ে বলছি।
‘নবাব সিরাজউদ্দৌলা ছিলেন ভোলাভালা সহজ-সরল যুবক।তিনি তার কু**খ্যাত খালা ঘসেটি বেগম কে অনেক বিশ্বাস করতো।তো ঘসেটি বেগম এবং তার ছেলে মিলে ওই ধলা মূলা ব্রিটিশদের কে নিয়ে নবাবের বিরুদ্ধেই ষড়যন্ত্র করেছে।আর নবাব সেটা পরে বুঝতে পেরে ঘসেটি বেগমের চৌদ্দ গুষ্ঠি উদ্ধার করেছে।তখনই ঘসেটি বেগম আরও ক্ষেপে গিয়ে মীরজাফর কে কাজে লাগিয়েছে।মীরজাফর খ”চ্চর ব্যাটায় শপথ করেও, বিশ্বাসঘাতকতা করেছে।তারপর আর দুঃখের কথা কি বলবো,১৭৫৭সালে মোহাম্মদী বেগ সিরাজউদ্দৌলাকে নৃ**শং**স ভাবে হ**ত্যা করে।বেচারা সত্যি খুব সহজ-সরল ছিলেন।তার জন্য আমার খুব মায়া হয়।সত্যি পৃথিবীতে সহজ-সরল মানুষগুলোকে প্রতিটি পদে পদে ধোকার স্বীকার হতে হয়।’বলেই নিধি একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।”

“তারপর বললো,’শোন এটাই হলো মূলভাব।আমার বলা এই কথা গুলো সেইম টু সেইম পরীক্ষার খাতায় লিখে দিয়ে আসবি, দেখবি এক্সামিনার তোকে খুশি হয়ে ১০ এ ১০দিবে।পরীক্ষার খাতায় তো আর আমার কথা লিখতে পারবিনা।নইলে বলতাম,’ক্রিডিট বাই নিধি লিখতে।’আর শোন, তোকে একটা সিক্রেট দুষ্টু বুদ্ধি শিখিয়ে দেই।বোকার মতো এতো বড় বই না পড়ে, ইউটিউব দেখে সাজেশনস পড়বি।২-৩জন ফেমাস টিচারের সাজেশন ফলো করলেই কাজে লেগে যাবে।আমি তো সারা বছর ঘুরে-ফিরে পরীক্ষার ৪-৫দিন আগে এগুলো ফলো করেই পড়ি।আর দেখ, আমি একবার ফেলটুস মা**রার পরেও এইবার ফার্স্টক্লাস পেয়েছি।যদিও আমি বরাবরই ভালো স্টুডেন্ট ছিলাম।কিন্তুু শেষের ২টা পরীক্ষার আগেই ডেঙ্গু মামা আমায় আদর করে জ্বর বাঁধিয়েছে।যার কারণে পরীক্ষার খাতায় কলমের কালি থেকেও বেশি চোখের পানি পড়েছে।তার ওপর যে ক্লাসমেট দের জন্য পরীক্ষার সময় খাতা সরকারি ভাবে ছেড়ে দিতাম।ওই দুইটা পরীক্ষার সময় তারা আমার দিকে ফিরেও তাকায় নি।তখন বুঝেছি,সবগুলো ঘসেটি বেগমের বংশধর।”

“তবে যাদের পড়াশোনা করতে আলসেমি লাগে তাদের জন্য এটা শর্টকাটে চমলক্ক বুদ্ধি। আর শোন,এক্সামের খাতায় প্রথম ২-৩পৃষ্ঠা একটু ভালো করে লিখবি।তারপর বাকি প্রশ্নগুলো তে প্রথমে ৪-৫লাইন একটু জ্ঞানমূলক বানী লিখে মাঝখানে ভুগিচুগি লিখে রাখবি,তারপর শেষে গিয়ে ৩-৪লাইন সুন্দর করে লিখবি।তবে বানান সঠিক ভাবে লিখবি এবং প্যারা করে লিখবি।টিচার রা এতো খেয়াল করে না।কারণ, তাদের অনেক খাতা দেখতে হয়।আমার কথা মতো চললে দেখবি তুই অনেক দূর এগিয়ে যাবি।”

“নিধির এই হ-য-ব-র-ল গল্প এবং কথাগুলো শুনে তোহা ভাবলো,’এইসব আগডুম-বাগডুম-ঘোড়াড্ডুম কথা যদি পরীক্ষার খাতায় লিখে আসি, তাহলে ১০ এর মধ্যে লাড্ডু ও জুটবে না।’ভেবে বললো,’আপু তুমি তো মূলভাব বললে।এখানে তো অনেকগুলো সাল দেওয়া আছে।সেগুলো তো পড়তে হবে।”

” ওহহ আচ্ছা আমি তো মূলভাব টা বললাম।তুই এখন নৈর্ব্যক্তিকে গিয়ে সাল গুলো পড়ে নিবি।আর আমি হেডফোন দিয়ে গান শুনছি।”

“তোহা বললো,’আপু একটা কথা বলি?”

“হুমম বল।”

“তুমি এতোগুলো বিয়ে কেনো ভাঙলে?তোমার তো বয়ফ্রেন্ড ও নেই তাহলে?”

“নিধি ক্ষুদ্র নিঃশ্বাস ছেড়ে বললো,’আরে আমি সাইকো টাইপ লাইফ পার্টনার চাই,তাই।যেগুলো এসেছে সবাই কে মদন মদন লাগে।এতো ভদ্র পুরুষ আমার পছন্দ নয়।আমার জন্য একটু পা**গলামি করবে,চেহারার মধ্যে একটা নীরব ঘা**তক ভাব থাকবে;এমন একজন কে চাই।”

“তোহা একটু ভেবে বললো,’তাহলে আপু তুমি পাবনা মানসিক হসপিটালে যাও।সেখানে অনেক সাইকো টাইপ ছেলে পেয়ে যাবে।”

“নিধি কটমটিয়ে বললো,’আরে ধুর..আমি এতো টা সাইকো চাই না।জাস্ট আমার জন্য পা**গল প্রেমিক চাই।ওগুলো তো ক্ষ্যা**পাটে পা**গল।তাদের দেখলে আমার খুব ভ**য় লাগে।আচ্ছা তুই এতো পকপক করছিস কেনো?এখান থেকে যাহ!”

“তোহা বললো,’আপু তুমি তো বলেছিলে আমাকে চলনবিলে ঘুরতে নিয়ে যাবে।সেটার কি হলো?”

” আরে আগে বাবার কাছ থেকে শুনি মাহতিম কি বললো,প্ল্যান সাকসেসফুল হলে নিয়ে যাবো।”

“নিধি এবং তোহার কথার মাঝেই গমগমে কন্ঠে ড্রয়িং রুম থেকে রফিক মির্জার কন্ঠ ভেসে আসলো।তিনি নিধি কে ডাকছেন।রফিক মির্জা নিধি কে ‘নিরুপমা’ বলে ডাকে।তার কাছে তার প্রথম কন্যা সন্তান ‘অতুলনীয়া’।তাই শখ করে নাম রেখেছেন ‘নিরুপমা’।আর তাহমিনা বেগম তার সাথে যোগ করে ‘নিধি’ নাম রেখেছেন।রফিক মির্জার গম্ভীর কন্ঠে ডাক শুনে নিধি শুকনো ঢোক গিলে তোহা কে বললো,’বাবা কে মনে হয় মাহতিম কিছু বলেছে।সেইজন্যই হয়তো ডাকছে।চল গিয়ে শুনে আসি।”

———
“ড্রয়িং রুমে মুখে একরাশ হতাশা নিয়ে বসে আছেন রফিক মির্জা এবং তাহমিনা বেগম।রফিক মির্জার কপালে চার ভাজ স্পষ্ট।তাদের চেহারা দেখে নিধি এবং তোহা যা বোঝার বুঝে গেছে।ওদের দু’জনের এখন খুব হাসি পাচ্ছে। কিন্তুু এই মুহূর্তে হেসে দিলে সব প্ল্যান ডিসমিস হয়ে যাবে।তাই ওরা দু’জনেই হাসি কন্ট্রোল করে নিচের দিকে তাকিয়ে রইলো।”

“রফিক মির্জা নিধির দিকে কয়েক সেকেন্ড স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে শান্ত স্বরে বললেন, ‘মাহতিম প্রস্তাব টা ফিরিয়ে নিয়েছে।”

“নিধি মনে হয় আকাশ থেকে এইমাত্র টুস করে পড়লো।এমন ভাব নিয়ে বললো,’কি বলো বাবা?কেনো?”

“রফিক মির্জা ক্ষুদ্র নিঃশ্বাস ছেড়ে বললেন,’জানিনা।মাহতিম কে কারণ জিজ্ঞেস করলে, সে বলেছে তার কিছু ব্যক্তিগত সমস্যার কারণে এখন বিয়ে করতে পারবে না।আমিও আর জোর করিনি।মেয়ের বাবা হয়ে এতো প্রশ্ন না করাই উত্তম।”

“নিধি তো খুশিতে মনে মনে আকাশে উড়ছে।চোখ-মুখ খিঁচে হাসি আটকে রেখে;মুখে দুঃখী দুঃখী ভাব নিয়ে বললো,’বাবা এইবার তো আর আমাকে দোষারোপ করতে পারবে না।আমি কিন্তুু কিছুই করিনি।আমিও তোমার কথায় রাজি হয়েছিলাম।কতো স্বপ্ন দেখেছিলাম।সব স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে গেলো।সে আমাকে পছন্দ করেছে,আবার সে না করে দিয়েছে।থাক বাবা এইসব নিয়ে আমার ২-৩দিনের বেশি মন খারাপ থাকবে না।তুমি চিন্তা করো না, আমার ভাগ্যে যে থাকবে,সেই আসবে।”

“রফিক মির্জা নিধি কে স্বান্তনা দেওয়ার জন্য ডেকেছিলেন। উল্টো নিধি তাকে স্বান্তনা দিলো।”

“তাহমিনা বেগম রফিক মির্জার কাঁধে হাত রেখে বললেন,’থাক এতোটা দুশ্চিন্তা করো না।তোমার প্রশার লো হয়ে যাবে।অনেক রাত হয়েছে ঘুমাতে চলো।আর তোরাও রুমে যা।”

“নিধি এবং তোহা দ্রুত সেখান থেকে কেটে পড়লো।”

“রুমে গিয়ে তোহা বললো,’বাব্বাহ!মনে হয় মাত্র বাঘের খাঁচা থেকে জান নিয়ে বের হলাম।যাইহোক আপু প্ল্যান তো সাকসেসফুল হলো।এখন তো ঘুরতে নিয়ে যাবে?”

“নিধি কটমটিয়ে বললো,’ওই মাইয়া এই রাতে কিভাবে তোকে ঘুরতে নিয়ে যাবো?”

“আমি এখন বলতে রাতে বুঝাইনি।আগামীকাল নিয়ে যাও।”

“নিধি চিবুকে দুই আঙ্গুল ঠেকিয়ে ভেবে বললো,’নাহ ২-৩দিনের মধ্যে ঘুরতে যাওয়া ঠিক হবে না।কারণ এখন বাবা-মায়ের মনের অবস্থা বিষন্ন।২-৩দিন পর আমি নিজেই বাবা কে বলে তোকে ঘুরতে নিয়ে যাবো।আর এতো শুভ একটি কাজ সম্পন্ন হওয়াতে, তোকে নিয়ে আগামীকাল শপিং করতে যাবো।তোকে এক জোড়া এয়ারিং আর পায়েল গিফট করবো।”

“এটা শুনে তোহার খুশিতো আকাশচুম্বী।তোহা আজ আর পড়তে বসলো না।নিধি কে অনেক বার ধন্যবাদ দিয়ে ঘুমাতে চলে গেলো।দুই বোন রাত সাড়ে ৯টার দিকে ঘুমিয়ে গেলো।”

————-
“এদিকে রাতে নাদিয়া ওর বয়ফ্রেন্ড দিগন্তের সাথে কথা বলার এক পর্যায়ে বললো,’জানো হার্টবিট আজ কে আমি একটা মহৎ কাজ করেছি।”

“অপরপাশ থেকে আদুরে কন্ঠে দিগন্ত বললো,’কি করেছো বাবু?”

“উফফ তোমাকে না বাবু বাবু বলতে নিষেধ করেছি?নেক্সট টাইম এই বাবু নামে আমায় ডাকবে না।বাবু নামে ডাকলে মনে হয়, আমি এখনও ফিডার খাই।তুমি আমাকে ‘হানি’ বলে ডাকবে।”

“ওকে হানি বলো,কি এমন মহৎ কাজ করেছো?”

“নাদিয়া খিলখিল করে হেসে বললো,’আজ আমি তোমার বেস্টফ্রেন্ড নির্জন ভাইয়ার ছবির সাথে, আমার বান্ধবী নিধির ছবি এডিট করে ওর বিয়ে ভাঙতে হেল্প করেছি।মেয়েটা আমায় অনেক রিকোয়েস্ট করছিলো ওকে হেল্প করার জন্য।তাই ওর কথা ফেলতে পারিনি।তবে পিকগুলো আমার এতোটাই ভালো লেগেছে যে আমি ফেইসবুকে আপলোড করেছি।আর তোমাকে ট্যাগ ও করেছি,দ্যাখো দ্যাখো।”

“দিগন্ত এতক্ষণ শুয়ে কথা বলছিলো।যখন নাদিয়ার মুখে এই কথাগুলো শুনলো,তাড়াতাড়ি শোয়া থেকে উঠে বসে বললো,’কি?আর ইউ ম্যাড?তুমি জানো না নির্জন ইন্ট্রোভার্ট টাইপের ছেলে?ও নিজেকে সবসময় গুটিয়ে রাখতে পছন্দ করে।আর সেখানে তুমি ওর সাথে একটা মেয়ের ছবি এডিট করে হেল্প করেছো?তারপর আবার ফেইসবুকেও আপলোড করেছো?কতক্ষণ হয়েছে আপলোড করেছো?”

“একি তুমি এতো রেগে যাচ্ছো কেনো?মাত্র ৩টা ছবি ১ঘন্টা যাবৎ আপলোড করেছি।তাও আবার হ্যাস ট্যাগ দিয়ে লিখে দিয়েছি ‘ফান পোস্ট।’সবাই বিষয় টা বুঝবে।”

“নাদিয়ার কথাগুলো দিগন্তর কাছে নিমপাতার থেকেও তিতা লাগছে।রাগে নিজের চুলগুলো নিজে ছিঁড়ে ফেলতে মন চাইছে।কিন্তুু এখন রাগ দেখালে চতুর্থ বার ব্রেকআপ হয়ে যাবে।সবার অভিশাপে এরপর আর গার্লফ্রেন্ড জুটবে না।তাই রাগ কন্ট্রোল করে বললো,’দেখো হানি তুমি হয়তো নির্জন কে ভালোভাবে চেনো না।আমি ওকে কাছে থেকে চিনি।ও ইন্ট্রোভার্ট এবং খুব রাগী একজন মানুষ।ক্যাম্পাসে থাকাকালীন ওকে একবার একজন সিনিয়র র্যা**গিং করেছিলো বলে ও তাকে গভীর রাতের বেলা সাদা ভূতের মতো ড্রেস পড়ে ভ**য় দেখিয়েছিলো।বেচারা অনেক দিন ট্রমায় ছিলো।তারপর তাকে আর ক্যাম্পাসে দেখা যায়নি।বিষয়টা শুধু আমি জানি,আজ তোমাকেও বললাম।ও যদি একবার জানতে পারে এই কাজ তুমি করেছো,তাহলে আমার কি হবে বুঝতে পারছো?আমার হার্টবিট তো মিস হয়ে যাবে হানি।তোমরা ফ্রেন্ড রা হয়তো বিষয়টি নিয়ে মজা করবে।কিন্তুু নির্জন খুব সিরিয়াস ভাবে নেবে।প্লিজ হানি ছবি টা ডিলিট করে ফেলো।”

“দিগন্তের কথা শুনে নাদিয়া বেশ ভ**য় পেলো।বললো,’ঠিকাছে আমি এক্ষুনি ডিলিট করে দিচ্ছি ডোন্ট ওয়ারি জান।'(কিন্তুু ততক্ষণে যা হওয়ার হয়ে গেছে।)

————–
“এদিকে রাত সাড়ে ১০টার দিকে অফিসের ডেস্কে বসে ল্যাপটপে অফিসের কিছু কাজ করছিলো নির্জন।তখনই তার হোয়াটসঅ্যাপে তার ফ্রেন্ড মাহাদের ম্যাসেজ আসলো।নির্জন হোয়াটসঅ্যাপে গিয়ে ভ্রু জোড়া কুঁচকে দেখলো কয়েকটা ছবি।নির্জন ছবিগুলোর ওপর ক্লিক করতেই দেখলো, তার সাথে একজন অপরিচিত মেয়ের ৩টা ছবি।ছবিতে একে-অপরের হাত ধরে বসে আছে,কাছাকাছি বসে আছে,দু’জন-দু’জনের দিকে তাকিয়ে আছে।এগুলো দেখে তো নির্জন মনে হয় আকাশ থেকে পড়লো।তখনই টুং করে মাহাদের ম্যাসেজ আসলো,’কি রে ইন্ট্রোভার্ট পোলা নিজেকে তো সবসময় সিঙ্গেল দাবি করিস।অথচ ভেতরে ভেতরে টেম্পু চালাও।যাক কংগ্রাচুলেশন ইয়ার।”

“ম্যাসেজ দেখে তো নির্জনের মাথা পুরো গরম হয়ে মনে হয় টগবগ করে ফুটতে থাকলো।কপালে চার আঙ্গুল দিয়ে স্লাইড করে গম্ভীর কন্ঠে বললো, ‘এই জ**ঘন্যতম অ**সভ্য কাজ টা যে করেছে, তাকে কঠিন থেকে কঠিনতম শাস্তি পেতে হবে।”

#চলবে….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে