হৃদয়ের সন্ধিক্ষণ পর্ব-১৬+১৭

0
574

#হৃদয়ের_সন্ধিক্ষণ
#পর্বঃ১৬
#ফারিহা_খান_নোরা
একটা পুরুষালি হাত তুরকে পিছনে থেকে আষ্টেপৃষ্ঠে জ’ড়ি’য়ে ধরেছে।একটু আগে নিষ্প্রভ তুরকে গেটের সামনে নামিয়ে দেয়। তখনকার ঘটনার পর থেকে তুর নিষ্প্রভের সাথে লজ্জায় একটা কথাও বলে নি।গেটের ভেতর দিয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতেই নজর আটকায় তার দিকে তাকিয়ে থাকা আতিয়ার পানে।তার দিকে এগিয়ে যেতে নিবে তাঁর আগেই এমন একটা বিশ্রী ঘটনার সম্মুখীন হয় তুর।কলজের সবাই তুরের দিকে তাকিয়ে আছে।তুর এক ঝটকায় নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে পেছন ফিরে চেনা পরিচিত এক যুবকের উপর চোখ পড়ে।তুর কিছুতেই এই যুবকটির থেকে এমন ব্যাবহার আশা করে নি।এ আর কেউ না,এ হলো তাদের ভার্সিটির বড় ভাই সিফন।

সিফন তুরের দিকে এমন ভাবে তাকিয়ে আছে যেন অনেকদিন ধরে তুরকে দেখে নি,সে তুরের জন্যই অপেক্ষা করছে।সিফনের চোখে তুরের জন্য হাজার ব্যাকুলতা। মুখে একটু কথা বলার আকুতি।তুর সেসব কিছু গুরুত্ব না দিয়ে উত্তেজিত কন্ঠে বলে,

‘এসব কি সিফন ভাই? আপনার থেকে আমি এমনটা আশা করি নি।’

সিফন তুরের একটু কাছে যেয়ে তুরের দিয়ে তাকিয়ে চোখে আকুতি নিয়ে বলে,

‘তুমি এতো দিন কোথায় ছিলে।কতো খুঁজেছি তোমায় জানো। আমি কেন এমন করছি তুমি বুজতে পারছো না?

তুর কাট কাট গলায় বলে,

‘না!’

বলেই পাশ কাটিয়ে চলে যেতেই সিফন তার পথ আটকায়।কাতর কন্ঠে বলে,

‘এতোদিন ভার্সিটি আসো নি কেন? রোজ তোমার জন্য এখানে আসতাম।’

তুর বিস্ময়ের চরম পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে। ঠান্ডা গলায় বলে,

‘আপনিই কি সেই ভাইয়া যে,আমাকে অই পিচ্ছিটার মাধ্যমে ফুল দিয়েছিলো?’

ঠোঁট কামড়ে হাসে সিফন।বলে,

‘উত্তরটা বুঝে নেও।’

‘আমার ক্লাস শুরু হয়ে যাবে পথ ছাড়ুন।’

‘সিফন যেই রাস্তা একবার ধরে,সে তার শেষ অবধি দেখে ছাড়ে।’

সিফনের গলার স্বরে কিছু একটা ছিল যা তুরের ভেতরটা নাড়িয়ে দেয়।কিছু সময় ভাবনায় মশগুল থাকে। কিছু বলতে যাবে তার আগে সিফন একটি অবাক করা কান্ড ঘটায়।প্যান্টের পকেট থেকে টুকটুকে লাল রঙের একটা গোলাপ বের করে চোখের পলকে তুরের সামনে হাঁটু গেড়ে বসে তুরকে প্রপোজ করে বসে।

‘আই লাভ ইউ তুর।আই লাভ ইউ সো মাচ।এই ভার্সিটিতে যেদিন তুমি প্রথম এসেছিলে তোমাকে দেখার পর তোমার প্রতি আমার মনে ভালোলাগা সৃষ্টি হয়েছিল।সময়ের পরিবর্তনের যা ভালোবাসা নামক সুন্দর অনুভূতি মনের কোনে রোপন হয়েছে। আমি ভেবেছিলাম তোমার অর্নাস শেষ করার পরে আমার মনের কথা খুলে বলবো কিন্তু এখন মনে হচ্ছে বলে দেওয়াই ভালো।তুমি শুধু আমার ভালোবাসা গ্রহণ করো কথা দিচ্ছি আমি সারাজীবন তোমাকে অনেক সুখে রাখবো।

মাঠের সবাই তাঁদের দেখছে।তুরের হাত পা কাঁপছে সেই সাথে গলা শুকিয়ে যাচ্ছে।মনে হচ্ছে এখনি সে মাথা ঘুরে প’ড়ে যাবে।সিফন এখনো তুরের সামনে হাঁটু গেড়ে বসে আছে। অদূরে আতিয়া স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।তুর কম্পনরত কন্ঠে স্বরে বলে,

‘আমি বিবাহিত,বিয়ে হয়েছে আমার।আমি আপনার ভালোবাসা গ্রহণ করতে পারছি না।তাই রাস্তা ছেড়ে দেয়াই আপনার জন্য ভালো। আমার রাস্তা ও আপনার রাস্তা পুরোপুরি আলাদা।’

হনহনিয়ে পা ফেলে ক্লাসের দিকে এগিয়ে যায় তুর।তার পিছন পিছন আতিয়াও চলে যায়।পেছনে ফেলে যায় একজোড়া বিস্মিত চোখ। পেছন থেকে সবটা লক্ষ্য করে নিষ্প্রভ।মাঝ রাস্তায় নিষ্প্রভ লক্ষ করে তুরের ফোন তার কাছেই রয়ে গেছে। দরকারি জিনিস কখন কোন সময় লাগে সে জন্য সে আবার কলেজে ব্যাক করে।আর এসেই এমন একটা ঘটনার সাক্ষী হয়।সে তাহলে ঠিক ধরেছিলো তুরের বয়ফ্রেড রয়েছে। নিষ্প্রভ ফোন ফেরত না দিয়েই অফিসে চলে যায় তবে কাজে মন দিতে পারে না।অফিসের বাকিটা সময় বিষময় ঠেকে নিষ্প্রভের নিকট।

স্বন্ধ্যা নাগাদ তুর বাসায় ফেরে।আজ অনেকটা দেরি করেই ফিরেছে সে।কারণ তাঁর মন খুব একটা ভালো নেই সেজন্য নিজেকে সময় দিতে একাই নদীর পাড়ে যায় সে।আতিয়াকেও দেখে মনে হলো সে কোনো কারণে বিষন্ন হয়ে আছে।তুরের পুরো শরীর কেমন জেনো করছে তার ডাস্ট এ্যার্লাজি রয়েছে।তুর ওয়াসরুমে ঢুকে সময় নিয়ে গোসল সারে।লাল রঙের একটা কামিজ পড়ে, চুলগুলো তোয়ালে দিয়ে প্যাঁচিয়ে সে বেরিয়ে আসে।ব্যালকনিতে গিয়ে চুলগুলো সামনে নিয়ে মুছতে থাকে আর ভাবতে থাকে নিজেকে নিয়ে।

রাত নয়টা! নিষ্প্রভ এখনো বাড়িতে আসে নি। ইলিয়াস মির্জা আফসান কে ছাড়াতে হন্য হয়ে উঠেছে। কিন্তু আ’ই’ন তাকে ছা’ড়’বে না,কারণ কে’স’টা কো’র্টে উঠেছে। আশা বেগম হঠাৎ করেই বেশ চুপচাপ হয়ে আছে।না জানি ভেতরে ভেতরে কি ছক কষছে সে।এই মহিলার বিশ্বাস নাই !

তুর হঠাৎ করেই নিষ্প্রভের দেওয়া একটা লাল রঙের শাড়ি পরিধান করে।মুখে হালকা মেকআপ করে,চোখে গাড়ো কাজল, ঠোঁটে লাল লিপস্টিক।চুল গুলো ক্ষোপা করে আর্টিফেসিয়াল গাজরা লাগায়।আয়নায় নিজেকে দেখে সে নিজেই মুগ্ধ হয়ে যায়।আজ সে সেজেছে শুধুমাত্র নিষ্প্রভের জন্য। আজ তুর নিষ্প্রকে বলবে এই সম্পর্কটাকে সে এগিয়ে নিতে চায়।তুর অন্যপাশ হয়ে দাঁড়িয়েছে আছে।

নিষ্প্রভ এসেছে তুর তা লক্ষ্য করে নি। নিষ্প্রভ এসেই সম্মুখীন হয় তুরের এমন আগুন সৌন্দর্যের।কি আবেদনময়ী লাগছে মেয়েটাকে।মেয়েটাকে কি ভীষণ মিষ্টি লাগছে! সাজগোজ করছে মেয়েটা।মেয়েলি সুবাস নিষ্প্রভকে ক্ষ’ত’বি’ক্ষ’ত করে ফেলছে।নি’ষি’দ্ধ ইচ্ছা জানান দিচ্ছে বারবার।মন বলছে ও তোর বউ।ওর সব কিছুতেই তোর অধিকার আছে। অথচ মস্তিষ্ক বলছে, ও তোর জন্য সাজে নি,ও অন্য কাউকে ভালোবাসে। মন, মস্তিষ্কের মাঝে নিষ্প্রভ মস্তিষ্ককে জয়ী করল।পরক্ষণে তার সকালের ঘটনা মনে পড়ে গেল। তুরের পাশে গিয়ে সিগারেট ধরালো। নিষ্প্রভকে তুর পাশে দেখে স্বাভাবিক কন্ঠে শুধালো,

‘কখন এলেন?’

‘আমি কখন আসি না আসি তোমাকে বলতে হবে?’

তুর নিষ্প্রভের রাগের কারণ বুঝতে পারে না। সে এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করে,

‘সিগারেট খাচ্ছেন কেন? আগে তো কখনো খেতে দেখিনি!’

‘এই তুমি আমার ব্যাপারে নাক গলাচ্ছ কেন? তোমার ব্যাপারে তো আমি নাক গলাই না। রাস্তায় তো ভালোই ছেলেদের গায়ে ঢলে পড়। নাকি বাইরে, ঘরে দুজন লাগে তোমার।’

নিষ্প্রভের এমন কথায় রাগে, অপমানে তুরের চোখে পানি চলে আসে। সে উচ্চস্বরে বলে,

‘মাইন্ড ইউর ল্যাঙ্গুয়েজ নিষ্প্রভ। বিয়ে করেছেন বলেই এসব নোং’রা কথা আমায় বলতে পারেন না।

নিষ্প্রভ তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলে,

‘নোং’রা কে নোং’রা ও বলতে পারবো না?বাইরে গিয়ে ছেলেদের গায়ে ঢলে পড়তে পারবে,আর আমি স্বামী হয়ে কিছু বললেই দোষ। আমি তোমায় ডিভোর্স দিতে চেয়েছিলাম,কিন্ত তারপর মনে হয়েছিল এই সম্পর্কটাকে একটা সুযোগ দেই । কিন্তু তুমি কি করলে, রাস্তার দাঁড়িয়ে ছেলেদের সঙ্গে এসব করে বেড়াচ্ছো। একদিন বাচ্চা ছেলে এসে ফুল দিচ্ছে আরেকদিন তোমার বয়ফ্রেন্ড এসে ফুল দিয়ে প্রপোজ করছে। তুমি কি মনে করছো আমি কিছু বুজতে পারি না’

‘আপনি আমায় ভুল বুঝলেন নিষ্প্রভ।আমি সব সহ্য করতে পারি কিন্তু , আমার চরিত্রে আঙুল তুললে আমি সহ্য করতে পারি না।’

‘তুমি আমায় বাধ্য করলে।’

তুর আকুতি ভরা কন্ঠে নিপ্রভের কাছে যেয়ে হাত জোড় করে বলে,

‘আপনি আমার পুরো কথাটা আগে শুনুন সব সময় চোখের দেখা সত্তি হয় না।’

নিষ্প্রভ তুরের দিকে তাকিয়ে হিসহিসিয়ে বলে,

‘তোমার কোনো কথা শোনার ইচ্ছা বা আগ্রহ কোনোটাই আমার নেই।তোমাদের মতো মেয়েদের একটা দিয়ে হয় না। আমি এজন্য সুন্দরী মেয়ে বিয়ে করতে চাইছিলাম না।কারণ তাদের এই সুন্দর চেহারার পিছনে কুৎ’সি’ত মন লুকানো থাকে। এজন্য আমি সব সময় চাইতাম যার মন সুন্দর আমি তাঁকে বিয়ে করবো কারণ আমার কাছে এসব রূপ, চেহারা,শরীর ফ্যাক্ট নয় #হৃদয়ের_সন্ধিক্ষণ ই সবকিছু।দুটি হৃদয়ে‌ এর ই যদি মিল না থাকে তাহলে শরীর দিয়ে কি হবে? ভাগ্যক্রমে তোমার সাথে এই সম্পর্কে জড়িয়ে গেলাম কিন্তু তুমি কি করলে! দুঃ’চ’রি’ত্রা মেয়ে মানুষ।’

কথাটি বলার সাথে সাথেই নিষ্প্রভ তার বাম গালে চি’ন’চি’ন ব্যা’থা অনুভব করে।সে গালে হাত দিয়ে হ’ত’বা’ক হয়ে সামনে তাকিয়ে থাকে।

চলমান।

#হৃদয়ের_সন্ধিক্ষণ
#পর্বঃ১৭
#ফারিহা_খান_নোরা
তুর নিষ্প্রভকে গায়ের জো’রে সর্বশক্তি দিয়ে থা’প্প’ড় মে’রে’ছে। নিষ্প্রভ গালে হাত দিয়ে তুরের পানে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।সে থমকে যায় শান্তশিষ্ট মেয়ের এমন আচারণ দেখে।তুর নিষ্প্রভের শা’র্টে’র ক’লা’র ধরে ক্রন্দনরত অবস্থায় বলে,

‘অনেক বলে ফেলেছেন আর একটা কথাও নয়। আমি আমার চরিত্রের সার্টিফিকেট আপনার থেকে নিবো না। আমি কেমন সেইটা আমি নিজেই জানি।আজ আপনি আপনার নিচু মন মানসিকতার সাথে আমার পরিচয় করে দিয়েছেন। আমি ভাবতেও পারিনি আপনি আমার পুরো কথা না শুনে এমন জ’ঘ’ন্য কথা বলে আমাকে অসম্মান করবেন।’

নিষ্প্রভ তুরকে দেখে ক্ষনে ক্ষনে অবাক হয়ে যায়। নিষ্প্রভ তুরের এ কোন রূপ দেখছে।এ তুরের সাথে তো নিষ্প্রভ পরিচিত নয়।তুরের বুকে একরাশ ঘৃ’ণা জমছে।চোখের কার্নিশ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে।তুর ঘৃ’ণা মিশ্রিত কন্ঠে আবার বলতে শুরু করে,

‘আমার কপালটায় এমন জানেন তো,যখন একটু ভালো থাকার চেষ্টা করি ঠিক তখনি কোনো ঝ’ড় এসে সবকিছু এলোমেলো করে দেয়।আমার জীবন এমন না হলেও পারতো।প্রথমে আমার মা আমার জীবণটা নিয়ে জুয়া খেলল ভাগ্যক্রমে আপনার সাথে জরিয়ে পড়লাম।আপনি বাসর রাতেই আমাকে ডিভোর্স দিতে চাইলেন।আমিও চুপ ছিলাম কারণ আমি আপনার ইচ্ছার বিরুদ্ধে আপনার জীবণে এসেছি।তারপর ধীরে ধীরে আপনাকে আমার ভালো লাগতে শুরু করে।একটুর জন্য আমার মনে হয়, আপনি‌ও আমায় পছন্দ করেন। সেজন্য তো আমি আপনাকে নিজের মনের কথা বলবো বলে আপনার জন্য এভাবে সেজেছি।আজ আমি আপনাকে বলতাম আমাদের এই অপ্রত্যাশিত সম্পর্কটাকে স্থায়ী করতে।কিন্তু এটা মনে করা ছিলো আমার জন্য সম্পূর্ণ ভুল। তারপর একটু থেকে তুর আবার বলতে শুরু করে,

‘বুজতে পারছি আমি আপনার কাছে গলায় কাঁটার মতো বিঁধে আছি। আপনি আমায় না পারছেন গিলতে না পারছেন ফিলতে। আমি নিজেই এই সম্পর্ক আর রাখতে চাই না।যে সম্পর্কে ভালোবাসা তো দূর বিশ্বাস, ভরসা, সম্মান কোনোটাই নেই সেই সম্পর্ক রেখেও লাভ নেই।’

নিষ্প্রভ বাকরুদ্ধ হয়ে যায়।সে বুজতে পারছে না তাঁর কি করা বা বলা উচিত।সে আহত দৃষ্টিতে তুরকে আবার‌ও প্রশ্নবিদ্ধ করে।

‘তোমার ক্লাস শেষ হয় একটায়।আমি বিকালে বাড়িতে এসে দেখি তুমি নেই।তাহলে এতো সময় কোথায় ছিলে?’

তুর নিজেকে ধাতস্থ করে তাচ্ছিল্যপূর্ণ কন্ঠে বলে,

‘সেজন্য বুঝি মনে করছেন। ভেবেছেন আমি ছেলেদের সাথে ঢলাঢলি করতে তাদের বি’ছা’না অবধি গেছি?’

নিষ্প্রভ রে’গে যায়।রা’গে’র ফলে তাঁর কপালের দুই পাশের রগ ফুলে যায়।সে ধ’ম’কে’র স্বরে চিৎকার করে বলে ওঠে,

‘তুর।’

এমন চিৎ’কা’রে তুর কেঁপে উঠে। অবজ্ঞার স্বরে সম্পুর্ন ঘটনা বলে তারসাথে এটাও বলে,

‘আপনার থেকে আফসানকে বিয়ে করায় ভালো ছিল কারণ ও খারাপ সবাই তা জানে লুকিয়ে রাখার কিছু নেই কিন্তু আপনি? খোলস পড়ে ঘুরে বেড়ান।’

সব শুনে নিষ্প্রভের নিজের প্রতি ভীষণ রা’গ হয়। কিন্তু শেষর কথা শুনে তুরের উপর রে’গে যায় সে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,

‘কি বললে তুমি? আফসান আফসান আর আফসান।সে আমার জীবণটা শেষ করে দিলো।’

তারপর গাঁয়ের সর্বশক্তি দিয়ে দেওয়ালে ঘু’ষি মে’রে রা’গ নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে নিষ্প্রভ । কিন্তু ফলাফল সফল না হলে, রুম থেকে বেরিয়ে যায়।তার হাত থেকে র’ক্ত চুয়ে চুয়ে প’ড়’ছে।তুর শাড়ি আঁচলা দুই হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরে বারান্দায় যেয়ে মেঝেতে লুটিয়ে পড়ে। হাউমাউ করে কাঁদতে থাকে।

_________________________

ভোরের দিকে নিষ্প্রভ বাড়ি ফিরে আসে এতক্ষণ ফুটপাতে বসেছিলো সে।রুমে এসে তার দৃষ্টি যায় ব্যালকনিতে অগোছালো ভাবে বসে থাকা তুরের পানে।মেয়েটাকে খুব বিষন্ন দেখাচ্ছে। কাল রাতে নিষ্প্রভে তুরের সাথে বেশি বা’জে ব্যবহার করে ফেলে মনের অজান্তেই।নিষ্প্রভ অনুসুচনা ও দ্বিধা নিয়ে এগিয়ে গেল তুরের দিকে।

তুর উপস্থিতি টের পেল নিষ্প্রভের, কারণ সে সারারাত এভাবেই জেগে ছিলো। হাঁটু থেকে মাথা তুলে সামনে চোখ মেলে একবার তাকালো নিষ্প্রভের দিকে। মানুষ মুখ কি স্নিগ্ধ লাগছে।অথচ এই স্নিগ্ধ মুখ দেখলে বোঝাই যায় না এই মুখনিঃসৃত কথাগুলো কাউকে ক্ষ’ত’বি’ক্ষ’ত করতে পারে।তুরের চোখে আবার ও পানি আসে।চোখের পানি আড়াল করতে দৃষ্টি সরিয়ে নিল। নিষ্প্রভ তুরের পাশে হাঁটু ভেঙ্গে ফ্লোরে বসে পড়ে।তুরের মুখ উচু করে ধরে কাতর স্বরে বলে,

‘বেশি আঘাত করে ফেলেছি তাই না?’

তুর মুখ সরিয়ে নিয়ে ঝামটা দিয়ে বলল,

‘আপনি তো কমই বলেছেন।এর থেকে বেশি কিছু আপনার থেকে আশা করি।’

‘তুর!’

‘চেঁ’চি’য়ে ভালো পুরুষ হ‌ওয়া যায় না।আপনাদের মতো কিছু পুরুষ আছে যারা যখন ইচ্ছে হয় ব‌উ এর উপর চেঁ’চা’মে’চি করে আবার যখন ইচ্ছে হয় ব‌উকে কাছে টেনে নেয়।ব‌উকে তারা নিজের হাতের পুতুল মনে করে।আপনিও ঠিক তাদের দলে।’

‘নিজের বউকে মাঠ ভরা মানুষের সামনে অন্য পুরুষকে প্রপোজ করতে দেখে আমি ঠিক থাকব? তাছাড়া তুমি যেতেই ছেলেটা তোমাকে জরিয়ে ধরেছিল।’

‘এখানে আমার দোষটা কোথায়? আমি কি তাকে বলেছিলাম আমাকে জড়িয়ে ধরতে নাকি বলেছিলাম প্রপোজ করতে?’

নিষ্প্রভ অসহায় ভঙ্গিতে বলে,

‘আমি জানি তোমার দোষ নেই।তবে তুমি কেন ওর এসব মুখ বুঝে দেখতে গেলে।হাত ছিলো না তোমার থা’প্প’ড় মে’রে দিতে।’

‘এতো মানুষের সামনে আমি লোকটাকে থা’প্প’র দিবো কেন? এমনটা করলে সে লজ্জা পেতো আমার খা’রা’প লাগতো।’

‘ওহ, লোকটাকে থা’প্প’র মা’র’লে তোমার খা’রা’প লাগতো। আর স্বামী! আমাকে তো থা’প্প’র ঠিক মা’র’লে এতে তোমার খারাপ লাগে নি?’

তুর কাট কাট গলায় বলে,

‘না, খারাপ লাগে নি।মাত্র একটা মে’রে’ছি আমার আরও তিন থেকে চারটা থা’প্প’র মা’রা উচিত ছিলো আপনাকে।আপনি আমার চরিত্র নিয়ে বাজে কথা বলেছেন যেখানে দোষটা আমার ছিলোই না।’

তুর বলতে বলতে হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করে।তুরের কান্না দেখে নিষ্প্রভের ভিতরটা ভে’ঙে যাচ্ছে এমন হয়।সে আর বেশি সময় না নিয়ে তুরকে নিজের সাথে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে নেয়।কাতর হয়ে বলে,

‘আমার থেকে নিজের অজান্তেই অনেক বড় ভুল হয়েছে ব‌উ।দয়াকরে আমায় মাফ করে দাও।কথা দিচ্ছি আর কখনো এমন হবে না।তবুও তুমি কান্না করো না পাখি।’

নিষ্প্রভের বুকের মধ্যে তুর থাকতে চাইছে না,ছটফট করছে আর বলছে,

‘ছাড়েন আপনি আমায় স্পর্শ করবেন না।আমি খারাপ মেয়ে তাহলে আমার কাছে আসছেন কেন? ভালো মেয়ের কাছে যান।আমি তো আপনার চোখে দুঃ’চ’রি’ত্রা। আমি আপনার কাছে থাকবো না।’

বলেই নিষ্প্রভকে ধাক্কা দিতে শুরু করে। নিষ্প্রভকে এক চুল ও নড়াতে পারে না। নিষ্প্রভ বলে,

‘তুমি এমন করো না ব‌উ। আমার ভুল আমি স্বীকার করছি। আমি তোমার পা’য়ে পড়ি। তুমি যা বলবে এখন থেকে আমি তাই করবো।আগের সবকিছু ভুলে আমরা নতুন করে সব শুরু করবো।ওসব ডিভোর্স বাদ,তোমাকে তিন কবুল বলে বিয়ে করছি দরকার হলে এবার ছয় কবুল বলে বিয়ে করবো তাও তুমি আমাকে ছেড়ে যেও না।আমি আমার ভুল বুজতে পেরেছি মাফ করে দেও ব‌উ।’

এসব বলে নিষ্প্রভ তুরের পা ধরতে যায়।তুর নিষ্প্রভের সব কথা মনোযোগ সহকারে শুনছিলো শেষের কথা শুনে তুর তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে।মানুষটা ক্ষমা চাইছে নাকি তারসাথে ম’শ’ক’রা করছে।ছয় কবুল বলে বিয়ে করবে? আদেও কেউ ছয় কবুল বলে এর আগে বিয়ে করেছিলো নাকি!

‘পাগলের বাচ্চা’

এই কথাটা বলেই তুর তাড়াতাড়ি ফ্লোর থেকে উঠে রুমে এসে বারান্দার দরজা লাগিয়ে দেয়।নিষ্প্রভ বেচারা বারান্দায় বন্দি হয়ে থাকে। নিষ্প্রভ চেঁ’চি’য়ে বলে,

‘এটা কি হলো?’

‘শাস্তি ,আপনি এভাবেই থাকেন।’

‘ওহ এভাবে কিছুক্ষণ থাকলে তুমি আমায় ক্ষমা করে দিবে।’

নিষ্প্রভ প্রফুল্ল কন্ঠে বলে।তুর একটু কন্ঠ বাড়িয়ে বলে,

‘জি না! এটা আমাকে ছয় কবুল বলে বিয়ে করতে চাওয়ার শাস্তি।বাকি গুলো নিয়ে পড়ে ভাববো’

নিষ্প্রভ অসহায় হয়ে বলে,

‘যাহ্ বাবা এটা কি হলো।তিনের জায়গায় ছয় বললাম যাতে করে অন্য ব‌উয়ের থেকে আমার ব‌উয়ের মনে স্বামীর প্রতি ভালোবাসটাও বেশি হয়, থাক তো ভালোবাসা আমার বউ এর জন্য আমার শাস্তির ব্যাবস্থা করলো।এই শীতে ভোর বেলা বারান্দায় দাঁড়িয়ে নিষ্প্রভ ঠান্ডায় কাঁপছে। কাঁপা কাঁপা ঠোঁট সে এসব বলল।’

___________________

সকাল দশটা! নিষ্প্রভ এক নাগাড়ে হাঁচি ফেলছে।তুর বেশ মজা পাচ্ছে। লিভিং রুমে ইলিয়াস মির্জা ও আশা বেগম বসেছিলো।আফসানকে কি ভাবে ছাড়ানো যায় সেই বুদ্ধি করছে। ইলিয়াস মির্জা বিশ্বাস করে আফসান নির্দোষ।তুর ও নিষ্প্রভ খাবার টেবিলে বসে। হঠাৎ করেই সদর দরজার কলিং বেল বেজে ওঠে। সিতারা দরজা খুলে দেয়।একটা অচেনা ভদ্রলোক প্রবেশ করে।আশা বেগম বসে থাকা অবস্থায় দাঁড়িয়ে পড়ে। ইলিয়াস মির্জা অজ্ঞাত লোকটিকে উদ্দেশ্য করে বলে,

‘আপনি কে আপনাকে তো চিনলাম না!’

লোকটি গমগমে স্বরে বলে,

‘আমি আফসানের বাবা……..’

চলমান।।

*বিঃদ্রঃ ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে