হৃদয়ের সন্ধিক্ষণ পর্ব-১১+১২

0
552

#হৃদয়ের_সন্ধিক্ষণ
#ফারিহা_খান_নোরা
#পর্বঃ১১
অন্ধকার হয়ে থাকা এই রাত্রিতে নিষ্প্রভের ছোট্ট হৃদয়টাতেও আঁধার নেমে এসেছে।তার মনে একটাই প্রশ্ন ঘুরছে,তাহলে কি তুর চাইছে নিষ্প্রভ তাঁকে ডিভোর্স দিক! নিষ্প্রভ তুরের দিকে তাকিয়ে অসহায় কন্ঠে বলল,

‘তুমি কি ডির্ভোস চাও?’

তুর এবার একটু জোরেই হেঁসে উঠে।সেই হাসিতে কোনো মুগ্ধতা ছিলো না,ছিলো একরাশ তাচ্ছিল্য।তুর কন্ঠস্বর নিচু রেখে বলল,

‘আমার চাওয়া না চাওয়ার দাম আছে কারো কাছে? আমি তো ফেলনা,যে যেভাবে খুশি সেভাবে আমাকে ব্যাবহার করছে।মায়ের টাকার প্রয়োজন ছিলো আমাকে ইউজ করছে বান্ধবীর ল’ম্প’ট ছেলের সাথে বিয়ে দিতেও পিছুপা হয় নি,ভুলক্রমে আপনার সাথে বিয়েটা হয়েছে আপনার প্রয়োজন পড়লে ডিভোর্স দিবেন এতে আমার মতামত নেওয়ার কোনো দরকার নেই। আমার জীবণ কখনো আমার ইচ্ছায় চলে না।অন্যের স্বার্থে তাদের ইচ্ছা আমার ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়া হয়।’

তুরের কথায় নিষ্প্রভ বাকরুদ্ধ হয়ে যায়।সে কিছুটা হলেও বুজতে পারছে তুরের কষ্ট।কারণ মাত্র চার বছর বয়সে নিষ্প্রভের মা মারা যার।সেদিন থেকে তার জীবণে কষ্টের সূচনা হয়।তাঁর মা মারা যাবার ৪০ দিন না যেতেই তাঁর বাবা বিয়ে করে আশা বেগম কে নিয়ে আসে। তাঁর বাবার কথা নিষ্প্রভের জন্য এতো তাড়াতাড়ি দ্বিতীয় বিয়ে করছে। কিন্তু আসল কারণ তো সে জানে যদিও বুদ্ধি হবার পর সত্য চোখের সামনে এসেছে যাইহোক বাবা বিয়ে করে বউ পেয়েছে ঠিকই কিন্তু সে মা পায় নি। মূল কথা আশা বেগম তাঁর বাবার ব‌উ কিন্তু তাঁর মা নয়।তার মতে সৎ মা বাবার ব‌উ এর অভাব দূর করতে পারে কিন্তু একটা সন্তানে মায়ের অভাব দূর করতে পারে না।এই আশা বেগমের জন্যই নিষ্প্রভের ছোট বেলা দুর্বিসহ হয়ে যায়।এই মহিলা এসেই তাঁর বাবাকে তাঁর থেকে দূরে সরে দিয়েছে।

অতীতের কষ্ট থেকে বেরিয়ে এসে নিষ্প্রভ শান্ত কন্ঠে তুরকে বলল,

-‘দেখো আমি তোমার দিকটা বুজতে পারছি।আমি এভাবে কথাটা বলতে চাই নি।আমি জানি বাবা মা না থাকার কষ্ট ঠিক কতখানি কারণ আমার মা নেই বাবার কথা আর কি বলি থাক বাদ দেও।আর তোমার মা থেকেও নেই, আমার কথা তোমার খারাপ লাগতে পারে তবুও এসব বলতে বাধ্য হলাম।’

তুর নিষ্প্রভের দিকে তাকিয়ে বলল,

‘বাদ দেন এসব। আপনার ডিভোর্স লাগলে আপনি পেপার রেডি করবেন আমি সিগনেচার করে দিবো।আর হ্যা এসব ঝামেলার জন্য কয়দিন হলো আমার ভার্সিটি যাওয়া হয় নি।অনেক ক্লাস মিস গেছে কাল থেকে ভার্সিটি যেতে চাইছি।’

ডিভোর্স মানেই তো দুইজন চিরকালে জন্য আলাদা হয়ে যাওয়া।ভেবেই নিষ্প্রভের বুকের ভিতরে অসহ্য যন্ত্রণা হচ্ছে এমন হচ্ছে কেন? সে শুকনো মুখে বলল,

‘আমার আগেই তোমার দিকটা ভাবা উচিত ছিলো।সরি সত্যি আমার তোমার লেখাপড়ার দিকটা মনে ছিলো না। তুমি কাল থেকে ভার্সিটিতে যাবে বাকি সব আমি সামলিয়ে নিবো তোমার চিন্তা করতে হবে না।’

তুর দীর্ঘশ্বাস ফেলে মনে মনে বলে,

‘সব থেকে বড় চিন্তা তো আপনি।’

________________

সকালের মিষ্টি রোদ গায়ে মাখিয়ে নিষ্প্রভের সাথে ভার্সিটিতে এসেছে তুর।নিষ্প্রভ তুরকে গেটে নামিয়ে দিয়ে অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।যাবার আগে তুরের থেকে ক্লাস কয়টায় শেষ হবে তা শুনে যায় যদিও তুর বার বার করে নিষেধ করেছে জেনো না আসে।তুরের হাতে বেশ কিছু টাকাও গুঁজে দেয়, এতে করে তুর কিছুটা সংকোচ বোধ করলেও না করে নি,কারণ তুরের হাতে এক টাকাও নেই। কলেজের গেট পার হয়ে গাছের নিচে যেয়ে দাঁড়িয়ে থাকে তুর।তার কাছে ফোন নেই যার জন্য আতিয়ার সাথেও কথা হয় নি।

তুরকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আতিয়া ঝড়ের গতিতে দৌড়ে এসে তুরে পিঠে দু’ঘা ব’সি’য়ে দেয়।তুর ব্যা’থা’য় কঁকিয়ে উঠে।পিঠে হাত দিয়ে বুলাতে বুলাতে ভ্রু কুঁচকে বলে,

‘পা’গ’ল হয়ছিস। এভাবে কেউ মা’রে?’

আতিয়া মুখ বাঁকিয়ে বলে,

‘তোকে যে এখনো মে’রে ফেলি নি শুকরিয়া কর।হা’রা’মী ছিলি কোথায় এতো দিন।কোনো খোঁজ খবর নাই তোর ফোনে না হলেও অন্তত হাজার বার ফোন দিয়েছি প্রতিবারই অফ দেখায়। কোথায় গেছলি ম’র’তে।জানিস তোকে ছাড়া এ কয় দিন আমার একটুও ভালো লাগে নি।এমনকি আমার ক্রাশ স্যারকেও ভালো লাগে নি এতোদিন।’

আতিয়ার এক নাগাড়ে বলা কথা তুর নিরব শ্রোতা হয়ে শুনে। হঠাৎ করেই আতিয়াকে চমকে দিয়ে তুর তাকে জড়িয়ে ধরে।আতিয়া তুরের পিঠে হাত রেখে উৎকণ্ঠা নিয়ে বলে,

‘তুর দোস্ত কি হয়েছে তোর। তুই ঠিক আছিস?’

আতিয়া কাঁধের জামার অংশে পানির আভাস পায় তার বুজতে অসুবিধা হয় না।তুর কাঁদছে এবার সে একটু ভয় পেয়ে যায়।তুরকে ধরে একটা খালি বেঞ্চে বসায় ইতিমধ্যে তুরের ফর্সা মুখ লাল বর্ণ ধারণ করেছে। আতিয়া তুরের চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে বলে,

‘কি হয়েছে প্লীজ বল সোনা,আমার খুব টেনশন হচ্ছে।’

তুরের ঠোঁট দুটো অসম্ভব কাঁপছে সাথে কান্নার গতিও বৃদ্ধি পাচ্ছে। আতিয়ার মুখে এটুকু কথা শুনে মনে হচ্ছে এই তো তার আপনজন আছে।কেউ তো আছে যে,তার জন্য টেনশন করে।নিজের মা খোঁজ খবর অবধি নেয় না।তুর নিজেকে কিছুটা শান্ত করে একে একে আতিয়াকে শুরু থেকে শেষ অবধি বলে দেয়।

সব শুনে আতিয়া রেগে বো’ম হয়ে যায়।তুরের মায়ের উপর ঘৃ’ণা এসে যায়।ছিঃ কোনো মা কি এমন ও হয়? নিজ স্বার্থের জন্য নিজের মেয়েকে এমন একটা চরিত্রহীন ছেলের হাতে তুলে দিতেও ভাবে না।সে কেমন মা? আফসান কে আতিয়া সেইদিনের পর থেকে চরিত্রহীন ল’ম্প’ট হিসাবেই চেনে। আতিয়া দ্বিধা নিয়ে প্রশ্ন করে,

‘নিষ্প্রভ ভাইয়া মানুষ হিসেবে কেমন?’

‘ভালো।’

‘বিয়ে যেহেতু হয়েই গেছে আর ভাইয়া‌ও ভালো তুই তাহলে এই সম্পর্ক নিয়ে কিছু ভেবেছিস?’

‘সে আমায় ডিভোর্স দিবে।’

তুরের অমনোযোগী উত্তর। আতিয়া এবার বেশ জোরেই চেঁ’চি’য়ে উঠে বলে,

‘মানে।’

আতিয়ার এমন চিৎকারে আশেপাশের মানুষ জন তাদের দিকে তাকিয়ে আছে ।সে ওসব পাত্তা না দিয়ে কন্ঠ খাদে নামিয়ে বলে,

‘মগের মুল্লুক নাকি! ইচ্ছে হলে বিয়ে করবে আবার ইচ্ছে হলে ডিভোর্স দিবে মানেটা কি! এই তোর বরের জিএফ আছে নাকি।এসব থাকলে একবার শুধু আমায় বল অই মেয়েকে বুড়িগঙ্গার কালা পানিতে চু’বি’য়ে এমন মা’র মা’র’ব আমি যে,অই পেত্নি কে তোর বর চিনতে অবধি পারবে না।আর না চিনলে এসব প্রেম পিরিতি ও হবে না। আমি এর শেষ দেখে নিবো বলে দিলাম। ফাইজলামি পাইছে তাই না?’

তুর আনমনে বলে,

‘ইচ্ছে করে বিয়ে করে নি, ইচ্ছার বিরুদ্ধে করেছে।তখন পরিস্থিতিটাই অন্যরকম ছিলো।’

‘মানলাম ইচ্ছার বিরুদ্ধে যেয়ে বিয়ে করেছে তাই বলে ডিভোর্স দিবে।কেন রে ভাই একবার যখন বিয়ে করেইছিস সংসারটা তো করাই যায়।দুই চারমাস একসাথে থাকলে ভালোবাসাটা আপনা আপনি উৎপাদন হবে।’

আতিয়ার কথায় এতো কষ্টের মধ্যেও তুরের হাঁসি পায়।এই মেয়ে টা পারেও বটে কি সব ল্যাঙ্গুয়েজ ইউজ করছে।তুর আকাশের দিকে তাকিয়ে ছল ছল চোখে বলে,

‘আতিয়া আমি চাইলে হয়তো উনি আমায় ডিভোর্স দিবে না। কিন্তু আমি চাইনা ইচ্ছার বিরুদ্ধে যেয়ে কারো ঘাড়ে চে’পে বসতে।এতো দিন মায়ের কাছে বোঝা হয়ে ছিলাম।বিয়ের পর একটা মেয়ের কাছে তার স্বামীই সব হয়।সেই আমি কিনা স্বামীর কাছে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে বোঝা হয়ে থাকবো?’

আতিয়া কিছুক্ষণ ভাবুক দৃষ্টিতে নিচের দিকে তাকিয়ে থাকে তারপর হঠাৎ করে বো’ম ফা’টা’র মতো একটা প্রশ্ন করে,

‘তুর তোর শাড়িতে জুস ফেলা,তোকে অই ঘরে আটকিয়ে রাখা, কারেন্ট যাওয়া এসব কেউ প্ল্যান করে করে নি তো!তুই ভাব এতকিছু কাকতালীয় ঘটনা হতে পারে?’

চলমান।‌

#হৃদয়ের_সন্ধিক্ষণ
#পর্বঃ১২
#ফারিহা_খান_নোরা
‘তুষার ভাইয়া হঠাৎ করে কাউকে না বলে পাহাড়ি এলাকার একটি মেয়েকে বিয়ে করে নিয়ে এসেছে।’

তুরফার কথায় চোখ কোটরে থেকে বেরিয়ে আসে তুরের।তখন আতিয়ার সাথে কথা বলার এক পর্যায়ে তুরফা এসে তুরকে জরিয়ে ধরে।দুই বোনের সেই কি কান্না।এসবের এক পর্যায়ে তুরফা এমন একটা কথা বলে বসে।তুর অবাক হয়ে বলে,

‘এসব কি বলছো আপু। অসম্ভব!তুষার ভাই নাকি কোনো দিন ও বিয়ে করবে না। সারাজীবন দেবদাস হয়ে বন জঙ্গলে ঘুরে বেড়াবে।’

‘সব সম্ভব।এই তার দেবদাস হবার নমুনা শুনলিই তো।’

তুর উদ্বিগ্ন হয়ে বলে,

‘বাড়িতে এখন কি অবস্থা?’

‘তোর কি মনে হয় মা মেনে নেওয়ার মতো মানুষ? বাড়িতে সব সময় অশান্তি লেগেই আছে।মায়ের কথা বিয়ে যখন করবিই পাহাড়ী মেয়েকে কেন বিয়ে করলি। বাংলাদেশে আর কোনো মেয়ে ছিলো না? আর তুষার ভাইয়ার কথা, ভালো লেগেছে বিয়ে করেছি মানিয়ে নেওয়ার হলে মানিয়ে নেও নয়তো বলে দেও ব‌উকে নিয়ে বেরিয়ে যাবো।এসব নিয়ে প্রতিদিন লগে প’ড়’ছে মা ছেলে।’

তুর এবার হেসে বলে,

‘সবাই তো আর তুরের মতো নয়।যার যা ইচ্ছে হয় জো’র করে চাপিয়ে দিবে। তুষার ভাইয়া ঠিক কাজ করেছে।একেই বলে সুযোগে সৎ ব্যাবহার।’

‘হ্যা ঠিক বলেছিস‌,জানিস বাবা এসেছে।’

তুর মন খারাপ করে বলে,

‘বাবা কি আমার উপর রে’গে আছে?’

তুরফা তুরকে নিজের সাথে জড়িয়ে নিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,

‘জানিস বাবা অনেক রে’গে গেছে এমনকি মায়ের গা’য়ে হা’ত অবধি তুলেছে।’

‘কি বলো!’

তুরকে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকা দেখে তুরফা সেদিনের ঘটে যাওয়া সব কিছু বলে দেয়। তার সাথে বলে,

‘বাবা বলেছে তোর আর নিষ্প্রভের ডিভোর্স করিয়ে দিবে। কিন্তু তুষার ভাইয়ার এসব ঝামেলায় তিনি এদিকটা সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে তবুও বাবা কয়দিন হলো হঠাৎ হঠাৎ বেরিয়ে যায়।কাউকে না বলে কোথায় যায় আমার কেন জানি সন্দেহ লাগে বাবাকে।’

তুর তুরফার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নেয়।সে রে’গে যায় এই ডিভোর্স নিয়ে সবাই কি শুরু করছে। সবাই বিয়ে করে দুটো মানুষ সারাজীবন একসাথে থাকার জন্য আর তার বিয়ের পর থেকেই সবাই আলাদা করতে ডিভোর্স নিয়ে উঠে প’ড়ে লে’গে’ছে।কেন রে ভাই!বিয়ে যখন একবার হয়ে গেছেই তখন এতো কাহিনী কেন?

তুর তুরফার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে তীক্ষ্ণ কন্ঠে বলে,

‘সবাই ডিভোর্স নিয়ে কি শুরু করছে।’

তুরফা অবাক হয়ে বলে,

‘সবাই মানে আর কে বলেছে?’

তুর আশা বেগমের কথা বলে দেয় তার সাথে নিষ্প্রভ কে ছা’ড়’তে টাকা স্বর্ণ অফার করার কথাও বলে।সব শুনে তুরফা রে’গে যেয়ে বলে,

‘ এই মা ও মায়ের বান্ধবী ও না,এই দুইজন কিন্তু খুব সাং’ঘা’তি’ক।এরা নিজের ভালো ছাড়া কিছুই বুঝে না। খবরদার তুই ওদের কথা শুনে নিষ্প্রভ কে ছে’ড়ে দেওয়ার কথা ভুলেও চিন্তা করবি না।’

তুর অসহায় কন্ঠে বলে,

‘নিষ্প্রভ ও চায়।’

‘মানে কি?’

তুর সব ঘটনা বলে দেয়। তুরফা মনোযগ দিয়ে শুনে কিছু একটা ভেবে বলে,

‘নিষ্প্রভ ভালো ছেলে আমি ওর খোঁজ নিয়েছি তাঁর প্রেম ভালোবাসার কোনো রে’ক’র্ড নেই।ছেলে হিসাবে খুব ভালো। তুই ওর মন বোঝার চেষ্টা কর আমার মনে হয় সে তোকে মন থেকে এসব বলে নি।হতে পারে সে তোকে এই দুই মহিলার থেকে প্রটেক্ট করতেই এসব বলছে কিন্তু সে তো আর জানে না,তার ডিসিশন পুরাপুরি ভুল।তুই ওর কথা না শুনে নিষ্প্রভ কে আপন করার চেষ্টা কর দেখবি অনেক ভালো থাকবি।’

‘তুই এতো কিছু জানলি কি করে?’

তুরফা কোনো উত্তর দিতে পারে না। তুরফার চুপ থাকা দেখে তুর আগ্রহ নিয়ে আবার বলতে শুরু করে,

‘আপু জানিস আমাদের বিয়ের দিনে ঘটে যাওয়া সমস্ত ঘটনা আতিয়ার সাথে শেয়ার করেছি। আতিয়া বলেছে এ সব কিছু কাকতালীয় না।মা,আফসান ও তাঁর মায়ের প্ল্যান হতে পারে।যদি এমন কিছু হয় তাহলে আমি আমার মায়ের মুখ কখনো দেখতে চাই না।এটাও বলেছে নিষ্প্রভ আর আমার বিয়ের পিছনে তৃতীয় কারো হাত আছে।তোর কি মনে হয়?’

তুরের প্রশ্নের জবাবে তুরফা কিছুক্ষণ আমতা আমতা করে তুরের হাতে একটা ব্যাগ ধরিয়ে দিয়ে বলে,

‘এটা রাখ এই ব্যাগে তোর ফোন আর কিছু দরকারি জিনিস আছে। কিছু টাকাও দিয়েছি তোর প্রয়োজনে লাগতে পারে।আজ আসি রে আমার একটুও সময় নেই টিউশন আছে।দেরি হলে সমস্যা হবে,এমনি এই কয়দিন তোর খোঁজে প্রতিদিন ই কলেজে এসেছি কিন্তু তোকে পাই নি।’

‘আরে আপু…

তুরের পুরো কথা শেষ হবার আগেই তুরফা হন্তদন্ত হয়ে চলে যায়।তুর বিরবির করে বলে এর আবার কি হলো।

_________________________

কলেজের মেইন গেটে নিষ্প্রভের জন্য দাঁড়িয়ে আছে তুর। তুরফার আসার পর পরই আতিয়া চলে গেছে বয়ফ্রেন্ডের সাথে দেখা করতে।যার ফলে কারো আজ ক্লাস করা হয় নি।তুর অন্য মনস্ক হয়ে তাকিয়ে আছে হঠাৎ একটা পিচ্চি এসে বলে,

‘আপু।’

তুর একটু হেঁসে বলে,

‘জি।’

পিচ্চিটা কোনো কথা না বলেই তুরের হাতে একটা লাল গোলাপ গুঁজে দিয়ে দৌড় দেয়।তুর অবাক হয়ে একবার পিচ্চিটার দৌড়ের দিকে দেখে আর একবার নিজের হাতের মুঠোয় গুঁজে থাকে ফুলের দিকে দেখে।তুর চেঁ’চি’য়ে বলে,

‘এই পিচ্চি শোনো,এই ফুল আমাকে দিলে কেন?’

‘আপনাকে দিতে বলেছে আপু।’

‘কে দিতে বলেছে?’

পিচ্চিটা দৌড়াতে দৌড়াতে পিছনে তাকিয়ে বলে,

‘ভাইয়া।’

বলেই চলে যায়।তুর ফুলের দিকে তাকিয়ে রে’গে যায়।এসব কি ছেলে মানুষি,রা’গে’র বশে ফুলটা ছুঁ’ড়ে ফেলে যা গিয়ে পড়ে নিষ্প্রভের মুখের উপর।তুর এটা দেখে কিছুটা ভয় পেয়ে যায় মনে মনে বলে এটা কি হলো!

‘নিষ্প্রভ মাত্র‌ই এসে বাইকটা ব্রেক করে সেই মুহূর্তে তাঁর মুখের উপর তুরের ছুঁ’ড়ে দেওয়া গোলাপ এসে প’ড়ে।সে অবাক হয়ে তুরের দিকে তাকায়।তুর মনে মনে ঢুক গিলে।নিষ্প্রভ ফুলটা নিয়ে তুরের কাছে যায়। তাঁর দিকে খানিকটা ঝুকে ভ্রু কুঁচকে বলে,

‘আজকাল কি ফুল ছুঁ’ড়ে দিয়ে প্রপোজ করা ট্রেন্ড চলছে নাকি।’

তুর আমতা আমতা করে বলে,

‘না আসলে…’

নিষ্প্রভ হেসে বলে,

‘আসলটাই তো শুনতে চাইছি নকল দিয়ে আমার কাজ নাই।’

তুর ঢুক গিলে বাচ্চাটার কথা বলে দেয় তবে কোন ভাইয়া দিতে বলছে সেইটা স্কিপ করে কারণ পরে যদি নিষ্প্রভ তাকে ভুল বুঝে এমনি তাদের সম্পর্কে ঝামেলার কমতি নেই। নতুন করে ঝামেলা সে চায় না।

নিষ্প্রভ হেঁসে উঠে।হাসতে হাসতে বলে,

‘একটা বাচ্চা ছেলে আমার ব‌উকে ফুল দিয়ে প্রপোজ করে আর আমি বিয়ে করে এখনও করতে পারলাম না।’

নিষ্প্রভের মুখে ব‌উ ডাক শুনে তুরের পুরো শরীর শিহরিত হয়।সে লজ্জায় নুয়ে পড়ে।

______________________

আশা বেগম তুরকে যা মুখে আসছে সেটা বলেই গা’লি দিচ্ছে,পাশে দাঁড়িয়ে সিতারা বেশ মজা করে মনযোগ দিয়েই শুনছে।গা’লি শুনতে তার বেশ ভালোই লাগছে কিন্তু তুরকে দিচ্ছে এটা সে মানতে পারছে না। সেজন্য সিতারা আগ্রহের সহিত আশা বেগম কে বলে,

‘আম্মা আপনার যদি গা’লি দিতেই হয় তাহলে অন্য কারো নামে দেন। এমনিতেই আপনার গা’লি গুলা শুনতে আমার ভালই লাগছে কিন্তু নতুন ভাবিকে
দিয়েন না। নতুন ভাবি কি সুন্দর আমি তার অনেক ভালা পাই একদম আপনার গা’লির মতো।’

সিতারার কথা শুনে আশা বেগম অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে এই কে রে কোথায় থেকে আসছে।গা’লি শুনতে কারো ভালো লাগে!কেউ কাউকে গা’লির মতো ভালোবাসতে পারে।কি বলছে এই মেয়ে,পাগল নাকি? আশা বেগম রুক্ষ কন্ঠে বলে,

‘আমি কাকে গা’লি দিবো না দিবো তোর থেকে শুনতে হবে।আর কি জেনো বললি তুই তুর কে আমার গা’লির মতো ভালোবাসিস।এই গা’লি’র মতো কাউকে ভালোবাসা যায় ম’শ’ক’রা করিস আমার সাথে?’

সিতারা এবার প্রফুল্ল সহকারে বলে,

‘যায় তো আম্মা শুধু নতুন ভাবিরে না,এখনি আমারে বিয়া দেন আমি আমার জামাইকেও গা’লি’র মতো ভালোবাসুম।’

আশা বেগম এবার রে’গে সিতারার দিকে তে’ড়ে যেয়ে বলে,

‘ফ‌ইন্নির বাচ্চা যা আমার চোখের সামনে থেকে।পাগল কোথাকার সে আবার বিয়ে করবে! তোকে এই বাড়ি থেকে ঘা’ড় ধা’ক্কা দিয়ে বে’র করে দিবো তখন রাস্তায় বসে থেকে মানুষদের গা’লি’র মতো ভালোবাসা শিখাস।’

সিতারা কিছু টা ঘা’ব’ড়ে যায় ।মনে মনে ভাবে সে খা’রা’প কি বলেছে।সে মিনমিন করে বলে,

‘আমি ফ‌ইন্নি হলেও আমার ভালোবাসা খাটি এই তাঁর প্রমাণ।আপনরা বড়লোক মানুষ তয় আপনাদের ভালোবাসায় ভেজাল আছে।’

আশা বেগম ঝা’ড়ু খোঁজে হাতের কাছে পেয়ে সিতারার গায়ে দুই তিনটা মা’র দিয়ে রা’গে গজগজ করতে করতে বলে,

‘ছোটলোকের বাচ্চা আজকেই তোকে বাড়ি থেকে বে’র করে দিবো।’

সিতারা ভয়ে দৌড় দেয়।আশা বেগম ঝা’ড়ু ফেলে দিয়ে বলে,

‘এই বু’ড়ো আমাকে কখনোই শান্তি দিবে না।এইটারে যে কোন জঙ্গল থেকে তুলে এনেছে আল্লাহ ভালো জানেন।এখানে এসে ছে’ড়ে দিয়েছে, আমি তো আছিই গাধা পিটিয়ে মানুষ করতে।’

এসবের মাঝে সদর দরজা দিয়ে তুর ভেতরে প্রবেশ করে।তরকে দেখে আশা বেগমের জ্ব’ল উঠা রা’গ দ্বিগুন হয়ে যায়।তুর উপরে উঠতে নিলে আশা বেগম গজরাতে গজরাতে বলে,

‘সারাদিন বাহিরে থাকলে হবে, তোমার কি কোনো কাজ কাম নাই। তোমার তো লজ্জা নেই তা জানি কিন্তু নিষ্প্রভ তোমাকে বিয়ে করে সেও কি তোমার মতো হলো।সারাদিন ব‌উ নিয়ে চিপকে চিপকে থাকতে লজ্জাও করে না।’

‘নিজের ব‌উ এর সাথে চিপকে থাকলে লজ্জা করতে হয়।পাশের বাড়ির করিমের ব‌উ এর সাথে চিপকে থাকলে বুজি লজ্জা করতে হয় না?’

চলমান।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে