হৃদয়ের সন্ধিক্ষণ পর্ব-০৯

0
519

#হৃদয়ের_সন্ধিক্ষণ
#ফারিহা_খান_নোরা
#পর্বঃ০৯
‘আপনার প্রেমিকা আছে?’

তুরের এমন কথায় নিষ্প্রভ অবাক হয়ে যায়।এই প্রশ্নের উত্তরে কি বলবে বা কি বলা উচিত বুঝতে পারছে না।সে অস্বস্তিবোধ করে কিছুক্ষণ আগের ঘটনা মনে পড়ে। নিষ্প্রভ তখন তুরকে কোলে নিয়ে রুমে এসে বেডে নামিয়ে দেয়। ততক্ষনে তুর ব্যাথায় কঁকিয়ে উঠে।ফ্লোরে বেকায়দা ভাবে পড়ায় কোমড়ে বেশ ব্যাথা পেয়েছে সে।ব্যাথায় ফর্সা মুখ রক্তিম বর্ণ ধারণ করে যা দেখে নিষ্প্রভের মোটেও সহ্য হয় নি। নিষ্প্রভ মনে মনে গুছিয়ে র্নিলপ্ত ভঙ্গিতে বলল,

‘আমি আগেই তোমাকে সাবধান করেছিলাম।আজ দেখো আমি যা নিয়ে ভয় করেছি সেটাই হলো।তোমাকে ইচ্ছে করে ফেলে দেওয়া হয়েছে কজ তোমার পায়ের নিচের মার্বেল গুলো আফসানের আর এইসব আফসানের প্ল্যান। সেজন্য বলছি তুমি এসবে জড়িও না। আমি তোমাকে যতদ্রুত সম্ভব ডিভোর্স দিবো। তুমি এই বাড়ি ও এই বাড়ির সব মানুষের থেকে দূরে চলে যাবে নয়তো তোমার লাইফ রিক্স আছে।এরা মানুষ না,নিজেদের স্বার্থের জন্য সব করতে পারে।’

নিষ্প্রভের কথা গুলো তুর মনযোগ সহকারে শুনছিলো।তারপর হঠাৎ করেই নিষ্প্রভের উদ্দেশ্যে এমন একটা প্রশ্ন করে উঠে তুর।নিষ্প্রভ থতমত খেয়ে যায়। কোমড়ের ব্যাথায় তুর আবারও কুকিয়ে উঠলে নিষ্প্রভ বর্তমানে ফিরে আসে।তুরকে আলগোছে শুইয়ে দেয়,তুর এখনো তার দিকে উচ্ছুক চোখে তাকিয়ে আছে। নিষ্প্রভ তুরকে সুবিধা অনুযায়ী শুয়ে দেয় কোমড়ের শাড়ি নিচের দিকে সরাতে নিলে তুর নিষ্প্রভের হাত খামছি দিয়ে ধরে।নিষ্প্রভ অস্বস্তিতে পড়ে আসলে সে এতো কিছু বুঝে করে নি। নিষ্প্রভের মনে শুধু একটা কথায় ঘুরছিলো যে,কি করে তুরের ব্যাথা লাঘব হবে। কিন্তু এতে করে মেয়েটা বড্ড লজ্জা পাচ্ছে। নিষ্প্রভ অস্বস্তি জড়ানো কন্ঠে বলল,

‘দেখো তোমার দিকটা বুঝতে পারছি।এখন লজ্জায় আমায় দেখতে না দিলে পরবর্তীতে তুমিই ব্যাথায় ছটফট করবে।’

তুরের ভীষণ লজ্জা লাগছে এটা হয়তো অনেকর কাছে ন্যাকামি লাগতে পরে তবে তাদের ব্যাপার আলাদা।যতোই তারা স্বামী-স্ত্রী হোক না কেন আসলে তাদের মধ্যে তো স্বাভাবিক সম্পর্ক হয়ে উঠে নি। নিষ্প্রভ তুরের কোনো কথা না শুনেই কাঁপা কাঁপা হাতে শাড়িটা কোমড় থেকে সড়িয়ে দেওয়ার সাথে সাথেই কোমড়ের ঠিক ডান পাশে কালো তিলক দেখতে পায়। নিষ্প্রভ ঘোর লাগা দৃষ্টিতে তিলকটার দিকে তাকিয়ে থাকে।ফর্সা শরীর মাঝারি আকারের কালো তিলকটা জেনো আকৃষ্ট করছে।এর মধ্যেই সিতারা আইস প্যাক নিয়ে আসলে নিষ্প্রভের ঘোর কাটে।আইস প্যাক টা নিয়ে তুরের কোমড়ে আলতো করে লাগিয়ে দেয়।তুরের শরীর শিরশির করে উঠে কিছুটা ঠান্ডা আর কিছুটা লজ্জায়।তুর চোখ বন্ধ করে ঠোঁটে ঠোঁট চেপে এক হাত দিয়ে বেড শিট খামচে ধরে। নিষ্প্রভ নিশ্চুপ হয়েই পুরো ব্যাপারটা লক্ষ্য করল।আইস প্যাক দেওয়া হলে ব্যাথা নাশক ঔষধ লাগিয়ে দিয়ে নিষ্প্রভ উঠে যেতে নেয়।

তুর ধীর কষ্ঠে অধীর আগ্রহে বলে,

‘আমার প্রশ্নের উত্তর এখনো পাই নি।’

তুরের প্রশ্নের জবাবে নিষ্প্রভ বলে,

‘কিছু উত্তর অজানা থাকাই সকলের জন্য মঙ্গল জনক।’

‘বুজলাম।তখন যে বললেন, এই বাড়ি ও এই বাড়ির মানুষ গুলোর থেকে দূরে সরে যেতে এতেই নাকি আমার জন্য ভালো।আপনার থেকেও কি দূরে সরে যাবো?’

তুরের কথা শুনে নিষ্প্রভ কিছুটা চুপ থাকে তারপর বলল,

‘আমি নিশ্চ‌য়‌ই এবাড়ির মানুষ গুলোর মধ্যে পড়ি?’

______________

‘তুরের সাথে এমন ফালতু কাজ করলি কেন?’

‘ত কি কাজ করবো, পিরিতের কাজ করব বুঝি?’

বলেই আফসান বি*শ্রি হাসি দেয়। আফসানের এমন কাজে নিষ্প্রভ ভীষণ রেগে যায়।যার ফলস্বরূপ আফসানের কলার চেপে ধরে উঁচু বাক্য ছুঁড়ে,

‘মাইন্ড ইউর ল্যাঙ্গুয়েজ!’

‘হা হা কি করবি তুই! শা*লার ইংরেজি ঝাঁ*ড়ছে ।’

‘আর একবার বললে তোর জিভ টেনে ছিঁড়ে ফেলব।সে আমার ব‌উ সম্মান দিয়ে কথা বলবি।’

আফসান নিষ্প্রভের হাতের মধ্যে থেকে নিজের কলার ছাড়িয়ে নিয়ে দাঁত বের করে বলে,

‘সম্মান কি ভাবে দিব আজ যাকে ব‌উ বলে দাবি করছিস সে আমার ব‌উ হতো একটুর জন্য আমার প্ল্যান এভাবে শেষ হয়ে গেল।তা নয়তো আজকে তোর ব‌উ প্রতি রাতে আমার বুকের নি*চে পিষ্ট হতো।’

আর‌ও কিছু বলতে নেয় আফসান তার আগেই নিষ্প্রভ ঠা*স করে আফসানের গালে থা*প্প*ড় বসিয়ে দিয়ে বলে,

‘কি বললি এগুলো তোর প্ল্যান ছিলো?’

‘হ্যা আমার…..’

পুরো কথা শেষ হবার আগেই ঝট করে আশা বেগম এসে আফসানের হাত ধরে ফেলে।আমতা আমতা করে বলে,

‘ও ড্রিংকস করছে ওর মাথা ঠিক নেই।আর সব থেকে বড় কথা আমার ছেলের গায়ে হা*ত তোলার সাহস কি করে হয় তোমার! ভুলে যাচ্ছো বাড়িটা কার আফসানের বাবা জানলে তোমায় এই বাড়ি থেকে বের করে দিবে।’

নিষ্প্রভ তাচ্ছিল্য পূর্ণ হেসে বলল,

‘হাসালেন এই বাড়ি নিয়ে এতো গর্ব আপনার।সত্যি কি এ বাড়ির আপনি ও আপনার ছেলে দাবিদার! সত্য কিন্তু আমি জেনে ফেলেছি।’

আশা বেগম ভয় পেয়ে যায়।পুরো শরীর কেঁপে উঠে। কাঁপা কন্ঠে বলে,

‘ক ক কি জেনেছ তুমি?’

‘আপনি মনে মনে যা ভাবছেন ঠিক তাই। বাই দা ওয়ে,আপনার ছেলেকে আমার ব‌উয়ের থেকে দূরে থাকতে বলবেন এরপর যদি দেখি ও তুরের আশেপাশে ঘেঁষে তাহলে আমার মুখ খুলতে কেউ আটকাতে পারবে না। আর আমি এক বার মুখ খুললে আপনি ও আপনার ছেলের ধ্বং*স নেমে আসবে।’

বলেই নিষ্প্রভ চলে যায়।পিছন থেকে আফসান বলে,

‘যা সত্য বলে দে গিয়ে আমি তোর ব‌উকে একবারের জন্য হলেও বি*ছা*না*য় নিবো।’

আশা বেগম আফসানের মুখ চেপে ধরে জেনো নিষ্প্রভ অবধি কথা গুলো না পৌঁছায়।এই মাতাল ছেলে ত আর জানে না, সত্য বের হলে তার ও আফসানের জন্য কতো বড় দূর্যোগ নেমে আসবে।তখন বাপের টাকায় ফুর্তি নেশা করা চলবে না।মাথার উপর ছাদ থাকবে না।নাহ! আর ভাবেতে পারছে না আশা বেগম,আগে এই মাতালকে রুমে রেখে আসুক তারপর তুরের একটা ব্যাবস্থা করতে হবে।এই মেয়েকে যে করেই হোক বাড়ি থেকে বের করতে হবে।তারপর না হয় নিষ্প্রভের একটা ব্যাবস্থা করবে।এই মেয়ে আশার পর থেকে নিষ্প্রভের সাহস বেরে গেছে নয়তো সে আগে আজকের মত এমন ব্যাবহার করতো না।

____________

তুর বিছানায় শুয়ে আছে।সেই যে নিষ্প্রভ বের হলো রাত বেশ হয়েছে এখনো আসে নি।তুরের কান্না পাচ্ছে আকস্মিকভাবে নিষ্প্রভের জীবণে জড়িয়ে পড়তে।নিষ্প্রভের হয়তো অন্য কাউকে পছন্দ আছে।নয়তো নিষ্প্রভ তুরকে ডিভোর্স দেওয়ার কথা বলবেই বা কেন?

তুরের বাড়ির কথা মাঝে মাঝেই মনে পড়ে।কিন্ত মায়ের কথা মনে হলেই হৃদয় জুড়ে একরাশ ঘৃণা এসে জায়গা দখল করে।তার মায়ের কাছে তার থেকে বান্ধবীর গুরুত্ব বেশি।এসব ভাবতে ভাবতে আশা বেগম রুমে ঢুকে।কোনো কথা না বলেই বিছানার উপর গহনা বক্স গুলো ও একটা চেক রাখে।তুর ভ্রু কুঁচকে আশা বেগমে দিকে তাকায়।সে কিছু বুজতে পারছে না।

আশা বেগম বলে,

‘এখানে দশ ভড়ি গহনা ও পাঁচ লাখ টাকার চেক আছে।’

‘এসব আমায় বলেছেন যে।আর এগুলো এখানে নিয়ে এসেছেন কেন?’

‘কারণ এগুলো তোমার। আমি তোমাকে দিবো।’

তুর অবাক চোখে তাকিয়ে বলে,

‘আপনার গহনা টাকা আমি কেন নিবো?’

আশা বেগম তার মুখে প্রফুল্ল ছড়িয়ে বললে,

‘নিষ্প্রভকে ছেড়ে দেও!’

চলমান।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে