হৃদয়ের সন্ধিক্ষণ পর্ব-০৭

0
509

#হৃদয়ের_সন্ধিক্ষণ
#পর্বঃ৭
#ফারিহা_খান_নোরা

‘আমি কি আফসানের জন্ম পরিচয় সম্পর্কে বলব আশা?’

তানিয়া বেগমের কথা শুনে আশা বেগম স্তব্ধ হয়ে যায়।হাত পা কাঁপছে তার সাথে গলা শুকিয়ে যাচ্ছে।এতো বছর পর হঠাৎ করে তানিয়া বেগম কিভাবে জানলেন তা বুজতে পারছে না।এই রহস্য সে আর একজন ছাড়া ত কেউ জানার কথা নয়,তবে কি তানিয়ার তাঁর সাথে পরিচয় আছে সর্বনাশ! আজ সকাল থেকে আশা বেগমের মন মেজাজ খারাপ এমনিতেই তুরকে ছেলের বউ করতে পারেন নি তার উপর ইলিয়াস মির্জা তুরকে তার প্রথম ব‌উয়ে জিনিস গিফট করেছে যদিও জানে না বক্সটার মধ্যে কি আছে তবে এটা বুজতে পারছে গহনা ত হবেই।সে চাইতো তুর সব পাক তবে আফসানের ব‌উ হয়ে কিন্তু এখন সৎ পুত্র নিষ্প্রভের ব‌উ হয়ে রাজত্ব চালাচ্ছে।যার জন্য রেগে যেয়ে তানিয়াকে ফোন করে দু চারটে কথা শুনাতে নেয় কিন্তু তার আগেই তানিয়া যে এমন একটা রহস্যের কথা বলবে তা তো আগে বুঝতে পারে নি।

‘তুই কি বলতে চাইছিস?’

‘আমি কি বলতে চাইছি তা তুই ভালো করেই বুজতে পারছিস রাখ আর নাটক করতে হবে না।’

‘এই শোন এসব ফালতু কথা বাদ দে তুই কিন্তু আমার থেকে দশ লাখ টাকা নিয়েছিস তা দিয়ে দিবি তোর সত্য ও কিন্তু আমি জানি মনে রাখিস।’

রেগে কথা গুলো বলল আশা বেগম।তার কথায় তানিয়া একটু হাসলেন তারপর বলল,

‘তোর এতো বছর ধরে লুকিয়ে রাখা রহস্যের কাছে আমার সত্য কিছুই না।তুই বরং তোর চিন্তা কর আর টাকা? অই বাড়িতে টিকতে পারলে এমন লাখ লাখ টাকা তোর কাছে আর‌ও আসবে।তাই টাকার চিন্তা বাদ দিয়ে আগে নিজের ব্যাবস্থা কর। আমার অতীত ফাঁস করবি বলে ব্লাকমেইল করতি না?আসলে কি জানিস আমায় তুই নিজেই ফাঁসিয়েছিলি।’

আশা বেগম তুতলিয়ে বলল,

‘তানিয়া তুই আর কি কি জানিস?’

‘তুই যেসব ঘটিয়েছিস।’

‘বল।’

‘সঠিক সময় আসুক।’

‘ভুলে যাস না তোর মেয়ে এখন এ বাড়ির ব‌উ। আমার সাথে লাগতে আসিস না,আমি কিন্তু তোর মেয়েকে শান্তিতে থাকতে দিবো না।এ বাড়ি থেকে রাস্তায় বের করে দিবো।’

এবার তানিয়া বেগম বেশ চিৎকার করেই কথা গুলো বলে।আশা বেগম শক্ত কন্ঠে বলল,

‘ভুলেও সে চেষ্টা করবি না। আমি একবার মুখ খুললে আমার মেয়ের নয়,তোর জায়গা রাস্তায় হবে।তাই নিজেও ভালো থাক আর আমাদেরকেও ভালো থাকতে দে।আর একটা কথা নিষ্প্রভের সাথে বিয়ে হয়ে তুরের সাথে সাথে আমার ভাগ্য‌ও খুলে গেছে।তোর ব্লামেইল এর জন্য আফসানের সাথে বিয়ে দিতে রাজি হয়েছিলাম।তবে পার্টিতে যেয়ে আমি কিন্তু আসল সত্য জানতে পেরেছি।’

আশাকে কিছু বলতে না দিয়ে তানিয়া কলটা কেটে দেয়।
আশার মনে একটাই প্রশ্ন পার্টিতে এসে তানিয়া কি করে এতো গুলো রহস্য জানতে পারলো তাহলে কি সে এসে গেছে!

______________

তুর রুমে এসে কৌতুহল বসত বক্সটি খুলে দেখে ভেতরে একজোড়া মোটা বালা, একজোড়া ঝুমকা ও একটি মোটা চেইন আছে ভীষণ সুন্দর।এগুলো নিষ্প্রভের মায়ের জিনিস হিসাবে নিষ্প্রভের ব‌উ পাবে। কিন্তু তাকে ত নিষ্প্রভ ডির্ভোস দিবে বলেছিল তাহলে এগুলো তুরের প্রাপ্য না।নিষ্প্রভ রুমে এসে দেখে তুর গহনা গুলোর দিকে তাকিয়ে থেকে কি জেনো ভাবছে।সে গলা একটু উঁচু করে বলল,

‘কি এতো ভাবো তুমি?’

তুর একটু সময় নিয়ে নিষ্প্রভের হাতে বক্সটা দিয়ে দেয়। নিষ্প্রভ আবাক হয়ে বলে,

‘এগুলো আমি কি করব?’

‘এগুলো আপনার মায়ের তা আপনার ব‌উ এর প্রাপ্য।কারণ বসত আমি আপনার ব‌উ হলেও প্রথম রাতেই বলে দিয়েছেন আমায় ডির্ভোস দিবেন তাহলে আমি এগুলো নিবো কেন?’

নিষ্প্রভ চুপ থাকল কিছু বলল না।তুরের বাড়িয়ে দেওয়া বাক্সটি হাতে নি তা আলমারির ভিতরে স্বযত্নে রেখে মৃদু হেসে বলল,

‘রেডি হয়ে নেও শপিং এ যাবো। তোমার ড্রেস কিনতে হবে।’

তুর ভাবছে কি ছেলেরে বাবা বাক্সটা দিয়ে দিলো আর সে হাসি মুখে রেখে দিলো।যদিও এসব স্বর্ন অলংকার এর উপর তুরের লোভ নেই তবুও নিষ্প্রভের এমন কাজে তার একটু মন খারাপ হলো।নিজে সামলিয়ে বলল,

‘আমি তৈরি।’

নিষ্প্রভ তুরের দিকে একটু তাকিয়ে বলল,

‘তাহলে যাওয়া যাক।’

নিচে এসে দেখে নিষ্প্রভ বাইক এর উপর বসে আছে।তুরের ভয় হচ্ছে সে তেমন বাইকে উঠে নি,তার মধ্যে নিষ্প্রভের সাথে যেতে তার অস্বস্তি হচ্ছে।নিষ্প্রভ তুরকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলল,

‘এমন করে দাঁড়িয়ে আছো কেন উঠে পড়। আমার এতো সময় নেই ভাগ্গিস অফিস থেকে এক বেলা ছুটি নিয়েছি।’

তুর ভয়ে ভয়ে মাঝখানে বেশ জায়গা নিয়ে উঠে পড়ে।নিষ্প্রভ ব্যাপারটা খেয়াল করে বলল,

‘এভাবে বসলে পড়ে যেয়ে হাত পা ভেঙ্গে ফেলবে একটু চেপে বস ।’

‘না আমি ঠিক আছি।’

নিষ্প্রভ আর কিছু না বলে বাইক স্টার্ট দেয় তুর ঝুঁক সামলাতে না পেরে নিষ্প্রভের পিঠের দিকে হেলে তাকে জড়িয়ে ধরে।নিষ্প্রভ ঠোঁট কামড়ে ধরে বির বির করে বলে,

‘একেই বুঝি বলে মেয়ে জাতি।বললাম সরে এসে বসতে বসল না, এখন ঠ্যালায় পড়ে গলা ধরে বসেছে।এদের কাজ‌ই ত তাই সুযোগ পেলে গলা ধরে আবার একটু উনিশ বিশ হলেই মাথা উঠে নৃত্য করে। লুকিং গ্লাসে দেখে তুর ভীতু হরিণীর মত তাকে জড়িয়ে আছে।জীবণের প্রথম বার এতো কাছে থেকে কোনো নারীর শরীরের স্পর্শ পেয়ে নিষ্প্রভের মনের ভিতর শত রঙের প্রজাপতি উড়ছে এমন ফিল হয়।’

________

আশা বেগম ড্রয়িং রুমে বসে চা পান করছে।এর মধ্যেই এক গাদা শপিং ব্যাগ নিয়ে তুরকে ঢুকতে দেখে ভ্রু কুঁচকে যায় তাঁর।তুর কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে এভাবে তাকানো তে।নিষ্প্রভ যেহেতু অফিস থেকে এক বেলা ছুটি নিয়েছে যার জন্য সে তুরকে বাড়ির গেটে নামিয়ে দিয়ে অফিসে চলে যায়।তুর একাই বাড়িতে ঢুকে,কোনো কিছু না ভেবে সিড়ি দিয়ে উপরে উঠতে নেয়।তার আগেই কাঠ কাঠ কন্ঠে আশা বেগম বলে উঠে,

‘শোনো মেয়ে!’

তুর কিছুটা কেঁপে উঠে।তবুও নিজেকে সামলিয়ে বলে,

‘জি।’

‘তুমি কি ভুলে গিয়েছ যে, তোমার বিয়ে হয়েছে এইটা তোমার শশুড়বাড়ি।কাল বিয়ে হতে না হতেই আজ জামাই নিয়ে ভালোই তো ঢলাঢলি করছো আমোদ ফুর্তি করছ।তা করো কিন্তু তিন বেলা রান্না আমি করে কি তোমায় মুখে তুলে দিবো। আমি কি তোমার দাসী,কোন জমিদারের মেয়ে তুমি? আমি খেটে মরব আর তুমি শপিং করে আমোদ ফুর্তি করবে।আজ থেকে আমি রান্না করতে পারবো না,রান্নার সব দায়িত্ব তোমার।’

আশা বেগমের পাশে কাজের মেয়ে সেতারা দাড়িয়ে ছিলো।আশা বেগমের কথা শুনে সে দাঁত কেলিয়ে বলে উঠে,

‘আম্মা আপনি ক‌ই খেটে রান্না করলেন!রান্না ত মুই করি।’

আশা বেগম রেগে যায়।তুরকে বলে উপরে যাও আজ রাত থেকে তুমি রান্না করবে।তুর চলে গেলে আশা বেগম সেতারাকে জোরে ধমক দিয়ে রেগে গজ গজ করতে করতে বলল,

‘চুপ বেয়াদব যার নুন খাস তাঁর বিপক্ষে কথা বলিস।দূর হ আমার চোখের সামনে থেকে।’

ধমক খেয়ে সেতারা চলে যায়।যাওয়ার আগে বির বির করে বলে,

‘ধুর আম্মা ক‌ইলো নুন খাই কিন্তু আমার বড় মাথায় একখান কথা ঘুরে, আমি তো শুধু নুন খাই না ভাত তরকারিও খাই।আম্মা আমারে ভাত তরকারি খাওয়ার কথা না ক‌ইয়া নুন খাওয়ার কথা ক‌ইলো ক্যা! না, আজ থেকে আর নুন খামু না। সত্য কথা ক‌ওয়ার জন্য দরকার পড়লে আমি তরকারিতেও নুন খামু না,তবুও সত্য কথা ক‌ইতে হ‌ইবো আমার।’

চলমান।

বিঃদ্রঃ ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে