#হৃদয়ের_সন্ধিক্ষণ
#ফারিহা_খান_নোরা
#পর্বঃ২
‘সুন্দরী তোমার এই রূপে ত ঝলসে যাই এতো তেজ দেখিও না।এতো তেজে না জানি পু*ড়ে যাবো।’
বলেই বিশ্রি হাসি দিলো আফসান।লালসার চোখে তুরকে আপাদমস্তক কে দেখছে। ঘৃণায় তুরের ফর্সা মুখ লাল হয়ে গেছে।আজ কলেজের গেটের সামনে বের হতেই কোথায় থেকে আফসান এসে রাস্তায় এতো গুলো মানুষের সামনে এই উক্তিটি করে।ছিঃ মা হয়ে তার জন্য এমন একটা ছেলে পছন্দ করলো যার কাছে মেয়েদের কোনো সম্মান ই নাই।তা না হলে একটা মেয়েকে রাস্তায় এতো গুলো মানুষের সামনে এমন নোংরা কথা বলতে পারে।
‘মাইন্ড ইউর ল্যাঙ্গুয়েজ মি. আফসান।’
‘আরে সুন্দরী রেগে যাচ্ছো কেন! দুই দিন পরে যার সাথে বিছানায় যাবে তার সাথে এমন কঠোর কন্ঠে কথা বললে কি করে হবে।মিষ্টি কন্ঠে কথা বলবে,কোকিল চিনো কোকিল? কোকিল কন্ঠে কথা বলবে এমনিও তুমি দেখতে পরীর থেকেও কম নও কন্ঠ কোকিলের মত করো।আই লাইক ইট!’
এবার জেনো তুরের তর তর করে রাগ বেড়ে যায়।একটা মানুষ এতোটা জঘন্য হয় কি করে। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা তুরের বন্ধু আতিয়া বলল,
‘কি রে তুই এই বখাটে ছেলে কে।তোকে এসব বলছে তুই চুপ করে আছিস।লোক ডেকে একে ধরে দে।’
‘এই শালী তুমি চুপ থাকো।শালী আধা ঘর ওয়ালী। চাইলে আমার অর্ধেক বিছানার মালিকানা তুমিও হতে পারো।
তুর আতিয়াকে থামিয়ে দিলো।কারণ এখন এসব করলে একটা ত সিনক্রিয়েট হবেই আবার বাড়িতে মায়ের কানেও কথা যাবে যা এই মুহূর্তে তুর চাইছে না। ঠান্ডা রাখতে হবে এখন।ধীর কন্ঠে বলল,
‘দেখুন আফসান আমি আপনাকে বিয়ে করবো না। আমি আপনার মতো ছেলেকে লাইফ পার্টনার হিসাবে চাই না। আপনার চরিত্রের ঠিক নাই।আপনি আমাদের বাড়ির কাজের মেয়েটাকেও ছাড় দেন নি। এইটুকু বয়সে ও প্রেগন্যান্ট।যাক গে সে সব ছেড়ে দেই কারণ এই বিষয়টা আপনি রুমি ও আমার মা ভালো বুঝবেন। আমি আপনাকে ঘৃনা করি সো আমার পথ থেকে সড়ে দাঁড়ান।’
আফসান এক কান দিয়ে শুনে আরেক কান দিয়ে বের করে দিলো।তুরের কাছে এসে হাত ধরে,হাতে স্লাইট করতে করতে বলল,
‘ওসব আগে কি হয়ছে বাদ দেও।এখন তুমি আছো, তোমার মতো সুন্দরী মেয়ে থাকতে আমি আর রুমির কাছে যাবে না।যাবো কেন বল ত?যেখানে রুমির কাজ তোমায় দিয়েই হবে।ও প্রেগন্যান্ট এ্যার্বশন করে নিবে ঝামেলা শেষ।তবে এ বিষয়ে শিওর থাকো আমি আসল পুরুষ।এখন শুধু তুমি আর আমি।’
আফসান হাসতে শুরু করে।আতিয়ার রাগ হচ্ছে তার বন্ধু তুর এই নোংরা পুরুষের পাল্লায় কিভাবে পড়লো তা ভেবে।তুর হাত মুচড়ায় তবুও আফসান ছেড়ে দিচ্ছে না। তুই উচ্চস্বরে বলে,
‘আফসান আমার হাত ছেড়ে দে।’
‘পাখি দেখি আপনি থেকে তুই তে নামছে।জানেমান হও কিছু বললাম না।ছাড়বো না,ছেড়ে না দিলে কি করবে?’
কথা শেষ হতে না হতেই নাকের উপর পুরুষালী হাতের শক্ত ঘু*ষি পড়ে। আফসান ছিটকে পড়ে যায়।সামনে তাকিয়ে দেখে একটা অচেনা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে। কিছু বুঝে উঠার আগেই এগিয়ে এসে আবার মা*র*তে শুরু করে।তুর দেখলো তাদের ভার্সিটির বড় ভাই শাফিন।শাফিন ভালো ছেলে ভার্সিটির টপার।তুরদের সাথে টুকটাক কথা হয়।তুর ভয় পেয়ে পিছিয়ে যায়।শাফিন লাত্থি মারতে শুরু করে।রাগি কন্ঠে বলে,
‘মেয়ে দেখলে জিভ লকলক করে? তাদের শরীর ছুঁতে ইচ্ছে করে।এই হাত দিয়ে ছুঁয়েছিস তুই।’
বলেই আফসানের হাতের উপর পা তুলে দিয়ে পি*ষ*তে শুরু করে। আফসান চিল্লাতে থাকে মানুষ জড়ো হয়। এতোক্ষণ যারা দাঁড়িয়ে মজা দেখছিল।আতিয়া অবস্থা বেগতিক দেখে দৌড়ে যায় শাফিনের হাত ধরে আটকাতে চায় কিন্তু একটা পুরুষ মানুষের শক্তির কাছে কি অবলা নারী পারে।না পেরে শাফিনের বন্ধুদের নিয়ে আসে।তারা থামায়,শাফিন ছটফট করতে করতে বলে,
‘ছাড় অই কুত্তার বাচ্চাকে দেখে দিবো কোন দিকে চোখ দিয়েছে।’
‘ছাড় ভাই,দেখ কি করছিস এবার ম*রে যাবে।’
শাফিন দেখলো তুর ভীতু ভাবে এক পাশে দাঁড়িয়ে আছে।হাত পা কাঁপছে তার।আতিয়ার দিকে তাকিয়ে বলল,
‘তোমার বান্ধবীকে সামলাও, ও মনে হয় ভয় পেয়েছে।আর চলো তোমাদের বাসায় এগিয়ে দিয়ে আসি।’
শাফিনের কথা শুনে আতিয়া তুরের দিকে খেয়াল করে। বেচারি এমনি নরম মনের।আজকের ঘোটনা তার মনে বাজে ভাবে প্রভাব ফেলেছে।
_________________
এখন রাত্রি বেলা! চারিদিকে অন্ধকার বিরাজমান করছে।তুরের হৃদয় আজ বিক্ষিপ্ত হয়ে আছে কারণ কলেজের ঘটনা।ভয় কাজ করছে এখনো হয়তো মায়ের কানে কথাটা যায়নি তা না হলে মা এতোক্ষণ চুপ থাকতো না।তবে শিফনের ব্যাপারটা তুরকে ভাবাচ্ছে।ছেলেটা কিভাবে মারপিট করলো শুধুমাত্র তার জন্য।তুরের মনের এক কোণে শিপনের জন্য ভালো লাগে তৈরি হয়েছে কিন্তু এই ভালো লাগা, ভালোলাগা অবধিই সীমাবদ্ধ রাখতে হবে তার মা কিছুতেই তুরের বিয়ে তুরের পছন্দ অনুযায়ী দিবে না।আর বাবা? তিনি ত সব সময় মায়ের কথাই উঠে আর বসে তার নিজের কোনো মতামত নেই।
তুরের বাবা নুরুল আলম ব্যাবসায়ী বেশীর ভাগ সময়ই বিভিন্ন জায়গায় থাকে।মাসে দু এক বার বাড়িতে এসে দুই বা তিন দিন থেকে চলে যায়।যে দুই এক দিন থাকে বাড়ির ঝামেলা কাঁধে নেয় না।তুরেরা দুই বোন এক ভাই।তুর সবার ছোট।বয়স ২০ অর্নাস ২য় বর্ষে অধ্যয়নরত সে।বড় বোন তুরফার বয়স ২২ সে অর্নাস থার্ড ইয়ারের পরীক্ষা দিয়েছে।আর সবার বড় ভাই হলো তুষার।যে এই ২৭ বছর বয়সেই সংসার ধর্ম ত্যাগ করে জঙ্গলে জঙ্গলে ঘুরে বেড়ায়।
তুরের এই মুহূর্তে একটা চিন্তা কি ভাবে মায়ের আদরের আফসান নামক নোংরা লোকের থেকে নিজেকে মুক্ত করবে।তুর এসব ভেবেই একটা দীর্ঘশ্বাস দিলো।
_________
আশা বেগম তার রুমের বেডে বসে রূপ চর্চা করছে। সিল্ক কাপড়ের হাফ হাতা গাউন পরিধান করেছে তিনি।মুখে ফেস প্যাক আর চোখে দুটো শশার স্লাইড।কানে ইয়ার ফোন,গান শুনতে শুনতে পা ঝুঁকছে।এর মধ্যে বাহিরে থেকে কাজের মেয়ে সিতারা চিল্লানি শুনে বিরক্ত হয়ে যায়।ভাবে এমনি থেমে যাবে তবে না,তার ভাবনা ভুল করে সিতারা আরও উচ্চস্বরে চিল্লিয়ে উঠে।এবার চিৎকার করে আশা বেগম কে ডাকছে। এ অবস্থায় ত আর বাহিরে যাওয়া যাবে না তাই আশা বেগম শশা সরিয়ে একটা সাদা চাদর নিয়ে নিজের শরীর ঢেকে উঠে পড়ে গন্তব্য সেতারকে আজ একটা উচিত শিক্ষা দিবে।
এদিকে সিতার কাজ করছিলো হঠাৎ ডোর বেল অনবরত বেজে উঠলে সে বিরক্তের সহিত দরজা খুলে সামনে তাকিয়ে চিৎকার করে উঠে।কারণ তাঁর সামনে পুরো শরীরে ব্যান্ডেজ এ আবৃত করা ভূত দাঁড়িয়ে আছে যার দুটো চোখ ছাড়া শরীরের আর কিছুই দেখা যাচ্ছে না। সে ভুত ভুত বলে দরজায় দাঁড়িয়ে চিল্লাতে থাকে।এর মধ্যে আশা এসে সামনে না তাকিয়েই বলে,
‘এমন চিৎকার করছিস কেন কি হয়ছে।বাড়িটা কি মাছের বাজার করবি। কোথায় ভুত পেলি পাগল।’
সেতারা আশা বেগমের দিকে তাকিয়ে আরও চমকে যায়। এ ত আরেকটা ভূত।পুরো শরীর সাদা চাদরে মুড়ানো মুখে কালো কি সব। সেতারা একবার আশা বেগম কে দেখছে ত একবার ঘাড় ঘুরিয়ে ব্যান্ডেজ এ মুড়ানো ব্যাক্তিকে দেখছে।এবার সে তুতলাতে তুতলাতে বলে,
‘ডানে ভুত বামে ভুত, সামনে ভুত পিছে ভুত সবখানেই ভুত……’
বলেই অজ্ঞান হয়ে যায়। আফসান কোনো মতে বলে,
‘মা!’
আশা বেগম ও চমকে যায়। আফসান আবার বলে,
‘মা আমি আফসান।’
‘বাবা তোর এই অবস্থা কেন?’
‘সব বলছি আগে ভিতরে যেতে দেও।আর এই জোকার কে সামনে থেকে সরানোর ব্যাবস্থা কর।’
আশা বেগম ছেলের এমন অবস্থা দেখে দিশেহারা হয়ে যায়। আফসান কে ড্রয়িংরুমের সোফাতে বসিয়ে দেয়। আফসান মাকে একে একে সব ঘটনা খুলে বলে।আশা বেগম রেগে যেয়ে বলে,
‘অই তানিয়ার মেয়ের এতো বড় সাহস।ও কে ত আমি দেখে নিবো।দুই দিনের মেয়ে হয়ে আমার ছেলেকে নাগর দিয়ে পিটিয়ে নেয়। চরিত্রহীন মেয়ে কোথাকার। ভেবেছিলাম সরল এ ত দেখি মায়ের মতই।’
আফসান থামিয়ে দিয়ে আশা বেগমকে উদ্দেশ্য করে বলল,
‘আমি কিছু শুনতে চাই না।সাত দিনের মধ্যেই তুরকে আমার বিছানায় চাই।’
চলমান।