হৃদয়হরণী পর্ব-৬১

0
14

#হৃদয়হরণী
#পর্ব:৬১
#তানিশা সুলতানা

জীবন থেকে হারিয়ে যায় মানুষ গুলো রেখে যায় স্মৃতি। স্মৃতি আঁকড়ে বাঁচতে হয় আমাদের। কখনো ভালো স্মৃতি বা কখনো খারাপ।
একটা কথা কিন্তু সঠিক “স্মৃতি হ”ত্যা করতে পারলে মানুষ আ”ত্ন”হ”ত্যা করতে না”
কিন্তু দেহ থেকে প্রাণ না বের হলে স্মৃতি হত্যা হয় না।
মায়া শুধু একটা নাম না। এক সমুদ্র ভালোবেসে ঠকে যাওয়া একটা চরিত্র। মায়া এমন একটা মানুষ যাকে কেউ একজন গভীর ভাবে ভেঙে দিয়েছে। স্বপ্ন গুলো পুরিয়ে দিয়েছে।
হ্যাঁ এই মায়া সেই মায়া যার সাথে সাদির বিয়ে ঠিক হয়েছিলো।
দীর্ঘ দিন পরে প্রাক্তনের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে মায়া। ইচ্ছে করে দাঁড়ায় নি। হঠাৎই সামনে পড়ে গেলো। চোখ দুটো আটকে গেলো পাষাণ পুরুষের আদল খানায়।
সেই পুরুষের চোখ দুটো মায়া দেখে নেয় খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে। নাহহহ কোথাও তার জন্য মায়া বা ভালোবাসা দেখতে পেলো না।
মানুষ এতোটদই নিষ্ঠুর হয়?
আকাশ ছিলো মায়ার প্রেমিক। প্রেম ছিলো তাদের। তারপর কোনো কারণ ছাড়াই আকাশ সরি গিয়েছিলো মায়ার জীবন থেকে৷ স্বপ্ন দেখিয়প একটা সুস্থ মস্তিষ্কের মেয়েকে অসুস্থ বানিয়ে চলে গিয়েছিলো। পিছু ফিরে তাকায় নি আর। কখনো জানতেও চায় নি “কেমন আছো?”
মায়া অপেক্ষায় থেকেছিলো। কতো রাত কান্না করেছে। তাহাজ্জুদ পড়ে আল্লাহর কাছে চেয়েছে আকাশকে। হয়ত চাওয়াও ক্রুটি ছিলো। তাই তো মায়া পেলো না।
মাঝেমধ্যে মায়ার ইচ্ছে করতো আকাশের সামনে দাঁড়িয়ে চোখে চোখ রেখে জিজ্ঞেস করতে “কেনো ঠকালে আমায়? কেনো আমার ভালো থাকাটা কেঁড়ে নিলে? কেনো আমায় মে রে ফেললে”
কিন্তু আত্মসম্মান নামক শব্দটা মায়াকে আটকে দিয়েছে। প্রশ্ন করতে দেয় নি। বরং বার বার এটাই বুঝিয়েছে “যে চলে গিয়েছে তাকে প্রশ্ন করে আটকানো যাবে না। তাকে ইমোশনালি ব্লাকমেইল করে আটকানো সম্ভব না”

আকাশও অবাক হয়েছে মায়াকে দেখে। এই মুহুর্তে এখানে মায়াকে একদম আশা করে নি সে। সাদি কল করে ডেকেছে তাকে। তাই এই অবেলায় শপিং এ আসা।

আকাশ মায়ার সামনে থেকে সরে দাঁড়ায়। রাস্তা তৈরি করে দেয় মায়াকে যাওয়ার।
মুচকি হেসে হাত দিয়ে যেতে ইশারা করে।
মায়া দৃষ্টি সরায় আকাশের থেকে। চোখ দুটো জ্বলছে। বোধহয় পানি জমেছে। চোখের পানিও। যখন তখন চলে আসে। কারণে অকারণে। দুর্বলতা লুকাতেই দেয় না।
মায়া যাচ্ছে না দেখে আকাশ ভ্রু কুচকে তাকায়।

“কিছু বলবে?

মায়া চমকায়। প্রশ্নটা আশা করে নি সে। তবে জবাব দিতে ইচ্ছে করছে ” হ্যাঁ অনেক কথা বলার আছে তোমায়। অনেক প্রশ্ন আছে তোমার কাছে। জবাব চাই আমার”
কিন্তু ওই যে বিবেক। কথা বলতে বাঁধা দেয়।
মায়াও মুচকি হেসে মাথা নারিয়ে বোঝায় কিছু বলবে না। অতঃপর পাশ কেটে চলে যায়। কিছু দূর গিয়েই দাঁড়িয়ে পড়ে। পেছন ঘুরে তাকায়। কিন্তু আকাশকে দেখা যায় না। কারণ সে চলে গিয়েছে। একবারও বোধহয় পেছন ফিরে তাকায় নি।
“আচ্ছা মানুষ এতো দ্রুত সব ভুলে যাই কি করে?
তাদের কি মন নেই? মায়া শব্দটা তাদের মধ্যে নেই কি?”

___

সামিরকে আকাশের দায়িত্বে রেখে সাদি বিদায় নিয়েছে। সামিরের সাথে থাকলে আজকে আর বাসয় ফেরা হবে না তার। সামিরের বকবক এ মাথা ধরে গিয়েছে। সাদির ইচ্ছে করে মাঝেমধ্যে গালে হাত দিয়ে দুই তিন দিন এর জন্য ভাবনার জগতে চলে যেতে। “সব পাগল তার কপালেই কি করে জুটলো?”
তবে সাদির ভালোও লাগে। ভালো থাকার মেডিসিন হচ্ছে সামির এবং ছোঁয়া। এরা দুজন চুপ থাকলে সাদির নিজেরই দম বন্ধ লাগে।
আল্লাহর কাছে বারবার শুকরিয়া আদায় করে এমন বউ এবং বন্ধু পাওয়ার জন্য।

দুই হাতে ফলমূল নিয়ে সাদি বাসায় ফিরে। সন্ধ্যা হয়েই গিয়েছে প্রায়।
ছোঁয়া এই সময় বাগানে একটু হাঁটাহাঁটি করে। আজকেও তার ব্যতিক্রম হয় নি৷ ছোঁয়া রানী হাঁটছপ এবং বই পড়ছে৷ সাদির চোখ দুটো বড়বড় হয়ে যায়। এ কি দেখছে সে?
তার আধপাগল বউ বই পড়ছে? স্বপ্ন টপ্ন দেখছে কি?
সাদি ফলমূলের ব্যাগ নামিয়ে নিজের শরীরপ চিমটি কাটে। ব্যাথা পেয়ে মুখ দিয়ে “উহহ” শব্দ বেরিয়ে আসে। তার মানে স্বপ্ন নয়।
তার আধপাগল বউ সত্যিই বই পড়ছে।
সাদি মুচকি হেসে এগিয়ে যায়।
ছোঁয়ার পেছনে দাঁড়ায়।

“সূর্য কি আজ উঠে নি?

ছোঁয়া যেনো জানতোই সাদি আসবে। তাই চমকায় না। বইটা বন্ধ করে মুখ গোমড়া করে তাকায় সাদির দিকে। বউয়ের মুখ খানা কালো দেখে সাদি ভ্রু কুচকে ফেলে। চতুর সাদি বুঝে ফেলে বউ তার গন্ডগোল পাকিয়ে ফেলেছে।

“আমাকে স্যার খুঁজে দেন। সামনে আমার পরিক্ষা সে খেয়াল আছে আপনার? ফেল করলে তো আবার বলবেন ফেলটু বউ।

অবাকের ওপর অবাক সাদি। সারা বছর যে মেয়ে বই ছুঁয়ে দেখে না। সে স্যার খুঁজতে বলছে?

” শুনেন আধবুড়ো স্যার খুঁজে আনিয়েন। আমি আবার দেখতে সুন্দরী। কম বয়সী স্যার আনলে প্রপোজ করে বসতে পারে।

সাদি ছোঁয়ার মাথায় টোকা দেয়।
“সুন্দরী ফকিন্নি
তোমার পড়ালেখার নেশা জাগলো কেন?
কেচটা কি? খুলে বলো।

ছোঁয়া মুখ বাঁকায়।
” এখানে খুলতে পারবো না। আমার শরম করে।
সাদি হকচকিয়ে যায়।
“ঘটনা বলতে বলছি৷

” ঘটনা কিছুই না। আমি শিক্ষিত হবো। ভার্সিটিতে পড়বো। ব্যাংকার হবো। তারপর আপনাকে আর আপনার বাচ্চাদের ফেলে আরেক বেডার সাথে ভেগে যাবো।

সাদি দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। এখন কথা বাড়ালে এসবই টানবে ছোঁয়া।
“আচ্ছা ভেতরে চলো।
ছোঁয়া দাঁড়িয়ে যায়। আলতো হাতে জড়িয়ে ধরে সাদিকে।
“আমি আপনার যোগ্য হতে চাই। যাতে কেউ কখনো প্রশ্ন তুলতে না পারে। বলতে না পারে সাদমান চৌধুরী যোগ্য বউ পাই নি। আমাদের বাচ্চা যাতে বলতে না পারে তাদের মা আধপাগল।
আমি বউ হিসেবে আধপাগলই থাকতে চাই। কিন্তু মা হিসেবে পারফেক্ট।
আর পারফেক্ট হতে গেলে আমাকে উচ্চশিক্ষিত হতে হবে।
সাদু আমি বুঝি কম। কিন্তু বোকা নই৷ আমাকে সাপোর্ট করবেন। ভুল করলে বকবেন। আমার সব কথায় সায় জানাবেন না।
সাদি মুচকি হাসে। চুমু খায় ছোঁয়ার মাথায়।
” তোমার থেকে পারফেক্ট এই দুনিয়ায় আর কেউ নেই।

ছোঁয়া তাকায় সাদির মুখপানে।
“এভাবে বলে আমাকে দমিয়ে দিবেন না। আপনি আমায় ভালোবাসেন বলে আমার সব কিছু পারফেক্ট লাগে। কিন্তু সত্যি কথা আমি পারফেক্ট না।

চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে