#হৃদয়হরণী
#পর্ব:৫৮
#তানিশা সুলতানা
ছোঁয়ার প্রেগন্যান্সির খবর শুনে কেউ খুশি না। সকলের মুখ ভারি। শুধু ছোঁয়ার ঠোঁটের কোণা থেকেই হাসি সরছে না।
বাড়িতে গোল বৈঠক বসেছে। ছোঁয়া আপাতত তার রুমে। তাকে সাবিনা বেগম ঘুমাতে বলে চলে এসেছে।
ডাক্তার সাদিকে প্রেগ্ন্যাসি কনফার্ম জানানোর পর থেকে সাদির চোখে মুখে গম্ভীর একটা ভাব চলে এসেছে।এমনিতেই সব সময় গম্ভীর ভাব সাদির মুখখানায় বজায় থাকলেও আজকে মুখখানা অন্য রকম। রেগে আছে না কি খুশি ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। কেউ বুঝতে চাইছেও না।
সেলিম একটু পরপরই কটমট চোখে তাকাচ্ছে সাদির দিকে। ইচ্ছে করছে ঠাটিয়ে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিতে। বড্ড বেয়াদব ছেলেটা।
নাজমা বেগমও হতাশ হয়েছে। তার মেয়েটা কখনো নিজে হাতে খেতে পারে না ঠিকঠাক। সে কি করে বাচ্চা সামলাবে? কি করে প্রেগ্ন্যাসির এই কঠিন লড়াই লড়বে?
সাজ্জাদ ছেলের মুখ পানে তাকিয়ে বলে ওঠে
“বাড়িতে নতুন অতিথি আসছে। আমাদের উচিত তাকে সাদরে গ্রহণ করা। এদের মুখ গোমড়া করে থাকার মতো কিছু হয় নি।
সাজ্জাদের এই কথায় তেঁতে ওঠে সেলিম। সে বসা থেকে দাঁড়িয়ে যায়
” আমার মেয়েটার বয়স খেয়ালে নেই তোমার ভাইয়া? বাচ্চা সামলানোর মতো বয়স হয়েছে ওর?
তোমার ছেলে সব কিছুতেই বাড়াবাড়ি করবে।
সাবিনার কপালে ভাজ পড়ে। এখানে তার ছেলের দোষ খুঁজে পাচ্ছে না তিনি।
“ছোট ভাই
সাদু কি করেছে এখানে? ছোঁয়াকে চিনেন না আপনি?
সব সময় সাদুর ওপরেই কেনো তোমার এতো রাগ? কেনো আমার ছেলেকেই কথা শোনাও তুমি?
সেলিম আজকে আর চুপ থাকে না। তিনি আঙুল তুলে বলে ওঠে
” আরও দশ বছর আগে তোমার ছেলে ছোঁয়াকে বিয়ে করার প্রস্তাব দিয়েছে আমাকে। আরও আগে থেকেই সে বিয়ে করার পরিকল্পনা করে রেখেছে।
সকলেই থমকে যায়। এই বিষয়ে কারোরই ধারণা ছিলো না। কেউ এতোটুকুও আন্দাজ করতে পারে নি যে সাদি ছোঁয়াকে ভালোবাসতো।
কারণ সাদি সারাক্ষণই ছোঁয়াকে এড়িয়ে চলতো।
সাদি দীর্ঘ শ্বাস ফেলে
“ভালোবেসেছি তাই আপনাকে বলেছিলাম। গোটা দুনিয়া খুঁজে দেখো আমার মতো তোমার মেয়েকে কেউ ভালোবাসতে পারবে না। তোমার আধপাগল মেয়েকে ভালোবেসে আগলে রাখতে কোনো পুরুষই পারতো না। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করো।
সেলিমের মুখ বন্ধ হয়ে যায়। সত্যিই সাদি তার মেয়েকে খুব ভালোবাসে সেটা সে জানে। বলা বাহুল্য সেলিমও মনে মনে সাদিকে বেশ পছন্দ করে। কিন্তু সে স্বীকার করতে নারাজ।
সিমি বলে
” তোমরা এভাবে কেনো বসে আছো? কেনো টেনশন করছো? ছোঁয়াকে দেখো সে কতোটদ খুশি। আমাদের মুখ গোমড়া দেখে ছোঁয়া ডিপ্রেশনে চলে যাবে।
সাদি দাঁড়িয়ে যায়।
“তোমার বোনের ডিপ্রেশনে চলে যাওয়াই উচিত। আস্ত পাগল একটা। জানটা জ্বালিয়ে খেলো আমার।
বলেই সাদি চলে যায়। সিমি মুখ টিপে হাসে। এদের খুনশুটি দেখতে বেশ ভালো লাগে সিমির।
সাজ্জাদ উঠে দাঁড়ায়। সেলিমের মুখোমুখি দাঁড়ায়
” ভাই সব ভুলে যা। তুই নানা হতে যাচ্ছিস আর আমি দাদা। সেলিব্রিট করি। পরির দাদুভাইয়ের ভাই আসবে মিষ্টির বন্যা বয়িয়ে দিতে হবে না?
সেলিম আর মুখ ভার করে থাকতে পারে না। হেসে জড়িয়ে ধরে সাজ্জাদকে। অতঃপর দুই ভাই বেরিয়ে যায় মিষ্টি কিনতে।
___
সাদি রুমে ঢুকে দেখে অশান্ত রানী শান্ত হয়ে ঘুমচ্ছে। এক পলক ঘুমন্ত রানীকে দেখে ওয়াশরুমে ঢুকে যায় সাদি। মনে করার চেষ্টা করতে থাকে। সাদি তো ঠিকঠাকই ছোঁয়াকে ঔষধ দিতো। ছোঁয়া খেয়েও নিতো। তাহলে?
কিভাবে কি হলো?
না কি ছোঁয়া খেতো না?
ফেলে দিয়ে সাদিকে মিথ্যে বলতো?
চোয়াল শক্ত করে ফেলে সাদি। ইচ্ছে করছে ঠাটিয়ে একটা চর বসিয়ে দিতে ছোঁয়ার তুলতুলের নরম গালে।
ফ্রেশ হয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হতেই দেখতে পায় ছোঁয়া খাটের ওপর গোল হয়ে বসে আছে। চোখে এখনো ঘুম জড়ানো। বিরক্তির মাত্রা বেরে যায় সাদির। ঘুম শেষ হয় নি তবুও উঠে বসে থাকতে হবে।
সাদি দৃষ্টি সরিয়ে আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। সময় নিয়ে নিজেকে দেখতে থাকে। বা হাত চুলে চালিয়ে চুল গুলো পরিপাটি করার চেষ্টা চালায়।
ছোঁয়া তাকিয়ে আছে সাদির মুখ পানে। বেশ বুঝতে পারছে সাদি রেগে আছে। রাগ ভাঙাতেই মূলত ঘুমকে বিদায় জানিয়ে এভাবে বসেছে।।
“আপনি কি রেগে আছেন আমার ওপর?
মাথা নিচু করে নরম গলায় সুধায় ছোঁয়া। সাদি জবাব দেয় না। তাকায় না পর্যন্ত। নিজের মতো পারফিউম লাগাতে থাকে। ড্রেসিং টেবিল গোছাতে থাকে।
সাদির থেকে এমন ইগনোর পেয়ে ছোঁয়ার কান্না পায়। ঠোঁট কামড়ে কান্না আটকানোর চেষ্টা চালায়। কিন্তু পারে না।
” আপনি এতোটা অখুশি হলে আমি এর্বোশন করাতেও রাজি।
বুক কেঁপে ওঠে সাদির। হাত থেমে যায়। হাতে থাকা পারফিউমের বোতল ঠাসস করে রেখে পেছন ঘুরে তাকায় ছোঁয়ার দিকে।
বড়বড় পা ফেলে এগিয়ে যায়। বসে পড়ে ছোঁয়ার পাশে।
“বয়স কতো তোমার? প্রেগন্যান্সির মানে জানো? মুখের কথায় বাচ্চা হয়ে যাবে? নিজে যেটা ভালো মনে করো সেটাই ভালো? বাকিরা ভুল?
ছোঁয়া তুমি বুঝতে পারো না কিছু? সারাক্ষণ বাঁদরামি ছাড়া আর কিছু পারো তুমি?
বেশ ঝাঁঝালো গলায় বলে সাদি। ছোঁয়ার কান্নার সুর বেরে যায়। সে সাদির কাঁধে মাথা ঠেকিয়ে কাঁদতে থাকে। ব্যাসস সাদির রাগ গলে পানি হয়ে যায়।
দুই হাতে আগলে নেয় ছোঁয়াকে। মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকে।
” আপনি আমার পাশে থাকলে আমি সব পারবো। আমায় শুধু একটু ভালোবাসবেন আর সাহস দিবেন। তাহলেই হলো।
ফোঁস করে শ্বাস ফেলে সাদি।
ছোঁয়াকে সোজা করে বসিয়ে চোখের পানি মুছিয়ে দেয়।
“আমার কথার অবাধ্য হলে মে রে হাত পা বেঁধে নদীতে ফেলে আসবো। বলে দিলাম আমি।
চলবে
#হৃদয়হরণী
#পর্ব:৫৯
#তানিশা সুলতানা
সামিরের সাথে ঐশীর বিয়ে দিতে রাজী হয়েছেন আতোয়ার হোসেন। সামিরকে তার কোনো কালেই পছন্দ ছিলো না। তবে সাদিকে পছন্দ। গম্ভীর রাগী প্রাপ্তমনষ্ক সাদিকে তার প্রচুর ভালো লাগে। ইচ্ছে ছিলো তার মেয়ের জন্য প্রস্তার দেওয়ার। কিন্তু তার আগেই খবর পেয়েছে সাদির বিয়ের। তাই আর তার আশাটা পূরণ হলো না।
গোল বৈঠক বসেছিলো সাদি, সামির,এবং আতোয়ার। আতোয়ার যখনই বলেছে
“ঠিক আছে। আমার মেয়ে ভালো থাকলেই হলো।
সামির একটা চিল্লানি দিয়ে দাঁড়িয়ে যায়। এক লাফে আতোয়ারের পাশে এসে বসে এবং জাপ্টে জড়িয়ে ধরে গালে চুমু খেয়ে নেয়। আতোয়ার চোখ বড়বড় করে ফেলে
” শশুড় মশাই লাভইউ। ২০২৪ সালেই আপনাকে নানা বানিয়ে ফেলবো। আপনার মেয়ে কখনোই খালি পেটে রাখবো না। প্রতি বছর একটা করে বাচ্চা গিফট করবো। কথা দিলাম।
আতোয়ার শুকনো ঢোক গিলে সামিরকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়। কটমট চোখে তাকায় সামিরের দিকে।
“অসভ্য একটা
বলেই তিনি চলে যায়। সামির গালে হাত দিয়ে তাকিয়ে থাকে।
” আশ্চর্য অসভ্য কেনো কইলো? আমি তো সত্যি কথাই কইলাম।
সাদি ঠোঁট টিপে হাসে।
“সত্যি কথার ভাত নাই জানিস না।
সামির দীর্ঘ শ্বাস ফেলে
” হাহহ তাই তো সত্যি কই না।
“আর বলিসও না। তুই সত্যি বললে দুনিয়ায় মিথ্যা শব্দটাই উঠে যাবে।
সামির মুখ বাঁকায়।
” বাজে বকিস না। ঐশীকে আনার ব্যবস্থা কর। বিয়ে ঠিক হলো একটা চুমু খাবো না?
“শালা তোর কপালে বউ নাই।
” অভিশাপ দিবি না সাদি চাচা। একটাই জীবন। এক জীবনে বিয়ে ছাড়া চাওয়ার আর কিছুই নাই। জীবনের এক মাত্র লক্ষ হওয়া উচিত বিয়ে করা আর বাচ্চা দেওয়া।
আমি সরকার হলে স্লোগান দিতাম
“বিয়ে বিয়ে বিয়ে চাই
বিয়ে ছাড়া উপায় নাই
বিয়ে করবো থাকবো পাশে
বাচ্চা দিবো মাসে মাসে
সাদি হাত তালি দেয়।
” বাহহ বাহহ বাহহ
কপাল করে বউ আর বন্ধু পেয়েছিলাম।
সাদি নিজের শার্টের কলার ঠিক করে একটু ভাব নিয়ে বলে
“গর্বে তুই গর্ববতী হচ্ছিস? স্বীকার করো।
সাদি নিজের পায়ের জুতো খুলে
“গর্ববতী তোকে বানাবো এখন।
সামির এক লাফে সোফার অন্য পাশে চলে যায়।
” শালা দূরে যা। আমার ভার্জিনিটির দিকে হাত বাড়াবি না তুই।
_____
বমি করতে করতে অস্থির ছোঁয়া। গলা দিয়ে রক্ত আসার উপক্রম। পেট ব্যাথা করছে সাথে মাথা ব্যাথা। কিছুই খেতে পারছে না। পেটে খুধা। অসয্য লাগছে ছোঁয়ার৷ কান্না করে ফেলে সে। সাবিনা বেগম চিন্তিত ভঙিতে ছোঁয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। সিমি এক বাটি ঝাল ঝাল সুপ বানিয়ে এনেছে। যাতে একটু খেতে পারে।
ছোঁয়া তাকিয়ে ওয়াক করে ওঠে।
সিমির রাগ হয়।
“ঢং করিস না ছোঁয়া। এভাবে চলে না কি? একটু খেতেই হবে।
ছোঁয়ার চোখের কোণে পানি জমেছে। চোখ বন্ধ করতেই দুই গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ে পানি।
” বাচ্চা দুনিয়াতে আনতে এতোটা কষ্ট হয়? আমি আর কখনোই আম্মুর সাথে বাজে বিহেভিয়ার করবো না। আর আমার কুদ্দুসকেও কখনো বকবো না।
সিমিও সুপের বাটি রেখে ছোঁয়াকে তুলে বসায়।
“একটু শক্ত হ। এখনো অনেক দিন বাকি। এখনই তোর মুখের দিকে তাকানো যাচ্ছে না। পরে কি হবে?
ছোঁয়া মাথা নিচু করে ফেলে।
“আমি শক্তই তো আপু।
একাই খেতে পারবো দাও।
সুপের বাটি নিয়ে ছোঁয়া একাই খেতে থাকে। বেশ কষ্ট হচ্ছে খেতে। গা গুলিয়ে উঠছে আবার। তবুও কষ্ট করে খাচ্ছে।
অনেকটা খাওয়ার পরে ছোঁয়া অস্থির হয়ে ওঠে। এবার আর পেটে ঢুকছে না। পেট থেকে বেরিয়ে আসতে চাইছে।
তখনই সাদি একটা তেঁতুলের আচার ধরে ছোঁয়ার মুখের সামনে। ছোঁয়া তাকায় সাদির মুখ পানে। সাদি খেতে ইশারা করে।
ছোঁয়া খেয়ে নেয়। আঁচার খেয়ে বমির ভাব চলে যায় ছোঁয়ার।
সাদিকে দেখে সাবিনা বেগম নিঃশব্দে চলে যায়। সিমিও সুপের বাটি নিয়ে বেরিয়ে যায় ওদের প্রাইভেসি দিয়ে।
ওরা বেরিয়ে যেতেই ছোঁয়া গাল ফুলিয়ে বলে ওঠে
” বউ নতুন নতুন প্রেগন্যান্ট হলে গিফট দিতে হয় জানেন না? আনরোমান্টিক একটা।
সাদি ফ্লোরে হাঁটু মুরে বসে পড়ে। পকেট থেকে একটা ছোট্ট বক্স বের করে ছোঁয়ার সামনে মেলে ধরে। ভেতরে চিকচিক করছে ডায়মন্ডের রিং।
ছোঁয়ার চোখ দুটো বড়বড় হয়ে যায়।
“এটা কি?
সাদি আংটিটা তুলে ছোঁয়ার আঙুলে পড়িয়ে দিতে দিতে জবাব দেয়
“আমার অমূল্য রতনের জন্য সামান্য ডায়মন্ডের রিং।
ছোঁয়া হেসে ফেলে। সাদির গলা জড়িয়ে ধরে বলে।
আই লাভ ইউ জামাই
একটা চুমু দিন।
সাদি ছোঁয়ার কপালে চুমু খেয়ে জবাব দেয়
” লাভ ইউ টু বউ
চলবে
#হৃদয়হরণী
#পর্ব:৬০
#তানিশা সুলতানা
একটা মেয়ে যতই পাগল হোক সে তার বাচ্চার কাছে পারফেক্ট মা। এই যে আধপাগল ছোঁয়া যে সারাক্ষণ দৌড়াদৌড়ি করতে থাকে। বকবক করতে থাকে। দুষ্টুমি যার শিরায় শিরায় রয়েছে সে ছোঁয়া এখন বাচ্চার কথা চিন্তা করে ধীরে ধীরে পা ফেলে। যখন তখন লাফিয়ে ওঠে না। প্রচন্ড খুশিতেও গড়াগড়ি খেয়ে হাসে না।
ঠিক সময়ে খাবার খেয়ে নেয়। একদম অনিয়ম করে না। ডাক্তার বলেছে প্রতিদিন সকাল সকাল গোছল করতে ছোঁয়া তাই করে। একদম গোছলে অনিয়ম করবে না সে।
আজকে বাড়িতে সিমি এবং ছোঁয়া ছাড়া আর কেউ নেই। সাদি অফিসে গিয়েছে। নাজমা এবং সাহেলা মার্কেটে গিয়েছে। বাকি সবাই তাদের কাজে।
সিমি পরিকে ঘুম পাড়াচ্ছে। ছোঁয়াকে বসিয়ে রেখে গিয়েছে সাদির রুমে। ছোঁয়াকেও একটু ঘুমতে বলেছে। ছোঁয়া ঘুমতেই চাচ্ছিলো তখনই তার মনে হলো ফোনে দুটো ভিডিও দেখে নেওয়া যাক। বেবি বাম্পের সময় মায়েদের কেমন করে চলাফেরা করা উচিত, কি কি খাওয়া উচিত। যদিও ডাক্তার বলে দিয়েছে। তারপরও ডিজিটাল যুগ। ইউটিউব এ সার্চ দিলে সকল বিষয়ের তথ্যই জানা যায়।
যেই ভাবা সেই কাজ। ছোঁয়া ইউটিউব এ সার্চ দেয় “বেবি বাম্প” লিখে। সেখানে বিভিন্ন ধরণেরই ভিডিও শো করে। ছোঁয়া নজর পড়ে টুইন বেবিদের ভিডিওর দিকে। কি সুন্দর দুটো বাচ্চা। একদম একই রকম দেখতে হয়েছে। ছোঁয়ারও সাধ জাগে তারও যদি টুইন বেবি হতো।
চট করে মাথায় ধরে যায় ছোঁয়ার “টুইন জিনিস খেলে টুইন বেবি হয়”
ফোনটা রেখে চট জলদি রান্না ঘরে ছোটে ছোঁয়া। কারণ একটু আগেই তার চোখের সামনে সিমি টুইন দুটো বিস্কুট রাখছিলো তাকের ওপর। টুইন বলতে দুটো বিস্কুট জোড়া লেগে গিয়েছে। ছোঁয়া সেটাই খাবে এখন।
একটু দৌড়াতে যেতেই ছোঁয়ার মাথায় আসে “পেটে বাচ্চা”
এবার হাঁটার গতি থামিয়ে দেয় ছোঁয়া। আস্তে ধীরে হেঁটে রান্না ঘরে প্রবেশ করে। তাক থেকে বিস্কুটের ডিব্বা নিয়ে মোড়া টেনে বসে খেতে শুরু করে টুইন বিস্কুট খানা। খেতে খেতেই চিন্তা করে “একটা বিস্কুট খেলে টুইন হওয়ার চান্স থাকবে না”
এখন থেকে সব কিছুই টুইন খেতে হবে। কিন্তু বাড়িতে তো আর টুইন কিছু নেই। সাদিকে কল করতে হবে। এবং বলতে হবে বাজারে যত টুইন ফলমূল আছে সবই জেনো নিয়ে আসে।
ভাবতে ভাবতেই খাওয়া শেষ করে ফেলে। এক গ্লাস পানি পান করে খানিকক্ষণ বসে রেস্ট নেয়। ডাক্তার পই পই করে বলে দিয়েছে “খাবার খাওয়ার পরে একটুখানি রেস্ট নিতে। ভরা পেটে লাফালাফি করলে পেট ব্যাথা করতে পারে”
___
অফিস বাদ দিয়ে সাদি সামিরের পেছনে ঘুরছে। তার অবশ্যই কারণ আছে। ঐশির বাবা বিয়ে তো দিতে চেয়েছে কিন্তু ডেট তো বললো না। বিয়ের বয়স পেরিয়ে যাচ্ছে। বিয়ে দিবে দিবে করে এক বছর ঘুরাবে ঢেড় বুঝতে পারছে সামির। তাই সে সাদির অফিসে গিয়ে বসের হাত পা ধরে কেঁদেকেটে বলেছে “আমার বউ আরেক বেডার লগে ভাগছে। এবার সাদি ছাড়া কেউ তাকে ফেরাতে পারবে না। আজকের মতো ছুটি দিয়ে দেন সাদিকে। আপনার পা দুটো মাথায় তুলি আমি”
বস হকচকিয়ে গিয়ে সাদিকে ছুটি দিয়েছে। সাদি অফিস থেকে বেরিয়ে অবশ্য সামিরকে দুটো থাপ্পড় মেরে দিয়েছে। এবং আবারও অভিশাপ দিয়েছে “তোর বউ সত্যিই একদিন আরেক বেডার সাথে যাবে দেখিস”
সামির বুক ফুলিয়ে শার্টের কলার ঠিকঠাক করে জবাব দিয়েছে “যেতে পারবে না রে ভাই। সামির বোকা হতে পারে কিন্তু চালাক না। বিয়ের প্রথম বছরেই বেবি নিয়ে ফেলবো। পরের বছরে আবারও।
এমন করতে করতে বাচ্চার ভুবন বানিয়ে ফেলবো। তখন বউ যাবে কি করে? তাকে নিবেই বা কে?
সাদি দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। এর সাথে কথা বলাই অপরাধ।
মার্কেটে নিয়ে গিয়েছে সামির সাদিকে। উদ্দেশ্য শপিং করবে। শশুড় বাড়ির সকলের জন্য নানান জিনিস কিনবে। জিনিস দেখেই শশুড় মশাই পটে যাবে। আর বিয়ে দিয়ে দেবে তাড়াতাড়ি। এমনটাই ধারণা সামিরের।
সাদি বিরক্ত হয়ে সামিরের পেছন পেছন ঘুরছে। একেতো এই ভর দুপুর বেলা মার্কেটে ঘুরতে ভাল্লাগছে না। তারওপর আবার সামিরের আজাইরা চিন্তা ভাবনা।
” সাদি শশুড় মশাইয়ের জন্য জাঙ্গিয়া কিনে নিয়ে যাই কতো গুলো। বেডা খুশি হবে।
সাদি চোখ পাকিয়ে তাকায় সামিরের দিকে।
“এভাবে তাকানোর কি হলো? দেখ শশুড় মশাই আমার কিপ্টা। টাকা দিয়ে কিনে জীবনেও পড়ে না আমি শিওর।
আমি দিলে ভালোই হবে বল।
সাদি দাঁতে দাঁত চেপে বলে
“তোর শাশুড়ীর জন্যও কতো গুলো বা
থেমে যায় সাদি।
সামির বুদ্ধিমান। সে চট করে ধরে ফেলে
” মন্দ বলিস নি। তুই দাঁড়া আমি কিনে আনি।
সামির যেতে নিয়ে থেমে যায়। মুখটা গোমড়া করে ফেলে সে।
“কিন্তু ভাই। জানবো কি করে? ক
সাদি জুতো খোলার জন্য নিচু হতে যায় সামির এক দৌড়ে পালায়। সাদি কোমরে হাত দিয়ে হাসফাস করতে থাকে। পাগল ছাড়া দুনিয়া চলে না। ঠিক আছে। তাই বলে সব পাগল?
ভাবতে ভাবতেই সাদির ফোন বেজে ওঠে। পকেট থেকে ফোন বের করতেই স্কিনে ভেসে ওঠে “কুদ্দুসের মা” নাম খানা। সাদি এই নামে সেভ করে নি৷ করেছে ছোঁয়া। সাদি জানতোও না। জেনেছে গতকাল।
কল রিসিভ করে সাদি কানে তুলে
“হ্যাঁ জান বলো।
” জান আই লাভ ইউ
সাদি ঠিক বুঝে ফেলে কোনো আবদার আছে।
“লাভ ইউ টু। কিছু লাগবে?
“হুমম
বাজারে যত জমজ শাক সবজি ফল আছে নিয়ে আসেন আমার জন্য।
কপালে ভাজ পড়ে সাদি।
” কিন্তু কেনো?
“আমি খাবো। টুইন ফল খেলে টুইন বেবি হবে।
দীর্ঘ শ্বাস ফেলে সাদি।
” আচ্ছা আনবো।
“শুনেন
” বলেন
“বেশি বেশি করে আইনেন। আপনাকেও খেতে হবে। দুজন মিলে খেলেই কাজে দিবে।
সাদি নিজের কপালে নিজেই কয়েকটা থাপ্পড় দেয়।
” আনবো রাখো তুমি।
শালার কপাল
ঘরে বাইরে সব জায়গায় পাগল।
“কিছু বললেন?
চলবে