হৃদয়হরণী পর্ব-৫৫+৫৬+৫৭

0
5

#হৃদয়হরণী
#পর্ব:৫৫
#তানিশা সুলতানা

দিন দিন সকলে ছোঁয়াকে যত দেখছে অবাক হয়ে যাচ্ছে। সেই দিনের ছোঁয়া যে পুরো বাড়ি মাথায় তুলে ফেললো লাফালাফি করে। সারাক্ষণ দুষ্টুমি করাই ছিলো যার পেশা। সেই ছোঁয়া এখন কোমরে ওড়না বেঁধে স্বামীর সেবা করে যাচ্ছে। রান্না থেকে শুরু করে সাদির জামাকাপড় ধোঁয়া সবটা একা হাতে করে যাচ্ছে সে। কাউকেই কিচ্ছু করতে দিচ্ছে না। এতে অবশ্য ছোঁয়ার চেহারায় অনেকটা পরিবর্তন এসেছে। এই কয়েকদিনেই জাদু ছোঁয়া খানিকটা শুকিয়ে গিয়েছে। ধবধবে ফর্সা মুখ খানায় একটুখানি কালচে বর্ণের দেখা মিলেছে। চোখের নিচেও কালি জমে গেছে। সার জেগে সাদির হাতে পায়ে হাত বুলিয়ে দিতে থাকে। এটা অবশ্য সাদি জানে না। সে ঘুমিয়ে পড়লেই ছোঁয়া এ কাজ করে। ছোঁয়ার ধারণা রাতে হাতে পায়ে ব্যাথা করবে আর কষ্টে সাদির ঘুম ভেঙে যাবে। হাত বুলিয়ে দিলে ব্যাথা কমবে।

সাত দিন পার হয়েছে। পায়ের ব্যাথা খানিকটা কমেছে। আজকে ব্যান্ডেজ খুলে দেওয়া হবে। এক পা দু পা বাড়াতে পারে সাদি। একটু কষ্ট হলেও ম্যানেজ করে নিতে পারে।

সাদির শরীর মুছিয়ে তার গায়ে শার্ট চাপিয়ে ছোঁয়া নিজে গোছল করতে গিয়েছে। সাদির সাথে সেও যাবে। তাকে হাজারবার না করেছে সাদি। বলেছে যেতে হবে না। কিন্তু ছোঁয়া মানতে নারাজ সে যাবেই। এটা নিয়েও সাদি হতাশ। সেখানে গেলে কেঁদে কুটে অস্থির হয়ে যাবে। ডাক্তার ভালো মন্দ কিছু বললেও সে কাঁদবে। কিন্তু কি আর করার?
বউ যখন যাবে বলেছে তাকে নিতেই হবে। উপায় নেই।

সাদি উঠে দাঁড়ায়। এক পা এক পা করে এগোতে থাকে। দরজা ওবদি আসতেই হাঁপিয়ে উঠেছে সে। ব্যান্ডেজ না থাকলে অবশ্য এতোটা কষ্ট হতো না। হুইল চেয়ারও আনা হয়েছে তার জন্য। কিন্তু তাতে খুব প্রয়োজন ছাড়া সাদি বসে না।
দরজা ধরে দাঁড়িয়ে যায়। ভেবেছিলো নিচে যাবে। কিন্তু এই অবস্থায় যাওয়া সম্ভবই না। দীর্ঘ শ্বাস ফেলে সাদি। দরজা ধরে দাঁড়িয়েই থাকে ছোঁয়ার আসার অপেক্ষায়। এই মুহুর্তে সে ছোঁয়ার সাহায্য ছাড়া খাট ওবদি যেতেই পারবে না।
মুচকি হাসে সাদি। এক্সিডেন্ট হওয়াতে তার এতটুকুও আক্ষেপ হচ্ছে না৷ বরং মনে হচ্ছে ভালোই হয়েছে। এক্সিডেন্ট না হলে কখনোই ছোঁয়ার এই রূপটা দেখতে পেতো না। কখনোই বুঝতে পারতো না তার বউ এতোটা যত্নশীল।

চুল মুছতে মুছতে ওয়াশরুম থেকে বের হয় ছোঁয়া। কিছু দিন আগেও শীতের মধ্যে গোছল করতে ভয় পেতো। বায়না ধরে বসতো। সেই ছোঁয়া এখন কোনো বায়না ছাড়াই গোছল করে ফেলে।

সাদিকে দরজার সামনে দেখে কলিজা কেঁপে ওঠে ছোঁয়ার। সে দৌড়ে আসে।
“কি হয়েছে আপনার? এখন কেনে এসেছেন? কিছু লাগবে? আমাকে কেনো ডাকলেন না?
ছোঁয়ার উত্তেজনা দেখে সাদি তার ডান হাতটা আলতো করে ছোঁয়ার গালে রাখে।

” ঠিক আছি আমি। একটু হাঁটার চেষ্টা করছিলাম।

ছোঁয়ার আঁখি পল্লব ভিজে উঠেছে। এখুনি গড়িয়ে পড়বে গাল জুড়ে।
“একা একা হাঁটার চেষ্টা করতে হবে না। আমি আছি তো। আমি সাহায্য করে দিবো।
সাদি ভদ্র ছেলের মতো মাথা নারায়। এই মুহুর্তে এতটুকুও অবাধ্যতা করলে তার আধপাগল বউ কেঁদে কেটে পুরো বন্যা বানিয়ে ফেলবে।

ছোঁয়া হাত ধরে সাদিকে খাটে এনে বসায়। তারপর ভেজা কাপড় মেলতে যায়। সাদি দেখতে থাকে তার ম্যাচুউট বউকে।

____

কেটে যায় দুটো মাস। সাদি এখন পুরোপুরি সুস্থ। তাকে আর তার ভাড়া বাড়িতে যেতে দেওয়া হবে না। সাদিও আর যেতে চায় না। ছোঁয়ার ইন্টার ফাস্ট ইয়ারের এক্সাম শেষ হয়েছে। পরিক্ষা খুব খারাপ দিয়েছে। ক্লাস করে নি ঠিকঠাক তারপর বাড়িতেও বই ছুঁয়ে দেখে নি। এক্সাম খারাপ হওয়ারই কথা। দুই সাবজেক্টে ফেল করবে এটা ছোঁয়া ভালো করেই জানে।

সাদি অফিসে যাওয়া শুরু করেছে। দু মাস রেস্টে থাকার পরে আজকেই তার প্রথম অফিস। সকাল সকাল অফিসের জন্য তৈরি হয়ে গিয়েছে সে। ছোঁয়া এখন আর সাদির পেছনে লেগে থাকে না। মা এবং শাশুড়ীর হাতে হাতে কাজ করে দেয়। আজকেও তেমন কোমরে ওড়না গুঁজে রুটি বেলছিলো।
সাবিনা রুটি ভাজি করছে।

” ছোঁয়া মা যা তুই। আমরা পারবো। অনেক বেলেছিস।
সাবিনা বলে ওঠে।
ছোঁয়া রুটি বেলায় মনোযোগ দিয়ে বলে
“বড় মা যেতে বলিও না। সংসার করা শিখছি গো। ইন ফিউচার আমার যখন বারোটা বাবু হবে তখন তো আমাকে সব কাজ করতে হবে তাই না? এতো এতো রুটি বেলতে হবে।

নাজমা বেগম সবজি কাটছিলো। তিনি চাকু রেখে মেয়ের পানে তাকায়। সাবিনাও হতদম্ভ।

” কয়টা বেবি?

বড়বড় চোখ করে সুধায় নাজমা।

“কয়টা আবার? বারোটা।
এগারোটা ছেলে আর ১ টা মেয়ে।

সাদি এসেছিলো খাওয়ার জন্য। ছোঁয়ার এমন কথা শুনে তার কাশি উঠে যায়। ছোঁয়া বেলুন রেখে তারাহুরো করে সাদিকে পানি দেয়। নাজমা এবং সাবিনা মুচকি হেসে নিজেদের কাজে মন দেয়।
সাদি ছোঁয়ার হাত থেকে পানির গ্লাস না নিয়ে কান টেনে ধরে।
” কয়টা বেবি না?
ছোঁয়া কান ছাড়ানোর চেষ্টা করে জবাব দেয়
“চব্বিশটা
সাদি আরও একটু জোরে কান টেনে ধরে। ছোঁয়া ব্যাথা পায়।
” এবার বলো কয়টা?
ছোঁয়া কাঁদো কাঁদো গলায় বলে
“বারোটা
সাদি আরও একটু জোরে টেনে ধরতেই ছোঁয়া বলে ওঠে
” দুটো দুটো
দুটো বাচ্চা নিবো।
আমি সরকারি স্লোগান জানি তো
“দুটো সন্তানের বেশি নয় একটা হলে ভালো হয়”

সাদি কান ছেড়ে দেয়।
“হুমম গুড গার্ল। যাও খাবার নিয়ে এসো আমার জন্য।

ছোঁয়া ভেংচি কেটে খানিকটা দূরে যায় সাদির থেকে। তারপর বলে ওঠে
” আমি সরকারের স্লোগান ভেঙে দিবো। ছোঁয়া নিজের স্লোগান ঘরে ঘরে পৌঁছে দিবে
“বারোটা সন্তানের বেশি নয় চব্বিশটা হলে ভালো হয়”

সাদি পায়ের জুতো খুলতে যেতেই ছোঁয়া এক দৌড়ে পালিয়ে যায়। নাজমা এবং সাবিনা শব্দ করে হাসতে থাকে। কতোদিন পরে মেয়েটার বাচ্চামি দেখলো তারা। এতোদিনে বোধহয় বাড়ির প্রাণ ফিরে এলো।
সাদিও হাসে। তার আধপাগল বউ যে নিজের রূপে ফিরে এসেছে এটা ভেবেই তার মনের মধ্যে সুখ বয়ে যাচ্ছে।

চলবে

#হৃদয়হরণী
#পর্ব:৫৬
#তানিশা সুলতানা

মিহির বর মিহিকে ছেড়ে দিয়েছে। তার কারণ হচ্ছে মিহি সংসারী নয়। সে স্বামী সংসার সামলে উঠতে পারছিলো না। প্রতিদিন অফিসে যাওয়ার সময় রান্না করে দিতে পারতো না। মোট কথা মিহি তার স্বামীকে কেনো ভাবেই সন্তুষ্ট করতে পারছিলোনা। বা মিহি চাইছিলোও না। মনের মধ্যে কোথাও একটা সাদি রয়েই গিয়েছিলো।
বিয়ের দুই বছর পরে তাদের ডিভোর্স হয়ে যায়। এবং ডিভোর্সের ঠিক এক সপ্তাহ পরে মিহির এক্স বর নতুন বিয়ে করে নেয়।
মিহি হচ্ছে মায়ার চাচাতো বোন। মিহির মনে হয় এখনো কোথাও না কোথাও সাদির মনে তার জন্য জায়গা রয়েছে। এবং সে চেষ্টা করলে সাদির সাথে সবটা ঠিক করে নিতে পারবে।
আজকেও মিহি এসেছে সাদির অফিসে। শেষবার খোলাখুলি কথা বলতে চায় সাদির সাথে।
অফিসে ঢুকতে ঢুকতেই সাদি মিহিকে খেয়াল করে। এবং আন্দাজও করতে পারে এখানে তার আসার কারণটা।
সাদি এগিয়ে যায়। মিহির সামনে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করে
“এখানে তুমি?

মিহি বসে ছিলো। সাদির কন্ঠ শুনে দাঁড়িয়ে পড়ে।
” তোমার সাথে কথা বলতে চাই আমি।

“ক্যান্টিনে চলো

সাদি আগে আগে হাঁটতে থাকে। মিহি পেছনে পেছনে। ক্যান্টিন এখন ফাঁকা। হাতে গোনা কিছু মানুষ রয়েছে। সাদি ফাঁকা একটা টেবিল দেখে বসে পড়ে। মিহিও সাদির সামনাসামনি বসে পড়ে।
সাদি টেবিলের ওপর দুই হাত তুলে মিহির দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে
” কিসের আশায় এখানে এসেছো মিহি?
তোমার কি মনে হয় না তুমি বোকা? তোমার সাথে রিলেশনশিপ এ থাকার সময়ও আমি তোমাকে বলেছিলাম ছোঁয়ার কথা। তার প্রতি আমার ফিলিংস আমি শেয়ার করেছিলাম তোমার সাথে। তাহলে?
তুমি কি বুঝতে পারছো না? আমি ছোঁয়াকে কতোটা ভালোবাসি? ওকে পেয়ে আমি কতোটদ খুশি?

মিহির চোখে পানি টলমল করছে। সে সাদির হাতের ওপর হাত রাখে। সাদি হাতটা সরিয়ে নেয়।

“একটু ভালো থাকার লোভে তোমার কাছে আসি আমি।

হাসে সাদি।
“এখানে সুখ পাবে না তুমি। আর এসো না। ছোঁয়া জানতে পারলে তোমার এটা সেটা নানান কথা শুনিয়ে দিবে। তখন নিজেও লজ্জা পাবে আমিও লজ্জায় পড়ে যাবো।

বলেই সাদি চলে যায়। মিহি বসে থাকে। তাকিয়ে থাকে সাদির চলে যাওয়ার দিকে।

সেলিম হাজারবার সরি বলে বউয়ের সাথে সম্পর্ক ঠিকঠাক করে নিয়েছে। শেষবারের মতো সেলিমকে ক্ষমা করে দিয়েছে তিনি। দ্বিতীয় বার এই রকম ভুল করলে একদম সোজা ডিভোর্স দিয়ে দিবে এমনটাও হুমকি দিয়েছে।।

ছোঁয়ার একা একা ভালোই লাগছে না। এতোদিন সাদির সাথে চিপকে চিপকে থাকতো। একটা মিনিটের জন্যও চোখের আড়াল করতো না। কিন্তু আজকে লোকটা কতো দূরে।
আসবেও সেই রাতে। সাদি আসার আগে আগে বই নিয়ে পারতে বসতে হবে। যাতে রেজাল্ট দিলে কাঁদো কাঁদো গলায় বলতে পারে ” পড়েছিলাম তো। মনে না থাকলে আমি কি করবো”

এখন বাজে সন্ধ্যা সাতটা। সাদি ফিরবে নয়টায়। এতো সময় কি করবে ছোঁয়া? ভাবতে ভাবতপ মাথায় চলে আসে দুষ্টু বুদ্ধি।
সেই যে একদিন বরটার সাথে সুন্দর একটা রাত কাটালো তারপর তো আর তেমন সময় পার করা হলো না। আজকেই তাহলে সাদিকে একটু চমক দেওয়া যাক।
যেই ভাবা সেই কাজ। ছোঁয়া চট করে কাবাড থেকে সেই হাঁটু বের করা জামা খানা বের করে ফেলে। ফল্ট মুভিটা চালিয়ে নোয়াকে ফলো করতে থাকে। একদম পারফেক্ট নোয়ার মতো সাজবে সে।
সাদির জন্যও কাবাড ঘেটে একখানা কালো জ্যাকেট বের করে নেয়। এটা সাদিকে পড়াবে। একদম পারফেক্ট নোয়া এবং নিক লাগবে দুজনকে।

নোয়ার মতে চুল গুলো উঁচু করে বেঁধে ফেলে। হদঁটু বের করা জামা এবং হালকা মেকাপ। রুমে কয়েকটা মোমবাতিও জ্বালিয়ে ফেলে। ব্যাস এবার শুধু সাদি আসার অপেক্ষা।
সব কিছু শেষ করে বিছানার ওপর বই নিয়ে বসে পড়ে ছোঁয়া। একটু পড়ালেখায় মনোযোগ দেওয়ার নাটক আর কি।

সাদিকে আজকে একটু দ্রুতই ছুটি দেওয়া হয়েছে। তাই জলদি বাসায় চলে আসে। দরজা খুলে খাটের দিকে নজর দিতেই সাদির কপালে তিনটে ভাজ পড়ে। তার আধপাগল বউ পড়ছে। পড়ার স্টাইল ও আলাদা। সব গুলো বই ছড়িয়ে ছিটিয়ে রেখেছে বিছানায়। উপুড় হয়ে শুয়ে একটা বই রেখেছে মাথার ওপরে এবং আরেকটদ বই উল্টো করে ধরে বইয়ের পেছনে ফুল আঁকছে।
ফোঁস করে শ্বাস টানে সাদি।

“কি করছো?

ফুল আঁকায় এতোটাই মনোযোগ দিয়েছিলো যে সাদি এসেছে এটা সে টেরই পায় নি। জলদি উঠে বসে ছোঁয়া। মাথার ওপর থেকে বই নামিয়ে একটু হাসার চেষ্টা করে বলে

” একটু পড়ছিলাম আর কি?

সাদি কিছু বলে না। দরজা আটকে অফিসের ব্যাগ জায়গা মতো রাখে। তারপর ট্রাই খুলতে থাকে।
সাদির কোনো রিয়াকশন না পেয়ে ছোঁয়া বলে ওঠে
“আমাকে কেমন লাগছে বললেন না?

সাদি পরনের শার্ট খুলে ফেলে৷ চুল গুলো হাতের সাহায্যে এলোমেলো করে নেশাতুন কন্ঠে বলে।
” বলবো না বোঝাবো।

তারপর রুমের লাইট অফ করে জাপ্টে জড়িয়ে নেয় ছোঁয়াকে। কোলে বসিয়ে চুম্বন এঁকে দেয় ছোঁয়ার ললাটে।
ফিসফিস করে বলে
“তুমি করে বলবে?
ছোঁয়া নার্ভাস। লোকটা একটুখানি ছুঁয়ে দিলেই ছোঁয়া জমে বরফ হয়ে যায়।
গলা দিয়ে কথাই বেরুতে চায় না।
” বলো না জান? জাস্ট একবার।

জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে ছোঁয়া আস্তে করে ডাকে
“ও গো শুনছো। ভালোবাসি তোমাকে।

সাদমান চৌধুরীকে পাগল করতে এইটুকুই যথেষ্ট ছিলো।
সে তার আদরকে নিয়ে ডুবে যায় ভালোবাসার সাগর। আরও একটা সুন্দর রাত কাটায় দুজন।

___

প্রত্যাশার থেকে বেশি কিছু পেয়ে গেলে সাধারণত একটু বেশিই খুশি লাগে। আজকে ছোঁয়ারও খুশি হওয়ার দিন। তবে সে খুশি না। আবার কষ্টও হচ্ছে না। মোটামুটি একটা শকের মধ্যে আছে। ইয়ার চেঞ্জ পরিক্ষায় তিন সাবজেক্টে ফেল করছে ছোঁয়া। মনে মনে আশা ছিলোদুই সাবজেক্ট এ ফেল করার। কিন্তু একটা সাবজেক্ট বেশি ফেল করায় ছোঁয়া হতদম্ভ। কেনোনা আগেই নোটিশ দেওয়া হয়ে গিয়েছে দুই সাবজেক্টে ফেল করলে ওঠাবে সেকেন্ড ইয়ারে। কিন্তু তিন সাবজেক্টে করলে গার্ডিয়ান লাগবে। এখানেই ছোঁয়ার টেনশন। গার্ডিয়ান পাবে কই এখন? বাবা জানলে ঠ্যাং ভাঙবে। সাদি কান ছিঁড়ে দিবে।
তাহলে?

কলেজের মাঠে এসব চিন্তা করতে করতে হাঁটতেছিলো ছোঁয়া। হঠাৎ করে মাথায় চক্কর দিয়ে ওঠে। গা গুলিয়ে গড়গড় করে বমি করে দেয়।
ছোঁয়ার বন্ধু তিথি ছোঁয়াকে পানির বোতল এগিয়ে দেয়।
ছোঁয়া পানি খেয়ে একটু ঠিকঠাক হয়ে তিথিকে বলে
“দোস্ত আমাকে কনগ্যাচুলেশন বল। আমি প্রেগন্যান্ট।

চলবে

#হৃদয়হরণী
#পর্ব:৫৭
#তানিশা সুলতানা

অসুস্থতায় একটা মানুষ এতোটা খুশি হতে পারে?
ছোঁয়া পারে। এই যে মাথা ব্যাথায় চোখ খুলতে পারছে না। বমি করতে করতে গলা ব্যাথা হয়ে গিয়েছে। সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারছে না। তবুও সে দাঁত কেলিয়ে হাসছে। নাচার জন্য বারবার দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। সাদি চোখ রাঙিয়ে বসিয়ে রেখেছে।
সাবিনা বেগম চিন্তিত। সে ভাতের থালা নিয়ে ছোঁয়ার সামনে বসে আছে। আপাতত বাড়িতে কেউ নেই। সকলেই গিয়েছে পাশের বাড়িতে দাওয়াত খেতে। সাদিকে কল করে বাড়িতে এনেছে ছোঁয়া। সাবিনা বেগমও গিয়েছিলো দাওয়াতে। সাদি কল করে বাড়ি আসতে বলেছে।

“বড় মা আমাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে চলো। সুখবর নিয়ে আসি। আর কুদ্দুসের বাপ জলদি দোকানে যান মিষ্টি আনতে৷ পুরো পাড়াতে আমি নিজে হাতে মিষ্টি দিবো।

কথা বলার শক্তি নেই। তবুও টেনে বলছে ছোঁয়া। সাদির বিরক্ত আকাশ ছুঁই ছুঁই। ইচ্ছে করছে একে একটা লাথি মেরে ফুটিয়ে ফেলতে। কিন্তু পারছে না। কি আর করার আধপাগল হোক বউ তো।

সাবিনা বেগম ছেলের পানে এক পলক তাকায়। তারপর ছোঁয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে
” ভাত খেয়ে নে। তারপর নিয়ে যাবো।

ছোঁয়া তাকায় ভাতের থালার দিকে। ইলিশ মাছের পিচ দেখে আবারও গা গুলিয়ে আসে। মনে হচ্ছে নাড়িভুড়ি সব বেরিয়ে আসবে।
“বড় মা খেতে পারবো না গো। কুদ্দুস খেতে বারণ করছে।

সাদি দাঁড়িয়ে যায়। ছোঁয়া বড়বড় চোখ করে দুই গালে হাত দেয়। যাতে থাপ্পড় টাপ্পড় দিতে না পারে। সাদি ছোঁয়ার কাছে এসে পাজা করে কোলে তুলে নেয়। ছোঁয়া ভয়ে চোখ মুখ খিঁচে ফেলেছে। সাবিনা বেগম মাথা নিচু করে ফেলে।
সাদি গটগট পায়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়।
ছোঁয়া শক্ত করে সাদির গলা জড়িয়ে ধরেছে। বেশ ভালো লাগছে তার। বরের কোলে থাকার মজাই আলাদা। ছোঁয়ার তো ইচ্ছে করে সারাক্ষণ লোকটার কোলে চরে থাকতে। এমন দিন কবে আসবে? যে দিনে সাদমান চৌধুরী তার বউকে কোল থেকে নামাবে না?

গাড়ির মধ্যে এক প্রকার ছুঁড়ে ফেলে ছোঁয়াকে। ছোঁয়া মুখ বাঁকিয়ে সেভাবেই পড়ে থাকে। বজ্জাত লোক। সন্তান আসছে কোথায় বউকে ধরে কয়েকটা চুমু খেয়ে নিবে তা না রাগ দেখাচ্ছে।
এমন বরকে ঘেন্না করা উচিত। কিন্তু ছোঁয়ার মনটা বড় কি না? তাই সে ঘেন্না করতে পারে না।

হাসপাতালের করিডোরে বসে থাকার ধৈর্য ছোঁয়ার নেই। লম্বা লাইন পড়েছে। সাদি ছোঁয়াকে নিয়ে বসেছে এক পাশে। সাদি নিরবে বসে ফোন দেখতে থাকলেও ছোঁয়া স্থির থাকতে পারছে না। ছটফট করেই যাচ্ছে। কখনো সাদির কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়ছে তো কখনো কাঁধে মাথা রাখছে। কখনো চুল ধরে টানছে আবার কখনো দাঁড়ি ধরে টানছে। শার্টের কলার ধরে টানছে। সাদিকে বেশ ধৈর্যশীল দেখাচ্ছে।

“আজকেই সবাইকে অসুস্থ হতে হলো?

ছোঁয়া বিরক্তিতে চোখ মুখ কুঁচকে বলে। সাদি ফোন থেকে দৃষ্টি সরিয়ে এক পলক তাকায় ছোঁয়ার মুখ পানে।

” অসুখেরও আক্কেল নাই। আব্দুল কুদ্দুসের একমাত্র মাকে চেপে ধরেছে ভালো কথা। থাক আমার কাছেই। কাল নাহয় বাকি সবার কাছে যাইস। তা না ভাগ ভাগ করে সকলের কাছেই গিয়েছে।
ভালো কথা
আচ্ছা সাদু অসুখের বংশ কতো বড়? না মানে দেখুন এক সাথে কতো জনকে চেপে ধরে। ডেঞ্জারাস

হতাশার নিঃশ্বাস ফেলে সাদি। এই মেয়ে কি জীবনেও মানুষ হবে না? আল্লাহ কি তাকে কখনোই এতটুকু বুদ্ধি দেবে না? সারাজীবন এমন গাঁধাই থেকে যাবে?

সাদির মুখের দিকে তাকিয়ে শুকনো ঢোক গিলে ছোঁয়া। একটু হাসার চেষ্টা করে বলে
” হে হে মজা করছিলাম। রাগিয়েন না প্লিজ। হবু বাচ্চার মাকে বকলে আল্লাহ পাপ দেবে।

সাদি পকেট থেকে হেডফোন বের করে কানে গুঁজে নেয়। ছোঁয়া কয়েকবার মুখ বাঁকিয়ে ভেংচি কাটে সাদিকে। বেডার ভাব দেখলে ইদানীং ছোঁয়ার ইচ্ছে করে চিৎকার করে বলতে “বিবাহিত বেডাদের ভাব ধরা মানায় না। কারণ তাদের দাম নাই”
খালি লোক লজ্জার ভয়ে বলতে পারে না ছোঁয়া।

অবশেষে ছোঁয়ার সিরিয়াল আসে। সাদির আগেই ছোঁয়া ঢুকে পড়ে৷ কপালে তিনটে ভাজ পড়ে সাদির। এই তো কথাই বলতে পারছিলো না। এখুনি এতো শক্তি কই পেলো?

মধ্য বয়স্ক একজন মহিলা বসে বসে কিছু একটা দেখছে। ছোঁয়া প্রায় দৌড়ে মহিলা ডাক্তারের সামনে বসে পড়ে এবং বলে ওঠে
“আমি কিট পরিক্ষা করে নিয়েছি। পজিটিভ দেখেছি। মানে হচ্ছে আমার সন্তান আসছে। আপনি আমার বরকে এটা বলে দিন।

ডাক্তার ভ্রু কুচকে তাকায় ছোঁয়ার মুখপানে। সাদিও চোখ দুটো বড়বড় করে ফেলে। বসার জন্য চেয়ার ধরেছিলো সে। কিন্তু ছোঁয়ার কথা শুনে বসতে ভুলে গিয়েছে। প্রেগন্যান্ট কিটও পরিক্ষা করাও শেষ?

ডাক্তার ছোঁয়ার কথা শুনে মুচকি হাসে। সাদির দিকেও এক পলক তাকায়।
” বাহহ তুমি তো খুবই ফাস্ট

“আমি কুদ্দুসের মা কি না।
কালকেই পরিক্ষা করেছি। বমি হচ্ছিলো না বলে কাউকে জানায় নি। আজকেই বমি হয়েছে।

ছোঁয়ার কথায় এবার শব্দ করে হেসে ওঠে ডাক্তার। সাদি চোখ পাকিয়ে ছোঁয়াকে শ্বাশায়।

” সরি ডাক্তার
আমার বউয়ের মাথায়,একটু প্রবলেম আছে।

ছোঁয়া মুখ বাঁকিয়ে বলে
“আমার মাথায় কোনো প্রবলেম নাই। আমি ঠিকঠাক।
ডাক্তার আন্টি আপনি বলুন কিভাবে চলতে হবে? কি করতে হবে? আমি শুনছি।

চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে