#হৃদয়হরণী
#পর্ব:৫০
#তানিশা সুলতানা
সূর্য মামা মুখ লুকিয়ে আছে। ডিসেম্বরের শুরু। কনকনে শীত নেই তবে হালকা শীত পড়েছে। সূর্যের আলো নেই বিধায় শীতটা অনুভব করা যাচ্ছে।
বেলা বারোটা ছুঁই ছুঁই। তবুও যেনো মনে হচ্ছে ভোর সাড়ে পাঁচটা।
ছোঁয়ার ঘুম ভেঙে গিয়েছে অনেক আগেই। সাদি ঘুমিয়ে আছে ছোঁয়ার ছোট্ট বুকে। দুই হাতে গভীর আলিঙ্গনে আটকে রেখেছে তাকে। স্বামী রূপী প্রেমিকের ঘুম ভেঙে যাবে বিধায় ছোঁয়া একটু নরছে না। তবে তার অস্বস্তি হচ্ছে। খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি এবং সাদির ঘন নিঃশ্বাস তার বুক কাঁপিয়ে তুলছে।
গতকাল রাতের কথা চিন্তা করতেই ছোঁয়া শুকনো ঢোক গিলে। নতুন এক সাদিকে আবিষ্কার করেছে সে। পুরুষ মানুষের দুটো রূপ থাকে? বস্রহীন সাদিকে কল্পনা করতেই বুক কেঁপে ওঠে। সাদির ঘনঘন নিশ্বাস যেনো এখনো ছোঁয়ার কানে বাজছে। আকুলতার সেই কন্ঠস্বর ফিসফিস করে বলা কিছু কথা এবং উম্মাদনা। সব মিলিয়ে পাগল সাদিকে দেখেছে ছোঁয়া।
জিভ দ্বারা ওষ্ঠদ্বয় ভিজিয়ে নেয় ছোঁয়া। ছোট্ট হাত জোড়া চলে যায় সাদির মাথায়। ঘন চুলের ভাজে হাত চালাতে থাকে।
“পঁচা পুরুষ। আপনি অশ্লীল হয়ে যাচ্ছেন। সেটা কি জানেন?
ফিসফিস করে বলে ছোঁয়া।
সাদি শুনতে পায় না। কারণ সে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন।
” আপনার দেওয়া সব ব্যাথা সয্য করে নিবো। যতই অশ্লীল হন মেনে নিবো। শুধু আমার হয়ে থাকেন। আপনার পাগলামির সঙ্গী শুধু আমাকেই করিয়েন।
তাতেই খুশি আমি।
কুদ্দুসকে দ্রুত আনতে হবে। কুদ্দুস চলে আসলে আপনাকে হারানোর ভয় পাবো না আর। আমার টিম স্ট্রং থাকবে।
ছোঁয়ার এসব ভাবনার মাঝে সাদি নরেচরে ওঠে। ছোঁয়া চোখ বন্ধ করে নেয়। খুব জানা আছে এখন চোখ খোলা দেখলে আবারও দুষ্টুমি শুরু করবে। লোকটার হুটহাট এ্যাটার্ক সয্য করতে ছোঁয়া বেশ হিমশিম খেয়ে যায়।
সাদি চোখ খুলে দেখে তার প্রেয়সী চোখ পিটপিট করছে। ঘুমের ভান ধরছে বেশ বুঝতে পারে সাদি। মুচকি হাসে সাদি।
একট জ্বালানোর ইচ্ছে জাগে মনে। আর তখনই মুঠো ফোনটা কর্কশ শব্দে বেজে ওঠে। বিরক্তিতে চোখ মুখ কুঁচকে ফেলে সাদি।
ছোঁয়ার কপালে আলতো করে ঠোঁট ছুঁইয়ে উঠে পড়ে।
বালিশের তলায় থেকে ফোনটা বের করে। স্কিনে মিহি নামটা ভেসে ওঠে।
সাদি বিরবির করে বলে “মিহি কেনো কল করছে”
নামটা ছোঁয়ার কানে পৌঁছায়। ছোঁয়া এক লাফে উঠে বসে। ছো মেরে সাদির হাত থেকে ফোনটা নিয়ে রিসিভ করে কানে দেয়। সাদি গোলগোল চোখে তাকিয়ে থাকে।
ওপাশের মানুষের কথা না শুনেই ছোঁয়া বলে ওঠে
“সরি ফোনের মালিক এখন বউয়ের সাথে রোমাঞ্চ করতে ব্যস্ত।
এতো সকালে কেউ কাউকে কল করে? মেনার্স জানেন না? ছেলেদের নাম্বার দেখলেই কল করতে ইচ্ছে করে? চাপকে একদম গাল ফাঁটিয়ে দিবো আমার বরকে কল করলে।
ওপাশের মানুষটা কিছু বলতে যায় ছোঁয়া তাকে থামিয়ে বলে
” কথা বললে একদম জিভ টেনে ছিঁড়ে দিবো। আমার বরের সাথে চান্স দিতে এসে লাভ নাই। বাবা হতে চলেছে সে। আপনি ফুপি হতে চলেছেন। ভাগিনার বাবার দিকে নজর দিলে আমার কুদ্দুস আপনার চোখ তুলে নিবে। ওয়ার্নিং দিয়ে দিলাম আপনাকে।
এক থালা কথা বলে ছোঁয়া কল কেটে দেয়। এবং জোরে জোরে শ্বাস টানতে থাকে। হুমকি দিতে দিতে হাঁপিয়ে গিয়েছে সে।
সাদি গালে হাত দিয়ে ছোঁয়াকেই দেখছিলো।
“পাঁচ ঘন্টাও তো হলো না এর মধ্যেই প্রেগন্যান্ট? তোমার কুদ্দুস তো দেখি রকেটের গতিতে আসছে।
খানিকটা মজা করেই বলে সাদি।
ছোঁয়া ভেংচি কাটে।
” ঢপ মারলাম। যাতে আপনার মিহি ভয় পায়।
হাসি পেলেও সাদি হাসে না। সিরিয়াস ভঙিতে মাথা নারায়।
হুট করে ছোঁয়ার মনে পড়ে।
“সাদু বলেন তো। আমাদের কুদ্দুস কেমন হবে?
সাদি হাই তুলে বলে
“আধপাগল মায়ের কুদ্দুস ফুল পাগল হবে। আর কেমন হবে?
ছোঁয়া সাদির চুল টেনে দেয়।
” একদম পাগল হবে না। আমাদের কুদ্দুস হবে কমলা লেবুর রসগোল্লা।
কি করে বলবো?
সাদি নিজের চুলে হাত বুলাতে বুলাতে মাথা নারায়।
“আমি ধলা আপনিও ধলা। আপনি করলা আমি প্রচুর মিষ্টি। তো তেঁতো আর মিষ্টি মিলে, ধলা আর ধলা মিলে মোটমাট হয়ে যাবে কমলা কালার হালকা মিষ্টি। আর কমলা লেবুর রসগোল্লা তো অতিরিক্ত মিষ্টি থাকে না। তো আমাদের কুদ্দুস কমলা লেবুর রসগোল্লা হবে।
সাদি পরপর কয়েকবার ঢোক গিলে। ফোঁস করে শ্বাসও টেনে ফেলে এবং হতাশার নিঃশ্বাসও ফেলে। মনে মনে আফসোসও করে নিজের জন্য।
নেহাৎ আল্লাহ তাকে অসীম ধৈর্যশীল বানিয়েছিলো। নাহলে পাগল হয়ে এতোদিনে পাগলা গারদে চলে যেতে হতো।
____
সেলিম মনে মনে বেশ চটে ছিলো এতখন। কিন্তু এখন সে ভয় পেয়ে আছে। ছোঁয়ার জন্মদিন উপলক্ষে বাড়িতে হালকা আয়োজন চলছে। গরুর মাংসর ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রতি বছর সেলিম সবার আগে Wish করে মেয়েকে। কিন্তু এই বছর বেয়াদব ছেলে তার মেয়েটাকে নিয়ে ভ্যানিশ হয়ে গিয়েছে। এবং এই যে দুপুর গড়িয়ে যাচ্ছে এখনো ফেরার নাম নেই। চটবে না?
মেয়েটা তো তারই।
সাদির নামে এক চোট নালিশ দিয়ে ফেলেছে সাজ্জাদের কাছে।
আরেক চোট নালিশ দিতে যাবে তখনই হাসি হাসি মুখ নিয়ে রাজিয়া বাড়িতে ঢুকে পড়ে।
সেলিম পরপর কয়েকবার শুকনো ঢোক গিলে। এই মহিলা এখানে কি করছে?
এখন সাদি চলে আসলে তাকে সিল পাঁটায় তুলে পিষে ফেলবে।
বুরো বয়সে বোধয় তাকে বউ ছাড়া হতেই হবে। তার ডিভোর্সটা কেউ আটকাতে পারবে না।
“ভালো আছো সেলিম?
নাজমা তখনই খুনতি হাতে বেরিয়ে আসে। হাতা কাটা ব্লাউজ এবং ফিনফিনে পাতলা শাড়ি পড়ুয়া এক মহিলাকে দেখে কপালে ভাজ পড়ে নাজমার। কে এই মহিলা?
তখনই পেছন থেকে সাদি বলে ওঠে
” শশুড় মশাই গার্লফ্রেন্ড নিয়ে বাড়িতে চলে এসেছেন? লুকিয়ে বিয়ে করে ফেলেন নি তো?
চলবে
#হৃদয়হরণী
#পর্ব:৫১
#তানিশা সুলতানা
গার্লফ্রেন্ড শব্দটাতে রাজিয়ার ঠোঁটের কোণের হাসি চওড়া হয়। কিশোরী বয়স থেকে স্বপ্ন দেখে এসেছে সেলিম এর গার্লফ্রেন্ড হওয়ার। ছলে বলে কৌশলে কতো বুঝিয়েছে। ঘেসে ঘেসে থেকেছে সেলিম এর আশেপাশে।
কিন্তু আফসোস সেলিম তাকে পাত্তা দেয় নি। তেইশ বছর বয়সেই বিয়ে করে নেয় নাজমাকে। এবং চব্বিশ বছর বয়সেই বাবা হয়ে যায়। রাজিয়া চোখের পানি ফেলেছে অনেক। সেলিম এর বিয়ের দিন খায় নি পর্যন্ত।
কিন্তু তার এই দুঃখের দাম তো সেলিম দেয় নি। বুড়ো বয়সে এসে তবুও তো সেলিমের গার্লফ্রেন্ড উপাধিটা পেলো।
রাজিয়া মনে মনে ভেবে ফেলে সেলিম এর সাথে ট্যাগ করে রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস দিবে। দুটো সেলফি তুলে স্টোরিও দেবে।
সেলিম শুকনো ঢোক গিলে তাকায় এক পলক নাজমার দিকে। আরেক পলক তাকায় সাদির দিকে। শয়তান ছেলের ঠোঁটের কোণে বাঁকা হাসি। সেলিম না মানলেও সাদির হাসিটা তার খুব পছন্দ। ছেলেটা হাসলে খুব সুন্দর লাগে।
ঘন কালো কুচকুচে দাঁড়ির মাঝখানে গোলাপি ওষ্ঠজোড়া সবারই নজর কাড়বে আগে।
ছেলে মানুষের ঠোঁট এতোটা আকর্ষণীয় হয় জানা ছিলো না সেলিম এর।
নিজের ভাবনায় নিজেই বিরক্ত সেলিম৷ মেয়ের জামাইয়ের প্রশংসা করছে মনে মনে? বজ্জাত ছেলেটার।
“আব্বা গার্লফ্রেন্ড কেনো বলছিস?
নাজমার কপালের ভাজ চওড়া হয়েছে। রান্না ঘর থেকে সাবিনা ডেকে যাচ্ছে সেদিকে হুশ নেই তার। গার্লফ্রেন্ড এর রহস্য উন্মোচন করে তবেই তিনি সরবে এখান থেকে।
সাদি কিছু বলার আগেই রাজিয়া দু পা এগিয়ে এসে বলে
” আমি সেলিম এর গার্লফ্রেন্ড। মানে প্রেমিকা।
খুক খুক করে কেশে ওঠে সেলিম। সাজ্জাদ মুখ টিপে হাসছে। সাদির ঠোঁটের কোণেও হাসি। নাজমা রেগে আগুন হয়ে গিয়েছে।
সেলিম জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে রিনরিনিয়ে বলে ওঠে
“ও…… ও আ…..মার জাস্ট ফ্রেন্ড। সেই ছোট বেলায় এক সাথে স্কুলে যেতাম। ওই আর কি
সাদি ফট করে বলে ওঠে
” ছোট বেলার স্মৃতি চারণ করতেই তো ছোট বাবা সেই দিন রেস্টুরেন্টে গিয়েছিলো ওনার সাথে রিকশায় বসে পাশাপাশি লান্স করতে।
তাই না শশুড় মশাই
সেলিম কটমট চোখে তাকায় সাদির পানে। সাদি হেসে ফেলে।
নাজমা রাজিয়ার দিকে তাকিয়ে বলে
“প্রেমিককে নিয়ে বেরিয়ে যান। বিয়ে করতে চাইলে বলিয়েন আমি নিজে ডিভোর্স দিয়ে আপনার সাথে বিয়ে দিয়ে দিবো।
এই অকর্মার সাথে আমিও সংসার করতে আগ্রহী নই।
বলেই রান্না ঘরের দিকে চলে যায়। সেলিমের কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে। সাজ্জাদ মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ে। বাড়িতে এবার সাইক্লোন বয়ে যাবে ভালোই আন্দাজ করতে পারছেন তিনি।
রাজিয়া বলে ওঠে
” সেলিম তুমি
সেলিম দুই হাত জোর করে বলে
“এখান থেকে যা বোইন তুই। বুড়ো বয়সে বউ ছাড়া করিস না আমায়।
রাজিয়া আবারও কিছু বলতে চায়। সেলিম বলতে না দিয়ে যেতে বলে। বেচারা চলে যায়। সেলিম সাদির মুখোমুখি গিয়ে দাঁড়ায়। লম্বায় সেলিম কিছুটা বেটে।
সাদি বুকে হাত দিয়ে বুক উঁচু করে দাঁড়ায়।
” রিভেঞ্জ নিলাম শশুড় মশাই। আমার পেছনে লাগতে আসলে একদম ডিভোর্স করিয়ে শাশুড়ী মাকে আবার বিয়ে দিয়ে দিবো। দেখতে তো এখনো মাশাআল্লাহ। তোমার মতো বুড়োর সাথে মানায় না তাকে।
নিশ্চয় শাশুড়ী মাকে পটানোর আগে সার্টিফিকেট দেখিয়ে নানাকে পটিয়ে ফেলেছিলে?
সেলিম এই ছেলেকে কি বলবে বুঝতে পারছে না। শুধু তাকিয়েই আছে।
সাদি কিছু একটা ভেবে বলে
“অবশ্য সার্টিফিকেট তোমার ছিলোও না। ঘুস দিয়ে চাকরি নিয়েছো তো।
একটা কথা ভেবে দেখো
তুমি বত্রিশ বছর বয়সে দুই বাচ্চার বাবা ছিলে। আর আমি বউকে
থেমে যায় সাদি।
সেলিম চোখ মুখ কুঁচকে ফেলেছে। মনে মনে কয়েকবার নিলজ্জ বলে গালিও দিয়ে ফেলেছে সাদিকে। শশুড় মশাইয়ের সাথে কেউ এমন ব্যবহার করে?
” তুই বাপ কথা বলিস না। যা তো আমার সামনে থেকে।
সাদি ভদ্র ছেলের মতো চুপচাপ তানিশা সুলতানা চলে যায়। সাজ্জাদ এতোখন দুটোর ফুসুরফুসুর শুনতে পায় নি। অবশ্য কান খাড়া করে ছিলো। তবে কানে পৌঁছায় নি।
সেলিম দীর্ঘ শ্বাস ফেলে সাজ্জাদ এর পাশে এসে বসে।
সাজ্জাদ সরল মনে প্রশ্ন করে
“সাদি কি বললো?
সেলিম জবাব দেয় না। কি করে বলবে তিনি তার নিলজ্জ জামাই তাকে সাবান ছাড়াই ধুঁয়ে দিচ্ছে।
_____
সাদির দেওয়া লকেট ওয়ালা চেইন এখনো গলা থেকে খুলে নি ছোঁয়া।
অসুস্থতা তার কমে নি। শরীরে ব্যাথা গুলো রয়েই গিয়েছে। কেমন ঔষধ খাওয়ালো তাকে যে এখনো ব্যাথা কমছে না?
নিশ্চয় কিপ্টা সাদি কম দামি ঔষধ এনেছিলো। লোকটার কিপ্টামি তানিশা সুলতানা আর শেষ হয় না। ১২ টা বাচ্চা হলে যে কি করবে আল্লাহ জানে?
তাদের খেতেই বোধহয় দিতে চাইবে না।
সিমি ছোঁয়ার পাশে বসে ভাত মাখছে। পরি ছোঁয়ার কোলে বসেছে।
” আচ্ছা আপি বর কয়দিন আদর করলে বেবি আসবে?
ছোঁয়ার এরকম প্রশ্নে ভেবাচেকা খেয়ে যায় সিমি। ভ্রু কুচকে তাকায়,ছোঁয়ার দিকে। বোনের মুখ দেখে ছোঁয়া ঠিক বুঝতে পারে তার কথার মিনিং তার বোন বুঝতে পারে নি।
“না মানে আমার মনে হচ্ছে আমি প্রেগন্যান্ট তাই তোকে জিজ্ঞেস করলাম
তখনই রুমে ঢুকে পড়ে সাদি। সে ছোঁয়ার কথা শুনেছে।
মনে মনে খানিকটা রেগেও গিয়েছে সাদি। ন্যাকামি করারও একটা লিমিট থাকা দরকার। বাচ্চা তো আর না।
আজকে সাদি ছোঁয়ার বাচ্চামি ছোঁটাবে।
চলবে
#হৃদয়হরণী
#পর্ব:৫২
#তানিশা সুলতানা
“তুমি কি বড়ো হবা না ছোঁয়া?
সাদি কর্কশ গলায় বলে ওঠে। ছোঁয়া গোমড়া মুখে তাকায় সাদির দিকে। লোকটাকে দেখে অভিমানে বুক ভেসে যাচ্ছে। কম দামি ঔষধ খাওয়ালো? একটা ঔষধের দাম কি কোটি কোটি টাকা? এই কিপ্টা লোকের সংসার করবে কি করে ছোঁয়া? সারাজীবন অনাহারে মারবে।
সিমি উসখুস করতে থাকে। এখান থেকে বেরুতেই পারলেই এখন বাঁচে সে। ছোট বোনকে সে ভালো করেই চিনে। যখন তখন বেফাঁস কথা বলে ফেলবে। আর সিমি পড়বে লজ্জায়।
ছোঁয়া বিছানা থেকে নামে। দাঁড়াতে যেতেও একটু ব্যাথা অনুভব করে। ব্যাথাকে পাত্তা না দিয়ে এগিয়ে যায় সাদির দিকে।
” এগিয়ে আসছেন আমি বড় হয়েছি কি না জানতে? চোখ নেই সাথে? না কি চোখের মাথা খেয়েছেন? বড় না হলে এই ছোট মেয়ের সাথে কাল ওমন বিহেভিয়ার করলেন কি করে? করলেন ঠিক আছে তাই বলে কম দামি ঔষধ খাওয়াবেন? টাকা ছিলো না আমায় বলতেন। কিপ্টা বেডা।
সাদি চোয়াল শক্ত করে তাকায় ছোঁয়ার মুখ পানে। সিমি উপস্থিত বলে কিছু বলতে পারছে না। নাহলে একটা আছাড় মেরে ফুটিয়ে ফেলতো। বেয়াদব মেয়ে একটা।
সিমি শুকনো ঢোক গিলে নিঃশব্দে বেরিয়ে যায়। সাদিকে চুপ থাকতে দেখে ছোঁয়া আবারও বলে ওঠে
“কি?
কম দামি ঔষধ এটা ধরে ফেলেছি বলে চুপসে গেলেন? পঁচা বেডা।
সাদি ফট করে ছোঁয়া গাল চেপে ধরে। খানিকটা শক্ত করেই ধরে। ছোঁয়া ব্যাথা পায়। চোখে পানিও চলে আসে
“আমাকে খোঁচানোর সময় মনে থাকতে না? ইডিয়েট। মিনিমাম কমনসেন্স নেই৷ পুটি মাছের শরীর নিয়ে আমায় বিয়ে করার সাহস করেছিলে কি করে?
ছোঁয়া নিজের গাল ছাড়ানোর জন্য সাদির হাত টানতে থাকে। কিন্তু কোনো লাভ হয় না। চুনোপুঁটির মতো দুটো হাত দিয়েও সাদির একটা হাত ছাড়াতে সক্ষম হয় না ছোঁয়া। দুই চোখ বেয়ে টপটপ করে পানি পড়তে থাকে ছোঁয়ার।
” ব্যাথার ঔষধ দেই নি তোমায়। পিল দিয়েছিলাম৷ গাঁধা।
নেক্সট টাইম আমার আশেপাশে আসলে তাজা গিলে ফেলবো একদম
আগে বড় হবি। কোথায় কি বলতে হয় শিখবি। তারপর আমার কাছে থাকতে আসবি।
বলেই সাদি গাল ছেড়ে দেয়। ছোঁয়া নিজের গালে হাত বুলিয়ে শব্দ করে কেঁদে ওঠে। সাদি ভ্রু কুচকে তাকায়। এখন নতুন ড্রামা শুরু করবে এটা জানা সাদির।
“আপনি আমার বাচ্চাকে খু ন করে ফেললেন? আমার কুদ্দুস কে আসতে দিলেন না? খারাপ বাবা আপনি। আই হেইট ইউ।
সাদি বিরক্তর নিঃশ্বাস ফেলে।
“তোর বাচ্চা খু ন করেছি। এবার আর একটা কথা বললে তোকে খু ন করবো। ইডিয়েট।
আমার আশেপাশে একদম আসবি না।
বলেই সাদি হনহনিয়ে বেরিয়ে যায়। ছোঁয়া ফুঁপিয়ে কাঁদতে থাকে। পিল কেনো খাওয়ালো সে? বাজে লোক। ছোঁয়া একদম ওই লোকটার আশেপাশে যাবে না। একদম কথা বলবে না।
__
সুন্দর করে কেক সাজানো হয়েছে৷ প্রতি বছর ছোঁয়া এক্সাইটেড থাকে তার জন্মদিনে। গিফট কুড়ানো সাজুগুজু একাই করতে থাকে।কিন্তু এই বার মুখ গোমড়া করে বসে আছে।
সামির চলে এসেছে৷ অবশ্য তাকে কেউ দাওয়াত দেয় নি৷ বন্ধুর বউয়ের বার্থডে একটা হক আছে তো? দাওয়াতের প্রয়োজন পড়ে না কি আবার?
কিন্তু বাড়িতে ঢুকতেই সামির এর হা করে মুখটা চুপসে যায়। ছোঁয়া সোফার এক কোণায় বসে আছে মন খারাপ করে। সেলিম আরেক কোণায় বসে আছে মন খারাপ করে। পরি এবং সিমি কেক সাজাচ্ছে। নাজমা বেগম কটমট চোখে স্বামী দিকে তাকাচ্ছে আর টেবিলে খাবার সাজাচ্ছে। সাদি অন্য সোফায় বসে ল্যাপটপ টিপছে।
” আমি এসেছি
সামির এক গাল হেসে বলে ওঠে
ছোঁয়া তাকায় সামির এর দিকে। সাদি বিরক্ত
“তোকে আসতে কে বলেছে?
সামির ভেংচি কাটে।
” বাবা এসেছিস খুব ভালো করেছিস।
নাজমা বেগম বলে। সামিরের হাসি চওড়া হয়।
“আমি আসলে সাদির হিংসা হয়।
সেলিম বলে ওঠে
” হবে না? তুমি হচ্ছো হিরার টুকরা। আর সে হচ্ছে শয়তানের নানা।
সামির বুক ফুলিয়ে ফেলে। গর্বে সে গর্ভবতী হয়ে যাচ্ছে।
ছোঁয়া এক লাফে দাঁড়িয়ে যায়। এক দৌড়ে সামির এর কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বলে
” ভাইয়া এসেছো ভালোই করেছো। আমার সর্বনাশ হয়ে গিয়েছে। তুমি ছাড়া কেউ পারবে না এই সর্বনাশ তুলে দিতে।
সামির ভেবাচেকা খেয়ে যায়। কি সর্বনাশ হলো? আর সেই সর্বনাশ শুধু সেই তুলে দিতে পারবে?
“কি হয়েছে ছোঁয়া?
সামিরও ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করে
“আমাকে কয়েকটা স্লিপিং পিল এনে দিতে পারবে?
” কেনো?
“আমি খাবো
শুকনো ঢোক গিলে সামির। ছোঁয়া সুইসাইড করতে চাচ্ছে?
” তুমি সুইসাইড কেনো করবে?
ছোঁয়া বিরক্ত হয়। আসলেই লোকটার মাথায় বুদ্ধি কম।
“সুইসাইড করবো না। তোমার বন্ধুকে ভয় দেখাবো। যাতে নেক্সট টাইম সে আমায় না বকে।
“খুলে বলো
ছোঁয়া তার প্ল্যানিং সামির এর সাথে শেয়ার করে। সব শুনে সামির সায় জানায়। মন্দ নয় ছোঁয়ার বুদ্ধি। সাদির একটা শিক্ষা হওয়াই দরকার।
সাদির নজর ল্যাপটপ এ থাকলেও মনোযোগ ছিলো ছোঁয়ার দিকে। দুই পাগল যে কিছু একটা গন্ডগোল পাকাচ্ছে চতুর সাদির বুঝতে সময় লাগে না। তবে ধরতে পারে না তাদের প্ল্যানিং।
” তাহলে ভাইয়া এখুনি যাও।
“এখুনি?
” হ্যাঁ যাও
চিন্তা করিও না। তোমার জন্য বিরিয়ানির মধ্যে থেকে দু পিছ মাংস আমি সরিয়ে রাখবো। আর তুমি না আসা ওবদি কেক ও কাটবো না।
সামির খুশি হয়ে নাচতে নাচতে চলে যায়।
চলবে