#হৃদয়হরণী
#পর্ব:৪৭
#তানিশা সুলতানা
ছোঁয়া এখনো কাচুমাচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সে ভয় পেয়ে গেছে খাট ভাঙাতে। খাট তো বেশ মজবুত। তাহলে ভাঙলো কি করে?
সাদি কি বেশি ভাড়ি হয়ে গিয়েছে? না কি অন্য কোনো ব্যাপার?
নিশ্চয় সাদি ভারি হয়ে গিয়েছে বেশি। বাই এনি চান্স সাদি যদি ছোঁয়ার ওপরে পড়তো। তাহলে ছোঁয়ার কি অবস্থা হতো?
এতোখনে নিশ্চয় পটল তুলতো।
শুকনো ঢোক গিলে ছোঁয়া। ভয়ার্তক দৃষ্টি তাকায় সাদির মুখ পানে। বেচারা বিরক্তিতে নাক মুখ কুঁচকাচ্ছে। নিশ্চয় ছোঁয়াকে এভাবে পিঁসে ফেলতে না পেরে বিরক্ত সে।
সামির বেশ আরাম করে হাই তুলছে। তার মনের মধ্যে খুশির প্রজাপতি গুলো পাখা মেলে উড়ছে।
শিপন এবং আকাশও মজা ওড়াতে প্রস্তুত।
“ভাই বলছি কি
তোর বউটা এখনো ছোট। একটু বড় হওয়ার চান্স দে। তুই যেভাবে খাট ভেঙেছিস তাতে তো মনে হচ্ছে ছোঁয়াকে
আশিক বাকি কথা শেষ করতে পারে না। তার আগেই সামির বলে ওঠে
” নাহহহহহহ
ছোঁয়া আমার ছোট বোন। তার সাথে এরকম অন্যায় আমি হতে দিতে পারি না। সেলিম চাচা আমাকে দায়িত্ব দিয়েছে ছোঁয়াকে সুরক্ষিত রাখার।
সাদি কপাল চাপকে হাত মুষ্টি বন্ধ করে নেয়। মনে মনে নিজেকে বেশ কয়েকটা গালিও দিয়ে ফেলেছে ইতোমধ্যে। কেনো এসেছিলো হনুমানের দলকে এখানে? বাসর ঘর না সাজালে কি বাসর হয় না? অবশ্যই হয়।
শিপন বলে ওঠে
“সামির চল আমরা ছোঁয়াকে নিয়ে চলে যাই। সেলিম চাচা তার আদরের মেয়েকে সবার আগে বার্থডে উইশ করবে তো।
সাদি এবার ক্ষেপে ওঠে
” বুঝেছি বাসর করতে হলে বউ নিয়ে বনবাসে যেতে হবে আমার।
সাদির কথাটায় বেশ মজা পায় সামির। সাদির পিছে হাত দিয়ে বেশ ভাব নিয়ে বলে
“সেখানেও পেছন পেছন চলে যাবো ভাই।
সাদি চোখ পাকিয়ে তাকায় সামিরের দিকে। সামির এক গাল হেসে শার্টের কলার ঠিক করে
” ঐশির সাথে আমার বিয়েটা দিয়ে দে। তোর ভাঙা খাটের কসম আর জীবনেও জ্বালাবো না তোদের।
এতোখনে ছোঁয়া মুখ খুলে। সে মাথার ঘোমটা ফেলে বলে ওঠে
“সামির ভাইয়া তুমি কিন্তু ঠিক করছো না। এর দায় যে আমার ঘাড়ে এসে পড়বে সেটা জানো তুমি?
আমাকে চুমু খাবে না। এমনকি ঘরেও নেবে না বজ্জাত লোক।
তোমরা ওনার পেছনে লেগো না।
চোখ বড় বড় হয়ে যায় সকলের। রিমি হেসে ফেলে। মেয়েটা একদমই বাচ্চা।
সামির সাদিকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে এগিয়ে যায় ছোঁয়ার দিকে।
” সাদি চাচা চুমুও খায়?
কোথায় চুমু খায়? হাতে? না কি গালে?
ইরা সামিরের পিঠে থাপ্পড় মেরে বলে
‘কি রে তোর না ছোট বোন হয়।
“সর বা*ল
কথায় কথায় টাচ করবি না। আমার শরীরের একটা ভার্জিনিটি আছে। আমি চাই আমার সব ভার্জিনিটি সব ঐশি নষ্ট করুক।।
তুই ছুঁবি না।
ইরা ভেংচি কেটে চুল টেনে দেয় সামিরের।
সামির ইরাকে ধাক্কা দিয়ে সরায়
” আপাতত ছোঁয়া আমার বন্ধুর বউ। আমার হক আছে ওদের রোমাঞ্চের ঘটনা শোনার।
রিমি বলে ওঠে
“তাহলে তো তোর হক আছে ওদের বাসর ঘরে বসে থাকার।
” আয় তোরে একখান চুমু খাই। এতখনে আসল কথা মনে করাই দিছোস। বন্ধুর বাসর ঘরে আমি থাকমু।
সাদির ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যাচ্ছে।
সে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে
“ইটস ওকে
তুই থাক বাসর ঘরে
বলেই সে ছোঁয়ার হাত ধরে টানতে টানতে সকলের চোখের পলকে বেরিয়ে যায়। এবং পাশের রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেয়।
সামির বেচারার বুঝতে পাক্কা দুই মিনিট সময় লাগে কি হলো?
যখন বুঝতে পারে তখন চিল্লায়ে বলে ওঠে ” বন্ধু আমারে ছাড়া রুম লক করিস না। আমি তোদের ডিস্টার্ব করবে না। শুধু একটু দেখবো”
কে শোনে কার কথা। সকলে হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে।
সামির সাদি যে রুমে ঢুকেছে সেই রুমের দরজার সামনে বসে আহাজারি করতে থাকে।
“বন্ধুরে অন্যায় করিস না। আমি একটা ভোলাভালা পোলা। আমারে না নিলে তোর শশুড়কে কল করবো আমি”
সাদি জবাব দেয়
“হুম দে
আমার শশুড় আর তুই নাগিনী ডান্স কর গিয়ে। আপাতত বিরক্ত করিস না”
“তোর নাম আমি ইতিহাসের পাতায় লিখতে চাইছিলাম চাচা। তোর মেশিন নিয়ে বই লিখতে চাচ্ছিলাম। তুই এতো বড় অন্যায় করিস না।
ছোঁয়া বড়বড় চোখ করে সাদির দিকে তাকিয়ে আছে। সাদি সাউন্ড বক্স চালিয়ে দিয়েছে। সামিরের বকবকানি আপাতত শোনার মুড নাই। সামির যে এক দুই ঘন্টার মধ্যে থামবে না এটা সাদির জানা।
ছোঁয়া রিনরিনিয়ে বলে
” আপনার ওয়েট কতো?
সাদি বিছানা চাদর ঠিক করতে করতে জবাব দেয়।
“৮০
ছোঁয়া শুকনো ঢোক গিলে। খাট যে এমনি এমনি ভাঙে নি এতোখনে পাক্কা কনফার্ম হয়ে গেলো।
সাদি এক পলক তাকায় ছোঁয়ার মুখপানে। বুঝে যায় বোকা প্রেয়সীর মনোভাব
” তুমি ভয় পেয়ো না। আমার ওজনের প্রভাব তোমার ওপর পড়বে না।
ছোঁয়া যেনো লজ্জা পেলো। মাথা নিচু করে ফেলে।
ঘড়ির কাটা টিকটিক শব্দে জানান দেয় রাত বারোটা বেজে গিয়েছে। সাদির প্রেয়সীর জন্মদিন চলে এসেছে।
সাদি পকেট থেকে একটা ছোট্ট বক্স বের করে ছোঁয়ার সামনে হাঁটু মুরে বসে পড়ে
“আমি না গুছিয়ে প্রপোজ করতে পারি না। কবিতা লিখে মনোভাব প্রকাশ করতে পারি না। সোজাসাপ্টা ভাষায় বলছি তোমাকে আমি ভালোবাসি। ভীষণ ভালোবাসি।
তুমি আমার হৃদয়হরণী। তোমাকে ছাড়া আমার একটা মুহুর্ত চলে না। তোমাকে ছাড়া আমি আমাকেই ভাবতে পারি না।
সারাজীবন আমার হয়ে থেকো হৃদয়হরণী।
ছোঁয়া সাদির হাত থেকে বক্সটা হাতে নেয়। সাদির হাত ধরে তাকে তোলে।
” শুভ জন্মদিন শখের নারী। সারাজীবন এরকমই থেকো। আমার আধ-পাগলা বউ হয়ে আমাকে রাঙিয়ে দিও।
ছোঁয়া মুচকি হেসে মাথা রাখে সাদির বুকে। এরকম একটা রাত চেয়ে এসেছে ছোঁয়া। এমনটাই কল্পনা করে গিয়েছে সব সময়। অবশেষে স্বপ্ন সত্যি হয়ে গেলো?
“হৃদয়হরণী মানে কি সাদু?
” হৃদয় মানে জানো তো? হরণী মানে হরণ করা বা দখল করা।
যে তোমায় হৃদয়টা দখল করে বসে আছে তাকেই হৃদয়হরণী বলে।
চলবে
#হৃদয়হরণী
#পর্ব:৪৮
#তানিশা সুলতানা
“তুমি আমার শখের নারী ছোঁয়া। আমি তোমাকে ভীষণ ভালোবাসি।
বক্স খুলে সেটার ভেতর থেকে লকেট ওয়ালা একটা চেইন বের করতে করতে বলে সাদি।
ছোঁয়ার কপালে ভাজ পড়ে।
” বাই এনি চান্স আপনি কি আমাকে আগে থেকেই ভালোবাসতেন?
মৃদু হাসে সাদি। খাটের এক কোণায় গিয়ে বসে। ইশারায় ছোঁয়াকেও বসতে বলে। ছোঁয়াও সাদির পাশে বসে।
“তোমাকে আমি কবে থেকে ভালোবাসি জানি না। তবে বউ বানানোর স্বপ্ন দেখেছি অনেক আগে থেকেই। নিজের স্বপ্নটার কথা শেয়ার করেছিলাম তোমার বাবার কাছে। তিনি নাকোচ করে দেন। এবং স্পষ্ট গলায় বুঝিয়ে দেয় তোমার আর আমার মধ্যে ঠিক কতেটা দুরত্ব রয়েছে।
আমিও বুঝে গিয়েছিলাম। এবং তোমার থেকে দুরত্ব বজায় রেখেই চলতাম। নিজেকে গুছিয়ে নেওয়ার জন্য বন্ধুত্ব করেছিলাম মিহির সাথে।
বন্ধুত্ব ছিলো বা তার থেকেও কিছুটা বেশি৷
হয়ত আমার চাওয়াটা সত্যি ছিলো তাই তুমি আজকে আমার।
ভেংচি কাটে ছোঁয়া। লোকটা তাকে আগে থেকেই ভালোবাসে। অথচ কি নাটকটাই না করলো। একটুও ভালোবাসা দেখাতো না।
সাদি লকেটা খুলে। তার ভেতরে দুটো নাম লেখা। একটা ” দিয়া এবং অপরটা ছোঁয়াদ”
নাম দেখে ছোঁয়ার কুঁচকানো ভ্রু আরও কুঁচকে যায়। সে এক লাফে দাঁড়িয়ে যায়।
“আমার ছেলের নাম আমি কুদ্দুসই রাখবো। ছোঁয়াদ কখনোই রাখবো না।
সাদি দীর্ঘ শ্বাস ফেলে
” ছোঁয়া পাগলামি করে রাতটা নষ্ট করিও না।
“আর আপনি যে আমার ছেলের নাম নষ্ট করছেন।
সাদি হতাশ বুঝে যায় তার আধপাগল বউ মানবে না।
” ঠিক আছে ডাক নাম কুদ্দুস থাকবে। স্কুল কলেজে ছোঁয়াদ দেবো।
ছোঁয়া এটা মানতেও নারাজ। তাই দারুণ তেজে আবারও বলে ওঠে
“একদম না।
স্কুল কলেজেও কুদ্দুস থাকবে।
হার মানে সাদি।
” ঠিক আছে। আপাতত কাছে এসো।
“কাছে যাবো তার আগে আপনি কান ধরে বিশ বার উঠবস করবেন।
” কিন্তু কেনো?
“এতোদিন চোরকির মতো আমাকে আপনার পেছনে দৌড় করানোর জন্য।
আপনি জানেন আপনি আমাকে কতোটা পিছিয়ে দিয়েছেন? বিয়ের দিন থেকেই যদি আমরা কাছাকাছি থাকতাম তাহলে এতোদিনে কুদ্দুস আমাদের কোলে চলে আসতো। এবং কুদ্দুসীকে আনার প্ল্যানিং শুরু করে দিতে পারতাম।
” কুদ্দুসী আবার কে?
“মেয়ের নাম কুদ্দুসী রাখবো। দিয়া থাকবে ভালো নাম। ডাক নাম কুদ্দুসী।
সাদি দুই হাত জোর করে বলে
“মাপ কইরা দে বোইন। তুই বের হ আমার রুম থেকে। আমাকে একটু শান্তি দে।
ছোঁয়া ভেংচি কাটে।
” আমাকে আজকে বের করে দিলে আপনার চুলের কসম। আমি চলে যাবো গ্যাব্রিয়েল এর কাছে। ২০ বছর পরে দশটা বাচ্চা নিয়ে তবেই ফিরবো আপনার কাছে।
হতাশ সাদি। কথাবার্তা ছাড়া কান ধরে উঠবস করতে থাকে। ছোঁয়া কাউন্ট করতে থাকে। গুনে গুনে বিশবার কান ধরে শেষ হলে ছোঁয়া এগিয়ে গিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে সাদিকে। সাদিও আগলে নেয় ছোঁয়াকে।
ছোঁয়া সাদির পানজাবির বোতাম খুলে লোমশযুক্ত বুকে ছোট ছোট চুমু খায়।
এবং ফিসফিস করে বলে
“কথা দেন
সাদি ছোঁয়ার মাথায় চুমু খেয়ে জবাব দেয়
” কি কথা দিবো?
“অল্প অল্প করে চুমু খাবেন। রাক্ষসের মতো নিঃশ্বাস বন্ধ করে দিবেন না।
দাঁতে দাঁত চেপে ছোঁয়াকে ছেড়ে দেয় সাদি। এই বলদ কি কোনো দিনও মানুষ হবে না?
ছোঁয়া এক পলক তাকায় সাদির দিকে।
” এভাবে দাঁত কটমট করবেন না। দাঁত ভেঙে গেলে কুদ্দুস এবং কুদ্দুসী আপনাকে বাবা না ডেকে নানা ডাকবে।
রাগতে গিয়ে রাগ করতে পারে না সাদি। কি বলবে একে? স্বভাব তো এমনই। রাগ করলেই কি ম্যাচুউর হয়ে যাবে? কখনোই না।
ছোঁয়া হাত টেনে কাছে নিয়ে ওষ্ঠদ্বয় চেপে ধরে নিজের পুরুষালী ওষ্ঠদ্বয় দ্বারা।
দুই হাতের বেসামাল স্পর্শ এবং পুরু ওষ্ঠের অত্যাচারে অস্থির ছোঁয়া। ছাড়া পাওয়ার জন্য ছটফট করতে থাকলেও শখের পুরুষ একটুও ছাড় দেয় না ছোঁয়াকে।
অতিষ্ঠ হয়ে সাদির চুল গুলো মুঠোয় পুরে নেয় ছোঁয়া। সাদি ছেড়ে দেয়। এবং কড়া গলায় জানিয়ে দেয়
“আজকে কোনো রকমে বাঁদরামি করলে চলে যাবো মিহির কাছে মাইন্ড ইট।
ব্যাস ছোঁয়া রানী একদম সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে। চুল গুলো ছেড়ে দেয়। এবং নিজেই সাদির ওষ্ঠদ্বয় ছুঁয়ে দেয় নিজ ওষ্ঠদ্বারা।
__
ফজরের আজান দিয়েছে বেশ কিছু খন আগে৷ ইতোমধ্যে পাখির কিচিরমিচির শুরু হয়ে গিয়েছে। ছোঁয়া এখনো মুখ গোমড়া করে বসে আছে। মূলত সে সাদির পাশে শুবে না। এক ঘন্টা যাবত এভাবেই বসে আছে। সাদি শুয়ে শুয়ে দেখছে অভিমানী বউটাকে।
বউ রেগে নেই। তবে অভিমান করেছে সাথে ভয়ও পেয়েছে মনে হয়। সাদি ঠিক আন্দাজ করতে পারছে না। আন্দজ করবে কি করে? কথাই তো বলছে না। শেষ কথা বলেছিলো গভীর স্পর্শের মুহুর্তে। মস্তিষ্কে চাপ দিয়ে সাদি মনে করে ছোঁয়া শেষ কথা কি বলেছিলো। বলেছিলো “আজ না প্লিজ। কিন্তু সাদি ছোঁয়ার কোনো কথা শোনে নি৷ আসলে শুনতে পারে নি। নিজেকে দমিয়ে রাখতেও পারে নি।
পাশে শখের নারী সে আবার বউ বত্রিশ বছরের পাকাপোক্ত যুবক হয়ে নিজেকে দমাতে সক্ষম হয় নি।
অবশ্য এর জন্য সাদি অনুসূচনাও হচ্ছে না। তানিশা সুলতানা এতোদিন অনেক জ্বালিয়েছে৷ জ্বালিয়ে পুরিয়ে ছাই করে দিয়েছে। আজ নাহয় সাদি একটু জ্বালালো।
“ছোঁয়া একটু ঘুমিয়ে নাও।
ভালো লাগবে।
এটা নিয়ে চার বার বললো সাদি। তবুও ছোঁয়ার কোনো সারা নেই। একটু নরেচরে বসে ছোঁয়া। শরীরে এখনো শারি পেঁচিয়ে আসে।
বিরক্তর চরম পর্যায়ে চলে যায় সাদি। এক লাফে উঠে পড়ে। ছোঁয়া চমকে তাকায় সাদির দিকে। লোকটা উঠছে কেনো?
ছোঁয়া কিছু বুঝে ওঠার আগেই সাদি পাজা করে কোলে তুলে নেয় ছোঁয়াকে। মৃদু চিৎকার করে ওঠে ছোঁয়া। চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে গলা জড়িয়ে ধরে সাদির।
সাদি বাঁকা হাসে
” ঘুমবে না। তো কি করার?
চলো গোছল সেরে নেই।
চোখ দুটো বড়বড় করে মেলে ছোঁয়া। লোকটা আজকে এতোটা জ্বালাচ্ছে কেনো? ডিসেম্বরের শুরু। প্রচন্ড শীত। এই শীতে এখন গোছল? মরেই যাবে ছোঁয়া। লোকটার এতো অত্যাচারে ছোঁয়া মরে নি বলে এখন ঠান্ডা পানি দিয়ে মারতে চাইছে?
পাষাণ লোক।
চলবে
#হৃদয়হরণী
#পর্ব:৪৯
#তানিশা সুলতানা
ছোঁয়ার মেজাজ তুরঙ্গে। শয়তান বেডা এতো অত্যাচার কেনো করছে? এই যে কনকনে ঠান্ডা পানি দিয়ে গোছল করিয়েছে।
যাক সেখানে দুঃখ নেই। এমনিতেও কাল গোছল করে নি। আজকে করতেই হতো। একটুখানি উপকারই করেছে। কিন্তু দুঃখটা এখানেই। এখনো কম্বল চাপা দিয়ে ঘুমতে দিচ্ছে না। বসিয়ে রেখেছে। এবং বলেছে কিছুখন অপেক্ষা করতে। এটা কি শাস্তি নয়? সারা রাত জ্বালাতন করে কি মানুষটার মন ভরে নি?
নেহাত ছোঁয়া পণ করেছে কথা বলবে না। নাহলে এতখনে ইচ্ছা মতো কিছু কথা শুনিয়ে দিতো।
সাদি গায়ে শার্ট চাপিয়ে চুলগুলো ঠিকঠাক করে ছোঁয়ার দিকে তাকায়। ছোঁয়া তাকিয়েই ছিলো বিধায় চোখাচোখি হয়ে যায়। এবং ছোঁয়া ভেংচি কেটে চোখ ফিরিয়ে নেয়। সাদি হাসে। বউয়ের রাগ বুঝতে পারছে খুব।
“ঘুমিও না। জাস্ট পাঁচ মিনিট আমি আসছি।
বলেই সাদি দরজার দিকে এগিয়ে যায়। দরজা খুলে দিতেই হুরমুরিয়ে একেক পর একে ফ্লোরে গড়াগড়ি খেয়ে পড়ে যায়। প্রথমে সামির পড়েছে তারওপর আশিক তারপর ইরা। শিপন আর রিমি পড়তে পড়তে নিজেদের সামলে নেয়।
ভাজ পড়ে সাদির কপালে।
সামির চিৎকার করে ওঠে। বেচারা ব্যাথাও পেয়েছে বেশ।
” শা*লা বউ পাইয়া হুশজ্ঞান হারাইছে। কোমরটা আমার ভেঙেই গেছে। এখন বিয়া করমু কেমনে? বউরে ভালোবাসমু কেমনে? বউয়ের সাথে রোমাঞ্চ করমু কেমনে?
সব থেকে বড় কথা এই ভাঙা কোমর ওয়ালা সাইম্যার সাথে মেয়ে দিবে কে?
কোমর ধরে আহাজারি করতে করতে বলতে থাকে। বাকিরা উঠে পড়েছে।
ইরাও বেশ চটে গেছে সামিরের ওপর। একটা লাথি মারে সামিরকে।
“শালা সকাল সকাল ঘুম থেকে ডেকে তুললি সিক্রেট দেখাবি বলে। আর এখন।
ছোঁয়া নিরব দর্শকের মতো দেখে যাচ্ছে।
সাদি দীর্ঘ শ্বাস ফেলে
” দুই মিনিটের মধ্যে সব কয়টা বের হবি এখান থেকে।
সামির এক লাফে দাঁড়িয়ে যায়। মুহুর্তেই তার ব্যাথা গায়েব।
“বিড়াল মেরেছিস মামা? কেমন মজা রে? শান্তি লাগে?
তখনই ছোঁয়া বলে ওঠে
” বিড়াল মারে নি কিন্তু আমাকে আধমরা করেছে। এই সকালে ঠান্ডা পানিতে চুবিয়েছে জানো? আর রাতে তো
ছোঁয়া বাকিটা শেষ করার আগেই সাদি ধমকে ওঠে
“চুপচাপ বসে থাকো। একটা কথা বললে মাথায় তুলে আছাড় মারবো ইডিয়েট।
ছোঁয়া গাল ফুলিয়ে ফেলে। এতো অত্যাচার করে এখন ধমক দেওয়া হচ্ছে?
রিমি বলে ওঠে
“ছোঁয়া পরে বলিও আমায়। কেমন?
সামির ঘোর আপত্তি এতে
” তোরে একা কেন কইবো? আমরা কি রাজাকার? ভুলে যাস না আমি সাদি চাচার জানের দোস্ত। তার বাসরের কাহিনি শোনার পুরোপুরি অধিকার আছে আমার।
ছোঁয়া মামনি তুই আমারে ক
সামির ছোঁয়ার দিকে এগোতে নেয়। সাদি সামিরের কলার টেনে ধরে
“দুই মিনিটের মধ্যে রুম থেকে বের হলে ঐশির সাথে ডেট করার ব্যবস্থা করে দিবে।
ব্যাসস সামির ঠান্ডা। পকেট থেকে ঔষধের প্যাকেট বের করে সাদির হাতে দেয়।
” তোদের কি লজ্জা শরম নেই? বাবার বয়সী বন্ধু বিয়ে করে বাসর করেছে। তোরা দল বেঁধে এসে ডিস্টার্ব করছিস? আমি তো লজ্জায় পুরো লাল হয়ে যাচ্ছি। বের হ সবাই। এক মাসের মধ্যে ওদের ডিস্টার্ব করবি না। প্রাইভেসি দিবি। শিক্ষা দিক্ষা কিচ্ছু নেই তোদের।
গেট আউট হ।
সাদি মুচকি হাসে। বিরবির করে বলে “ড্রামাবাজ একটা”
সামির সবাইকে টেনে বের করে রুম থেকে তারপর নিজেও বের হয়ে যায়। সাদি পূনরায় দরজা বন্ধ করে দেয়। এবং এগিয়ে আসে ছোঁয়ার দিকে। গ্লাসে পানি ঢেলে ছোঁয়ার পাশে বসে।
“ঔষধ খেয়ে নাও
ছোঁয়া জবাব দেয় না। মুখ ঘুরিয়ে বসে থাকে।
” ঔষধ কি খাবে না কি আবার শুরু করবো?
ছোঁয়া ছোঁ মেরে সাদির হাত থেকে ঔষধের পাতা নিয়ে নেয়।
“কিসের ঔষধ?
” ব্যাথার।
“দুটো এখানে।
” দুটোই ব্যাথার।
“পিল তো নেই?
“এতো কথা কেনো?
ছোঁয়া ভেংচি কেটে বলে
” আমি ওইসব খাবো না।
“কিন্তু কেনো?
” বললাম না আমার বেবি দরকার।
সাদি কপাল চাপকায়। কোন পূর্ণের ফলে এমন বউ পেয়েছিলো?
“দেখো ছোঁয়া। তুমি এখনো ছোট। আরও কিছুদিন সময় লাগবে আমাদের।
“কে বলেছে আমি ছোট? আঠারো আমার। দাদির বাচ্চা হয়েছিলো চোদ্দ বছরে। সেই হিসেবে আমার বেবি হওয়ার বয়স পেরিয়ে গিয়েছে।
সাদি দীর্ঘ শ্বাস ফেলে।
ব্যাথার ঔষধ ছোঁয়ার হাত থেকে নিয়ে।
” এটা পিল ছিলো।
“ওটা ফেলে দিন। আমি খাবো না। এটা খাবো।
সাদি মাথা নারায়। ছোঁয়া পিলটা খেয়ে নেয়। স্বস্তি নিঃশ্বাস ফেলে সাদি। তানিশা সুলতানা
ছোঁয়ার থেকে গ্লাস নিয়ে টেবিলে রেখে লাইট অফ করে দেয়। এবং ছোঁয়ার পাশে এসে বসে।
” চলো এবার ঘুমিয়ে পড়ি।
ছোঁয়া সাদির দিকে পেছন ফিরে শুয়ে পড়ে।
সাদি পেছন থেকে জাপ্টে জড়িয়ে ধরে ছোঁয়াকে। গলায় মুখ গুঁজে।
“এতো রাগ করতে নেই বউ। তোমারই তো বর তাই না?
চলবে