হৃদয়হরণী পর্ব-৩৮+৩৯

0
8

#হৃদয়হরণী
#পর্ব:৩৮
#তানিশা সুলতানা

সাদি রুমে ঢুকে দেখতে পায় নাজমা বেগমের আরেক দরফা বমি করা শেষ। নেতিয়ে পড়েছেন একদম। বসে থাকার শক্তি টুকুও তার অবশিষ্ট নেই। ওয়াশরুম থেকে ধরে আনতে হচ্ছে। ফর্সা মুখ খানা লালচে হয়ে উঠেছে ইতোমধ্যে। চোখ দুটো টকটকে লাল। অসুস্থতা ওনাকে বেশ কাবু করে ফেলেছেন ইতোমধ্যে।
ছোঁয়া এবার কেঁদে ফেলেছে। সে কখনো বাবা মাকে অসুস্থ হতে দেখে নি। মায়ের এই রূপ দেখে তার কলিজা কাঁপছে। সাবিনা বেগমও চিন্তিত। হাসপাতালে নেওয়া দরকার। কিন্তু সাজ্জাদ চৌধুরী বাড়িতে নেই। সিফাত অফিস থেকে ফেরে নি৷ আর সেলিম চৌধুরী তো উল্টা পাল্টা চিন্তা করে আরও অস্থির হয়ে উঠেছেন। এই মুহুর্তে কি করে ডাক্তারের কাছে নেবে?

সকলের চিন্তিত মুখখানা এক পলক দেখে সাদি ভেতরে ঢুকে পড়ে।
সাদিকে দেখেই পরি চাচ্চু চাচ্চু বলে দৌড়ে কোলে ওঠে। ছোঁয়ারও চোখে মুখে খুশির ঝিলিক ফুটে ওঠে। হাতের উল্টো পিঠে চোখের পানি মুছে ফেলে। সাদি এসেছে মানে মাকে সুস্থ করেই তুলবে। সাহেলা বেগম স্বস্তি পায়। সিমিও একটুখানি ভরসা পায়

“হাসপাতালে নিচ্ছো না কেনো ছোট মাকে?

গম্ভীর গলায় প্রশ্ন করে সাদি। নিজের গলার আওয়াজ শুনে নিজেই বিরক্ত। ভেবেছিলো নরম গলায় কথা বলবে। কিন্তু উয়য় যে স্বভাব। স্বভাব কি আর সহজে পরিবর্তন হয়?
সাবিনা বেগম জবাব দেয়
” কিভাবে নিবো? তোর চাচ্চু তো

বাকি টুকু বলে না সাবিনা। ছেলের সাথে এসব বলতে তিনি লজ্জা পায়। নাজমা বেগমও লজ্জা পাচ্ছে সেটা তার চোখ মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে। বাচ্চাকাচ্চারা বড় হয়েছে। তাদের সামনে এমন একটা পরিস্থিতি?
ছিহহ ছিহহহ ছিহহহ
নাজমা বেগমের ইচ্ছে করছে চিৎকার করে কাঁদতে।
সাদি বিরক্ত হয়।

“গ্যাস্টিকে প্রবলেম হয়েছে ছোট মার। সিম্পল বিষয়টা বুঝতে পারো নি? আজিব
আর যেটা আন্দাজ করেছো সেটা হলেই বা কি?
মানুষটা এভাবে চিকিৎসা বিনে মা*রবে?

সিমি আমতা আমতা করে বলে
” আসলে বাবা বলছিলো

“ভাবি তোমার বাবার মাথায় এমনিতেই বুদ্ধি কয়েক কেজি কম আছে। তার কথা শুনে নেচোনা প্লিজ।

সেই মুহুর্তে সেলিমও রুমে ঢুকে পড়ে। তার চিন্তা হচ্ছিলো সাদি কি না কি করে? একদম ভরসা পাচ্ছে না এই ছেলেকে। আবোল তাবোল কিছু বলে দিলে মানসম্মান কোথায় যাবে?
ছোঁয়া ভ্রু কুচকে বলে ওঠে
“আমিও তাই বলছিলাম। তাছাড়া পরি বড় হয়ে গেছে নতুন বেবি আসলে আমরা তো খুশিই হবো। আমার তো আর সেই কপ
কথা শেষ করতে দেয় না সাদি। ধমকে ওঠে
” চুপচাপ বসে থাকো ইডিয়েট
কথা শেষ করতে না পেরে ছোঁয়া হতাশ। ছোঁয়া একটা বাচাল মেয়ে। তার পেটে অনেক কথা জমে থাকে। সেই কথা কাউকে না বলতে পারলে পেটের মধ্যে গুড়ুম গুড়ুম করে।লোকটা নিজেও শুনবে না অন্যদের শোনাতে দিবে না। নিরামিষ একটা।
ছোঁয়া দাঁড়িয়ে যায়
“বড় মা করলা ভাজি করতে গেলাম। তোমার ছেলে খায় নি কিছুই।
বলেই চলে যায়।
ছোঁয়ার এই কথায় সকলেই অবাক হয়। মেয়েটা চঞ্চল, পাগলামি করে বেশি। কারো কখনোই ধারণা ছিলো না এই মেয়েটা সাদিকে এতোটা ভালোবাসে। মন প্রাণ উজার করে দিয়ে ভালোবাসে।
সাদি শুকনো কাশি দেয়। খেয়াল করে সেলিম চৌধুরীকে। চোখে মুখে দুষ্টুমি ফুটে ওঠে

” চাচ্চু কংগ্রাচুলেশনস
ছোট মার অবস্থা দেখে আমি শিওর আমাদের পরিবারে নতুন সদস্য আসতে চলেছে। এতোখন শিওর ছিলাম না।

গলা শুকিয়ে কাঠ সেলিমের। এগিয়ে গিয়ে বসবে সেই শক্তি টুকুও অবশিষ্ট নেই। সিমিও শুকনো ঢোক গিলে। যদিও এটা পাপের কিছু নয়। তবুও তার চিন্তা হচ্ছে। মানুষকে ফেস করবে কিভাবে?
সাবিনা বেগম চোখ রাঙিয়ে তাকায় সাদির দিকে।
নাজমা বেগম কেঁদেই ফেলেছে।
পরি হাত তালি দিচ্ছে খুশিতে।
সাদি সকলের মুখের দিকে তাকিয়ে ফিক করে হেসে ওঠে। এক হাত চোখের ওপর রেখে শব্দ করে হাসছে সে। হাসতে হাসতে চোখের কোণে পানি চলে আসে।
সকলেই মুগ্ধ হয়ে সাদির হাসি দেখে। ছেলের হাসি দেখে সাবিনা বেগমের চোখে পানি চলে আসে। জীবনেও কখনো ছেলেকে এভাবে হাসতে দেখে নি সে। এসব কি ছোঁয়ার কামাল?

সেলিম কপাট রাগ দেখিয়ে চোখ পাকিয়ে তাকায় সাদির দিকে
“বেহায়া ছেলে। আমার মেয়ের থেকেও এক কাঠি এগিয়ে।
ভাবি এরা দুজন যেভাবে জ্বালাচ্ছে। এদের ছেলে পুলে হলে আমাকে হার্টের রুগি বানিয়ে ছাড়বে।
সেলিম অভিযোগ জানায় সাবিনা বেগমকে। হাসছে সাবিনা। সাদিও হাসি থামিয়েছে। সিমির ঠোঁটেও হাসি। নাজমা বেগম এরকম একটা মুহুর্ত পেয়ে অনেকটা সুস্থতা অনুভব করছে।

” ডাক্তার আসছে। চাচ্চু চলুন এক সাথে খেয়ে নেই। তারপর মিষ্টি কিনতে যেতে হবে তো। আমার শশুড় প্রেগন্যান্ট বলে কথা।

আবারও রেগে ওঠে সেলিম। চোখ রাঙিয়ে জবাব দেয়
“প্রেগন্যান্ট আমি হবো না। হবে তোমার চাচি।

” ওহহহহ হো
সম্ভাবনা আছে? চাচ্চু আপনার বয়স বোধহয় কমছে ধীরে ধীরে। নটি বয়
এবার সাবিনা বেগম এবং সিমি খিলখিল করে হেসে ওঠে। সেলিমের মুখ খানা থমথমে হয়ে যায়। সে গটগট পায়ে চলে যায়। এখানে থাকলে মানসম্মান থাকবে না।
সেলিম যেতেই সাদি হাসি থামিয়ে ফেলে

“সরি ভাবি
ছোট মা সরি
চাচ্চু ভয় পাচ্ছিলো তাই একটু মজা করেছি। সরি হ্যাঁ

সাদি পরিকে নিয়েই চলে যায়। সাবিনা বেগম দীর্ঘ শ্বাস ফেলে
” জীবনে প্রথমবার ছেলের প্রাণ খোলা হাসি দেখলাম।

“আমাদের ছোঁয়াটা কিভাবে পাল্টে দিলো ভাইয়াকে। ওদের ওপর এখন আর কোনো রাগ নেই। আল্লাহ ওদের ভালো রাখুক। দোয়া করি।

____

ডাক্তার চলে এসেছে। চেকআপ করছে নাজমা বেগমকে। তেমন সিরিয়াস কোনো ব্যাপার না।
ছোঁয়া সাদিকে নিয়ে গিয়েছে খাওয়ার জন্য। খিধেটা ভালোই পেয়েছে।
ছোঁয়া ওড়না কোমরে বেঁধে খাবার সাজাচ্ছে টেবিলে। সাদি উসখুস করছে। ছোঁয়াকে কিছু বলবে সে।

” বসছেন না কেনো?

“বাবা ভাইয়া আসুক। সবাই এক সাথে খাবো।

ছোঁয়া কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়ায়
” এই যে কষ্ট করে কাজ করলাম। আগে বলবেন না খাবেন না। পাষাণ লোক একটা।

“জিজ্ঞেস করেছো আমায়?

” না করলাম তাও বলবেন। আব্দুল কুদ্দুসের বাপ যে এতো বজ্জাত এখন টের পাচ্ছি।

সাদি মুখ বাঁকায়।
“তোমার রুমে যাচ্ছি। পেছন পেছন এসো।

ছোঁয়া ভ্রু কুচকে বলে ওঠে
” আপনার মতলবটা কি বলুন তো? গবু হওয়ার চেষ্টা করছেন না কি? খালি কেমন কেমন করে তাকাচ্ছে। আবার ঠোঁট চৌকা করছেন। রোমান্টিক লুক দিচ্ছেন। ছোঁয়া কিন্তু বোকা না। সব বুঝতে পারে। বুড়ো বয়সে ভীমরতি ধরলো না কি?

সাদি ছোঁয়ার মাথায় টোকা দেয়
“এরকম হ*ট নোয়া চোখের সামনে ঘুরঘুর করলে একটু তো ভীমরতি ধরবোই।

ছোঁয়া চোখ দুটো বড়বড় করে ফেলে। অবিশ্বাস্য ব্যাপার স্যাপার

” মুভিটা দেখেছেন?

“আরও আট মাস আগে।
এসো

সাদি চলে যায়। ছোঁয়া এক দৌড়ে বেসিনের আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।
” দিন দিন কিউট হয়ে যাচ্ছি না কি? জামাই দেখি উল্টো সুরে গান ধরেছে। কপাল খুলে গেলো না কি?

চলবে

#হৃদয়হরণী
#পর্ব:৩৯
#তানিশা সুলতানা

ছোঁয়ার অপেক্ষায় বসে রইলো সাদি। ইডিয়েটটা আর আসলো না সাদির কাছে৷ এই মেয়েটার মনোভাব বোঝে না সাদি। কি চায়? কি করে? কিছুই মাথায় ঢোকে না। আসলেই একটা ইডিয়েট। এই যে সারাক্ষণ পিছু পিছু ঘুরবে। জ্বালাবে। আর যখন সাদি ডাকবে পাত্তাই পাওয়া যাবে না।
দীর্ঘ শ্বাস ফেলে সাদি। দিন দিন পাগল হয়ে যাচ্ছে না? একটা বাচ্চা মেয়ে। তার প্রতি এখনই এতোটা দুর্বলতা প্রকাশ করা ঠিক নয়। আরও একটু সময় নেওয়া প্রয়োজন বা ছোঁয়াকে দেওয়া প্রয়োজন। গম্ভীর হয়ে যাবে না কি আগের মতো?
হুমম সেটাই বোধহয় ঠিক হবে।
খাটে টানটান হয়ে শুতে গিয়েও শয় না সাদি৷ শরীর ম্যাচম্যাচ করছে শুলেই ঘুমতে ইচ্ছে করবে। আর তখনই ডাক পড়বে জানা কথা সাদির।
পকেট থেকে ছোঁয়ার জন্য আনা গিফটখানা বের করে এক পলক দেখে তারপর সেটা রেখে দেয় পড়ার টেবিলের ওপর।
এখন অবশ্যই সাদির পড়ালেখা নেই। তবুও টেবিল এবং বই গুলো রয়ে গেছে৷ সাবিনা বেগম রোজ পরম যত্নে গুছিয়ে রাখে। মাঝেমধ্যে সাদিও পুরনো বই গুলো পড়ে দেখে। এটা তার স্বভাব।
রুমটা বড্ড অগোছালো সাদির। বিছানা চাদরের ভাজ পড়ে গেছে। কোলবালিশ খাটের এক কোণায় পড়ে। কম্বলটার ভাজ খোলা। বালিশ ঠিক জায়গায় নেই। চতুর সাদির বুঝতে সময় লাগে না তার ইডিয়েট বউ এসেছিলো এই রুমে। তার খাটে শুয়ে ছিলো তারই কম্বল গায়ে দিয়ে।
পাগল কি না?

সকলেই খাবার টেবিলে বসেছে। ছোঁয়া ফ্লোরে গোল হয়ে বসে দাঁত দিয়ে নখ কাটছে। আসলে তারপর টেনশন হচ্ছে। সাদি যে যেতে বলেছিলো। এমনিতে তার নিরামিষ বর কাছাকাছি ঘেসলেই খ্যাঁক খ্যাঁক করে ওঠে বুড়োদের মতো। আর আজকে একটু ভালোবেসে ডাকলো। নিশ্চয় একটা চুমু টুমু দিতো। কিন্তু কি হলো? ছোঁয়া যেতেই পারলো না?
আসলে যাবে কি করে? বাবাকে তো প্রমিজ করেছিলো এইচএসসির আগে দূরে দূরে থাকবে। তবুও সে কথা ছোঁয়া রাখতো না। লুকিয়ে চুকিয়ে দেখা করতোই। যেমনটা সকালেও করেছিলো। কিন্তু বাবা চোখের সামনেই বসে আছে৷ এভাবে বাবার সামনে দিয়ে যাবে কিভাবে?
যদিও ছোঁয়ার লজ্জা একটু কম। তবুও বেশ লজ্জা লাগছে৷ তাই তো ফ্লোরে বসে পড়েছে৷
সেলিম বেশ কয়েকবার জিজ্ঞেস করেছে “তুমি ফ্লোরে কেনো বসেছো? ঠান্ডা লাগবে?”
জবাব দেয় নি ছোঁয়া।
এখন সাজ্জাদ চৌধুরীরও একই প্রশ্ন।সে ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করে
“এখানে কেনো তুমি? উঠে এসো।
ছোঁয়া মন খারাপ করে জবাব দেয়
“গরম লাগছে বড় বাবা। ঠান্ডা লাগলে উঠে যাবো।
আর কিছু বলে না সাজ্জাদ। তিনি খেতে বসে যায়।
সবাইকে খাবার বেরে দিতে গিয়ে সাবিনা বলে ওঠে
” ছোঁয়া সাদুকে ডেকে নিয়ে আয়।

ছোঁয়া যেনো এটারই অপেক্ষায় ছিলো। এক লাফে উঠে এক দৌড় দেয়।
সাদির রুমে ঢুকে হাঁপাতে হাঁপাতে বলে
“আব্দুল কুদ্দুসের নানা বড়বড় চোখ করে বসেছিলো। কথা দিয়েছিলাম না তাকে এইচএসসির আগে কাছাকাছি আসবো না? তাই আসতে পারি নি।
সরি জামাই।

সাদি খাটে আধশোয়া হয়ে একটা হাতে নিয়ে উল্টেপাল্টে দেখছিলো। ছোঁয়াকে দেখে সোজা হয়ে বসে৷ কথা বলার ধরণ দেখে হাসি পায়। তবু লুকিয়ে রাখে।
” ইটস ওকে
রাতে আমার সাথে ঘুমাবে।

ছোঁয়ার চোখ দুটো বড়বড় হয়ে যায়।কিভাবে ঘুমাবে তার সাথে? ছিহহ ছিহহহ বাড়ির সবাই কি ভাববে?
সাদি বই রেখে দেয় টেবিলে। টিশার্ট টেনে টুনে ঠিক করে। বা হাতে চুল গুলো পেছনে ঠেলে স্যান্ডেল পায়ে চাপিয়ে বেরুনোর প্রস্তুতি নেয়।
ছোঁয়া এখনো ভাবনায় বিভোর।
সাদি মাথা নিচু করে মুখটা ছোঁয়ার কান বরাবর নিয়ে নেয়। ফু দেয় ছোঁয়ার কানে। শুকনো ঢোক গিলে চোখ দুটো বন্ধ করে ফেলে ছোঁয়া।
“আব্দুল কুদ্দুসে মা না আসলে। আব্দুল কুদ্দুসের বাবা চলে যাবে মিহির কাছে৷ বুঝেছো ডার্লিং?

পরপর বড়বড় পা ফেলে বেরিয়ে যায় সাদি। রেখে যায় কাঁপতে থাকা ছোট্ট সত্তার ছোঁয়াকে। দিয়ে যায় টেনশন বাড়িয়ে।
কিভাবে কি করবে এবার?
মুখটা গোমড়া করে মাথা ছোঁয়াও সাদির পিছু ছুঁটে।

___

নাজমা বেগম এখন অনেকটাই সুস্থ। ঔষধ খাওয়ার পরে বমি করেছে। হালকা পাতলা কিছু খাবার খাইয়ে দিয়ে গিয়েছে সাহেলা বেগম। আপাতত তিনি চোখ বন্ধ করে রেস্ট নিচ্ছে। ছোঁয়া একবার এসে দেখে যায় মাকে। আজকে নাজমা বেগমের কাছে ঘুমবে পরি। মাঝেমধ্যেই সে দাদি বা নানির মাঝখানে থাকে। আজকে অবশ্য ছোঁয়া চেয়েছিলো পরিকে সাদির কাছে পাঠাতে। পরি থাকলে একটু স্বস্তি পেতো।
নিজের ভাবনায় নিজেই অবাক হয় ছোঁয়া। এই তো সারাক্ষণ মৌমাছির মতো ছুঁটে বেড়ায় সাদির পিছু পিছু। আর আজকে এমন গলা শুকিয়ে আসছে কেনো? নার্ভাস লাগছে কেনো? আশ্চর্য ব্যাপার স্যাপার।

সেলিম চৌধুরী প্রচন্ড রেগে আছে সাদির ওপর। বেয়াদব ছেলে। মনের মধ্যে আবোলতাবোল চিন্তা ঢুকিয়ে দিয়েছিলো। তাই তো সে তার সুন্দরী বউকে ডাক্তারের কাছে নিলো না। ভয়ে পালিয়ে পালিয়ে বেড়ালো। এখন সে বউয়ের কাছে যাবে কি করে? ঝাঁটার বাড়ি মেরে তাকে তাড়িয়ে দেবেন নাজমা বেগম। অসহায় সেলিম চৌধুরীর আজকে গেস্ট রুমে ঘুমতে হবে। এসবের জন্য কি সাদি দায়ী নয়? আলবাত সাদি দায়ী।
বিরবির করতে করতে তিনি গেস্ট রুমের দিকে চলে যায়।
ছোঁয়া এটারই অপেক্ষায় ছিলো। বাবা সরতেই সে এক দৌড়ে সাদির রুমের সামনে আসে। দুরুদুরু বুক কাঁপছে। দরজা আধখোলা। জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে প্রথমে মাথাটা ঢুকিয়ে দেয়। লাইট জ্বলছে। সাদিও বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে ফোন দেখছে। টিশার্ট খুলে ফেলেছে। প্রথমবার বোধহয় সাদিকে খালি গায়ে দেখলো ছোঁয়া। লোকটা এতো আকর্ষণীয় কেনো? উফফফ
এই যে ফর্সা বুকে কালো লোমশ জড়িয়ে আছে। কি আদুরে লাগছে।

“তোমার পেছনে আব্দুল কুদ্দুসে নানা

সাদির বলতে দেরি ছোঁয়ার ঠাসস করে পড়ে যেতে দেরি নেই। দরজার সামনে ঝোলানো পর্দায় ছিঁড়ে পড়েছে সে। সমস্ত ভর পর্দায় দিয়েছিলো কি না।
সাদি ছোঁয়ার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। এগিয়ে যায় ওঠাবে বলে। কিন্তু তার আগেই ছোঁয়া উঠে পড়ে। দরজা বন্ধ করে দেয়।
বুকে হাত দিয়ে জোরে জোরে শ্বাস টানছে সে।
সাদি কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়ায়।
” মানুষ হবে কবে তুমি?

ছোঁয়া গাল ফুলিয়ে জবাব দেয়
“মানুষই তো

” বাঁদর তুমি। শুধু একটা লেজ থাকলে গাছে ঝুলতে।

ছোঁয়া মুখ বাঁকায়। জবাব দেয় না।
“ঘুমবে আমি। সারাদিন যেভাবে দৌড় করিয়েছো।

সাদি লাইট অফ করে টানটান হয়ে শুয়ে পড়ে। ড্রিম লাইট জ্বালানো আছে অবশ্যই।
ছোঁয়া বিরবির করে সাদিকে বকতে থাকে। কতো রিক্স নিয়ে আসলো? আবার পড়েও গেলো। একবার জিজ্ঞেস করা উচিত ছিলো না? ” ছোঁয়া ঠিক আছো তুমি?
“ব্যাথা পেয়েছো?”
তা না ধমকে শেষ করলো।
বজ্জাত লোক। নিরামিষ একটা।

“সারা রাত দাঁড়িয়ে থাকার প্ল্যানিং করেছো না কি? ওকে আমি যাচ্ছি

সাদি উঠতে নিলেই ছোঁয়া ঠাসস করে শুয়ে পড়ে
সাদির দাঁড়ি দুই আঙুলে টান দিয়ে ফিসফিস করে বলে
” এতো যাই যাই করেন কেনো? একটু ভয় পাই বলে ভয় দেখাতে হবে?

সাদি আলতো হাসে। জড়িয়ে নেয় ছোঁয়াকে। বুকের মাঝখানে ছোঁয়ার ছোট্ট মাথাটা চেপে ধরে।
ছোঁয়া আবেশে চোখ দুটো বন্ধ করে ফেলে। টুপ করে চুমু খেয়ে নেয় সাদির বুকে।
পরপর নিজেই লজ্জায় হাসফাস করতে থাকে। অস্বস্তি হচ্ছে। এভাবেি ঘুমবে না কি?
সাদি নিজের দাঁড়ি যুক্ত গালখানা ছোঁয়ার গলায় রাখে। ভুমিকম্পের মতো কেঁপে ওঠে ছোঁয়া। ছটফট করতে থাকে।
বিরক্ত সাদি।
“ডিস্টার্ব করলে যা করতে মন যাচ্ছে সব করে ফেলবো।

ছোঁয়া শুকনো ঢোক গিলে। রিনরিনিয়ে জবাব দেয়
” কাতুকুতু লাগছে।
“লাগুক।
” দম বন্ধ হয়ে আসছে
“মরে যাও
” বুক কাঁপছে
“কাঁপতে দাও
“সয্য হচ্ছে না।
” এইটুকু সয্য করতে না পারলে আমাকে সামলাবে কিভাবে?
ছোঁয়ার মুখে কথা নেই। সাদি মুখ তুলে চুমু খায় ছোঁয়ার ললাটে।
তারপর আবারও কাঁধে মুখখানা লুকিয়ে ঘুমানোর প্রস্তুতি নেয়।
“ঘুমাও জান। গুড নাইট

চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে