#হৃদয়হরণী
#পর্ব:৩৪
#তানিশা সুলতানা
ছোঁয়ার সামনে লম্বা সুন্দরী একজন মহিলা দাঁড়িয়ে আছে। যার পরণে হালকা নীল রংয়ের শাড়ি। হাঁটু সমান লম্বা চুল গুলো বিনুনি গেঁথে রেখেছে। মুখে নেই কোনো সাজসজ্জা তবুও মেয়েটিকে অপূর্ব লাগছে।
এই মেয়েটিকে ছোঁয়া চিনে৷ চিনবে না কেনো? এই সেই মেয়ে যে ছোঁয়ার সাদির মনে জায়গা করে নিয়েছিলো। এই জীবনে মুখখানা ভুলতে পারবে না ছোঁয়া। এই মানুষটার প্রতি ভীষণ জেলাস ছোঁয়া।
গোল গোল চোখ করে মিহির পা থেকে মাথা পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করতে থাকে ছোঁয়া।
ছোঁয়ার তাকানো দেখে মুচকি হাসে মিহি। হাত বাড়িয়ে ছোঁয়ার মুখখানা ছুঁয়ে দিতে চায়। ছোঁয়া দু পা পিছিয়ে যায়। এতেও হাসে মিহি। দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে
“ভালো আছো?
প্রশ্ন খানা ছোঁয়ার পছন্দ হয় নি। রসিকতা করতে এসেছে উনি? সেই দিন এই কপালই তো সাদির কাঁধে চেপে কাঁদছিলো। ছোঁয়ার ইচ্ছে করছে মিহির কপাল ফা*টি*য়ে দিতে। বা খুব জোরে আঘাত করতে, ব্যাথা দিতে।
সাদির কাঁধে মাথা রেখে উনি দণ্ডনীয় অপরাধ করেছে এই বিষয়টা মহিলাটিকে বুঝিয়ে দিতে ইচ্ছে করছে ছোঁয়ার। কিন্তু পারছে না।
” কথা বলবে না ছোঁয়া?
ছোঁয়ার থেকে জবাব না পেয়ে বলে মিহি।
ছোঁয়া কটমট চোখে তাকায় মিহির দিকে।
“আমার স্বামীর কাঁধে কপাল ঠেকিয়ে কেঁদেছিলেন৷ আমি ভুলে যাই নি। আমার সাদিকে টাচ করার সাহস হয় কি করে? কেনো ছুঁয়েছিলেন? এই মুহুর্তে আপনার কপাল আমি ফাটিয়ে দিলে ব্যাপাটা ভালো দেখাবে?
উচ্চ স্বর ছোঁয়ার। কথায় বা আঁখি পল্লবে রাগের ছড়াছড়ি। ফর্সা গোলগাল মুখখানা লাল হয়ে উঠেছে। হাত মুষ্টিবদ্ধ করে রেখেছে। রাগের কারণে বোধহয় মেয়েটার নিঃশ্বাসও জোরে জোরে পড়ছে।
মিহি সব কিছু ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে।
” রেগে গেলে তো হেরে গেলে ছোঁয়া।
আলতো হেসে বলে মিহি।
“ছোঁয়া চৌধুরী হারতে শিখে নি। সাদমান চৌধুরী আমার। একান্তই আমার। তার দিকে নজর দিবেন না আপনি। এটা আমার ওয়ার্নিং।
ছোঁয়ার উচ্চ স্বরের কথায় দমে যায় মিহি। এসেছিলো একটা উদ্দেশ্য নিয়ে।কিন্তু উদ্দেশ্য খানা এই মুহুর্তে বলে দিলে ছোঁয়া কিছুতেই মানবে না।
” ঠিক আছে নজর দিবো না। তো একটা প্রশ্নের জবাব দাও। কেনো এতো ভালোবাসো তাকে? তার তো প্রচুর টাকা পয়সা নেই। দেখতেও আহামরি রাজকুমার নয়। বয়সটাও বেশি। তাহলে?
কি দেখে পাগল হলে?
“ভালোবাসা কখনো বয়স মানে না। টাকা পয়সার বিচার করে না। আমার চোখ দুটো খুলে নিয়ে নিজের চোখে লাগিয়ে দেখুন৷ এই পৃথিবীর সব থেকে সুন্দরতম ব্যক্তি হচ্ছে আমার সাদু। তাকে ভালোবাসার জন্য আমার শ-খানিক কারণ লাগে না। বরং তাকে ভালো না বাসার জন্য অনেক কারণ লাগবে৷
মুগ্ধ হয় মিহি। নিজের ওপর রাগ হয়। এভাবে কখনোই ভালোবাসতে পারে নি সে। ভালোবাসতে পারলে অবশ্যই তার জীবনে এমন একটা দিন আসতো না।
” সাদি যদি আমাকে চায়? তোমাকে ডিভোর্স দিতে চায়?
মিহির প্রশ্নে ছোঁয়ার বুক কেঁপে ওঠে। হৃদয়ের আর্তনাদ শুরু হয়ে যায়। তবুও মিহির সামনে নিজেকে দুর্বল প্রমাণ করতে নারাজ সে।
বুক ফুলিয়ে জবাব দেয়
“আমি আটকে রাখতে জানি। আগলে রাখতেও জানি৷ আমার সাদি কখনোই আপনার কাছে ফিরবে না। আর ফিরতে চাইলেও আমি ফিরতে দিবো না। আমার অনেক সাধনার ফল সাদু, আমার বর। তাকে প্রাণ থাকতে আমি হারাতে দিবো না।
বলেই ছোঁয়া কলেজের দিকে চলে যায়। মিহির আর একটা কথাও সে শুনতে নারাজ। কলেজের গেইটের ভেতরে ঢুকে দাঁড়িয়ে পড়ে ছোঁয়া। মিহি এখনো দাঁড়িয়ে আছে। কলেজে নতুন বিল্ডিং দেওয়া হচ্ছে। তারপর জন্য ইট ভেঙে রাখা হয়েছে। ছোঁয়া এক টুকরো ইট খুঁজে ছুঁড়ে মারে মিহির কপাল বরাবর। ছোট থেকেই ঢিল ছোঁড়ায় এক্সপার্ট ছোঁয়া। তাই এবারের ঢিলটাও বিফলে যায় না। সোজা গিয়ে লেগে পড়ে মিহির কপালে। মুহুর্তেই কপালে হাত দিয়ে আর্তনাদ করে ওঠে মিহি। ছোঁয়া বিশ্ব জয়ের হাসি দিয়ে ক্লাসের দিকে চলে যায়।
__
সাদি সবেই বাসায় এসে পৌঁছালো। ভীষণ ক্লান্ত সে। বড় একটা জার্নি। বরাবরই জার্নিতে অসুস্থতা অনুভব করে সাদি। ইচ্ছে ছিলো বাসায় ফিরবে। কিন্তু মানুষের কোলাহল ভালো লাগবে না এই মুহুর্তে। তাই বাসায় ফেরা হলো না। ভেবে নিয়েছে ফ্রেশ হয়ে একটা লম্বা ঘুম দিবে।
তখনই কলিং বেল বেজে ওঠে। সাদি বিরক্ত। চোখ মুখ কুঁচকে ফেলে। এই মুহুর্তে সামির ছাড়া কেউ আসে নি এটাই তার ধারণা।
ঘামে ভেজা সাদা রংয়ের শার্টের বোতাম খুলতে খুলতে দরজা খুলে দেয় সাদি।
সাথে সাথে ছোঁয়া শক্ত করে জড়িয়ে ধরে সাদিকে।
সাদি প্রথমে হতদম্ভ হয়ে যায়। পরে মুচকি হেসে দুই হাতে আগলে নেয় আধ পাগল বউটাকে৷
ছোঁয়াকে ভেতরে এনে দরজাটা বন্ধ করে দেয়।
“ইসসস কতো মিস করছিলাম আপনাকে জানেন আপনি? শেষমেশ আপনার দেখা পেলাম। শুনুন এটাই ছিলো আপনার বউ ছাড়া শেষ ঘুরতে যাওয়া। পরের বার থেকে আপনার সাথে যাবো আমি।
সাদি ছোঁয়াকে ছাড়িয়ে নেয় নিজের থেকে৷ সোফায় বসিয়ে দেয়। নিজেও বসে ছোঁয়ার পাশে। ছোঁয়া তার সুদর্শন বরটাকে দেখতে থাকে। আর সাদি চোখ বন্ধ করে ঘাম জুড়ানোর অপেক্ষায় থাকে
ছোঁয়া সাদির দিকে একটু চেপে বসে বলে
” শুনুন না একটা জিনিস ভেবেছি
সাদি চোখ বন্ধ করে গম্ভীর গলায় বলে
“বলো
” ভাবছি নকল একটা সার্টিফিকেট বানাবো।
ধপ করে চোখ খুলে সাদি। তাকায় ছোঁয়ার মুখপান।
“এভাবে কেনো তাকাচ্ছেন? বাবা বলেছে এইচএসসির পরে দুজনকে এক সাথে থাকতে। সেইইইইইই আরও দেড় বছর। এতোদিন আপনাকে ছাড়া থাকতে পারবো না।
তো আমি যদি একটা নকল সার্টিফিকেট বানাতে পারি এইচএসসির। তাহলে বাবাকে দেখিয়ে বলতে পারবো ” দেখো বাবা পাশ করেছি। এবার আমাকে আমার সাদুর সাথে থাকতে দাও”
আইডিয়াটা দারুণ না?
সাদি হেসে ফেলে। থা*প্প*,ড় মারে ছোঁয়ার মাথায়। সাথে বিনুনি টেনে দেয়। কিঞ্চিৎ ব্যাথা পেলেও ছোঁয়া তা প্রকাশ করে না।
“লেজ ছাড়া বাঁদর। উনি তোমার বাবা।
ছোট বাঁদরের থেকে বড় বাঁদরের বুদ্ধি অলওয়েজ বেশি থাকে।
ছোঁয়া আবারও ভাবনায় পড়ে যায়। সত্যিই তো। বাবা চট করে ধরে ফেলবে। সাদি ছোঁয়ার আঙুল গুলো দেখতে থাকে আর ছোঁয়া ভাবতে থাকে। তারপর লাফিয়ে উঠে বলে
” তাহলে চলুন আব্দুল কুদ্দুসকে নিয়ে নেই।
সাদি ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করে
“কিভাবে নিবো? আর আব্দুল কুদ্দুস কে?;
” কে আবার আমার আর আপনার ছেলের নাম আব্দুল কুদ্দুস রাখবো তো। মেয়ে দিয়া ছেলে কুদ্দুস। দারুণ না?
“এইসব উদ্ভট নাম তোমার মাথায় আসে কোথা থেকে?
” পাশের বাসার দাদিমার ছেলের নাম কুদ্দুস। দাদিমা দাদুকে ডাকতেছি “ও কুদ্দুসের বাপ আইসা দেখো তোমার আকাইম্মা কুদ্দুস মাইয়া লইয়া আইছে”
উফফফ কি যে জোশ লাগছিলো। তখনই ঠিক করে ফেলি আমার ছেলের নাম আব্দুল কুদ্দুস রাখবো।
তারপর আপনাকে ডাকবো “ও কুদ্দুসের বাপ। আপনার কুদ্দুস আপনার মতোই নিরামিষ হইছে। আমার তাড়াতাড়ি নাতি নাতনির মুখ দেখায় না।
ছোঁয়ার কথা শুনে সাদি হাসি আটকাতে পারে না। বা হাত চোখের ওপর রেখে হো হো করে হাসতে থাকে।
ছোঁয়া গালে হাত দিয়ে সাদির হাসি দেখতে থাকে।
চলবে
#হৃদয়হরণী
#পর্ব:৩৫
#তানিশা সুলতানা
পুলিশ স্টেশন এ ডাকা হয়েছে সাদি এবং ছোঁয়াকে। মিহি নামের একটা মেয়ের মাথা ফাঁটানোর অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ করেছেন অসুস্থ ব্যক্তি নিজেই।
সাদি ভ্রু কুচকে খানিকক্ষণ তাকিয়ে ছিলো ছোঁয়ার মুখপানে। মেয়েটা মিহির মাথা ফাঁটিয়েছে? এতোটা ডেঞ্জারাস?
ব্যাপারটা সাদির বিশ্বাসই হচ্ছে না। ছোঁয়া এমন একটা কাজ করতে পারে? মেয়েটাকে মাঝেমধ্যে চিনতে অসুবিধা হয়।
তবে এটা নিয়ে ছোঁয়ার চোখে মুখে কোনো অনুসূচনা প্রকাশ পাচ্ছে না। সে দিব্যি সাদির হাত জড়িয়ে গুটি গুটি পায়ে হাঁটছে।
সাদি বেশ কয়েকবার জিজ্ঞেস করতে চেয়েও করে নি। এমনকি ছোঁয়াকে জানানোও হয় নি তারা থানায় যাচ্ছে। জানলে কি মেয়েটা ভয় পাবে?
পুলিশের সামনে বসে আছে ছোঁয়া এবং সাদি। ওদের থেকে একটু দূরে মিহিও বসে আছে৷ তার কপালে ব্যান্ডেজ করা। গুটি কয়েক পুলিশ এদিক সেদিক ঘোরাঘুরি করছে। জেল খানা দেখতে পাচ্ছে না ছোঁয়া। সে আপাতত উঁকি ঝুঁকি মেরে জেল খানা দেখতে চাচ্ছে। পুলিশদের মাথার ক্যাপটা একবার পড়ে দেখতে চায় ছোঁয়া। বা রিভেলবারটা একটু ছুঁয়ে দেখতে চায়। সাদি পাশে না থাকলে অবশ্যই নিজের ইচ্ছে কথা পুলিশকে জানিয়ে দিতো। কিন্তু ধমক খাওয়ার ভয়ে জানাচ্ছে না। এতোগুলো পুলিশের সামনে ধমক খেলে মানসম্মান নিয়ে টানাটানি লেগে যাবে।
পুলিশ অফিসার আসিফ সাদি এবং মিহির ক্লাসমেট। এই সামান্য কারণে থানা ওবদি আসার মোটেও কোনো কারণ হয় না।মিহি শুধুমাত্র ছোঁয়াকে একটু অপমানিত করতে চায়। অপমানিত হলে নিশ্চয় মেয়েটার এই হাসিহাসি মুখটা চুপসে যাবে। তাই সে আসিফকে বলে সাদিকে কল করায়। তাছাড়া বাচ্চা মেয়ে আজকে মাথা ফাঁটানোর সাহস পেয়েছে কাল বড় কোনো অপরাধ করার সাহস পাবে। আগে থেকেই একটু বকে দিকে নেক্সট টাইম এমন করবে না।
আসিফ চায়ের কাপে শেষ চুমুকটা দিয়ে তাকায় সাদির দিকে। সাদির চোখে মুখে প্রশ্ন। তাদের কেনো এখানে ডাকা হয়েছে? নিজে থেকে জিজ্ঞেস করছে না। যেহেতু ডেকেছে সেহেতু তারাই বলবে। শুধু শুধু আগে আগে জিজ্ঞেস করার মানে হয় না।
“আপনার বউ মাথা ফাঁটিয়েছে। দিনে দুপুরে মানুষ খু*ন করার চেষ্টা। জানেন আপনি?
সাদি বড়বড় চোখ করে তাকায় ছোঁয়ার দিকে। ছোঁয়া মিষ্টি করে হাসে। পা গুটিয়ে বসে তাকায় মিহির দিকে। মিহির দৃষ্টি সাদির দিকে। মাথাটা আবারও গরম হয়ে যায় ছোঁয়ার।
” দেখছো বুড়ি তুমি এখানে আছো তবুও আমার বর তোমার দিকে তাকাচ্ছে না। তাহলে ভাবো তুমি ঠিক কতোটা বিশ্রী দেখতে। তোমার থেকেও তো এই পুলিশ কাকু সুন্দর বেশি। তার দিকেও চার বার তাকিয়েছে।
মিহি থমথমে খেয়ে যায়। সে সাদির থেকে দৃষ্টি সরিয়ে ফেলে। পুলিশও সরু চোখে তাকায়।
“অপরাধ করেছো তুমি। এখনো এভাবে হাসছো কি করে?
আসিফ গম্ভীর গলায় বলে। পুলিশলর পেশায় এমন। নরম গলায় কথা বললে অবশ্যই আসামি ভয় পাবে না। উল্টো আশকারা পেয়ে যাবে।
ছোঁয়া পা নামিয়ে টেবিলে দুই হাতে দিয়ে একটু ঝুঁকে পুলিশকে উল্টো প্রশ্ন করে
” আপনার মনে হলো আমি অপরাধ করেছি?
“অবিয়েসলি
” আপনার বউয়ের কাঁধে কেউ কপাল ঠেকিয়ে তাকে দুর্বল করার চেষ্টা করলো। আপনার বউকে পটিয়ে আপনার সংসার ভাঙার চেষ্টা করলো। এমনকি আপনাকে হুমকি দিলো আপনার বউকে ছেড়ে দেওয়ার। তখন আপনি কি করবেন?
জটিল প্রশ্ন। সাদির হাসি পাচ্ছে। এতখনে সে বুঝতে পারলো কেনো পা ভেঙেছিলো ছোঁয়ার। কেনো কথা বলে নি। এবং কেনো আজকে এমনটা করলো। মেয়েটাকে আর আধ পাগল বলা চলে না। ফুল পাগল সে।
আসিফ খানিকক্ষণ ভাবে। সত্যিই তো। এমনটা করলে কখনোই মাথা ঠান্ডা রাখে যাবে না।
“আমি তাকে জেলে পুরবো।
” আপনার জেল আছে আপনি জেলে পুরবেন। আর আমার হাত আছে আমি ঢিল ছুঁড়েছি। হিসাব ক্লিয়ার?
এখানে আমি কোনো অপরাধ করি নি। আপনি বরং ওই মিহি ফিহি বুড়িকে জেলে পুরে রাখেন। আস্ত একটা শয়তান সে।
জানেন কি করেছে?
আসিফ মাথা নারায়। মানে সে জানে না।
“আমাকে বলে কি না আমার বরকে নিয়ে নিবে। আমি কষ্ট করে বিয়ে করি নি? আমি কান্নাকাটি করে বিয়ে করেছি। বিয়ের দিন আমাকে পাঁচশো কিলোমিটার হাঁটিয়েছিলো। এতো কষ্টের বিয়ে। আর আমি তাকে জামাই দিয়ে দিবো?
আসিফ শুকনো ঢোক গিলে। তাকায় মিহির দিকে। সে রাগে ফুঁসছে। সাদি একবার ভুল করেও তাকায় নি মিহির দিকে। এটাই রাগের কারণ। একটা সময় তাদের রিলেশন ছিলো। সাদি তাকে ভালোবাসতো। এতো তাড়াতাড়ি ভালোবাসা শেষ হয়ে গেলো? মিহিকে ভুলে গেলো?
আসিফ জবাব দিতে পারছে না।
সাদি গম্ভীর গলায় বলে
“মিহিকে সরি বলো জলদি। বাসায় যেতে হবে।
ছোঁয়া ভেংচি কাটে। মিহিকে সরি বলবে? ওই মিহিকে? কখনোই না। পারলে পুলিশের রিভলভার নিয়ে শু*ট করবে তবুও সরি বলবে না।
” সরি তো বলবে পুলিশ কাকু। যুক্তি না বুঝে একটা বুড়ির কথায় নাচতে নাচতে আমাকে মানে ছোঁয়া চৌধুরীকে ডেকে আনলো? মানসম্মান হার্ট হলো না আমার?
আসিফ মাথা নারায় সত্যিই তো মানসম্মান হার্ট হলো।
“আচ্ছা সবই বুঝলাম। কিন্তু মিহিকে বুড়ি কেনো বলছো?
” ও মা বলবো না? বয়স কতো ওনার? আমার জামাইয়ের যদি বত্রিশ হয় তাহলে ওনারও বত্রিশ। আঠারোর নিচে সবাই শিশু। আর ত্রিশের ওপরে সবাই বুড়ো।
আসিফের মাথা ঘুরছে এই মেয়ের কথা শুনে। সে সাদির দিকে তাকিয়ে বলে
“এটা মেয়ে না এলিয়েন?
সাদি একটু হেসে বলে
” আমার আধ পাগল বউ।
আসিফের চোখ দুটো বড়বড় হয়ে যায়। সাদি হাসলো? বেচারা হাসতেও শিখে গেছে। মেয়েটা জাদু জানে।
আসিফ এবার মিহিকে বলে
“ওর কোনো দোষ নেই। তুই ই উস্কে দিয়েছিলি ওকে। যেটা অন্যায় করেছিস। নেক্সট টাইম এরকম ছোট খাটো বিষয়ে থানায় আসবি না।
মিহি দাঁড়িয়ে যায়। তাকায় সাদির মুখপানে। সাদি এখনো তাকালো না মিহির দিকে। মিহি গটগট পায়ে চলে যায়।
__
ছোঁয়াকে বাড়ির সামনে নামিয়ে দিতে বলেছে ছোঁয়া। সাদি বেশ অবাক হয়েছে। এই মেয়ে তো পেছন ছাড়ে না। আজকে হঠাৎ কি হলো এর? নিজে থেকেই বাড়ি যেতে চাইছে?
তবে প্রশ্ন করে না। চুপচাপ আছে থাকুক। একবার কথা বলা শুরু করলে থামানো যাবে না।
সিএনজি নিয়েছিলো সাদি।
একটা সেকেন্ডও সে রেস্ট নিতে পারে নি আধপাগল বউটার জন্য। তবে তার ক্লান্তি দূর হয়ে গিয়েছে। আধ পাগল সাথে থাকলে তার কখনোই ক্লান্ত লাগে না।
বাড়ির সামনে গাড়ি থামতেই ছোঁয়া নেমে পড়ে। সাদিও নামে ছোঁয়ার সাথে।
” দেখুন আব্দুল কুদ্দুসের বাপ। আপনি প্লিজ আমার পেছনে আসবেন না। আমার সাথে ঘুরঘুর করবেন না। আমি আব্বুকে কথা দিয়েছি। এইচএসসি শেষ না করে আপনার বাড়িতে যাবো না। আমি সরল মানুষ। আপনি ঘুরঘুর করেন মুখ ফুটে না করতে পারি না।
প্লিজ আর এমন করবেন না। আমি আব্বুকে তো আর বোঝাতে পারবো না আপনি কিভাবে পেছনে লেগে থাকেন।
ছোঁয়ার কথা শুনে সাদি হতদম্ভ। ডাইভার মিটমিট করে হাসছে।
চলবে