#হৃদয়হরণী
#পর্ব:৩২
#তানিশা সুলতানা
গিফট!
খুব ছোট্ট একটা শব্দ। তবে এই শব্দটার ওজন অনেক ভাড়ি। গিফট যে কোনো মানুষকে খুশি করতে সক্ষম। যে কোনো মানুষের মন খারাপ দূর করে দিতে পারে। এই যে ছোঁয়ার মনটা আনন্দে নেচে নেচে উঠছে। কারণ তার প্রেমিক পুরুষ তাকে গিফট দিয়েছে। বিয়ের পরে এই প্রথমবার লোকটা ছোঁয়াকে গিফট দিলো। সেই গিফটটার মূল্য কতো জানা নেই ছোঁয়ার তবে ছোঁয়ার কাছে তা কোটি কোটি টাকার সমান মূল্য।
বিবাহিত মেয়েদের সব থেকে শখের যে জিনিসটি তা হলো নাক ফুল। স্বামীর থেকে নাক ফুল সব মেয়েরাই আশা করে। ছোঁয়াও আবদার করেছিলো সাদির কাছে। কিন্তু সাদি দেয় নি। আর ছোঁয়াও এতো গুরুত্ব দিয়ে চায় নি। সাদির থেকে জোর করে নাক ফুল আদায় করা ছোঁয়ার জন্য কঠিন কোনো বিষয় নয়।
ডায়মন্ডের নাকফুল। দেখতে দারুণ। ছোঁয়া সেটা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখছে। আর সাদি ছোঁয়াকে দেখছে। সামান্য গিফট পেয়ে মানুষ এতোটাও খুশি হতে পারে?
“আমাকে পরিয়ে দিবেন?
নিঃসংকোচ আবদার। না করার সাধ্য সাদির নেই। সে ছোঁয়ার হাত থেকে নাক ফুলটা নেয়। ছোঁয়া চোখ বন্ধ করে মুখটা এগিয়ে দেয়। ছোঁয়ার নাকে থাকা ছোট্ট নাক ফুলটা খুলে নেয়। ছোঁয়া একটু ব্যাথা পেলেও শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।
এরপর সাদি খুব যত্ন নিয়ে ছোঁয়া নাকের বা পাশটায় থাকা ছোট্ট ছিদ্র দিয়ে নাক ফুলটা ঢুকিয়ে দেয়। ছোঁয়া গোলগাল মুখখানায় দারুণ মানিয়েছে নাকফুলটায়। পুরো মুখেরই যেনো অদল পাল্টে গেছে। অন্য রকম মোহনীয় লাগছে মেয়েটাকে।
ছোঁয়া চোখ খুলে হাসে। তাকায় প্রেমিক পুরুষের মুখপানে।
” সুন্দর লাগছে না?
প্রশ্ন করে সাদিকে। সাদিও মুচকি হাসে। ডান হাতটা রাখে ছোঁয়ার গালে।
“তুমি খুশি তো?
” আপনি আমার সাথে ভালো করে একটু কথা বললেই আমি খুশি হয়ে যাই”
সাদি বাম হাতটাও রাখে ছোঁয়ার অন্য গালে। দুই হাতে ছোট্ট মুখখানা উঁচু করে ধরে। ওষ্ঠ ছোঁয়ায় ললাটে। পরপর নাক ফুলের ওপরের ওষ্ঠ ছোঁয়ায়। কেঁপে ওঠে ছোঁয়া সত্তা। লজ্জায় রাঙা হয়ে ওঠে মুখখানা। আঁখি পল্লব খুলে তাকানো দায়। প্রেমিক পুরুষের প্রেমময় ছোঁয়া বুকে কম্পন শুরু করে দিয়েছে। চঞ্চল ছোঁয়ার চঞ্চলতা মিয়িয়ে গিয়েছে। মাথা থেকে দুষ্টুমি বুদ্ধি বুঝি বিলুপ্ত হয়ে গেলো?
স্বামীর স্বইচ্ছায় সনিধ্য পেয়ে মেয়েটা বুঝি বড় হয়ে গেলো? আর বুঝি দুষ্টুমি করবে না? এই বুঝি লক্ষী বউ হয়ে উঠলো?
সাদির ভাবনাখানা প্রকাশ করার আগেই ছোঁয়া রিনরিনিয়ে বলে ওঠে
“আপনার দাড়ি গুলো আমাকে বড্ড জ্বালাতন করে। কাতুকুতু দেয়। হাসি পায় আমার।
হাসি পেলে রোমাঞ্চ করবো কিভাবে? মুড নষ্ট হবে না?”
ছোঁয়ার কথায় সাদি ছোঁয়াকে ছেড়ে দেয়। এবার আর মুচকি হাসি নয়৷ ওষ্ঠদ্বয় মেলে দিয়ে খানিকটা শব্দ করেই হেসে ওঠে সাদি। এই মেয়ের থেকে ম্যাচুউরিটি আশা করেছিলো সে।
ছোঁয়া গালে হাত দিয়ে সাদির হাসি দেখছে। মাশাআল্লাহ মাশাআল্লাহ মাশাআল্লাহ
হাসলে মানুষটাকে অনেক সুন্দর লাগে।
বাম গালে টোল পড়ে। গোলাপি ওষ্ঠদ্বয় বড্ড মোহনীয় লাগে। হাসি দিয়ে নারীদের কাবু করতে পারবে সে। কিন্তু ছোঁয়া সেটা হতে দিবে? লঙ্কা পোড়া দিবে লোকটার চারপাশে
“আমি ছাড়া অন্য কোনো মেয়ের সামনে আপনার হাসা বারণ।
সাদির ছোঁয়ার নাক টেনে দিয়ে জবাব দেয়
” আমার শয়তান বউ জেলাস হবে এটাই তার কারণ
___
মানুষ গিরগিটির মতো রং কি করে বদলায়? এই তো সেই দিন ছোঁয়াকে কতো ভালোবাসে চুমু খেয়ে বিদেশে পাড়ি জমালো সাদি। ছোঁয়া ছোট্ট সত্তা ভেবে নিয়েছিলো তার বর বুঝি তাকে ভালোবেসে ফেলেছে। এবার থেকে দুঃখ ঘুচবে। কিন্তু তার কিছুই হলো না। কেটে গেছে তিনটে দিন অথচ সাদি একবার কলও করলো না। চিন্তা হয় না ছোঁয়ার?
সাবিনা বেগম তো একটু পরপর আঁচলে মুখ ঢেকে কেঁদে উঠছে। তার কান্না দেখে ছোঁয়ার বুকটা কেঁপে কেঁপে উঠছে।
সেলিম বিরক্ত।
খাবার টেবিলে সকলকেই খাবার পরিবেশন করছেন নাজমা বেগম। সাবিনা নিজের রুম থেকে বের হচ্ছে না। সিমি রান্নায় সাহায্য করেছে নাজমা বেগমকে। মমতা বেগমও একটু পরপর আহাজারি করে উঠছে।
সাজ্জাদ সেলিম এবং সিফাত খাচ্ছে। সিমি পরিকে খাওয়াচ্ছে। ছোঁয়া ভাতের থালায় হাত নাড়াচাড়া করছে। মুখে খাবার তুলতে পারছে না সে।
মেয়ের এই করুন অবস্থা এবং সকলের চিন্তিত মুখ দেখে সেলিম বিরক্তিতে চোখ মুখ কুঁচকে বলে ওঠে
“এতো ইরেসপন্সিবল ছেলে আমি জীবনে দেখি নি। বেয়াদব একটা। বাড়ির সকলে চিন্তা করবে এটা তার মগজে নেই?
সাজ্জাদ বিরক্ত হয়। কোনো একটা কারণে সাদিকে একদম পছন্দ করে না সেলিম৷ দুচোখে দেখতে পারে না।
বাবার কথায় ছোঁয়ার চোখে পানি চলে আসে। বেয়াদব কেনো বলবে?
কিন্তু বাবার মুখের ওপর জবাব দিতে পারে না।
সিফাত বলে
” আব্বু মোটেও সাদি বেয়াদব না। হতে পারে কাজে আটকে পড়েছে।
“সেটা বোঝাও তোমার বোনকে৷ বড় হয়ে গেছে সে। একা একা বিয়ে করেছে। এখন স্বামীর চিন্তায় শোক দিবস পালন করছে।
বাবার কথা শুনে ছোঁয়া মুখে ভাত পুরে দেয়। গাল ভর্তি করে ভাত নিয়ে পানি দিয়ে গিলে গিলে খাচ্ছে। নাজমা বেগম মেয়ের কান্ড দেখে কিন্তু কোনো জবাব দেয় না।
” বাবা এভাবে কেনো বলছো?
সিমি বলে ওঠে
“মুখে মুখল কথা বলবে না সিমি। বিরক্ত লাগে আমার।
সিমি আর কথা বলার সাহস পায় না। আর বাকি সবাইও কথা বলে না। চুপচাপ খেতে থাকে।
খাওয়া শেষে রুমে এসে সাদির নাম্বারে কল করে ছোঁয়া। যদিও বাংলাদেশের নাম্বারে কল যাবে না। বিদেশে গিয়ে নতুন সিম নিয়েছে সেই সিমের নাম্বার ছোঁয়ার জানা নেই। তবুও কল করে যাচ্ছে।
ইমু হোয়াটসঅ্যাপ ফেসবুক কোথাও সাদিকে একটিভ পাওয়া যাচ্ছে না। ভীষণ কান্না পাচ্ছে ছোঁয়ার। ওয়ালপেপারে থাকা সাদির ছবিখানার দিকে তাকিয়ে বিরবির করে বলে
” আপনাকে ভালোবেসে দুটো সেকেন্ডও আমি শান্তিতে থাকতে পারলাম না। একটা দিনও ভালো থাকতে পারি নি। খুব বেশি ভুল করে ফেলেছিলাম আপনাকে ভালোবেসে? সেই ভুলের শাস্তি দিচ্ছেন আমায়? আমি মরে গেলে কাকে জ্বালাবেন সাদি? কাকে এতো কষ্ট দিবেন?
মনটা পুরবে না আপনার?
ফোনটা ছুঁড়ে মারে ছোঁয়া। বিছানার এক পাশে অযত্নে পড়ে থাকে। বালিশে মুখ গুঁজে অশ্রু বিসর্জন দিতে থাকে। এটা ছাড়া তো আর কিছু করার নেই।
কতোখন কেঁদেছে জানা নেই ছোঁয়ার। তবে চোখ দুটো যখন একটু লেগে এসেছিলো, নিদ্রা ভর করেছিলো দুই চোখে তখনই বিকট শব্দে ফোনটা বেজে ওঠে।
চমকে এক লাফে বসে পড়ে ছোঁয়া। কাঁচা ঘুম ভাঙার ফলে বুক কাঁপছে মস্তিষ্ক কাজ করছে না। হাত এগিয়ে ফোনটা তুলে নেয়। স্কিনে বিদেশি একটা অচেনা নাম্বার ভেসে ওঠে।
সাদি বুঝি কল করলো?
পাগল ছোঁয়ার ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে ওঠে। তারাহুরো করে কল রিসিভ করে।
চলবে
#হৃদয়হরণী
#পর্ব:৩৩
#তানিশা সুলতানা
বিরহ মনের মধ্যে বাসা বেঁধেছে। অভিমানে বুক ভেসেছে সরল কন্যার। অশ্রুকণা আটকাতে ব্যর্থ সে। নিজেকে দুর্বল প্রমাণ করতে চায় না তবুও মনকে মানাতে পারছে না।
প্রেম তাকে সুখ এনে দিতে পারে নি। প্রেম তাকে ভালোবাসা দেয় নি৷ বরং প্রেম তাকে পাহাড় সমান দুঃখের সাগরে ভাসিয়ে দিয়েছে।
নিজের সত্তাকে পাগল ভাবতে বাধ্য করেছে।
কান্না করার একটা বাজে দিক হলো নাক দিয়ে পানি পড়বে, মাথা ব্যাথা করবে এবং আঁখি পল্লব ফুলে উঠবে। অতিরিক্ত ফর্সা মেয়েদের চোখ মুখ লাল হয়ে যাবে।
সরল কন্যার ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। এখন আঁখি পল্লবে বৃষ্টি কমেছে তবে নাক পিটপিট কমছে না। সমানে নাক টেনে যাচ্ছে।
সাদি বরাবরই ধৈর্যশীল। সে ধৈর্য সহকারে প্রেমিকা রূপি বউয়ের নাক টানার শব্দ শুনছে। মনে মনে এঁকে ফেলে এই মুহুর্তে ইডিয়েটটাকে কেমন দেখতে লাগছে?
সিঁচকাদুনি মেয়ে।
তবে সাদি মুখের ওপর বলতে পারলো না কথাটা। মনে মনে আওড়ালো বেশ কয়েকবার।
সে অপেক্ষায় আছে ইডিয়েটের থেকে কিছু শোনার। তবে ছোঁয়া কথাই বলছে না।
দীর্ঘ সময় পার হয়। সাদি শ্বাস টেনে শুধায়
“কেমন আছো?
প্রেমিক পুরুষের মধুর সুরের কথা মন গলিয়ে দেয় ছোঁয়ার। তবে অভিমান কমে না। আবারও ঠোঁট উল্টে কেঁদে ফেলে। এতোদিন পরে মনে পড়েছে তার? জানতে ইচ্ছে হয়েছে ” কেমন আছে?”
এই বদ লোকটার সাথে কথা বলাই উচিত না।
আবারও ছোঁয়ার কান্নার শব্দে সাদি বিরক্ত হয়। নাক মুখ কুঁচকে বলে
“ওকে রাখছি আমি।
” হ্যাঁ রাখুন। কথা বলবো না আপনার সাথে। সারাক্ষণ কথা বলবো না, ছেড়ে দিবো এমন ভয় কেনো দেখান? আপনার প্রতি একটু বেশিই দুর্বল বলে? আমার দুর্বলতা জেনে গেছেন বলে? ভেবে নিয়েছেন আপনি যাই করবেন পাগল ছোঁয়া সারাজীবন আপনার লেজ ধরে দাঁড়িয়ে থাকবে।
বলতে বলতে শব্দ করে কেঁদে ওঠে ছোঁয়া। সাদির ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে ওঠে। ইদানীং এক অদ্ভুত রোগ বাসা বেঁধেছে বুকের ভেতর। সারাক্ষণ মুচকি হাসি চলে আসে। গম্ভীর হয়ে থাকতেই পারছে না।
এই তো মিটিং এর মধ্যে হুট করে সাদি হেসে ওঠে। একটু শব্দ করেই হেসেছিলো। বস সহ সকলেই হা করে তাকিয়ে ছিলো সাদির। দিকে। ভীষণ লজ্জায় পড়ে গিয়েছিলো সাদি। পাগল ছোঁয়া সাদমান চৌধুরীকেও পাগল বানিয়ে দিয়েছে৷
ছোঁয়ার নাক টানার শব্দে ভাবনার জগত থেকে বের হয়ে ছোঁয়াতে মনোযোগ দেয় সাদি। বুকে বালিশ জড়িয়ে আধশোয়া হয়।
“কাঁদে না জান।
কথা শুনো।
ছোঁয়া কান্না থামায়। প্রেমিক পুরুষের মুখের জান ডাকটাতে যে নেশা মেশানো আছে। ছোঁয়ার ছোট্ট সত্তাকে নারিয়ে দিতে সক্ষম সেই নেশা।
বিছানায় টিস্যুর ছড়াছড়ি। কেঁদেছে আর নাক পরিষ্কার করেছে যে।
টিস্যু বাক্সে শেষ দুটো টিস্যু আছে। একটা নিয়ে নেয় ছোঁয়া। ভালো করে নাক এবং চোখের পানি মুছে নেয়।
” এতো কাজের চাপ ছিলো। বিরক্ত হয়ে গিয়েছিলাম। তাই কল করি নি৷
ছোঁয়া ঢোক গিলে বলে
“বড় মায়ের সাথে কথা বলেছেন?
” হুমম
মায়ের সাথে কথা বলেই তোমাকে কল করলাম৷
“আমাকে এতো জ্বালান কেনো আপনি?
” এখনো তো শুরুই করি নি জ্বালানো। এইচএসসিটা শেষ করো তারপর তোমাকে জ্বালানোর পিএইচডি দেখাবো।
লজ্জা পায় ছোঁয়া। চোখ দুটো বন্ধ করে ফেলে। কিন্তু এখানে লজ্জার কি হলো এটা নিজেও বুঝে না। ইদানীং লজ্জা নামক শব্দটা একটু বেশিই ঘায়েল করছে ছোঁয়াকে।
লজ্জা কমাতে ছোঁয়া রিনরিনিয়ে জিজ্ঞেস করে
“ফিরবেন কবে?
” কালকে।
“আমি কিন্তু আপনার সাথে থাকবো। এখানে থাকবো না আমি। আমাকে না রাখতে চাইলে থানা পুলিশ করবো। কাঠ কাঠ বলে দিলাম।
আবারও হাসে সাদি।
” আচ্ছা থাকবে।
“আপনাকে আমি ভালোবাসি।
” জানি আমি।
“আপনি বাসেন না?
” জানি না।
“জানতে হবে। আমি একা একা অনেকদিন ভালোবেসেছি এবার আপনিও একটু বাসুন না। কতোকাল একা একা পাগলামি করবো? একটু সঙ্গ চাই আমার।
” আচ্ছা
গুড নাইট। কাল দেখা হবে।
সাদি কল কেটে দেয়। ছোঁয়া হতাশার নিঃশ্বাস ফেলে। লোকটা এমন কেনো? একটু ভালোবাসলে কি হবে?
“ভালোবাসা লাগবে না আমার। শুধু আমার হয়ে থাকুক। আমার কাছে থাকুক। আমি তাকে দু চোখ ভরে সারাজীবন দেখতে পারলেই হলো। ভালোবাসা লাগবে না।
___
মনটা ভীষণ খুশি ছোঁয়ার। আজকে যে সাদি ফিরবে। নাজমা বেগমের গাল ধরে ঝুলে আছে ছোঁয়া। নাজমা বেগমের দুই হাতো ময়দা লেগে আছে তাই ছোঁয়াকে ছোটাতে পারছে না নিজের থেকে।
” ছোঁয়া ছাড় আমায়। বাঁদরের মতো কেনো ঝুলছিস?
ছোঁয়া টুপ করে মায়ের গালে দুটো চুমু খেয়ে নেয়।
“আমাকে ভালোবাসি বলো। নাহলে ছাড়বোই না তোমায়।
” ভালোবাসি ছাড় এবার।
“রেগে নেই তো আমার ওপর? অবশ্য রেগে থাকলেও চলবে। যখন আমার বেবি হবে বেবির মুখ দেখে আর রাগ করতে পারবে না।
নাজমা কটমট চোখে তাকায় মেয়ের দিকে।
“সর আমার সামনে থেকে। কাজ করতে দে।
ছোঁয়া নাজমা বেগমের নাকে চুমু খেয়ে ছেড়ে দিয়ে এক দৌড়ে চলে যায়। নাজমা বেগম মুচকি হাসে।
ছোঁয়া এবার বাবার রুমে ঢুকে। সেলিম অফিসের জন্য তৈরি হচ্ছিলো। ছোঁয়া এগিয়ে দিয়ে বাবার ট্রাই হাতে নিয়ে বেঁধে দিতে থাকে। সেলিম সরু চোখে মেয়ের দিকে তাকিয়ে থাকে।
” আব্বু আমি রিয়েলাইজ করলাম। তোমার কথা না শুনে সাদুকে বিয়ে করে ভুল করেছি। আমি তো ছোট বলো। কিউট একটা বেবি না? ভুল তো করেই ফেলেছি। এবার আমার ওপর রাগ করে থাকলে তো আর ভুলটা সঠিক হয়ে যাবে না তাই না?
শেষবারের মতো আমাকে ক্ষমা করো। এই যে তোমার চুল ছুঁয়ে বললাম আর জীবনেও ভুল করবো না। পাক্কা প্রমিজ।
মেয়ের কথা বলার ভঙিমা দেখে হেসে ফেলে সেলিম। আলতো হাতে জড়িয়ে ধরে ছোঁয়াকে। মাথায় চুমু খায়।
“রেগে নেই আমি। তবে আমি চাই তুমি এইচএসসি শেষ করো তারপর এসব নিয়ে ভাবো। দুটো বছর পুরোপুরি নেই। এই দিনগুলো পড়ালেখার পেছনে ব্যয় করো।
” তুমি যেমনটা বলবে। তেমনটাই হবে।
__
সাদা কলেজ ড্রেস পড়ে মাথায় সাদা হিজাব জড়িয়ে দুই কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে কলেজের দিকে যাচ্ছে ছোঁয়া। রিকশা পায় নি আজকে। তাই পায়ে হেঁটেই যেতে হচ্ছে। কলেজ শেষে সাদির বাড়িতে যাবে। ইসস কতোদিন পরে লোকটাকে দেখবে। খুশিতে মনটা লাফাচ্ছে ছোঁয়ার।
“তুমি ছোঁয়া?
হঠাৎ পেছনে থেকে কারো ডাক শুনে থেমে যায় ছোঁয়া। ঘাড় বাঁকিয়ে তাকায় পেছনে।
চলবে