#হৃদয়হরণী
#পর্ব:২৪
#তানিশা সুলতানা
প্রিয় মানুষটার পাশে অন্য কাউকে সয্য করার ক্ষমতা হয়ত পৃথিবীর কোনো নারীরই নেই। সাদির পাশে অন্য একটা মেয়েকে দেখে কিছুখনের জন্য স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলো ছোঁয়া। মস্তিষ্ক ফাঁকা ফাঁকা লাগছিলো। নিজের ভরটা সামলে উঠতে পারছিলো না।
রাস্তার এক কোণে বসে পড়ে ছোঁয়া। দুই চোখ বেয়ে টপটপ করে পানি গড়িয়ে পড়ছে। সামনের দৃশ্যটা কি সত্যি? এমনটা হতে পারে?
একটা মানুষকে নিজের সবটুকু উজাড় করে ভালোবাসলো আর সেই মানুষটা সামান্য একটু মায়াও করলো না ছোঁয়ার প্রতি?
ভালোবাসা কি এমনই?
আর কতোটা নিচে নামলে সাদির ভালোবাসা পেতো ছোঁয়া?
মানুষ এমন কেনো? যার ভালোবাসা পাওয়া কখনো সম্ভব নয় আমরা তাকেই কেনো ভালোবেসে ফেলি? জীবনটা কেনো ওলটপালট হয়ে যায়?
রাস্তার ঠিক বিপরীত পাশে রেস্টুরেন্টের সামনে সাদির কাঁধে মাথা রেখে কেঁদে যাচ্ছে একটা রমনি। সাদি তাকে সরাচ্ছেও না আবার ধরছেও না। গম্ভীর হয়ে তাকিয়ে আছে শুধু। মেয়েটা কাঁদতে কাঁদতে দুই হাতে জাপ্টে ধরেছে সাদিকে। যে কেউ দেখলে অনায়াসে বলে দিতে পারবে এই দুজনের মধ্যে গভীর সম্পর্ক আছে।
ছোঁয়া এসেছিলো সাদির কাছে। তিন দিন হয়ে গেলো সাদিকে দেখে না ছোঁয়া। সকালে ঘুম থেকে উঠতে পারে না বলে পড়তেও আসে না।
কলেজ ফাঁকি দিয়ে সাদির অফিসে চলে এসেছিলো সাদিকে দেখতে। কয়েকবার কলও করেছে কিন্তু সাদি রিসিভ করে নি।
সাদি মেয়েটাকে নিয়ে রেস্টুরেন্টের ভেতরে চলে যায়। ছোঁয়া শূন্য রাস্তার দিকে তাকিয়ে থাকে। আকাশে মেঘ জমেছে। কালো মেঘগুলো সূর্যকে ঢেকে দিয়েছে। রাস্তাঘাটে জনমানব কমে এসেছে।
ছোঁয়া নিজেকে আটকাতে পারে না চিৎকার করে কেঁদে ওঠে। তখনই ঝমঝম করে বৃষ্টি পড়তে থাকে। বৃষ্টির স্রোত বাড়তে থাকে। তার সাথে বাড়তে থাকে ছোঁয়ার কান্নার গতি। এই মুহুর্তে জানটা বেরিয়ে গেলেও মনে হয় এতোটা কষ্ট হতো না। হৃদয়টা ক্ষত বিক্ষত হয়ে গেছে। আফসোস গুলো কান্না হয়ে বেরিয়ে আসছে “ইসসস মানুষটার হৃদয়হরণী হতে পারলাম না”
তাকে না পাওয়ার যন্ত্রণা কি করে সয্য করবে?
কতোখন কেঁদেছে জানা নেই ছোঁয়ার। বৃষ্টি কমে এসেছে। কাঁদায় মাখামাখি হয়ে গেছে ছোঁয়া। ব্যাগে থাকা ফোন টাকা বই সবই ভিজে গেছে।
উঠে দাঁড়ায় ছোঁয়া। ধীর গতিতে হাঁটতে থাকে। বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে তবুও ছোঁয়া ভয় পাচ্ছে না। কিন্তু অন্য সময় হলে ঠিকই ভয়ে সিঁটিয়ে যেতো।
বাসায় কাছাকাছি আসতেই ছোটমট একটা এক্সিডেন্ট হয় ছোঁয়া। মেইন রোডে এলোমেলো ভাবে হাঁটার ফলো ট্রাকের নিচে পড়তে পড়তে বেঁচে যায়। তবে ট্রাকের ধাক্কায় সিঁটকে পড়ে যায়। ডান পা হাত এবং কপালে আঘাত পায়। গাছের সিকড়ে পা আটকে পা বেকায়দায় পড়ে ব্যাথা বেশি পায়।
অনেকখন বৃষ্টিতে ভেজার ফলো হাত পায়ে বোধ কমে গেছে। সেখানেই মুখ থুবড়ে পড়ে থাকে ছোঁয়া।
বৃষ্টি যেনো কমার নাম নিচ্ছে না। একটু কমলেও এখন আবার বেড়ে গেছে।
সিফাত অফিস থেকে ফিরছিলো। স্পিড খেয়েছে বোতলটা ফেলবে বলে বাইরে তাকাতেই ছোঁয়াকে দেখতে পায়। মুহুর্তেই বুক কেঁপে ওঠে সিফাতের। সে গাড়ি থামিয়ে দৌড়ে ছোঁয়ার কাছে যায়। হাত পা ঠান্ডা বরফ হয়ে গেছে। সেন্স নেই। কান্না করে ফেলে সিফাত। পাজা করে কোলে তুলে নিয়ে গাড়ির পেছনে শুয়িয়ে দেয়। তারপর কল করে সিমিকে। কল রিসিভ হয় না। এবার সিফাত মেসেজ করে দেয়। হাসপাতালে আসতে বলে। আর সিফাত এখান থেকেই হাসপাতালে চলে যায় ছোঁয়াকে নিয়ে।
কতোখন পড়ে ছোঁয়া চোখ মেলে তাকিয়েছে জানা নেই ছোঁয়ার। তবে চোখ খুলতেই বাড়ির সকলকে দেখতে পায়। নাজমা সিমি আর সাবিনা ছোঁয়ার পাশে বসে কেঁদেই যাচ্ছে। সাজ্জাদ সেলিম আর সিফাত ওরা ফ্যাকাশে মুখে দাঁড়িয়ে আছে। ছোট্ট পরিটাও ছোঁয়ার বেডে বসে আছে।
সবার দিকে নজর বুলিয়ে মাথার ওপরে নীরব হয়ে স্থির থাকা সিলিং ফ্যানটার দিকে তাকিয়ে থাকে ছোঁয়া।
বেশ বুঝতে পারছে ডান পাশে ব্যান্ডেজ করা হাতে ক্যানেলো।
ছোঁয়াকে চোখ খুলতে দেখে শব্দ করে কেঁদে ওঠে নাজমা। মেয়ের চোখ মুখ ছুঁয়ে দেয়।
মেয়ের সাথে ভালো করে কথা বলেন না তিনি। আদর করে খাইয়ে দেন না বিয়ে হাওয়ার পর থেকে। সিমিও তেমন কথা বলে না ছোঁয়ার সাথে। ওদের মনে ছোঁয়ার প্রতি রাগ জমে আছে সাদিকে বিয়ে করার জন্য।
মায়ের উত্তেজনা দেখে ছোঁয়া কথা বলতে যায়। কিন্তু গলা দিয়ে আওয়াজ বের হয় না। চিৎকার করে কান্না করার ফলে গলা ভেঙে গেছে।
তখন হুরমত করে সাদি ঢুকে পড়ে। উসকোখুসকো চুল বাসায় পড়ার স্যান্ডেল টাওজার এবং টিশার্ট পড়েই এসেছে।
“ও ঠিক আছে?
হাঁপাতে হাঁপাতে বলে সাদি। সে যে দৌড়ে এসেছে বোঝাই যাচ্ছে।
সাবিনা বেগম সাদির কাছে যায়। ছেলেকে জড়িয়ে ধরে
” আব্বা তুই চিন্তা করিস না। ও ঠিক আছে।
সাদি গম্ভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ছোঁয়ার দিকে। ছোঁয়া একবারও তাকায় নি সাদির দিকে। তার চোখ দুটো বন্ধ। চোখের কুর্নিশ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে
সাদি এগিয়ে যায়। গম্ভীর গলায় ধমকে বলে
“বৃষ্টিতে কেনো ভিজেছো? কোথাও দাঁড়ালেও তো পারতে। সব সময় তোমার পাকনামি করতে হবে। ইচ্ছে করছে চাপকে সোজা করতে।
” আহহ সাদি কি করছো? মেয়েটা অসুস্থ।
সাজ্জাদ ছেলেকে ধমক দিয়ে বলে।
“শখ করে অসুখ বাঁধিয়েছে। ইডিয়েট একটা
সিফাত সাদিকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই ছোঁয়া ভাঙা ভাঙা গলায় বলে
” বাবা আমি বাড়ি যেতে চাই।
সেলিম এগিয়ে আসে। ছোঁয়া পাশে বসে। ছোঁয়া সেলিমের হাত ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলে
“আমাকে বাড়ি নিয়ে চলো বাবা। আমি ম*রে যাচ্ছি।
মেয়ের কান্না দেখে সেলিমের চোখে পানি চলে আসে। নিজেই ক্যানেলো খুলে মেয়েকে কোলে তুলে নেয়।
” ভাই তুমি ফর্মালিটি গুলো পূরণ করে এসে।
আর সিফাত গাড়ি বের করো।
সিফাত দৌড়ে চলে যায়। সেলিম বেরিয়ে যায়। পেছন পেছন যায় নাজমা আর সিমি। সাজ্জাদ চলে যায়। সাদি পরিকে কোলে তুলে নেয়। পরি মিষ্টি করে হেসে সাদির গালে চুমু খায়।
“পাপা আমার সাথে যাবে না?
সাদি মাথা নারাম। পরি আরও একটা চুমু খায়।
সাবিনা ছেলের হাত ধরে।
বাড়ি ফিরে ছোঁয়াকে তার রুমে শুয়িয়ে দেওয়ার পরে ছোঁয়া শুধু একটাই কথা বলেছে
” আমি ঘুমবো”
সবাই চলে গেছে রুম থেকে। সাদি যায় নি। সে ছোঁয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।
ছোঁয়া এখন পর্যন্ত সাদির দিকে তাকায় নি।
সাদি বেশ বুঝেছে কিছু একটা হয়েছে৷
সাদি ছোঁয়ার পাশে বসে পড়ে। ছোঁয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। ছোঁয়া চোখ দুটো বন্ধ করে আছে।
“আমি তোমার পায়ে চুমু খেলে ব্যাথা সেরে যাবে কি?
ছোঁয়া জবাব দেয় না। সাদি দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। চোখ বন্ধ করে ছোঁয়ার কপালে শব্দ করে চুমু খায়।
কপালে কপাল ঠেকিয়ে ফিসফিস করে বলে
” এটা জ্বর কমানোর জন্য।
ছোঁয়া শক্ত করে থাকে।
তারপর সাদি ছোঁয়ার হাতে চুমু খায়। তারপর পায়ের কাছে হাঁটু মুরে বসে অনেক গুলে চুমু খায়। পঞ্চাশ টা হবে বা তারও বেশি। সাদি গুণে নি ছোঁয়াও গুনে নি।
সাদি ছোঁয়ার পায়ে আলতো করে গাল ছুঁয়িয়ে বসে থাকে
চলবে
#হৃদয়হরণী
#পর্ব:২৫
#তানিশা সুলতানা
অভিমানের পাল্লা ভাড়ি হয়ে গেলে সহজে নারীর মন গলে না। নারী যেমন নিঃস্বার্থ ভাবে ভালোবাসতে জানে ঠিক তেমন ভাবেই প্রচন্ড অভিমান করতেও জানে।
এই যে ছোঁয়া অভিমান করেছে। ঠিক অভিমান বলা চলে না এটাকে। নিজেকে সরিয়ে নিয়েছে। মনে মনে কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সাদিকে আর জ্বালাবে না। সাদির সাথে কথাও বলবে না। তাকে নিয়ে ভাববে কিন্তু তাকে বুঝতে দিবে না। ভালোবাসবে দূর থেকে অধিকার দেখাবে না। মানুষটা যেভাবে ভালো থাকতে চায় থাকুক। সে অন্য কাউকে নিয়ে সুখে থাকতে চাইলে থাকবে।
ছোঁয়া এতোদিনে একটা কথা বুঝে গেছে
“জোর করে পাগলামি করে শুধু পাগল উপাধিটাই পাওয়া যায়।
কারো ভালোবাসা না”
তাই তো এতোটা জোর করে পাগলামি করেও সাদির মনে জায়গা করে নিতে পারলো না।
সাদি এখন নির্বাক দৃষ্টিতে ছোঁয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। ছোঁয়া কোনো রেসপন্স করছে না। চোখ বন্ধ করে চুপচাপ শুয়ে আছে। পরি সাদির কোলে বসে সাদির দাঁড়ি নিয়ে খেলছে। কখনো টানছে কখনো হাত বুলাচ্ছে। চাপ দাঁড়ি গুলো একটুখানি বড় হয়েছে। ভেবেছিলো আজকে সেলুনে যাবে কিন্তু ছোঁয়ার জন্য যেতে পারলো না।
নাজমা বেগম গরম গরম ভাত নিয়ে এসেছে ইলিশ ভাজা দিয়ে। সাথে কাঁচা মরিচ। এটা ছোঁয়ার প্রিয়।
ছোঁয়ার পায়ের কাছে বসে ছিলো সাদি। নাজমা বেগম ছোঁয়ার মাথার কাছে বসে।
“আব্বা যাও খেয়ো এসো”
সাদি গম্ভীর গলায় জবাব দেয়
“পরে খাবো
” তোমার জন্য তোমার বাবা চাচা ভাই অপেক্ষা করছে। যাও
এবার আর সাদি না করতে পারে না। চুপচাপ পরিকে কোলে নিয়ে চলে যায়৷
সাদি যেতেই ছোঁয়া চোখ খুলে। নাজমা তাকে উঠে বসতে সাহায্য করে। ছোঁয়া শুধু এক ঢোক পানি খায়।
নাজমা এতো করে জোর করেও একটা দানা ভাত মুখে দিতে পারে না। ছোঁয়া পানি খেয়েই আবার শুয়ে পড়েছে। নাজমা এতোবার ডাকছে এতো কথা বলছে কিন্তু ছোঁয়া কোনো জবাব দিচ্ছে না। ভাড়ি অবাক হয় নাজমা বেগম। পায়ে কি বেশি ব্যাথা করছে?
এমন চুপচাপ থাকার মেয়ে তো তার নয়। ১০২° জ্বর নিয়েও মেয়েটা অনবরত কথা বলে চলে। হাত কেটে গিয়েছিলো একবার৷ চারটা সেলাই পড়েছিলো তবুও সে চুপচাপ থাকে নি। বরং কথা বলতে বলতে পাগল করে দিচ্ছিলো সকলকে। একটু ব্যাথা লাগলেই কাঁদতে কাঁদতে অস্থির করে তুলছিলো সকলকে। আর আজকে সেই মেয়ে এতোটা চুপচাপ হয়ে গিয়েছে?
হয়ত আজকে একটু বেশিই ব্যাথা পেয়েছে। নাজমা বেগম ভাতের থালা রেখে কপালে হাত দেয়। জ্বর খুব বেশি নেই। কপালে চুমু খেয়ে লাইট অফ করে দিয়ে চলে যায় সে।
নাজমা বেগম চলে যেতেই ছোঁয়া চাপা স্বরে কান্না করতে থাকে।
সাদি দুই তিন বার রুটি মুখে নিয়েছে। গলা দিয়ে খাবার নামছো না তার। সাজ্জাত সেলিম সিফাত কেউ ই খেতে পারছে না। মমতা বেগম তো আহাজারি করে কেঁদেই চলেছে। বাড়ির ছোট সদস্য ছোঁয়া। পরিও ছোট কিন্তু নীরব। আর ছোঁয়া চঞ্চল। চঞ্চল প্রকৃতির মানুষ হঠাৎ চুপচাপ হয়ে গেলে সকলের মনেই দাগ কেটে যায়।
সাবিনা বেগম মমতা বেগমের ভাত মেখে দিয়ে মাছের কাটা বেছে দিতে থাকে
“মা আপনাকে ঔষধ খেতে হবে। অল্প ভাত খেয়ে নিন।
অমত করে মমতা বেগম। কাঁদতে কাঁদতে অল্প ভাত মুখে দিতে থাকে।
সাদি হাত ধুঁয়ে উঠে পড়ে। কেউ তাকে কিছু বলে না।
সাদি চলে যায় ছোঁয়ার রুমে। দরজা খোলার আওয়াজে ছোঁয়া কান্না থামিয়ে ফেলেছে। দরজা বন্ধ করে ছোঁয়ার পাশে এসে বসে সাদি। লাইট জ্বালায় না। হয়ত ছোঁয়ার সমস্যা হবে। মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।
তখনই সাদির ফোন বেজে ওঠে। পকেট থেকে ফোন বের করে স্কিনে তাকাতেই দেখতে পায় ” হিমি” নামটা জ্বল জ্বল করছে। ছোঁয়াও হালকা চোখ খুলে দেখেছে। নামটা দেখে বুকের ব্যাথা আরও বাড়তে থাকে। কান্না আটকে রাখা দায় হয়ে পড়ে৷
সাদি কল কেটে দেয় এবং ফোনটা বন্ধ করে ছোঁয়ার পাশে শুয়ে পড়ে। ছোঁয়ার মাথাটা নিজের বুকের ওপর রাখতে যেতেই ছোঁয়া শক্তি দেখিয়ে সরে যায়। তাতে পায়ে বেশ ব্যাথা পায়। সাদি অবাক হয়ে উঠে বসে। এই মেয়েটা কাল ওবদি সাদির কাছে আসার জন্য পাগল ছিলো আর আজকেই কি হলো?
“আমি কি করেছি জানি না। তবে সরি।
এমন কেনো করছো তুমি?
ছোঁয়া সাদির কথায় কান দেয় না। সে চিৎকার করে বাবা বলে ডেকে ওঠে। সাদি কপাল কুঁচকে ফেলে
” আশ্চর্য তোমার বাবাকে ডাকছো কেনো?
ছোঁয়া জবাব দেয় না। সে আগের মতোই চিৎকার করে বাবা বলে ডাকছে।
ছোঁয়ার চিৎকারে সাজ্জাত সহ বাড়ির সকলে চলে এসেছে দরজার সামনে। কিন্তু দরজা বন্ধ। মমতা বেগমের আহাজারির কান্না বেড়ে গেছে। সকলে দরজা ধাক্কাছে এবং ছোঁয়াকে ডাকছে। সাদি নিজের রাগ কন্ট্রোল করতে পারছে না।
সাদি ছোঁয়ার গাল চেপে ধরে দাঁতে দাঁত চেপে বলে
“আমাকে কঠোর হতে বাধ্য করো না ইডিয়েট। পরিণাম খুব খারাপ হবে।
ছোঁয়া এবার শব্দ করে কেঁদে ওঠে। চোখ দুটো ফুলে গেছে ছোঁয়া। গাল লাল হয়ে গেছে।
সাদিও এবার চিৎকার করে বলে ওঠে
” কি হয়েছে আমায় না বললে বুঝবো কি করে?
ততখনে সিফাত দরজা খুলে ফেলেছে চাবির সাহায্যে।
সাদির চিৎকারের সকলের ভয় আরও বেড়ে গেছে। সেলিম গিয়ে ছোঁয়াকে জড়িয়ে ধরে। সাজ্জাদ কঠিন দৃষ্টিতে সাদির দিকে তাকায়
“কি হয়েছে?
ছোঁয়া হেঁচকি তুলতে তুলতে বলে
” আমি তোমাদের সাথে ঘুমবো।
ব্যাস সাদির রাগটা আরও বেড়ে যায়। মেয়েটা বড্ড বার বেড়েছে।
ছোঁয়ার টেবিলে থাকা কাঁচের গ্লাস এবং জগ ফেলে দিয়ে হনহনিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায় সাদি।
সকলে সাদির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। দুজনের মধ্যে কিছু একটা হয়েছে এটা বেশ বুঝতে পারছে সকলে।
“আমার সাদুর কি হইছে? আমার সাদু তো রাগে না। ওরে তোরা কি বলছিস?
বলতে বলতে সাদির পেছনে যায় মমতা বেগম।
__
নতুন ভোর নতুন দিনের সূচনা। সাদির দিন কাল একটুও ভালো যাচ্ছে না। সেই দিনের পরে কেটে গেছে এক সপ্তাহ। একই বাড়িতে থেকে ছোঁয়ার দেখা পাওয়া দায় হয়ে উঠেছে৷ সারাক্ষণ রুমে বসে থাকে। কারো সাথে তেমন কথা বলে না। সাদি সামনে গেলেই চোখ বন্ধ করে ফেলে। হাজার ডাকলেও সাড়া দেয় না।
নিজেকে পাগল পাগল লাগছে সাদির। অফিসে মন টিকছে না। কাজে মন দিতে পারছে না। খেতে পারছে না। গোছালো সাদি পুরো অগোছালো হয়ে গেছে।
এটা বাড়ির সকলে খেয়াল করলেও এই বিষয়ে কেউ কোনো কথা বলছে না।
ছোঁয়া এখন মোটামুটি সুস্থ। হাঁটতে পারে না ভালোভাবে। তবে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে একটু আতটু চলাফেরা করতে কারে।
সাদি অফিসে যাওয়ার পরে সে রুম থেকে বের হয়। মমতা বেগম মা বড়মা এবং আপির আদর খায়। তারা সারাদিন ছোঁয়ার পেছনে লেগে থাকে। ছোঁয়াকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে।
আবার সাদি আসার আগে রুমে চলে যায়।
আজকেও গল্প করছিলো মমতা বেগমের সাথে। ওদের সামনে বসে পড়ি খেলছে।
এমন সময় কলিং বেল বেজে ওঠে। এই সময়ে কে আসলো? মনে প্রশ্ন জাগে ছোঁয়ার।
মমতা বেগম উঠে দরজা খুলে দেয়। সাদি এসেছেম উসকোখুসকো চুল লাল লাল চোখ দুটো ভীষণ ক্লান্ত দেখাচ্ছে সাদিকে।
শার্টের তিনটে বোতাম খোলা।
“দাদুভাই তুমি এই সময়ে?
সাদি জবাব দেয় না।
সাদির পেছন থেকে বেরিয়ে আসে ইরা এবং রিমি। মমতা বেগমকে সালাম দিয়ে ভেতরে ঢুকে পড়ে।
চলবে