#হৃদয়হরণী
#পর্ব:১৮
#তানিশা সুলতানা
শুক্রবারের সকাল। অফিস নেই স্কুল কলেজ সব বন্ধ। তবুও দুই মিনিট স্বস্তির নেওয়ার সময় নেই। কারণ পুরো এক সপ্তাহের কাজ শুক্রবারে গুছিয়ে রাখতে হয়। এই যে সাদি সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে রান্নার কাজে লেগে পড়েছে। ওয়াশরুমে বালতিতে পানি নিয়ে তাতে জামাকাপড় ভিজিয়ে রেখে এসেছে। রান্না শেষে সেগুলো কাঁচতে হবে।
ছোঁয়াও থেমে নেই। সেও সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠেছে। তবে তার কোনো কাজ নেই। সে ফ্রী। তার একমাত্র কাজ হচ্ছে তার সুইট কিউট বরটাকে জ্বালানো। তাকে একটুখানি রোমান্টিক করার দায়িত্ব পড়েছে তার ওপরে।
আয়নার সামনে বসে নিজেকে পরিপার্টি করে সাজিয়েছে ছোঁয়া। সময় নিয়ে সুন্দর করে সেজেছে। সাজের বেলায় সে কখনোই তারাহুরো করে না। মানুষ সাজেই তো নিজেকে সুন্দর দেখাতে। তো তারাহুরো করে কেনো নিজেকে সুন্দর করে তুলবো?
আস্তে আস্তে রয়েসয়ে সুন্দর করে তুলবে।
এই যে ছোঁয়া সেই ভোর পাঁচটায় ঘুম থেকে উঠেছে। মাসজনিত কারণে নামাজ মিস গিয়েছে। তাই গোছল সেরে সাজতে বসেছে
এখন সকাল সাতটা বেজে চল্লিশ মিনিট। এখন তার সাজ শেষ হলো
নীল রংয়ের থ্রি পিছ। চোখে মোটা করে কাজল আর ঠোঁটে টকটকে লাল লিপস্টিক। দুই হাত ভর্তি নীল কাঁচের চুরি।
লম্বা চুল গুলো সুন্দর করে আঁচড়ে ছেড়ে দিয়েছে।
লাস্ট বার আয়নায় নিজেকে দেখে গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে যায় কিচেনে৷ সেখানে ছোঁয়ার সুন্দর সেফ খুবই মনোযোগ দিয়ে রান্না করছে৷ ছোঁয়া প্রথমে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে সাদিকে। টকটকে ঠোঁট দুটো লাগিয়ে দেয় সাদির সাদা টিশার্টে। সাদি কোনো রিয়াকশন করে না। চুপচাপ রুটি বেলতে থাকে। যেনো সে জানেই না এখানে কেউ এসেছে। এবং তাকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরেছে।
ছোঁয়া বিরক্ত হয়ে ছেড়ে দেয় সাদি। পাথর লোক একটা। আরে ভাই তোর বউ তোকে জড়িয়ে ধরেছে তুই একটু মুচকি হেসে বউকে জড়িয়ে ধর। একটু প্রশংসা কর। তা না হনুমানের মতো নো রিয়াকশন।
চোখ মুখ কুঁচকে সাদির পাশে চুলার কাছাকাছি বসে পড়ে ছোঁয়া।হাতের চুড়ি গুলো নারতে নারতে বলে
“আমাকে আজকে শাবনুরের মতো লাগছে না? লাগছে জানি আমি। আমি কিন্তু দেখতে সুন্দরী। নায়িকা হতে পারতাম আমি। হলাম না। অবশ্য এখনো চাইলে হতে পারি।
সাদি ঠোঁটটা একটু বাঁকায়। যেনো তাচ্ছিল্য হাসতে চাইলো। ছোঁয়া গাল ফুলায়। বিশ্বাস করলো না সাদি?
” সত্যিই আমি সুন্দরী। আমি নায়িকা হওয়ার ক্ষমতা রাখি।
“হুমম জায়েদ খানের।
সাদি ছোট্ট করে বলে। ছোঁয়া চোখ দুটো বড়বড় করে ফেলে। অপমান করলে না কি?
এক লাফে নেমে পড়ে। উদ্দেশ্য ঝগড়া করবে সাদির সাথে। আঙুল তুলে কিছু বলতে যেতেই থেমে যায় ছোঁয়া। সে তার ব্যস্ত সেফের ওপর বড়সর একটা ক্রাশ খেলো এখনই।
ঘামে ভিজে গেছে লোকটা। কপাল বেয়ে চুৃয়িয়ে চুয়িয়ে ঘাম গাল বেয়ে গলার ওই উঁচু কন্ঠনালির ওপর দিয়ে বেয়ে শার্টের ভেতরে ঢুকে যাচ্ছে।
গোলাপি ঠোঁট জোড়া একটু পরপরই জিভ দিয়ে ভিজিয়ে নিচ্ছে। গরমে যে লোকটার কষ্ট হচ্ছে বুঝতে অসুবিধা হয় না ছোঁয়ার।
তবে এই মুহুর্তে লোকটাকে খুবই আকর্ষণীয় লাগছে। লোকটা কি জানে? তার বিয়ে করা বউ তাকে চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছে? ”
গিলে খাওয়ার কথা মনে হতেই ছোঁয়ার একটা অদ্ভুত ইচ্ছে জাগ্রত হয় মনের মধ্যে। ব্যস্ত সেফের ওই ঘামে ভেজা গলায় টুপ করে একটা চুমু খেতে। খাবে কি?
লোকটা কি মারবে?
ধুরর মারলে মারুক।
তবুও তো চুমু খাওয়া হলো।
মার খাওয়ার ভয় করলে এই জীবনে আর চুমু খাওয়া হবে না।
মনকে বুঝিয়ে এক বুক সাহস নিয়ে এগিয়ে যায় ছোঁয়া। লোকটার এক দম পাশ ঘেসে দাঁড়ায়। চোখ দুটো বন্ধ করে দুই পায়ের গোড়ালি উঁচু করে সাদির গলার কাছে মুখটা নিয়ে চট করে একটা চুমু খেয়ে ফেলে সাদির গলায়। ব্যস্ত হয়ে রুটি বেলতে থাকা সাদির হাত দুটো থেমে যায়। স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে সে।
ছোঁয়া দু পা পিছিয়ে এসেছে। হাত পা কাঁপছে তার। চোখ দুটো খুলতে পারছে না। মনে মনে থাপ্পড় খাওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে গেছে৷ এবার একটা থাপ্পড় খেয়ে চলে যাবে কিচেন থেকে। আজকে দিনের মধ্যে আর লোকটার আশেপাশে আসবে না।
চুমু খেলো মনের সাধ মেটাতে কিন্তু মনের সাধ তো মিটলোই না উল্টো মনের মধ্যে কম্পন শুরু হয়ে গেলো।
নিজের ওপর নিজেই বিরক্ত ছোঁয়া।
সাদির কোনো রিয়াকশন না দেখে পিটপিট করে চোখ খুলে ছোঁয়া। পাষাণ সাদি এখনো আগের মতো কাজ করে যাচ্ছে। যেনো তার সাথে কিছুই হয় নি। সে দিব্যি আছে৷
ছোঁয়া মনে মনে খুশি হয়ে। ফ্রীজ থেকে করলা বের করে নেয়।
“আমি কেটে দিচ্ছি কেমন?
সাদি জবাব দেয় না। ছোঁয়া মুখ বাঁকিয়ে কাটতে থাকে করলা গুলো।
দুটো করলা কাটতেই কলিং বেল বেজে ওঠে। চমকে ওঠে ছোঁয়া। এতো সকালে আবার কে আসলো?
ঘাড় বাঁকিয়ে সাদির দিকে তাকায়। তার কোনো ভাবান্তর নেই।
” পাষাণ পাষাণ পাষাণ
করলা। রোবটের সাথে থাকছি আমি।
বলতে বলতে বেরিয়ে যায় ছোঁয়া। ছোঁয়া যেতেই সাদি দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। ডান হাতটা গলায় রাখে ঠিক যেখানে ছোঁয়া ঠোঁট ছুঁয়িয়েছিলো।
বিরবির করে বলে
“ইডিয়েট”
দরজা খুলতেই মুখটা থমথমে হয়ে যায় ছোঁয়ার সাজ্জাদ আর সাবিনাকে দেখে। মনে মনে আন্দাজ করে ফেলে কিছু একটা প্লানিং করেছে এরা। সাদির থেকে নিয়ে যেতে এসেছে ছোঁয়াকে।
চোখ দুটো টলমল করে ওঠে ছোঁয়া।
মাথা নিচু করে কাঁদতে কাঁদতে বলে
“আমাকে ছেড়ে যেতে কেনো বলো তোমার? সবাই উঠেপড়ে লেগেছো আমাদের আলাদা করতে। কেউ তো কাঁধে হাত রেখে বলতে পারতে
” ছোঁয়া গম্ভীর সাদিকে কখনো ছেড়ে যাস না”
সাজ্জাদ হাসি মুখে কিছু বলতে যাচ্ছিলো ছোঁয়াকে। কিন্তু ছোঁয়ার কথা শুনে হাসি মুখটা চুপসে যায়।
“আহহা ছোঁয়া
মামনি তোমাদের আলাদা করবো না তো। তুমি তো এখনো ছোট। তোমার এইচএসসি পরিক্ষার পরে এক সাথে থাকবে তোমরা।
ছোঁয়া ঠিক ধরেছিলো। তাকে নিতে আসা হয়েছে। সে কাঁদতে কাঁদতে এক দৌড়ে কিচেনে চলে যায়। দুই হাতে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে সাদিকে। সাদির বুকে মুখ লুকিয়ে শব্দ করে কাঁদতে থাকে।
সাদি হাত দুটো নামিয়ে রাখে ছোঁয়াকে ধরে না।
” আমি যাবো না প্লিজ। আপনাকে ছেড়ে কোথাও যাবো না। একটু চুমু খেয়েছি বলে আমাকে তাড়িয়ে দিবেন না প্লিজ। আমি আপনাকে ছাড়া থাকতে পারবো না। মরেই যাবো আমি।
প্লিজ আমাকে যেতে দিয়েন না।
প্রমিজ আপনাকে একটুও বিরক্ত করবো না৷ আপনার আশেপাশেও আসবো না
এবার সাদি ছোঁয়ার মাথায় হাত রাখে। শান্ত গলায় জবাব দেয়
“আমি রোজ রাতে কল করবো তোমায়। আর প্রতি ফ্রাইডে ঘুরতে নিয়ে যাবো
ছোঁয়ার কান্না থেমে যায়। বুক থেকে মুখ তুলে তাকায় সাদির দিকে। তার মানে সাদি জানতো সবটা?
অভিমানে বুকটা ভরে ওঠে ছোঁয়ার।
” আমি যাবো না মানে যাবো না। আমাকে জোর করে নিয়ে যেতে চাইলে গাড়ি থেকে লাফিয়ে পড়বো আমি।
সাদি গম্ভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে ছোঁয়ার মুখের পানে।
চলবে
#হৃদয়হরণী
#পর্ব: ১৯
#তানিশা সুলতানা
থাকতে পারে নি ছোঁয়া সাদির কাছে। তাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সাদিও বাঁধা দেয় নি৷ কাঁদতে কাঁদতে সাদির কাছে আকুতি মিনতি করেছিলো তাকে রেখে দিতে। কিন্তু সাদি রেখে দেয় নি৷ সাবিনা সাজ্জাত সেলিম সিমি এবং নাজমা সবার কাছে হেরে গিয়েছে ছোঁয়া। এতোগুলো মানুষ উঠেপড়ে লেগেছে তাকে আলাদা করতে। সে থাকবে কি করে?
তাই তো থাকতে পারলো না।
তবে ছোঁয়ার মন খারাপ ভ্যানিশ হয়ে গেছে। কাঁদতে কাঁদতে বাড়িতে ফিরলেও রাতেই ছোঁয়ার মনটা ফুরফুরে হয়ে গিয়েছিলো। হাজারটা প্রজাপতি উড়েছিলো ছোঁয়ার ছোট্ট মন খানায়। সাদিকে বিয়ে করতে পেরেও বোধহয় এতোটা খুশি হয়েছিলো না সে। প্রথমবার চুমু খাওয়াতেও সে খুশি ছিলো না। কেনো জানি মনে হয়েছে জোর করে চুমু নিয়েছে সাদির থেকে।
সাদি কল করেছিলো তাকে। আদুরে গলায় প্রথমবার “জান” বলে ডেকেছে। আকুতি ছিলো সেই কন্ঠে। ছিলো পাহাড় সমান মায়া।
ছোঁয়া তো ভুলতেই পারছে না সাদির সেই ভয়েস, সেই আকুতিময় কন্ঠ। লোকটা পাথর নয় তবে পাথর হয়ে থাকার চেষ্টা করে।
ছোঁয়া চোখ বন্ধ করে সেদিনের কথোপকথন মনে করতে থাকে।
ছোঁয়া কাঁদছিলো। বুকে বালিশ জড়িয়ে কাঁদছিলো ছোঁয়া। তখন তার পুতুলের কভার যুক্ত ফোনটা বেজে ওঠে। স্কিনে “সাদু বেবি” নামটা দেখে অভিমানের পাল্লা ভাড়ি হয়ে ওঠে। ফোন তুলে না। তুলবেও না বলে প্রতিজ্ঞা করে। কিন্তু প্রেমিক পুরুষের এতোবার কল করাতে মন গলে যায় ছোঁয়ার। একবার দুইবার তিনবার এভাবে চল্লিশ বার কল করার পরে ছোঁয়ার ছোট্ট মনটা গলে যায়।
লোকটার ধৈর্য প্রচুর। মানুষ এতোটাও ধৈর্যশীল হতে পারে?
এক চল্লিশ বারের মাথায় ছোঁয়া কল রিসিভ করে কানে তুলে তবে কথা বলে না৷ ভেবেছিলো সাদি ধমক দিবে। বা কড়া কথা শোনাবে। কিন্তু সাদি সেসবের কিছুই করে না। উল্টে ওপাশ থেকেও নীরবতার আভাস আসে।
দুপাশে দুজন নিরব রয়েছে। একে অপরের নিঃশ্বাসের শব্দ শুনতে থাকে।
এভাবে কতোখন কেটে যায় জানা নেই কারোরই। হঠাৎ করে সাদির গম্ভীর হৃদয় কাঁপানো শব্দ ভেসে আসে
“জাননন
ছোঁয়া কেঁপে ওঠে। ঠিক শুনলো? সাদি তাকে জান বলেছে? চোখ দুটো বন্ধ করে ফেলে ছোঁয়া। প্রস্তুতি নেয় সাদিকে জিজ্ঞেস করবে ” কি বললেন এই মাত্র” কিন্তু ছোঁয়া কিছু বলার আগেই সাদি আবারও সেই সুরেলা মধুর সুরে বলে ওঠে
” জাননন আমার আশেপাশে থাকাটা তোমার জন্য রিক্স। কিছু দিন দূরে থাকার পরে যদি সারাজীবনের জন্য এক সাথে থাকার অনুমতি পাই তাহলে ক্ষতি কি বলো?
ছোঁয়া জবাব দিতে পারে নি। বলতে পারে না “আপনাকে ছাড়া আমি একটা সেকেন্ডও শান্তিতে থাকতে পারি না। আমার দম বন্ধ হয়ে আসে”
ছোঁয়াকে নিরব থাকতে দেখে সাদি আবারও বলে ওঠে
“সোনা প্লিজ মন খারাপ করে না।
ছোঁয়া এবারেও জমে যায়। গম্ভীর গোমড়ামুখো সাদি ” জান সোনা”এসব নামে ডাকতে পারে? এটা বিশ্বাস করার মতো?
আচ্ছা লোকটা ঠিক আছে তো? সে কি নেশা টেশা করেছে?
ছোঁয়ার এসব উজবুক ভাবনার মাঝেই সাদি বলে
“ঘুমিয়ে পড়ো জান”
বলেই কল কেটে দেয়। ছোঁয়া যেনো একটা স্বপ্নের মধ্যে ছিলো। সাদিই কি ওর সাথে কথা বললো? এতে সুন্দর করে? জান, সোনা আবার আদর মাখা শব্দ গুলো?
ভাবতেই পারছে না ছোঁয়া। কেমন পাগল পাগল লাগছে।
তারপর থেকে লোকটা আর কোনো কল করে নি। এক সপ্তাহ কেটে গেলো। এসেছিলো শুক্রবারে আজকেও আবার শুক্রবার। তবুও লোকটা এতটুকুও খোঁজ নিলো না। একটু দেখাও হয় না মানুষটার সাথে।
ছোঁয়া কলেজ থেকে প্রায় প্রতিদিন সাদির বাড়িতে যায়। কিন্তু তাকে পাওয়া যায় না। সাবিনা বেগমের সাথে সময় কাটিয়ে চলে আসে।
সাদি সকাল আটটায় বেরিয়ে যায় সন্ধ্যায় বাসায় ফেরে।
কেমন পাগল পাগল লাগে ছোঁয়ার। লোকটার চেহারা যেনো চোখের শান্তি। চোখ দুটোকে শান্তি দিতে পারছেই না।
আজকে সকাল থেকে ছোঁয়া ভেবে রেখেছে সাদির বাড়িতে যাবে। কিন্তু বেরুনোর সুযোগই পাচ্ছে না।
এই তো সকালে সিমি পরিকে ছোঁয়ার কোলে তুলে দিলো। আর বললো “পরি ঘুমবে তুই একটু হেঁটে হেঁটে ঘুম পারিয়ে দে। আমি কাজ করছি”
ছোঁয়া পরিকে ঘুম পাড়িয়ে দেয়। তারপর যাবে মমতা বেগম ধরেছে ছোঁয়াকে। কাছে বসিয়ে আদর করে খাওয়াতে থাকে। ছোঁয়া না কি শুকিয়ে যাচ্ছে ঠিক মতো খায় না। দাদির কথা শুনে ছোঁয়া মুখ ফসকে বলে ফেলে
“বিয়ে হয়েছে তবুও জামাই ছাড়া থাকছি। রোগা হবো না? জামাইয়ের চিন্তায় রোগা হয়ে যাচ্ছি”
মমতা এক গাল হাসে।
“বড় হও দাদুভাই। তারপর জামাইয়ের চিন্তা করো।
” যথেষ্ট বড় আমি। আমার একটা ফ্রেন্ডের বাচ্চা হয়ে গেছে। সেখানে আমি শোক পালন করছি”
সিফাত কেশে ওঠে। সেও খাচ্ছিলো। মূলত সিফাতকে ছোঁয়া খেয়াল করে নি। ভাড়ি লজ্জায় পড়ে যায় ছোঁয়া। আর একটাও বাক্য মুখ থেকে বের করে না চুপচাপ খেতে থাকে।
খাওয়া শেষে নিজের রুমে ঢুকে একটু সাজুগুজু করে নেয়। কতোদিন পরে বরটার সাথে দেখা করতে যাবে একটু সাজুগুজু না করলে চলে?
ঠোঁটে লিপস্টিক লাগানো শেষ হতেই ডাক পড়ে সেলিমের। ভাড়ি বিরক্ত ছোঁয়া। এবার বাবা ডেকে নিয়ে হাজারটা উপদেশ দিবে। আর তার উপদেশের মূল মন্ত্য হলো সাদি।
সাদির সাথে তোমাকে মানায় না।
তুমি চাইলে আমি ডিভোর্সের ব্যবস্থা করবো
তুমি আরও ভালো ডিজার্ভ করে ব্লা ব্লা ব্লা
ছোঁয়া মাঝেমধ্যে বিরক্ত হয় মাঝেমধ্যে হেসে ফেলে৷ আসলে বাবা মানুষের ইনকাম আর চেহারাকে বেশি পাধান্য দেয়। সাদির রোজগার কম। বয়স বেশি এটাই সমস্যা তার।
ছোঁয়া বাবার ডাকে সাড়া দেয় না। সে তার মতো ধীরে সুস্থে রেডি হতে থাকে। ফোনের ব্যাক কভারে কিছু টাকা ভরে গলায় ওড়না জড়িয়ে বেরিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।
বেশি দূরে না হওয়াতে ছোঁয়া পায়ে হেঁটেই রওনা হয়। দুটো রাস্তা দিয়ে যাওয়া যায় সাদির ফ্লাইটে। একটা হচ্ছে মেইন রোড। যেখানে সারাক্ষণ যানবাহন চলতে থাকে মানুষের সরগম।
আরেকটা হচ্ছে কাঁচা রাস্তা। যেখানে মানুষের চলাচল খুবই কম৷ তবে রাস্তাটা সুন্দর। মাটির রাস্তা দুই পাশে গাছপালা দিয়ে ভর্তি।
এই রাস্তার সাথে ছোঁয়া দুই দিন আগে পরিচিত হয়েছে। যেদিন ক্লাস ফাঁকি দিয়ে সাদির বাসায় গিয়েছিলো সাদিকে দেখতে। কিন্তু গিয়ে দেখে জনাব বাসায় নেই।
সাবিনা বেগম রান্না করছে।
এক প্রকার রাগ করেই বাসা থেকে বেরিয়েছিলো সে। ভেবেছিলো হারিয়ে যাবে৷ যাতে সাদি তাকে খুঁজে। সেই জন্য এই রাস্তা ধরে হাঁটছিলো।
কিন্তু সে লাউ সেই কদু।
এই রাস্তা তাকে একদম বাড়ির সামনে এনে থামিয়েছে।
ছোঁয়ার আর হারিয়ে যাওয়া হলো না৷
কলিং বেল এক নাগারে বাজিয়েই চলেছে ছোঁয়া। তার মন খুঁত খুঁত করছে যদি আজকেও সাদির দেখা না পায়?
তখনই ফট করে দরজা খুলে যায়। সামনে তাকাতেই ছোঁয়ার মুখে হাসি ফুটে ওঠে। কারণ তার সামনে স্বয়ং তার চোখের শান্তি দাঁড়িয়ে আছে৷
ছোঁয়া এক গাল হেসে বলে
“আজকে আমি এখানে থাকবোই থাকবো। প্রধানমন্ত্রী আসলেও আমাকো নরাতে পারবে না। এ আমি কাঠ কাঠ বলে দিলাম।
বলেই সাদির হাতের ফাঁক দিয়ে রুমে ঢুকে পড়ে। বড় মা বড় মা বলে ডাকতে থাকে সাবিনা বেগমকে।
সাদি দীর্ঘ শ্বাস ফেলে দরজা বন্ধ করে ছোট্ট করে জবাব দেয়
” মা মাত্রই চলে গেলো।
এটা শুনে ছোঁয়া লাফিয়ে ওঠে।
“উফফফফ আজকে প্রকৃতিও চাইছে আমি এখানে থেকে যাই।
” আমি চাইছি না
সাদি গম্ভীর গলায় বলে। ছোঁয়া ভেংচি কাটে
“তা চাইবেন কেনো? নিরামিষ কি না আপনি?
অসভ্য ব্যাডা। একদিন কল করে জান সোনা বলে তারপর থেকে লাপাত্তা।
বলি কেউ কি আপনার গলায় চা*কু ঠেকিয়ে আমাকে জান বলিয়েছিলো?
সাদি বিরক্তিতে নাক মুখ কুঁচকে নিজের রুমে চলে যায়। ছোঁয়া ভেংচি কেটে সোফায় বসে পড়ে।
চলবে