#হৃদয়হরণী
#পর্ব:১৬
#তানিশা সুলতানা
গম্ভীর প্রকৃতির মানুষ গুলো প্রতিনিয়ত ভেতরে ভেতরে গুমরে মরে। তারা তাদের মনোভাব কারো সামনে প্রকাশ করতে পারে না। নিজের কষ্ট আনন্দ ভালো লাগা খারাপ লাগা কাউকে বোঝাতে পারে না বলেই তাদের ভেতরে সারাক্ষণ রক্তক্ষরণ হয়৷ পাওয়া না পাওয়ার হিসেব গুলো একা একাই সমাধান করতে হয়। সাদি হচ্ছে সেই প্রকৃতির মানুষ।
কখনো একটু অসুস্থ হলে বাসার কাউকে বলে নি। সারা রাত জ্বরে পুরেছে তবুও কখনো মাকে বা অন্য কাউকে ডাকে নি।
একবার সাদির পা ভেঙেছিলো। দুইদিন ভাঙা পা নিয়ে নিজের রুমে পড়ে ছিলো। কাউকে বলে নি তার সমস্যার কথ। এটা অবশ্য খুব ছোট বেলায়। তখন সাদি ক্লাস এইট এ পড়তো।
সাদি এমনিতেই সারাদিন রুমে থাকে বলে কেউ তাকে দেখতে আসে নি৷ সাবিনা বাড়িতে ছিলো না। তিনি থাকলে অবশ্যই দিনে কয়েকবার আসতো সাদিকে দেখতে। তো পরের দিন সাবিনা বেগম কি মনে করে যেনো বাড়িতে ফিরেই সাদির রুমে আসে আর দেখতে পায় তার ছেলে পা ধরে কাতরাচ্ছে। জ্বরে শরীর পুরে যাচ্ছে। চিৎকার করে কেঁদে উঠেছিলেন তিনি। হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিলো।
আজ ওবদি জানা যায় নি কিভাবে সাদির পা ভেঙেছিলো।
পাশাপাশি দুটো রুম। পাশের রুম থেকে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্নার শব্দ আসছে। রাত বারোটা বেজে পঞ্চাশ মিনিট।
সাদি ছোঁয়ার রুম থেকে বেরিয়েছে এগারোটা নাগাদ।
ইডিয়েট টা এখন পর্যন্ত কেঁদেই চলেছে। সাদি জানে যতখন সে গিয়ে কাঁদতে মানা করবে না ততখন পর্যন্ত কেঁদেই যাবে
সাদি ইচ্ছে করেই যাচ্ছে না। মেয়েটা দিন দিন অন্য রকম হয়ে যাচ্ছে। ভীষণ বেপরোয়া হয়ে উঠছে।
দীর্ঘ শ্বাস ফেলে কানে হেডফোন গুঁজে নেয় সাদি। হৃদয় কাঁপছে তার। হার্টবিট দ্রুত লাফাচ্ছে। অস্বস্তি হচ্ছে। কিন্তু কেনো? হৃদয়হরণীকে দুঃখ দেওয়ার জন্য? তাকে আঘাত করাতে নিজের হৃদয়টা জ্বলছে?
__
নতুন ভোর নতুন দিনের সূচনা।
সকালের ফুরফুরে হাওয়া পাখির কিচিরমিচির শব্দ আর মনমাতানো পরিষ্কার আকাশ। মন ভালো করতে সক্ষম।
সাদি খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে রান্না চাপায়। এসএসসির পর থেকে সে পরিবার থেকে দূরে থেকেছে সেই সুবাদে রান্না থেকে শুরু করে ঘর মোছা সব কাজে পারদর্শী সে।
পরোটা ডিম ভাজা করলা ভাজা ডিম সিদ্ধ ব্যাস সাদির রান্না শেষ।
সে নিজের মতো অফিসের জন্য তৈরি হয়ে খেয়ে চলে যায়। ছোঁয়ার খোঁজ নেয় না।
প্রচন্ড কান্না করে ঘুমানোর ফলে ভালো ঘুম হয়েছে ছোঁয়ার। ঘুম ভাঙতেই আড়মোড়া ভেঙে উঠে দেখে দশটা বেজে গেছে। তারাহুরো করে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ে। এ বাবা রান্না করতে হবে তো। নাহলে সাদি খাবে কি?
ফ্রেশ হয়ে কিচেনে গিয়ে দেখে ভাত তরকারি পর্যন্ত রান্না করে রেখে গেছে সাদি। ছোঁয়া ঠোঁট কামড়ে হাসে
“বাহহহ আনরোমান্টিক জামাই হলে কি হবে? কাজ করতে জানে।
যাকক আমার আর কষ্ট করতে হবে না। আমি বাচ্চাদের বড় করবো আর উনি রান্নাবান্না করবো।
ভাবতে ভাবতে ছোঁয়া দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। আর বাচ্চাকাচ্চা। যে লেভেলের নিরামিষ জীবনে একটা চুমু খাবে কি না এতেও সন্দেহ। বাচ্চাকাচ্চার কথা ভাবা তো বিলাসিতা। চুমুহীন জীবন পার করতে হবে।
হতাশার শ্বাস ফেলে ছোঁয়া খেতে বসে যায়। এক গ্লাস দুধ হরলিক্স দিয়ে গুলে রাখা একটা সিদ্ধ ডিম আর একটা পরোটার মধ্যে ডিম শশা অল্প পেঁয়াজ দিয়ে রোল বানানো তা আবার কাগজ দিয়ে মুরে রেখেছে। ছোঁয়া খেতে শুরু করে। খেতে খেতেই কলিং বেল বেজে ওঠে। দুধ টুকু এখনো খাওয়া বাকি। এক চুমুকে দুধ শেষ করে দরজা খুলে। একটা মধ্যবয়স্ক মহিলা দাঁড়িয়ে আছে। ছোঁয়া তাকে সালাম দেয়। মহিলাটি সালাম ফিরিয়ে পরিচয় দেয় তিনি এই বাসার মালিক। ছোঁয়াদের সামনের ফ্লাইটে থাকে।
ছোঁয়া তাকে ভেতরে আসতে বলে। মহিলাটি আসে। সোফায় বসে ছোঁয়াও বসে মহিলাটির পাশে।
” তা মেয়ে বিয়ে করেছো নাক ফুল কোথায় তোমার?
“আর আন্টি বলো না আমি তো নাকই ফুঁটো করি নি।
” নাক ফুল হলো বিবাহিত মেয়ের চিহ্ন। আর স্বামীর মঙ্গল অমঙ্গলের এতো বেপার এই নাক ফুল।
“আপনি নাক ফুটো করতে পারেন?
” বোকা মেয়ে এখন তো পার্লার থেকেই নাক ফুঁটো করা যায়।
“আমাকে নিয়ে যাবেন আন্টি?
” ঠিক আছে। এখুনি চলো।
“কিন্তু আন্টি এখন তো আমার কাছে টাকা নেই।
” লাগবে না। একশত টাকা নিবে। আমি নাহয় দিয়ে দিবো। তুমি পরে আমায় ফেরত দিও।
ছোঁয়া খুশি হয়ে দাঁড়িয়ে যায়।
“ঠিক আছে
পরনের জামা পাল্টে চুল গুলো পরিপাটি করে ছোঁয়া মহিলাটির সাথে বেরিয়ে পড়ে। মহিলার নাম রুণা। ভীষণ শৌখিন মহিলা। কথায় কথায় জানতে পারে ওনার এক ছেলে এক মেয়ে। ছেলে অনার্সে পড়ছে আর মেয়ে ছোঁয়ার সেম ইয়ার।
এবং দুজন একই কলেজের। ছোঁয়া মনে মনে খুশি হয়। যাক এক সাথে যেতে পারবে কলেজে।
ভীষণ নাজুক প্রকৃতির মেয়ে ছোঁয়া। একটুতেই তার শরীর খারাপ হয়। এই যে পার্লার থেকে নাক ফুঁটো করেছে। ইয়া মোটা একটা নাক ফুল ঢুকিয়ে দিয়েছে নাকে। ভীষণ ব্যাথা করছে তার।
কিন্তু প্রকাশ করছে না।
বাড়ির নিচেই ছিলো পার্লার।
ছোঁয়া এবার বাসায় ফিরে শুয়ে পড়ে। নাকের ব্যাথায় জ্বর আসবে মনে হচ্ছে। এমনিতেই রাতে কেঁদেছে গলা ব্যাথা হয়ে আছে।
আজ প্রথমদিন হওয়াতে সাদিকে একটু তাড়াতাড়ি ছুটি দিয়ে দেয়। এখানে কাজ করে ভালো লেগেছে সাদির। অফিসের বস এবং কলিগরা খুবই ভালো এবং রুচিশীল। তার থেকে বেশি ভালো লাগার বিষয় হলো সাদির একটা মেয়ে বন্ধু যার সাথে প্রায় ছোট থেকেই বেরে উঠেছে ইরা সেও এখানেই জব করে। এবং দুজন একই ডিপার্টমেন্টে।
ছুটির পরে একটা রেস্টুরেন্টে বসেছে সাদি এবং ইরা। ইরা ছোট থেকেই প্রচন্ড কথা বলে। এখনো তার ব্যতিক্রম নয়৷ এটা ওটা বলেই যাচ্ছে। সাদি শুধু শুনছে। ইরার সাথে দেখা হওয়ার পর থেকে সাদি হাতে গোণা কয়েকটা কথা বলেছে আর ইরা বলেই যাচ্ছে বলেই যাচ্ছে।
সাদি মনে মনে বলে “বাড়িতে এক ইডিয়েট এখানে আরেক ইডিয়েট ”
“সাদি মহুয়ার সাথে দেখা হয়েছিলো। তার ডিভোর্স হয়ে গেছে।
সাদি খাওয়ায় মনোযোগ দিয়েছে। ইরার কথা শুনলেও কোনো প্রতিক্রিয়া করে না। ইরাও আর দ্বিতীয় বার বলে না
” তোর বউয়ের সাথে দেখা করাবি না? পাপন বললো ভীষণ দুষ্টু না কি? তোকে নাকে দঁড়ি দিয়ে ঘুরায়।
বলেই শব্দ করে হেসে ওঠে ইরা।
“আজকেই চল
ইরা লাফিয়ে ওঠে। ইসস আজকেই যাবে? তারাহুরো করে খেতে থাকে সে। সাদির মত বদলানোর আগেই যেতে হবে।
নিজের কাছে থাকা এক্সট্রা চাবি দিয়ে দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে সাদি। ইরাকে ইশারায় ছোঁয়ার রুম দেখিয়ে নিজের রুমে ঢুকে পড়ে।
ইরা এদিক ওদিক দেখতে দেখতে ছোঁয়ার রুমে ঢুকে। কম্বল মুড়িয়ে বিছানায় শুয়ে আছে ছোঁয়া।
রুমে কারো ঢোকার আওয়াজ পেয়ে চোখ না খুলেই বলে ওঠে
” এসেছেন? জলদি আমার নাকে পরপর কয়েকটা চুমু খেয়ে দিন তো। প্রচন্ড ব্যাথা করছে।
ইরা মুখ টিপে হাসে। পাপনের কথা সে বিশ্বাস করে নি৷ সাদির মতো গম্ভীর জোয়ান একটা ছেলেকে বাচ্চা একটা নাকানিচুবানি খাওয়াতে পারবে? এটা বিশ্বাস করার যোগ্য?
ইরা যেভাবে এসেছিলো সেভাবেই বেরিয়ে যায়। সাদির রুমে ঢুকে পড়ে।
সাদি সবেই চেঞ্জ করে বেরিয়েছে।
“সাদি তোর বউ তোকে ডাকে। তার না কি চুমমমমমমমমু খেতে ইচ্ছে করছে।
দাঁত কেলিয়ে বলে ইরা। সাদি বিরক্ত হয়।
ইরার দিকে এক পলক তাকিয়ে বেরিয়ে যায়।
” অবেলায় শুয়ে আছো কেনো?
ছোঁয়া পিটপিট করে চোখ খুলে
“আমার নাকে ব্যাথা
ডাক্তার বলেছে সাদমান চৌধুরী চুমু খেলে সেরে যাবে।
রিনরিনিয়ে বলে ছোঁয়া।
” হাতেও ব্যাথা এখানেও চুমু প্রয়োজন। চুমুর অভাবে ব্যাথা সারছে না।
সাদি ফোঁস করে শ্বাস টানে৷ ইরা দরজার সামনেই দাঁড়িয়ে শুনছিলো আর কিটকিট করে হাসছিলো। মেয়েটা ভারি মিষ্টি। বেশ মনে ধরেছে ইরার।
“ইরা এসেছে তোমার সাথে দেখা করতে। ফ্রেশ হয়ে এসো।
বলেই সাদি চলে যেতে নেয়
” আমার ব্যাথা না কমলে ফ্রেশ হবো কি করে? আপনি কি ব্রাশ করেন নি?
চলবে
#হৃদয়হরণী
#পর্ব:১৭
#তানিশা সুলতানা
গম্ভীর দৃষ্টি ছোঁয়াকে দেখছে সাদি। এই নারীর প্রতি তার আসক্তি নেই তবে কিছু একটা আছে।
কিশোর বয়সে প্রথম প্রেমে পড়েছিলো সে। একটা নারীর সঙ্গ পেয়ে গম্ভীর একঘেয়ে সাদি মিশতে শিখেছিলো। বন্ধু বানিয়েছিলো রিমি, ইরা, পাপন, ইমন, আশিক ওদের সাথে।
সময়ের ব্যবধানে সেই নারী ছেড়ে গিয়েছে সাদিকে কিন্তু বন্ধুরা ছাড়ে নি। সেই নারীর প্রতিও সাদির আসক্তি ছিলো না ছিলো ভালো লাগা এবং মায়া। সেই মায়া কাটিয়ে উঠতে সময় লেগেছিলো সাদির। অনেকটা সময় লেগেছিলো।
এখনো হয়ত মনের কোথাও সেই নারীর জন্য মায়া কাজ করে।
সেই নারীর হাত ধরার ইচ্ছে ছিলো সাদির। কিন্তু ধরতে পারে নি। সেই নারীর ললাটে দীর্ঘ চুমু খেয়ে বলার ইচ্ছে ছিলো “আমাকে ছেড়ে যেয়ো না”
কিন্তু বলতে পারে নি। তার আগেই মায়াবী নারী ছেড়ে গিয়েছে সাদিকে।
যেইদিন সেই নারীর বিয়ে ছিলো সেই দিন ছোঁয়ার ভীষণ জ্বর ছিলো। মনে আছে সাদির। বাড়ি সুদ্ধ সকলেই চিন্তায় অস্থির হয়ে উঠছিলো।
তখন বয়স কতো ছিলো ছোঁয়ার? দশ বছর হবে মনে হয়।
বাড়িতে পুরুষ মানুষ ছিলো না। সকলেই বাইরে ছিলো। প্রথমবার বাচ্চা ছোঁয়াকে কোলে তুলে নিয়েছিলো সাদি। ছোঁয়ার গরম মাথাটা সাদির বুকে পড়তেই হৃদয় কেঁপে উঠেছিলো।
ব্যাথায় মুখটা লাল হয়ে গেছে ছোঁয়ার। উঠে বসতে গিয়ে কম্বলের নাক লেগেছিলো। চোখে পানি চলে এসেছে। হালকা রক্তও এসেছে নাক ফুলের পাশে।
সাদি ছোঁয়ার পাশে বসে।
ছোঁয়া মাথা নিচু করে চোখের পানি মুছছে। সাদি রেগে আছে বুঝতে পারছে ঢের। অবশ্য লোকটা কখনই বা রেগে থাকে না? সদা তার নাকের ডগায় রাগ থাকে।
“আন্টি বললো নাকফুল পড়তে হয়। আম্মু পড়ে, বড় মা পড়ে,আপি পড়ে।
আমাকে একটা নাকফুল কিনে দিয়েন প্লিজ
সাদি জবাব দেয় না। তার নজর ছোঁয়ার নাকে থাকা সাদা পাথরের নাক ফুলের দিকে। বেশ মানিয়েছে ছোঁয়াকে। চেহারা থেকে বাচ্চা বাচ্চা ভাবটা চলে গেছে। পারফেক্ট বউ মনে হচ্ছে। কে বলবে এই মেয়েটার শিরায় শিরায় দুষ্টমি বিরাজ করছে?
“দুইশো টাকা লাগছে। আন্টি দিয়ে দিয়েছে। আপনি আমাকে দুইশো টাকা দিয়েন। আমি আন্টিকে দিয়ে দিবোনি।
সাদি লম্বা শ্বাস টানে। ছোঁয়ার থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে ছোট্ট করে বলে।
” আচ্ছা
ছোঁয়া বিছানা থেকে নামতে যায়। সাদি ছোঁয়ার হাত ধরে। চমকে ওঠে ছোঁয়া। তাকায় সাদির মুখের পানে। লোকটাকে আজকে অন্য রকম লাগছে। বেশ অদ্ভুত তার চোখের দৃষ্টি। বিলাই চোখ দুটোতে রাগ, বিরক্তি কিংবা সহানুভূতি নেই। আছে শুধু গম্ভীর মুগ্ধতা।
ওই চোখের দিকে তাকিয়ে থাকার সাধ্য পাগল ছোঁয়ার নেই। সে দৃষ্টি নামিয়ে ফেলে।
আমতা আমতা করতে থাকে। লোক আসলে কি করতে চাচ্ছে বোঝার চেষ্টা করতে থাকে ছোঁয়া। আজকে কেমন অচেনা লাগছে তাকে। এটা কি সত্যিই সাদমান চৌধুরী?
সাদি ছোঁয়া দিকে একটু চেপে বসে। হাত বাড়িয়ে ছোঁয়ার নাকে আলতো করে ছুঁয়ে দেয়। কেঁপে ওঠে ছোঁয়া। চোখ দুটো বন্ধ করে ফেলে। এতোটা আশা করে নি ছোঁয়া। ধমক খাওয়ার জন্য প্রস্তুত ছিলো সে।
ছোঁয়াকে আরও একটু অবাক করে দিয়ে খুব দ্রুত শব্দ করে চুমু খায় সাদি ছোঁয়ার নাকে। ভুমিকম্পোর মতো কেঁপে ওঠে ছোঁয়া। এ কেমন অনুভূতি? শ্বাস টানতেও পারছে না। বুক কাঁপছে পেটে মোচর দিচ্ছে গলা শুকিয়ে গেছে। শরীরের দুর্বলতা জ্বর জ্বর ভাবটা কোথাও একটা বিলিন হয়ে গেছে। সাদির দেওয়া ছোট্ট স্পর্শ মনের মধ্যে গভীর দাগ কেটে গেছে। সুন্দর পবিত্র অনুভূতি অসুস্থতা বিলিন করে দিলো বোধহয়?
ছোঁয়া নিজের কাঁপা কাঁপা হাতটা নাকে দেয়। সাদি দূরে চলে গিয়েছে চুমু খাওয়ার পরপরই। তবে রুম থেকে বের হয় নি৷
“শ্বাস টানো
স্বাভাবিক হয়ে বাইরে এসো। ইরা এসেছে তোমায় দেখতে।
বলেই সাদি দ্রুত পা চালিয়ে চলে যায়। ছোঁয়া সত্যিই শ্বাস টানে। চোখ খুলে তাকায়। এখনো মনে হচ্ছে লোকটার ছোঁয়া নাকে লেগে আছে। ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে ওঠে ছোঁয়ার। লাফিয়ে ওঠে সে।
এক লাফে ড্রেসিং টেবিলের সামনে চলে যায়। নিজেকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে থাকে
” চুমু যেহেতু দিয়েছে আরও দিবে। যাককক ফুলবল টিম বানানোর চান্স আছে তাহলে। হয়ত একটু সময় লাগবে। তবে আমিষ হবে লোকটা৷ এটা কনফার্ম।
মনে মনে এইটুকু ভাবতেই চুমু দেওয়ার মুহুর্তটা চোখের সামনে ভেসে ওঠে
“আমার বর আমাকে চুমু দিছে।
সত্যিই চুমু দিছে। ইসসসসসসসস
এই লজ্জা আমি লুকাবো কোথায়?
দুই হাতে মুখ ঢেকে ফেলে ছোঁয়া।
” মুহুর্তেটা ভিডিও করে রাখতে পারলে ভাল্লাগতো। একটু পরপর দেখতাম। কিন্তু আফসোস।
ছোঁয়া চোখে মুখে পানি দিয়ে মাথায় ঘোমটা টেনে রুম থেকে বের হয়। বেশ ফুরফুরে মেজাজ তার।
ইরা আর সাদি বসে আছে। ইরার হাতে কফির মগ। সে কফি খাচ্ছে আর নিজের বরের কথা গল্প করে যাচ্ছে। সাদি চুপচাপ ফোন দেখছে। ইরার কথা যে সে শুনছে না বুঝতে পেরে হাসে ছোঁয়া।
আপুটাকে বেশ মনে ধরেছে তার। একদম তার মতো।
“আপু সরি আপনাকে অপেক্ষা করালাম। আসলে নাক ফুঁটো করেছি তো তাই একটু অসুস্থ ছিলাম। এখন সুস্থ হয়ে গিয়েছি।
বলতে বলতে ইরার পাশে এসে বসে ছোঁয়া। ইরা কফির মগে শেষ চুমুক দিয়ে সেটা টি-টেবিলে রেখে ছোঁয়ার দিকে তাকিয়ে হাসে।
” তা এখন সুস্থ হলে কি করে? সাদি চুমু খেয়ে নিয়েছে?
ছোঁয়া লাজুক হাসে। মাথা নিচু করে ফেলে। বেশ লজ্জা লাগছে তার। ছোঁয়াকে লজ্জা পেতে দেখে শব্দ করে হেসে ওঠে ইরা।
গাল টেনে দেয় ছোঁয়ার।
“ইসস কি মিষ্টি তুমি। তোমাকে আমি টিপস শিখিয়ে দিবোনি।
সাদি দাঁড়িয়ে যায়।
” দেখতে এসেছিস। দেখেছিস এখন চলে যাবি। আর আশা চলবে না এখানে।
ইরা ভেংচি কাটে
“বললেই হলো? আমি তো আসবোই।
ছোঁয়া বুঝলে আমি রিমি ইমন আমরা তিনজন মিলে তোমাকে
ইরাকে বলতে না দিয়ে বাকিটা সাদি বলে ওঠে
” এমনিতেই বাঁদর
এখন তোরা তিনজন মিলে গাছে উঠিয়ে দিবি।
ওকে বলে দে বাড়াবাড়ি করলে বাড়িতে রেখে আসবো।
ছোঁয়া গাল ফুলিয়ে ফেলে। ইরা ফোঁস করে শ্বাস টানে।
“তুই যা তো এখান থেকে। আমি ছোঁয়ার সাথে কথা বলতে এসেছি। আমি খাবো। রান্না কর গিয়ে। সর এখান থেকে।
সাদি ছোঁয়ার দিকে তাকায়। যার অর্থ “বাড়াবাড়ি করলে সত্যিই রেখে আসবো”
সাদি চলে যায়। ইরা ছোঁয়ার সাথে গল্প করতে থাকে। দুজনের গল্প বেশ জমে উঠেছে। ইরা ভীষণ মজার মানুষ। ছোঁয়াও মজা পাচ্ছে।
রাত দশটার দিকে ইরাকে বাসায় পৌঁছে দিতে বের হয় সাদি। ছোঁয়া বই নিয়ে বসে আছে। সাদি কড়া গলায় পড়তে বলেছে। কি আর করার? বাধ্য বরের বাধ্য বউ হয়েছে ছোঁয়া পড়ছে।
____
সেলিম চৌধুরী বসে আছে সাজ্জাদ চৌধুরীর সামনে। দুজনের মুখটা গম্ভীর।
“ভাইয়া আমার মেয়েটার ভবিষ্যত আছে। সে এখনই পড়ালেখা বাদ দিয়ে সংসার করুক এটা আমি চাই না।
ছোঁয়াকে তুমি নিয়ে এসো। এইচএসসি পরিক্ষার শেষে ধুমধাম করে ওদের আবার বিয়ে দিয়ে দিবো। আপাতত সে এই বাড়িতে থাকবে।
সেলিমের কথাটা মন্দ না। এমনটাই ভালো হবে।
” ঠিক আছে আমি কাল গিয়ে নিয়ে আসবো ছোঁয়াকে। তবে সেলিম ছোঁয়াকে আনার পেছনে যদি তোর অন্য কারণ থাকে তাহলে জেনে রাখ আমি সেটা হতে দিবো না। তুই নিজেও জানিস তোর মেয়ে আমার ছেলের জন্য কতোটা পাগল। তো এমন কিছু করিস না যাতে মেয়েটা আঘাত পায়।
সেলিম জবাব দেয় না। বেরিয়ে যায় সাজ্জাদের রুম থেকে। দরজার আড়াল থেকে সাবিনা সবটা শুনছিলো।
তিনি স্বামীর কাঁধে হাত রাখে।
“তোমার সাথে আমিও যাবো। কয়েকটা দিন থেকে আসবো সাদুর সাথে।
দীর্ঘ শ্বাস ফেলে সাজ্জাদ।
” ঠিক আছে। ব্যাগ গুছিয়ে নাও।
চলবে