হৃদয়হরণী পর্ব-১৪+১৫

0
9

#হৃদয়হরণী
#পর্ব:১৪
#তানিশা সুলতানা

সাদি বড়বড় পা ফেলে হাঁটছে। কোথায় যাচ্ছে জানা নেই ছোঁয়ার। তবে বাড়ি যাওয়ার রাস্তা ধরেই হাঁটছে সাদি। ছোঁয়াও সাদিকে অনুসরণ করে পা মেলাচ্ছে৷ শাড়ি পড়ার অভস্ত্য না ছোঁয়া। তাই পা মেলাতে বেশ হিমশিম খাচ্ছে সে। খুব করে ইচ্ছে করছে সাদির ওই শক্তপোক্ত পুরুষালি হাতটা ধরতে। মোটা মোটা আঙুলের ভাজে নিজের ছোট ছোট আগুন গুলো গলিয়ে দিতে। কিন্তু সেই সাহস কি আছে ছোঁয়ার? দেবে একটা ধমক। বা একটা থাপ্পড়ই দিলো। তখন কি হবে? সুন্দর গালটা লাল হয়ে যাবে। সাজটা নষ্ট হয়ে যাবে। থাকক বাবা হাত ধরার প্রয়োজন নেই৷ পাশে যে হাঁটতে পারছে এটাই তো অনেক। তাই না?

প্রায় চল্লিশ মিনিট হেঁটে প্রায় বাড়ির কাছাকাছি এসে পড়েছে ওরা। ছোঁয়া এবার আর চুপ থাকতে পারে না। ভীষণ ক্লান্ত সে। দৌড়াতে দৌড়াতে পা ব্যাথা হয়ে গেছে।

“আপনার টাকা নেই বললেই পারতেন। আমার কাছে টাকা আছে। একটা রিকশা নিয়ে আসতাম। তা না হাঁটিয়ে আনলেন? নতুন বউ আমি ভুলে গেছেন? আপনিই বোধহয় দুনিয়াতে প্রথম ব্যক্তি যে তার বউকে হাঁটিয়ে বাড়ি নিয়ে আসলো। আপনার নাম জাদুঘরে তুলে রাখা উচিত। কিপ্টামির একটা লিমিট থাকা দরকার আপনি সেটা পেরিয়ে গেছেন। পাষান লোক একটা

সাদি এক পলক তাকায় ছোঁয়ার দিকে। অভিমানী মুখটা দেখে আবার চোখ ফিরিয়ে নেয়।
” আই থিংক তুমি বুঝতে পেরেছো আমার সাথে পথ চলা খুব একটা সহজ হবে না।

ছোঁয়া ভেংচি কাটে সাদিকে। ঠিক ধরতে পেরেছে। লোকটা তাকে জব্দ করতে হাঁটিয়ে নিয়ে আসলো। কি ভেবেছে এভাবে হারিয়ে দিবে ছোঁয়াকে? কখনোই না।

“আই থিংক আপনিও বুঝতে পেরেছেন ছোঁয়া চৌধুরী এতো তাড়াতাড়ি ক্লান্ত হবে না।

সাদি ফোঁস করে শ্বাস টানে৷ ভাঙবে তবু মচকাব না৷
” হাঁটা তো স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। তাছাড়া আমার বরের টাকা নেই। হাঁটবো না হয়। আপনি পাশে থাকলে আমি হাঁটতে হাঁটতে উগান্ডাও চলে যেতে পারবো। সমস্যা নেই আমার। ভালোবাসার জন্য শাহজাহান তাজমহল বানালো, ফরহাদ পাহাড় কেটে রাস্তা বানালো আমি সামান্য হাঁটতে পারবো না?
কি যে ভাবেন না আপনি। করলা খেতে খেতে মাথায় গ্যাস্টিক হয়েছে আপনার।

সাদি চুপচাপ হাঁটতে থাকে। ছোঁয়ার কথা যেনো সে শুনতেই পাচ্ছে না। ছোঁয়া বিরবির করে সাদিকে বকে। একটা মানুষ এতোটা নিরামিষ কি করে হতে পারে?

আলোয় ঝলমল করা বাড়িটা দেখা যাচ্ছে। আর কয়েক পা বাড়ালেই বাড়ির গেইট। ছোঁয়ার এখন একটু একটু ভয় করছে। সবাই কিভাবে নিবে? কি বলবে? কেমন রিয়াকশন হবে?
কিন্তু বেচারা গোমড়ামুখো চিল মুডে ভেতরে ঢুকছে। যেনো তার কোনো চিন্তাই নেই। যত চিন্তা সব ছোঁয়ার একার।
দারোয়ান চিৎকার করে বলে
” ছোট আপা আর ছোট ভাইজান চইলা আইছে।
তার চিৎকারে ছোঁয়া ভরকে যায়। বাড়ির মেইন দরজায় পা রাখতে গিয়েও ফিরিনে আনে। সাদির দিকে এক পলক তাকায়। সাদি ভেতরে চলে গেছে।

আত্নীয় স্বজন পরিবারের সবাই ঘিরে দাঁড়িয়েছে সাদিকে। কাঁদতে কাঁদতে সাবিনার চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে। নাজমা আর সিমিও কেঁদেছে অনেক।
ছোঁয়া ভেতরে ঢুকতেই নাজমা বেগম দৌড়ে গিয়ে মেয়েকে জড়িয়ে ধরে আবার কেঁদে ফেলে
“মা কোথায় গিয়েছিলি তুই?
কতো চিন্তা হচ্ছিলো আমাদের।

ছোঁয়া কি জবাব দেবে বুঝতে পারছে না। সেলিম আর সাজ্জাদ পাশাপাশি বসেছিলো। সেলিম দাঁতে দাঁত চেপে সাদির দিকে এগিয়ে যায়। সাদির কলার চেপে ধরে চিল্লিয়ে বলে ওঠে
” তোকে বলেছিলাম না আমার মেয়ের থেকে দূরে থাকতে?
সিফাত এসে ওনাকে ছাড়িয়ে দূরে নেয়। রাগে থরথর করে কাঁপছেন তিনি। সাদি নিজের কলার ঠিক করে শান্ত চোখে তাকায় সেলিমের দিকে। কিন্তু জবাব দেয় না।
সাজ্জাদ ছেলের পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। কাঁধে হাত রেখে বলে
“কোথায় গিয়েছিলে? বরযাত্রী যেতে হবে তো। সবাই অপেক্ষা করছিলাম।

সাদি গম্ভীর গলায় জবাব দেয়।
” ওকে বিয়ে করেছি আমি।

আরও একবার চমকায় সকলে। সেলিম এবার বলার মতো কথা খুঁজে পায় না। বাকরুদ্ধ হয়ে গেছেন তিনি। সাবিনা চোখের পানি মুছে সাদির দিকে এগিয়ে আসে।
নাজমা বেগমও রেগে যায় এবার। এটা হতে পারে না। তার ফুলের মতো পবিত্র মাসুম মেয়ে। তার বিয়ে নিয়ে হাজারটা জলপনা কল্পনা করা আছে তার৷ সাদি ছেলে ভালো। কিন্তু তার মেয়ের সাথে মানাবে না।

তিনি কঠিন সুরে বলে ওঠে
“যা বলেছিস বলেছিস। এটা আর বলবি না আব্বা। কোনো বিয়ে হয় নি।
ছোঁয়া মায়ের কথায় অবাক হয়। বিয়ে হয় নি মানে কি? বিয়ে তো হলো।
সেলিমও তেরে এসে বলে
” কোনো বিয়ে হয় নি৷ ছোঁয়াকে নিয়ে আমি এখুনি শহর ছাড়বো।

ছোঁয়া আতঙ্কে ওঠে।
“না না আমি কোথাও যাবো না। বিয়ে হয়েছে আমাদের। প্রমাণ আছে

সিমি ছোঁয়াকে কথা বলতে বারণ করে কিন্তু ছোঁয়া শোনার পাত্রী নয়।
সেলিম এবার কষিয়ে ধমক দেয় ছোঁয়াকে
” একটা কথাও বলবে না তুমি। বড় হয়ে গেছো না?
একটা থাপ্পড় দিয়ে দাঁত ফেলে দিবো তোমার। বিয়ে হয়েছে তো? ডিভোর্সও দিয়ে দিবে৷ থাকবে না তোমারা এক সাথে। তোমাদের এক সাথে মানাবে না।

বাবার ধমকে ছোঁয়ার চোখে পানি চলে আসে। জীবনে প্রথমবার সে বাবার থেকে কড়া কথা শুনলো।

সাদি এবার সাবিনাকে বলে
“মা কাল থেকে আমাকে অফিস জয়েন করতে হবে। আমি চলে যাবো এখুনি
বলেই সে নিজের রুমে চলে যায়।

সেলিম আবারও বলে ওঠে
” তুমি সাদি ডিভোর্স দিবে। ছেড়ে দিবে তাকে এটাই আমার সিদ্ধান্ত। আর এই সিদ্ধান্ত নরচর হলে তোমাকে মে*রেই ফেলবো আমি।

ছোঁয়া হাতের উল্টো পিঠে চোখের পানি মুছে বলে
” মায়ের সাথে তোমাকে মানলে, আপির সাথে জিজুকে মানালে আমার সাথেও ওনাকে মানাবে।
তুমি মাকে ছাড়তে পারলে, আপি জিজুকে ছাড়তে পারলে, আমিও সাদুকে ছেড়ে দিবো।
এবার সিদ্ধান্ত তোমার।

সেলিম বাকরুদ্ধ হয়ে যায় মেয়ের কথা শুনে। সিফাত মুখ টিপে হাসে। সাজ্জাদের সিটি বাজাতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু পরিস্থিতির জন্য পারছে না। এই মেয়েই পারবে তার ছেলেকে মানুষ করতে।
ছোঁয়া মাথা নিচু করে নিজের রুমে ঢুকে যায়। তাকেও তো জামাকাপড় গোছাতে হবে।
কাঁদতে কাঁদতে জামাকাপড় গুছিয়ে নেয় সে। শখের একটা লাগেজ আছে ছোঁয়ার। সেটা বাবা কিনে দিয়েছিলো। সেই লাগেজটাই নিয়ে যাচ্ছে ছোঁয়া।

সাদি রুম থেকে বের হতেই দেখে ছোঁয়াও বেরিয়ে গেছে৷
ছোঁয়া কাছাকাছি আসতেই সাদি সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে যায়। কারো সাথে কোনো কথা না বলে বেরিয়ে যায়। ছোঁয়া সাদির পেছন পেছন দৌড় দেয়।
সবাই তাকিয়ে থাকে ওদের দিকে।

বাইরেই সামির গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো। সাদি গিয়ে গাড়িতে বসে পড়ে। ছোঁয়াও পেছনে বসে।
সাদির দিকে তাকিয়ে বলে
“আমি তো ভেবেছিলাম এখন হাঁটিয়ে নিয়ে যাবেন। যাক একটু হলেও অপাষাণ।

সামির ড্রাইভিং করতে করতে জিজ্ঞেস করে
” অপাষাণ আবার কি?
“অপাষাণ মানে একটু হলেও মায়া আছে।
সামির হাসে।
ছোঁয়া সাদির দিকে এক পলক তাকায়। সে ফোন দেখছে।
” সামির ভাইয়া
তোমার বাকি বন্ধুরা কোথায়?
“কোথায় আবার তোমাদের জন্য ঘর সাজাচ্ছে?

“কি দিয়ে ভাইয়া? নিমপাতা আর আস্ত আস্ত করলা দিয়ে?

ছোঁয়ার কথায় সামির শব্দ করে হেসে ওঠে।
সাদি চোখ পাকিয়ে তাকায় ছোঁয়ার দিকে

চলবে

#হৃদয়হরণী
#পর্ব:১৫
#তানিশা সুলতানা

মানুষ সব সময় তার বিপরীতে স্বভাবের মানুষকেই ভালোবেসে ফেলে। এই যে ছোঁয়া চঞ্চল, উড়নচন্ডী, হৈ হুল্লোড় করতে পছন্দ করে। কিন্তু সাদি?
গম্ভীর! একটু বেশিই গম্ভীর সে। মানুষ কখনো এতোটা গম্ভীর হয়?
হুমম হয়
মানুষের জীবনে মাঝেমধ্যে এমন কিছু পরিস্থিতি আসে যা তাকে গম্ভীর হতে বাধ্য করে। সাদি ছোট বেলা থেকেই চুপচাপ স্বভাবের কিন্তু এতোটা গম্ভীর সে ছিলো না। একটু আতটু কথা সেও বলতো। খিলখিল করে না হাসলেও মুখ টিপে সে হাসতো। বন্ধুদের সাথে খুব বেশি আড্ডা না দিলেও মাঝেমাঝে একটু সময় দিতো।
কিন্তু এখন তার সেই হাসিটা চলে গেছে।

সামির সাদির কথা ভেবে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। সে কানে হেডফোন গুঁজে নিয়েছে আর ছোঁয়া সামির সাথে কথা বলে যাচ্ছে। অবশ্য সামির কথা বলার সুযোগ পাচ্ছে না শুধু ছোঁয়ার কথা গুলো শুনে যাচ্ছে।
ছোঁয়ার চোখে মুখে খুশির ঝিলিক। হাত নেরে নেরে কথা বলছে সে। কথার মাঝেমাঝে শব্দ করে হেসে উঠছে। হাসতে হাসতে গাড়ির কাঁচে বাড়ি খাচ্ছে।

ছোঁয়া কথা গুলো অদ্ভুত। এই যে যেমন সে পাখি হলে উড়ে চলে যেতো ফ্লাইটে। গাড়ি করে যেতে হতো না। টাকা বাঁচতো। রাস্তায় ট্রাফিক পুলিশ না থাকলে দুই চারটা গাড়ি চুরি করে ফেলতো সে। সাদির মাথা নেরা করে দিলে কেমন লাগবে। এইসবই

একই এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়েছে সাদি। বাড়িতে থাকলেও পারতো। কিন্তু সাদি থাকবে না। এখান থেকে ছোঁয়ার কলেজে যাওয়ার রাস্তা দশ মিনিটের। আর সাদির অফিসের সামনেই বাসাটা।
মেইন রোডের পাশেই তিন তালা বিল্ডিং এর ওপরের তালার বাসাটা ভাড়া নিয়েছে সে।
বেশ বিলাশ বহুল রুমটা। তিনটে রুম। দুটো রুমের সাথে ছোট্ট বেলকনি আছে। একটা কিচেন আর ছোট্ট একটা ড্রয়িং রুম। একটা পরিবার অনায়াসে থাকতে পারবে।

রিমি আশিক পাপন তারা পুরো বাসাটাকে সুন্দর করে সাজিয়েছে। আনাচে কানাচে ফুলে ফুলে ভরিয়ে দিয়েছে। সব থেকে বেশি ফুল লাগানো হয়েছে সাদির রুমটাতে। মনে হচ্ছে ফুলেরই বাগান।
ছোঁয়া বাসায় ঢুকে অবাক হয়ে যায়। ঘুরে ঘুরে দেখতে থাকে সবটা।
রিমি আর পাপন ছোঁয়ার সাথে সাথে যাচ্ছে। তাকে বুঝিয়ে দিচ্ছে কোথায় কি আছে। ছোঁয়া ভীষণ খুশি। কেমন স্বপ্ন স্বপ্ন লাগছে তার। এমনটাই তো সে কল্পনা করেছিলো। স্বপ্ন দেখেছিলো। স্বপ্ন কি তবে সত্যি হলো?

সাদি ফাঁকা রুমটাতে ঢুকে পড়েছে। তার ফ্রেশ হওয়া দরকার।
রুমে ঢুকেই দরজা লাগিয়ে দিয়েছে।

ছোঁয়া বাসর ঘরে ঢুকতেই লাফিয়ে ওঠে। খাটের মাঝখানে গিয়ে বসে রিমিকে ছবি তুলে দিতে বলে। রিমিও হাসি মুখে ছোঁয়ার ছবি তুলে দিতে থাকে।

সামির বিরিয়ানি আনে। খিধেয় সবারই পেট চৌ চৌ করছে। ছোঁয়া শাড়ি গহনা ফেলে সুতি থ্রি পিছ পড়ে নিয়েছে। এতোখনে তার শান্তি লাগছে।
রিমি পাপন খাবার সার্ভ করে দিচ্ছে। সাদি এখনো বের হয় নি রুম থেকে। সবাই জানে সাদি বিরিয়ানি খাবে না। তাই রিমি গিয়ে গ্যাসে ভাত আর করলা সিদ্ধ বসিয়ে দেয়। তারা খেতে খেতে হয়ে যাবে।

তারপর সবাই মিলে খেতে থাকে। বিরিয়ানি ছোঁয়ার ভীষণ প্রিয়। তাকে তিন বেলা বিরিয়ানি খেতে দিলেও সে না করবে না। ছোঁয়া গাণ্ডেপিণ্ডে গিলতে থাকে। আজকে তার বিয়ে হয়েছে তার বর এখনো খায় নি এদিকে ছোঁয়ার খেয়াল নেই৷ সামির ভাবে মেয়েটা নেহাতি বাচ্চা। এখনো সংসার স্বামী এসবে তার আগ্রহ হয়ে ওঠে নি।
তবে মেয়েটা সাদিকে অসম্ভব ভালোবাসে৷

খাওয়া দাওয়া শেষে সবাই চলে যায়। ছোঁয়া পেঁয়াজ মরিচ কেটে করলা ভর্তা করে নেয়। সত্যি বলতে এই ভার্তা ছোঁয়ারও খুব পছন্দ। গরম গরম ভাতের সাথে খেতে দারুন লাগে।
প্লেটে ভাত বেরে তারপর ভর্তা নিয়ে সাদিকে ডাকতে যায়।
পাষাণ লোকটা এখনো দরজা খুলে নি। ছোঁয়া দরজায় টোকা দেয়

“এই যে দরজা খুলুন। আপনার রুমে সোনাদানা নেই যে কেউ চুরি করে নিয়ে নিবে। ঢং বাদ দিয়ে দরজা খুলুন। আর তাড়াতাড়ি খেয়ে নিন। ভাত ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।

তবুও সাদির কোনো সাড়া নেই। ছোঁয়ার রাগ হয়। দুটো লাথি মারে দরজায়। তারপর জোরে জোরে থাপ্পড় মারতে মারতে ডাকে
” সাদু দরজা খুলবেন কি না বলুন? না খুললে আমি ভেঙে ফেলবো বলে দিলাম। ঢং দেখাচ্ছেন কাকে আপনি? আপনার ঢং দেখায় সময় নেই আমার। জলদি জলদি দরজা খুলুন৷ এমন একটা ভাব করছেন যেনো বিয়ে করে লজ্জা পাচ্ছেন। বা আপনি মেয়ে জোর করে আপনাকে বিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাই দরজা বন্ধ করে মুখ লুকিয়ে কাঁদছেন। কান্নাকাটি বাদ দিয়ে দরজা খুলুন।

সাথে সাথে দরজা খুলে যায়। ছোঁয়া শুকনো ঢোক গিলে দু পা পিছিয়ে আসে। মুখ নারিয়ে বড্ড ভুল করে ফেলেছে। কি কি বলেছে ভাবতেই আবারও শুকনো ঢোক গিলে। পিটপিট করে এক পলক তাকায় সাদির দিকে। বেচারা রোবট গম্ভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ছোঁয়ার দিকে। রেগে আছে না কি বোঝা যাচ্ছে না।

ছোঁয়া জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে মাথা নিচু করে বলে
“সরি
আসলে আপনি তো দরজা খুলছিলেন না। তাই ভাবলাম মুখ চালাই। শেষ মেষ বিরক্ত হয়ে আমাকে থামানোর জন্য দরজা খুলে দিবেন৷

সাদি ফোঁস করে শ্বাস টেনে ছোঁয়ার থেকে নজর ফিরিয়ে নেয়

” সত্যি বলছি। আমি শুধুমাত্র আপনাকে বের করার জন্য বেশি কথা বলেছি। তাছাড়া আমি কখনোই বেশি কথা বলি না। এই যে এই বিল্ডিং এর কসম। আমি তো পাগল যে রাক্ষসের সামনে মুখ চালাবো

“ভেরি গুড এতোদিনে নিজেকে চিনেছো।

বলেই সাদি খাবার টেবিলে গিয়ে বসে পড়ে। আর ছোঁয়া ভেবাচেকা খেয়ে যায়। মুখের ওপর অপমান করে দিলো? বজ্জাত লোক। কিছু বলারও যাবে না৷

সাদি খাচ্ছে আর ছোঁয়া পাশে দাঁড়িয়ে আছে। কিছু লাগলে দেবে সে।
” কোন রুমে থাকবে?

সাদির প্রশ্নটা বুঝতে পারে না ছোঁয়া। কোন রুমে থাকবে মানে?
ভাবতে ভাবতে ছোঁয়া খেয়াল করে সাদি পানি ঢালছে গ্লাসে। তারাহুরো করে সাদির হাত থেকে জগ নিয়ে গ্লাসে পানি ঢাকতে যায় ছোঁয়া। কিন্তু গ্লাস পড়ে গিয়ে পুরো পানিটা সাদির শরীরে এসে পড়ে।
ভয়ে চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে ফেলে ছোঁয়া। এই যে এখনই একটা ধমক খাবে সে।

রাতে শরীর কাঁপতে থাকে সাদির। ভাতের প্লেটেও পানি পড়েছে। পান্তা ভাত হয়ে গেছে।
ছোঁয়া কিছু বলতে যায়
“এখান থেকে যাও তুমি ইডিয়েট
সাদি গম্ভীর গলায় ধমক দিয়ে বলে।
কেঁপে ওঠে ছোঁয়া। চোখ দুটো টলমল করছে। সে এক মুহুর্ত না দাঁড়িয়ে চলে যায়।

সাদির আর খাওয়া হয় না। বেসিনে গিয়ে হাত ধুঁয়ে এঁটো থালাবাসন গুছিয়ে নেয়। এতোগুলো মানুষ খেয়েছে। থালাবাসন জমেছে অনেক গুলে। তাই থালাবাসন মেজে নেয়।

ছোঁয়া ফুল সাজানো খাটে বসে আছে মন খারাপ করে। ইচ্ছে করে ফেলেছে না কি ছোঁয়া? এভাবে ধমক দেওয়ার কোনো মানে হয়? পাষাণ লোক। ছোঁয়া মনে মনে সাদিকে বকা দিচ্ছে তখনই সাদি ঢুকে পড়ে ছোঁয়ার রুমে।
ছোঁয়া চোখ দুটো বড়বড় করে ফেলে। লোকটা এখানে কেনো এসেছে? বাসর করতে? ইসসস ছোঁয়া লজ্জা লুকাবে কোথায়? সাদি কি তাহলে আমিষ হয়ে গেলো?
বিয়ের রাতে রাত বারোটায় ফুল সাজানো রুমে বউয়ের কাছে মানুষ কেনো আসে?

ছোঁয়া সবটা জানে। সে তার বান্ধবীর কাছে শুনেছে। এ টু জেড সবটা শুনেছে সে।
লজ্জায় লালনীল হতে থাকে ছোঁয়া।

চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে