#হৃদয়হরণী
#পর্ব:১
#তানিশা সুলতানা
ভরা ক্লাস রুমে ছোঁয়ার গালে স-জোরে থা*প্প*ড় মারে সাদি। স্তব্ধ হয়ে যায় পুরো ক্লাস রুম। ছোঁয়া তাল সামলাতে না পেরে বেঞ্চের ওপরে পড়ে যায়। ঠোঁট খানিকটা কেটে যায়। কপালে আঘাত পায়। “আহহ শব্দ করে ওঠে ছোঁয়া। মাথা ঘুরছে তার। চারদিক অন্ধকার দেখছে। সেভাবেই চোখ বন্ধ করে খানিকক্ষণ পড়ে থাকে ছোঁয়া। ওঠার শক্তি তার নেই মধ্যে । পুরো ক্লাস রুমে সিলিং ফ্যানের খটকট আওয়াজ ব্যতিত আর কোনো শব্দ নেই।
ছোঁয়ার পাশে বসে থাকা তিথি ছোঁয়াকে তুলে বেঞ্চে বসায়।
ঠোঁট আর কপাল থেকে বেয়েঁ র*ক্ত পড়ছে।
দু-চোখ বেয়ে পানি পড়ছে অনবরত। কিছুতেই কান্না আটকাতে পারছে না।
সাদি ছোঁয়ার ইংলিশ বইটা ছুঁয়ে ক্লাসের বাইরে ফেলে দেয়। বেঞ্চে সজোরে আঘাত করে চিৎকার করে বলে ওঠে
“এসব কি? সাহস হয় কি করে এসব লেখার? বয়স কতো তোমার? স্যারকে প্রেমপত্র লেখা হচ্ছে? এসব শিক্ষা পেয়েছো পরিবার থেকে? স্টুপিট.
ছোঁয়া কেঁপে ওঠে। জরোসরো হয়ে বসে তিথির সাথে চিপকে। নিস্তব্ধ পরিবেশে সাদির চিৎকার ভীষণ ভয়ংকর। তার চোখের সাদা অংশ টুকুতে লাল আভা ফুটে উঠেছে। কপালের রগ গুলো জেগে উঠেছে। অতিরিক্ত রাগে জোরে জোরে শ্বাস টানছে।
পেছন থেকে একটা মেয়ে বলে ওঠে
” স্যার ও সবাইকে বলে বেড়ায়। আপনাকে নিয়ে না কি হানিমুনে যাবে।
পেছনের কয়েকজন হেসে ওঠে। সাদি তাকাতেই আবার থেমে যায়।
আরেকজন বলে
“এই মেয়ে প্রচন্ড বাড়াবাড়ি করে স্যার। পুরো কলেজে রটিয়েছে সে আপনাকে ভালোবাসে। অন্য মেয়েদের সাথে ঝগড়া করে আপনাকে নিয়ে। বদমাইশ মেয়ে একটা।
এই খবর সাদির অজানা নয়। সে জেনেছে। তবুও চুপ ছিলো। তবে আজকে সমস্ত সীমা অতিক্রম করেছে। এমনটা আরও কিছু মেয়ে করে। তাদের সবাইকে শিক্ষা দিতে চায় সাদি ছোঁয়ার মাধ্যমে। যাতে দ্বিতীয় বার কেনো স্টুডেন্ট টিচারকে প্রেমপত্র লেখার আগে দ্বিতীয় বার চিন্তা করে।
” লজ্জা লাগছে না তোমার? নিলর্জ্জ মেয়ে। নিজের সাথে সাথে আমার মানসম্মান ডুবাচ্ছো? ভালোবাসার তুমি কি বুঝো? ঢাক ঢোল পিটিঁয়ে ভালোবাসা রটাচ্ছো? বাবা মা জানে সে খবর?
ফের ধমকিয়ে বলে সাদি।
ছোঁয়া মাথা নিচু করে কাঁদছে শুধু। তার কিছুই বলার নেই। সত্যিই সে অপরাধী। ভীষণ অপরাধ করেছে সে।
ছোঁয়াকে চুপ থাকতে দেখে সাদি দাঁতে দাঁত চেপে প্রচন্ড চিৎকার করে বলে
“চুপ করে আছো কেনো? জবাব দাও?
কোনো জবাব নেই তোমার কাছে?
বেরিয়ে যাও আমার ক্লাস থেকে। আমার ক্লাসে তোমার থাকার কোনো অধিকার নেই। আর হ্যাঁ নেক্সট টাইম যেনো আমার ক্লাসে তোমায় না দেখি।
সাদির চিৎকারে ক্লাসের প্রতিটা স্টুডেন্ট জড়োসড়ো হয়ে যায়। ছোঁয়া ভয়ে কাঁপতে থাকে। নিঃশ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছে তার। কান্নায় গলা আটকে আসছে।
ছোঁয়াকে একই ভাবে সটান হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সাদির রাগ দ্বিগুণ বেড়ে যায়। সে ছোঁয়ার হাত ধরে টেনে দরজা ওবদি এনে ধাক্কা দিয়ে বের করে দেয়।
পড়তে পড়তে নিজেকে সামলে নেয় ছোঁয়া। পেছন ঘুরে এক পলক তাকায় সাদির দিকে। নিষ্ঠুর মানুষ।
ছোঁয়ার ব্যাগটাও ক্লাসের বাইরে ফেলে দেয় সাদি। কলম বই ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে।
ছোঁয়া কাঁদতে কাঁদতে বই কুড়িয়ে নেয়। ব্যাগে পুরে ব্যাগটা কাঁধে চেপে আবারও এক পলক তাকায় ক্লাসের দিকে। সবাই তাকিয়ে আছে ছোঁয়ার দিকে। মুখ টিপে হাসছে অনেকেই। সাদি বই দেখছে।
অন্য ক্লাসের স্টুডেন্টরাও এই খবর জেনে যায়। টিচাররাও জেনে যায়। এই টুকুনি সময়ে পুরো কলেজে ঘটনাটা ছড়িয়ে পড়ে। সবাই ছোঁয়াকে দেখে হাসতে থাকে।
ছোঁয়া মাথা নিচু করে কলেজ থেকে বেরিয়ে আসে। সবার হাসির পাত্র হয়ে গেলো ছোঁয়া।
কলেজের বাইরে আসতেই আর আটকাতে পারে না নিজেকে। ঘাসের ওপর বসে চিৎকার করে কেঁদে ওঠে।
প্রথম সিটে বসেছিলো ছোঁয়া। তাই সাদি পড়ানোর জন্য ছোঁয়ার বইটাই নিয়েছিলো। বই খুলে তাতে বড়বড় অক্ষরে লেখা দেখতে পায়
সাদু বেবি
আপনি এতো কিউট কেনো? দেখলেই ইচ্ছে করে টুপ করে আপনার গালে চুমু খেয়ে ফেলি। আপনার হাতে আর বুকের লোম গুলো আমাকে চুম্বকের মতো টানে। আপনার বিলাই চোখ দুটো আমাকে প্রেমের সাগরে ভাসিয়ে নিয়ে যায়। নাকের ওপরের ছোট তিল উফফফফফ
সেটার কথা কি বলবো।
চাপ দাঁড়িতে আপনাকে আস্ত একটা মায়ারাজ মনে হয়।
ইচ্ছে করে আপনার বুকে মাথা রেখে আপনার হৃৎস্পন্দন শুনি। আপনার হৃদয়স্পর্শী হতে চাই আমি।
কেন আই ফিল মি?
ইতি
আপনার প্রেমে পাগল ছোঁয়া
চিঠির কথা গুলো পড়তেই সাদির মাথা গরম হয়ে যায়। এই মেয়ের সাহস কতো বড়? সে একজন টিচারকে চিঠি লিখে।
কলেজের এই দিকে মানুষ নেই। কাঠ বাগান বলে এটাকে। এখানে বিকেল হলে মানুষের সোরগোল বাড়ে।
মানুষ না থাকায় ছোঁয়ার কান্না কেউ শুনতে পায় না। নিজের শরীরে নিজে আঘাত করতে থাকে ছোঁয়া। হাতে গলায় মাথায় খামচি দিতে থাকে। চুলগুলে টানতে থাকে।
তার এই মুহুর্তে ম*রে যেতে ইচ্ছে করছে। সে সহ্য করতে পারছে না।
__
কাঁদতে কাঁদতে চোখ মুখ ফুলে গেছে ছোঁয়ার। দুপুরের কড়া রোদের মধ্যে পায়ে হেঁটে বাড়ি ফিরে। বিধস্ত দেখাচ্ছে ছোঁয়াকে। কপালের রক্ত শুকিয়ে গেছে। ঠোঁটের পাশের রক্ত শুকিয়ে গেছে। ডান গালে পাঁচ আঙুলের দাগ স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে।
নাজমা বেগম টিভি দেখছিলো। এভাবে বিধস্ত ছোঁয়াকে বাড়ি ফিরতে দেখে তিনি ভরকে যায়। রিমোট রেখে দাঁড়িয়ে যায়। ছোঁয়া মাথা নিচু করে ফেলেছে। চোখে মুখের পানি মুছে নিয়েছে খানিকক্ষণ আগেই
নাজমা ছোঁয়ার কাছে গিয়ে বলে
“কি হয়েছে তোর? কপাল কাটলো কি করে? চোখে মুখের এমন অবস্থা কেনো তোর? কি হয়েছে?
ছোঁয়া জবাব দেয় না। মাকে এড়িয়ে রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেয়। নাজমা দরজা ধাক্কা দিতে দিতে ছোঁয়াকে ডাকতে থাকে। কিন্তু ছোঁয়া শুনে না।
আলমারি খুলে সেখান থেকে সাদির ছবি বের করে। বেশ কয়েকটা ফটোফ্রেম বানিয়েছিলো সে। সাদি কিছু চকলেট দিয়েছিলো ছোঁয়াকে৷ সেই চকলেট গুলো এখনো খায় নি৷ দিয়েছিলো গত ঈদে।
সাদির একটা শার্ট চুরি করে এনেছিলো। নিজের কাছে রাখবে বলে। সেই শার্টটাও বের করে।
খুব যত্নে একখানা ডাইরি লিখেছিলো সাদির নামে। সমস্ত অনুভূতি, ভালোবাসা মিশিয়ে লিখেছিলো ডাইরিখানা।
সব কিছু এক জায়গায় করে। ডেসলাই দিয়ে জিনিস দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে দেয় ছোঁয়া। পুড়তে থাকে ছোঁয়ার কিশোরী মনে জন্ম নেওয়া ভালোবাসা। ছাই হতে থাকে অতি’প্রিয় জিনিস গুলো।
চলবে।