#হৃদয়কুঠিরে_উষ্ণ_প্রণয় -।।০৩ পর্ব।।
#তাসনিম_তামান্না
ভোরের সূর্যদয় হচ্ছে মৃদু শীতল হাওয়া বয়ছে। শানায়ার এলোমেলো পিঠজুড়ে ছড়ানো চুলগুলো উড়ছে সেই শীতল বাতাসে। জুবরান অনটাইমের কাপে করে চা, বিস্কুট নিয়ে এসে দেখলো শানায়া বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে। কাপটা এগিয়ে দিয়ে বলল
— আজ বাসা যাবি রাতে এতো কষ্ট করে এখানে থাকতে হবে না আমরা থাকবো তো এতো টেনশনে কিছু নাই।
— আমার আব্বু আমি থাকব আপনাদের কারোর থাকতে হবে না
— ওহ হ্যাঁ তুই তো একাই একশো তাহলে তুই-ই থাকিস। আমরা থেকে কি করব
তারপর কিছুক্ষণ নিরবতা চলল। শানায়া আড় চোখে জুবরানকে দেখে আমতা আমতা করে বলল
— আপনারা আছেন যখন আপনারাই থেকেন। এতে এতো রাগ করার কি আছে?
জুবরান ডান ভ্রু উঁচু করে বলল
— আমার রাগ করাই তোর যায় আসে?
শানায়া চুপ রইলো। শানায়া চায়ে ফুঁ দিয়ে দিয়ে শব্দ করে বাচ্চাদের মতো করে চা খাচ্ছে। শানায়ার চা খাওয়ার স্টাইল দেখে জুবরান শব্দ করে হেসে ফেলল। হঠাৎ এমন করে হাসায় শানায়া চোখ পিটপিট করে তাকালো। কিছু বুঝতে না পেরে জিজ্ঞেস করল
— কি হলো হাসছেন কেনো? পাগল হয়ে গেলেন নাকি?
জুবরান হাসি থামিয়ে বলল
— তুই তো দেখি বাচ্চাই রয়ে গেলি
শানায়া ভ্রু কুঁচকে গম্ভীর কণ্ঠে বলল
— কেনো কি করেছি আমি?
— কিছু না।
— তাহলে বাচ্চা বললেন কেনো? জানেন আমার এতোদিনে বিয়ে হলে দু/চারটা বাচ্চাকাচ্চা থাকত।
জুবরান শান্ত চোখে শানায়ার দিকে তাকিয়ে রইলো। শানায়া একটু অপ্রস্তুত হয়ে গেলো কার সামনে কি বলে ফেলেছে! শানায়া বিড়বিড় করে বলল
— রোবট একটা
জুবরান শুনতে পেলো স্পষ্ট। চোখ ছোট ছোট করে তাও জিজ্ঞাসা করল
— কিছু বললি?
— না বলছি কি আপনি সব পরিস্থিতিতে এতো শান্ত থাকেন কিভাবে?
— কেনো?
— না এমনিতেই শিখে রাখতাম
— ওতো শিখতে হবে না। তোর এইচএসচি এক্সাম কেমন হলো?
— এতোদিন পর শুনছেন?
— কেনো এতে কোনো সমস্যা তোর?
— না কোনো সমস্যা নেই। ভালোই হয়েছে।
— কোথাও এডমিশন দেওয়ার প্লান নেই?
— না
— কেনো?
— আমি বাবাহ আপনার মতো ওতো ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট নাই
জুবরান দীর্ঘ শ্বাস ছাড়লো। এই মেয়ের সাথে কথা বলাই বৃথা যা বলব সবটা উত্তর রেডি করা থাকে আগে থেকে।
আজ দুপুর বারোটার দিকে শাহাদাত হোসেনকে বাসা আনা হয়েছে। পাশের বাসা থেকে লোকজন দেখতে আসছে। শানায়া এতে বড্ড বিরক্ত হচ্ছে এতোদিন হসপিটালে ছিল কেউ দেখতে যায় নি মরে গেছে কি বেঁচে আছে। যেই বাসা এসেছে সেই লোকজনের লোক দেখা আ’দিখ্যে’তা দেখাতে আসছে।
সারাদিন লামিয়া এবাসায় ছিল সকলের লামিয়ার এতো ভালোমানুষি হজম করতে কষ্ট হচ্ছিল। অনেক রাত হওয়ার পরও লামিয়া বাসায় না যাওয়ায় জুলেখা বেগম বলল
— লামিয়া যা অনেক রাত হয়েছে ঘুমিয়ে পর আবার কাল আসিস
একথা শুনে লামিয়া ওপরে সাফওয়ানের ঘরের দিকে ঘুমানোর জন্য যেতেই জুলেখা আর্শ্চয্য রকম চমকে গিয়ে বলল
— ওদিকে কোথায় যাস?
— সাফওয়ানের রুমে ঘুমাতে যাচ্ছি!
লামিয়ার ছোট কথাটুকু বি*স্ফ*রণের ন্যায় ফাটলো জুলেখা বুদ্ধিমতি একটু ইঙ্গিতে তিনি না চাইতেও অনেক কিছু বুঝে ফেলে। তিনি সবটা কিলিয়ার হতে আবারও প্রশ্ন করলেন
— ওর রুমে ঘুমাতে যাবি মানে?
— তোমরা হয়ত জানো না। ইচ্ছাকৃত হোক বা অনিচ্ছাকৃত হোক তোমাদেরকে এ বিষয়টা সাফওয়ান বা শানায়া কেউ জানায় নি। তাই আমাকেই বলতে হচ্ছে আমার আর সাফওয়ানের বিয়ে হয়ে গেছে আজ থেকে ঠিক এক সপ্তাহ আগে।
জুলেখা আর্শ্চয্যরকম চমকে গেলো। মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিল। বাকহারা হয়ে লামিয়ার মুখশ্রীতে তাকিয়ে রইলো। শানায়া নিচে আসছিল পানি নিতে সবটা শুনে বলল
— এটাও বল যে ভাইয়াকে তুই ফাঁসিয়ে বিয়ে করেছিস।
জুলেখা কিছু বুঝতে না পেরে বলল
— কি বলছিস তোরা?
— হ্যাঁ আম্মু লামিয়া ভাইয়ার বউ। কিন্তু ভাইয়া লামিয়াকে বউ হিসাবে মানে না!
— আর্শ্চয্য সবটা খুলে বল আমাকে…
ওদের কথার আওয়াজ পেয়ে সাফওয়ান রুম থেকে বেরিয়ে এসে বলল
— আমি বলছি আম্মু। সেদিন আব্বুর অপারেশনের টাকা আনতে বাসায় আসি আর তখনই লামিয়া সেইটাই সুযোগ নিয়ে চিৎকার চেচামেচি করে লোক জড়ো করে বলে আমি না-কি ওর সাথে জোর জবরদস্তি করছি। আসেপাশে লোকজন কিছু না বুঝে না শুনে ওর সাথে আমার বিয়ে দিয়ে দেয়। জানো সেদিন বলেছিলাম বাবা হসপিটালে পরে এর বিহিত করো কিন্তু কেউ আমার কথা শুনে নি।
জুলেখা মাথায় হাত দিয়ে চেয়ারে বসে পড়ে। কয়েকক্ষণ নিরবতা চলে। নিরবতা ভেঙে লামিয়া চোখ ভর্তি পানি আর কণ্ঠ কাঁদো কাঁদো করে বলল
— বিশ্বাস করো চাচি…
জুলেখা হাত উঠিয়ে থামিয়ে দিয়ে বলল
— আগে কেনো এসব বলো নি তোমরা?
— আম্মু এসব ঝামেলার মধ্যে আর বলা হয়ে উঠি নি।
— তোমাদের আব্বু এসব জানলে কতটা কষ্ট পাবে তোমাদের ধারণা আছে?
–আম্মু?
জুলেখা নিজেকে ধাতস্থ করে বলল
— লামিয়া আজ রাত গেস্ট রুমে থাকো কাল তোমার বাবা-মায়ের সাথে এবিষয়ে কথা বলে একটা সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
যে যার রুমে চলে গেলো।লামিয়া দিকবিদিক শুন্য দেখলো। ও মস্ত বড়ো ভুল করে ফেলেছে। এ ভুলের কি ক্ষমা হয় না? ভেবেছিল বিয়ে টা হয়ে গেলে সাফওয়ান নামক কল্পপুরুষের ভালোবাসা মিলবে। কিন্তু আজ এই পরিস্থিতিতে এসে উপলব্ধি করতে পারছে জোর করে ভালোবাসা হয় না। শুধু ঘৃণা পাওয়া যায়।
_____________________________
সকালে সকলে মিলে জড়ো হয়েছে মিশন সাফওয়ান, লামিয়ার বিয়ের একটা শুনানি এভাবে একটা ভুল বোঝাবুঝি বয়ে বেড়ানোর মানে হয় না। সাখয়াত হোসেন মেয়ের কুকৃত্তির কথা শুনে অপমানে মুখ থমথমে হয়ে গেলো। লামিয়ার সৎ মা এসব শুনে বলল
— মা মেয়ে দুজনেই একই রকম। এ মেয়েকে আমি আমার ঘরে আর তুলব না। আপনারা যা পারেন করেন
কথাটা বলে তিনি প্রস্থান করলেন। তার এমন গা ছাড়া ভাব হওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। কেউ ই চাইবে না তার ঘরে কোনো উটকো ঝামেলা থাকুক!
— ভাই সাহেব আপনার কি মত?
সাখয়াত আমতা আমতা করে বলল
— দেখুন ভাবী আমি তো এতো গভীর ভাবে কিছু জানতাম না। যদি দোষী লামিয়া জানতাম তাহলে আমি এ বিয়ে কিছুতেই হতে দিতাম না।
— মূল কথায় আসুন ভাই আমি সোজাসাপটা কথা বলতে পছন্দ করি
— ভাবী দেখুন বিয়েটা যেহেতু হয়ে গেছে তাহলে থাক না বিয়ের বন্ধন এভাবে কি ছিন্ন করা যায়?
— অসম্ভব চাচা আমি কিছুতেই লামিয়ার সাথে সংসার করতে পারব না
–সাফওয়ান আমি কথা বলছি। চুপ করে বসো। হ্যাঁ ভাই সবটা বুঝলাম কিন্তু আমার ছেলের চরিত্রে যে কালিটা লাগলো সেটার কি হবে সারাজীবন বয়ে বেড়াবে? যদি ও এই সংসারটা করে তাহলে সকলে এব্যাপারটা সত্যি ভেবে নিবে। আমি তো এটা মানব না।
চলবে ইনশাআল্লাহ