হৃদয়কুঠিরে উষ্ণ প্রণয় পর্ব-১০ এবং শেষ পর্ব

0
4920

#হৃদয়কুঠিরে_উষ্ণ_প্রণয় -।।১০ পর্ব।।(অন্তিমপাতা)
#তাসনিম_তামান্না

দিন দিন শীতের তিব্রতা বেড়েই চলেছে। শৈত্যপ্রবাহের আজ আকাশ মেঘাচ্ছন্ন শীতল বাতাসের চারিদিক থম মেরে আছে। সেদিনের পর আর জুবরান শানায়ার দেখা হয় নি। রাহিকে হসপিটাল থেকে বাসায় এনেছে তিন দিন। আজ প্লান করেছে সবাই মিলে রাহিকে দেখতে যাবে। মূলত সাফওয়ান-ই প্রিয়সীকে দেখা জন্য ছটফট করছে। কিন্তু একা যেতে কেমন দ্বিধা কাজ করছে। রাহির বাবা-মা আবার কি না কি মনে করে ওকে রাহির সাথে দেখা করতে দিবে না। জুবরান, শানায়া সাথে থাকলে একটু সাহস পাচ্ছে। ওদের বের হওয়ার সময় লামিয়া বলল
— তোমরা সবাই দল বেঁধে কোথায় যাচ্ছো?
সাফওয়ান বলল
— যেখানেই যায় তোকে কি কৈফিয়ত দিয়ে যেতে হবে?
— অবশ্যই কেনো না আমি তোমার স্ত্রী!
— জোর করে বিয়ে করে নিলেই স্ত্রী হওয়া যায় না। আর আমি তোকে স্ত্রী হিসেবে মানিই না আমার সবটা জুড়ে রাহি আছে।
লামিয়া রেগে সাফওয়ানের শার্টের কলোয়ার ধরে বলল
— সবসময় রাহি, রাহি আর রাহি! রাহির চেয়ে আমি কম কিসে?
ওদের চিৎকার চেচামেচিতে জুলেখা বেড়িয়ে এসে লামিয়া কে ধমক দিয়ে বলল
— লামিয়া কি হচ্ছে ছাড়ো ওকে
— তোমার ছেলে সারাক্ষণ রাহি রাহি করে কেনো? আমি কম কিসে?
সাফওয়ান লামিয়ার হাত ঝটকা মেরে সরিয়ে নিয়ে বলল
— তোর মনের মধ্যে শয়তানি যা রাহির নেই। আর আমার ব্যপারে ইন্টার ফেয়ার করতে আসবি না।
ওরা চলে যেতেই জুলেখা বলল
— তুমি কিন্তু বাড়াবাড়ি করছ। আমাকে ছেলে জোর করে বিয়ে করলে এখন কি ওকে মে*রে ফেলতে চাইছ? তুমি কি এটাই চাইছ?
লামিয়া চোখ ছলছল করে বলল
— কি বলছ আমি সাফওয়ানকে ভালোবাসি ওর খারাপ কেনো চাইব?
— যদি ভালোই চাস তাহলে ওর জীবন থেকে চলে যা ও শান্তি পাবে
জুবরান গাড়ি আনায় জুবরান গাড়ি চালালো পাশে সাফওয়ান বসলো পিছনে শানায়া বসল। রাগে সাফওয়ানের শরীর থরথর করে কাঁপছে হিসহিসিয়ে বলল
— আজ মা না আসলে লামিয়ার গায়ে হাত উঠে যেত মা আসায় আজ ও বেঁচে গেলো।
শানায়া জুবরান কেউ কিছু বলল না।
_____________

শানায়া আজ খুব সাজুগুজু করছে একটু আগে জুবরান ফোন দিয়ে বলেছে আজ ওরা ঘুরতে যাবে শানায়াও খুশি হয়ে গেছিল। কিন্তু জুবরানের আসতে আসতে অনেক রাত হয়ে গেলো তার ওপরের বাইরে তুষারপাত হচ্ছে। শানায়ার রাগে, অভিমানে কান্না পেল। কলিংবেল বাজতেই শানায়া দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলে দিল অভিমানে কিছু বলল না।
— মেয়েদের অভিমান হলো বরফের মতো একটু আদর দিয়ে কথা বললেই তাদের অভিমান গলে পানি হয়ে যায়। আর তুমি আমার সেই বরফের ন্যায় আদুরে বিড়াল ছানা। তোমাকে আদর দিব।

শানাইয়া অভিমানে মুখ ফুলিয়ে বলল

— আমি বরফের মতো ঠান্ডা নই! আর আমি বিড়াল ভয় পাই জানেন না আপনি?
— জানি! তুমি শুধু লাফালাফি করো তাই তো তুমি আমার আদুরে বিড়াল ছানা।
শানাইয়া চমকালো! থমকানো চোখে জুবরানের দিকে তাকালো কানে বাজাচ্ছে “তুমি আমার আদুরে বিড়াল ছানা”
জুবরান শানাইয়ার দৃষ্টি উপেক্ষা করে জামা কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো। শানাইয়া রোবটের মতো থাইগ্লাসের পাশে এসে দাঁড়ালো। রাত অনেক বেড়েছে বাইরে তুষারপাত হচ্ছে। শুভ্র রংয়ের বরফ কণা বৃষ্টির ন্যায় ঝড়ে পড়ছে চারিদিকে সাদা আর সাদা।
তুষারপাত দেখার মাঝে শানায়ার মুখে ঠান্ডা অনুভব হতেই চমকে চোখ খুলে তাকালো। তন্দ্রার ঘোর কাটতেই বুঝতে পারল এতোক্ষণ ও গাড়ির মধ্যে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখছিল।
— এই তুই ঘুমের মধ্যে হাসছিলি কেনো?
আচমকা এমন প্রশ্নে শানায়া থতমত খেয়ে গেলো কি বলবে বুঝতে পারলো আমতা আমতা করে বলল
— মজার স্বপ্ন দেখছিলাম তাই
— তা কি স্বপ্ন আমরাও শুনি
শানায়া বাইরের দিকে তাকিয়ে বলল
— আমরা এসে গেছি? তাহলে বসে আছ কেনো চলো চলো
কথা বলতে বলতে শানায়া হুড়মুড়িয়ে বেড়িয়ে গেলো।
রাহিদের বাড়িতে জুবরানের চোখে চোখ পড়তেই শানায়া ব্ল্যাস করছে। শানায়ার এমন বিহেভিয়ার দেখে জুবরানের ভ্রু কুঁচকে গেলো। সকলের আড়ালে হাত টেনে এনে বলল
— এই তুই আমার দিকে এমন করে হাসি দিচ্ছিস কেনো?
শানায়া শুকনো ঢোক গিলে বলল
— কই চোখে কি বেশি দেখছেন আজ-কাল
— একদম মিথ্যা বলবি না
— আমি না আপনি মিথ্যা বলছেন
জুবরান চোখ ছোট ছোট করে বলল
— তাই?
শানায়া কি বলবে খুঁজে পেলো না রাহি আসায় এ যাত্রায় বেঁচে গেলো।
— কী গল্প করা হচ্ছে শুনি?
— তেমন কিছু না!
— আচ্ছা আসো খেয়ে নাও তারপর যত ইচ্ছে গল্প করো
— আপু তুমি অসুস্থ শরীর নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করছ কেনো?
— আরে ঠিক আছি আমি তোমরা আসো তো খাবে
______________________
— রাহি তোমার আমার ওপরে বিশ্বাস আছে তো?
— বিশ্বাস না থাকলে তোমাকে এখানে আসতে বলতাম না!
— আমাকে একটু সময় দাও আমি সব ঠিক করে দিব
— আমি তোমার অপেক্ষায় থাকব

রাহিদের বাসা থেকে বের হতে হতে সন্ধ্যা হয়ে গেলো। সাফওয়ান অন্যমনষ্ক হয়ে গাড়ি ড্রাইভিং সিটে বসল। জুবরান তা দেখে বলল
— তুই ড্রাইভিং করবি?
সাফওয়ান হুঁশ আসল আমতাআমতা করে বলল
— দে চালাই
শানায়া জুবরান কে এটা ওটা প্রশ্ন করছে। সাফওয়ান অন্যমনষ্ক হয়ে গাড়ি চালাচ্ছে ও এদিকে কোনো ধ্যান নেই।
— তোর মুখ দিয়ে আজ এতো খই ফুটছে কেনো বলত
— কথা বললেও আজ কাল দোষ দেখছি
হঠাৎ সামনে ট্রাকের লাইট জ্বলে উঠল। সাফওয়ানের বোঝার সময় টুকু অব্দি দিলো না ট্রাকটা সজোরে এসে গাড়িটাকে ধাক্কা মারলো! গাড়ি দূরে ছিটকে গিয়ে ব্লা*স্ট করল! কি থেকে কি হয়ে গেলো। জায়গায় তিনজনে স্পট ডেট হয়ে গেল।
মানুষের জীবন মানেই এক একটা বাস্তবিক গল্প উপনাসের মতো। মানুষ ম*রে গেলে তার জীবনের গল্পের সমাপ্তি ঘটে। বদলে যায় চারিদিকে বিচিত্র দৃশ্য। মানুষ হারিয়ে গেলে তার শূন্যতা তীব্রতা ভাবে অনুভব করতে পারি।

সাফওয়ান, শানায়া, জুবরানের মৃত্যুর পর সবার জীবন থেমে নেই চলছে। লামিয়া শান্ত হয়ে গেছে। সন্তানদের হারিয়ে মা বাবারা দিশে হারা অশান্ত মন শান্ত করে সবটা মেনে নিয়েছে। রাহি আর কখনো বিয়ে করবে না বলে ঠিক করে নিয়েছে। রাহি আর লামিয়ার সাফওয়ানের প্রতি ভালোবাসা সত্যি ছিল!

এই যে আমাদের প্রিয়জনেরা হারিয়ে যায় ভালোবাসা কমে না। তাদের সৃতি, ভালোবাসা, ঘৃণা নিয়ে আমরা বেঁচে থাকি। তারা মরে না আমাদের মাঝে বেচে থাকে আজীবন তারা বেঁচে থাকে!

সমাপ্ত…

আসসালামু আলাইকুম। অপ্রত্যাশিত সমাপ্তির জন্য আন্তরিক ভাবে দুঃখিত!

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে