#হৃদয়কুঠিরে_উষ্ণ_প্রণয় -।।০১ পর্ব।।
#তাসনিম_তামান্না
এক্সি*ডেন্ট করে হসপিটালে বাবা মৃ*ত্যুর সাথে লড়াই করছে। বাসায় টাকা নিতে ভাইকে পাঠিয়ে ছিল ভাই আসছে না, ফোন ধরছে না দেখে শানাইয়া বাসায় এসে ভাইয়ের পাশে বধূ বেশে তার সমবয়সী কাজিনকে দেখে স্তব্ধ হয়ে গেলো। ভাইয়ের চেহারায় অসহায়ত্ব ফুটে উঠেছে। শানাইয়ার সেদিকে খেয়াল নেই। ও কি করবে? কি বলবে? কোনো ভাষা খুঁজে পাচ্ছে না। হঠাৎ কেনো এই বিপদের সময়-ই বিয়ে করতে হলো শানাইয়ার তার ভাইয়ের ওপরে রাগ হচ্ছে কতটা অমানবিক নি’ষ্ঠুর হলে বাবাকে মৃ*ত্যুর পথে রেখে এখানে এসে বিয়ে করে। নিজের রাগকে কন্ট্রোল করতে না পেরে শানাইয়া বলল
— তুমি কত নি’ষ্ঠুর ভাইয়া! বিয়ে করবে ভালো কথা কিন্তু বাবার কথা ভাবলে না? হসপিটালে বারবার টাকার জন্য বলছে টাকা না হলে ওরা অপারেশন শুরু করবে না আর তুমি? ছিঃ তোমার ওপরে আমার ঘৃ*ণা আসছে!
শানাইয়া আর দাড়াঁলো না টাকাটা নিতে বাবা-মায়ের রুমে চলে গেলো। সাফওয়ানের আঁখি জোড়া রক্তিম হয়ে গেছে। লামিয়ার শাড়ির আড়ালে সাফওয়ানের হাতটা ঝটকা মে’রে ছাড়িয়ে বলল
— আজ যদি আমার বাবার কিছু হয় তাহলে তুই সহ তোর পরিবারকে খু*ন করে আমি জে’লে যাবো মনে রাখিস!
লামিয়া কিছুটা ভ’য় পেয়ে চুপসে গেলো। সাফওয়ান বোনের কাছে আসলো। শানাইয়া একবার ঘুরে তাকালোও না নিজের মতো টাকাগুলো নিয়ে বের হওয়ার সময় সাফওয়ান বলল
— চল আমার বাইকে করে না হলে দেরি হয়ে যাবে।
শানাইয়া বলল
— লাগবে না ভাইয়া তুমি যে টাকা গুলো নিয়ে যেতে পারবে না আগে বলে দিলেই পারতে তাহলে আমি আসতাম
— বোন বিশ্বাস কর তুই যেটা দেখছিস সেটা ভুল…
— হ্যাঁ আমি অন্ধ তো চোখে দেখতে পাই না ঠিক মতো তাই যা দেখছি সব ভুল! তুমি একটা সন্তান হিসেবে অ*প*দা*র্থ ভাইয়া। তুমি আমার সেই আগের ভাইয়া নও তুমি পাল্টে গেছ ভাইয়া
শানাইয়া আর দাঁড়ালো না দৌড়ে চলে গেলো। যাওয়ার পথে ড্রাইংরুমে লামিয়ার শ*য়*তা*নি হাসিতে ঘৃ*ণায় কান্না পেলো।
শানাইয়া হসপিটালে এসে দেখলো মামারা, খালামনি এসেছে হসপিটালের টাকাও পরিশোধ করে দিয়েছে। শানাইয়ার মা জুলেখা কাঁদতে কাঁদতে অসুস্থ হয়ে গেছে তিনি তার জমজ বোন জিনিয়ার কাঁধে মাথা রেখে আছে তার চোখের কোণে এখনো পানি জমে আছে। শানাইয়াকে দেখে শানাইয়ার বড় মামা বলল
— শানাইয়া সাফওয়ান কোথায়? তুই বাচ্চা মেয়ে একা একা বাসায় গিয়েছিস আবার এসেছিস?
শানাইয়া শুষ্ক মুখে বলল
— বড় হয়ে গেছি মামা।
— না মা একা আর যাবে না
— কিন্তু তোমরা এখানে কিভাবে? তোমাদেরকে কে বলল?
জিনিয়া বলল
— জুবরান ওর ফেন্ডের সাথে দেখা করতে এসেছিল। তখনই জুলেখা কে দেখে সব জেনে আমাদেরকে খবর দেয়। জুবরান ডক্টর হওয়ায় ও-কেও অপারেশন থিয়েটারে থাকার পারমিশন দিয়েছে।
শানাইয়া মনে যেনো একটু শক্তি সঞ্চয় হলো। মনে মনে সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণ করে বাবার জন্য প্রার্থনা করলো। তার মধ্যে সাফওয়ান এলো সাথে লামিয়া আর ওর বাবা-মা শানাইয়া ঘৃ*ণিত চোখের তাকালো।
অপারেশনের শেষে শাহাদাত হোসেন কে বেডে শিফট করলো একটা পা ভে*ঙেছে মাথায় ঘাড় সহ গুরুতর আ*ঘা*ত পেয়েছে। সুস্থ হতে বেশ সময় লাগলে। বাবার এমন অবস্থা দেখে শানাইয়ার ছোট হৃদয়টা হাহাকার করে উঠল। বেডে সকলে দেখতে গেলো শানাইয়া সবার পিছন থেকে বাবাকে দেখলো এই সাদা ব্যন্ডেজ টাকে ভয় পাই ও। চোখ দিয়ে অনর্গল অশ্রু ঝরছে ওর কান্নার শব্দ টুকু পাচ্ছে না কেউ। দূর্বল শরীরে কাদতে কাদতে জ্ঞান হারালো। জুবরান কেবল মাত্র পিছনে এসে দাড়িয়েছে। শানাইয়াকে পড়ে যেতে দেখে দুহাতে আগলে ধরলো। সবার দৃষ্টি পড়লো ওদের দিকে। জিনিয়া জুলেখা কে জোর করে খাওয়াতে পারলেও শানাইয়ার কাছে হেরে গেছেন। এই শারীরিক দূর্বলতায় শানাইয়া জ্ঞান হারিয়েছে। সাফওয়ান বোনের অবস্থা দেখে ভয় পেয়ে যায়। সবাই উত্তেজিত হয়ে পড়ে। জুবরান সবাইকে শান্ত হতে বলে শানাইয়াকে কোলে নিয়ে একটা খালি কেবিনে শুইয়ে দেয়। সাফওয়ান ও আসে।
— জুবরান ওর কী হয়েছে? ও চোখ খুলছে না কেনো?
— ও দূর্বল হয়ে গেছে সেজন্য হয়ত তুই আঙ্কেলে দেখ ও একটু পরেই ঠিক হয়ে যাবে।
— তুই ঠিক বলছিস তো?
— এতো ভয় পাস না। আঙ্কেলকে কিছু মেডিসিন দিয়েছে সেগুলো আন
জুবরান ওর ফেন্ডকে বলল
— কিছু ফল আর পানির ব্যবস্থা করত!
— আচ্ছা দেখছি।
শানাইয়া চোখ খুলতে জুবরানকে ওর কাছে দেখে ধরফরিয়ে উঠে বসে ভয়ে হাঁপাতে থাকে।
জুবরান সেটা দেখে বলল
— ওহ রিলাক্স শানাইয়া
শানাইয়া শান্ত হয় না। ভয়ত কণ্ঠে বলল
— আপনি?
— তুই জ্ঞান হারিয়ে ছিলি তোর চোখে মুখে পানির ছিটা দিচ্ছিলাম
–আব্বু, আম্মু, ভাইয়া,কই?
— আছে।
শানাইয়া বেড থেকে নামতে গেলে জুবরান বাঁধা দিয়ে বলল
— নামিস না ফল এনেছি খেয়ে নে
— খেতে ইচ্ছে করছে না জুবরান ভাইয়া
জুবরান কাঠ গলায় বলল
— তবুও খেতে হবে
শানাইয়া জুবরানের দিকে তাকালো জুবরান শান্ত হয়ে তাকিয়ে আছে শানাইয়ার শুষ্ক মুখের দিকে। শানাইয়া জুবরানকে অকারণেই ভয় পায়। কোনো কারণ ছাড়া এটা জুবরান বুঝেও কিছু বলে না। জুবরানের ভয়ে একটা আপেল খেলো। আপেল শানাইয়ার মটেও পছন্দ না। খাওয়া শেষ করে যেতে নিলেই জুবরান বলল
— শোন কান্না করবি না তোর ফোলা চোখ আমার পছন্দ না।
কথাটা শানাইয়া শুনলো। কোনো প্রতিক্রিয়া ছাড়াই চলে গেলো।
শানাইয়া বাবার কেবিনে দরজার কাছে আসতেই লামিয়া বের হয়ে আসলো। লামিয়াকে পাশ কাটিয়ে যেতে নিলে লামিয়া বলল
— বড়লোক টাকা ওয়ালা সুন্দর ছেলে দেখলেই তার গায়ের ওপরে ঢলে পড়তে ইচ্ছে করে তাই না?
— তুই কি বলতে চাইছিস?
— সেটা শুনলি সেটাই বলতে চাইছি।
— তোর মতো সবাই না বুঝলি। ওফস যে যেমন তার চিন্তা ধারাও তেমনই হবে তাই না।
— শানাইয়া!
জুবরান এসে লামিয়া আর শানাইয়াকে রাগান্বিত চোখে দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে বলল
— কি হচ্ছে এখানে?
লামিয়া মুখে মিথ্যা হাসি এনে বলল
— কই কিছু না তো ভাইয়া আসলে ও-কে আপনার সাথে একা একটা কেবনি রাখছি সেজন্য রাগ করছে।
শানাইয়া জুবরানের দিকে একবার তাকিয়ে দরজা ঠেলে ভিতরে ডুকলো। লামিয়া হেসে বলল
— ওর ব্যবহারে কিছু মনে করবেন না। ও আসলে একটু অবুঝ
জুবরান প্রতিত্তোর কিছু বলল না কথা ঘুরিয়ে বলল
— সাফওয়ান কোথায়?
— এখানেই তো ছিল মনে হয়। ঔষধ আনতে গেছে।
জুবরান পাশ কাটিয়ে কেবিনে গেলো। দেখলো শানাইয়া ওর বাবার এক হাত ওর দু’হাতের মুঠোয় নিয়ে হাতের ওপরে মাথা দিয়ে বসে আছে। জুলেখা কে জিনিয়া নিজের সাথে করে নিয়ে গেছে মামারা ডক্টরের সাথে কথা বলছে। সাফওয়ান ঔষধ আনতে গেছে। লামিয়ার বাবা-মা চলে গেছে। লামিয়ার পরিবারের সাথে শানাইয়াদের পরিবারের পারিবারিক বিভিন্ন ঝামেলায় তারা কখনো মিল হয় না। লামিয়ার বাবা সাখয়াত হোসেন আর শাহাদাত হোসেন দুইভাই হলেও ওদের মধ্যে টান নেই। সাখয়াত হোসেনের ভাইকে দেখতে না আসলে হয় না তাই দেখতে এসেছিল ভাই হিসেবে একটা দায়িত্ব পালন করে নি চলে গেছে। শানাইয়া ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো। জুবরান বলল
— তোকে কাঁদতে বারন করলাম না?
শানাইয়া একথার কোনো উত্তর দিল না চুপচাপ আগের মতো রইলো।