#হৃদপূর্ণিমা
লাবিবা_ওয়াহিদ
| পর্ব ১০ |
আগুনের ন্যায় কড়া রোদ জানালা ভেদ করে ঘরে প্রবেশ করছে। স্নিগ্ধ হাওয়ারা যেন নিদ্রা-ঘোরে আছে। সূর্য আজ তার তীক্ষ্ণ তাপে যেন মানুষদের সিদ্ধ করে দিচ্ছে। ভরদুপুরের রোদ সাধারণত এমনই হয়। গ্রীষ্ম হলে তো কথাই নেই। রোদের তীক্ষ্ণ ঝলকানিতে ঘরটাও বেশ আলোকিত। সেই জানালার দিকে একমনে তাকিয়ে কিছু একটা ভেবেই চলেছে নাশিদ। তার ভাবনায় এসে ছেদ ঘটালো নাফিসা। নাশিদ একপলক নাফিসার দিকে তাকিয়ে পূর্বের ন্যায় নিশ্চুপ হয়ে বসে রইলো। নাফিসা নাশিদের সামনে বসে বললো,
-‘পার্সেল পাঠিয়েছিস?’
-‘হু। এখন তোর ওই বান্ধুবি রিসিভ করলে হয়। আমার তো বেশ টেনশন হচ্ছে!’
-‘আরে চিন্তা করিস না। ও না নিলেও আমি নেয়াবো!’
-‘সেটা কীভাবে?’
-‘ফোন করে!’
ফোন দেখিয়ে বললো নাফিসা। অতঃপর নাফিসা রথিকে ফোন লাগালো। রথি তখন থানা চেক করতে করতে বাড়ি ফিরছিলো। হঠাৎ রিংটোনের শব্দ পেয়ে ব্যাগ থেকে ফোন হাতে নিতেই দেখলাম নাফিসা। মুচকি হেসে রিসিভ করতেই কাঙ্ক্ষিত মানুষটি কথা বলা শুরু করলো,
-‘কেমন আছিস রথি?’
-‘এইতো আলহামদুলিল্লাহ তুই?’
-‘আলহামদুলিল্লাহ! তা পার্সেলটা পেয়েছিস?’
-‘পার্সেল কীসের পার্সেল?’
-‘আরে আমি যেটা পাঠালাম।’
-‘তুই পাঠিয়েছিস?’
-‘হ্যাঁ। আন্টির জন্য শাড়িটা মা দিতে বললো।’
-‘তাহলে নীলটার মানে কী?’
নাফিসা ঠোঁট কামড়ে আড়চোখে নাশিদের দিকে তাকালো। এর মানে তলে তলে তার ভাই এতদূর? নাফিসা আমতা আমতা করে বললো,
-‘আমি পাঠিয়েছি!’
-‘আমি তোর বাসায় আসছি শাড়িটা ফেরত দিতে!’
-‘এই না না। রথি শুন আমার ক…!’
নাফিসা কিছু বলার আগেই কল কেটে দিলাম। নাফিসা ফোন ফেলে করুণ দৃষ্টিতে নাশিদের দিকে তাকালো। নাশিদ তখনো নাফিসার দিকে কৌতুহলি দৃষ্টিপাত নিক্ষেপ করে আছে।
-‘কী বললো তোর বান্ধুবি?’
-‘শাড়ি ফেরত দিতে আসছে!’
নাশিদ বাঁকা হাসি দেয়। নাফিসা নাশিদের এই হাসির কারণ বুঝতে পারে না। ভ্রু কুচকে বললো,
-‘কী হলো হাসছিস কেন?’
নাশিদ প্রতিত্তর দিলো না। বেডের সাথে হেলান দিয়ে ফোন ইউস করতে লাগলো। নাফিসা তার ভাইয়ের চালটা ধরতে পারলো না। কী চাইছে নাশিদ? অনেক চেয়েও বুঝতে পারে না। শেষে নিরাশ হয়ে নাশিদের রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।
২৫ মিনিটের জ্যাম ছাড়িয়ে অবশেষে এসে পৌঁছালাম নাফিসার বাড়িতে। কী সৌখিন তাদের বাড়িটি। বাড়ির সামনে সারি সারি গাছ। বলা চলে বাগান। নানান ফুলের সমরোহে চারপাশ ঘ্রাণে মৌ মৌ করছে। নাফিসাদের বিশাল বাড়ির দিকে হা করে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলাম। অবাক হলেও সত্য আমি কখনো নাফিসার বাড়ি আসিনি। নাফিসার সঙ্গে এসএসসি পরীক্ষার হলে দেখা হয়।
নাফিসা অন্য স্কুলের হলেও আমার পাশে বসেছিলো। সেই থেকে পরিচয়। বলা চলে তখন থেকেই বন্ধুত্ব শুরু হয়। বন্ধুত্ব গভীর হলেও আমি কখনো ওদের বাড়ি আসিনি। তাই নেওয়াজ ভাই বা নাশিদকে চিনতে পারিনি। ইভেন ওদের ছবি দেখলেও চেহারা গুলিয়ে ফেলতাম। সেই কবে দেখেছি তাই চেহারাটা ঠিকমতো মনে ছিলো না। নাফিসার মা কেমন দেখতে আমি সেটাও বলতে পারবো না। শুধু ওর মুখে মুখেই ওর ভাইদের, ফ্যামিলির কথা শুনতাম। তাইতো বিয়ে বাঁড়িতে ওরকম একটা ভুল করে বসেছিলাম। এসব ভাবতে ভাবতেই ভেতরে ঢুকতে নিলে দারোয়ান এসে পথ আটকালো।
-‘কাকে চাই?’
-‘চাচা ওকে ভেতরে আসতে দিন।’
পুরুষালি কন্ঠস্বর শুনতে পেয়ে সামনে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিপাত নিক্ষেপ করলাম। পুলিশম্যান অদূরে টাউজারের পকেটে হাত রেখে দাঁড়িয়ে। চোখে আবার নরমাল গ্লাসও লাগিয়েছে। কপালে কয়েক গাছা চুল অসমান্তরাল ভাবে হালকা উড়ছে। ওনার স্টাইল দেখে আমার কোনো অংশে মনে হচ্ছে না উনি পুলিশ। ওনার একেক লুক একেকরকম সুন্দর। চোখাচোখি হতেই আমি দৃষ্টি নত করলাম। দারোয়ান আমার পথ থেকে সরে দাঁড়াতেই আমি পা ফেলে সামনে যেতে শুরু করলাম। একসময় পুলিশম্যানের সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। খানিক সময় তাকিয়ে উনি বলে উঠলেন,
-‘আমার সঙ্গে এসো!’
বলেই উনি আগে আগে চলতে লাগলো আর আমি ওনার পিছে। একসময় উনি থেমে গেলেন যা আমি খেয়াল করিনি। হাঁটতে হাঁটতে দুম করে ওনার পিঠের সঙ্গে ধাক্কা খেলাম। এবারও নাকে লাগলো আমার। নাক কচলাতে কচলাতে মৃদু স্বরে বলে উঠলাম,
-‘থামলেন কেন?’
ততক্ষণে উনিও আমার দিকে ফিরে যায়। রথির ভ্রুযুগোল কুচকে থাকা, পিটপিট করে তাকানো, নাক কচলানো সেই প্রথম দিনের মতো। নাশিদ খানিক সময় তাকিয়ে বলে উঠলো,
-‘সরি, নাফিসা তো বাগানে!’
-‘ওহ!’
নাক কচলানো বন্ধ করে বাগানের পথে যেতে নিলে উনি আবারও আমায় থামিয়ে বললো
-‘এদিকে না এদিক দিয়ে!’
এদের বাড়ির চক্রে আমি যেন কয়েক মিনিটেই পাগল হয়ে যাবো। বাড়ির বাহিরেই এতো ঘূর্ণা, না জানি ভেতরে কেমন? আমি আবারও ওনার সাথে তার দেখানো পথে চলতে লাগলাম। এবার আর পিছে পিছে না, পাশাপাশি-ই চলছি। ধাক্কা খাওয়ার চান্সও কম! হাঁটতে হাঁটতে উনি বলতে লাগলেন,
-‘তোমার নাকি জ্বর হয়েছিলো? এখন কেমন আছো?’
কিছুটা বিস্মিত হলাম ওনার কথায়। উনি জানলেন কী করে আমি অসুস্থ ছিলাম? ওপস নাফিসার থেকে জেনেছে হয়তো। ধ্যাত, দিনদিন যেন ভুল্লাক্কার হয়ে যাচ্ছি। ভাবাভাবি পাশে রেখে বলে উঠলাম,
-‘আলহামদুলিল্লাহ ভালো।’
আবারও দুজন নিশ্চুপ। সুইমিং পুলের কাছে আসতেই উনি বলে উঠলেন,
-‘আমি জানামতে, তুমি শক্ত এবং ভীষণ কঠোর একজন নারী। সামান্য কয়েকঘন্টার ঘটনায় এভাবে ভেঙ্গে পরলে চলে না, রথি। আমরা জীবনকে ঠিক যতটা সহজ মনে করি ততোটা সহজ এই জীবন আমাদের উপলব্ধি করায় না। জীবন একটি চক্র। সবসময় মনে রেখো তুমি যা ব্যয় করছো সেটি চক্রাকারে আবারও তোমার নিকট সুখ/দুঃখ হয়ে ফেরত আসবে। তাই ভেঙ্গে গুড়িয়ে গেলেও পিছু-পা হেঁটো না। এক পা পিছে গেলে বড়সড় কিছু হারিয়ে ফেলবে!’
আমি নাশিদ সাহেবের কথাগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনলাম। প্রতিটি কথাতেই যুক্তি আছে। ঠিকই তো, এক ঘটনা নিয়ে চিন্তা করে জ্বর বাঁধিয়ে দুইদিন কোচিং বন্ধ দিয়েছি। এতে আমার লাভ নয় বরং লস হলো। এমন কোনো ঘটনা আমার জীবনে আর আসবে না এর গ্যারান্টি কী? আমার উচিত ছিলো সেদিনের ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে নিজেকে আরও শক্ত করে তোলা। আমার জীবনটাই যে সংগ্রামের। আমার ভাবনায় ছেদ ঘটলো নাফিসার ডাকে। নাফিসা অদূরে খড়ের ছাতার ছায়াতলে বসে আছে।
-‘কীরে? ওদিকে কী করছিস? এখানে আয়!’
আমি পাশে তাকালাম। এমা, পুলিশম্যান কোথায় গেলো? পিছে ফিরে তাকাতেই দেখলাম উনি চলে যাচ্ছেন। বাহ, আমাকে না জানিয়েই চলে যাচ্ছে? কী ভালো মানুষ! ঢং!
ভাবতে ভাবতেই নাফিসার কাছে গেলাম। নাফিসাকে শাড়িটি ব্যাক করে মুখে কিছু না তুলেই চলে আসলাম। কারণ মা বাসায় চিন্তা করছে। কখনো এদিকটায় আসিনি, এজন্য মায়ের চিন্তা আরও বেশি! নাফিসাকে বিদায় জানিয়ে বেরিয়ে গেলাম। নাফিসা এতো করে বললো তার সঙ্গে ভেতরে গিয়ে টুকটাক খাওয়া-দাওয়া করতে কিন্তু আমি শুনলাম না। এসব বড়োলোকি কারবার আমার এখনো অসহ্য লাগে। এর চেয়ে বরং যা আছি আলহামদুলিল্লাহ। বাহিরে আসতেই কিছু বখাটের সঙ্গে দেখা। এই মেয়ে হলে এক জ্বালা, যেখানে-সেখানে বখাটে ঘিরে ধরে। আমার এলাকায় শামুন থাকায় অন্যান্য বখাটে গুলা কিছু বলার সাহস পায় না। তবে আমার মতে এই শামুনই একশ বখাটের সমান।
একজন বখাটে কটাক্ষের সাথে উঠলো,
-‘কী সুন্দরী, রোদ লাগছে? গরম লাগছে? পাখা দিয়ে বাতাস করবো নাকি ছাতা দিয়ে ছায়া দিবো? আম… নাকি সঙ্গ?’
ছেলেটার কথায় বাকি বখাটেরা হেসে দেয়। নাশিদ তার বারান্দার ডিভানে বসে কফি খাচ্ছিলো আর ফাইল দেখছিলো। রাস্তা থেকে হাসাহাসির শব্দ পেয়ে কফি রেখে উঠে দাঁড়ালো। সৌভাগ্যক্রমে সেই রাস্তাটি থেকে নাশিদের বেলকনি কাছে। বখাটেগুলো কাকে উত্ত্যক্ত করছে তাও নাশিদের বুঝতে অসুবিধে হলো না। নাশিদ বখাটে গুলোকে দেখে বেশ ক্ষেপে গেলো। সে ফাইলটা ডিভানে রেখে জোরে হুংকার ছেড়ে বললো,
-‘ওই রাসেল? লাঠি নিয়ে আসবো নাকি কেটে পরবি?’
কারো হুংকারে আমি পিছে ফিরে তাকালাম। বিশাল বাউন্ডারির ভেতরের দো’তলার বেলকনি থেকে পুলিশম্যানকে দেখা যাচ্ছে। তার মুখশ্রীতে রাগিভাব স্পষ্ট। বখাটে গুলো নাশিদকে দেখে তৎক্ষনাৎ পালালো। ওরা চলে যেতেই আবারও চিৎকার করে বললো,
-‘এখন বাসায় যাও। বাসায় গিয়ে নাফিসাকে কল করে জানিও!’
আমি মুচকি হেসে মাথা নাড়ালাম। অতঃপর চলে আসলাম। এক অন্যরকম অনুভূতি চারপাশ থেকে ঘিরে ধরেছে আমায়। ওনার সাথে দেখা হওয়ার পর থেকে কতবার উনি বাঁচালেন আল্লাহ মালুম। কই এই মানুষটা তো আগে আমার জীবনে ছিলো না? গম্ভীর হলেও পুলিশম্যান অনেক প্রসেসিভ। যা এতদিনে আমার বুঝতে সমস্যা হয়নি। রথি চলে যেতেই নাফিসা নাশিদকে রথির ফিরিয়ে দেয়া শাড়িটি দিয়ে দেয়!
-‘আমায় কেন দিচ্ছিস?’
-‘তুমি কিনেছো, তুমি-ই রাখো!’
বলেই নাফিসা মুচকি হেসে চলে যায়। নাশিদ নিজেও শাড়িটির দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে বারান্দার রেলিং এ হাত রেখে দাঁড়িয়ে দূরের পথে তাকিয়ে রইলো। আমি বাসায় ফিরতেই নাফিসাকে কল করে জানিয়ে দিলাম আমি সহি সালামতেই বাড়ি ফিরেছি। এভাবে আরও দুইদিন কেটে গেলো। দু’দিনই পুলিশম্যান থানায় ছিলো। আজ বাসায় ফিরে খেয়ে-দেয়ে বিছানায় গা-টা এলিয়ে দিতেই আমেনা বানু আসলো। মায়ের সঙ্গে দেখা করে বললো,
-‘ভাবী আপা মনিরে যাইতে কইসে, এখনি।’
মা আমার দিকে তাকালেন। আমি ততক্ষণে উঠে বসেছি। এই ভাবীটা এসেছে দুইদিন আগেই। এসে খবরও নেয়নি আমরা কেমন আছি। এখন আবার আমাকে নিয়ে কিসের কাজ? আমেনা বানুকে বললাম,
-‘তুমি যাও আমি আসছি!’
আমেনা বানু মাথা নেড়ে চলে গেলেন। আমি ওড়না মাথায় জড়িয়ে বেরিয়ে গেলাম। বাসায় গিয়ে দেখলাম ভাবী সোফায় বসে নেইলপালিশ মাখছে। তার পাশে তাতানকে ফোনে গেম খেলতে দেখে চোখের কোণ ভিঁজে গেলো। কতদিন পর দেখছি আমার বাবুসোনাকে। ইচ্ছে করছে বুকের মাঝে নিয়ে বসে থাকি। এই তাতানকে নিয়ে একসময় আমি সারাটাদিন পার করতাম। আমার চোখের মণি এই তাতান। ভাবীর কথায় আমার ধ্যান ভাঙলো।
-‘এসেছিস? শুন। একটু কষ্ট করে তোকে কমলাপুর স্টেশন যেতে হবে। আবিরকে চিনিস তো? আমার চাচীসহ আজ ঢাকায় আসছে। তুই একটু ওদের রিসিভ করবি প্লিজ?’
-‘ওরা তোমার মেহমান তুমি রিসিভ করতে যাবে। আমি খামোখা কেন যাবো?’
তাতান আমার কন্ঠস্বর পেয়ে আমার দিকে তাকালো। আমার দিকে আসতে নিতেই ভাবী তাতানকে চোখ রাঙানি দিয়ে বসিয়ে রাখলো। ভাবী আমার দিকে তাকিয়ে শান্ত ভাবে বললো,
-‘দেখ রথি, আমি এখন নেইলপালিশ দিচ্ছি। এছাড়া তাতানও আছে,ওকে একা রেখে আমি কী করে যাই? সাইফও অফিসে নয়তো তোকে ডাকার কোনো প্রয়োজন ছিলো না৷’
আমি এক্সপ্লেশন শুনে বিরক্তি ধরে গেলো। কিন্তু কী ভেবে রাজি হয়ে গেলাম।
-‘বেশ আমি যাবো। তবে শর্ত আছে।’
-‘এখন আবার কিসের শর্ত?’ বিরক্তি নিয়ে বললো ভাবী।
-‘তাতান যতদিন আছে ওকে আমার বাসায় আসতে দিতে হবে!’
ভাবী স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। অতঃপর বললো,
-‘ঠিক আছে, এখন জলদি যা নয়তো দেরী হয়ে যাবে!’
আমি তাতানের দিকে তাকিয়ে একটা মিষ্টি হাসি দিলাম। তাতানও প্রতিত্তরে হাসলো। ইশারায় ওকে বিদায় জানিয়ে চলে আসলাম।
স্টেশনে নাশিদ এসেছিলো তার একটা কেসের জন্য ইনফরমেশন নিতে। কিন্তু অদূরে রথিকে অন্য একটা ছেলের সঙ্গে পাশাপাশি, হেসে হেসে কথা বলে যেতে দেখে নাশিদ সেখানেই থমকে দাঁড়ালো। মনে হচ্ছে ভুল দেখছে। কিন্তু না, একদম সঠিক দেখছে সে। পরমুহূর্তেই মনে হলো ছেলেটি কে? রথির ঘনিষ্ঠ কেউ?
~চলবে।
#হৃদপূর্ণিমা
লাবিবা_ওয়াহিদ
| পর্ব ১১ |
জনমানবপূর্ণ স্টেশন। প্রতিদিনের চেয়ে আজ যেন বেশি মানুষ মৌমাছির ন্যায় গিজগিজ করছে। মাছের বাজারের চেয়েও ভয়ংকর পরিস্থিতি। আগামীকাল ছুটির দিন বিধায় মানুষরা হয়তো তাদের সেই পরিচিত মাতৃ-কোলে নয়তো-বা এদিক সেদিক ঘুরতে যাচ্ছে। এতো এতো ভীড়ে আমি নির্ধারিত প্ল্যাটফর্মের একটি বেঞ্চে বসে সঠিক ট্রেন আসার অপেক্ষা করছি। গরমে আমার সব গুলিয়ে আসছে। কিছুক্ষণ পরপরই ওড়না দিয়ে ঘাম মুছছি। ভেবেছি দেরী করে পৌঁছাবো কিন্তু এখানে এসে শুনি ট্রেন আসতে ৩০ মিনিটের মতো সময় লাগে৷ এসব ভালো লাগে? বারংবার হাতঘড়ির দিকে তাকাচ্ছি এবং বোতল হতে দুই এক ঢোক পানি খাচ্ছি। গরমের সময় আমার পিপাসা বেশি পায় তাই ব্যাগে হাফ লিটারের একটা বোতল থাকবেই। এসব কথা চিন্তা করতে করতে আমার অপেক্ষার অবসান হলো। ট্রেন তার দ্রুতগামী বেগ কমিয়ে ধীরে ধীরে এসে স্টেশনে থামলো।
ট্রেন থামতেই আস্তে আস্তে যাত্রীরা নামতে লাগলো। লালমনিরহাটের থেকে ট্রেনটি এসেছে। খুব বেশি ভীড় নেই। আমি আবিরকে কল করলাম আমার সঠিক অবস্থান জানানোর জন্য। আসার পূর্বে ভাবীর থেকে আবিরের নাম্বারটা নিয়ে এসেছি এবং ওর সাথে অল্প খানিক কথা বলেও জানিয়েছি আমি ওদের রিসিভ করবো। তাই আবির জানে আমি এসেছি। কয়েকবার রিং হতেই আবির রিসিভ করলো। আমি ওকে আমার অবস্থান জানিয়ে সেই বেঞ্চিতে বসেই ওদের অপেক্ষা করতে লাগলাম। ১০ মিনিট বাদেই আবির চাচীকে নিয়ে চলে আসে৷ চাচীকে দেখে আমি তাকে সালাম দিলাম। উনি মুচকি হেসে সালামের উত্তর নিয়ে বলে,
-‘কেমন আছো রথি? কতো বড় হয়ে গেছো মাহশাল্লাহ!’
আমি প্রতিত্তরে মুচকি হাসলাম। অতঃপর বললাম,
-‘জ্বী চাচী আলহামদুলিল্লাহ আপনি?’
-‘আমিও ভালো। এখন জলদি বাসায় চলো তো আমার তো এই ভীড়ে বমি বমি পাচ্ছে।’
-‘হ্যাঁ। আবির ওনাকে আমি ধরছি আপনি লাগেজ গুলো ধরুন!’
আবির মাথা নাড়ায়। অতঃপর তিনজন কথা বলতে বলতেই স্টেশনের বাইরে যাচ্ছিলো। তৎক্ষনাৎ নাশিদ ওদের দেখতে পায়। কিন্তু সে রথির পাশে থাকা মহিলাকে খেয়াল করেনি।
আমরা একটি সিএনজি করে ডিরেক্ট বাসায় চলে আসলাম। আসার আগে একটা মিষ্টির দোকান থেকে আবির দই, মিষ্টি, রসমালাই ইত্যাদি ইত্যাদি নিয়েছে। আমি কিছু বলিনি কারণ ওরা আমার নয় ভাবীর মেহমান। বাসায় গিয়ে আমি কলিংবেল চাপতেই বেশ কিছুক্ষণ বাদে মা এসে দরজা খুলে দেয়। মাকে দেখে আমি খানিক চমকে গেলাম। মা এই বাড়িতে কেন? মা আমার দিক থেকে চোখ সরিয়ে আমার পাশে থাকা চাচীকে সালাম করে আলতো কোলাকুলি করলেন। চাচী সালামের উত্তর নিয়ে ভেতরে চলে গেলেন আর পেছন থেকে আবির সব ব্যাগ একসঙ্গে নিয়ে যাচ্ছে। আবিরকে এতো ব্যাগ আলগাতে দেখে আমি বললাম,
-‘চাচীর ব্যাগটি আমায় দিন। এতো ব্যাগ বহন করা তো সহজ নয়!’
আবির দাঁড়িয়ে মুচকি হেসে একটি ব্যাগ দিলেন। অতঃপর বললেন,
-‘যাক, এতক্ষণে এই অধমের উপর মায়া হলো!’
আমি হালকা হাসলাম আবিরের বলা কথায়। অতঃপর ব্যাগ নিয়ে ওনার পিছে পিছেই চলে গেলাম। ব্যাগ রেখে আমি কৌশলে রান্নাঘরে চলে গেলাম। সেখানে ভাবী আর আমেনা ছিলো। আমি আমেনা বানুকে চোখের ইশারায় চলে যেতে বললে সে নিঃশব্দে চলে গেলো। ভাবী তার রান্নার দিকে মনোযোগ দিয়েই বলে উঠলো,
-‘কী বলতে এসেছিস?’
-‘মা এখানে কেন? আবার কোন নাটক শুরু করলে?’
ভাবী শব্দ করে খুন্তিটা ছেড়ে দিলো রান্নার পাতিলে। অতঃপর আমার পানে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিপাত নিক্ষেপ করে বললেন,
-‘ওরা আমার আত্নীয়। আমি চাই না আমার সমস্যা বাইরের মানুষ জানুক। বাহিরের সবার কাছে আমরা সুখী পরিবার। ইভেন এখনো আমরা সুখী! আর কোনো প্রশ্ন? না থাকলে নিজের ঘরটাকে গুছিয়ে নাও, এখন থেকে কিছুদিন আমাদের সঙ্গেই থাকবে!’
আমি তার দিকে ঘৃণিত দৃষ্টি দিয়ে তাকিয়ে রইলাম। একটা মানুষ যে স্বার্থের জন্য আর কী কী করবে আল্লাহ ভালো জানে! আমি কিছু না বলেই রান্নাঘর ত্যাগ করলাম। এই মানুষটার সঙ্গে কথা বলতে গেলেও আমার গা গুলিয়ে আসে। নিজের আগের রুমের দিকে যাওয়ার আগেই তাতানের সঙ্গে দেখা। আমি হাঁটু গেড়ে বসে তাতানকে নিজের সঙ্গে জড়িয়ে রাখলাম। চোখের কোণ আবারও ভিঁজে যায়। তাতান ফোঁপাতে ফোঁপাতে বললো,
-‘তোমায় অনেক মিস করেছি ফুপ্পি। কিন্তু আম্মু আমায় তোমার কাছে যেতে দেয় না। আম্মু পঁচা!’
আমি চোখ বুজে চোখের জল ফেলে হালকা হেসে বলে,
-‘এভাবে বলতে নেই সোনা। তোমার মা ভালো। মায়েরা সবসময় ভালো হয়। যাইহোক বাদ দেও, এখন যে ক’টাদিন আমি আমার তাতান বাবার সঙ্গে আছি তা আমার তাতান বাবা জানে?’
তাতানকে নিজের থেকে ছাড়াতে ছাড়াতে শেষোক্ত কথাটি বললাম। তাতান এতে অনেকটা খুশি হলো! সে আবারও আমায় ঝাপটে ধরলো! ওকে নিয়ে আমার রুমটাতে চলে আসলাম। এতদিন পর নিজস্ব রুমের ঘ্রাণ নিতে পেরে কেমন অসাধারণ ভালো লাগা কাজ করছে। আমি আর তাতান মিলে ধুলো-বালি পরিষ্কার করলাম, নতুন চাদর বিছালাম। আলমারির পাশেই দেখলাম একটি ব্যাগ। বুঝতে বাকি রইলো না, মা তৈরি হয়েই এসেছে। এখন মা চাচীর সাথে কথা বলছে। ভাবী হয়তো এখন এমন ভাব দেখাবে সে অনেক সাংসারিক। শ্বাশুড়ি, সংসার ছাড়া যেন সে কিছুই বুঝে না। আমি এসবে পাত্তা না দিয়ে ফ্রেশ হতে চলে গেলাম। ফ্রেশ হতে হতেই মাগরিবের আযান দিয়ে দিলো। ওয়াশরুম থেকে বের হতেই ভাবী আমায় ডেকে পাঠালো। আমি ওড়না জড়িয়ে চলে গেলাম। মা আমার উদ্দেশ্যে বললেন,
-‘আবিরকে তাতানের ঘরে নিয়ে যা রথি। যাও বাবা ওর সাথে যাও! ফ্রেশ হয়ে একটু বিশ্রাম করিও!’
আমি মাথা নাড়িয়ে আবিরকে তাতানের ঘরে নিয়ে গেলাম। এমন তো না আবির এই প্রথম এসেছে বাড়িতে। তাহলে মা এমন করে বললো কেন? ভালো লাগছে না কিছু! ধুর।
-‘আপনি কী কোনো কিছু নিয়ে চিন্তিত?’
আমি থতমত খেয়ে আবিরের দিকে তাকালাম। জিজ্ঞাসু দৃষ্টিপাত আমার দিকেই নিক্ষেপ করে আছেন। আমি কিছুটা বিব্রত হয়ে বললাম,
-‘না তেমন কিছু না আপনি ফ্রেশ হয়ে বিশ্রাম করুন!’
বলেই চলে আসতে নিবো তখনই আবির পিছু ডাকলো।
-‘এড়িয়ে চলছেন?’
আমি দাঁড়িয়ে গেলাম। কিন্তু ওনার দিকে ফিরলাম না। মৃদু সুরে বললাম,
-‘তেমন কিছু না। আপনি জার্নি করে এসেছেন, রেস্ট করুন এখন। আমি আপাতত যাই, পরে নাহয় কথা হবে!’
আমার কথায় আবির যেন সন্তুষ্ট হলো। সে হেসে বললো,”ঠিক আছে!”
★
-‘আচ্ছা নাফিসা, রথির কী রিলেশন আছে?’
নাফিসা চোখ বড়ো বড়ো করে তার ভাইয়ের দিকে তাকালো। নাশিদের দৃষ্টি দূর আকাশের দিকেই সীমাবদ্ধ। নাফিসা বুঝলো না হঠাৎ এমন প্রসঙ্গের কারণ কী? নাফিসা থতমত খেয়ে কিছুটা অস্ফুট স্বরেই বললো, ‘না ভাই!’
নাফিসার এই একটি বাক্যে নাশিদ কোথায় যেন কিছুটা স্বস্তি অনুভব করলো। সে আগের ন্যায় আকাশের দিকেই তাকিয়ে রয়। নাফিসা বললো,
-‘হঠাৎ এ প্রসঙ্গ কেন?’
-‘না, তেমন কিছু না। গতকাল স্টেশনে দেখলাম একটা ছেলের সঙ্গে কোথাও যাচ্ছে!’
নাফিসা নিজেও কিছুটা ভাবনায় পরে গেলো। পরমুহূর্তে নাফিসা হাসার চেষ্টা করে বললো,
-‘হয়তো ওর ভাবীর কোনো আত্নীয়। ওর বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে তো ওর আত্নীয়রা প্রায় বিচ্ছিন্ন।’
নাশিদ চুপচাপ-ই দাঁড়িয়ে রইলো। এখন যেন সে হুটহাট ভাবনায় হারিয়ে যায়। নাফিসাও একইভাবে দাঁড়িয়ে আকাশের পানে চোখ দিলো। কিছুক্ষণ অতিবাহিত হতেই হুট করে নাফিসা প্রশ্ন করলো,
-‘ভালোবাসিস, রথিকে?’
নাশিদ বিস্মিত দৃষ্টিপাত নাফিসার দিকে নিক্ষেপ করলো। নাফিসা তখনো আশা নিয়ে নাশিদের পানে তাকিয়ে রয়। কিন্তু নাশিদ কোনপ্রকার উত্তর দিতে পারে না। এই ‘ভালোবাসা’ শব্দটি তাকে কঠোরভাবে নাড়িয়ে তুলেছে। “ভালোবাসি না!” এইটুকু যেন তার গলা দিয়ে বের হচ্ছে না। এমন কেন হচ্ছে? নিজের সঙ্গে কিছুক্ষণ লড়াই করে শেষ অবধি বলেই ফেললো,
-‘নাহ!’
নাফিসা তপ্তশ্বাস ফেলে আগের ন্যায় দাঁড়িয়ে রয় কিন্তু নাশিদ দাঁড়িয়ে থাকতে পারলো না। সে ধপাধপ পা ফেলে নিচে চলে গেলো। কেন যেন রথির চেহারাটা তার মাথায় গোল গোল করে ঘুরছে যা নাশিদকে বিরক্ত করে তুলছে। সে না পেরে ইউনিফর্ম করে বাড়ি থেকেই বেরিয়ে গেলো। নাফিসা ছাদ থেকে নাশিদকে দেখলো সে গাড়ি নিয়ে চলে যাচ্ছে। নাফিসা এবার ফোন বের করে নাশিদের ওই অবস্থার একটা ছবি তুলে নেয়। মাথায় তার দুষ্টু বুদ্ধি চেপেছে।
-‘ফুপ্পি, মামা চলো না ফুচকা খেতে যাই। কতদিন হলো খাই না!’
আমি কোণা চোখে আবিরের দিকে তাকিয়ে ফের তাতানের দিকে তাকালাম৷ আমি কিছু বলার আগেই আবির বলে উঠে,
-‘তো চলো যাই। এই একদিন বাসায় বসে থেকে থেকে আমি ক্লান্ত।’
ভাবী আড়চোখে একবার আমার দিকে তাকিয়ে বলে,
-‘তো বেশ! তাতান তোমার মামার সাথে যাও!’
তখনই চাচী ভাবীর উদ্দেশ্যে বলে,
-‘রথি কী তাহলে বাসায় বসে থাকবে নাকি? আবির, রথিকেও সাথে করে নিয়ে যা। তিনজন একসাথে থাকলে ভালো লাগবে!’
আমি বিস্মিত হয়ে আবিরের দিকে তাকালাম। আবিরের ঠোঁটে হাসি। এই হাসিটা আমার ভালো লাগলো না। তাও চাচীর মুখের উপর কিছু বলতে পারলাম না। মা আমায় সাবধান করেছে যেন ওনার মুখে মুখে তর্ক না করি। এই মানুষটা এই ভালো আবার দারুণ রাগী! ওনার সাথে অনেকটাই ব্যবহার মেইনটেইন করে চলতে হয়। আমি মাথা নাড়িয়ে নিজের ঘরে চলে গেলাম রেডি হতে। আর আবির তাতানকে নিয়ে ভেতরে চলে গেলো। ওরা চলে যেতেই চাচী মুচকি হেসে রথির মায়ের উদ্দেশ্যে বললো,
-‘আপনার মেয়ে বেশ শান্ত-শিষ্ট, ঠিক আগের মতোই। এমন লক্ষী মেয়ের যেন কারো নজর না লাগে!’
মার্জান তার চাচীর প্রসংশা চুপচাপ শুনলো তবে মুখে কিছু বললো না। তার ভেতরে কখন কী চলে কেউ-ই বলতে পারে না। তাই আপাতত মার্জান তার চাচীকে ঘাটতে চাইলো না।
নাশিদ গাড়ির স্টেয়ারিং এ আঙুল চালাতে চালাতে জ্যাম ছাড়ার অপেক্ষা করছে। তার ভেতরে এখনো নাফিসার বলা কথাগুলো অনবরত ঘুরঘুর করছে। কিছুতেই সে এই চঞ্চল চিন্তামহলকে নিজের থেকে দূরে রাখতে পারছে না। একটার পর একটা চিন্তা যেন তার মাথায় ছিদ্র করে করে ঢুকছে।
চিন্তাগুলো ঝেড়ে ফেলার জন্য আশেপাশে তাকাতেই সে আবারও রথিকে এবং আবিরকে একসাথে দেখে ফেললো যা দেখে নাশিদ কিছুটা রেগে গেলো তবে সে নিশ্চুপ! আহ কী সুন্দর কথা বলছে আর ফুচকা মুখে পুরছে। দৃশ্যটা নাশিদের একদমই ভালো লাগছে না। তাই সে চোখ সরিয়ে নেয়। দুইদিনে এই ছেলেটা কোন আহামরি হয়ে গেলো সেটাই নাশিদের মগজে ঢুকছে না! জ্যাম ছাড়তেই সে আরেক পলক ওদের দিকে তাকিয়ে চলে গেলো। অসহ্য লাগছে তার সবকিছু।
.
-‘স্যার আপনাকে কিছুদিন ধরে অন্যমনস্ক লাগছে যে?’
-‘কিছু না নয়ন! এমনি!’
-‘আপনি কী ওই মেয়েটিকে নিয়ে চিন্তিত?’
নাশিদ কলম ঘুরানো বন্ধ করে ঘাড় উঁচু করে নয়নের দিকে তাকালো। নয়নের দৃষ্টিতে কৌতুহল স্পষ্ট! নাশিদ মৃদু স্বরে বলে,
-‘নিজের কাজে যাও। কাজ না থাকলে বাড়ি যাও, এসব মেয়ে-টেয়ের কথা থানায় তুলবে না!’
নয়নের দাঁত কেলানো ফুঁস। সে ঘাড় কাত করে চলে গেলো। নাশিদ এবার চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে চোখ বুজে রইলো। সেই দৃশ্যটা এখনো তাকে তাড়া করে বেড়াচ্ছে। একটু প্রশান্তি চাচ্ছে নাশিদ। নয়তো তার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসবে।
.
এভাবেই কিছুদিন অতিবাহিত হয়। আমি সবে কোচিং থেকে বেরিয়ে রিকশার জন্য দাঁড়ালাম। এখন বাসায় তাড়াতাড়ি যেতে হয় তাই হেঁটে যাওয়া সম্ভব না। আবার রিক্সায় চড়লে রিক্সাওয়ালা অন্য রাস্তা দিয়ে যায় বলে সে আর নাশিদকে দেখতে পায় না। কারণ রাস্তাটি থানার উল্টোপথে। আমি আনমনে এসবই ভাবছিলাম তৎক্ষণাৎ রাস্তার অপরপাশে পুলিশম্যানকে দেখে আমি খানিক চমকে উঠলাম। একি উনি তো রাস্তা পার হয়ে আমার দিকেই আসছে। কিন্তু ওনার মুখ এমন লাল হয়ে আছে কেন? শুকনো ঢোক গিললাম, এখন নাশিদ কী আমার হাতে হাতকড়া পরিয়ে থানায় নিয়ে যাবে? কিন্তু আমি তো অপরাধী নই।
উনি ঠিক আমার সামনে এসে দাঁড়ালেন। কিছুক্ষণ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিপাত নিক্ষেপ করে আমার দিকে ঝুঁকে গেলো আর আমি সঙ্গে সঙ্গে সরে গেলাম।
~চলবে।