#হাসনাহেনা ❤️
#জিন্নাত_আফরিন
||পর্ব: ০২ ও ০৩||
“আপনি এই বিয়েতে কেন রাজি হয়েছিলেন নিবিড় ভাইয়া? কেন? আপনি তো আমায় সহ্যই করতে পারেন না। তাহলে কেন রাজি হলেন?”
নিবিড় রে’গে দেওয়ালের সাথে চেঁপে ধরল হেনাকে। রা’গে ফুসফুস করে বলল, “তো? তাহলে কী ওই বুড়োটা কে বিয়ে করতি তুই? করতি বল? ঠিক আছে। চল আমিই তোকে ওই বুড়োটার সঙ্গে বিয়ে করিয়ে দিব।”
হেনা চুপ মেরে যায়। নিবিড় তাকে ছেড়ে দূরে সরে আসে। উপাশে মুখ ফিরিয়ে বলল, “হাতে ওসব কিসের দাগ?”
হেনা নিজের হাতের দিকে তাকায়। হেসে বলল, “জানেন যখন কেউ মনে আঘাত করে, তখন শরীরে আঘাত করলেও এতটাও কষ্ট লাগে না।”
“মানে? কী বুঝাতে চাইছিস তুই?”
“বিয়েতে রাজি ছিলাম না। তাই রূপা মা মে’রে’ছে।”
নিবিড় এগিয়ে এসে তার হাত স্পর্শ করল। করুন কন্ঠে বলল, “খুব ব্যথা পেয়েছিস?”
হেনা হেসে বলল, “এতে আর ব্যথা কী নিবিড় ভাইয়া? সবচেয়ে বড় কষ্ট তো বাবার কথায় পেয়েছি। সে আমার বাবা। তাই সে আমার সঙ্গে যা খুশি করতে পারে। চাইলে যে আমায় রে’প করতে চেয়েছে তার সঙ্গেও বিয়ে দিতে পারে।”
নিবিড় ব্যথিত হলো। ড্রয়ার থেকে মলম বের করে তাকে টেনে বিছানায় বসাল। স-যত্নে মলম লাগিয়ে দিল তার হাতে। এবং বাহুতে।
__________
একটু আগেই দু’জনের বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে। যখন নাইরা বেগম চেঁচিয়ে বলেছিলেন, নিবিড়ের সঙ্গেই হেনার বিয়ে হবে। তখন হেনা সহ নিবিড়ও স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল। হেনা শুধুই ভাবছিল, এই জড়বস্তুটা কে সে বিয়ে করবে? অসম্ভব!
নিবিড় মা’য়ের বাধ্য সন্তান না হলেও সে যথেষ্ট সম্মান করে মা’কে। আর হেনার প্রতি তখন তার আলাদা মায়া কাজ করছিল। যদি নাইরা বেগমের সিদ্ধান্তে সে রাজি না হয় তাহলে হেনার জীবন শেষ হয়ে যাবে তার বাবা, সৎ মা আর ওই বুড়ো লোকটার হাতে। আর তা ছাড়া সে জানে, সেই লোকটা কী করতে চেয়েছিল হেনার সাথে। সেই তো বাঁচিয়েছিল তাকে। হেনা ফুঁপির কথা ফেলতে পারবে না। আর নিবিড়ও পিছুপা হতে পারবে না। গোলকধাঁধায় ফেঁসে গেছে দু’জন। উপায় না পেয়ে দু’জনই রাজি হয়।
তারপর বিয়ের কার্য সম্পন্ন হওয়ার পর কোন রিচু’য়াল’স পালন না করেই হেনাকে নিয়ে আসে নাইরা বেগম। আফজাল সাহেব আর রূপা বেগমের সাথে দেখাই করতে দেন নি তিনি।
__________
“হ্যাঁ উনি তোর বাবা হয়। কিন্তু তাই বলে যা খুশি তাই করতে পারবে না। তুই প্রতিবাদ করতে পারিস না?”
নিবিড়ের কথায় তাচ্ছিল্য হাসে হেনা। বলল, “আমি আবার প্রতিবাদ? আমার প্রতিবাদ করার সাধ্য আছে নিবিড় ভাই? আমি তো কাঠপুতুল। রূপা মা যেভাবে খুশি সেভাবেই চালাবে।”
“কেন? প্রতিবাদ কেন করতে পারবি না?”
“কীভাবে করতাম? রূপা মা’য়ের অ’ত্যা’চা’রে বাড়ি থেকে পা’লাতে চেয়েছিলাম। কিন্তু বাবা ধরে ফেলেছে। সেই বেধরক মে’রে’ছে। বাড়ি থেকে বের হওয়ার সাহসও পাই নি। সেখানে প্রতিবাদ? রূপা মা আর বাবা তো আমাকে মে’রেই ফেলবে।”
নিবিড় গোপনে দীর্ঘশ্বাস ফেলল। যদিও সে জানে কী পরিমাণ সাফারে ছিল হেনা। মলম লাগিয়ে তা নির্দিষ্ট স্থানে রেখে হেনার দিকে তাকাল। হাত ভাঁজ করে দাঁড়িয়ে বলল, “শোন! তুই এখনো ছোট। সতেরো বছর এখনো শেষ হয়নি। আঠারো হতে আরো দু’মাস বাকি। তাই এসব নিয়ে ভাববি না। বিয়ে টিয়ে এসব মাথা থেকে ঝেঁড়ে পড়ায় মন দে। জানুয়ারিতেই কলেজে ভর্তির সব ব্যবস্থা করব। বুঝেছিস?”
হেনা অবাক হলো। পড়াশোনার প্রতি তার আগ্রহ বেশি। কোন মতে বাবাকে মানিয়ে সৎ মা’য়ের পা’য়ে পড়ে এস’এস’সি দিয়েছে। ভেবেই নিয়েছিল তার আর কলেজ পড়া হবে না। কিন্তু নিবিড় এর কথা শুনে যার’পর নাই অবাক হলো। আর নিবিড়ের প্রতি কিছুটা শ্রদ্ধা কাজ করল। হেনা বলল, “সত্যি আমি কলেজ পড়তে পারব?”
“কেন পারবি না?”
“আমি তো আশা করিনি।”
“আচ্ছা? একেই বলে পড়া চোর। পড়বি না তাই না? ওখানে হয়তো পড়াশোনার ধারে কাছে ছিলিস না। কিন্তু এখন আর এসব হবে না। পড়া ফাঁকি দেওয়া যাবে না।”
হেনা হেসে ফেলল। নিবিড় মুচকি হেসে চেয়ে রইল তার দিকে। হেনা বলল, “আপনি আসলেই আমায় অনুমতি দিচ্ছেন? কারণ আমি জানতাম আপনি এমন না। আমার প্রতি তো আপনার কোন মায়া থাকার কথা না।”
নিবিড় গম্ভীর গলায় বলল, “মায়ার কথা এখানে আসছে না হেনা। যেহেতু এখন তুই আমাদের ফ্যামিলিতে এসেছিস। তোর প্রতি যেই দায়িত্ব টা আছে সেটা তো পালন করতেই হবে তাই না? সেটাই পালন করছি।”
“শুধুই দায়িত্ব বোধের জন্য?”
নিবিড় কিছু বলে না। হেনা আবারো প্রশ্ন করতে উদ্যত হলে নিবিড় বলে, “এত কিছু এখন মাথায় রাখিস না। যা ঘুমিয়ে পড়। এমনিতে অনেক ধ’কল গেছে তোর উপর।”
হেনা উঠে দাঁড়াতেই মাথা চ’ক্কর দিয়ে উঠল। ঘুরে পড়তে নিলেও নিজেকে সামলে নিল। কিন্তু তা ক্ষণিকের জন্য। চোখে আঁধার নেমে এলো। হঠাৎ ব্যালেন্স হারিয়ে পড়তে নিলেই নিবিড় বুঝে ফেলে আর দ্রুত ছুটে এসে তাকে ধরে ফেলে। চিন্তিত স্বরে ডাকতে লাগল তাকে, “হেনা! এই হেনা কী হলো তোর? উঠ! উঠ বলছি। হেনা!!”
[চলবে.. ইন শা আল্লাহ্]
গঠণমূলক কমেন্ট করবেন। দয়া করে বা’জে মন্তব্য করবেন না।
#হাসনাহেনা ❤️
#জিন্নাত_আফরিন
||পর্ব: ০৩||
নিভু নিভু নেত্রপল্লব দ্বারা চারপাশ টা অবলোকন করল হেনা। নিজেকে বিছানায় আবিষ্কার করল। সবকিছু কেমন যেন আঁধার আঁধার লাগছে। কিছুক্ষণ পর সেই ভাব টা কমে এলে দেওয়াল ঘড়ির দিকে নজর আটকাল। আট টা বাজছে। বাম পাশে ফিরতেই নিবিড়ের ক্লান্ত ঘুমন্ত মুখখানা নজরে এলো। বিছানায় মাথা রেখে ঘুমিয়ে আছে। ধড়ফড়িয়ে উঠে বসতে নিলেই নিবিড়ের ঘুম ছুটে যায়। সে দ্রুত উঠে বলল, “হেনা! তুই ঠিক আছিস?”
“হ-হ্যাঁ আমি তো ঠিক-ই আছি নিবিড় ভাইয়া।”
“তাহলে? অজ্ঞান হয়ে গেছিলি কেন?”
“অজ্ঞান হয়ে গেছিলাম? কী বলছেন এসব?”
নিবিড় দীর্ঘশ্বাস ফেলল, “তুই রেস্ট নে। এখন উঠতে হবে না।”
“আরে..
“কোন কথা নয়!”
হেনা নিরুপায় হয়ে আঁধশোয়া হয়ে বসল। কালকের প্র’হার, অতিরিক্ত কান্না আর না খাওয়াদাওয়ার ফলে দূর্বল হয়ে পড়েছিল। তাই সেন্সলেস হয়ে গিয়েছিল। নিবিড় উঠে ওয়াশরুমে গেল। ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে হেনাকে বলে, “আমি যেন তোকে বাহিরে না দেখি। নয়তো খবর আছে বলে দিচ্ছি। বুঝেছিস?”
হেনা বোকার মতো মাথা নাড়ে। নিবিড় নিচে চলে যায়। হেনা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বিছানায় হেলান দিয়ে বসে।
__________
“হেনা! এভাবে বসে আছিস যে? ফ্রেশ হয়ে নিচে আয়। একসাথে খাবো।”
নাইরা বেগমের কথায় হেনা মাথা নাড়লেও পরক্ষণে নিবিড়ের কথা মনে পড়তেই বলল, “তোমার ছেলে তো আমাকে উঠতে নিষেধ করেছে ফুঁপি।”
“কেমন?”
“বলল নিচে দেখলে খবর আছে।”
“ওর খবর আমি করব। তুই আয়!”
নাইরা বেগম চলে গেলে সে ফ্রেশ হয়ে নিচে নেমে এলো। নিচে টেবিলে নাইমা আর তার বাবা নীহান বসে আছে। নীহান সাহেব ডাকলেন, “হেনা মা আয়। বস ওর পাশে।”
হেনা তার পাশে বসতেই সে বলল, “হেনা ভাবী ডাকব না আপু?”
“আপু ডাক।”
“কিন্তু তুই তো এখন আমার ভাবী।”
“নাইমু! বেশি কথা বলিস না তো।”
“হা হা হা!”
নিবিড়ের কোন আত্তাপাত্তা নেই। নাইরা বেগম রুটি মাংস নিয়ে এলেন। খাওয়ার মাঝে নীহান সাহেব বললেন, “তো কেমন লাগছে এখানে এসে মা? নিবিড় কী তোকে বকা’ঝকা করেছে?”
হেনা হেসে বলল, “না আঙ্কেল করে নি।”
“আঙ্কেল ডাকছিস কেন? বাবা ডাকবি বাবা।”
হেনা বিব্রত হলো। সৌজন্যমূলক হাসল। নাইরা বেগম বললেন, “আরে একটু শ্বাস নিতে দাও তো। ওই রূপা ওকে বে’ধরক মে’রে’ছে ওই বুড়োর সাথে বিয়ে দিতে। এখন এখানে একটু শান্তিতে থাকতে পারে এমন ব্যবস্থা করো।”
“হ্যাঁ কেন নয়? তা তোর কী কিছু লাগবে মা? লাগলে বাবা কে বলিস নাহয় নাইমা আর নাইরা কে বলিস। আর হা এই ঘরকে অবশ্যই আপন মনে করবি। কখনো পরের ঘর বা নিজেকে এই ঘরের মেহমান মনে করে জড়োসড়ো হয়ে থাকবি না। নিজের ঘরের মতোই ঘুরবি, ছুটাছুটি করবি, খেলবি।”
হেনা হেসে বলল, “আমি কী এখনো ছোট আছি আঙ্ক.. বাবা?”
নীহান সাহেব বললেন, “ওমা তুই বড় হয়ে গেছিস? না রে! তুই তো আমাদের জন্য এখনো বাচ্চা মাত্র। তুই আর নাইমা কতই বা বড় হলি? শোন! কখনো অন্যের কথা ধরে নাচবি না বুঝলি?”
হেনা মাথা নাড়ে। ততক্ষণে বাহির থেকে ঘর্মাক্ত শরীরের নিবিড় প্রবেশ করল ঘরে। গায়ে ঘামযুক্ত টি-শার্ট আর ট্রাউজার দেখেই বুঝা যাচ্ছে সে জগিং করতে গিয়েছিল। সে ফ্রেশ হয়ে নিচে নেমে বাবার পাশে বসে পড়ল। হেনা অর্ধেক খেয়ে উঠতে নিলেই নাইরা বেগম থামিয়ে বললেন, “হেনা! কোথায় যাচ্ছিস? কিছুই তো খেলি না।”
“আসলে.. খেতে ইচ্ছে হচ্ছে না ফুঁপি। পেট ভরে গেছে।”
“আরে..
“আর খাব না ফুঁপি আমার ভালো লাগছে না।”
নিবিড় সায় দিয়ে বলল, “যেতে দাও আম্মু হয়তো খেতে ইচ্ছে হচ্ছে না।”
হেনা উপরে উঠতেই দীর্ঘশ্বাস ত্যাগ করে খাওয়া শুরু করল সবাই।
নাইরা বেগম বললেন, “বিয়ে টা হুট করেই হয়ে গেছে৷ কেউ জানে না। ভাবছি রিসিপশন টাও সেরে ফেল। কী বলো নিবিড়ের বাবা?”
নীহান সাহেব বললেন, “হ্যাঁ আমিও তআই ভাবছিলাম।”
মাঝে নিবিড় বাঁধা দিয়ে বলল, “না বাবা প্রয়োজন নেই।”
“মানে.. কী বলছিস তুই? প্রয়োজন কেন হবে না।”
“আমি এখনই এসবের জন্য প্রস্তুত নই। কাউকে জানাতে হবে না। আর রিসিপশনের বিষয়টা বাদ দাও৷ অনুষ্ঠান এখন করতে হবে না। দু’মাস সময় দাও।”
নাইরা বেগম বললেন, “দু’মাস? দু’মাসে সব মানিয়ে নিতে পারবি?”
“চেষ্টা করব।”
দীর্ঘশ্বাস ফেললেন নীহান আর নাইরা। নাইরা বেগম বললেন, “ঠিক আছে তুই যত সময় নিবি নে। তবু মেয়েটা কে কষ্ট দিস না নিবিড়। জানিসই তো কত কষ্টের মাঝে বড় হয়েছে মেয়েটা। ওই রূপা একটুক্ষণের জন্যও জিরুতে দেয়নি মেয়ে টা কে। শেষ মেষ ওই বুড়োটার সঙ্গেই বিয়ে ঠিক করল ওর। তাই আমার কথা রেখে হলেও মেয়েটাকে দেখে রাখিস।”
নিবিড় কিছু বলে না। চুপচাপ খেয়ে যেতে লাগল। আড়াল থেকে হেনা সব শ্রবণ করল। দীর্ঘশ্বাস ফেলে ছাদে উঠল। ছাদের এক কোণে হাসনাহেনা ফুলের টব দিয়ে ভরা। হাসল হেনা। এই ফুল টা তার খুব পছন্দের। আফিয়ারও পছন্দের ফুল ছিল। যেদিন হেনা ভূমিষ্ট হয়েছিল সে’দিন এক গুচ্ছ হাসনাহেনা ফুল নিয়ে আফিয়ার কাছে এসেছিল আফজাল সাহেব৷ তাই খুশি হয়ে মেয়ের নাম দিয়েছিলেন হাসনাহেনা নূর। কাকতালীয় ভাবে তারও প্রিয় ফুল হাসনাহেনা।
হাসনাহেনা ফুল সে ভীষণ ভালোবাসে। তবে ছাদে এই ফুলগুলো নিবিড়ই লাগিয়েছে। কিন্তু নিবিড় তেমন হেনার সঙ্গে কথা বলত না। বলতে গেলে তারা একে অপরকে সহ্যই করতে পারত না। কিন্তু নিয়তিলিখনে আজ তারা একসাথে।
[চলবে.. ইন শা আল্লাহ্]