হাসনাহেনা পর্ব-১০ এবং শেষ পর্ব

0
1381

#হাসনাহেনা ❤️
#জিন্নাত_আফরিন
||অন্তিম প্রহর||

ইমার্জেন্সি অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে হেনাকে। কিয়ৎক্ষণ আগেই নিবিড়ের কোলে অজ্ঞান হয়ে ঢলে পড়েছিল সে। নীহান সাহেব ঠিক করলেন ড. রীনার দ্বারাই হেনার অপারেশনের কাজ সম্পন্ন করবেন। এতে তিনি বলেছেন, এটা ঝুঁকিসম্পন্ন। কিন্তু নিবিড় আর নীহান মানতে রাজি নয়। হেনাকে যেকোন মূল্যেই বাঁচাতে হবে।

নিবিড় পাথরের মূর্তির মতো বেঞ্চিতে বসে আছে। নির্জীব সে। কোন হেলদুল নেই। নীহান সাহেব পায়চারি করছেন এদিক সেদিক। নাইরা বেগম আর নাইমা বেঞ্চিতে বসে কান্নায় মগ্ন। নাইমার একমাত্র প্রিয় বন্ধু আর প্রিয় বোন টা মৃত্যু পথযাত্রী। নাইরা বেগমের প্রিয় ভাইঝি টা আজ মৃত্যুর সঙ্গে বন্ধুত্ব করছে।

বেঞ্চিতে শান্ত ভঙ্গিতে বসে আছে নিবিড়। মনে মনে আওড়াচ্ছে হাজারো কথা, “তুই আমার হয়েও কেন আমার হলি না হেনা। কেন আরেকটা বার বলতে পারলি না ‘ভালোবাসি’। ফিরে আয় একবার! হাসনাহেনা ফুলেই তোকে সাজাবো আমি। তোকে অনেক বড় গায়িকা হতে হবে৷ অনেক বড়! আমার চেয়েও বড় সিঙ্গার হতে হবে। ফিরে আয় হেনা!”

প্রায় দু’ঘন্টা পর বেরিয়ে এলেন ড. রীনা। সবাই এক প্রকার ছুটে গেল তার কাছে। উৎকণ্ঠা হয়ে বলল, “ম্যাম! হেনা কেমন আছে? অপারেশন সাকসেসফুল? হেনা ঠিক আছে? কথা বলুন ড. রীনা।”

ড. রীনা কিছু বলতে গিয়েও থেমে যান। সবাই থমকে গেল!

____________
“কারণে অকারণে, নিষেধে বা বারণে
তোমার নামেই যত, জোছনা নিলাম
নিয়মে অনিয়মে, দহনে বা ধারোণে
আমায় নিখোঁজ ভাবো, বাঁ পাশেই ছিলাম,

কারণে অকারণে, নিষেধে বা বারণে
তোমার নামেই যত, জোছনা নিলাম
ভেতরে বাহিরে, দহনে বা ধারোণে
আমায় নিখোঁজ ভাবো, বাঁ পাশেই ছিলাম,

চোখে জল নোনা কী? নিয়ে গেলো জোনাকি।
কেনো আমি পথে একা দাঁড়িয়ে?
আলোদের পিয়নে
সোডিয়াম নিয়নে যেনো
সবই কোথায় হারিয়ে

আমি তোমার দ্বিধায় বাঁচি
তোমার দ্বিধায় পুড়ে যাই
এমন দ্বিধার পৃথিবীতে
তোমায় চেয়েছি পুরোটাই

আমি তোমার স্বপ্নে বাঁচি
তোমার স্বপ্নে পুড়ে যাই
এমন সাধের পৃথিবীতে
তোমায় চেয়েছি পুরোটাই
পুরোটাই

জলেতে আগুনে, বর্ষা বা ফাগুনে
তোমার নামেই যত, মেঘেদের গান জাগরণে মিছিলে।
কোথায় যে কি ছিলে, আমায় নিখোঁজ ভাবো, নিয়ে আভিমান

জলেতে আগুনে, বর্ষা বা ফাগুনে
তোমার নামেই যত, মেঘেদের গান
জাগরণে মিছিলে, কোথায় যে কি ছিলে
আমায় নিখোঁজ ভাবো, নিয়ে আভিমান

চোখে জল নোনাকী? নিয়ে গেলো জোনাকি
কেনো আমি পথে একা দাঁড়িয়ে?
আলোদের পিয়নে
সোডিয়াম নিয়নে যেনো
সবই কোথায় হারিয়ে

আমি তোমার দ্বিধায় বাঁচি
তোমার দ্বিধায় পুড়ে যাই
এমন দ্বিধার পৃথিবীতে
তোমায় চেয়েছি পুরোটাই
আমি তোমার স্বপ্নে বাঁচি
তোমার স্বপ্নে পুড়ে যাই
এমন সাধের পৃথিবীতে
তোমায় চেয়েছি পুরোটাই
পুরোটাই..”

রমণীর গাওয়া শেষ হতেই করতালি শুরু করল সামনে থাকা ব্যক্তিটি এবং পাশে বসে থাকা দুই বাচ্চা ছেলে মেয়ে। মুখে চিলতে হাসি। ব্যক্তিটি হেসে বলল, “রিয়েলি ইউ আর অ্যা গ্রেট সিঙ্গার হেনা। আমার চেয়েও ভালো।”

হেনা হেসে বলল, “আপনার চেয়ে ভালো আমি কী করে হতে পারি নিবিড় সাহেব?”

ভ্রু কুঁচকে নিবিড় বলে, “কেন? তুই আমার চেয়েও সুমিষ্ট কন্ঠের অধিকারীনি।”

“সত্যি?”

বাচ্চাদের মধ্যে মেয়েটি বলে, “তোমরা খালিই ঝগড়া করো। তোমাদের দু’জনই খুব খুব খুব সুন্দর গান গাও প্রমিজ!”

নিবিড় হেসে তাকে কোলে নিয়ে বলল, “সত্যি? আই লাভ ইউ নীরা শোনা!”

বাচ্চা ছেলেটি মুখ ফুলিয়ে বলল, “হ্যাঁ তুমি তো শুধু নীরুকেই কোলে নাও আর ওকেই আই লাভ ইউ বলো। আমাকে একদম বলো না!”

নিবিড় হেসে তাকে কোলে নিয়ে বলল, “এমা! এ কী বলছো নীরাদ। তোমাকে আমি ভালোবাসি না? তুমি তো নাম্বার ওয়ান বয় এই পৃথিবীতে।”

নীরা মুখ ফুলিয়ে বলল, “ও নাম্বার ওয়ান বয় হলে আমি কী?”

“আর তুমি নাম্বার ওয়ান গার্ল!”
দু’জন হেসে নিবিড়ের দুই গালে কিস্ করে দৌড়ে চলে গেল দাদা দাদীর কাছে। হেনা আর নিবিড় হেসে ফেলল। হেনা নিবিড়ের দিকে তাকাল। প্রাপ্তির নিঃশ্বাস ফেলল। সে’দিন তার বাঁচার চান্স ছিল মাত্র ২০%। কিন্তু নিবিড়ের ভালোবাসা, নাইরা বেগমের আর্শীবাদ আর আল্লাহর দয়ার কারণেই সে মৃত্যুর পথ থেকে বেঁচে ফিরেছে।

সে’দিনের পর কেটে গেছে সাত বছর। তাদের দুই জমজ ছেলে-মেয়ে হয়েছে। নীরা আর নীরাদ। হেনার নিজেকে বিশ্বভাগ্যবতি মনে হয়। সে কষ্টের পর পেয়েছে নাইরা বেগমের থেকে পেয়েছে মায়ের ভালোবাসা। নীহান সাহেবের কাছ থেকে পেয়েছে বাবার ভালোবাসা। নাইমার কাছ থেকে পেয়েছে বোনের ভালোবাসা। আর নিবিড়ের কাছ থেকে পেয়েছে, এক দায়িত্ববান স্বামীর ভালোবাসা, প্রেম।
ভাবনার মাঝে সুমিষ্ট সুর বেজে উঠল,

“শীতল বাতাসে, দেখেছি তোমায়
মেঘ মিলনে চেয়ে রাগ করো না
মন চায় তোমায় আজই রাতে
শীতল বাতাসে, দেখেছি তোমায়
মেঘ মিলনে চেয়ে রাগ করো না
মন চায় তোমায় আজই রাতে

বৃষ্টি তো থেমেছে অনেক আগেই
ভিজেছি আমি একাই
আসতো যদি বিভীষিকা
খুঁজেও পেতে না আমায়

মেঘ মিলনে চেয়ে রাগ করো না
মন চায় তোমায় আজই রাতে
রাতে… রাতে…”

হেনার মুখে লেপ্টানো অবাধ্য চুলগুলো সরিয়ে এক টি হাসনাহেনা ফুলের ছোট্ট তোড়া কানের পীঠে গুঁজে দেয় নিবিড়। ঘোর লাগানো কণ্ঠে বলে,

______ “সুবাসি হাসনাহেনার মাঝে খুঁজে বেড়াই তোকে,
ব্যার্থ আমি নই, যবে দেখি,
তুই-ই সেই হাসনাহেনা” ❤️
– জিন্নাত 🌿

[সমাপ্ত..]

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে