#হাসনাহেনা ❤️
#জিন্নাত_আফরিন
||পর্ব: ০৮||
সামনে থাকা অনাকাঙ্ক্ষিত ব্যক্তিটি কে দেখে শিউরে উঠল হেনা। এ কার মুখোমুখি হতে চলেছে সে? ফিরে যাবে? নাকি এই পথেই চলে যাবে? এই পথে গেলে যে ওই লোকটার মুখোমুখি হবে সে। তবে কী করবে? নিবিড় যে আসছে না?
হেনা পেছন ফিরতেই পেছন থেকে সেই লোকটা [যার সাথে রূপা বেগম হেনার বিয়ে ঠিক করেছিল] ডাক দিল, “আরে ওই ছেড়ি! কই যাস হ্যাঁ? দাঁড়া। এদিকে আয়। আয় বলছি!”
হেনা এবার পায়ের গতি বাড়িয়ে দিল। ভয়ে বুক ঢিপঢিপ করে কাঁপতে লাগল। কী করবে সে এখন? মনে মনে আল্লাহ কে ডাকতে লাগল। লোকটাও দৌড়ে এসে তার হাত ধরে ফেলল। হেনার এবার ভয়ে প্রাণ যায় যায় অবস্থা। ছুটাছুটি করতে করতে বলল, “কী করছেন ছাড়ুন! ছাড়ুন বলছি আমায়।”
লোকটা বি’শ্রি হেসে বলল, “ছাঁড়ার লাইজ্ঞা ধরছি? ওই দিন তোর ফুঁপি রে দিয়া আমারে অপমান করাই ছিলি মনে আছে? আমারে বিয়া করস নাই, উল্টা ঘাড় ধা’ক্কা দিয়া বাইর করে দিছিলো। মনে পড়ে?”
হেনা ছাঁড়ানোর চেষ্টা করে বলল, “প্লীজ আমায় ছেড়ে দিন। দেখুন ওসব আমি কিছুই জানি না। প্লীজ আমায় যেতে দিন, নিবিড় ভাইয়া আমার জন্য অপেক্ষা করছে।”
“আজ কেউ যাইতে পারব না। তোর এই সুন্দর লাহান শরীর টা আর ছাইড়বাম পারি? চল! চলা আমার লগে!”
হেনা এবার চিৎকার করে কেঁদে ফেলল। চোখ বেয়ে অশ্রুকণারা যাতায়াত শুরু করল। মনে পড়ল সে’দিনের কথা।
___
স্কুল থেকে পরীক্ষা দিয়ে ফিরছিল। সাথে বান্ধবী নীরাও ছিল। কিন্তু অর্ধেক পথেই তার বাড়ি। তাই হেনাকে একাই যেতে হলো।
কিন্তু মাঝ রাস্তায় এক চল্লিশ বছর বয়সী লোকের দেখা। হেনা রাস্তায় কোন মুরুব্বি দেখলে সালাম দেয়। একেও সালাম দিয়ে চলে যাচ্ছিল। পিছুডাক দেয় লোকটি, “এই ছেড়ি শোন!”
সৌজন্য স্বরূপ হেনা পিছন ফিরল। লোকটা বলল, “একটা কাজ করবার পারবি?”
হেনা হেসে বলল, “জ্বি কী কাজ বলুন আঙ্কেল?”
“এইহানে আয়।”
হেনা তার কাছে গিয়ে বলল, “বলুন।”
লোকটি তার হাত ধরে বলল, “আমার লগে চল।”
লোকটার স্পর্শ তার কাছে মোটেও ভালো লাগল না। কেমন অসহ্যকর আর বি’শ্রি স্পর্শ। হেনা বুঝতে পারল লোকটির নিয়ত ঠিক নেই৷ সে হাত ছাড়িয়ে বলল, “আমি পারব না আঙ্কেল আমায় বাসায় যেতে হবে।”
“বাসায় পরেও যাইতে পারবি এহন চল।”
“না আঙ্কেল…
হেনা ফিরে যেতে নিলেই খপ করে লোকটা তার হাত ধরে ফেলে। বি’শ্রি স্পর্শে হেনার গা রিরি করে উঠল। সে দ্রুত হাত ছাড়াতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল।
“কী করছেন আঙ্কেল ছাড়ুন! ছাড়ুন বলছি আমি বাড়ি যাব৷ প্লীজ ছাড়ুন।”
“আরে আগে আমার কাম টা শেষ করি, আমারে শান্তি দিয়া তারপর বাড়ি যাবি।”
হেনা এবার কেঁদেই ফেলল। এর মাঝে নিবিড় তার বন্ধুদের নিয়ে সেই রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিল। হেনাকে এভাবে অপদস্ত করতে দেখে তাদের নিয়ে এগিয়ে এসে হেনাকে লোকটার থেকে ছাড়িয়ে নিল। নিবিড় হেনার কাছে গিয়ে তার ফ্রেন্ডদের লোকটাকে দেখতে বলল।
বা’জে উদ্দেশ্য নিয়েই হেনার দিকে তাকিয়ে ছিল লোকটি। তা বুঝতে পেরে তার বন্ধুরা বেধড়ক মা’র’ধ’র করে লোকটাকে।
নিবিড় সেদিন ধমক দিয়ে বলেছিল, “কে বলেছে তোকে এভাবে একা আসতে? দেখলি বিপদ একটা তো ঘটিয়েই ফেলতি। আজ আমি এদিকে না আসলে কী হতো?”
হেনা কেঁদে বলেছিল, “কে আসবে আমার সাথে? বাবা তো কখনোই আসবে না। রূপা মা আসতে দিবে না কখনো।”
নিবিড় মলিন দৃষ্টিতে চেয়ে ছিল তার দিকে।
আর ওই লোকটা টাকা দিয়ে রূপা বেগমকে পটিয়ে হেনার সাথে বিয়ে ঠিক করে নিজের। তার হেনার সুন্দর চেহারা আর শরীরের প্রতি লোভ যেন কমছেই না।
__________
মুহুর্ত গুলো মনে পড়তেই গা গুলিয়ে এলো হেনার। সে’বার তো নিবিড় তাকে বাঁচিয়েছিল। এবার কে বাঁচাবে?
হেনা এবার জোড়ে কামড় বসাল। লোকটা হয়রান হলো। চিৎকার দিয়ে তাকে ছেড়ে নিজের হাত নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। হেনা এই সুযোগে দৌড়ে পালাল। লোকটাও চিল্লাতে চিল্লাতে তার পিছু করতে লাগল।
“বাঁচান! প্লীজ কেউ বাঁচান আমায়।”
কাঁদতে কাঁদতে চিৎকার করতে লাগল সাহায্যের জন্য হেনা। কিন্তু কারো দেখা নেই। হঠাৎ একটা গাড়ির সামনে এসে পড়ল হেনা। আরেকটু হলেই ধা’ক্কা লাগত গাড়ির সাথে। সঠিক সময়ে গাড়ি থামায় নিবিড়।
একটু কাজে আটকে যাওয়ায় দেরি হয়েছিল আসতে। এসেই জানতে পারে হেনা অনেক আগেই বেরিয়ে গেছে। তাই খুঁজতে খুঁজতে এ পথে আসে। হঠাৎ হেনা সামনে চলে আসায় ব্রেক কষে সে। হেনাকে দেখে তার দেহে যেন প্রাণ ফিরে এলো। দ্রুত নেমে হেনাকে বুকে চেঁপে ধরে সে। হেনা নিবিড়কে দেখে যেন ম’রতে ম’রতে বাঁচল। সেও আকড়ে ধরে নিবিড়কে। তার বুকে মুখ গুঁজে কাঁদতে লাগল। নিবিড় বলল, “হেনা? কোথায় ছিলি তুই? আর কী হলো কাঁদছিস কেন? তোকে না বলেছিলাম আমি না আসা অবদি কোথাও যাবি না। তুই বের হলি কেন? আর এই! কাঁদছিস কেন রে তুই?”
হেনা কাঁদতে কাঁদতে জবাব দেয়, “ভাইয়া… ওই.. ওই লোকটা, ওই লোকটা আমায়.. আবারো ছুঁয়েছে। বা’জে.. ভাবে ছুঁয়েছে।”
নিবিড় চমকে উঠল, “মানে? কী বলছিস এসব?”
এর মাঝেই লোকটা তাদের কাছে পৌছে যায়। নিবিড় তাকে দেখেই সব বুঝতে পারল। হেনাকে দাঁড় করিয়ে বলল, “দাঁড়া আমি একে দেখছি।”
লোকটা নিবিড়কে দেখেই পালাতে নিচ্ছিল তার আগেই তাকে ধরে বেধড়ক পে’টাতে থাকে নিবিড়। এর মাঝেই হঠাৎ হেনার মাথা চ’ক্কর দিয়ে উঠে। ভারি হয়ে আসল, মাথা চেঁপে ধরে হেনা। সব কিছু আঁধার মনে হচ্ছে। সাথে যন্ত্রণা করতে শুরু করল মাথায়। হেনা এবার চিৎকার দিয়ে উঠল। নিবিড় তার দিকে ফিরতেই এই সুযোগে লোকটা কোনরকম পালাল। নিবিড় হেনাকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। দৌড়ে গিয়ে তার বাহু ধরে বলল, “হেনা আর ইউ ওকে? কী হলো তোর? মাথা ব্যথা করছে?”
হেনা মাথা চেঁপে ধরা অবস্থায়ই মাথা নাড়ল। নিবিড় বলল, “ঠিক আছে চল, ওই লোকটা আর তোর কাছে আসবে না। ওকে আমি পুলিশে দেব। চল তোকে ড. এর কাছে নিয়ে যাই।”
হেনা কোনরকম বলল, “ন-নিবিড় ভাই, আ-আমি….
বাক্য অসম্পূর্ণই রয়ে গেল হেনার। নিবিড়ের কোলে ঢলে পড়ল সে। নিবিড় আহা’ম্মক হয়ে চেয়ে রইল। হুশে ফিরতেই ডাকতে লাগল তাকে, “হেনা! এই হেনা! কী হলো তোর? এই! উঠ, বাসায় যেতে হবে।”
কিন্তু হেনা উঠে না। হঠাৎ তার নাকে হালকা রক্তের দাগ দেখতে পেলে তার বুক মোচড় দিয়ে উঠে। সে দ্রুত তাকে গাড়িতে তুলে হসপিটালের উদ্দেশ্যে রওনা হলো।
[চলবে.. ইন শা আল্লাহ]