#হাসনাহেনা ❤️
#জিন্নাত_আফরিন
||পর্ব: ০৭||
মাথা টা ভীষণ ঝিমঝিম করছে হেনার। উঠে বসল। সোফায় নিবিড় নেই। হয়তো নিচে৷ উঠে ফ্রেশ হয়ে মুখে পানির ঝাপটা দিল। বেরিয়ে আসতে নিলেই শিরিনের লাল দু’টো আঁখি নজরে এলো তার। ভয়ে কিছুটা চমকে উঠল। সে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে তার দিকে রক্তচক্ষু নিয়ে তাকিয়ে আছে। হেনা পাশ কাটিয়ে আসতে নিলেই শিরিন বলে উঠে, “দাঁড়া!”
থমকে দাঁড়াল হেনা। তার দিকে ফিরে বলল, “জ্বি। বলুন আপু।”
হঠাৎ ঠাস করে থা’প্পড় বসিয়ে দিল হেনার গালে শিরিন। মাথা টা আবারো ঝিমিয়ে উঠল হেনার। একে তো সকাল থেকেই ভারি হয়ে আছে তার উপর চ’ড়। শিরিন চেঁচিয়ে বলল, “নির্লজ্জ চরিত্রহীনা মেয়ে!! ন’ষ্টা মেয়ে। কাল সারারাত তুই নিবিড়ের সাথে ছিলি? আমার নিবিড়ের সাথে? কী করেছিস তুই ওর সাথে?”
হেনা যেন কিছুই শুনতে পাচ্ছে না। তার চেঁচানো শুনে নিচ থেকে নাইমা, নাইরা বেগম ছুটে এলো। সাথে শাইলা বেগমও এলেন।
“কী হলো শিরিন? হেনা!”
শিরিন রে’গে বলল, “কী হলো মানে? ও কাল সারারাত নিবিড়ের সাথে ছিল।”
নাইরা বেগম বললেন, “তো? তাতে কী হয়েছে? তাই হলে তুই হেনাকে থাপ্পড় মা’রবি?”
হেনাকে ধরে কাছে নিয়ে এলেন নাইরা বেগম। সে এখনো মাথা চেঁপে আছে। নাইরা বেগম বললেন, “কী হয়েছে মা? মাথা চেঁপে আছিস কেন? মাথা ব্যাথা করছে?”
হেনা মাথা নাড়াল। শিরিন চেঁচিয়ে বলল, “তো কী হয়েছে মানে? কী বলছো এসব মামী? এই মেয়েটা নিবিড়ের সঙ্গে রাতে থেকেছে। মানে বুঝতে পারছো?”
“হ্যাঁ বুঝতে পারছি। আর ও ওর সঙ্গে থাকতেই পারে কারণ…
“কারণ?”
“কারণ সি ইজ মাই ওয়াইফ।”
পেছন থেকে নিবিড় বলে উঠে। শিরিন চমকে গেল। চিল্লিয়ে বলল, “কীহ? কী বলছো এসব নিবিড়?”
নিবিড় এগিয়ে এসে বলল, “ঠিক’ই বলছি শিরিন। ও আমার বউ।”
শিরিন কী বলবে বুঝতে পারে না। এতসবের মাঝে শাইলা বেগম বলে উঠেন, “কী? এসব কী আপা? নিবিড়ের বিয়ে তুমি এই মেয়ের সাথে দিয়েছ? কিন্তু আমাদের মাঝে কথা হয়েছিল যে, শিরিনের সাথেই নিবিড়ের বিয়ে হবে।”
নাইরা বেগম বললেন, “কথা আমাদের মাঝে নয়, নীহানের সাথে হয়েছিল। আর নীহান কখনোই বলেনি যে হ্যাঁ শিরিনের মতো উড়নচণ্ডী গায়ে পড়া স্বভাবের মেয়েকে, তার ছেলের বউ করবে।”
“কীহ? আমার মেয়ে উড়নচণ্ডী? তবে এই মেয়ে টা কী? খুব ভালো? পড়াশোনা কতটুকু করেছে একদম? আমার মেয়ে মাস্টার্স পাস। এই মেয়েটা কী?”
“শিরিন আর ও সমবয়সী না শাইলা। পড়াশোনা নিয়ে এখানে কথা আসছে না। স্বভাব চরিত্র আর আচার-আচরণ নিয়ে কথা আসছে।”
“তো এই মেয়ে কোন খেতের মুলা হ্যাঁ?”
নিবিড় চিল্লিয়ে বলল, “ব্যস! আর একটাও কথা নয় ফুঁপি। হেনার সম্বন্ধে আর একটা বা’জে কথা বলবেন না। ও আমার স্ত্রী, আর আমি আমার ওয়াইফের বিষয়ে কোন বা’জে কথা শুনতে চাচ্ছি না।”
“কিন্তু তোমার ওয়াইফ শিরিনের হওয়ার কথা ছিল।”
“কথা ছিল, কিন্তু নিশ্চিত ছিল না। এটা আপনারা নিজেরাই ঠিক করেছেন আমি কিংবা আমার বাবা মা না।”
শিরিন বাকরুদ্ধ। সে এখনো মানতে পারছে না যে হেনা নিবিড়ের স্ত্রী। নিবিড় এতসবের মাঝে খেয়াল করল হেনা কেমন যেন মাথা চেঁপে ধরে আছে। সে এগিয়ে গিয়ে বলল, “হেনা? এভাবে ধরে আছিস কেন? মাথা ব্যাথা করছে?”
নাইরা বেগম বললেন, “থা’প্পড় মে’রেছিল শিরিন।”
“কী? মানে শিরিন…
নিবিড় এবার নিজেকে সামলাতে না পেরে চ’ড় বসিয়ে দিল শিরিনের গালে। চেঁচিয়ে বলল, “হাউ ডেয়ার ইউ শিরিন? এতদিন তোমাকে ন্যাকা বলে জানতাম। কিন্তু নির্দয় বলে কখনোই জানতাম না।
দেখতেই পাচ্ছ ও অসুস্থ তারপরও ওকে থা’প্পড় মে’রে’ছো কোন সেন্সে? আর ওকে থা’প্পড় দেওয়ার কারণ টা কী আমি?”
শিরিন চিল্লিয়ে বলল, “হ্যাঁ হ্যাঁ তুমি। তুমিই সেই কারণ। আমি তোমাকে ভালোবাসি নিবিড়। তুমি এভাবে আমাকে ধোঁকা দিতে পারো না।”
“ব্যস! শাট আপ শিরিন। অনেক সহ্য করেছি। বেরিয়ে যাও তুমি। আই সোয়ের শিরিন আমি খুব খা’রাপ। আমাকে বাধ্য করো না অ’পমান করতে।”
শাইলা বেগম শিরিনকে টে’নে নিয়ে এলেন। নাইরা বেগমের দিকে তাকিয়ে শাসিয়ে বললেন, “এসব করতে এখানে আসি নি আপা। আমার ভাইকে আমি সব জানাব। এসবের শোধ আমি তোমাদের তিনজনের উপরই নেব।”
নাইরা বেগম বললেন, “আমার স্বামী ন্যায়পরায়ণ। তিনি অবিচার করেন না কারো উপর। আপনার ন্যাকি মিথ্যে অভিযোগে তিনি যাচাই বাছাই না করেই আমাদের ভুল বুঝবেন না।”
“সে দেখা যাবে।”
শাইলা বেগম ব্যাগ বেঁধে পাথরের ন্যায় শিরিনকে টে’নে নিয়ে বেরিয়ে গেলেন। হেনার ঝিমঝিম ভাবটা কিছু টা কমে এসেছে। স্বাভাবিক হলেও চোখ দুটো কিছু টা ঝাপসা লাগছে৷ চোখ মুছে চারপাশ লক্ষ করল। সবাই দরজার দিকে তাকিয়ে। নিবিড় হেনাকে লক্ষ করতেই বলল, “তুই ঠিক আছিস হেনা?”
হেনা মাথা নাড়াল। নাইমা বলল, “তো? মাথা চেঁপে দাঁড়িয়ে ছিলি কেন?”
হেনা বলে, “এমনি একটু ঝিমঝিম করছিল। চ’ড়ের বেগ টা একটু বেশিই ছিল।”
নাইরা বেগম তাকে বুকে জড়িয়ে স্বান্তনা দেন, “তুই কষ্ট পাস না মা এতে। ওই মেয়েটা এমনই। দেখ ও চলে গেছে৷ আর কেউ তোকে জ্বালাবে না।”
নিবিড় বলল, “ঠিক আছে আম্মু তুমি যাও। আমি ওকে দেখছি। আর নাস্তা দাও ওকে গানের ক্লাসে নিয়ে যেতে হবে।”
_________
“জানি আবার একটি জন্ম আমার,
কভু হবে না,
জানি আবার এমন করে তোমার,
দেখা পাব না।”
সুমিষ্ট হেনার গলা। মুগ্ধ হয়ে চেয়ে রইল নিবিড় তার পানে। করতালি দিয়ে বলল, “সত্যি হাসনাহেনা। তোর গলা টা আমার চেয়েও বহুগুণে সুন্দর সুমিষ্ট। তোর কন্ঠের প্রেমে পড়ে গেলাম আমি।”
হেনা লজ্জা পেল। সাথে নুইয়ে গেল, “কী বলছেন এসব নিবিড় ভাই। আপনার চেয়ে সুন্দর গলা কারো হয়?”
“কেন হয় না?”
“না তো।”
“কিন্তু তোর হয়।”
“মানে…
“হুম। তোর গলা সত্যি খুব সুন্দর। আই সোয়ের হেনা। সত্যি।”
হেনা হাসল। নিবিড় চেয়ে রইল এক মুগ্ধান্বিত দৃষ্টি নিয়ে। মনে মনে শুধালো, “ফুলের রাণী হয়তো গোলাপ,
কিন্তু আমার মন বাগানের ফুলের রাণী যে হাসনাহেনা।
হ্যাঁ সেই হাসনাহেনা যাকে আমি মনে গেঁথে রেখেছি।
প্রিয় ফুল তো আমার জুঁই নামের কোন এক ফুল ছিল,
কিন্তু তোকে দেখার পর আমার প্রিয় ফুল যে হাসনাহেনা হয়ে উঠল,
আমি আমার মন বাগানে ফুঁটা সুবাসি হাসনাহেনা টাকে আমার করে পেয়েছি।
এটাই যে আমার প্রাপ্তি।
তুই-ই যে আমার হাসনাহেনা।”
প্রায় দুই মাস কেঁটেছে। এর মাঝে হেনা নিবিড়ের প্রতি কিছুটা দূর্বল হয়ে পড়েছে৷ প্রায় সময়ই নিবিড়ের দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে চেয়ে থাকতে মন চায়।
কিন্তু বলতে পারে না বক্ষ পিঞ্জরের লুকানো কথা গুলো। এর মাঝে সে গানের প্রতি এক্সপার্ট হয়ে উঠেছে। খুব ভালোই গান গায়। আর নিবিড়ের আদেশমতে সে প্রতি রাতেই নিবিড়ের জন্যে একটি করে গান গায়৷ আর নিবিড় তার প্রশংসা করে। হেনার ভীষণ ভালোই লাগে। ও বাড়ির সকল কথা যেন সে ভুলেই গেল।
কলেজেও ভর্তি হয়েছে প্রায় এক সপ্তাহ। নিয়মিত গানের ক্লাস আর কলেজেও যাচ্ছে সে।
__________
কলেজ থেকে ফেরার সময় নিবিড়ের গাড়ি দেখতে পেল না হেনা। কী ব্যাপার? সে তো ছুটির দশ মিনিট আগেই উপস্থিত হয়ে যায়। তবে এখন কী হলো? বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করল হেনা। নাহ সে আসছে না। হেনা ভাবল হয়তো কোন কাজ পড়ে গেছে। নিজেই চলে যাওয়ার চিন্তাভাবনা করল। তাই হাঁটা ধরল।
পথিমধ্যেই থমকে দাঁড়াল সে। সামনে থাকা অনাকাঙ্ক্ষিত ব্যক্তিটি কে দেখে ভয়ে কাঁপতে লাগল। এ আবার কার মুখোমুখি হতে চলেছে সে?
[চলবে.. ইন শা আল্লাহ]