#হাসনাহেনা ❤️
#জিন্নাত_আফরিন
||পর্ব: ০৬||
“কোথায় যেন বৃষ্টির রিমঝিম শোনা যায়
বইছে বাতাস, কাশফুল ছুঁয়ে শনশন্
বৃষ্টির উচ্ছ্বাস ছুঁয়ে যায় নাগরিক উপকূল
রিমঝিম রিমঝিম নাচলো আমার মন।
অনেকদিন, অপেক্ষায়, সমান্তরাল
থেকেই গেল জেব্রাক্রসিং
বৃষ্টির প্রার্থনায় কাশফুল নতজানু;
উড়ে চলে তৃষ্ণার্ত রংহীন ফড়িং…”
মন্ত্রমুগ্ধের ন্যায় হেনা চেয়ে রইল নিবিড়ের পানে। গিটারে টুংটাং সুর তুলে কেঁশে গলা পরিষ্কার করে আবারো গাওয়া শুরু করল নিবিড়,
“আজ জানালার বাইরে
একঝাঁক বৃষ্টির রিমঝিম রিমঝিম
বইছে বাতাস, কাশফুল ছুঁয়ে ছুঁয়ে ছুঁয়ে…
রাস্তার সিগনালে কন্ডাকটর জেব্রাক্রসিং
অনেকদিন হেরে যাওয়া মন দিল ধুঁয়ে।”
গান শেষে করতালি শুরু হলো। সামনে বসে আছে হেনা। মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে নিবিড়ের দিকে। পাশেই শিরিন, নাইমা শিরিনের ভাই নীলয়, আর নিবিড়ের চাচাতো ভাই বোন ইলি আর শুভ বসে আছে।
আড্ডার আসর জমেছিল সন্ধ্যার দিকে। তখন সবাই বায়না ধরল, নিবিড়কে গান গাইতে হবে। হেনা অধির আগ্রহে তার গানের প্রতিটা ছন্দ, লাইন গভীর মনোযোগ সহকারে দেখছিল, শুনছিল। এ যেন তার গুরু। কিন্তু হেনার এমন ভাবে তাকিয়ে থাকা টা শিরিনের মোটেও পছন্দ হলো না। কিন্তু সবার সামনে কিছু বলতেও তো পারছে না।
নিবিড় হেনার দিকে গিটার এগিয়ে দিয়ে বলল, “নে তুই গা এবার।”
হেনা বলল, “কী বলছেন এসব? আমি কীভাবে…
“কেন তোর গলা তো খুব ভালোই। গাইতেই পারিস।”
“আরে না নিবিড় ভাই।”
শিরিন বলে উঠে, “আমি গাই নিবিড়?”
নিবিড় বিরক্ত হয়ে বলল, “তোমাকে বলেছি? হেনা গা বলছি।”
হেনা বলল, “ঠিক আছে তবে আমি একা গাইব না। সবার গাইতে হবে।”
“আচ্ছা? ঠিক আছে হয়ে যাক।”
__________
রাতের খাওয়া দাওয়া শেষে সিড়ি বেয়ে উঠতে নিলেই মাথা চ’ক্কর দিয়ে উঠে হেনার। পড়ে যেতে নিলেও রেলিং আঁকড়ে ধরে সামলে নেয় নিজেকে। চারদিক কেন যেন অন্ধকার হয়ে আসছে। মাথা চেঁপে সিড়িতে বসে পড়ল। কিয়ৎক্ষণ এভাবেই চলল।
“আসতে না আসতেই ঢং বেড়ে গেছে তাই না?”
শিরিনের কন্ঠ শুনেও তাকাল না সেদিকে। মাথা চেঁপে একি ধ্যানে বসে রইল। শিরিন সিড়ি বেয়ে উঠে হেনার পাশে দাঁড়াল। বিরক্ত হয়ে বলল, “কী ব্যাপার? এভাবে বসে বসে জায়গা দখল করার মানে টা কী? ঘরে কী আর জায়গা নেই? এখানেই শুয়ে পড়বে নাকি? বিরক্তিকর!”
হেনার সেদিকে ধ্যান নেই। অস্পষ্ট শুনতে পাচ্ছে সব কিছু। এদিকে নিবিড় হেনা আসছে না দেখে রুম থেকে বেরিয়ে এসে দেখল হেনা মাথা চেঁপে সিড়িতেই বসে আছে। আর পাশে শিরিন দাঁড়িয়ে। নিবিড় সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকাল। তাদের সামনে এসে বলল, “কী ব্যাপার? হেনা? কী হলো তোর?”
হেনা কিছু বলল না। মাথা টা ভীষণ যন্ত্রণা করছে। নিবিড় তার সামনে বসল, “কী হয়েছে হেনা? এদিকে তাকা! কী হলো? খা’রাপ লাগছে?”
শিরিন মুখ বেঁকিয়ে বলল, “ঢং সব। এমনি বসে আছে। কোন খা’রাপ লাগছে না।”
নিবিড় বিরক্ত হয়ে বলল, “চুপ করো শিরিন। বেশি কথা বলো না। যাও তুমি!”
শিরিন অবাক হলো। এই মেয়েটার জন্য তার সঙ্গে এমন কথা বলছে সে?
“হেনা! কী হলো তোর? কথা বলছিস না কেন?”
হেনা এবার ঢলে পড়ল নিবিড়ের বুকে। নিবিড় ভড়কে গেল। তাকে ডাকতে লাগল, “হেনা! হেনা উঠ। কী হলো তোর? হেনা প্লীজ চোখ খোল!”
হেনা অজ্ঞান হয়ে গেছে। শিরিন বিরক্ত হয়ে বলল, “আরে ঢং শেষ হলে এবার তুমি উঠতে পারো।”
নিবিড় ধমক দিয়ে বলল, “চুপ করো শিরিন। অতিরিক্ত বলে ফেলছো কিন্তু।”
হেনাকে কোলে তুলে নিল নিবিড়। দ্রুত রুমে নিয়ে গেল। এসব দেখে শিরিন অবাকের চরম পর্যায়ে পৌছে গেল। নিবিড় ওই মেয়েটা কে ওর রুমে নিয়ে গেছে? সে দ্রুত ছুটে গেল। নিবিড় তাকে বিছানায় শুইয়ে চিৎকার করে ডাকতে লাগল, “আম্মু!! আব্বু!! নাইমা।”
তারাও ঘুমের প্রস্তুতি নিচ্ছিল। নিবিড়ের গলার আওয়াজ পেয়ে দ্রুত তার রুমের দিকে ছুটল। নাইরা বেগম রুমে গিয়ে হেনাকে শুয়া অবস্থায় আবিষ্কার করলেন। অবাক হয়ে বললেন, “কী হয়েছে বাবা?”
নিবিড় কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলে বলল, “জানি না আম্মু। ও হঠাৎ করে অজ্ঞান হয়ে গেছে।”
শিরিন অগোচরে ভেংচি কাটল। নাইরা বেগম আর নাইমা চিন্তিত হয়ে হেনার পাশে বসল। নাইরা বেগম নিবিড়কে বললেন, “নিবিড় তুই কী গর্দভ? যা জলদি পানির গ্লাস নিয়ে আয় টেবিল থেকে। ওর জ্ঞান ফেরাতে হবে।”
নিবিড় দ্রুত নিচে গিয়ে পানি নিয়ে এলো। দু একবার পানির ছিটা মা’রতেই পিট পিট করে নেত্রযুগল একে অপর থেকে আলাদা করল হেনা। সবাই যেন দেহে প্রাণ ফিরে পেল। নাইরা বেগম বললেন, “কী হয়েছিল তোর হেনা? এভাবে অজ্ঞান হয়ে গেছিলি কেন?”
হেনা উঠে বসল। চারদিকে তাকিয়ে বলল, “কী হয়েছিল? অজ্ঞান হয়ে গেছিলাম? কী বলছো এসব ফুঁপি?”
নাইরা বেগম, নাইমা আর নিবিড় তাজ্জব হলো। নিবিড় এগিয়ে এসে তার পাশে বসে বলল, “তোর মনে নেই? তুই অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলি। মাথা চেঁপে বসে ছিলি। আমি ডাকতেই অজ্ঞান হয়ে গেলি।”
“কী বলছেন এসব নিবিড় ভাই? আমি অজ্ঞান হয়ে…
নাইমা বলল, “যাক আর ওর মাথায় প্রেশার দিও না ভাইয়া, আম্মু। ওকে একটু ঘুমুতে দাও।”
নাইরা বেগম সায় দিলেন। নাইরা বেগম, নাইমা আর নীহান সাহেব নিজেদের রুমে চলে গেলেন। শিরিন কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে নিবিড় বলল, “কী ব্যাপার দাঁড়িয়ে আছো কেন? যাও শুয়ে পড়ো।”
শিরিন অবাক হয়ে বলল, “মানে.. এই মেয়ে টা এখানে…
“হ্যাঁ ও এখানে শুবে। যাও তুমি।”
শিরিন পূর্বের ন্যায় মুখ বিকৃত করে রুম থেকে প্রস্থান করল। নিবিড় হেনাকে ঘুমানোর নির্দেশ দিয়ে সোফায় শুয়ে পড়ল। কিন্তু চিন্তা গেল না তার, হেনা কেন এভাবে অজ্ঞান হয়ে গেল?
[চলবে ইনশা আল্লাহ]