হাসনাহেনা পর্ব-০৫

0
932

#হাসনাহেনা ❤️
#জিন্নাত_আফরিন
||পর্ব: ০৫||

নিবিড়ের রুম থেকে বের হতেই হাতে টান পড়ল হেনার। কেউ একজন তাকে টান দিয়ে দেয়ালের দিকে ধা’ক্কা দিল। দেয়ালে গিয়ে বারি খেয়ে ব্যাথায় কুঁকড়ে উঠে হেনা। সামনে তাকাতেই শিরিনকে দেখতে পেল। শিরিন দাঁতে দাঁত চেঁপে বলল, “কী? নিবিড়ের রুমে কী করছিলে তুমি? ওর আশেপাশে কী তোমার?”

হেনা অবাক হয়ে বলল, “কিসব বলছেন আপু?”

“কী বলছি বুঝতে পারছ না? তুমি নিবিড়ের রুমে কেন গিয়েছিলে? ওর পড়ায় ডিস্টার্ব হচ্ছিল। খেয়াল নেই নাকি? নিজে পড়াশোনা করো না, অন্যকে পড়তে দাও না। নির্লজ্জ!”

“ব্যস! চুপ করুন। সেই কখন থেকে আবোল-তাবোল বকে যাচ্ছেন। নিবিড় ভাইয়ার রুমে কী মানে? আমি তার রুমে যাই না যাই, তাকে পড়ায় ডিস্টার্ব করি না করি, আপনার কী? আপনাকে তো ডিস্টার্ব করছি না।”

“চুপ! চুপ করো। বেয়াদব! বড়দের সাথে কীভাবে কথা বলতে হয় তা জানো না? বড়দের সম্মান করতে জানো না নাকি?”

“তা জানি। কিন্তু আপনি জানেন না ছোটদের সাথে কীভাবে কথা বলতে হয়? ছোটদের স্নেহ করতে জানেন না?”

শিরিন কী বলবে বুঝতে পারে না। হেনা চলে যেতে নিলে সে শাঁসিয়ে বলল, “নেক্সট টাইম নিবিড়ের থেকে দূরে থাকবে। ওর আশেপাশে যদি তোমাকে দেখি তাহলে খবর আছে। ওর রুমে তো একদমই যাবে না।”

বলেই শিরিন প্রস্থান করল। হেনা হতবাক হয়ে তাকিয়ে রইল। মনে মনে আওড়াল, “আমার স্বামী আর আমি উনার কাছে যাব না?”

__________
রাতে খাওয়া দাওয়া শেষে হেনা রুমে গিয়ে দেখল নিবিড় আগেই সোফায় শুয়ে মোবাইল ক্রল করছে। তিন দিন যাবৎ এমন হয়ে আসছে। হেনা মন খারাপ করে বলল, “নিবিড় ভাই, আপনি আর কতদিন এভাবে শুবেন? যান আপনি বিছানায় যান। আমি নিচে পাটি বিছিয়ে শুয়ে শুবো।”

নিবিড় ফোন টেপা অবস্থায় বলল, “যা বেশি কথা বলিস না। হামদর্দি আমার পছন্দ না।”

“আমি হামদর্দি দেখাচ্ছি না নিবিড় ভাইয়া। সত্যি বলছি আমার এভাবে থাকতে ভালো লাগছে না। আপনার রুম অথচ আপনি সুবিধা মতো থাকতে পারছেন না। তা ছাড়া আমার নিচে শুয়ার অভ্যাস আছে। সমস্যা হবে না।”

“তোর নীতিকথা শেষ হলে যা গিয়ে ঘুমিয়ে পড়। কাল গানের ক্লাসে যেতে হবে। তাড়াতাড়ি উঠতে হবে।”

“নিবিড় ভাই?”

“হেনা যা…

হেনা বুঝতে পারল। বলে কোন লাভ হবে না। উল্টো দু’টো ধামকি খাবে। শুয়ে পড়ল।

__________
“হেনা! হেনা জলদি কর। দেরি হয়ে যাচ্ছে।”

হেনা দ্রুত মাথায় উড়না পেঁচিয়ে বেরিয়ে এলো। নিবিড় বাইরে গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে তাড়া দিচ্ছে তাকে। হেনা বের হতেই নিবিড় গাড়িতে উঠে বসল। হেনা তার পাশে বসে পড়ল। গাড়ি স্টার্ট দিতেই হেনা ভয়ে চোখ খিঁচে ফেলল। কখনো এসব গাড়িতে চ’ড়ে নি সে। চ’ড়ার সুযোগই হয়নি।

অর্ধেক পথ যাওয়ার পর হেনা কেঁপে কেঁপে বলল, “ন-নিবিড় ভাই.. গ-গাড়ী আস্তে চালান প্লীজ।”

নিবিড় হেসে বলল, “কেন ভয় পাচ্ছিস?”

“সত্যি নিবিড় ভাই প্লীজ আস্তে চালান।”

বলতে না বলতেই ব্রেক কষল নিবিড়। হেনা ভয় পেয়ে আস্তে করে চিৎকার দিয়ে দ্রুত নিবিড়কে ধরে ফেলল। নিবিড় বলল, “কী ব্যাপার? বাচ্চা নাকি তুই? এত ভয় পাচ্ছিস কেন? উঠ! সিট বেল্ট বাঁধ।”

হেনা স্বাভাবিক হয়ে বসল। নিবিড় ঝুঁকে তার দিকে, সিট বেল্ট বেঁধে দিল। বাকিটা পথ সে নিবিড়ের টি-শার্ট আঁকড়ে ধরে ছিল। নিবিড় তার কান্ড দেখে হেসে কুটিকুটি।

__________
“নিবিড় ওই মেয়েটা কে নিয়ে কোথায় গেছে মামী?”

শিরিনের কথায় নাইরা বেগম বললেন, “গানের ক্লাসে শিরিন। হেনা ভালো গান পারে। ক্লাস করতে চাচ্ছিল। তাই নিবিড় ওকে নিয়ে গেছে।”

“কেন? এসব মেয়ের আবার গানের শখ?”

“এসব মেয়ে মানে? কোন সব মেয়ে বুঝাতে চাইলি তুই?”

“মানে.. কিছু না মামী। কিন্তু ওর ব্যাপার টা এত গুরুত্ব দেওয়ার দরকার কী?”

“ও আমার ভাইঝি। তাই গুরুত্ব অবশ্যই দেব। তুই এসব নিয়ে এত কথা তুলছিস কেন? তোর কী প্রবলেম হচ্ছে নাকি?”

শিরিন মনে মনে আওড়াল, “প্রবলেম তো অনেক হচ্ছে মামী। তোমার ছেলে ওই মেয়েকে নিয়ে পড়ে আছে। আর এদিকে আমার সাথে কথা বলতে আসলে তার ব্যস্ততা বেড়ে যায়।”

নাইরা বেগম কিছু না বলে তার কাজ করতে লাগলেন। শিরিন মুখ বিকৃত করে চলে গেল। নাইমার কাছে গিয়ে বলল, “আচ্ছা ওই মেয়ে টা এখান থেকে কবে যাবে নাইমা?”

নাইমা অবাক হয়ে বলল, “কোন মেয়েটা?”

“আরে ওই মেয়েটা আরকি।”

“তুমি কোন মেয়েটার কথা বলছো আপু?”

“আরে তোর মামাতো বোনের কথা বলছি।”

“ওহ্ হেনা?”

“হ্যাঁ। ও কবে যাবে?”

“কবে যাবে মানে? এটা কেমন প্রশ্ন করছো তুমি?”

“তোকে যেটা বলছি সেটার উত্তর দে। ও কবে যাবে?”

“তো তুমি কবে যাবে?”

“মানে? কী বলছিস এসব তুই?”

“তুমি না বলছো হেনা কবে যাবে? তাই আমিও বলছি তুমি কবে যাবে?”

“নাইমা! আমি বেড়াতে এসেছি এখানে। ফুঁপাতো বোনকে কেউ এভাবে বলে?”

“হেনাও আমার মামাতো বোন। আমার কাজিন। ওকে যে বলছো কবে যাবে? সেটা কী? ওকে যে এভাবে বলছো, তোমাকে বলছি এতে তোমার কেমন লাগছে? তেমনি ওর বেলায় এসব বললে ওর আর আমাদের অবশ্যই খা’রাপ লাগবে। তাও বলে রাখছি, ও পার্মানেন্টলি এখানে চলে এসেছে।”

“কীহ্…

“হ্যাঁ। এবার তুমি আসতে পারো।”

হতাশ হয়ে বেরিয়ে এলো শিরিন। এই মেয়েটা এখানে পার্মানেন্টলি থাকবে? ধ্যাত যাকে ঘৃণা লাগে সেই চোখের সামনে আসে বার বার।

__________
“কেমন লাগল?”

হেনা আইসক্রিম খেতে খেতে হেসে উত্তর দিল, “খুব খুব খুব ভালো নিবিড় ভাইয়া। আর অনেক ভালো লেগেছে। ওখানকার টিচার, স্টুডেন্ট গুলোও অনেক ভালো। আশা করি তোমার মতো গায়ক হতে পারব।”

নিবিড় ভ্রু কুঁচকে হেসে বলল, “আমার থেকে বেটার কেন নয়?”

হেনা খাওয়া থামিয়ে অবাক হয়ে বলল, “মানে? আপনার থেকে বেটার?”

“হ্যাঁ! আমার থেকে বেটার কেন হবি না?”

“আপনার থেকে বেটার কেউ হতে পারবে নাকি?”

“উহু! ভুল বললি। আমার থেকে বেটার তুই হতে পারবি।”

“কী বলছেন এসব?”

“কেন হতে চাস না?”

“না মানে.. আপনার মতোই হতে চাই।”

“আমার থেকে বেটার হতে হবে তোকে।”

“না তা চাই না। আপনার জুনিয়রই থাকতে চাই।”

“কিন্তু তোকে যে খুব বড় হতে হবে। এগিয়ে যা! আগের কিছুই মনে রাখবি না। মাথায় রাখবি না। অনেক বড় গায়িকা হতে হবে তোকে। বুঝেছিস?”

হেনা মাথা নাড়ল। অপলক চেয়ে রইল নিবিড়ের দিকে। এই লোকটা যে এতটাও ভালো, আর কথা বলে এটা হেনার ভাবনাশক্তির বাহিরে ছিল।
[চলবে.. ইন শা আল্লাহ্]

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে