#হাসনাহেনা ❤️
#জিন্নাত_আফরিন
||পর্ব: ০৪||
গোধূলির এক অপূর্ব বিকেল। ছাদে দাঁড়িয়ে অন্তরীক্ষের সৌন্দর্য উপভোগ করতে ব্যস্ত হেনা। এখানে আসার প্রায় তিন দিন হয়ে গেছে। সব মিলিয়ে বেশ ভালোই আছে। কিন্তু মনে কোথাও একটা খালি রয়েই গেছে৷ কেন যেন খালি মনে হয় নিজেকে।
“হেনা? তুই এখানে? সে কখন থেকে খুঁজে যাচ্ছি তোকে আর তুই এখানে দাঁড়িয়ে আছিস?”
নাইমার প্রশ্নে হকচকিয়ে তার দিকে তাকায় হেনা। হেসে বলল, “আমি তো এখানেই থাকি বেশিরভাগ নাইমু।”
“সেটা বাদ। নিচে আয়! মেহমান এসেছে।”
“মেহমান মানে?”
“মানে শিরিন আপুরা এসেছে।”
“ওহ্ ওরা? কেন?”
“কেন মানে আবার বেড়াতে।”
হেনার মুখ টা ছোট হয়ে গেল৷ শিরিন নিবিড়ের ফুঁপাতো বোন৷ শিরিন তাকে তেমন সহ্যই করতে পারে না। বিভিন্ন ছুঁতোয় অপ’মান করার চেষ্টা করে। এবারো ছাড়বে না হয়তো। হেনা বলল, “তুই যা আমি পরে যাব।”
নাইমা তাকে টে’নে বলল, “পরে যেতে হবে না এখন চল।”
“নাইমা প্লীজ!”
“নো প্লীজ। চল।”
নাইমা নিচে নেমে গেলে হেনা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে নিচে নামল। নিচে নামতেই শাইলা বেগম আর গৌরব সাহেব কে দেখল হেনা। গিয়ে মাথা নিচু করে সালাম দিল। তারা সালামের জবাব নিয়ে ভালো মন্দ প্রশ্ন করল। সেও প্রতুত্তর করে কিচেনে চলে গেল। নাইরা বেগম আর কাজের মেয়ে মিলে নাস্তা রেডি করছিল। হেনা আসতেই নাইরা বেগম চোখ রা’ঙালেন, “তুই এখানে কী করছিস হেনা?”
“একটু সাহায্য করতে এসেছিলাম ফুঁপি।”
“আমাকে সাহায্য করতে হবে না। যা। যা বলছি।”
“কেন?”
“আবার বলে কেন? তোকে না রান্নাঘরের ধারে কাছে আসতে মানা করেছি? যা ওদের সাথে গল্প কর।”
“ধুর ফুঁপি তুমিও না…
হেনা হতাশ হয়ে চলে এলো। নাইরা বেগম তাকে কখনোই কিচেনে দেখতে চান না। ব্যাপার টা হেনার বিরক্ত লাগলেও ভালো লাগে৷ তার মা টা যদি এরকম হতো!
হেনা রুমে আসতেই শিরিনকে বিছানায় বসা অবস্থায় দেখল। এই মুহুর্তে নিবিড় বন্ধুমহলের সাথে আড্ডায় মেতে আছে। সন্ধ্যার আগে ফিরবে না।
“কী ব্যাপার? তুমি আবার কবে এলে? মা তাড়িয়ে দিয়েছে নাকি?”
কষ্ট পেল হেনা। তা সংযত রেখে বলল, “কয়েকদিন আগে এসেছি।”
“তো? এই রুমে কেন এসেছ?”
হেনা মুখ শক্ত করে বলল, “কেন? আসা মানা নাকি?”
“এই মেয়ে চুপ! আমার মুখের উপর কথা বলছো?”
নাইমা রুমে এসে বলল, “কী হয়েছে?” হেনা বলল, “কিছু না নাইমু।”
“শিরিন আপু কিছু বলেছ মনে হলো।”
শিরিন বলল, “বলছিলাম ও নিবিড়ের রুমে কেন এসেছে?”
“কেন মানে?”
“মানে ও এখানে কেন আসবে?”
“কেন আসবে মানে ও…
হেনা ইশারায় তাকে না করলে নাইমা থেমে গেল। হেনা নাইমা কে টে’নে নিয়ে গেল।
শিরিন আর নিবিড় প্রায় সমবয়সী। মাস্টার্স করছে দু’জন।
___________
নাস্তা করার মাঝেই হঠাৎ শিরিন তার নাইরা বেগমকে বলে উঠে, “আচ্ছা মামী। এই মেয়েটা এখানে কেন?”
নাইরা বেগম বিব্রত হলেন, “ও এখানে মানে? এটা কেমন প্রশ্ন শিরিন?”
“কেমন প্রশ্ন মানে?”
“এসব কোন ধরণের প্রশ্ন করছিস তুই? ও এখানে কী করছে মানে? ও আমার ভাইঝি। এখানে থাকতেই পারে। তোর এসব বলার কারণ কী? তুই যেমন বেড়াতে এসেছিস এখানে থাকছিস তেমনই ও-ও।”
শিরিন মুখ বিকৃত করে আহার করতে লাগল। এর মাঝেই নিবিড় প্রবেশ করল। তাকে দেখে যেন শিরিনের ন্যা’কা’মো বেড়ে গেল, “নিবিড়! কেমন আছো?”
শিরিনের প্রতুত্তর না করে সে গৌরব সাহেব আর শাইলা বেগমকে সালাম দিয়ে ভালোমন্দ জিজ্ঞাস করে সিড়ি বেয়ে রুমে ঢুকে গেল। শিরিনের ব্যাপার টা মোটেও ভালো লাগল না। খাওয়া দাওয়া শেষ হলে হেনা তা নিয়ে যেতে সাহায্য করল নাইরা বেগমকে।
ওদিকে শিরিন উঠে নিবিড়ের রুমে গেল। নিবিড় তখন পড়ছিল। শিরিন গিয়ে তার পাশের চেয়ারে বসে বলল, “নিবিড়! কেমন আছো?”
নিবিড় বিরক্ত হয়ে বলল, “দেখতেই তো পাচ্ছ কেমন আছি তবু জিজ্ঞাস করছো কেন?”
শিরিন অ’পমান বোধ করল, “এতদিন পর এলাম ভালোমন্দ জিজ্ঞাস করব না?”
“প্রয়োজন নেই এট লিস্ট আমার জন্য। এখন পড়ছি দয়া করে এখন যাও পরে এসো।”
“মানে..?”
“আবার মানে মানে করছো কেন? বলছি যে পড়ছি এখন আড্ডা দেওয়ার সময় নেই আমার।”
“ওকে তুমি পড়ো। আমি কিছু করব না।”
নিবিড় বিরক্ত হলো বরাবরের মতো। নিজের পড়ায় মনোযোগ স্থাপন করল। শিরিন মাঝে বলল, “জানো? ওদিন একটা গান শুনেছিলাম। ভাবছিলাম, নিবিড় গাইলে আরো সুন্দর হতো।”
নিবিড় বিরক্ত হলেও কিছু বলল না। শিরিন আবারো বলল, “গান টা শুনবে? খুব সুন্দর। ওয়েট আমি গাচ্ছি, ও আমার…
নিবিড় মাঝে বলে উঠল, “ওকেই জাস্ট শাট আপ শিরিন। আমি পড়ছি আর তুমি গান গাচ্ছ? আ’ম স্যরি বাট আমার এখন এসবের মুড নেই প্লীজ তুমি যাও। তুমি থাকলে আমার ডিস্টার্ব হবে। প্লীজ গো অন।”
শিরিন আবারো অ’পমান বোধ করল। মুখ বিকৃত করে উঠে চলে যেতে নিলেই হেনাকে রুমে আসতে দেখে দাঁড়িয়ে গেল। হেনা তাকে দেখলেও উপেক্ষা করে বিছানায় থাকা শুকনো কাপড় গুলো আলনায় ভাঁজ করে রেখে বিছানায় বসল। নিবিড় তাকে দেখে প্রশ্ন করল, “খেয়েছিস কিছু?”
“হ্যাঁ ভাইয়া। খেয়েছি।”
“হুম। শোন! গানের ক্লাসে অ্যাটেন্ড করবি?”
হেনার মুখে হাসি দেখা গেল, “সত্যি? মানে এখানে আছে?”
“থাকবে না কেন? এখানে গানের ক্লাস থাকবে না? তুই অ্যাটেন্ড করবি কী না তাই বল। আমি কালই তোকে নিয়ে যাব।”
“হ্যাঁ অবশ্যই ভাইয়া আমি অবশ্যই অ্যাটেন্ড করতে চাইব।”
এসব দেখে শিরিনের চোয়াল শক্ত হয়ে এলো। দাঁত কিড়মিড় করে মনে মনে আঁওড়াল, “এখন কী ওর সঙ্গে কথা বলতে নিবিড়ের প্রবলেম হচ্ছে না?”
[চলবে.. ইন শা আল্লাহ্]