#হার্টলেস🖤
#Writer_Laila_Aungoman_Eti
#Part_06
,,
,,
,,
,,
নীড় ছেলে দুটোর কাছে গিয়ে একটা চেয়ার টেনে বসলো,তারপর একটা হাসি দিয়ে বলল, কি খবর আপনাদের সাহসী গুপ্তচর আরে রনি স্যারদের খাতির যত্নের জন্য চা কফি আনো।নীড়কে খুব ভয়ঙ্কর লাগছে ছেলে গুলোর কাছে, ছেলে গুলো শুকনো ঢোক গিলে একে অন্যের দিকে তাকালো তারপর পূর্ণরায় নীড়ের দিকে তাকালো, এবার নীড়ের মুখ দেখে ওদের কলিজা শুকিয়ে আসলো নীড় রাগে কটমট করতে করতে দাতে দাত চেপে বলল,সহজ ভাবে বলবি নাকি অন্য ব্যবস্থা করব আমাকে যদি এই চেয়ার ছেড়ে উঠতে হয় তোদের জন্য খুব খারাপ হয়ে যাবে।
একটা ছেলে কাপতে কাপতে বলল,আমরা কক,কিছু জানি না স্যার। নীড় বিদুতের গতিতে চেয়ার থেকে উঠে, চেয়ারটা নিয়ে ওই ছেলেটাকে দিলো এক বাড়ি চেয়ারটা ভেঙে গেলো,ছেলেটা ভয়ঙ্কর আর্তনাদ করে নিচে পড়ে ছটফট করতে লাগল। ওই ছেলেটাকে দেখে পাশের ছেলেটা আধমরা অবস্থা প্রায়।নীড় চোয়াল শক্ত করে রক্তচক্ষু নিয়ে চেয়ারে বসা ছেলেটার দিকে তাকাতেই ছেলেটা কাপতে কাপতে বলল,ববব বলছি স্যার বলছি।নীড় মেঘের দিকে ইশারা করে বাহিরে চলে গেল। নিজের চেয়ারে গিয়ে বসলো, কিছু খন পর মেঘ এসে বলল, লোকেশন পেয়ে গেছি আমরা এখনি বের হবো। নীড় চিন্তিতো ভাবে বলল,যত দ্রুত সম্ভব বের করতে হবে আর মেয়ে গুলোকে উদ্ধার করতে হবে যতক্ষণ না পারছি শান্তি পাচ্ছি না। মেঘ বলল, টেনশন করিস না বেশি, দ্রুতই মেয়ে গুলোকে উদ্ধার করতে পারবো ইনশাআল্লাহ।
____________________________________________
নীড় বাড়ি ফিরছিলো, ঘড়ির কাটা রাত দশটা অতিক্রম করেছে।হঠাৎ কিছু একটা ভেবে মুচকি হেসে গাড়ির সিটে রাখা লাল শাড়িটার দিকে তাকালো। বাড়ি পৌঁছে গাড়ি পার্ক করে শাড়িটা নিয়ে বাড়ির ভিতরে ঢুকলো হল রুমে নীড়ের মা আর বৃষ্টি চুপ হয়ে বসে আছে, নীড় বলল,কি হয়েছে? নীড়ের মা কিছু বলল না। বৃষ্টি বলতে চেয়েও থেমে গেল কারো কোনো শব্দ না পেয়ে নীড় রুমের দিকে পা বাড়ালো, দৌড়ে রুমে চলে গেল, শাড়িটা বিছানায় রেখে হেসে বলতে লাগল,ইতু এই ইতু কোথায় তুই ইতু।
সারা রুম খুঁজে কোথাও পেলো না, নীড় অস্থির হয়ে উঠলো।দৌড়ে নিচে নেমে নীড় বলল, মা বৃষ্টি, ইতু কোথায়। নীড়ের মা গম্ভীর কণ্ঠে বলল, কি জানি ও কি আমাদের কিছু বলার প্রয়োজন মনে করে।নীড় ভ্রু কুচকে বলল,
– মানে?
– আমি জানি না, বাহির থেকে এসে ইতুকে দেখি নিই, মেয়েটার কি বুদ্ধি হবে না, কোথায় গেছে বলে গেলে কি হয়, আর কত রাত হয়েছে এখনো ফিরলো না।
– মানে কি? কি সব বলছো? বৃষ্টি
– আমি জানি না নীড় ভাইয়া, সন্ধ্যার দিকে দেখে ছিলাম, ও বলল। ওর ভালো লাগছে না তাই হাট ছিল।আমার মাথা ব্যথা করছিল তাই মেডিসিন খেয়ে ঘুমিয়ে ছিলাম, উঠে দেখি খালামণি চলে এসেছে কিন্তু ইতুকে আর দেখি নিই।
নীড়ের বুকের ভিতর মোচড় দিয়ে উঠলো, অজানা ভয় চেপে বসলো।আর দেরি না করে দৌড়ে গেটের সামনে গিয়ে দারওয়ানকে বলল,মিজান ইতু কি বাড়ি থেকে বের হয়ে ছিল।মিজান বলল,না তো আপু মণি বাহিরে যায় নাই কেন ভাইয়া।নীড় দ্রুত বাড়িতে ঢুকে সিসিটিভি গুলো চেক করতে লাগল,ফুটেজ দেখে দ্রুত স্টোর রুমে গেল, দরজা ধাক্কাতে লাগল কিন্তু খুললো না। উপর থেকে আওয়াজ পেয়ে নীড়ের মা বৃষ্টি আর কত গুলো কাজের লোক উপরে গেল।সেলিনা ছেলের এই অবস্থা দেখে ভয় পেয়ে গেলো তারপর বলল, নীড় কি করছিস বাবা তোর লেগে যাবে।নীড় ধাক্কাতে ধাক্কাতে বলল, ইতু ভিতরে মা। নীড় শরীরের বল প্রয়োগ করে জোরে কয়েকটা ধাক্কা দিতেই দরজা খুলে গেলো,ইতুকে এমন নিস্তেজ ফ্লোরে পড়ে থাকতে দেখে নীড়ের দুনিয়া যেনো কেপে উঠলো।
_______________________________________
ইতু ধিরে ধিরে চোখ খুললো, নীড়ের মা পাশে বসা তার কাছে বৃষ্টি দাড়ানো।ঘড়িতে সময় রাত দুটা।বৃষ্টি বলল,তোমার কেমন লাগছে এখন। ইতু শোয়া থেকে আধশোয়া হয়ে বসলো,রুমের চারপাশে চোখ বুলিয়ে নীড়কে খুজতে লাগল,নীড় বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে। নীড়ের মা বলল,
– তোকে কে বলে ছিলো স্টোর রুমে যেতে সবাইকে চিন্তায় ফেলতে তোর ভালো লাগে তাই না
– সরি কাকী
– হুম শরীর কেমন লাগছে এখন
– ভালো
– আমি খাবার পাঠাচ্ছি লক্ষী মেয়ের মতো খেয়ে ঔষধ খেয়ে নিবি।
ইতু মাথা নিচু করে সম্মতি দিলো। নীড়ের মা রুম থেকে বেড়িয়ে পড়লো। বৃষ্টি ইতুর কাছে বসে বলল,
– সরি ইতু আমি তোমার সাথে থাকলে এমন কিছু হতো না
– না আপু তোমার কোনো দোষ নেই
– আরেকটা কথা নীড় ভাইয়া কিন্তু খুব রেগে আছে।
বলে বৃষ্টি উঠে চলে গেল। নীড় এখনো বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে,রমে আসে নিই।ইতু অনেক খন ধরে অপেক্ষা করছে নীড়ের কিন্তু নীড়ের কোনো আসার নাম নেই।ইতু রেগে তাকালো নীড়ের দিকে তারপর ভাবতে লাগল, এই লোকটা এমন কেন? আমার তো খুব ইচ্ছে করছে উনাকে জরিয়ে ধরতে কিন্তু এতো আমার কাছেই আসছে না।
ইতু বিরক্ত হয়ে উঠে বারান্দায় গিয়ে নীড়ের পিছনে দাড়ালো।কিছু খন চুপ থেকে ডেকে উঠলো, নীড় ভাইয়া । নীড় পিছনে ঘুরে ঠাস করে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিলো গালে,ইতু গালে হাত দিয়ে হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলো, সেকেন্ডে চোখ দিয়ে বৃষ্টিপাত শুরু মাথা নিচু করে ঠোট উল্টে ভ্যা ভ্যা ভ্যা করে কান্না করে দিলো।
ইতুর কান্না দেখে নীড় আরো রেগে গেলো,ইতুর হাত ধরে টেনে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলল, খবরদার কান্না করবি না,আমাকে কষ্ট দিতে তোর খুব ভালো লাগে তাই না,মেরে ফেলতে চাস আমাকে। ইতু ভয়ে কান্না করতে করতে বলল, আআআ,আমি।
নীড় আবার ধমক দিয়ে বলল, চুপ।ইতু কেপে উঠলো। এর মাঝে ঘরের দরজা কেউ নক করলো। নীড় ইতুকে ছেড়ে দরজার কাছে গেলো,দেখলো বৃষ্টি খাবার নিয়ে এসেছে। নীড় খাবার নিয়ে রুমে আসলো , ইতু এখনো বারান্দায় দাঁড়িয়ে মুখ চেপে কান্না করছে।নীড় বারান্দায় গিয়ে ইতুর হাত টেনে রুমে নিয়ে আসলো তারপর বসিয়ে খাবার হাতে নিয়ে বলল,মুখ খোল।ইতু বলল,
– না খাবো না
– আমাকে রাগাস না ইতু মুখ খুল
-………………………………
– কথা কানে যায় না, আরেক গালে দেবো আরেকটা মুখ খুল।
ইতু কিছু না বলে চুপ হয়ে রইলো। নীড় ইতুর মুখ চেপে জোর করে খাবার মুখে ঢুকিয়ে দিলো।ইতু হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলো। নীড় গম্ভীর কণ্ঠে বলল, আমার দিকে না তাকিয়ে থেকে মুখের খাবার শেষ কর।খাওয়া শেষ করে মেডিসিন খেয়ে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লো ইতু।উল্টো দিকে ঘুরে কান্না করতে লাগল। আর মনে মনে বলতে লাগলো,আর কথা বলব না তোমার সাথে তুমি আসলেই একটা হার্টলেস ভিশন ভিশন পচা তুমি।
হঠাৎ ঘাড়ে কারো উষ্ণ স্পর্শ পেয়ে থমকে গেল ইতু। নীড় ঘাড়ে মুখ ডুবিয়ে জরিয়ে ধরে আছে। ইতু কিছু বলল না, এই হার্টলেস ছেলেটার সাথে আর কোনো কথা নয়।হঠাৎ ঘাড়ে পানির স্পর্শ পেয়ে ইতু অবাক হয়ে গেলো নীড় ভাইয়া কি কান্না করছে।
#চলবে………🖤