হার্টলেস পর্ব-০৫

0
1622

#হার্টলেস🖤
#Writer_Laila_Aungoman_Eti
#Part_05
,,
,,
,,
,,
খাওয়া শেষ করে নীড় বিছানায় গিয়ে বসলো,ফোন বের করে কার সাথে যেনো কথা বলে ইতুর দিকে তাকালো, ইতু বই নিয়ে বসেছে।নীড় কিছু খন নীরব দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো ইতুর দিকে অতঃপর বলল,আর কত খন পড়বি।ইতু নীড়ের দিকে তাকিয়ে বলল, আরো কিছুক্ষন।নীড় কিছু না বলে কয়েকটা ফাইল নিয়ে বসলো। ইতু হঠাৎ নীড়কে বলে উঠলো,

– নীড় ভাইয়া

– হুম বল

– তুমি তো চাইলে বৃষ্টি আপুকে বিয়ে করতে পারতে, বৃষ্টি আপু যেমন মিষ্টি দেখতে তেমন ভালো মানুষ,তাহলে কাকীও আর রেগে থাকতো না, সব কিছু সাভাবিক থাকতো।

– হঠাৎ এই কথা কেন?

– বৃষ্টি আপু তোমাকে খুব ভালোবাসে আ…..

– তুই বাসিস না

-…………………..

– চুপচাপ পড়

ইতু আর কিছু না বলে বইয়ের দিকে নজর নিক্ষেপ করলো। বেশকিছু খন পর নীড় ফাইল থেকে মুখ তুলে ইতুর দিকে তাকিয়ে দেখলো ইতু স্টাডি টেবিলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে আছে। নীড় মুচকি হেসে ইতুর কাছে গিয়ে আস্তে করে ইতুকে পাজ কোলে নিয়ে বিছানার দিকে গেলো,ইতুর চোখ হালকা খুলে অস্পষ্ট কন্ঠে বলল, কি করছো।নীড় বলল,

– বেডে নিয়ে যাচ্ছি পড়তে বসলেই ঘুম পায় তাই না

– হুম পড়তে বসলে খুব ঘুম পায়

– পড়া চোর একটা

নীড় ইতুকে বাহুডোরে আবদ্ধ করে শুয়ে পড়লো, ইতু বলল,ছাড়ো আমাকে।নীড় রেগে বলল, চুপচাপ ঘুমা আমাকেও ঘুমাতে দে।ইতু আরো কিছু বলতে চেয়েও পারলো না ঘুমের সমুদ্রে ডুবে গেলো।নীড় ইতুর মাথায় একটা চুমু দিয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলল পরম প্রশান্তিতে।

___________________________________

দূর মসজিদ থেকে পবিত্র আযানের ধ্বনি ভেসে আসছে,আযানের আওয়াজে চোখ খুলে তাকালো নীড়, চোখ খুলতেই প্রিয়তমার স্নিগ্ধ মুখখানা সামনে পড়লো কি অসম্ভব মায়াবী দেখাচ্ছে ইতুকে।ইতু নীড়কে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে ঘুমাচ্ছে। নীড় মৃদু আওয়াজে ডাকতে লাগলো,ইতু এই ইতু উঠো।ইতু হালকা চোখ খুলে বলল,কি হয়েছে।

নীড় মৃদু হেসে বলল, ফজরের সময় হয়েছে নামাজ পড়বা না উঠো।ইতু ঘুম ঘুম কন্ঠে বলল, হুম। নীড় বুঝতে পারলো ইতু এখনো ঘুমের ঘোরে আছে।নীড় এবার ইতুর কানের কাছে এসে জোরে বলল,ইতু…….।ইতু লাফিয়ে উঠে পড়লো আতঙ্কিত হয়ে তাকিয়ে রইলো নীড়ের দিকে। নীড় হেসে কুটিকুটি। নীড় বলল, কত ডাকছি উঠ ছিলেই না তাই তো চেঁচাতে হলো এবার যা ফ্রেশ হয়ে ওজু করে নামাজ পড়ে নেয়। ইতু আর কিছু না বলে ওয়াসরুমে চলে গেল। ইতু কিছু খন পর বের হয়ে জায়নামাজ বিছিয়ে নামাজে দাড়ালো।

এদিক দিয়ে নীড় সাদা পাঞ্জাবি পরে ওজু করে মাথায় টুপি দিয়ে মসজিদের উদ্দেশ্যে হাটা দিল।ফজরের নামাজ শেষ করে হেটে হেটে বাড়ি ফিরছিলো, বাড়ির গেটের সামনে আসতেই নীড় থমকে গেল এক দৃশ্য দেখে কি অসাধারণ স্নিগ্ধকর সেই দৃশ্য, ইতু বারান্দায় দাড়িয়ে ভোরের সতেজ হাওয়া গায়ে মাখছে,প্রকৃতির মাঝে আজ ইতু হারিয়ে যেতে চায়।নীড় মৃদু হেসে বাড়ির ভিতরে গেলো

_____________________________________

ইতু মৃদু হেসে উঠলো পাখিদের চঞ্চলতা দেখে, হঠাৎ চোখের সামনে এক কাপ চা কেউ এগিয়ে দিল,কাপ ধরা হাতটার মানুষের দিকে তাকিয়ে দেখলো নীড়। ইতু কাপটা নিয়ে মুচকি হেসে সামনে তাকালো, নীড় ও সঙ্গ দিল।বেশ কিছুখন দুজন চুপ হয়ে প্রকৃতির দিকে তাকিয়ে রইলো হঠাৎ নীড় বলল,

– এতো গভীর ভাবে কি দেখছিস

– ওই দেখো গাছের ডালের দুটো চড়ুই পাখি কখন থেকে খুনসুটি করছে খুব সুন্দর দেখাচ্ছে সব কিছু।

– হুম খুব সুন্দর, মাঝে মাঝে এমন নিখুত ভাবে তো আমাকেও দেখতে পারিস

– হুম তোমাকে সাদা পাঞ্জাবিতে খুব ভালো দেখাচ্ছে নীড় ভাইয়া

– এই তুই ভাইয়া ডাকা বন্ধ করবি কেউ শুনলে হাসবে

– আমার তো ছোট থেকে এই অভ্যাস এত সহজে যাবে না

– অভ্যাস চেঞ্জ কর নইলে তোর খবর আছে

– কোন বেলার খবর

– সব বেলার

– হুহ আমি রুমে গেলাম রেডি হই ভার্সিটি যাব

বলে ইতু রুমে চলে গেল। ইতু রুমে গিয়ে বোরখা পড়ে রেডি হলো।কিছু খন পর দুজন বেড়িয়ে পড়লো, ভার্সিটির সামনে এসে গাড়ি থামলো নীড়, ইতু নামতে যাবে তখনি নীড় বলল, ইতু দাড়া।ইতু নীড়ের দিকে ফিরে বলল, কি হয়েছে। নীড় বলল একটু কাছে আয় তো।ইতু একটু মাথা এগিয়ে নিয়ে বলল, বলো।নীড় ইতুর কপালে একটা ভালোবাসা দিয়ে বলল, সাবধানে থাকিস। ইতু তাড়াতাড়ি নেমে পড়লো তারপর বলল, তুমিও সাবধানে থেকো।বলেই উল্টো দিকে হাটা দিল। নীড় মুচকি হেসে তাকিয়ে থাকলো যতক্ষণ না ইতু গেট দিয়ে ভিতরে ঢুকলো, ইতু ভিতরে যাওয়ার পর নীড় চোখে সানগ্লাস দিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিল।

___________________________________

নীড় নিজের ক্যাবিনে বসে আছে, মেঘ এসে বলল, নীড় দুটো ছেলে ধরা পড়েছে ওরা আমাদের সব ইনফরমেশন ওদের বসকে পাঠাতো।নীড় চিন্তাশীল ভাবে বলল,ওরা মুখ খুলেছে কে ওদের বস।মেঘ বলল, না প্রচুর মারা হয়েছে ওদের তাও কেউ মুখ খুলছে না।নীড় বসা থেকে উঠে বলল, চল আমিও দেখি কতক্ষণ চুপ থাকে।নীড়কে ভিতরে ঢুকতে দেখে একটা অফিসার ওই ছেলে গুলোকে ফিসফিসে বলল,আগেই বলে ছিলাম যা যা আছে এখন বলে দে নীড় স্যার আসলে খবর আছে তোদের, শুনলি না তো ভোগ এখন।ছেলে গুলো আতঙ্কিত ভাবে নীড়ের দিকে তাকালো।

________________________________________

ইতু নিজের রুমে বসে বসে ক্লান্ত তাই উঠে হাটতে লাগলো বাড়ির ভিতরে, বৃষ্টি নিচ থেকে উপরে উঠছিল ইতুকে দেখে বলল,

– কি করছো ইতু

– কিছু না আপু ভালো লাগছিল না তাই হাট ছিলাম গল্প করবা

– সরি ইতু আমার মাথাটা ব্যথা করছে একটু ঘুমাবো

– ওহ ঠিক আছে, যাও আচ্ছা কাকী কোথায়

– খালামণি বাহিরে গেছে

– ওহ ঠিক আছে

বৃষ্টি নিজের রুমে গিয়ে মেডিসিন খেয়ে দরজা আটকে ঘুমিয়ে পড়লো।ইতু পুরো বাড়ি হাটতে লাগলো, হঠাৎ কোণারের স্টোর রুমটা চোখে পড়লো ইতুর, দরজা খুলে ভিতরে ঢুকলো, অনেক ধুলো বালি রুমে, কয়েকটা কাশি উঠলো ইতুর, রুমের জানালাটা খুললো,রুমে বাহিরের আলো আসলো,আলোতে রুমের ভিতরের জিনিসপএ দেখা যাচ্ছে, নীড়ের ছোট বেলার কিছু খেলনা ইতু হাতে নিয়ে হেসে উঠলো

হঠাৎ জানালা দিয়ে প্রবল হাওয়া রুমে প্রবেশ করলো, বাতাসের ধাক্কায় রুমের দরজাটা ঠাস করে আটকে গেলো, ইতু লাফিয়ে উঠলো, কিন্তু বেশি একটা পাত্তা দিলো না, অনন্য আসবাপত্র দেখতে লাগল, একটা ছোট টাইগার টয় উপরে ছিল, ওটা ধরতে গিয়ে একটা ধুলো বালি দিয়ে ভরা কাপড়টা ইতুর মুখে পড়লো,ইতুর দম আটকে আসতে লাগলো অনেক কাশি হতে লাগল,অনেকটা অস্থির হয়ে উঠলো, ইতুর ডাস্ট এলার্জি আছে, ইতুর এখন রুম থেকে বেড়িয়ে যাওয়া দরকার নইলে আরো অবস্থা খারাপ হয়ে যাবে।

ইতু দরজার কাছে এসে দরজা খুলতে গেলো কিন্তু দরজা খুললো না, বার বার টানতে লাগলো কিন্তু দরজা খুললো না দরজা লক হয়ে গেছে, বার বার ধাক্কাতে লাগল আর অনেক কষ্টে ডাকতে লাগল,কক,কেউ আছে, বব,বৃষ্টি, আপু কেউ আছে, কেউ আছে বের কর আমাকে আমার দম আটকে আসছে, কক,কেউ আছে ন,নীড় ভাইয়া।এক সময় ইতুর চোখ ঝাপসা হয়ে গেলো আস্তে আস্তে চোখ বুজে গেলো,চোখ বন্ধ করে অনেক কষ্টে বলল নন,ন,নীড় ভাইয়া।

#চলবে………🖤

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে