#হারানোর_বেদনা
#পর্ব_১৯
#লেখক_দিগন্ত
রোহানের মাথায় ব*ন্দুক ঠেকিয়ে আকাশ বলে,
-“বেঁচে থাকলে তো আমার বিরুদ্ধে কোনো কিছু করতে পারবে।”
রোহান আকাশের হাত মু*চড়ে বলে,
-“এই তুই কোন কাজ ঠিকভাবে করতে পারিস না কেন রে? এমনি তো আর মিরাজ স্যার তোকে ব*লদ বলে না।”
-“রোহান আমার লাগছে ছেড়ে দাও।”
রোহান আকাশের হাত ছেড়ে বলে,
-“ভাইয়াকে ফাসাবি তো ঠিক ছিল কিন্তু ঐ নিলাকে এসবের মধ্যে জড়াতে গেলি কেন? ঐ মেয়েটা যদি আমাদের জন্য বিপদ হয়ে দাঁড়ায়?”
-“তুমি কোন চিন্তা করোনা রোহান।আম সবকিছু সামলাতে নেব।”
রোহান আকাশের হাত ছেড়ে দেয়।তারপর ভাবতে থাকে কিভাবে নিজের পরবর্তী পরিকল্পনাগুলো বাস্তববায়ন করবে।আসলে সেই তো এসব নারী পা*চার এবং নকল ওষুধের ব্যবসায় মিরাজ খানের অন্যতম সহযোগী।এই হাসপাতালে ডাক্তার হয়ে আসার পর থেকে রোহান মিরাজ খানের হাত ধরে এই অন্যায়ের পথে আসে।ছোটবেলা থেকেই ভীষণ অর্থলোভী ছিল রোহান।তার এই লোভকেই তো কাজে লাগিয়েছে মিরাজ খান।আর আজ রোহান এতটাই লোভী হয়ে গেছে যে নিজের ভাইয়ের ক্ষতি নিয়েও তার মাথাব্যাথা নেই।
_____________
নিলা আর রুশা একসাথে নিজেদের রুমে বসে ছিল।রুশা নিলাকে বলতে থাকে,
-“আমার কেন জানিনা নিহান চৌধুরীকে অপ*রাধী মনে হচ্ছেনা।আচ্ছা তোর কোন ভুল হচ্ছেনা তো?”
-“আমি শতভাগ নিশ্চিত।আর তাছাড়া সব প্রমাণও ওনার বিরুদ্ধে তাই সন্দেহর কোন অবকাশই নেই।”
-“অনেকসময় কিন্তু যা চোখে দেখা যায় সেটা সত্য হয়না।সত্য হয়তো সেটা যা দেখা যাচ্ছেনা।”
-“তোর এসব হেয়ালী কথাবার্তা আমি কখনোই বুঝতে পারিনা।যাইহোক এই নিয়ে আর কোন কথা বলতে চাইনা।”
রুশাও আর কিছু বলেনা।এরমধ্যে রোহান রুশাকে ফোন দেয়।রুশা ফোন হাতে নিয়ে বেলকনিতে এসে রিসিভ করে।রোহান বলে,
-“আমার মনে হয় আমার ভাইয়া সত্যিই অপ*রাধী।”
-“আপনি নিজের ভাইকেই বিশ্বাস করছেন না।আর এদিকে আমি খামোখা নিলাকে দো*ষ দিচ্ছিলাম।আপনি যেখানে নিজের ভাই হয়ে নিহান চৌধুরীকে বিশ্বাস করছেন না সেখানে নিলা কিভাবে করবে।”
-“সব সাক্ষ্য প্রমাণ ভাইয়ার বিপক্ষে।আমরা কিভাবে ওকে বিশ্বাস করবো বলো?”
-“আপনারা কেউ সত্যটা জানেন না তাই এমন বলছেন।”
-“সত্য! কোন সত্যর কথা বলছ তুমি?”
-“আপনি অনেক কথাই জানেন না।আজ রাতে হাসপাতালের বাইরের দিকের পুরাতন ফ্যাক্টরতে আমার সাথে দেখা করবেন।আমার আপনাকে অনেক কিছু জানানোর আছে।”
-“ওকে।”
কলটা কে*টে দিয়ে রোহান ভাবতে থাকে কি এমন কথা রুশা তাকে বলতে চলেছে যেটা এতটাই গোপন যে ফোনে বলা যাবেনা।
________________
নিহান কারাগারে বসে ছটফট করছিল।নিজের জন্য তার কোন চিন্তা নেই।তার সব চিন্তা নিলাকে নিয়ে।
নিহান অনেক আগে থেকেই আকাশের ব্যাপারে সবকিছু জেনে গেছিল।শুধু উপযুক্ত প্রমাণের অভাবে কিছু করতে পারেনি।নিহান এটাও বুঝতে পেরেছিল আকাশের ন*জর রয়েছে নিলার উপর।তাই নিলাকে আকাশের খ*প্পর থেকে বাঁচানোর জন্য সে এত সবকিছু করে।আর সেই নিলাই কিনা তাকে অবিশ্বাস করল।কথাটা ভাবতেই নিহানের বুকের বা পাশটা ব্যাথাতে ভড়ে যাচ্ছে।তার হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে।ইরিনার পর নিলাই প্রথম মেয়ে যাকে নিহান ভালোবেসেছিল।ইরিনার কথা ভেবে এখনো তার কষ্ট হয়।ইরিনাকে অবিশ্বাস করার গ্লানি, তাকে হারানোর বেদনা নিহানকে ভালো থাকতে দেয়না।নিহান এই কষ্ট আর দ্বিতীয়বার পেতে চায়না।তাইতো নিজের জীবনের বিনিময়ে হলেও সে নিলাকে বাঁচাতে চায়।কিন্তু নিলা তো তাকে সেই সুযোগটাই দিলোনা।নিলার অবিশ্বাসের কারণে নিহান এখন অসহায়।কিভাবে এখন সে রক্ষা করবে নিলাকে? এই চিন্তাই এখন তার রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছে।
_______________
রোহান রুশার কথামতো ফ্যাক্টরির মধ্যে তার জন্য অপেক্ষা করছিল।রুশা কিছুক্ষণের মধ্যেই সেখানে এসে পৌঁছায়।রোহানকে দেখে রুশার মুখে হাসি ফুটে ওঠে।সে দৌড়ে এসে রোহানকে জড়িয়ে ধরে।তারপর বলতে শুরু করে,
-“আপনিই এখন আমার একমাত্র ভরসাস্থল।এই পৃথিবীতে আপনাকেই আমি সবথেকে বিশ্বাস করি।তাই আমি আজ আপনাকে সব সত্য বলব।”
-“বলো।আমিও শুনতে চাই।”
-“আমি নকল ওষুধ ব্যবসার সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পেরেছি।জানেন এই ব্যবসায় শুধু মেঘা না ওর বাবা মিরাজ খান আর ভাই আকাশ খানও জড়িত।শুধু তাই নয় এছাড়া আরো অনেক অন্যায় কাজে তারা যুক্ত আছে বলে আমার বিশ্বাস।আর আমি তো এটাও মনে করি ইরিনার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনার পেছনেও ঐ আকাশের হাত থাকতে পারে।তোমার ভাইয়া সম্পূর্ণ নিরপরাধ।”
-“কি প্রমাণ আছে তোমার কাছে?”
-“আমার কাছে কোন প্রমাণ নেই।সেইজন্যই তো আপনার কাছে এসেছি।এবার আমরা দুজন একসাথে মিলে সব প্রমাণ জোগাড় করব।আমি জানি আপনি আমাকে অবশ্যই সাহায্য করবেন।তাইতো আমি আপনার কাছে এসেছি।”
-“অনেক বড় একটা ভুল করে ফেলেছ তুমি।”
-“মানে?”
-“তুমি আমার সম্পর্কে কিছুই জানো না।হ্যাঁ তুমি যা বলেছ সব সত্য।তবে আমার সম্পর্কে তুমি যা জানো সবই মিথ্যা।আমি মোটেও কোন ভালোমানুষ নই।আমিও এইসব কাজের সাথে জড়িত।”
-“এসব কি বলছেন আপনি? আপনি নিশ্চয়ই আবার আমার সাথে মজা করছেন।আপনিও না এরকম সিরিয়াস টাইমে কেউ মজা করে।”
-“আমি কোন মজা করছি না।আমি যা বলছি সব সত্য।তুমি অনেক কিছু জেনে গেছ।তোমাকে আর কিছু জানতে দেওয়া যাবে না।কারণ মিরাজ স্যার আর আকাশ ফেসে গেলে আমিও ফেসে যাব।আমাকে তো নিজেকে বাঁচাতেই হবে।”
-“আ…আপনি প্লিজ বলুন এসব মজা করছেন আমার সাথে…আমি জানি আপনি একজন ভালো মানুষ…তাইতো আমি আপনাকে ভালোবে….”
রুশার কথা সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই তার মুখের ভাষা সে হারিয়ে ফেলে। কারণ তার ভালোবাসার মানুষটাই যে তার বুকে ছু*রি চালিয়েছে।রোহান রুশার বুকে ছু*রি চালিয়ে ছু*রিটা ঘুরাতে থাকে।যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকে রুশা।তবে তার শরীরে যতটুকু যন্ত্রণা ছিল তার থেকেও বেশি ছিল মনের যন্ত্রণা।যেই মানুষটাকে এত ভালোবাসলো সেই কিনা রুশাকে মে*রে ফেলতে চাইছে।কষ্টে রুশার চোখ দিয়ে দুফোটা জল গড়িয়ে পড়ে।রুশা নিজের মৃত সুনিশ্চিত জেনেও রোহানের উদ্দ্যেশ্যে বলে,
-“ভালোবাসি…খুব ভালোবাসি।আপনি খারাপ হন ভালো হন আমি শুধু আপনাকেই ভালোবাসি।”
কথাটা বলেই রুশা তার শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে।মাটিতে লুটিয়ে পড়ে রুশার নিষ্প্রাণ দেহ।রুশা মৃত্যুর আগেও এটা নিয়ে আফসোস করেনি যে সে কেন রোহানকে ভালোবাসলো।তার আফসোস শুধু এটা নিয়েই ছিল যে রোহানের সাথে সুখে জীবন পার করার যেই স্বপ্ন সে দেখেছিল সেটা পূরণ হলোনা।কিন্তু রোহানকে যেন এই অনুভূতি স্পর্শই করতে পারে না।সে নিষ্ঠু*র মানবের মতো রুশার নিষ্প্রাণ দেহটা বস্তাবন্দি করে তারপর ডোবায় গিয়ে ফেলে দিয়ে আসে।
গাড়িতে করে ফিরে আসার সময় রোহান রুশার ওড়নার অংশ নিজের হাতে দেখতে পায়।মুহুর্তেই রোহানের চোখে বেয়ে অশ্রুধারা নামতে শুরু করে।রোহান বলতে থাকে,
-“এটা কি করলাম আমি! রুশাকে শে*ষ করে দিলাম।যেই মেয়েটাকে নিয়ে সারাজীবন কা*টানোর স্বপ্ন দেখেছিলাম নিজের হাতে তাকে শেষ করে দিলাম।কেন এমন হলো? আমি তো এটা চাইনি।কেন রুশা সব জানতে পারল? রুশা যদি বেঁচে থাকত তাহলে যে আমার সব সত্যি সামনে এসে যেত।নিজের জন্যই যে রুশাকে সরিয়ে দিতে বাধ্য হলাম আমি।না আমি কোন ভুল করিনি।রুশাকে যতই পছন্দ করি আমার কাছে সবার আগে আমি নিজেই।নিজের স্বার্থের জন্য আমি সব করবো সব।রুশার থেকে হাজারগুন ভালো মেয়ে আসবে আমার জীবনে।”
__________
নিলা নিজের ঘরে পায়চারি করে চলেছে।সেই কখন রুশা বেরিয়ে গেছে কিন্তু এখনো ফেরেনি।রুদ্র,লতিফাও দুশ্চিন্তায় আছেন।সব জায়গায় খবর নেওয়া শেষ কিন্তু রুশার কোন খবর নেই।
আচমকা একটি কল আসে রুদ্রের ফোনে।যেই সংবাদ একজন পিতার কাছে সবচেয়ে বেদনাদায়ক সেই সংবাদই তাকে শুনতে হয়।
নিজের স্ত্রীকে হারানোর পর বুকে আগলে রুশাকে মানুষ করেছেন তিনি।নিজের মেয়েকে ঘিরেই ছিল তার জীবন।আর আজ সেই মেয়েরই লাশের সামনে শক্তমানবের মতো বসে আছে রুদ্র।তার চোখে কোন জল নেই,মুখে কোন কথা নেই।শুধু একপলকে তাকিয়ে আছেন নিজের মেয়ের দিকে।রুশা ছাড়া যে এই পৃথিবীতে আপন বলতে আর কেউ ছিলনা।আজ রুশাও তাকে একা করে চলে গেল।
নিলার অবস্থাও ভালো না।রুশা তার নিজের বোন না হলেও তাকে নিজের বোনই ভাবত নিলা।ছোটবেলা থেকে তারা একসাথে বড় হয়েছে,একসাথে গল্প করে প্রতিরাতে ঘুমিয়েছে।
নিলা রুশাকে বলতে থাকে,
-“এই রুশা ওঠনা।এত নাটক করছিস কেন? আমি কিন্তু তোর প্রিয় জামাটা পড়ে নেব।তুই রাগ করবি না।এই রুশা ওঠনা।”
রুশা আর সড়া দেয়না।কিভাবে সাড়া দেবে সে? নিলা রুশাকে নিয়ে এতদিনের মধুর স্মৃতিগুলো ভেবে অনবরত কাঁদতে থাকে।রুশাকে কেউ কেন এত নৃ*শংস ভাবে খু*ন করবে সেটাই সে বুঝতে পারছিল না।মেয়েটা তো কারো কোন ক্ষতি করেনি।
নিলা রুশার লা*শের দিকে তাকিয়ে বলে,
-“আমি তোকে কথা দিচ্ছি যে বা যারা তোর এই অবস্থা করেছে তাদের সবাইকে শাস্তি পেতে হবে সবাইকে আমি নিজের হাতে শাস্তি দেব।”
(চলবে)