#হারানোর_বেদনা
#পর্ব_১৮
#লেখক_দিগন্ত
নিহান আর নিলাকে নিয়ে বাড়িতে ফেরেন আঁখি বেগম।নিলা এখনো মেঘলার মৃত্যুর শোক কা*টিয়ে উঠতে পারেনি।তারমধ্যে নতুন সমস্যা হিসেবে বাসা বেধেছে অজ্ঞাত সেই ব্যক্তি যিনি নারী পা*চারের সাথে জড়িত।তাছাড়া ইরিনার ব্যাপারটা তো রয়েছেই।
নিলা এসব কথাই ভাবছিল তখন নিলয় তাকে বলে,
-“এই মেয়ে এভাবে কি ভাবছ?”
নিলা খানিকটা বিরক্ত হয়ে বলে,
-“আপনার কি? আপনি নিজের কাজ করুন।”
নিহান এক পা, এক পা করে নিলার দিকে এগিয়ে আসতে থাকে আর নিলা পিছিয়ে যেতে থাকে৷নিলা নিহানকে সাবধান করে বলে,
-“খবর*দার আর এক পা এগোলে কিন্তু ভালো হবে না।”
-“কি করবে? আমি তোমার স্বামী।তোমার উপর আমার সম্পূর্ণ অধিকার আছে।”
-“এই বিয়েটা করার পেছনে আমার একটা উদ্দ্যেশ্য ছিল।নাহলে আপনার মতো মানুষকে কোনদিনও বিয়ে করতাম না।”
নিহান বাকা হেসে বলে,
-“আমি ছাড়া কেউই তোমাকে বিয়ে করতে রাজি হতো না।”
নিলা মুখ বাকিয়ে চলে যায়।নিহান নিলার দিকে তাকিয়ে হাসতে থাকে।
___________
আকাশ বসে বসে ভাবছে নিহান কত বোকা! ইরিনার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো ভেবে আকাশ গগণবিহারী হাসিতে মেতে ওঠে।ইরিনা নিহানের সাথে সম্পর্কে থাকায় অবস্থায় আকাশ ইরিনার উপর কু*নজর দেয়।একদিন রাতে সুযোগ বুঝে সে ইরিনাকে পাচার করার চেষ্টা করে।ইরিনা প্রাণ বাঁচানোর জন্য দৌড় দেয়।আকাশ সুযোগ বুঝে ইরিনার সাথে কয়েকটা ছেলের ইডিট করা ছবি নিহানকে পাঠিয়ে দেয়।নিহান আকাশকে খুবই বিশ্বাস করত।তার উপর এইসব ছবি দেখে নিহানের মাথা গরম হয়ে যায়।
তাই ইরিনা যখন নিহানের কাছে যায় তখন নিহান ইরিনার দিকে ব*ন্দুক তাক করতে বলে,
-“তুমি কেন আমার সাথে প্রতারণা করলে?”
আর সেদিন নিহান তো গু*লি করেছিল কিন্তু ইরিনাকে নয় আকাশের দিকে।ইরিনা নিহানকে সব কথা বলতে চেয়েছিল।কিন্তু নিহান ইরিনার কোন কথা না শুনে চলে যায়।
নিহান যাওয়ার পর নিহান ইরিনার কাছে আসে।তারপর ইরিনাকে জোর করে তুলে নিয়ে গিয়ে ইরিনাকে মে*রে তার লা*শ টুকরো টুকরো করে নদীয়ে ভা*সিয়ে দেয়।
এসব কথা ভেবে আকাশ বলে,
-“নিহান কত বোকা তুই।ইরিনাকে যেমন তোর কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছি এবার নিলাকেও ঠিক সেভাবেই কেড়ে নেব।তুই কিচ্ছু করতে পারবি না।”
___________
নিহানের বাবা ফিরে আসেন।তিনি এসে সব কথা শুনে যতদ্রুত সম্ভব নিহান আর নিলার বিয়েটা দিতে চান।
অন্যদিকে নিলা ছিল অন্য চিন্তায় নিহানকে কিভাবে শাস্তি দেবে, কিভাবে নিহান যে ইরিনার খু*ন করেছে এটা প্রমাণ করবে সেটাই ভেবে চলেছে সে।
হঠাৎ আকাশ নিলাকে কল করে।ফোন রিসিভ করতেই আকাশ বলে,
-“নিহানের ব্যাপারে তোমাকে কিছু কথা বলার ছিল।তুমি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমার সাথে দেখা করো।”
আকাশের কথা শুনে নিলা তড়িঘড়ি বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে।আকাশ নিলাকে আটকিয়ে বলে,
-“কোথায় যাচ্ছ এখন? এত রাতে একা তোমার বাইরে যাওয়া ঠিক হবে না।আমাকে বলো আমি তোমায় পৌঁছে দিচ্ছি।”
নিলা সাফ জানিয়ে দেয় সে একা যেতে পারবে।তখন নিহান বাধ্য হয়ে নিলাকে ঘরের মধ্যে বন্দি করে চলে যায়।
এদিকে রুশা,রুদ্র আর লতিফা বেগম নিহানের বাবার আমন্ত্রণে তাদের বাড়িতে আসে।তখন রোহানও বাড়িতে চলে আসে।রোহানকে এই বাড়িতে দেখে রুশা তো খুবই অবাক হয়।রোহানও ঠিক ততোটাই অবাক হয়।
রুদ্র আর নিহানের বাবা বিয়ের ব্যাপারে কথা বলছিল তখন রুশা রোহানের পিছু পিছু তার রুমের দিকে যায়।
রোহান রুশাকে বলে,
-“আম্মুর কাছে শুনলাম আমার ভাইয়া নাকি কাউকে কিছু না বলে একটা মেয়েকে বিয়ে করে বাড়িতে এনেছে।সেই মেয়েটা যে তোমার বোন সেটা ভাবতে পারিনি।”
রুশাও বাকা হেসে বলে,
-“আমিও বুঝতে পারিনি আপনি নিহান চৌধুরীর ভাই।”
-“তুমি যখন প্রথমবার আমার বাড়িতে এসেছ তখন চলো তোমাকে পুরো বাড়িটা ঘুরিয়ে দেখাই।একসময় তো তোমাকেও এই বাড়িতে থাকতে হবে।”
-“কি বললেন আপনি? আমি কোন দুঃখে এই বাড়িতে থাকব।”
-“সেটা না বোঝার মতো বোকা তো তুমি নও।”
রোহানের কথাটা শুনে রুশা লজ্জায় লাল হয়ে যায়।রুশা বুঝতে পারে রোহান একপ্রকার তাকে প্রপোজই করল।রুশাও তো রোহানকে ভালোবাসত।তাই এই প্রপোজটা তার নিজেরও অনেক ভালো লাগে।
তবে রুশা ভাব দেখিয়ে বলে,
-“আমার বয়েই গেছে আপনার বউ হবার।”
রোহান প্রতিত্তোরে বলে,
-“আমি কখন বললাম তোমাকে আমার বউ বানাবো? তুমি একটু বেশি ভাবছ না? আমি ডক্টর রোহান চৌধুরী।আমার বউ হবে আমার লেভেলের।”
-“আপনি বলতে চাচ্ছেন আমি আপনার লেভেলের নই? আমিও কিন্তু একজন মেডিকেল স্টুডেন্ট।কিছুদিন পর আপনার থেকেও বড় ডাক্তার হয়ে দেখিয়ে দেব।”
-“তার মানে তুমি আমার বউ হতে চাও?”
-“আপনি না একটা যাচ্ছেতাই লোক।”
কথাটা বলে রুশা মুখ বাকিয়ে চলে যায়।
__________
নিলা অনেক কষ্টে জানালা বেয়ে নিচে নামে।এখন তার উদ্দ্যেশ্য যে করেই হোক আকাশের সাথে দেখা করা।নিলা একটা সিএনজিতে উঠে পড়ে এবং আকাশের বাড়ির ঠিকানা বলে।
নিলা আকাশের বাড়িতে পৌঁছে যায়।হাফাতে হাফাতে আকাশের কলিং বেল চাপ দেয়।আকাশ এসে দরজা খুলে দেয়।নিলাকে ভেতরে আসতে বলে।তারপর নিলার হাতে এক গ্লাস পানি দেয়।
নিলা পানি খেয়ে নিয়ে আকাশকে জিজ্ঞাসা করে,
-“আমায় কেন ডেকেছিলেন আকাশ ভাইয়া?”
আকাশ বলে,
-“তুমি এখন নিহানের ওয়াইফ।তবে তোমার সবথেকে বড় পরিচয় তুমি একজন আইনের স্টুডেন্ট।তাই আশা করব তুমি আইনের সাথে ধোকাবাজি করবে না।আমার কাছে নিহানের বিরুদ্ধে প্রমাণ আছে৷আমি জানতে পেরেছি তোমার বান্ধবী ইরিনার হ*ত্যার পেছনেও নিহানের হাত রয়েছে।এই ভিডিওটা দেখ।”
নিলা ভিডিওটা দেখে বলে,
-“এই ভিডিওটা আমি আগেও দেখেছিলাম আবার দেখলাম।এবার আমি এই ভিডিওটা পুলিশকে দেব।যাতে অপরাধী শাস্তি পায়।”
-“আমার কাছে আরো প্রমাণ আছে।এই নাও এটা সেই বন্দু*ক যা দিয়ে নিহান ইরিনাকে খু*ন করেছে।অনেক কষ্টে আমি এটা পেয়েছি।”
নিলা সব প্রমাণ পেয়ে পুলিশের কাছে গিয়ে জমা দেয়। সব প্রমাণ দেখে পুলিশ চলে আসে নিহানকে গ্রেফতার করতে।
নিহান তখন ডাইনিং টেবিলে সবার সাথে ডিনার করতে বসেছিল।নিলাকে ডেকে আনতে যাবে তখনই পুলিশ এসে বলে,
-“মিস ইরিনাকে হ*ত্যার দায়ে আপনার নামে এরেস্ট ওয়ারেন্ট আছে মিস্টার নিহান চৌধুরী।”
নিহান অবাক হয়ে যায়।সে বলে,
-“আমি এসব কিছুই করিনি।”
তখন নিলা এসে নিহানকে বলে,
-“আর কত মিথ্যা নাটক করবেন আপনি? এবার তো সত্যটা স্বীকার করুন।”
নিহান অসহায় ভাবে নিলার দিকে তাকিয়ে বলে,
-“আমি সত্যিই ইরিনার মৃ*ত্যুর সাথে জড়িত নই।”
পুলিশ এসে নিহানকে হাতকড়া পরিয়ে নিয়ে যেতে থাকে।নিহান নিলার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,
-“আজ তুমি আমায় বিশ্বাস করলে না তাইতো? একদিন তুমি নিজের সব ভুল বুঝতে পারবে।আমাকে হারানোর বেদনা উপলব্ধি করবে।কিন্তু দেখবে সেদিন আফসোস ছাড়া আর কিছুই করার থাকবে না তোমার।”
নিলা নিহানের কথায় কোন ভ্রুক্ষেপ না করে শান্ত থাকে। তারপর বলে,
-“তোমার মতো অপ*রাধীর কঠিন শাস্তি হওয়া উচিত।”
পুলিশ নিহানকে নিয়ে চলে যাওয়ার পর আঁখি বেগম কাঁদতে শুরু করেন। তিনি এগিয়ে এসে নিলার হাত ধরে বলেন,
-“আমার ছেলেকে আমি চিনি ও এমন কোন কিছু করতে পারে না।তুমি ওকে বিশ্বাস করো না? ও তো তোমার স্বামী।”
-“আমি স্বেচ্ছায় ওনাকে বিয়ে করিনি। ওনার সব অপরাধ প্রমাণ করার জন্য ওনাকে বিয়ে করেছি।আপনি ওনার মা তাই আপনার কষ্ট পাওয়াটাই স্বাভাবিক।আমিও আপনার কষ্টটা বুঝতে পারছি।কিন্তু যে অপরাধী তাকে তো শাস্তি পেতেই হবে।”
রোহান নিলার দিকে এগিয়ে এসে বলে,
-“তুমি ভাইয়ার বিরুদ্ধে প্রমাণ কিভাবে পেলে?”
-“আকাশ ভাইয়া আমাকে অনেক সাহায্য করেছে এই বিষয়ে।”
-“আকাশ মানে ভাইয়ার বন্ধু আকাশ?”
-“হুম”
রোহান আর কোন কথা না বলে ছুটে চলে যায় আকাশের বাড়ির দিকে।
__________
আকাশ ফোনে কারো সাথে কথা বলছিল,
-“আজকে কিন্তু সবগুলো মেয়েকে পা*চার করতে হবে।কোন ভুল যেন না হয়।”
তখনই রোহান সেখানে চলে আসে এবং বলে,
-“আকাশ! তারমানে তুমিই এইসব নারী পা*চারের সাথে যুক্ত।আর তুমি কিনা আমার ভাইয়াকে ফাসাতে চাইছ! আমি সব জেনে গেছি এবার দেখ আমি সব সত্য সামনে আনব।”
(চলবে)