হারানোর বেদনা পর্ব-১৭

0
536

#হারানোর_বেদনা
#পর্ব_১৭
#লেখক_দিগন্ত
মেঘলার মৃত্যুর খবর পেয়ে নিলা স্তব্ধ হয়ে যায়।সেই ১২ বছর ধরে কত আশা নিয়ে আছে মেয়েটা যে একদিন নিজের মায়ের সাথে দেখা করবে।আর আজ তার সব ইচ্ছে মুহুর্তে ভেঙে গেল।নিলা কেঁদে কেঁদে রুদ্রকে জিজ্ঞাসা করে,
-“কি বলছেন এসব আঙ্কেল? আম্মু কখন কিভাবে মারা গেল?”

-“তুমি তাড়াতাড়ি বাড়িতে চলে আসো। তারপর সব বলব।”

নিলা ফোন রেখেই দৌড়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।নিহান আটকাতে গিয়েও আটকায় না।শুধু ভাবে কি এমন হলো যাতে নিলা এভাবে যাচ্ছে।নিহানও নিলার পেছনে যেতে লাগল।নিলা বাইরে এসে রাস্তায় পাগলের মতো ছুটতে থাকে।তখন নিহান এগিয়ে এসে বলে,
-“কি সমস্যা আপনার? মাঝরাস্তায় এভাবে দৌড়াচ্ছেন কেন?”

-“আপনি প্লিজ আমার পথ আটকাবেন না।আমায় যেতে হবে।””

-“কোথায় যাবেন বলুম।আমি আপনাকে পৌঁছে দেব।”

-“আমার বাড়িতে যাবো।আমার মা….”

নিলা কোন কথা না বলে কাঁদতে থাকে।নিহান নিলাকে বুকে জড়িয়ে শান্তনা দিতে থাকে।তারপর যত্ন করে গাড়িতে উঠিয়ে নেয়।
______________
-“এটা আমি কি শুনলাম আব্বু? মেঘাকে নাকি পুলিশ গ্রেফতার করেছে? তুমি কিছু করছো না কেন? এভাবে হাত গুটিয়ে বসে থাকার কারণ কি?”

নিজের ছেলে আকাশের মুখে কথাটা শুনে মিরাজ খান বলেন,
-“বর্তমানে এই ইস্যুটা নিয়ে অনেক ঝামেলা চলছে।এখন কিছু করতে গেলে আমাদের নামও চলে আসবে।তাই অপেক্ষা কর।এসব বিষয় ধামাচাপা পড়লে আমি মেঘাকে বের করে আনব।নকল ওষুধের ব্যবসা গেছে তো কি হয়েছে নারী পা*চার তো চলছেই।”

আকাশ কিছুটা রেগে গিয়ে বলে,
-“তুমি নিজের ছেলে মেয়েদের ব্যাপারে এতো উদাসীন কেন? মেঘাকে বের করতে পারছ না।এদিকে আমি যে কত করে বললাম আমি নিলাকে চাই তুমি আমার ইচ্ছেটাও পূরণ করতে পারলে না।”

-“আহ আকাশ একটু অপেক্ষা করো।আমি তো তোমাদের বাবা।তোমাদের সব ইচ্ছে পূরণ হবে।শুধু আমায় কিছু সময় দাও।দেখো আমি পুরো খেলাটাই উলটে দেব।আমি কিন্তু গভীর জলের মাছ।নিলয়ের সাথে আমিও তো নারী পাচারে যুক্ত ছিলাম।কিন্তু নিলয় নিজেও আমার ব্যাপারে কিছু জানত না।আমি এতটাই সচেতন ছিলাম।আমি ঠিকই ডাক্তারির আড়ালে এসব কাজ চালিয়ে গেছি।আর নিলয়ের মৃত্যুর পর যখন দেখলাম এই নিয়ে তোলপাড় চলছে তখন থেকে এই ব্যবসা বন্ধ করে নকল ওষুধের ব্যবসা শুরু করলাম।এখানেও ভালোই লাভ পেলাম।তারপর আবার অনেক বছর পর শুরু করলাম নারী পাচার।সবকিছু সুন্দরভাবে গুছিয়ে নিয়েছি।আমি চাইনা এখন আর কোনকিছু এলোমেলো হোক।তাই বলছি অপেক্ষা করো।আমাকে একটু সময় দাও।”
_________
নিলা নিহানের গাড়িতে করে চলে আসে নিজের বাড়িতে।গাড়ি থেকে নেমে দৌড়ে বাড়িতে যায়।রুদ্র,রুশা আর লতিফা বেগম সোফায় বসে ছিলেন।নিলাকে আসতে দেখে লতিফা বেগম দৌড়ে গিয়ে তাকে জড়িয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলেন,
-“তোর মা আমাদের সবাইকে ধোকা দিল রে সবাইকে।”

নিলা অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করে,
-“মানে? কি বলছ এসব? মা ধোকা দিল মানে?”

রুদ্র বলতে থাকে,
-“মেঘলা আজ থেকে ১২ বছর আগেই মারা গেছে।কিন্তু আমরা কষ্ট পাবো জন্য জেলারের কাছে অনুরোধ করে বলে সবকিছু গোপন রাখতে।যতদূর জেনেছি যে মেঘলাকে যে ব্রিজ থেকে ফেলে দেওয়া হয়েছিল তাই মেঘলার মাথায় অনেক সমস্যা হয়েছিল।ডাক্তার বলেই দিয়েছিলেন যেকোন সময় মেঘলার মৃত্যু হতে পারে।মেঘলা নিজের ইচ্ছেতেই এসব গোপন রেখেছে।আমাদের কাউকে জানায় নি।জেলে যাওয়ার ৩ মাসের মাথায় তার মৃত্যু হয়।কিন্তু মেঘলার মৃত্যুটা সে সবার কাছে গোপন রেখেছিল বিশেষ করে মেঘলার কাছে কারণ সে চায়নি মেঘলা ভেঙ্গে পড়ুক।জেলারও তার কথা শুনে এতদিন সব গোপন রেখেছে কারণ মৃত্যুর আগে এটাই মেঘলার শেষ ইচ্ছে ছিল।গতকাল জেলারের হার্ড এট্যাক হয়।মৃত্যুর আগে তিনি এইসব কথা জানিয়েছেন।সাথে এই চিঠিটা দিয়ে বলেছেন মেঘলা এটা মৃত্যুর আগে লিখে গিয়েছিল নিলার জন্য।”

নিলা চিঠিটা হাতে নিয়ে হু হু করে কান্না করতে থাকে।এতদিনের সব আশা সব স্বপ্ন ভেঙে গেছে।নিজের মায়ের উপর খুব অভিমান নিয়ে নিলা বলে,
-“কেন আম্মু কেন? এমন কিভাবে করতে পারলে তুমি? আমাকে কষ্ট দিতে চাওনি তাইনা? কিন্তু আজ দেখো আমার কত কষ্ট।তোমাকে হারানোর বেদনা আমি সহ্য করতে পারবো না আম্মু পারব না।”

নিলা চিঠিটা খুলে পড়তে থাকে।চিঠিতে লেখা,
প্রিয় নিলা,
-“মায়ের উপর খুব রাগ হচ্ছে বুঝি? কত আশায় ছিলি মাকে জীবিত দেখবি।আবার মায়ের কাছে ফিরে আসবি কিন্তু সব স্বপ্ন শেষ হলো।হয়তো এই চিঠিটা তুই আজ থেকে ১০-১৫ বছর পর হাতে পাবি।তখন আমি বেঁচে থাকব না।তোকে কিছু কথা জানানোর জন্য এই চিঠিটা লিখলাম।আমার বাকি দায়িত্ব তোকে পূরণ কররে হবে।তুই তো জানিস তোর বাবা একটা নারী পা*চারের সাথে যুক্ত ছিল।কিন্তু আমি খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি এই কাজে তার আরো একজন সহযোগী ছিল যে এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে।সে হয়তো আবার নিলয়ের এইসব অন্যায় কাজ চালিয়ে যাবে।তোর কাছে আমার আদেশ এটাই যে তুই ওই শয়*তানটাকে ধর।যাতে আর কোন মেয়ের জীবন নষ্ট না হয়।ভালো থাকিস মা।আমার দোয়া সবসময় তোর সাথে থাকবে।
ইতি,
তোর মা।”

চিঠিটা পড়ে নিলা একইসাথে অবাক এবং হতবাক হয়।কি পড়ল সে এসব? নিলা হঠাৎ মাথায় কারো কোমল স্পর্শ অনুভব করে পেছনে ফিরে তাকায়।নিহানের মা আঁখি বেগম এসেছেন সাথে নিহানও।

আঁখি বেগম বলেন,
-“তোমাকে বাড়ি থেকে ওভাবে দৌড়ে আসতে দেখেই আমার সন্দেহ হয়।তাই তোমাদের পিছু নিয়ে চলে আসি।এসে জানলাম তোমার মা মারা গেছে।তুমি চিন্তা করোনা নিলা।এক মা নেই তো কি হয়েছে।আজ থেকে আমি তোমার মা।”

নিলা আঁখি বেগমকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে।সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকি।আঁখি বেগম সবার উদ্দ্যেশ্যে বলে,
-“আপনারা হয়তো জানেন না আমার ছিল নিহানের সাথে নিলার বিয়ে হয়েছে।ওরা নিজের ইচ্ছাতেই বিয়টা। করেছে।”

রুদ্র বলে,
-“এসব আপনি কি বলছেন? নিলা তুই আমাদের না জানিয়ে বিয়ে কিরে নিলি।”

লতিফা বেগমও তার সাথে তাল মিলিয়ে বলেন,
-“হ্যাঁ তাইতো।নিলা তুই কাজটা একদম ঠিক করিস নি।আমাদের অন্তত একবার জানাতে পারতি।এভাবে কাউকে না জানিয়ে বিয়ে করে নিলি।”

আঁখি বেগম সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন,
-“যা হওয়ার হয়ে গেছে।আমিও এই বিষয়ে কিছু জানতাম না।বিয়েটা যখন হয়ে গেছে এখন কি আর করার।একদিন আমরা সবাই মিলে অনুষ্ঠান করে ওদের বিয়েটা দিয়ে দেই।”

রুদ্র বলে,
-“কথাটা ভুল বলেননি।চাচী আপনি কি বলেন?”

লতিফা বেগম চোখের জল মুছতে মুছতে বলেন,
-“নিলা যদি বিয়েটা করতে চায়।আমি তাহলে আপত্তি করবোনা।”

রুশা এবার নিলার দিকে এগিয়ে এসে বলে,
-“তাহলে শেষপর্যন্ত নিহান চৌধুরীর বউই হলেন।আগে তো কত বলতি যে লোকটাকে তোর পছন্দ নয়।তলে তলে টেম্পু চলে আর আমরা বললেই হরতাল।”
________
আকাশ হাতে নিলার একটা ছবি দেখে বলে,
-“নিহান চৌধুরী তুমি নিলাকে আমার থেকে কেড়ে নিয়েছ।এবার দেখো আমি তোমার সাথে কি করি।”
(চলবে)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে