#হারানোর_বেদনা
#পর্ব_১৪
#লেখক_দিগন্ত
নিহান বসে বসে নিলার কথাই ভাবছিল।মেয়েটা কি যাদু করল তার উপর? মেয়েটাকে না চাইতেও এত মনে পড়ছে কেন।এই প্রশ্নের কোন উত্তর তার কাছে নেই।
হঠাৎ কারো স্পর্শে পিছনে ফিরে তাকালো নিহান। রোহানকে দেখে সুন্দর করে হেসে নিহান বললো,
-“আরে ডাক্তার সাহেব যে।আপনি এসে গেছেন।তা আজ কোন রোগী ছিলনা।”
-“ভাইয়া এমন মজা করো কেন বলোতো।এখন তো তোমাকেই আমার রোগী মনে হয়।”
-“আমি তো রোগীই।এত বছর ধরে বুকের মধ্যে হাজারটা রোগ নিয়ে ঘুরছি।”
-“তুমি এখনো ঐ প্রতারক মেয়েটার কথা ভাবো? কেন ভাইয়া কেন? ঐ মেয়েটাকে ভুলতে পারো না।”
-“চাইলেও সেটা সম্ভব নয়।ও আমার বুকে এমন আঘাত দিয়ে গেছে যে আমি চাইলেও ওকে ভুলতে পারবো না।সেই ক্ষমতা আমার নেই।”
-“তুমি নিজের জীবনকে এভাবে গুটিয়ে রেখোনা।নতুন করে জীবন শুরু করো।”
-“তোকে আমার কথা ভাবতে হবে না।তুই নিজের কথা ভাব।”
কথাটা বলেই নিহান উঠে চলে যায়।রোহান নিহানের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,
-“আজ ঐ একটা মেয়ের জন্য সব মেয়েদের তুই ঘৃণা করিস।মেয়েদের সাথে খারাপ ব্যবহার করিস।একবারও কি তোর মনে হয়না সব মেয়েরা একরকম নয়।”
নিহান নিজের ঘরে এসে সোফায় বসে বলতে থাকে,
-“সব মেয়েরা এক রকম।সব মেয়েদের শাস্তি পাওয়া উচিৎ।সবার।”
_____________
নিলা আর রুশা দুজনে বাড়িতে এসেও ঝামেলা করছে।রুশা নিলাকে সবকিছুর জন্য দোষী বলছে।নিলাও সমানে বলে যাচ্ছে চিন্তা না করতে।
নিলা এবার রেগে যায় আর বলে,
-“যা তোর সাথে আর কথা বলবো না।তুই রাগ করে থাক।”
-“আমিও তোর সাথে কথা বলব না।সমস্যা তৈরির কারখানা কোথাকার।”
পরেরদিন তারা যে যার মতো নিজেদের কাজে চলে যায়।
নিলাকে হঠাৎ আকাশ ফোন করে বলে,
-“তুমি ঠিক আছো নিলা?”
নিলা বলে,
-“ঠিকই আছি।”
-“কাল রাতে অনেক বিজি ছিলাম তাই তোমার কোন খবর নিতে পারিনি।তুমি ঠিক আছো তো? নিহান তোমায় নিয়ে গিয়ে কি জিজ্ঞাসাবাদ করেছে।”
-“কিছুই হয়নি আমার।উনি বেকার আমায় সন্দেহ করছিল।আমি কি এসব বাজে কাজের সাথে জড়িত নাকি?”
-“হুম আমিও তাই মনে করি।যাইহোক তোমার পরীক্ষার প্রস্তুতি কেমন?”
-“আছে ভালোই।”
-“এমন বললে চলবে না।ভালো উকিল হতে চাইলে তোমাকে পড়াশোনা করতে হবে।আমার একটা নতুন কেসের জন্য আগামী কয়েকদিন ব্যস্ত দিন যাবে।তুমি কিন্তু ভালোভাবে পড়াশোনা করবে।”
-“আচ্ছা আকাশ ভাই।কোন চিন্তা করবেন না।আমি আপনার কথামতো সব কিছু করব।ভালোভাবেই পড়ব।”
-“গুড।আমি এখন রাখছি।টেক কেয়ার।”
কলটা রেখে দিয়ে নিলা একটা বাকা হেসে বলে,
-“কেয়ার আমার না আরেকজনের প্রয়োজন।কারণ তাকে জ্বা*লানোর জন্য আমি তো আছি। হা হা হা।”
_________
ফোনটা বেজে উঠতেই নিহান বিরক্ত হয়ে রিসিভ করে।বিপরীত দিক থেকে কারো করুণ কন্ঠ ভেসে আসে,
-“আমাকে বাঁচাও নিহান।আমি ইরিনা।”
-“ইরিনা!!! তুমি বেঁচে আছো? কোথায় তুমি? আমাকে বলো।”
-“আমি আপনার আশেপাশেই আছি।আমাকে খুঁজে নিন আপনি।”
-“হ্যালো ইরিনা হ্যালো!!”
ওপাশ থেকে কল কে*টে যায়।নিহান এতদিন পর সেই চেনা কন্ঠস্বর শুনে পাগল হয়ে যায়।সবকিছু তো সে ভুলেই গিয়েছিল।তাহলে এতবছর পর সে কেন আবার ফিরে এলো? নিহান কিভাবে খুঁজবে তাকে?
নিহান কোনকিছু না ভেবেই বেরিয়ে যায় ইরিনাকে খোঁজার জন্য।
________
রুশা আজ একটু তাড়াতাড়িই কলেজে চলে এসেছে।নিলার সাথে রাগ করে থাকায় এক ঘন্টা আগেই বেরিয়েছে।এই সময় মূলত কলেজ ফাকা থাকে।রুশা মেডিকেল কলেজে ঢোকার সময় দেখতে পায় ডক্টর আহান ফোনে কারো সাথে চুপিসারে কথা বলছে।রুশার কোন আগ্রহ না থাকায় সে এগিয়ে যেতে থাকে নিজের কাজে।তখন তার কানে ভেসে আসে।
আহান কাউকে বলছে,
-“আমি যা বলেছি চুপচাপ তাই করো।ওষুধগুলো আরো বেশি করে ছড়িয়ে দাও।তোমরা জানো না এই নকল ওষুধের ব্যবসা কতটা লাভজনক হচ্ছে।টাকা নিয়ে কোন চিন্তা করার প্রয়োজন নেই।টাকার ব্যবস্থা আমি করে দেব।যত টাকা লাগবে আমি দেব।তোমরা শুধু ওষুধগুলো আরো বেশি বেশি ছড়িয়ে দাও।পুলিশ প্রশাসনকে ভয় করতে হবে না।এসবকিছু আমি সামলে নেব।”
আহানের কথাগুলো শুনে রুশা ভয়ে কাপতে থাকে।আহানকে সবাই একজন ভালো ডাক্তার হিসেবেই চেনেন।তার ব্যবহারও অনেক ভালো।সেই লোক যে এমন কাজ করেছে সেটা বিশ্বাস করা সত্যিই কঠিন।
রুশা আর না দাড়িয়ে দৌড়ে চলে যায়।দৌড়ে কিছুদূর যাওয়ার পর কারো সাথে ধাক্কা খায়।ধাক্কাটা খেয়ে রুশা উপরে তাকিয়ে দেখে ডাক্তার রোহান তার দিকেই তাকিয়ে আছে।
রুশাকে দেখে ডাক্তার রোহান বিরক্তি প্রকাশ করে বলে,
-“তুমি কি ধাক্কা খাওয়ার আর লোক পাওনা নাকি? সবসময় খালি আমার সাথেই ধাক্কা পাও।”
রুশা হাফাতে হাফাতে বলে,
-“আমি আজ অনেক কিছু জানতে পেরেছি।আপনি কি আমার কথা বিশ্বাস করবেন?”
-“কি জানো তুমি?”
-“আপনি কি জানেন ডক্টর রোহান আজকাল বাজারে নকল ওষুধ পাওয়া যাচ্ছে।”
-“হুম আমি শুনেছি এই ব্যাপারে।”
-“এইসকল কাজ কে করছে জানেন? ডাক্তার আহান।আমি নিজের কানে সব শুনেছি।”
-“হোয়াট? এসব কি বলছ তুমি? তোমার কাছে কি প্রমাণ আছে?”
-“আমার কাছে আজ কোন প্রমাণ নেই কিন্তু আমি শুনেছি আজ রাতে উনি একটা যায়গায় ওনার লোকেদের সাথে দেখা করতে চেয়েছেন।আমার সাথে চলুন তাহলে সবকিছু প্রমাণ হয়ে যাবে।”
-“আচ্ছা ঠিক আছে।”
-“আর একটা কথা পুলিশকেও সাথে নেবেন।”
__________
রাতে রুশার কথা মতো রোহান পুলিশদের নিয়ে পৌঁছে যায়।গিয়ে দেখতে পায় ডাক্তার আহান লুকিয়ে লুকিয়ে কয়েকজন লোকের সাথে কথা বলছে।
রুশা সাহস দেখিয়ে এগিয়ে গিয়ে বলে,
-“আপনার খেলা শেষ ডাক্তার আহান।আমি আপনার সব অন্যায় কাজের ব্যাপারে জেনে গেছি।আপনার লজ্জা করলো না একজন ডাক্তার হয়ে রোগীদের জীবন নিয়ে এমন ছিনিমিনি খেলতে? আপনি ডাক্তার নামের কলংক।”
আহান রুশার মাথায় বন্দু*ক ধরে বলে,
-“আমি দেখি তুই আমার কি করিস।”
তখনই পুলিশ এসে আহানকে ধরে সাথে তার লোকদেরও।রোহান এগিয়ে এসে রুশাকে বলে,
-“তুমি ঠিক আছো তো?”
রুশা হ্যাঁ বলে।আহানের সব অপকর্মের বিরুদ্ধে পুলিশ অনেক প্রমাণ পায়।তাই তৎক্ষনাৎ তাকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়।পুলিশেরা রোহান আর রুশাকে ধন্যবাদ জানায়।
পুলিশেরা চলে যাওয়ার পর রোহান রুশাকে রাগ দেখিয়ে বলে,
-“এত সাহস দেখাতে গেলে কেন? যদি কিছু হয়ে যেতো।”
রুশা মুখ বাকিয়ে 😏 বলে,
-“আমি যা করেছি ঠিক করেছি।আপনাকে আমাকে নিয়ে এত ভাবতে হবে না।”
-“আমি ভাববে না তো কে ভাববে?”
-“আপনি কেন ভাববেন আমার কথা?”
রোহান কিছু না বলে চলে যায়।
(চলবে)