#হারানোর_বেদনা
#পর্ব_৩
#লেখক_দিগন্ত
নিলয় সুমিকে ধা*ক্কা দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দিয়ে বলে,
-“তুই এই বাড়িতে একদম ঢুকবি না।তোর জন্য আমার জীবন ন*ষ্ট হয়ে গেছে।”
সুমিও নিজের বাড়ি চলে যায়।তার আর কি সমস্যা? এসব অভিনয়ের জন্য অনেক টাকা পেয়েছে সে।এখন পায়ের উপর পা তুলে খাবে।এমনিতেও তার একটা বয়ফ্রেন্ড আছে।
________________
রুদ্র তার সামনে বসে থাকা নারীটিকে বলে,
-“এরপর তুমি কি করতে চাও দিশা?”
-“নিলয়ের আরো বড় কোন ক্ষ*তি করতে চাই।এইজন্য তোমাকেও সাহায্য করতে হবে।তোমাকে তো নিলয় খুব বিশ্বাস করে।”
-“বিশ্বাস করেই তো নিজের বোনকে আমার হাতে তুলে দিয়েছিল।আর এখন সেই বোনই আমায় নিলয়ের বিরুদ্ধে ষ*ড়যন্ত্র করতে উস্কানি দিচ্ছে।”
-“বোন? কার বোন।নিলয় আমার সৎ ভাই।আমার মায়ের মৃত্যুর পর আমার বাবা মিসেস লতিফাকে বিয়ে করে।আমি কখনো ওনাকে মা হিসেবে মানি নি।তারপর নিলয়ের জন্ম হলো।আমাকে যেন সবাই ভুলেই গেল।সবাই নিলয়কে নিয়েই মাতামাতি করল।এমনকি বাবা নিলয়কে তার কোম্পানির সিইও পর্যন্ত বানিয়ে দিল।আমাকে শুধু কিছু জমিজমা দিয়ে কি ভেবেছিল আমি মেনে নেব? যখন সোজা পথে কিছু হয়নি তখন এভাবে আদায় করে নেব।নিলয়কে এভাবে কষ্ট দিয়েই ওর সবকিছু আমি কেড়ে নেব।”
দিশার কথা শুনে রুদ্র বলে,
-“তাহলে এরপর নতুন প্ল্যান সাজিয়ে ফেলি।”
.
বাড়িতে এসেছে থেকে অনবরত কেঁদে চলেছে মেঘলা।নিলয়কে ঠকবাজ ভেবে নিজেই অনেক কষ্টে আছে।মেঘলার খুব ইচ্ছে করছিল মরে যেতে।কিন্তু নিজের মেয়ের জন্য সেটাও করতে পারছিল না।তার কিছু হয়ে গেলে মেয়েটাকে কে দেখবে।
নিলয়ের অবস্থাও বেশি ভালো না।মেঘলাকে অনবরত কল,ম্যাসেজ করে কোন লাভ হচ্ছে না।নিলয় পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে।এমন সময় রুদ্র তাকে কল করে।
রুদ্রকে এখনো অন্ধের মতো বিশ্বাস করে নিলয়।রুদ্রর কলটা রিসিভ করতেই রুদ্র বলে,
-“দিশার হঠাৎ খুব অসুস্থ হয়ে গেছে।তার অবস্থা খুব খারাপ ওকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।আমি এখন শহরের বাইরে আছি।তুই প্লিজ হাসপাতালে যা।”
-“কি হয়েছে আপুর? আমি এক্ষুনি যাচ্ছি।”
কথাটা বলামাত্রই হাসপাতালে ছুটে যায় নিলয়।হাসপাতালে যাওয়ার পর ডাক্তার তাকে বলে,
-“আপনি কি পেসেন্টের বাড়ির লোক?”
-“জ্বি, উনি আমার আপু হন।”
-“এই নিন, এই পেপারে সাইন করে দিন।পেসেন্টের অপারেশন করতে হবে।তাই বাড়ির লোকের সাইন প্রয়োজন।তাড়াতাড়ি সাইনটা করুন পেসেন্টের অবস্থা কিন্তু খুব খারাপ।”
নিলয় পেপারটা না পড়েই সাইন করে দেয়।ডাক্তার একটা অদ্ভুত হাসি দিয়ে চলে যায়।
নিলয় অপেক্ষা করতে থাকে কোন ভালো খবরের জন্য।কিন্তু তার জন্য যে সামনে কি খারাপ খবর অপেক্ষা করছে সেটা সে ভাবতেই পারেনি।
_________________
মেঘলা নিলাকে স্কুল থেকে বাড়িতে ফিরিয়ে আনতে যায়।স্কুলে গিয়ে জানতে পারে মেঘলা অনেক আগেই একজন লোক এসে গাড়িতে করে নিলাকে নিয়ে গেছে।
মেঘলা খুব দুশ্চিন্তায় পড়ে যায়।তার মনে হয় নিলয় হয়তো নিলাকে নিয়ে গেছে।তাই সে নিলয়কে ফোন করে।কিন্তু নিলয়ের ফোন অন্ধ ছিল।মেঘলা তাই বাধ্য হয়ে নিলয়ের বাড়ির উদ্দ্যেশ্যে রওনা দেয়।
নিলয়ের বাড়িতে পৌছাতেই মেঘলার অস্বস্তি শুরু হয়।এই বাড়িতেই তো কতগুলো বছর কা*টিয়েছে সে।এই বাড়িতে কতশত সুমধুর স্মৃতি জড়িয়ে আসে।আর আজ এই বাড়িতে ঢুকতেই কিনা তার সংশয় হচ্ছে।
অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে তারপর কলিং বেল বাজায় মেঘলা।কলিং বেলের শব্দ শুনে দরজা খুলে দেন লতিফা বেগম।মেঘলাকে দেখে তিনি খুব খুশি হন।ভাবেন মেঘলা হয়তো আবার ফিরে এসেছে।
মেঘলা লতিফাকে জিজ্ঞাসা করে,
-“আপনি কেমন আছেন?”
-“এতক্ষণ ভালো ছিলাম না।কিন্তু তোমাকে দেখে আবার ভালো হয়ে গেছি।”
-“আমি এখানে থাকতে আসিনি।আপনার ছেলে যা করেছে তারপর আমার আর এখানে থাকা চলেনা।”
-“তাহলে কেন এসেছ?”
-“নীলার খোঁজে।কোথায় নীলা?”
মেঘলার কথাটা শুনে লতিফা বেগম অবাক হয়ে বলেন,
-“নিলার তো তোমার কাছেই থাকার কথা।ও এখানে আসবে কিভাবে?”
লতিফার কথাটা শোনার পর মেঘলার দুশ্চিন্তা আরো বেড়ে যায়।সে চটপট জিজ্ঞাসা করে,
-“নিলয় কোথায়?”
-“কি জানি ও তো অনেক আগেই তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে গেল।আমি জিজ্ঞাসা করলাম কোথায় যাচ্ছিস কিন্তু কিছু বলল না।”
মেঘলা আর কোন কথা না বলে হন্তদন্ত হয়ে ছুটে সেখান থেকে চলে আসে।তার মনে হয় নিলয় নিলাকে নিয়ে তার থেকে অনেক দূরে চলে গেছে।
রাস্তায় রাস্তায় পাগলের মতো ‘নিলা’ বলে চিৎকার করতে থাকে মেঘলা।কিন্তু নিলার কোন খোঁজ পায়না।এই মেয়েটাকে ঘিরেই যে তার পুরো জীবন।নিলার কিছু হয়ে গেলে কি নিয়ে বাঁচবে মেঘলা?
.
নিলয় তখন থেকে পায়চারি করে চলেছিল।তার ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে বন্ধ হয়ে গেছে।তাই ফোনটা অন করে।তারপর দেখে মেঘলা অনেকবার কল করেছে।
মেঘলাকে এতবার কল করতে দেখে নিলয় খুবই দুশ্চিন্তার মধ্যে পড়ে যায়।নিলয় মেঘলাকে কল ব্যাক করে।
মেঘলা রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতে ঘুরতে ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিল।হঠাৎ রাস্তার মধ্যে অজ্ঞান হয়ে পড়ে যায়।আশেপাশের মানুষ ছুটে আসে।
তখনই মেঘলার ফোন বেজে ওঠে।সেখানে থাকা একজন লোক বলে,
-“নিশ্চয়ই ওনার পরিবারের কেউ।ওনার এই অবস্থার কথা জানাতে হবে।”
কলটা রিসিভ করতেই অপরপাশ থেকে নিলয় বলে,
-“এতবার কল দিয়েছিলে কেন মেঘলা?”
-“আমি মেঘলা নই।এই ফোনটা যার তিনি অজ্ঞান হয়ে রাস্তায় পড়ে আছে।আপনি ওনার কে হন? তাড়াতাড়ি চলে আসুন।”
-“কি বললেন? আমি এক্ষুনি যাচ্ছি।আপনি লোকেশনটা বলুন।”
লোকটি লোকেশন বলার পর নিলয় গাড়ি নিয়ে রওনা দেয়।
_________
এদিকে নিলা পুতুল নিয়ে খেলছিল।রুদ্র তার সামনে আসতেই নিলা বলে,
-“আঙ্কেল! তুমি তো বলেছিল আমায় আব্বুর কাছে নিয়ে যাবে।তাহলে এখানে কেন নিয়ে এলে?”
-“তোমার আব্বু কিছু কাজে ব্যস্ত আছে।তার কাজ শেষ হলেই সে চলে আসবে।তুমি ততক্ষণ খেলতে থাকো।আচ্ছা তুমি কি খেতে চাও বলো তো?”
-“বিরিয়ানি।”
-“আচ্ছা আমি এখনই তোমার জন্য বিরিয়ানি নিয়ে আসছি।”
রুদ্র সেখান থেকে চলে যায় আর নিলা চুপচাপ খেলতে থাকে।নিজের বাবার মতো নিলাও রুদ্রকে অগাধ বিশ্বাস করে।রুদ্র সবসময় নিলাকে অনেক কিছু গিফট করে,ঘুরতে নিয়ে যায়।তাই নিলয় যখন তার স্কুলে এসে বলে,
-“চলো তোমার আব্বু তোমার সাথে দেখা করতে চায়।”
তখন তার এক কথাতেই নিলা কোনকিছু না ভেবে গাড়িতে উঠে যায়।
.
মেঘলার খারাপ অবস্থার কথা শুনে নিলয় ছুটে যায়।নিলয় আসার আগেই মেঘলার জ্ঞান ফিরেছিল।নিলয়কে দেখেই সে ছুটে গিয়ে বলে,
-“আমার মেয়ে কোথায়? আমার মেয়েকে আমার থেকে দূরে করার সাহস তুমি কোথায় পেলে?”
নিলয় বোকার মতো মেঘলার দিকে তাকিয়ে থাকে।মেঘলা আরো জোরে চিৎকার করে বলে,
-“চুপ করে আছ কেন? কথা বলো।কোথায় আমায় মেয়ে?”
-“নিলার তো তোমার কাছে থাকার কথা মেঘলা।আমাকে কেন জিজ্ঞাসা করছ?”
-“একদম নাটক করবে না।তোমার অনেক নাটক দেখেছি আমি।”
-“আমি কোন নাটক করছি না মেঘলা।”
-“চুপ আর একটা কথাও না।ভালোয় ভালোয় আমার মেয়ে কোথায় আছে সেটা বলো।নাহলে আমি পুলিশে রিপোর্ট করতে বাধ্য হবো।”
নিলয় এবার রেগে গিয়ে বলে,
-“নিলা শুধু তোমার একার মেয়ে নয়।নিলা আমারও মেয়ে।আমি ওর ক্ষতি কেন করব?”
মেঘলা কাঁদতে কাঁদতে বলে,
-“তাহলে আমার মেয়েটার কি হলো? স্কুলের দারোয়ান তো বলল একজন লোক এসে গাড়িতে করে নিয়ে গেছে।”
-“শান্ত হও মেঘলা।আমাদের আগে নিলার স্কুলে গিয়ে সবকিছু জানতে হবে।চলো আমার সাথে।”
মেঘলা ও নিলয় নিলার স্কুলে যায়।নিলয় দারোয়ানকে জিজ্ঞাসা করে,
-“আচ্ছা আমার মেয়ে নিলা ওকে কে নিয়ে গেছে?”
দারোয়ান বলে,
-“আপনিই তো নিয়ে গেলেন।”
নিলয় এবার একটু বেশিই অবাক হয়।সে দারোয়ানের উদ্দ্যেশ্যে বলে,
-“এসব কি বলছেন আপনি? আমি কখন নিলাকে নিয়ে গেলাম।”
-“আমি ঠিকই বলছি।”
মেঘলা রাগী চোখে নিলয়ের দিকে তাকায়।নিলয় বলে,
-“এখানে তো সিসিটিভি আছে।চেক করলেই সব বোঝা যাবে।”
নিলয় স্কুলের প্রিন্সিপালের সাথে কথা বলে সিসিটিভি দেখার অনুমতি নেয়।তারপর সিসিটিভিতে যা দেখে তাতে দুজনেই অবাক হয়ে যায়।
(চলবে)