হাজার ফুলের মাঝে একটি গোলাপ পর্ব-০৯

0
665

#হাজার_ফুলের_মাঝে_একটি_গোলাপ
#পর্বঃ৯
#লেখিকাঃদিশা মনি

সুমি পুলিশকে বলে,
‘আমি কিছু মনে করতে পারছি না। যতদূর মনে আছে আমি রাতে বাইরে বেরিয়েছিলাম তখন কে বা কারা আমাকে তুলে নিয়ে যায় আর তারপর,,,,’

কথা সম্পূর্ণ না করেই সুমি কেদে দেয়। মনে মনে ক্ষমা চেয়ে নেয় এভাবে মিথ্যা বলার জন্য। সুমির মনে পড়ে যায় গতকাল রাতের কথা। ললিত আর তার বন্ধুরা সুমিকে হুম’কি দিয়ে বলে,
‘যদি কাউকে কিছু বলিস তাহলে তোকে আর তোর পুরো পরিবারকে শে’ষ করে দেব।ভালো হবে তুই যদি নিজের মুখ বন্ধ রাখিস।’

এই ভয়েই সুমি সত্যটা গোপন করল।একজন পুলিশ ইন্সপেক্টর সুমিকে জিজ্ঞেস করে,
‘আপনি কি তাদের কাউকে চেনেন? কারো চেহারা কি মনে আছে?’

সুমিঃখুব অন্ধকার ছিল চারিদিকে। আমার কিছু মনে নেই। আমি সত্যি কিছু দেখি নি। আমাকে দয়া করে এসব বিষয়ে আর কোন রকমের প্রশ্ন করবেন না। আমি আর ঐ ভয়ানক রাতের ব্যপারে কোনকিছু মনে করতে চাইনা।

পুলিশঃআমরা পুলিশ আমাদের দায়িত্ব সব সত্য জানা। আমাদের তো আমাদের কাজ করতেই হবে। আপনি যদি আমাদের সহায়তা না করেন যদি আমাদের সাথে কো-অপা’রেশন না করেন তাহলে আমরা তো দো’ষীদের শাস্তি দিতে পারব না।

সুমিঃআমি কিছু জানিনা বললাম তো আপনার প্লিজ যান।

পুলিশঃআপনি কি কিছু লুকানোর চেষ্টা করছেন।

একজন ডাক্তার ছুটে এসে বলে,
‘আপনারা প্লিজ পেসেন্টকে এভাবে প্রেসার দেবেন না। বাইরে আসুন প্লিজ।’

১৭.
‘আমার মনে হয় উনি আমাদের থেকে কিছু লুকোতে চাইছেন। আপনারা তো ওনার পরিবারের লোক আপনারা একটু চেষ্টা করে দেখুন যদি কিছু বলে।’

কথাটা বলে একজন পুলিশ অফিসার চলে যান। শাহাদাত হাত মুষ্টিবদ্ধ করে বলে,
‘আমি একেবারে নিশ্চিত এইসব কিছু ঐ ললিতই করেছে। ওকে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই সব জানা যাবে।’

শামিমাঃভাইয়া আমার মনে হয় তুমি ঠিক বলছো। আমি সুমিকে বোঝাবো। সব সত্য আমাদের জানতে হবে। অপরাধীদের তাদের অপকর্মের শাস্তি পেতেই হবে।

শাহানাজঃআমি একটা কথা বলবো তোরা সবাই মন দিয়ে শোন। এইসব ব্যাপারে যত কম কথা হবে তত ভালো।

শামিমাঃকি বলছ তুমি আম্মু?

শাহানাজঃআমি যা বলছি একদম ঠিক বলছি। তুই জানিস না একটা মেয়ের উপর এতবড় অভিযোগ এলে সমাজ তাকেই কথা শোনায়। এমনিতেই এর আগে তোকে সমাজে অনেক কথা উঠেছে। তোর চরিত্র নিয়ে সবাই কত বাজে কথা বলেছে। এখন এসব ব্যাপার জানাজানি হলে লোকে তো আরো মাথায় উঠে যাবে। বলবে আমরা কোন মেয়েকেই মানুষ করতে পারিনি। লজ্জায় যে আমরা কাউকে মুখ দেখাতে পারব না। আমি তোদের আব্বুকেও বলে দেব যেন পুলিশকে আমাদের বাড়িতে আসতে মানা করে। এসন তদন্ত করার দরকার নেই। এসব করে কি হবে যা হবার তো হয়েই গেছে।

শাহাদাতঃতোমার কথা আমি মানতে পারলাম না। শুধুমাত্র সমাজের ভয়ে আমরা চুপ থাকব।

শামিমাঃঠিকই তো আম্মু। আমরা সুমিকে ন্যায়বিচার পাইয়ে না দিয়ে এভাবে হাত গুটিয়ে বসে থাকতে পারি না।

শাহানাজঃতাহলে আর কি আমাদের মান সম্মান সব শেষ দে জেদ করে৷ আমি আর তোর বাবা এভাবে আর পারছি না। সারাজীবন অনেক সম্মানের সাথে কা’টিয়েছি। আর এখন শেষ বয়সে এসে এত কিছু দেখতে হচ্ছে।

শামিমাঃআম্মু আল্লাহর উপর ভরসা রাখো। তিনি সব ঠিক করে দেবেন।

সাকিব এসে বলে,
‘সুমিকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। আপনারা এখানে ঝামেলায় ব্যস্ত আছেন এখনো।’

সাকিবের কথা শুনে মূহুর্তেই পুরো পরিস্থিতি বদলে যায়। সবাই সুমিকে খোজাখুজি শুরু করে।

সুমি তার মায়ের সবকথা শুনে ফেলেছিল। তাই সে সব ছেড়ে চলে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এমনিতেই জেদের বসে তার মা-বাবাকে অনেক সমস্যার মধ্যে ফেলেছে, নিজের সবথেকে বড় সর্বনা’শও করেছে। তাই এখন আর নতুন করে কোন সমস্যায় তৈরি করার ইচ্ছা তার নেই। এখন সুমি চায় সব ছেড়ে চলে গিয়ে সবাইকে শান্তি দিতে। নিজের জীবন তো শে’ষ করেই ফেলেছে এখন অন্তত অন্যদের জীবনে সমস্যা তৈরি কর‍তে চায়না।

সুমি বের তো হয়েছে এখন কোথায় যাবে সেটাই ভাবতে পাচ্ছে না। রাস্তায় হাটতে হাটতে অজানা গন্তব্যে পা বাড়িয়েছে সুমি।

শামিমা শাহানাজ পারভীনকে সামলাচ্ছে। শাহাদাত,সাকিব,আলতাফ উদ্দিন সবাই সুমির খোজে ব্যস্ত। এসবের মধ্যে নতুন সমস্যা পুলিশের আগমন। পুলিশ একটার পর একটা জেরা করেই চলেছে। এতসবের মধ্যে সবার শান্তি যেন হারিয়ে গেছে।

শামিমার শরীর এমনিতেই দূর্বল ছিল। এত ধকল সহ্য করতে না পেরে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে শামিমা। সাকিব এসে শামিমাকে ধরে ফেলে নাহলে সে পড়েই যেত। শামিমাকে হাসপাতালে এডমিট করা হয়।

শামিমার জ্ঞান ফিরলে সাকিব তাকে রাগ দেখায়।
‘কি করিস সারাদিন? নিজের খেয়াল রাখার টাইমও কি পাস না? সারাজীবন অন্যদের খেলায় রেখেই যাবি আর তোর কি হবে?’

শামিমাঃআমি ঠিক আছি।

সাকিবঃচুপ আর একটা কথাও বলবি না।

শামিমাঃতুমি এভাবে বলছ কেন? সুমিকে খুজে পাওয়া যাচ্ছেনা। ও আমার বোন। ওর কথা তো ভাবতে হবেই।

সাকিবঃআমরা সবাই তো আছি। তোকে এত চিন্তা করতে হবে না। তুই আরাম কর। একদম উঠবি না। এই কেবিনের বাইরে এক পা যদি ফেলিস তাহলে আমার থেকে খারাপ আর কেউ হবে না মনে রাখিস।

১৮.
ললিত তার বন্ধুদের সাথে বসে আড্ডা দিচ্ছিল। ললিতের এক বন্ধু আমান বলে,
‘কাল রাত কিন্তু খুবই ভালো হয়েছে। সেই মজা হয়েছে। যাই বলিস ঐ সুমি কিন্তু সেই ছিল।’

ললিতঃআমার পছন্দ খারাপ হতে পারে না। তবে ওর যায়গায় শামিমা থাকলে আরো বেশি ভালো হতো।

আমানঃকোন ব্যাপার না। ওটাকেও একদিন না হয় ধরে আনব।

সবাই সমস্বরে হেসে ওঠে। এখানে যেন এখন শ’য়তানের মেলা বসেছে৷ ললিতের বন্ধুদের মধ্যে মিরাজ নামের একজন ছিল। সে খুব ভিতু ছিল।

মিরাজঃতোরা যাই বল আমার খুব ভয় হচ্ছে। ঐ সুমি মেয়েটা যদি আমাদের ব্যাপারে পুলিশকে সব বলে দেয়।

আমানঃএটাও তো তুই ভুল বলিস নি।

ললিতঃতোরা চিন্তা করিস না।ঐ মেয়েকে এমন ভয় দেখিয়েছে যে সাহস দেখাবে না।

মিরাজঃযদি দেখায়?

ললিতঃআমার উপর ভরসা রাখ। আমার কথা উপেক্ষা করার উপায় ওর নাই। যদি করে তাহলে ওর সাথে আরো খারাপ কিছু করবো।

কেউ একজন এসে ললিতকে মা’রতে শুরু করে। ললিত পিছনে ফিরে শাহাদাতকে দেখে।

শাহাদাতঃবল আমার বোন কোথায়?

ললিতঃআমি কিভাবে জানব?

শাহাদাতঃচুপ। আমি জানি তুই আমার বোনের সাথে খারাপ কাজটা করেছিস তোকে আমি ছাড়ব না।

ললিতঃকি করবি তুই? তুই একা আর আমাদের দেখ আমরা কতজন।

‘শাহাদাত একা আসেনি আমি ওর সাথে এসেছি।’

সাকিব এসে ললিতকে মা’রতে শুরু করে। সাথে সাকিনের ভাড়া করা অনেক লোক ছিল।

সাকিব ললিতকে বলে,
‘তুই সত্যি করে সব বল। সুমি কোথায়?’

ললিতঃআমি জানি না।

সাকিব ললিতকে আবার মা’রতে যাবে তার আগেই,,,,,
চলবে….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে