#হাজার_ফুলের_মাঝে_একটি_গোলাপ
#পর্বঃ৮
#লেখিকাঃদিশা মনি
ললিত বিকট হেসে বলে,
‘আমরা সব বন্ধুরা মিলে আজ তোকে ভো’গ করব।’
সুমি ভয় পেয়ে যায়। ললিতের কাছে অনুরোধ করে,
‘তুমি প্লিজ এরকম করো না ললিত। আমি তোমাকে ভীষণ ভালোবাসি। তুমি আমার এত বড় সর্ব’নাশ করো না।’
ললিত যেন আজ নিজের মধ্যে নেই। সে সুমির কোন কথা শোনে না। ললিতের সব বন্ধুরাও আসতে থাকে। সুমি সবার কাছে অনুরোধ করতে থাকে তারা যেন ললিতের এতবড় ক্ষতিটা না করে। তারা কেউই সুমির কথা কানে তোলে না। হিং’স্র হায়’নার মতো সবাই মিলে ঝা’পিয়ে পড়ে সুমির উপর। সুমি এতগুলো ছেলের সাথে পেরে ওঠেনা। নিজেকে বাঁচানোর সর্বাত্মক চেষ্টা করেও সুমি ব্যর্থ হয়। শেষে নেতিয়ে পরে। সারারাত পশুগুলো সুমির উপর অ’মানুষের মতো অত্যা’চার করে। সবাই মিলে দলবদ্ধ তাকে ধ’র্ষ’ণ করে। সেই অভিশপ্ত রাত সাক্ষী হয় একটি মেয়ের করুণ পরিণতির।
১৫.
শামিমা চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে একমনে কিছু ভাবছিল। পিছনে কারো উপস্থিতি টের পেয়ে যায় শামিমা।
সাকিবঃকি করছিস এখানে?
শামিমাঃচা খাচ্ছি।
সাকিবঃচা খেতে বুঝি খুব ভালো লাগে
শামিমাঃজ্বি।
শামিমার এরকম ব্যবহার সাকিবের তেমন ভালো লাগে না। শামিমা যেন তাকে ইগনোর করতে চাচ্ছে। সাকিব শামিমাকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই শামিমা উঠে চলে যায়।
শাহনাজ পারভীনের চি’ৎকার শুনে সবাই ছুটে আসে।
আলতাফ উদ্দিনঃকি হয়েছে শাহানাজ? এভাবে চিৎকার করছ কেন?
শাহানাজঃহাসপাতাল থেকে কল করেছিল,,,, সুমি,,,,
শামিমাঃকি হয়েছে সুমির?
আলতাফ উদ্দিনঃঐ মেয়ের আবার কি হলো?
শাহানাজঃমেয়েটা হাসপাতালে ভর্তি। জানি না কি হয়েছে। চলো আমরা যাই।
আলতাফ উদ্দিন মেয়ের উপর রাগ করে ছিলেন। তাই তিনি বলেন,
‘সুমি নিজের ভাগ্য নিজে বেছে নিয়েছে। সুমি কিরকম একটা অন্যায় কিরকম হারাম কাজ করে ফেলেছে সেটা তোমরা জানো না? এখন যার কাছে গিয়েছে সেই ওকে দেখে রাখুক। ললিত কোথায়? আমাদের কেন যেতে হবে?’
শামিমাঃএসব তুমি কি বলছ আব্বু? সুমি আমার নিজের বোন। ওর এরকম অবস্থা আমাদের ওর পাশে থাকা উচিত।
আলতাফ উদ্দিনঃসুমি তোর সাথে এত অন্যায় করল আর তুই ওর হয়েই কথা বলবি?
শামিমাঃহাজার হোক সুমি তো আমারই বোন।
আলতাফ উদ্দিন রাজি হন। সবাই মিলে বেরিয়ে যায় হাসপাতালের উদ্দ্যেশ্যে।
একজন নার্স এসে বলে,
‘আপনারা কি সুমি আক্তারের বাড়ির লোক।’
শামিমাঃজ্বি।
নার্সঃআপনারা এত দেরি করলেন কেন আসতে? রোগীর অবস্থা একদম ভালো না। প্রচুর ব্লাড লস হচ্ছে। আমাদের এখনই ও নেগেটিভ রক্তের প্রয়োজন। কিন্তু কোথায় এই রক্ত পাওয়া যাচ্ছে না। এই রক্তটা তো সেরকম পাওয়াও যায়না।
শামিমাঃআমার রক্ত ও নেগেটিভ। আমি রক্ত দিতে চাই।
আলতাফ উদ্দিনঃকি বলছিস তুই শামিমা? তোর দুদিন আগেই কত রক্ত বের হলো লা’ঠির আঘা’তে। আর এখন তুই কিভাবে রক্ত দিবি?
শামিমাঃসুমির প্রাণ বাচানোটাই এখন সবথেকে বেশি প্রয়োজন আমাদের। আমার কথা ভেবো না আব্বু আমি ঠিক আছি।
শামিমা ভেতরে যায় রক্ত দিতে৷ বাইরে সবাই অপেক্ষার প্রহর গুণতে থাকে। সাকিব আর শাহাদাত একসাথে চলে আসে হাসপাতালে। তারা দুজনে এসে প্রথমে সুমির খোঁজ খবর নেয়। শাহাদাত হাসপাতাল জুড়ে ললিতকে খুঁজতে থাকে। কিন্তু কোথাও কোন খোঁজ পায়না। সাকিব একজন নার্সকে জিজ্ঞেস করে,
‘আমাদের পেশেন্টকে এখানে কে এনেছে?’
নার্সঃওনাকে তো নর্দমার কাছে রক্তাক্ত অবস্থায় পাওয়া গেছে৷ হসপিটালে আনার পর উনি তেমন কিছু বলেন নি। শুধু ওনার পরিবারের সাথে যোগাযোগ করার জন্য ফোন নম্বর দিয়েছে।
শাহাদাতঃওর এরকম অবস্থা হলো কিভাবে?
নার্সঃসেটা তো আমরা জানি না আর বলতেও পারব না। রোগী সুস্থ হলে তখন সব জানা যাবে।
শাহাদাতঃআমাদের এখনই পুলিশকে সব জানানো উচিৎ। আমার মনে হয় ললিতই এমন করেছে।
আলতাফ উদ্দিনঃশান্ত হও। আমাদের আগে পুরো পরিস্থিতি ভালো ভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। সুমির সুস্থ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করো। প্রমাণ ছাড়া কিছুই করা যাবেনা।
শাহাদাতঃপ্রমাণের কি প্রয়োজন আব্বু? এখানে তো স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে সুমির এইসব ঘটনার পেছনে ললিতেরই হাত আছে।
আলতাফ উদ্দিনঃসেটা আমিও উপলব্ধি করতে পাচ্ছি। তাছাড়া আইন প্রমাণ ছাড়া অন্ধ। তাই আমি বলব ধৈর্য ধরতে।
১৬.
অনিশ্চয়তায় একটি দিন পেরিয়ে যায়৷ সুমির অবস্থা এখন আগের থেকে কিছুটা ভালো। তবে এখনো জ্ঞান ফেরেনি। ডাক্তার সুমির পরিবারকে জানিয়েছে সুমিকে ধ’র্ষ’ণ করা হয়েছে। সংবাদটা শুনে সবাই হতবাক হয়ে যায়। শাহানাজ পারভীন আহাজারি করে কাদতে থাকে। আলতাফ উদ্দিনও পরিস্থিতির ভয়াবহতায় চুপসে যান। শাহাদাতের অবস্থাও ভালো না। এরমধ্যে শামিমা চেষ্টা করছে নিজেকে শক্ত রাখার। তাকেই যে এখন সবকিছু সামলাতে হবে। সাকিব অনেক যায়গায় ছুটোছুটি করছে। পুলিশও চলে এসেছে তদন্তের জন্য। শাহাদাত পুলিশকে ললিতের কথা জানিয়ে দেয়। সে বলে,
‘আমি মনে করি ঐ ললিতই আমার বোনের সাথে এমন করেছে।’
একজন পুলিশ বলে,
‘কে এই ললিত? কি সম্পর্ক আপনাদের সাথে তার? আপনারা কি তাকে চেনেন?’
শাহাদাতঃললিত হলো সুমির স্বামী। ছেলেটা মোটেও ভালো নয়। ওর চরিত্রের দো’ষ আছে। ওর সাথে আগে শামিমার বিয়ে হয়েছিল তারপর,,,,
পুলিশঃউনি কি জোর করে সুমিকে বিয়ে করেছেন?
শাহাদাতঃনা সুমির সম্মতিতেই বিয়েটা হয়েছে। কিন্তু,,,,
পুলিশঃতাহলে তো কোন প্রশ্নই নেই। কেউ নিশ্চয়ই নিজের স্ত্রীকে ধ’র্ষ’ণ করবে না।
শাহাদাত আর কিছু বলতে পারে না। পুলিশ সবার সাথে কথা বলে চলে যায়।
শামিমা তার মা বাবাকে ফেরত পাঠিয়ে দেয়। সারারাত জেগে থেকে তাদের শরীর বেশি ভালো ছিল না। শামিমার নিজের অবস্থাও ভালো না। কিন্তু সে নিজের কথা না ভেবে বাকি সবার কথা ভাবে।
শামিমা নিজের কথা না ভাবলেও সাকিব তো আছে তার কথা ভাবার জন্য। সাকিব শামিমার কাছে গিয়ে বলে,
‘সারারাত জেগেছিলি। কিছু তো খাসনি। চল কিছু খেতে চল।’
শামিমাঃআমার খিদে নেই সাকিব ভাই।
সাকিবঃচুপ আর একটা কথাও বলবি না। বেশি কথা বললে মাথায় একটা গা’ট্টা মা’রব।
শামিমাঃআচ্ছা ঠিক আছে চলুন।
সাকিব আর শামিমা একসাথে খেতে চলে যায়।
সাকিব শামিমাকে একটু রেস্টুরেন্টে নিয়ে যায় খেতে। শামিমা যখন তৃপ্তি করে খাচ্ছিল তখন সাকিব মনে মনে বলে,
‘আমি চিরকাল তোকে এভাবেই শান্তিতে থাকতে দেখতে চাই শামিমা।’
শামিমা সাকিবকে নিজের দিকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে লজ্জা পেয়ে যায়। সাকিব সেটা বুঝতে পেরে বলে,
‘এভাবে লজ্জা পেলে চলবে না। আজীবন তো আমার সাথেই থাকতে হবে। তখন এত লজ্জা পেলে চলবে?’
শামিমার লজ্জা যেন আরো বেড়ে যায়।
সুমির জ্ঞান ফিরে আসে। সে চারিদিকে অন্ধকার দেখছিল। কালকের ভয়াবহ রাতের ঘটনাটা যেন সে কোনভাবেই ভুলে যেতে পারছিল না। নিজের উপরই রাগ হচ্ছে তার। ললিতকে অন্ধভাবে বিশ্বাস করে নিজের বোনের ক্ষতি করার শাস্তি যে তাকে পেতেই হতো।
সুমির জ্ঞান ফেরার কথা শুনে পুলিশেরা আসে। তারা জিজ্ঞেস করে,
‘আপনার সাথে এতবড় অন্যায় কে করেছে মিস সুমি?’
সুমি বলে,,,,,,,
চলবে….