হাজার ফুলের মাঝে একটি গোলাপ পর্ব-০৬

0
651

#হাজার_ফুলের_মাঝে_একটি_গোলাপ
#পর্বঃ৬
#লেখিকাঃদিশা মনি

সুমি শামিমার কাছে এসে বলে,
‘আমি এসে গেছি আপু তোর সতীন হয়ে।’

হঠাৎ এরকম কিছু ঘটে যাবে শামিমা সেটা কল্পনাও করতে পারে নি। ললিতের প্রতি ঘৃণায় তার শরীর রি রি করছিল। যন্ত্রণায় ঝিম হয়ে যাওয়া কন্ঠে হঠাৎ যেন সে অদ্ভুত শক্তি পায়। শামিমা বেশ জোরালোভাবেই বলে,
‘এটা কি করলি তুই সুমি? জানিস না ইসলামে এক বোন বেচে থাকতে আরেক বোনকে বিয়ে করা সম্পূর্ণ হারাম। তুই কিভাবে এরকম হারাম কাজ করলি? আল্লাহ কিন্তু এরজন্য তোকে অবশ্যই শাস্তি দেবে। আর ল আপনি এটা কি করলেন? আমার বোনকে বিয়ে করে নিলেন। আমার আর বিন্দুমাত্র ইচ্ছে নেই এই বাড়িতে থাকার। আমি আপনাকে তালাক দিতে চাই। আর সুমি তোকেও বলি সাবধান হয়ে যা। জীবনে অনেক ভুল অনেক পাপ করেছিস। আর পাপ করিস না। আল্লাহর দেয়া শাস্তি কিন্তু খুবই কঠিন।’

সুমি শামিমার কথায় কোন পাত্তা না দিয়ে দায়সারাভাবে বলে,
‘পাপ আমি না তুই করেছিস। তুই আমার থেকে আমার ভালোবাসা আমার ললিতকে কেড়ে নিয়েছিস। আমি আমার হক আদায় করে নিয়েছি শুধু। এখন তুই যা এই বাড়ি থেকে। লজ্জা থাকলে আর কখনো ললিতের জীবনে ফেরার চেষ্টা করবি না।’

সুমির কথা শুনে শামিমা বলে,
‘যত যাই হোক তোরা দুজন একটা হারাম কাজ করেছিস। আল্লাহ এর বিচার একদিন ঠিকই করবে দেখিস। আর একটা কথা শুধু বলব আল্লাহ তোদের হেদায়েত দিক। বিশেষ করে তোকে নিয়ে আমি খুবই চিন্তিত। ভুল মানুষকে ভালোবেসে তুই এত পাপ করে ফেললি। না জানি এর শাস্তি কত ভয়াবহ হবে।’

ললিত শামিমার দিকে ডিভোর্স পেপার ছু’রে দিয়ে বলে,
‘জলদি ডিভোর্স দেয় আমার জীবন থেকে দূর হও।’

শামিমাঃআপনার সাথে যখন আমার বোনের বিয়ে হয়ে গেছে তখন আমার কোন রুচি নেই এই সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার। আমি সই করে দিচ্ছি।

শামিমা কাপা কাপা হাতে ডিভোর্স পেপারে সই করে দেয়। ললিত ডিভোর্সে পেপারটা হাতে তুলে নেয়। সুমি শামিমাকে বিছানা থেকে জোর করে টেনে তুলে তারপর ধা’ক্কা মে’রে বাড়ির বাইরে ফেলে দেয়।

এমনিতেই লাঠির আঘা’তে শামিমার শরীরের অবস্থা ভালো ছিলনা। তার উপর এই ঘটনার পর মানসিক আর শারীরিকভাবে আরো ভে’ঙে পড়ে শামিমা। শামিমা শুধু আল্লাহর কাছে একটুকু শক্তি চাইছিল যাতে নিজের পায়ে হেটে বাড়িতে উঠে পড়ে। লাঠির আ’ঘাতে শামিমার পা দিয়েও রক্ত বের হয়েছিল। পায়ে এখনো যথেষ্ট ব্যাথা। অনেক কষ্টে উঠে দাড়িয়ে হাটা শুরু করে।

১১.
শামিমা অনেক কষ্টে একটি রিক্সাতে করে বাড়িতে ফিরে আসে। হাতে কোন টাকা ছিলনা তাই নিজের কানের সোনার দুলটাই সে খুলে দিতে চায় রিক্সাওয়ালাকে। রিক্সাওয়ালা লোকটার এই মেয়েটার প্রতি বেশ মায়া হয়। কতটা অসহায় হলে একটা মেয়ে এমন করতে পারে। তাই লোকটি শামিমাকে আটকে বলে,
‘আমারও তোমার বয়সী একটা মেয়ে আছে। আমি বুঝি মেয়েদের কত কষ্ট। তোমাকে দেখেই বুঝেছি তোমার অবস্থা কতটা বিধ্বস্ত। এমতাবস্থায় তোমার থেকে এই দুলটা আমি নিতে পারব না। যাও তুমি আমার লাগবে না কিছু।’

কৃতজ্ঞতায় শামিমার চোখে পানি চলে আসে। এই পৃথিবীতে এত এত অমানুষের ভিড়ে এমন অনেক ভালো মানুষও রয়েছে। তাদেরও দেখা মেলে এই শহরের আনাচে কানাচে।

শামিমা একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে চলে আসে নিজের বাড়ির দিকে। বাড়িতে গিয়ে কি করবে কি বলবে শামিমা সেটা জানে না।

শাহনাজ পারভীন, আলতাফ উদ্দিন, শাহাদাত সবাই চিন্তায় প্রহর গুনছে। বাড়ির দুটো মেয়ে নিখোঁজ এটা চিন্তারই বিষয়। অনেক খুঁজেও শামিমাকে পায়নি শাহাদাত। আবার এখন সুমিরও খোঁজ নেই। দুশ্চিন্তাগ্রস্ত বাড়ির প্রত্যেকটা মানুষ। আয়েশা বেগমও নাতনিদের জন্য দুশ্চিন্তা করছেন।

এরমাঝে কলিং বেলের শব্দ যেন তাদের দুজনের মনেই অদ্ভুত এক শান্তি এনে দেয়। শাহানাজ পারভীন হন্তদন্ত হয়ে ছুটে গিয়ে দরজা খুলে দেন। চোখের সামনে শামিমাকে বিধ্বস্ত অবস্থায় দেখে তার চোখ দিয়ে অজান্তেই জল গড়িয়ে পড়ে। যতই হোক মায়ের মন। মেয়ের উপর যতই রাগ দেখান না কেন তিনি তো শামিমাকে খুব ভালোবাসেন। শামিমাকে আম্মু বলে জড়িয়ে ধরতেই শাহানাজ পারভীনের শক্ত হৃদয় মূহুর্তেই গলে পানি হয়ে যায়। তিনি শামিমাকে জিজ্ঞেস করেন,
‘কি হয়েছে শামিমা? তোর এই অবস্থা কিভাবে হলো?’

শামিমা কোন জবাব দিতে পারে না। আর ধকল নেওয়ার মতো শক্তি তার শরীরে যে ছিলনা। মায়ের কোলেই সকল ক্লান্তি বিসর্জন দিয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে শামিমা।

শাহানাজ পারভীন মেয়ের এইরকমই অবস্থা দেখে চিৎকার চেচামেচি শুরু করেন। তার চিৎকারের শব্দে বাকি সবাই ছুটে আসে৷ শামিমাকে এই অবস্থায় দেখে বাকি সবার অবস্থাও একইরকম হয়। শাহাদাত বোনের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,
‘কি হয়েছে আমার বোনটার? কে করেছে ওর এই অবস্থা? যেই করেছে তাকে আমি ছাড়ব না। জ্যান্ত ক’বর দেব।’

শামিমার যখন জ্ঞান ফেরে সে তার চোখের সামনে শাহানাজ পারভীনকে দেখতে পায়। শাহানাজ পারভীনও যেন শামিমার জ্ঞান ফেরার অপক্ষাতেই ছিলেন।

শাহানাজ পারভীনঃকি হয়েছে তোর সাথে? সব আমায় বল।

শামিমা তখন পুরো ঘটনাটা তার মাকে জানায়। সব শুনে শাহানাজ পারভীনের শরীরে যেন আগু’ন জ্ব’লে যায়। তিনি উত্তেজিত হয়ে বলেন,
‘সুমি কি করে করতে পারল এরকম একটা কাজ? আর ললিত ঐ ছেলেটাকে তো আমি মে’রেই ফেলব। আমার মেয়েটার উপর এত নির্মম অত্যাচার করার সাহস কোথায় পেল সে?’

শাহানাজ পারভীনের চিৎকার শুনে আলতাফ উদ্দিন, শাহাদাত ওরাও চলে আসে। তারা যখন সব শুনে তখন তাদের রক্তও গরম হয়ে যায়। শাহাদাত পাশে থাকা একটি ফুলদানি ছু’রে মে’রে বলে,
‘ললিত কু’ত্তার বাচ্চাটাকে না মা’রা পর্যন্ত আমি শান্তি পাবোনা।’

১২.
ললিত হাসছে প্রাণ খুলে হাসছে। কারণ তার হাতে যে পেয়ে গেছে অতি কাঙখিত বস্তুটি। লোভে তার নেত্রযুগল জ্বলজ্বল করতে থাকে। ললিত এখন আলতাফ উদ্দিনের স্থাবর অস্থাবর সব সম্পত্তির মালিক। কথাটা ভেবে আত্মতৃপ্তিতে মুগ্ধ সে। সুমিকে নিজের বাহুডোরে আবদ্ধ করে বলে,
‘তুমি খুব ভালো কাজ করেছ জানু। এবার আমরা যাবো তোমাদের বাড়ি। আজ থেকে ওটা আমাদের সম্পত্তি।’

ললিতের বাবা মাও বেশ খুশি। তারা নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের সেখানে আলতাফ উদ্দিন সেরকম ধনী না হলেও তার কাছে বেশ ভালোই সম্পত্তি রয়েছে। সেগুলো যে এখন তাদের ছেলের সেটা ভাবতেই ভালো লাগছে তাদের।

ললিত সুমিকে নিয়ে চলে আসে তাদেরও বাড়িতে। আলতাফ উদ্দিন, শাহাদাত সবাই রাগে তেড়ে আসে ললিতের দিকে। শাহাদাত বিরতিহীন ভাবে মা’রতে থাকে ললিতকে। ললিতও পালটা আঘাত করে। ললিত একসময় কাগজ দেখিয়ে বলে এই বাড়ি এখন থেকে আমার। শুধু তাই নয় আলতাফ উদ্দিনের সবকিছুই আমার নামে। বাইরে হট্টগোল শুনে শামিমাও বাইরে চলে আসে। ললিতের মুখে এসব কথা শুনে তার পায়ের নিচের মাটি সরে যায়। সোজা এসে ললিতের গালে থা’প্পর মা’রে শামিমা। ললিত আকস্মিক এই ঘটনায় রেগে যায়। শামিমাকে উদ্দ্যেশ্য লরে বলে,
‘এত তেজ দেখিয়ে লাভ নেই। এই বাড়িটা এখন আমার। আমি চাইলে তোকে এক্ষুনি এই বাড়ি থেকে বের করে দেব।’

শামিমাঃকি করবি? আমি আল্লাহ ছাড়া আর কাউকে ভয় পাইনা।

ললিত শামিমাকে টেনে নিয়ে যায় বাইরে। তারপর তাকে ধা’ক্কা দিয়ে বলে,
‘বেরিয়ে যা আমার বাড়ি থেকে।’

হঠাৎ কেউ এসে তার শক্ত বাহুতে আগলে ধরে শামিমাকে। শামিমা অপরিচিত লোকটির দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। এই অপরিচিত লোকটিকে দেখে কেন জানি তার মনে হচ্ছে লোকটি তার অনেক দিনের চেনা কেউ।
চলবে….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে