#হাজার_ফুলের_মাঝে_একটি_গোলাপ
#পর্বঃ৫
#লেখিকাঃদিশা মনি
সুমি ললিতকে বলে,
‘এই পেপার আমি তোমাকে দিতে পারি কিন্তু তার আগে তোমায় আমাকে বিয়ে করতে হবে।’
ললিত কিছুক্ষণ ভেবে বলে,
‘আমি তোমাকে বিয়ে করবো। তার আগে আমায় তো শামিমাকে ডিভোর্স দিতে হবে। এরজন্য তো সময়ের প্রয়োজন। তুমি কি আমায় বিশ্বাস করোনা? আমি সত্যি তোমায় ভালোবাসি সুমি। আপাতত পেপারটা আমাকে দাও আমি সত্যি বলছি আমি তোমায় বিয়ে করব।’
সুমিঃআমি কোন কথা শুনতে চাইনা। আমাকে বিয়ে না করা পর্যন্ত তুমি এই পেপার হাতে পাবেনা।
ললিত ভাবল সুমির কাছ থেকে পেপারটা কেড়ে নেবে। তখনই সুমি বলে,
‘ভুলভাল কিছু করার চেষ্টাও করবে না। এটা আসল না নকল পেপার। আসল পেপারটা আমি লুকিয়ে রেখেছি। তাই ভালো হবে যদি তুমি আমার সব কথা শোন।’
ললিতের কাছে আর কোন উপায় থাকে না। ললিতকে সুমির সিদ্ধান্ত মেনে নিতেই হয়।
৯.
মাগরিবের নামাজ আদায় করে সবেমাত্র উঠছিল শামিমা। ললিত তখন এসে শামিমাকে বলে,
‘চলো আমরা কোথাও ঘুরতে যাবো।’
শামিমা ললিতের কথা শুনে চমকে যায়। ললিতের হঠাৎ এই পরিবর্তন শামিমা মেনে নিতে পারছিল না। শামিমা ললিতকে কোন উত্তর না দিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিল। ললিত পেছন থেকে গিয়ে শামিমার হাত টেনে ধরে। শামিমা নিজেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার ব্যর্থ চেষ্টা করে। ললিত জোরপূর্বক শামিমাকে বাইরে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। শামিমা প্রথমে ললিতকে আটকানোর চেষ্টা করলেও পরে নিজে থাকে ললিতের সাথে যেতে রাজি হয়। কারণ তার খুব জানতে ইচ্ছা করছিল ললিত তাকে কোথায় নিয়ে যায়।
ললিত শামিমাকে তার নিয়ে চলে যায় তার নিজের বাড়িতে। শামিমাকে আসতে দেখে ললিতের মা লুৎফা মুখ বাকিয়ে বলেন,
‘এই মেয়েটাকে কেন নিয়ে এলি এই বাড়িতে? এক্ষুনি নিয়ে যা ওকে।’
ললিতঃআম্মু তুমি এত অধৈর্য হয়ে যেও না। আমি এই মেয়েটাকে এমনি আনিনি। তোমাকে ওকে সামলাতে হবে।
লুৎফাঃতোর কথা আমি বুঝতে পারছি না। এমনি তো এভাবে হঠাৎ করে বিয়ে করে নিলি এখন আবার বলছিস তোর বউকে সামলাতে।
ললিতঃআমি যা করছি ভালোর জন্যই করছি। আমার কথাটা শোন তো। এই মেয়েকে আজ সারাদিন আটকে রাখতে হবে। বলো পারবে?
ললিতের কথা শুনে শামিমা বুঝতে পারে সে অনেক বড় একটা ভুল করে ফেলেছে ললিতের সাথে এখানে এসে। ব্যাপারটা বুঝতে পেরে শামিমা পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। তখন ললিত শামিমার হাত টেনে ধরে বলে,
‘তোমার আর পালানোর কোন পথ নেই। তোমাকে এখন এখানেই থাকতে হবে শামিমা।’
শামিমা ললিতকে সাবধান করে বলে,
‘আমাকে আটকে রাখার মতো ভুল করবেন না। আমি বুঝতে পারছি আপনার মন খারাপ কিছু ঘুরছে। আপনি জীবনে অনেক পাপ অনেক ভুল করেছেন আর ভুল করবেন না। আপনাকে আমি বলছি এখনো সময় আসে দ্বীনের পথে ফিরে আসুন। আল্লাহ ছাড় দেন কিন্তু ছেড়ে দেন না।’
ললিতঃআমি কোন উপদেশ শুনতে চাইনা। তাড়াতাড়ি এখানে সই করে দে।
শামিমাঃকি এটা?
ললিতঃআমি তোকে কৈফিয়ত দেওয়ার জন্য এখানে বসে নেই। ভালোয় ভালোয় সই কর নাহলে,,,,
শামিমা ললিতের হাতে পেপারটা নিয়ে দেখে এটা দ্বিতীয় বিয়ের অনুমতিপত্র। শামিমা ললিতকে জিজ্ঞেস করে,
‘কাকে বিয়ে করতে চান আপনি?’
ললিত চোখ রাঙিয়ে বলে,
‘সেটা তোকে জানতে হবে না। তোকে সই করতে বলেছি তুই সই কর।’
শামিমা বুদ্ধিমতী। আজ সুমি তাকে বলছিল, ‘আমি চ্যালেঞ্জ জিততে চলেছি।’ সেই সাথে ললিতও তার কাছে দ্বিতীয় বিয়ের অনুমতি চাইছে। তাই শামিমা খুব সহজের বুঝে যায় ললিত সুমিকে বিয়ে করতে চলেছে। ব্যাপারটা বুঝতে পেরে শামিমা সোজাসুজি বলে দেয়,
‘আমি সই করব না। কি করবেন করুন।’
ললিতের মাথা গরম হয়ে যায়। ললিত তখন বড় একটা লা’ঠি এনে শামিমাকে মা’রতে শুরু করে। লুৎফা দাড়িয়ে দাড়িয়ে সবকিছু দেখছিল। কিন্তু নিজের ছেলেকে আটকানোর কোন প্রয়োজনই তিনি মনে করেন না।
ললিত শামিমাকে বেধরক মা’রতে থাকে। শামিমা আল্লাহকে ডাকছিল আর এই যন্ত্র’ণা থেকে মুক্তি চাইছিল। একসময় ক্লান্ত হয়ে ললিত থেমে যায়। শামিমা রক্তা’ক্ত অবস্থায় পড়ে থাকে।
শামিমার অবস্থা এত খারাপ হয়ে গিয়েছিল যে সামান্য নড়তেও পারছিল না।
শামিমার এই অবস্থা দেখেও ললিতের মনে একটুও দয়া হয়না। ললিত শামিমার হাত ধরে জোর করে টিপসই নিয়ে নেয়। শামিমা নির্বাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। সামান্য কথা বলার শক্তিটুকুও শামিমার ছিলনা।
ললিত লুৎফাকে বলে,
‘আম্মু এই মেয়েটাকে আমার রুমে গিয়ে রাখো। দেখো যাতে পালিয়ে যেতে না পারে।’
লুৎফা মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায়।
১০.
সুমি খুব সুন্দর করে সাজছিল। আজ যে ললিত তাকে বিয়ে করার কথা দিয়েছে। সুমিকে এভাবে সাজতে দেখে শাহানাজ পারভীন বলেন,
‘কিরে এভাবে সাজছিস কেন? আজ কি কোথাও ঘুরতে যাওয়ার কথা ভাবছিস? শোন এখন কিন্তু অনেক রাত হয়েছে। এত রাতে বাড়ির বাইরে যাওয়া কিন্তু তোর আব্বু পছন্দ করেন না।’
সুমি ভ্রু কুচকে বলে,
‘আব্বুর যত অভিযোগ তো আমাকে নিয়ে। আপু যখন রাতে বাইরে গিয়েছিল তখন তো কিছু বলেনি।’
‘শামিমা একা যায়নি আমায় সাথে নিয়ে গিয়েছিল।’
কারো গলার আওয়াজ শুন্তে সুমি পিছনে ফিরে তাকায়। তার বড় ভাই শাহাদাত এসেছে। এমনিতে তো সে হোস্টেলে থাকে তবে মাঝে মাঝে বাড়িতে আসে।
শাহাদাত এসেই শাহানাজ পারভীনকে বলে,
‘আম্মু শামিমা কোথায়? ওকে ওর রুমে দেখছি নাতো? ওকে না পেয়ে এখানে এলাম।’
শাহানাজ পারভীন ভাবলেশহীন ভাবে বলেন,
‘তখন তো দেখলাম নিজের স্বামীর সাথে কোথাও যাচ্ছে। এখনো ফেরেনি তার মানে।’
শাহাদাতঃতোমরা কিভাবে শামিমাকে ঐ খারা’প ছেলেদের সাথে যেতে দিলে? ও যদি শামিমার কোন ক্ষ’তি করে?
সুমিঃতুই চুপ কর ভাইয়া। আপুকে এত ভালো মানুষ ভাবিস না। আপুই ললিতকে ফাসিয়েছে ললিত আপুকে নয়।
শাহাদাতঃতুই একটু বেশি বাড়াবাড়ি করছিস সুমি। ভুলে যাবিনা আমি তোর বড় ভাই।
কথাটা বলে শাহাদাত বেরিয়ে পড়ে শামিমাকে খুঁজতে। বোনটাকে নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসে শাহাদাত। বোনকে নিয়ে কোনরকম ঝুঁকি নিতে সে নারাজ।
সুমির ফোনে তখন ললিতের ম্যাসেজ আছে। ম্যাসেজটা পড়েই সুমির মুখে হাসির দেখা মেলে। সুমি শাহানাজ পারভীনকে বলে,
‘আম্মু অনেক রাত হয়ে গেছে আব্বু খেতে আসবে। তাছাড়া ভাইয়াও তো খাবে। তুমি যাও রান্না করো।’
সুমির কথায় শাহানাজ পারভীন বলেন,
‘ঠিকই তো। আমি সব ভুলে গেছিলাম। আজকাল এত টেনশনে থাকি যে কিছুই মনে থাকে না। আমি যাচ্ছি।’
শাহানাজ পারভীন চলে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর সুমি সুযোগ বুঝে বেরিয়ে আসে।
নিজের বন্ধুদের সাথে কাজী অফিসের সামনে অপেক্ষা করছিল ললিত। সুমিকে আসতে দেখেই ললিত তার বন্ধু আমানকে বলে,
‘সব ঠিকঠাক তো?’
আমানঃসব একদম পারফেক্ট আছে।
সুমি ললিতের কাছে এসে বলে,
‘আমায় কেমন লাগছে?’
ললিতঃভালোই। বউ সাজলে আরো ভালো লাগবে।
সুমি লজ্জায় লাল হয়ে যায়। ললিত সুমিকে বলে,
‘সবকিছু আমি রেডি করেই রেখেছি। তুমি যাও গিয়ে বউ সেজে এসো।’
সুমি তাই করে।চটজলদি চলে যায় বউ সাজতে।
সুমি বউ সেজে আসার পর ললিত তাকে নিয়ে কাজী অফিসে গিয়ে বিয়ে করে নেয়।
শামিমা এখনো যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। ললিত খুব বাজেভাবে মে’রেছে তাকে। এমতাবস্থায় শামিমার জন্য আরো চিন্তার বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে সুমি। না জানি ললিত তার বোনকে কি করবে।
শামিমা এসব নিয়েই ভাবছিল তখন ললিতের হাত ধরে সুমি তার কাছে এসে বলে,
‘আমি এসে গেছি আপু তোর সতীন হয়ে।’
চলবে….