#হাজার_ফুলের_মাঝে_একটি_গোলাপ
#পর্বঃ১১
#লেখিকাঃদিশা মনি
সাকিব-শামিমার বিয়ের সময় পুলিশ এসে উপস্থিত হয়। পুলিশ এসেই বলে,
‘আমরা মিস শামিমাকে গ্রেফতার করতে এসেছি।’
আলতাফ উদ্দিনঃমানে? এসব কি বলছেন আপনারা? কেন গ্রেফতার করবেন আমার মেয়েকে? কি অপরাধ ওর?
একজন পুলিশ ইন্সপেক্টর বলেন,
‘আপনারা নিশ্চয়ই জানেন গত কয়েকদিনে একজন সিরিয়াল কি’লার অনেকগুলো খু’ন করেছে এবং তাদের সবার পাশে একটি গোলাপ ফুল,সাথে রক্ত হাজার ফুলের মাঝে গোলাপ লেখা হয়েছে।’
শাহাদাতঃজানি কিন্তু এর সাথে শামিমার কি সম্পর্ক?
পুলিশ অফিসারঃআমরা সন্দেহ করছি মিস শামিমাই সেই সিরিয়াল কি’লার।
পুলিশের কথায় যেন বাড়ির পরিস্থিতি পুরো বদলে যায়। কারো বিশ্বাসই হচ্ছিল না এই কথা। শামিমা নিজেও যথেষ্ট অবাক হয়েছে এই কথা শুনে। এরমাঝে সাকিব বলে ওঠে,
‘ আপনাদের কোথাও কোন ভুল হচ্ছে শামিমা এসবের সাথে জড়িত থাকতে পারে না। আমি শামিমাকে চিনি। আপনারা কোন প্রমাণ ছাড়া শুধুমাত্র সন্দেহের বশে এরকম ভাবে কাউকে গ্রেফতার করতে পারেন না। আর তাছাড়া আজ আমাদের বিয়ে। তাই আজকের দিনে কোন অশান্তি হোক সেটা আমি চাইনা।’
পুলিশ অফিসারঃআমাদের কাছে প্রমাণ আছে বলেই আমরা পদক্ষেপ নিয়েছি।আমরা প্রমাণ ছাড়া কোন কাজ করিনা।
শাহাদাতঃকি প্রমাণ আপনাদের কাছে যা প্রমাণ করে যে শামিমাই সেই খু’নি?
পুলিশ অফিসারঃওনাদের নিয়ে এসো।
আশেপাশের কয়েকজন মানুষ ভেতরে চলে আসে। তারা সবাই শামিমাকে দেখে ভয়ে কাপছিল।
পুলিশ অফিসারঃআপনারা ভয় পাবেন না যা সত্য সব বলুন।
পাড়ার চায়ের দোকানদার গনি মিয়া বলেন,
‘আমি দেখেছি যেই রাতে ৩ টি খু’ন হয় সেইদিন রাতে শামিমা মেয়েটা লুকিয়ে লুকিয়ে কোথাও যাচ্ছিল।আমার তো ওকে দেখেই সন্দেহ হয়।’
শামিমাদের এক প্রতিবেশী বলে,
‘আমি সেদিন রাতে শামিমাকে রক্তমাখা শরীরে বাড়িতে ফিরতে দেখেছি।’
বাজারের ফুলবিক্রেতা বলে,
‘শামিমা রোজ আমার কাছ থেকে গোলাপ ক্রয় করে।’
পুলিশ অফিসারঃসব শুনলেন তো? আর তাছাড়া আমাদের কাছে এটারও প্রমাণ আছে যে যারা মা’রা গেছে তাদের প্রত্যেকের সাথে মিস শামিমার শত্রুতা আছে কারণ শামিমা তাদের প্রত্যেকের নামে থামায় মামলা করতে গিয়েছিল। আমরা তখন তার অযৌক্তিক দাবি মেনে নেইনি বলেই হয়তো এখন উনি সবাইকে এভাবে খু’ন করেছেন।
শাহানাজ পারভীনঃআপনারা সব মিথ্যা বলছেন। আমার মেয়ে এভাবে এতগুলো খু’ন করতে পারেনা। কিরে শামিমা তুই চুপ আছিস কেন? তুই বল কিছু।
শামিমাঃকি বলব আর কেন বলব? এই দেশের আইনের উপর আমার কোন ভরসা নেই। সেদিন তো পুলিশ স্টেশনে সবকিছু বলার জন্যই গিয়েছিলাম কিন্তু এনারা কেউ আমার কোন কথাই শুনতে চায়নি। আম্মু,আব্বু তোমরা জানো যেদিন সুমির লা’শ পাওয়া যায় সেদিন আমার কাছে একটি চিঠি এসে পৌঁছায়। হয়তো সুমিই সেই চিঠিটা ডাক বাক্সে দিয়েছিল। সেখানে স্পষ্ট লেখা ছিল সুমির সাথে সেদিন রাতে ঘটে যাওয়া বিভৎস ঘটনার বর্ণনা। সুমি তাদের সবার নাম পরিচয় বলেছে আমাকে। আর এসবকিছুর মূল হোতা কে জানো? ললিত। সুমি চিঠিটায় বারবার নিজের সাথে হওয়া অন্যায়ের ন্যায়বিচার চেয়েছে। সাথে আমাদের সবার কাছে ক্ষমাও চেয়েছে। আমি সেদিন এই চিঠিটা নিয়ে পুলিশ স্টেশনে ছুটে গিয়েছিলাম বিচারের প্রত্যাশায় কিন্তু কেউ আমার কোন কোন কথা শোনেনি। প্রমাণ যথেষ্ট নয় বলে আমায় বের করে দিয়েছি। তখনই আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি যে অপরাধীদের শাস্তি পাইয়েই ছাড়ব।
২৪.
বাড়ির পরিস্থিতি আরো ঘোলাটে হয়ে যায়। সবাই তাকিয়ে আছে শামিমার দিকে। শামিমার উত্তরের প্রত্যাশায় সবাই।
সাকিবঃতার মানে কি তুমিই এইসব খু’ন করেছ?
শামিমাঃআমি অপরাধীদের শাস্তি পাইয়ে দিতে চেয়েছিলাম ঠিকই কিন্তু কোন মানুষকে এভাবে মে’রে ফেলার মতো কাজ আমার দ্বারা সম্ভব নয়। আমি ওদের কাউকে মা’রিনি।
পুলিশ অফিসারঃতাহলে এতসব প্রমাণ কি মিথ্যা?
শামিমাঃকোন কিছুই মিথ্যা নয়। আমি সেদিন রাতে সত্যি সত্যিই লুকিয়ে লুকিয়ে বাইরে গিয়েছিলাম কিন্তু কাউকে মে’রে ফেলতে নয় দোষীদের বিরুদ্ধে প্রমাণ সংগ্রহ করতে।
পুলিশ অফিসারঃতাহলে লুকিয়ে লুকিয়ে যাচ্ছিলেন কেন?
শামিমাঃবাড়ির কেউ যদি জানতে পারত তাহলে আমাকে এত ঝুঁকি নিতে দিতনা। তাই আমি একাই লুকিয়ে যাই সেদিন যাতে কোন প্রমাণ পাওয়া যায়।
পুলিশ অফিসারঃআর রক্তমাখা শরীরে ফিরে আসার ব্যাপারটা?
শামিমাঃআমি সেইদিন প্রমাণ সংগ্রহের জন্য মিরাজ নামের ছেলেটার কাছে যাই। আমার কাছে ওর বাড়ির ঠিকানা ছিল। সেই পথ ধরে যাওয়ার সময় মিরাজকে পড়ে থাকতে দেখতে পাই। কাছে গিয়ে দেখতেই ওর মৃতদেহটা চোখে পড়ে। ভয়ে আমার গলা শুকিয়ে যায়। মিরাজের রক্তই আমার শরীরে লাগে।
পুলিশ অফিসারঃসব তো বুঝলাম শামিমা ম্যাডাম কিন্তু গোলাপ ফুলের ব্যাপারটা কি বলবেন?
শামিমাঃআমার গোলাপ ফুল খুব পছন্দ। তাই আমি গোলাপ ফুল ক্রয় করতাম। এখানে অস্বাভাবিক কিছুই নেই।
পুলিশ অফিসারঃআপনি সত্যি খুব সুন্দর গল্প বলতে পারেন কিন্তু আমরাও পুলিশ। আপনাদের মতো অপরাধীদের পেট থেকে কিভাবে সত্য কথাটা বের করে আনতে হয় সেটা আমরা খুব ভালো করেই জানি। যাও ওনাকে গ্রেফতার করো।
তার কথা শুনে কয়েকজন মেয়ে পুলিশ এসে শামিমাকে গ্রেফতার করে। শামিমা অসহায়ের মতো সবার দিকে তাকায়। তার চোখ মুখের ভাষাই বলে দিচ্ছিল সে সম্পূর্ণ নির্দোষ।
সাকিব শামিমার এই অবস্থা দেখে তার মাথায় হাত দিয়ে বলে,
‘ভয় পাসনা শামিমা আমি আছি। তোর সাকিব ভাই তোকে কথা দিচ্ছে আমি তোর কোন ক্ষতি হতে দেবোনা। আর কেউ তোকে বিশ্বাস করুক বা না করুক আমি তোকে বিশ্বাস করি। আমি জানি তুই নির্দোষ।একদম ভয় পাবিনা তুই আমি তোকে কথা দিচ্ছি আমি তোকে খুব শীঘ্রই বের করে আনব। তারপর আমরা দুজন মিলে নতুন করে জীবনটা শুরু করব। যেই জীবন হবে চিরসুখী।’
সাকিবের কথায় শামিমা অদ্ভুত এক জোর পায়। তার মনে হয় এই লোকটাকে বিশ্বাস করা যায়। সাকিব ভাই নিশ্চয়ই তাকে বের করে আনবেই।
২৫.
‘এতগুলো খু’ন করতে তোর হাত কাপল না? এতটুকু একটা মেয়ে হয়ে কিভাবে চার চারটে পুরুষ মানুষকে খু’ন করলি তুই?’
জিজ্ঞাসাবাদে এরকম প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয় শামিমাকে। শামিমা ধীরস্থির উত্তর দেয়,
‘আমি কোন খু’ন করিনি। আমাকে মে’রে মে’রে শে’ষ করে দিলেও আমি এই কথাই বলব যে আমি কোন খু’ন করিনি। যা হয়েছে তাতে আমি বিন্দুমাত্র দায়ী নই। আমি তো এটাও জানিনা এই খু’ন কে করেছে। তবে যেই করেছে খুব একটা খারাপ কাজ করেনি। আইন শাস্তি দিতে পারেনি তো কি হয়েছে আল্লাহ শাস্তি দিয়েছেন ঐ শয়’তানদের।’
একজন লেডি পুলিশ শামিমার চুল টেনে ধরে বলে,
‘তুই সত্য বলবি না তাই তো? দেখ এবার কি হয়।’
শামিমার উপর অকথ্য অত্যা’চা’র করা হয়। তবুও শামিমা একই কথা বলে যে সে কোন অপ’রা’ধ করেনি।
সাকিব থানায় এসে বসে আসে। সে চাইছে শামিমার সাথে দেখা করতে। পুলিশ তার এই ইচ্ছা পূরণ করতে অপারগ। তাই তাকে বলে দেয়,
‘এভাবে দেখা করার কোন নিয়ম নেই।’
সাকিব আশা ছাড়েনা।
শাহাদাত হঠাৎ ছুটে এসে আলতাফ উদ্দিনকে বলে,
‘ললিতকে খু’ন করা হয়েছে।’
চলবে…..