Monday, October 6, 2025







হয়নি ফেরা

মিষ্টির চাকরির ভাইভার রেজাল্ট বের হ‌ওয়ার পর বাসার সবাই সেভাবে আনন্দ টা করতে পারছে না। পারছেনা কারণ মিষ্টি না আবার মন খারাপ করে। সরকারি চাকরি হ‌ওয়ার পরেও আনন্দ নেই মিষ্টির মনে কারণ নোমানের চাকরি টা হয়নি। সে মনে প্রাণে সারাক্ষণ দোয়া করেছে তার আগে যেন নোমানের চাকরিটা হয়।
আজ দুই বছর হয় মাস্টার্স পাশ করে দুজন বসে আছে কিন্তু নোমানের চাকরি হচ্ছে না।
আসলে চাকরি হচ্ছে না বললে ভুল বলা হবে, নোমান বিসিএস ছাড়া অন্য কোন চাকরির ইন্টারভিউ ই দিচ্ছে না।
প্রথমবার প্রিলিতে টিকলো কিন্তু লিখিত পরীক্ষায় পাশ করতে পারেনি।
দ্বিতীয়বার লিখিত পরীক্ষায় ভালো করার পরেও ভাইভাতে বাদ পড়ে গেল।
এবার শেষ বারের মতো দিয়েছে ভাইভা পরীক্ষা সামনে দেখা যাক কি হয় রেজাল্ট।
এর মধ্যে মিষ্টির অনেক অনুরোধে নোমান সরকারি হা‌ই স্কুলের একটা পরীক্ষায় মিষ্টির সঙ্গে দিয়েছিল। ভাইভা পর্যন্ত সব খুব ভালো হয়েছে। মিষ্টি ভেবেছিল এই চাকরি টা হয়ে গেলে অন্তত বাবা মায়ের সামনে বিয়ের প্রস্তাব টা নিয়ে তো আসতে পারবে নোমান, বিসিএস এর রেজাল্ট যখন হ‌ওয়ার তখন দেখা যাবে বাদ বাকি টা।
কিন্তু আজ চাকরি হলো মিষ্টির নোমানের টা হয়নি। দুপুরের পর থেকে মিষ্টি শুনতে পাচ্ছে পাশের ঘরে আম্মা আর ছোট ভাই পিয়াল বলাবলি করছে যার এই স্কুল শিক্ষকের চাকরি টা হয়নি তার যে বিসিএস হবে সেই আশা এখন আর করা ঠিক হবে না।
ছোটবোন কৃষ্টি ডাক্তারি পড়ে ফিফ্থ ইয়ারে ওর বিয়ে মোটামুটি ঠিক খালাতো ভাই রিয়াদের সঙ্গে।‌রিয়াদ‌ও ডাক্তার । কৃষ্টির এক ব্যাচ সিনিয়র। খালাম্মা খুব অসুস্থ ওদের বাড়ি থেকে বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছে কিন্তু মিষ্টিকে রেখে ছোট বোন কৃষ্টিকে বিয়ে দেয়া টা কোন ভাবেই রাজি ন‌য় মিষ্টির আব্বা এমনকি আত্মীয় স্বজন কেউ না।
মিষ্টির ইদানিং দম বন্ধ লাগে। নোমানের সঙ্গে সম্পর্ক সেই ইন্টারমিডিয়েট ফাস্ট ইয়ারে যখন পড়ে তখন থেকে। দুই বাসায় ব্যাপার টা জানে যখন দুজন অনার্স পড়ে তখন ।
নোমান সব সময়ই অগাধ আসা যাওয়া করে এই বাসায়। তবে ইদানিং খুব একটা আসে না।
গত দুই বছরে মিষ্টি হাজার লাখো বার বলেছে শুধু বিসিএস এর পিছনে না ছুটে অন্য অনেক ভালো চাকরি আছে সেখানেও ট্রাই কর।
নোমানের এক জিদ বিসিএস আগে বাদ বাকি যা আছে পরের টা পরে দেখা যাবে।
কিন্তু মিষ্টির বিয়ের বয়স হয়ে যাওয়া ,বাসার পরিস্থিতি কোন টাই মিষ্টির কন্ট্রোলে নেই।
নোমান এসব নিয়ে খুব একটা পাত্তা দেয়নি।
কিন্তু মিষ্টি কোন ভাবেই এবার আর বাবা মা কে বোঝাতে পারছে না।
সবচেয়ে চাপে ফেলেছে খালাম্মা র অসুস্থতা টা ।‌ ওদের বাড়ি থেকে অস্থির হয়ে গেছে কৃষ্টি আর রিয়াদের বিয়েটার জন্য।‌
আম্মা আজ‌ও দুপুরে অনেকক্ষণ বসে সেই কথাই বুঝিয়ে গেলো। একপর্যায়ে ছলছল চোখে বলল, আমার বোনটা হয়তো ছেলের বউ এর সেবা পাবে না।
মিষ্টি মুখে কিছু বলল না , মনে মনে বলল সব যেহেতু ঠিক তাহলে কৃষ্টিকে পাঠালে কি হয় খালাম্মার সেবায় । কিন্তু সব সময় কথা যে বলতে হয় না এটা মিষ্টি জানে।
আর সে জন্যই সে সেদিনই সন্ধ্যায় আব্বার সঙ্গে তার কলিগ জাফর চাচা যখন তার ভাগ্নে কে নিয়ে বাসায় চা খেতে চলে এলো তখন‌ও ব্যাপার টা বোঝার পরেও সে কিছু বলতে পারেনি।
জাফর চাচার বোনের ছেলে সুজয় দুই বছর হয় এখানকার সরকারি কলেজের ইকনোমিক্স এর প্রভাষক হিসেবে আছে।
আব্বার কিছুদিন ধরে এই সুজয়ের কথা কারণে অকারণে তোলার মানে আজ বুঝতে পেরেছে মিষ্টি।
সুজয় খুব ভালো ছেলে , সুজয়ের ভার্সিটির রেজাল্ট খুব মারাত্মক ছিল। দুটো ভাই বাবা ব্যাঙ্কার ছিল রিটায়ার্ড করেছে ঢাকায় নিজেদের বাড়ি । এত সব কথার মানে বুঝতে মিষ্টির আর খুব একটা কষ্ট করতে হয় না।
রাতের বেলা আম্মা এসে মিষ্টির ঘরে ঢুকলো , মিষ্টি একটা গল্পের ব‌ইয়ে মন দেয়ার চেষ্টা করলো আম্মাকে দেখে।
কিন্তু আম্মা কোন ভনিতা না করেই , মিষ্টিকে সরাসরি প্রশ্ন করে বসলো।
নোমানের ব্যাপারটা কি বল?
মিষ্টি ব‌ই থেকে চোখ না সরিয়েই বলল, কিসের ব্যাপার ?
ওর কি চাকরি করার ইচ্ছা নাই ?
আশ্চর্য কথা বলো আম্মা , ওর ভাইভা পরীক্ষা সামনে তুমি ভালো করেই জানো ।
তারপর ?
তারপর বিসিএস হলেই তো তোমরা সবাই খুশি তাই না ?
আমরা কিন্তু নোমানকে বিসিএস হতেই হবে সেই শর্ত দেইনি । আমরা একজন চাকরিজীবী ছেলের কাছে মেয়ে বিয়ে দিতে চেয়েছি। নোমান‌ই বিসিএস এর পিছনে ছুটছে।
হ্যাঁ ঠিক আছে আম্মা ওর জীবনের লক্ষ্য বিসিএস দিয়ে এডমিন ক্যাডারে জয়েন করবে এখানে দোষের তো কিছু নেই।
দোষের কিছু নেই কিন্তু দু’বার তো হলো না কিন্তু তোর চাকরি হয়েছে এখন তোর বিয়ে না দিলে আত্মীয় স্বজন,পাড়া প্রতিবেশী বলবে মেয়ের কামাই খাচ্ছি তাই বিয়ে দিচ্ছি না । এখনি সবাই কানাঘুষা শুরু করেছে বয়স পার হয়ে যাচ্ছে তাও কেন বিয়ে হচ্ছে না তোর ।
তুমি সবার কথায় কান দিওনা আম্মা‌ প্লিজ। আর তো কিছুদিন।
মিষ্টির আম্মা রাসেদা খানম করুন গলায় মেয়েকে বললেন, আর তোর খালাম্মার কথাটা চিন্তা করবি না ? বোনটা আমার এত অসুস্থ যখন তখন কিছু একটা ঘটে যেতে পারে রিয়াদ সরাসরি কিছু না বললেও ওর কথায় বুঝলাম ওরা এটা নিয়ে রাগ হচ্ছে।
আম্মা তোমরা কৃষ্টি আর রিয়াদের বিয়ে টা দিয়ে দাও ।
না অসম্ভব আমি বড় বোন কে রেখে ছোট বোনকে কোন দিন বিয়ে দিব না।‌ প্রয়োজনে আমি না করে দিচ্ছি তোর খালাম্মা কে।
আম্মা অবুঝের মত কথা বলো না ।
ওদের টা নিয়ে চিন্তা করতে হবে না তোকে , ওদের এটা প্রেমের বিয়ে না ভেঙ্গে গেলে কিছু হবে না।
রাসেদা খানম দরজা খুলে ছুটে বের হয়ে গেল।
মিষ্টি তাকিয়ে আছে মায়ের যাওয়া পথটার দিকে। সে জানে কৃষ্টির প্রেমের বিয়ে না কিন্তু এত দিন থেকে তো কৃষ্টি আর রিয়াদ নিজেদের নিয়ে ভেবেছে ওদের বিয়ে ওর জন্য কোন ভাবেই ভেঙে যাক মিষ্টি এটা হতে দিবে না।
মিষ্টি অস্থির হয়ে যাচ্ছে ভেতরে ভেতরে । ওর খুব কষ্ট হচ্ছে কিন্তু কিছুই করতে পারছে না।
নোমানের সামনে ভাইভা পরীক্ষা।
খুব পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত। মিষ্টি নোমানকে ওর সমস্যা গুলো এই মুহূর্তে বলতে চাইছে না ।
ওর খালাম্মার শরীর আরো খারাপ হয়ে গেছে । হসপিটালে ভর্তি। নাকে নল দিয়ে খাওয়ানো হচ্ছে। আম্মা ওকে নিয়ে আজকাল খুব বিরক্ত।
হসপিটাল বাসা করে কৃষ্টি ক্লান্ত।
দুপুরে ঘুমাচ্ছিল মিষ্টি ঘরে ঢুকতেই ঘুম ভেঙ্গে গেল।
মিষ্টিকে দেখে উঠে বসলো।
উঠলি কেন ঘুমা তুই !
না আপু , আমাকে সন্ধ্যায় আবার হসপিটালে যেতে হবে খালাম্মা র কাছে।
এখন কি অবস্থা?
হার্টের পেসমেকার কাজ করছে না , সঙ্গে শ্বাস কষ্ট হচ্ছে।‌ ডায়াবেটিস ও কন্ট্রোল করা যাচ্ছে না। দীর্ঘ শ্বাস ফেলল কৃষ্টি।
আমার জন্য তোদের বিয়েটা হচ্ছে না ।
আপু প্লিজ এই কথা বলিস না ।‌এখন খালাম্মা অসুস্থ দেখেই হচ্ছে না। তুই মন ছোট করিস না।
কৃষ্টি মিষ্টির হাতটা ধরলো , সব ঠিক হয়ে যাবে চিন্তা করিস না।
নোমানের ভাইভা শেষ হ‌ওয়ার কয়দিন পর মিষ্টির আম্মা একদিন ডেকে পাঠালো নোমানকে।
মিষ্টি জানেও না ও স্কুলে গিয়েছিল। একমাস হলো ওর স্কুল শুরু হয়েছে। ওর খুব ভালো লাগে ছাত্রীদের পড়াতে। এই স্কুলের স্টুডেন্ট ছিল সে নিজেও।
বিকেলে বাসায় এসে শুনে নোমান এসেছিল। কেন জানি ইচ্ছে হলো না কেন এসেছিল জানতে!
সন্ধ্যায় ওর রুমে বসে স্কুলের পরীক্ষার খাতা দেখছে। হঠাৎ নোমানের মেসেজ, তোমাদের ছাদে বসে আছি আসবে একটু।
মিষ্টি ছাদে উঠে দেখে নোমান সিগারেট খাচ্ছে।
মিষ্টি কাছে গিয়ে দাঁড়ালো ।
মিষ্টি আমার পরীক্ষা কেমন হয়েছে এবার তুমি জিজ্ঞেস করলে না যে ?
আমি জানি ভালো হয়েছে তাই জিজ্ঞেস করিনি।
আমার ভাইভা ভালো হয়নি মিষ্টি ‌এবারো হবে না চাকরি!
মিষ্টির বুকের কোথায় যেন হঠাৎ হাতুড়ি র আঘাতের মত লাগলো ।
একটা কথা রাখো আমার, তুমি তোমার ফ্যামিলির যেখানে পছন্দ সেখানে বিয়ে কর।
আর তুমি?
আমার কি আমি বেকার মানুষ কথাটা বলার সময় গলার কাছে কিছু একটা দলা পাকিয়ে গেলো নোমানের।
নোমান তুমি এই কথা বলতে পারলে !
প্লিজ মিষ্টি আমি জানি তোমার বাসার পরিস্থিতি আমার জন্য তোমাকে আর অপেক্ষা করতে দিবে না। এটাও তো ঠিক তুমি আর কতো অপেক্ষা করবে ?
চেষ্টা করে দেখি আর একটু।
আমাদের পালিয়ে যাওয়ার বয়স নেই আর আমরা সেটা চাই‌ও না । তুমি ফ্যামিলির অবস্থা টা দেখো, সবাই তোমার দিকে তাকিয়ে আছে।
নোমান আর বেশিক্ষণ থাকতে পারেনি ওখানে, ওর খুব কষ্ট হচ্ছিল। আসার সময় বারবার মনে হচ্ছিল, দুপুরে মিষ্টির মায়ের কান্না ভেজা মুখটা। তিনি হাত জোড় করে অনুরোধ করছিল মিষ্টিকে বোঝাতে। খালাম্মা অনেক আদর করেছে তাকে তাই খালাম্মা র দিকে তাকিয়েই আজ মিষ্টির কাছ থেকে বিদায় নিয়ে এলো সে।
মিষ্টি অনেক কাঁদবে, কষ্ট পাবে কিন্তু ফ্যামিলির কথা ভেবে ও নিজেকে বোঝাতেও পারবে।
ওর ভাইভা টা তো ওর মন মতোও হয়নি কিসের উপর ভরসা করে খালাম্মার কাছ থেকে সময় নিতো সে ?
মিষ্টি কোনভাবেই বোঝাতে পারেনি তার আব্বা আম্মাকে।
সাত দিন পর এক সন্ধ্যায় সুজয়ের সঙ্গে আংটি বদল হয়ে গেল মিষ্টির।
মিষ্টি নিজের অনুভূতি গুলো নিয়ে আর ভাবে না, তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছে পরিস্থিতি তাকে যেখানে নিয়ে দাঁড় করাবে সে সেখানেই ভেসে যাবে।
বিয়ের তারিখ ঠিক করা হয়েছে সুজয়ের ভাইয়ের অনার্স ফাইনাল পরীক্ষার পর । আগামী মাসে পরীক্ষা শুরু হবে ওর।
মিষ্টি এখন স্কুল থেকে ফিরে খুব একটা সবার সঙ্গে বসে গল্প করে না। নিজের ঘরেই বসে থাকে গল্পের বই পড়ে নয়তো গান শুনে। সুজয় ফোন দিলে হুঁ, হ্যাঁ ছাড়া কোন কথাই বলতে ইচ্ছে করে না ওর।
হয়তো সে জন্যেই সুজয় খুব একটা সারাদিনে ফোন দেয় না। রাতে একবার তাও দুই মিনিট কথা বলেই শেষ হয় কথা।
এর মধ্যে বিসিএস এর রেজাল্ট বের হলো এবং সত্যি সত্যি নোমান তার জীবনের লক্ষ্যে পৌঁছে গেল এডমিন ক্যাডারে তার চাকরি টা হয়ে গেল।
রেজাল্ট দেখে সেও বিস্মিত।
হঠাৎ করেই যেন এই খবরটা বাসায় একটা আলোড়ন সৃষ্টি করলো। কিন্তু মিষ্টি খুব নির্লিপ্ত।
আম্মা, ছোট ভাই পিয়াল খুব আগ্রহ করে দুই তিন বার বলেও গেছে ওর কাছে এসে খবর টা।
ও নিজের আঙুলে থাকা সুজয়ের মায়ের পড়িয়ে দেয়া আংটির দিকে তাকিয়ে ছিল শুধু কোন কথা বলল না।
পরদিন আম্মা এসে কোন রাখঢাক ছাড়াই ওকে বলল, তুই নোমানের সঙ্গে কথা বলতে পারিস ইচ্ছা করলে।
মিষ্টি খুব অবাক হয়ে বলল, কি বিষয়ে ?
তোদের বিয়ের বিষয়ে ।
আম্মা আমার আঙ্গুলে অন্য একজনের অধিকার নিয়ে ঘুরছি আমি।
আংটি ফিরিয়ে দিব আমরা ,এসব কোন ব্যাপার না।
তাই বুঝি ব্যাপার না আম্মা?
আমি নোমান কে খবর দিচ্ছি তুই কথা বল ওর সঙ্গে।
পরদিন নোমান‌ই নিজের থেকে এলো মিষ্টি নিয়ে।
স্কুল থেকে এসে দেখে নোমান ড্রয়িং রুমে বসে পিয়ালের সঙ্গে গল্প করছে।
ওর মুখে সেই সুন্দর হাসিটা লেগে আছে। যে হাসিটা দেখলে আজ‌ও মিষ্টির মন ভালো হয়ে যায়।
মিষ্টিকে দেখে পিয়াল নিজের ঘরে চলে গেল।
কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে মিষ্টিই প্রথম বলল কথা, কখন এলে?
অনেকক্ষণ। খালাম্মা, পিয়াল আর কৃষ্টির সঙ্গে কথা বলছিলাম।
চা খেয়েছো ?
হুম, তোমার স্কুল কেমন চলছে ?
ভালো।
কৃষ্টির হবু শ্বাশুড়ি নাকি এখন সুস্থ ।
হ্যাঁ সিঙ্গাপুর নিয়ে হার্টের পেসমেকার চেন্জ করা হয়েছে আগের চেয়ে ভালো আছে।
তুমি বসো নোমান আমি একটু ফ্রেশ হয়ে আসি ?
আমি তোমাদের ছাদে যাই তুমি ফ্রেশ হয়ে এসো ।

সন্ধ্যা প্রায় হয়ে গেছে। ওরা দুজন ছাদে বসে আছে। নোমান একাই কথা বলছে মিষ্টি চুপচাপ শুনছে।
এত চুপচাপ কেন তুমি?
সারাদিন স্কুলে এত কথা বলতে হয় বাসায় এসে কথা বলার শক্তি থাকে না।
ও।
খালাম্মা আমাকে কি বলেছে জানো , তোমাকে দেয়া আংটি ফেরত পাঠিয়ে দিবে ছেলের বাড়িতে।
তুমি কি বললে, নোমান?
কি বলব, আমি তোমাকে ভালবাসি মিষ্টি । মাসখানেক আঙ্গুলে একটা আংটি পড়ে ছিলে বলে আমার এত বছরের ভালোবাসা পরিবর্তন হয়ে যাবে ,তা তো নয়।
তুমি কি বলো মিষ্টি, বলেই নোমান হঠাৎ হাত ধরে টান দিয়ে মিষ্টিকে জড়িয়ে ধরলো ।
কিন্তু আজ মিষ্টি আর আগের মতো নোমানের বুকে ল্যাপ্টে র‌ইলো না। ছাড়ো আশেপাশের বাসার লোকজন দেখবে।
নোমান হাত ছেড়ে তাকিয়ে আছে মিষ্টির দিকে। শোন মিষ্টি আগামী সপ্তাহে আমার বাসার লোকজন আসবে তোমার আমার আকদ পড়ানো হবে খালাম্মার সঙ্গে আমার কথা হয়েছে মিষ্টি। এর মধ্যে সুজয় নামের যে মানুষ টা তোমাকে আংটি দিয়েছে খালাম্মা বলেছে আংটি ফেরত পাঠিয়ে দিবে।
হঠাৎ নোমানকে অবাক করে দিয়ে মিষ্টি বলে উঠলো, না আংটি ফেরত পাঠাব না।
মানে কি মিষ্টি ? আরেকজনের আংটি রাখার কি দরকার যখন ওর সঙ্গে তোমার বিয়েটা হচ্ছে না?
আমার বিয়েটা সুজয়ের সঙ্গেই হচ্ছে ‌নোমান।
কি বলতে চাইছো?
আজ তোমার চাকরী হয়েছে বলে তোমার কাছে ফিরে আসতে পারব না আমি।
মানে?
মানে আমি তোমাকে রেখে আরেকজনের বাগদত্তা হয়েছি।আজ তোমার ভালো চাকরি হয়েছে বলে আবার তোমার জীবনে ফেরত আসা মানে আমাদের এত দিনের ভালোবাসা টাকে অপমান করা , তোমাকে অপমান করা নোমান।
আশ্চর্য এখানে অপমানের কি হলো মিষ্টি ?
হ্যাঁ আজ তোমার কাছে এটা কোন ব্যাপার না কিন্তু জীবনে কখনো তোমার যদি মনে হয় , আমি একদিন চলে গিয়েছিলাম তুমি বেকার ছিলে বলে, তারপর চাকরি হ‌ওয়ার পর আবার ফিরে এসেছি। ভালোবাসার থেকে চাকরি বড় ছিল আমার কাছে তখন আমি সহ্য করতে পারব না সেই কথা ।
এটা পরিস্থিতি ছিল তোমার মিষ্টি আমি জানি।
সে যাই হোক ফেরা তো হবে চাকরির জন্য তাই না ?
তুমি কিন্তু অবুঝের মতো কথা বলছো ।
আমি ঠিক কথাই বলছি নোমান । তুমি যাও আমি আমার মনকে অনেক কষ্টে বুঝিয়েছি আর পারব না। আজ যদি তোমাকে বিয়ে করি আমাদের ভালোবাসা টাকে সত্যি বলছি ছোট করা হবে।
নোমান শক্ত করে হাত ধরে টেনে মিষ্টিকে ঝাঁকি দিলো, তুমি বুঝতে পারছো কি বলছো? ভাগ্য আমাদের এত বড় একটা সুযোগ দিয়েছিল তুমি উল্টো পাল্টা কথা বলে দূরে চলে যেতে চাইছো?
আমি আমাদের ভালোবাসা টাকে মূল্যায়ন করছি নোমান। চাকরির দাড়িপাল্লায় মাপ দিতে পারছি না।
নোমান কিছুক্ষণ অপলক চেয়ে রাগে চলে গেল সেখান থেকে। মিষ্টি ছাদে বসে কাদলো অনেকক্ষণ।

বাসার সবাই অনেক বুঝালো মিষ্টি কে। কিন্তু মিষ্টি তার সিদ্ধান্তে অনড়। নোমান এসে প্রতিদিন অনুরোধ করছে কিন্তু মিষ্টি আগের মতো ই বারবার বলছে চাকরি পেয়েছে বলে আবার নোমানের কাছে যেতে পারবে না।
শেষ পর্যন্ত মিষ্টি নোমানের কাছে যায়নি। বিয়েটা আগামীকাল সুজয়ের সঙ্গেই হচ্ছে তার। এর মধ্যে সে একদিন সুজয়ের সঙ্গে দেখা করে তার আর নোমানের সম্পর্কের কথা সুজয়কে বলেছে।
সব শুনে সুজয় বলেছে, আপনি ইচ্ছা করলে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে পারেন মিষ্টি? আমি কিছু মনে করবো না।
না আমি আমার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি এখন আপনি বলুন সব শুনে আপনি কি বিয়েটা করবেন আমাকে ?
আমি বিয়েটা না করলে কি আপনি মিঃ নোমানের কাছে ফিরে যাবেন সেই সম্ভাবনা আছে?
না আপনার সঙ্গে বিয়ে না হলেও আমি নোমানের কাছে ফিরে যাব না ।
তাহলে আমাদের বিয়েটা হচ্ছে মিষ্টি। একটা কথা বলব ?
বলুন।
আমি খুব অবাক হচ্ছি আপনি খুব সামান্য কারণে এত দিনের আপনাদের সম্পর্ক টা ভেঙে দিয়েছেন। আপনি চাইলেই পারেন।
আজ এই কথা সবার মনে হচ্ছে, কিন্তু আজ থেকে দশ কিংবা বিশ বছর পর নোমানের যদি মনে হয় ওর চাকরিটা দেখে আবার ওর কাছে আমি ফিরে গেছি। আমার কাছে ওর ভালোবাসার চেয়ে চাকরির মূল্য বেশি ছিল। তখন তো ও আমাকে ভালোবাসতে পারবে না । আর ঐ কথাটা আমার জন্য অনেক কষ্টের হবে অপমানের হবে। আমি কি বোঝাতে পারছি আপনাকে? তারচেয়ে আপনার সঙ্গে ধীরে ধীরে বোঝাপড়া হোক, চাল, ডাল আর বেবি ফুডের হিসাব কষে জীবন টা এগিয়ে যাক আমাদের ?
ঠিক আছে মিষ্টি আপনি যা চান তাই হবে। আপনি সত্যি অন্য রকম একটা মেয়ে।
মিষ্টি ছলছল চোখে তাকিয়ে রইল সুজয়ের দিকে।

মিষ্টি আর সুজয় নিজেদের সংসার গুছিয়ে নিয়েছে। ছয় মাসের মধ্যে নোমান‌ও ওর কাজিনের ননদ কে বিয়ে করেছে শুনেছে মিষ্টি। কষ্ট হয়নি মিষ্টির। খুব সহজ ছিল নোমানের কাছে ফিরে যাওয়া কিন্তু কঠিন কাজ টা সে করেছে।
একদিন যার কাছ থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে এসেছিল তার কাছে ফিরে যাওয়া শুধু মাত্র ভালো চাকরি হয়েছে বলে, সেটা খুব অপমানের লজ্জার হতো নোমানের জন্য।
সবাই ওকে না বুঝলেও সুজয় বুঝে ওকে। হঠাৎ কখনো মন খারাপ থাকলে বলে তুমি কি একা থাকতে চাচ্ছো কিছুক্ষণ?
কেন না তো ?
থাকতে পারো ।
আমি তোমার কাছেই থাকতে চাইছি সুজয়। তারপরও একা কিছুক্ষণ থাকলে আমাকে আরো বেশি ফীল করবে তুমি। আমি সেটাই চাই বলে হাসতে হাসতে চলে যায় সুজয় সেখান থেকে।
মিষ্টির এসব কথা শুনে আর মন খারাপ করে থাকতে পারে না বেশিক্ষণ।
একটুপর মিষ্টি কাছে গিয়ে বলল, অনেক ফীল করলাম তোমাকে তাই চলে এলাম ।
সুজয় হাত বাড়িয়ে দেয় মিষ্টির দিকে মিষ্টি ভালোবাসা আর নির্ভরতার সেই হাত ধরে রাখে নির্দ্বিধায়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ
পরবর্তী নিবন্ধ
গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ