হঠাৎ_পাওয়া
পর্ব_৪
Written by Avantika Anh
সামনে অর্নব কে দেখে আমি থেমে গেলাম । সেই নিরবতা ভেঙ্গে অভি আমার হাত ধরলো ।
.
আমি কিছু বললাম না । অভি আর আমি হেটেই যেতে লাগলাম । আমাদের দেখে…..
অর্নব- আরে আনহা যে এটা কে ২য় বফ নাকি
আমি- আমার ২য় বফ না আমার লাইফ পার্টনার ইনি ।
অর্নব- ও নাইস টু মিট ইউ ব্রো । আপনাকে দেখেছিলাম বিয়েতে । ওর কাজিনের ফ্রেন্ড তাই না ।
অভি- জ্বী
আমি- মি. অভি চলুন এখান থেকে
অর্নব- আরে আনহা এতো তাড়াহুড়া কেনো ? কোথাও যাবা নাকি ?
আমি- তা আপনাকে বলতে ইচ্ছুক না
অর্নব- তা মি. অভি আমি অর্নব + আনহার এক্স জানেন তো ? প্রায় ২ ইয়ার রিলেশন ছিলো তারপর আনহা বললো আমার সাথে নাকি ওর যায় না তাই ব্রেকআপ । আপনার অনেক টাকা আছে তো ?
আমি- মিথ্যে কথা এরকম কিছুই হয় না ও নিজেই আরেক মেয়ে…
অভি- ওয়েট আনহা । বলুন তারপর কি করছে মি. অর্নব ?
অর্নব- তারপর শুনলাম কলেজে নাকি এক ছেলের সাথে একা ধরা পড়েছিলো কি জানি কী যে করছিলো ?
অভি- বাহ আপনি তো দেখি কলেজের খবরও জানেন ।
অর্নব- না মানে শুনলাম
অভি- ও টাকার জন্য ছেড়েছে রাইট ।
অর্নব- হুম
অভি- ও যদি টাকার জন্য ছাড়তো ওর চোখে পানি হতো না । আপনার কথা আগেই শুনেছি আনহার কাছে । আপনাদের রিলেশন ছিলো ২ বছর । এখন ওর আর আমার যদি বিয়ে হয় আমরা পাশে থাকবো সারা জীবন । তা নিশ্চয়ই আপনার ২ বছরের থেকেও অনেক বড় আর কলেজের কথা, আনহা যে এরকম কিছুই করবে না এটা অন্তত আমি জানি বিশ্বাস আছে । আমি ওকে ভালোবাসি । ও যদি খারাপও হয় আমি আমার ভালোবাসা দিয়ে বদলে দিবো ওকে । আপনার সাথে আর কথা বলার মন মানসিকতা আমার বা আনহার কারোরই নাই সো ইউ কেন লিভ । সত্যি যদি ওকে ভালোবাসতেন হারাতেন না । একটা সম্পর্ক সত্যের উপরই টিকে । বিশ্বাস রাখুন আপনিও কাউকে পাবেন ।
.
.
অর্নব আর কিছু বললো না । আমার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে । কষ্টেরও আবার খুশিরও । কষ্ট এই জন্য এমন একজন কে বিশ্বাস করছিলাম আর খুশি এই জন্য এমন একজন কে পেয়েছি । সেদিন ভার্সিটি অব্দি আমি বা অভি কেউ ই কোনো কথা বললাম না ।
.
.
ভার্সিটি শেষে বাইরে দেখি অভি দাড়িয়ে ।
আমি- আপনার কাজ নাই ?
অভি- না বাবার অফিস তাই আর কি ।
আমি- তাই আর কি ইচ্ছা মতো ঘুরতেছেন ।
অভি- না মানে আর কি ।
আমি- না মানে মানে করেন কেন ?
অভি- তুমি কি আমাকে বকছো ?
আমি- হিহি না মজা করছিলাম।
অভি- তুমি তো ভয় ই পাওয়ায় দিলা । মনে করলাম আমি একটা কড়া বউ পাবো
আমি- আমি তো কড়াই
অভি- কিইইই
আমি- হিহি হু একটু
অভি- আচ্ছা আমি শুনমু নে কড়া বউ এর কথা
.
ফেরার পথে…..
বৃষ্টি এলো
আমি ভিজতে লাগলাম ।
অভি- ইস গাড়িটা আনলেই পারতাম । এখন ঠান্ডা লাগবে ।
আমি- আরে মাঝে মাঝে ভেজা ভালো । জানেন না?
অভি- আহা কি রোমান্টিক
আমি- হুম তো
.
সেদিন আমি আর অভি ভিজেই ফিরলাম ।
.
রাতে অভির ফোন এলো
আমি- হা…হা..চ্চি
অভি- বলছিলাম ঠান্ডা লাগবে
আমি- এইটুকু ব্যাপার না হা..চ্চি
অভি- হুম তাই তো হাচ্চি দিচ্ছো
আমি- আপনার ঠান্ডা লাগে নি কেন ?
অভি- আমি গরম চা খেয়েছিলাম তাই ঠান্ডা কম লেগেছে ।
আমি- এ্যা ভালো আইডিয়া যাই গা আমিও চা খামু রাখি
অভি- হাহা যাও
.
এভাবে কিছু দিন যেতে লাগলো । কিন্তু সব যে ভালো হবে তা তো নয় ।
.
একদিন শুনলাম অভির কোন এক কাজিন সুইসাইড এর চেষ্টা করেছে তাও অভির জন্য ।
আমিও গিয়েছিলাম দেখতে । মেয়েটির বাবা মা অভিকে দেখেই রিকোয়েস্ট করতে লাগলো যেন অভি ওই মেয়েকে বিয়ে করে ।
মেঘলার (মেয়েটার নাম) আব্বু- মা তুমি বুঝো প্লিজ
আমি কিছু বললাম না । তারা অনেক রিকোয়েস্ট করলো । মেয়েটা অভির খালার মেয়ে । সেদিন রাতে অভির মা ফোন দিয়েছিলো ।
অভির মা- মা শুনো
আমি- জ্বী বলুন
অভির মা- তুমি জানোই মেঘলা আমার বোনের মেয়ে । আমার বোন বলেছে তার কথা যদি না শুনি তাহলে সব সম্পর্ক শেষ । প্লিজ মা আমি কি করবো বলো ?
আমি- আন্টি সম্পর্ক খুব বড় । সে আপনার বোন নিতান্তই তার অধিকার বেশি । আপনি তার কথাই শুনুন
অভির মা- কিন্তু অভি তো মানতেই চাচ্ছে না ।
আমি- আমি ঠিক করে দিবো সব । কিন্তু ওকে বলিয়েন না কখনো
অভির মা- ধন্যবাদ মা । তোমার এই ঋণ আমি কোনোদিন শোখারাপ?ে পারবো না ।
আমি- মেয়ে ভাবেন না আমাকে ?
অভির মা- হুম
আমি- এতেই হবে
অভির মা- ধন্যবাদ
আমি- আল্লাহ হাফেজ ।
.
রাতে অনেক সময় ধরে কাঁদলাম । এমনি কি হওয়ার ছিলো ?
.
সেদিন রাতে অর্নবকে ফোন করলাম হেল্প এর জন্য সব জানালাম আর ও রাজিও হয়ে গেলো । কারণ ও আমাকে পেতে চেয়েছিলো ।
.
পরেরদিন যথারীতি অর্নব অভি কে মেসেজ দিলো- “আমাকে বিশ্বাস করেন নি তো । আজ …. এখানে আসুন সব প্রমাণ পাবেন ও ভালো নাকি খারাপ”
.
অর্নব আর আমি পৌছালাম । অভি কে আসতে দেখেই-
আমি- এটাই তো চাচ্ছিলাম । একটা বড়লোক কে পটায় । বিয়েটা হোক তারপর ওর সব টাকা নিয়ে ওকে ডিভর্স দিয়ে দিবো । আমি তো তোমাকেই ভালোবাসি বাবু ।
অর্নব- আমি তো জানি সোনা ।
.
অভি এসেই আমাকে থাপ্পর মারলো ।
অভি- তুই একটা নষ্টা মেয়ে । আমার প্রথমেই বোঝা উচিত ছিলো । তুই তো আমার যোগ্যই না রে ।
.
আমি কিছু বললাম না ।
.
বিয়েটা ভেঙ্গে গেলো । কাউকে কিছু বললাম না । সবাই জানে যে আমি যা করবো ভালোই করবো । কিছু জন ভুল বুঝলো । আমার মায়ের জোড় করায় তাকে সব বলে দিলাম আর মানা করলাম সে যেনো কাউকে কিছু না বলে ।
.
কিছুদিন পর রাস্তায় অভি পর মেঘলা কে একসাথে দেখলাম । অভি মুখ ঘুরিয়ে নিলো । আমার সাথে অর্নব ছিলো । ও দেখলো আমার চোখে পানি । কিন্তু ও কিছু বললো না ।
.
চলবে….