#হঠাৎ_বৃষ্টিতে⛈️
#Part_09
#Writer_NOVA
চাচার কথা শুনে ত্রিবুর মাথা চক্কর মেরে উঠলো। পরে যাওয়ার আগে দরজা আঁকড়ে ধরে থম মেরে দাঁড়িয়ে রইলো। এটা কি করে সম্ভব! একটা মৃত ব্যক্তির সাথে সে দুইদিন কথা বলেছে। আসলেই কি পৃথিবীতে প্যারানরমাল বলতে কোন শব্দ আছে? হ্যাঁ আছে।কিন্তু ত্রিবু এটা মানতে নারাজ যে সে একজন মৃত মানুষের সাক্ষাত পেয়েছে! আসলেই কি ত্রিবু কোন অশরীরীকে দেখেছে? সেটাই এখন দেখার বিষয়।
জামাল চাচার থেকে কোনমতে বিদায় নিয়ে ত্রিবু টলতে টলতে বাড়ি চলে এলো। ঘরে ঢুকে মগে পানি ঢেলে ঢকঢক করে এক নিঃশ্বাসে সবটুকু খেয়ে নিলো।ফ্যানের সুইচটা টিপে খাটে হাত-পা ছড়িয়ে শুয়ে পরলো। মাথার ভেতর প্রশ্নের ঝুলি উঁকি ঝুঁকি মারছে। ভীষণ অস্থির অস্থির লাগছে।তার থেকে বেশি ভয় করছে। নাতনিকে বাইরে থেকে এসে এমন বিধ্বস্ত দেখে ঘাবড়ে গেলো জোবেদা খাতুন। এগিয়ে এসে পাশে বসে জিজ্ঞেস করলো,
— কি হইছে তোর? শরীর খারাপ লাগতাছে?
ত্রিবু ছোট করে উত্তর দিলো,
— না।
— তাইলে বাইরের থিকা আইসা চিৎ হইয়া রইলি কেন? হঠাৎ কি হইলো তোর?
ত্রিবু কোন উত্তর দিলো না। সে এক ধ্যানে ঘুরন্ত ফ্যানের দিকে তাকিয়ে রইলো। জোবেদা খাতুন হাত দিয়ে নাতনিকে ঠেলে বললেন,
— কোন সমস্যা হইছে কি? কথা কস না কেন? আমি তোরে কিছু জিগাইতাছি।
ত্রিবু এক পলক দাদীর দিকে তাকিয়ে হুরমুর করে উঠে বসলো। তারপর দাদীকে বললো,
— আচ্ছা দাদী পৃথিবীতে ভূত বলতে কি কিছু আছে?
জোবেদা খাতুন কপাল কুঁচকে বললো,
— এমন আজগুবি প্রেশ্ন করতাছোস কেন?
— আরে বলো না।
— দুনিয়াতে ভূত বলতে কিছু নাই। যা আছে তা হইলো জ্বীন। খারাপ জ্বীনেরা ভয়ংকর রূপ নিয়া ডর (ভয়) দেখায়। হঠাৎ তুই এগুলি জিগাইতাছোস কেন?
ত্রিবু আবারো তার দাদীর দিকে তাকিয়ে রইলো। তার দাদী আগের দিনের মানুষ হলেও ভূত বিশ্বাস করে না। এটা তার কাছে অবাক করা বিষয় মনে হয়। কারণ আগের দিনের মানুষরা ভূত বিশ্বাসী। ত্রিবু আবারো আনমন হতেই জোবেদা খাতুন ঠেলা মেরে বললো,
— ত্রিবু তোর হইছে কি?
— কিছু না।
ত্রিবু দীর্ঘশ্বাস ফেলে ছোট করে উত্তর দিলো। দাদীকে কিছু বলতে না দিয়ে বড় বড় পা ফেলে অন্য পাশে চলে গেল। সেখানে থাকা আলনা থেকে জামা-কাপড় নিয়ে দ্রুত পুকুর ঘাটের পথ ধরলো। এই মুহুর্তে তার মাথা ঠান্ডা করার দরকার। আর তার জন্য প্রয়োজন গোসল। পুকুরে নেমে বেশ কয়েকটা ডুব দিয়ে আসলে যদি মাথাটা একটু ঠান্ডা হয়।
☔☔☔
বিকেলবেলা…….
জানলার সামনের টেবিলে বসে বইয়ের পাতা উল্টেপাল্টে দেখছে ত্রিবু।পড়ায় কিছুতেই মন বসাতে পারছে না সে। মাথার মধ্যে ছেলেটার কথায় ঘুরপাক খাচ্ছে।হঠাৎ তার চোখ গেলো উঠোনের দিকে। তার মনে হলো সে হিমেলকে দেখলো। চোখ ডলে ভালো করে তাকিয়ে দেখলো চোখের ভ্রম নয়।সত্যিই হিমেল উঠনো দাঁড়িয়ে। ত্রিবুর দাদী ঘুমোচ্ছে। তাই ত্রিবু নিঃশব্দে ঘর থেকে বেরিয়ে দরজা ভিরিয়ে হিমেলের সামনে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করলো,
— কি চাই?
হিমেল তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে ত্রিবুর দিকে তাকালো। শান্ত গলায় বললো,
— কি চাই তুই জানিস না?
ত্রিবু শক্ত গলায় বললো,
— জানলে তো জিজ্ঞেস করতাম না।
— মুখে মুখে তর্ক করা আমার পছন্দ না।
— আমারও না।
— মুখে খই ফুটছে দেখছি।
— কেউ ফুটালে তো ফুটবেই।
ত্রিবুর এই ত্যাড়া ত্যাড়া কথা হিমেলের হজম হলো না। চোখ, মুখ শক্ত করে বললো,
— তোর লজ্জা করে না এভাবে কথা বলতে? আমার এত বড় সর্বনাশ করে এখন আমার মুখে মুখে কথা বলছিস।
ত্রিবু তাচ্ছিল্যের হাসি দিলো। ঘর থেকে উঠোনে আসা অব্দি মনে মনে সে যথেষ্ট সাহস যুগিয়েছে। সেই সাহসে ত্যাড়া উত্তর দিচ্ছে।ছেলেটার কথা মনে আসতেই সে নিজেকে প্রতিবাদী রূপে আবিষ্কার করছে। সেদিন রাতের সব কথা মনে করে হিমেলের জন্য তীব্র ক্ষোভ ও ঘৃণা জন্মে গেছে। যেই মুখটা দেখলে মনের অজান্তে তার মুখে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠেতো। আজ তাকে দেখে মনের গহীনে ঘৃণা ছাড়া অন্য কিছু খুঁজে পাচ্ছে না। ত্রিবুর খুব ইচ্ছে করছে হিমেলকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দিতে। কিন্তু এতে হীতের বিপরীত হবে বলে ইচ্ছাটাকে দমন করলো। ত্রিবুকে চুপ থাকতে দেখে হিমেল রেগে চেচিয়ে বললো,
— কোন সাহসে তুই আমার বিয়ে ভেঙেছিস?
পুরনো কথা তুলতেই ত্রিবু অবাক চোখে হিমেলের দিকে তাকালো। মুহুর্তে অবাকের চিহ্ন উবে গিয়ে কপাল কুঁচকে এলো। হিমেলের দিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে রেগে জোর গলায় বললো,
— আমি কিছু করিনি। যদি করার হতো তাহলে বহু আগেই বিয়ে ভেঙে ফেলতাম। আমি শুধু দেখতে চেয়েছিলাম তুই বিয়েটা করিস কিনা। আমার বিশ্বাস ছিলো তুই বিয়েটা করবি না। কিন্তু আমার ধারণা ভুল করে দিয়ে তুই রাজী হয়ে গেলি। মেয়ের বাড়ির থেকে ঢেঢ় ফার্নিচার, বাইক, টাকা তাছাড়া অঢেল সম্পত্তির লোভে আমাকে ছুঁড়ে ফেলে দিলি। ঠিকই আছে। বেশি লোভ করছিস তাই কিছু পাসনি। সাথে আমিও তোকে চিনতে পারছি।
হিমেল হিংস্র চোখে ত্রিবুর দিকে তাকালো। তবে বেশ অবাকও হলো। আজকের ত্রিবুর সাথে আগের ত্রিবুর মিল পাচ্ছে না সে। মনে হচ্ছে এক সপ্তাহের ব্যবধানে ত্রিবু অনেক বদলে গেছে। ভোলা ভালা মেয়েটা প্রতিবাদী হয়ে গেছে। যে মেয়েটা আপনি বলে সম্বোধন করতো সে তুই তুকারি করছে বিষয়টা সত্যিই অদ্ভুত। হিমেল এই বিষয়গুলো মাথা থেকে ঝেড়ে ত্রিবুকে বললো,
— বড্ড বেশি বেড়েছিস তুই।
ত্রিবু হাই তুলতে তুলতে বললো,
— বাজে বকবকানি রেখে বাসায় গিয়ে নাকে তেল দিয়ে ঘুমা কাজে লাগবে।
হিমেল এগিয়ে এসে ত্রিবুর গলা টিপে ধরতে গেলে ত্রিবু চটজলদি ওর হাত ধরে ফেললো। হাত মুচড়ে ধরে দাঁতে দাঁত চেপে ত্রিবু বললো,
— একদম আমার দিকে হাত বারাবি না। জানে মেরে ফেলবো। কিছু বলি না বলে সাহস পেয়ে গেছিস? হাত ভেঙে আরেক হাতে ধরিয়ে দিবো। মনে রাখিস এই ত্রিবু আর আগের ত্রিবু নেই।
হিমেল ব্যাথায় কিছুটা কুকিয়ে উঠলো। পুঁচকে মেয়েটা এত শক্তি পেলো কোথায়? শক্তির থেকে সাহস দেখে বেশি অবাক হলো হিমেল। ত্রিবু হাত ছেড়ে কাঁধে জোরে ধাক্কা দিয়ে বললো,
— আমার থেকে দূরত্ব বজায় রাখিস। নয়তো তোকে আমি কি করবো আমি নিজেও জানি না।
হিমেল রেগে গজগজ করে বললো,
— কাজটা তুই ভালো করলি না ত্রিবু।
ত্রিবুকে শাসিয়ে দ্রুত পায়ে বাড়ি থেকে চলে গেল হিমেল।রাগে তার সারা শরীর জ্বলছে। ত্রিবু ওর যাওয়ার পানে তাকিয়ে তাচ্ছিল্যের হাসি দিলো। তবে সে নিজেও অবাক হচ্ছে। হুট করে এত সাহস সে পেলো কোথায়? তাহলে কি সত্যি তার মধ্যকার প্রতিবাদী ত্রিবু জেগে উঠেছে?
☔☔☔
পরের দিন….
— শ্রাবণ তোমার সাথে আমার কথা আছে।
কলেজের পাশের টং দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে সবেমাত্র সিগারেটটা ধরিয়েছিলো শ্রাবণ। মারিয়ার কন্ঠ শুনে অবাক চাহনিতে মাথা ঘুরিয়ে ওর দিকে তাকালো। মারিয়া ক্রুর দৃষ্টিতে তার সিগারেটের দিকে তাকিয়ে আছে দেখে দ্রুত হাতের সিগারেট ফেলে বেআক্কল মার্কা হাসি দিয়ে আমতাআমতা করে বললো,
— হুম বলো।
মারিয়া এদিক সেদিক তাকিয়ে নিচুস্বরে বললো,
— এখানে নয় বাসায় যেতে যেতে বলি।
— আচ্ছা।
শ্রাবণ পকেট থেকে মানিব্যাগ বের করে সিগারেটের দাম পরিশোধ করে দিলো। ততক্ষণে মারিয়া সামনের দিকে হাঁটা শুরু করেছে। শ্রাবণ দৌড়ে মারিয়ার পাশাপাশি এসে হাঁটতে হাঁটতে জিজ্ঞেস করলো,
— কি কথা মারিয়া?
মারিয়া শান্ত দৃষ্টিতে শ্রাবণের দিকে তাকিয়ে একটা তপ্ত নিঃশ্বাস ছাড়লো। তারপর মৃদু গলায় বললো,
— আমাদের সম্পর্কের কথা কবে বাবাকে বলবে?
শ্রাবণ উত্তরে কিছু বললো না। শুধু একটা দীর্ঘ শ্বাসের শব্দ এলো। শ্রাবণ, মারিয়ার গত তিন বছরের সম্পর্ক। একে অপরকে ভীষণ ভালোবাসে। মারিয়া অনেকবার তার বাবাকে বলতে চেয়েছিলো কিন্তু শ্রাবণ মানা করেছে। সে নিজের পায়ে প্রতিষ্ঠিত হয়ে তবেই মারিয়ার বাবাকে প্রস্তাব দিবে বলে। মারিয়ার সাথে যখন হিমেলের বিয়েটা ফাইনাল হয়ে গেলো তখন শ্রাবণ পুরো পাগল পাগল হয়ে গিয়েছিল। তবে আল্লাহর অশেষ রহমত বিয়েটা শেষ অব্দি ভেঙে গেছে। এতে অবশ্য পুরো অবদান যে মারিয়ার তা কিন্তু নয়। হিমেলের যে ত্রিবুর সাথে সম্পর্ক ছিলো তার খোঁজ খবর শ্রাবণ বের করেছে।
মারিয়া থেমে শ্রাবণকে বললো,
— কি হলো কথা বলছো না যে?
— আমাকে আরেকটু সময় দাও মারিয়া। আমি চেষ্টা করছি একটা জবের। সেখানে চান্স পেয়ে গেলেই তোমার বাবার কাছে প্রস্তাব নিয়ে যাবো। তোমার বাবা নিশ্চয়ই কোন বেকার ছেলের কাছে নিজের একমাত্র মেয়েকে তুলে দিবে না?
শ্রাবণের প্রশ্নসূচক বাক্য শুনে মারিয়া আবারো একটা তপ্ত নিঃশ্বাস ছাড়লো। কিছুটা দমে গিয়ে বললো,
— যত সময়ের দরকার ততটা সময় নাও শ্রাবণ। তবে শেষ অব্দি আমাকে ঠকিয়ো না।তাহলে আমি জিন্দা লাশ হয়ে যাবো।
শ্রাবণ রাগী চোখে তাকিয়ে ঝাঁঝালো গলায় বললো,
— এতদিনে এই চিনলে আমায়?
মারিয়া একগাল হেসে বললো,
— আরে সিরিয়াসলি নিচ্ছো কেন? আমি তো এমনি বলছিলাম।
শ্রাবণ নিজের রাগটাকে নিয়ন্ত্রণ করে বললো,
— আমার এরকম মজা পছন্দ নয়।
— হুম আমি জানি।সিগারেট খেতে মানা করছিলাম।
— সবসময় খাই না। মাঝে মাঝে টেনশনে থাকলে একটু-আধটু টানি।
টুকটাক আরো কথা বলতে বলতে দুজন চলতে লাগলো। হঠাৎ একটা ইটের টুকরোর সাথে হেচোট খেয়ে মারিয়া নিচে বসে পরলো। শ্রাবণ কথা বলতে বলতে কিছুটা এগিয়ে গেছে। সাথে যে মারিয়া নেই সেই খেয়াল তার হলো না। মারিয়া নিচে বসে পায়ের দিকে তাকিয়ে দেখলো চামড়া কিছুটা ছিলে গেছে। তখুনি শা গতিতে একটা বাইক মারিয়ার সামনে দিয়ে চলে গেল। বাইকের পেছনে থাকা ছেলেটা দ্রুত মারিয়ার মুখের দিকে তরল জাতীয় কিছু ছুঁড়ে মারলো। এত দ্রুত ঘটনাটা ঘটলো যে মারিয়া কিছু বুঝে উঠতে পারলো না। যখন বুঝলো তখন সে গগনবিদারী এক চিৎকার দিয়ে উঠলো।
— আল্লাহ গো! জ্বলে যাচ্ছে, পুড়ে যাচ্ছে। শ্রাবণ আমাকে বাঁচাও!
~~~ কন্ফিডেন্স থাকা ভালো। কিন্তু ওভার কন্ফিডেন্স নয়🍂।
#চলবে