#গল্পঃহঠাৎ_একদিন।
#পর্বঃ১
#লেখকঃরিয়াজ
বিয়ের ৩ মাস পর বউকে নিয়ে শ্বশুর বাড়ি যাচ্ছি।ট্রেনে হঠাৎ করে দেখতে পাই ৫ বছর আগে আমি চাকরি পাইনি বলে যে আমাকে ত্যাগ করে চলে গিয়েছিলো সে আমাদের একই কেবিনে।তার সাথে একটি লোক বসা হয়তো তার হাজবেন্ড।আমি তাকে দেখে রীতিমতো চমকে যাই।
কেনোনা এই ৫ বছর আমার সাথে তার যোগাযোগ কিংবা কথা বলা কিংবা দেখা হওয়া কিছুই হয়নি।তবে আমি যে কেবল তাকে দেখেছি সেটা কিন্তু নয়।ইতমধ্যে সেও আমাকে দেখে ফেলেছি।
আমার মাঝে একটা কেমন যেনো নিরবতা চলে এসেছে। আমি তাকে দেখে কেবিন থেকে বেরিয়ে এসেছি।আমার স্ত্রী বলছে এই কি হয়েছে তোমার বাহিরে কেনো যাচ্ছো আবার?(বাহিরে বলতে ট্রেনের দরজায়)কেনোনা ট্রেন এরভিতরে চলতে শুরু করে দিয়েছি।
আমি তাকে বললাম তুমি বসো আমি একটু আসছি।৫ বছর আগে আমি চাকরি পাইনি বলে যে আমাকে ত্যাগ কিরেছিলো সেই মেয়েটির নাম সাবিয়া জান্নাত।আমি ওকে জান্নাত বলেই ডাকতাম।
আমি আমার চেয়েও বেশি জান্নাত কে ভালোবাসতাম।তবে আমার কপালটা তেমন ভালো না।কেনোনা যখন যেটা দরকার আমি তখন সেটা পাইনা।কিন্তু পরে আবার সেটা ঠিকই পাই।তবে পরে পেলে কি আর হয়??
যখন যেটার দরকার তখন তো সেটারই প্রয়োজন তাই না??
ওর সাথে যখন রিলেশন ছিলো তখন ছিলো না আমার চাকরি। অনার্স পাশ করে চাকরির জন্য কতো মানুষের ধারে ধারে ঘুরেছি।কিন্তু চাকরি নামক সোনার হরিণ সেদিন আমার কপালে জোটেনি।আর আমার এই একটি চাকরির জন্যই আমি আর জান্নাত আজ দুইজন দুইদিকে।
সে তার হাজবেন্ড এর সাথে আর আমি আমার ওয়াফ এর সাথে।আজ কিন্তু এখানে আমার আর জান্নাতেরই থাকার কথা ছিলো। কিন্তু ভাগ্য আমাদের সহায় ছিলো না।ওকে ট্রেনে দেখে আমার চোঁখের কোনে কেনো জানি জল চলে এসেছে।
তার সাথে কাটানো সব মূহর্ত গুলো আমার চোখের সামনে ভেসে আছে।কেনো যা তার সাথে এখন এই মূহর্তে দেখা হতে গেলো।যাই হোক আমার স্ত্রী রুপা আবার ডাক দিলো কই রিয়াজ কোথায় তুমি ভিতরে আসছো না কেনোও??
সরি আমার নাম রিয়াজ সেটা আপনাদেরকে বলা হয়নি।পেশায় বর্তমানে আমি আর্মির শিক্ষা কোরের জেসিও অফিসার। যাকে ওয়ারেন্ট অফিসার বলে।মাষ্টার কমপ্লিট করে অনেক কষ্টের বিনিময়ে এই চাকরিটা পেয়েছি।কারণ এমন একটি চাকরি সবার কপালে জোটে না।
আর সবচেয়ে বড় বিষয় হলো আমি ভার্সিটিতে এসে যে বিষয়টা নিয়ে পড়ার জন্য আমার লাইফের সবচাইতে বেশি কষ্ট পেয়েছিলাম। আর সেই বিষয় এর জন্যই কিন্তু আমি এতো ভালো একটি চাকরি পেয়েছি। পরে আমি বুঝতে পেরেছি আসলে আল্লাহ যা করে সেটা আমাদের সকলের মঙ্গলের জন্যই করে।আর আমি যেই বিষয়টি নিয়ে লেখা পড়া করেছিলাম সেটি হলো বাংলা।
রুপা ডাক দেয়ার পর কেবিনে যেয়ে বসলাম।আর ভর্তমানে আমরা ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম গামী একটি ট্রেনে করে চট্টগ্রাম যাচ্ছি।আর চট্টগ্রামেই আমার শ্বশুর বাড়ি। মানে রুপাদের বাড়ি।ট্রেনের সিঙ্গেল কেবিন পাইনি তাই অন্য জনদের সাথে যেতে হচ্ছে।অবশ্য অন্য জন বলতে আমাদের মতোই আরেকটি কাপল।
রুপা অলরেডি তাদের সাথে পরিচিত হয়ে গিয়েছে। আমাকে দেখিয়ে দিয়ে বল্লো আপু এই আমার হাজবেন্ড।মানে জান্নাত কে বল্লো আর কি।জান্নাত এর হাজবেন্ড আমাকে হায় বল্লো।আমিও হায় বল্লাম। তবে জান্নাতকে এভাবে আরেকটি ছেলেরে সাথে বসে থাকতে দেখে আমার মোটেও ভালো লাগছে না।যদিও আজ থেকে আরও ৫ বছর আগেই আমার সাথে জান্নাতের ব্রেকাপ হয়ে গিয়েছিলো।
তবুও ওর সাথে তার হাজবেন্ড কে দেখে আমার কেনো জানি খুব খারাপ লাগছিলো। আমি তাদের সাথে আর কোনো কথা বল্লাম না।তবে হ্যাঁ আমি যে জান্নাত কে আগে থেকে চিনি সেটা কিন্তু আমার স্ত্রী রুপাকে বুঝতে দেইনি।আমি জান্নাতের সাথে আপনি আপনি করেই কথা বলেছিলাম।আর জান্নাতও ঠিক একই আচরণ করেছে।
আমার মনের গহিনে থাকা যে ভালোবাসা জান্নাতের জন্য জন্মেছিলো আর আজ সে ভালোবাসা আমার স্ত্রী রুপাকে দিতে হচ্ছে।মেয়েটা আমায় খুব ভালোবাসে।একটা দিনও আমকে ছাড়া খাবার খাবে না।
আমিও ওকে অনেক ভালোবেসে ফেলেছি।মেয়েটার মধ্যে কে যেনো একটা জাদু আছে যেটা দিয়ে খুব সহজে মানুষের মন জয় করে নিতে পারে।যেমন টা নিয়েছে আমার ক্ষেত্রে। তবে জান্নাত যে আমায় ভালোবাসতো না সেটা কিন্তু নয়।ট্রেনে রুপা জান্নাতের সাথে কথা বলছে।
আমিও শুনছি তাদের কথা গুলো।আমি কি করি কোথায় আছি এই সবই রুপা জান্নাত কে বলেছে।আর জান্নাতের হাজবেন্ড কি করে কই থাকে এই সবও জান্নাত বলেছে।তার হাজবেন্ড একটি ব্যাবসার সাথে জড়িত আছে।পারিবারিক ভাবেই নাকি তাদের বিয়ে হয়েছে।
তবে সেটা আজ থেকে আরও ৪ বছর আগে।আমাদের কবে বিয়ে হয়েছে রুপা সেটাও তাদের কাছে বল্লো। এর মাঝে রুপা জান্নাত কে জিজ্ঞেস করলো আপু একটা কথা বলবো কিছু মনে করবেন না তো..??
জান্নাত বল্লো না না সমস্যা নেই বলো। ৪ বছর হয়েছে বিয়ে করেছেন এখনো বাচ্চা কাচ্চা নিচ্ছেন না কেনো??জান্নাত আসলে এতোদিন সুমনের ব্যাবসায় খুব জামেলা ছিলো। এখন অবশ্য সব ঠিকঠাক। ইনশআল্লাহ আগামী বছর আমাদের কোল আলো করে নতুন মেহমান একজন আসবে।
আমি মনে মনে ভাবছি আজ এই সুমনের জায়গায় তো আমার থাকার কথা ছিলো কিন্তু ভাগ্য যদি খারাপ হয় তাহলে কি আর করার।আমাদের রিলেশনটা ছিলো সেই কলেজ লাইফ থেকে।
৭ বছরের রিলেশন ছিলো।জান্নাত ছিলো আমার ফাস্ট লাভ।অবশ্য আমিও জান্নাতের ফাস্ট লাভ।একটি ছেলে আর একটি মেয়ে ৭ বছর রিলেশন করার পর যদি তারা বিয়ে করতে না পারে তখন সেটা যে কি কষ্টের তা শুধু তারাই জানে।অবশ্য অনেকে এরজন্য সুইসাইডও করে।
তবে আমি সেরোকম নয়।এসব চিন্তা মাঁথা থেকে যেরে ফেলে দিয়ে কিভাবে সামনে এগুনো যায় আমি সে চিন্তায় মগ্ন ছিলাম।আর সেকারণেই আজ আমি এই পজিশনে আছি।চট্টগ্রাম কলেজে আমি যখন সেকেন্ড ইয়ার তখন জান্নাত ফাস্ট ইয়ারে ভর্তি হয়।
ওকে আমি কলেজে যেদিন প্রথম দেখি সেদিনই ভালো লেগে যায়।কলেজে ১ বছরে অলরেডি অনেক মেয়ে দেখা শেষ কিন্তু এর ভিতরে কোনো মেয়েকেই আমার ভালো লাগেনি।কিন্তু জান্নাত কে প্রথম দেখাতেই ভালো লেগে যায়।সেই প্রথম দিন থেকেই কলেজে ঘোষণা করে দিলাম জান্নাত আমার ওর দিকে যাতে আর কেও না তাকায়।
কলেজে একটু পাওয়ারে ছিলাম সে হিসেবে বল্লাম আর কি।কয়েকদিন ওকে ফলো করতে থাকলাম ওর বাসা কোথায় বাবা কি করে কয় ভাই বোন কারো সাথে রিলেশন আছে নাকি এই সব খবরই আমার নেয়া শেষ। আমি যে ওকে ফলো কিছু সেটা কিন্তু সে বুঝে গিয়েছে। ১ মাস পর জান্নাতের এক বান্ধবী কে দিয়ে আমি প্রেম নিবেদন পাঠাই।সেদিন সে যেটা বলেছিলো আমি সেটা শুনার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না।
জান্নাত নাকি তার ওই বান্ধবীকে সোজা সাপ্টা বলে দিয়েছে যা ভালোবেসে তাকে এসে সরাসরি বলতে বলিস। এতো লজ্জা নিয়ে প্রেম করবে কিভাবে।আমি সেদিন খুবই লজ্জা পেয়েছিলাম এরপর মনে সাহস যুগিয়ে একদিন কলেজ ছুটির পর দেখি সে একা একা যাচ্ছে সেদিনই আমার সূযোগ।ওর পাশাপাশি হেঁটে হেঁটে যাচ্ছি আর ওকে বল্লাম কি ব্যাপার কেমন আছো??
জান্নাত রিপ্লাই দিলো আপনি কে?? আমিতো আপনাকে চিনতে পারলাম না??আমিতো এটা শুনে পুরাই অবাক।
চলবে???