স্যার যখন স্বামী সিজন২ পার্ট_১২

0
2815

স্যার যখন স্বামী সিজন২
পার্ট_১২
#লিখা জান্নাতুল ফেরদৌস

হঠাৎ করে কেউ পিছন থেকে আমার হাতটা ধরে টান দিল।

“কে…কে?”
“আমি,,”
“আরে আপনি!এইখানে কি করেন?”
“এইখানে একা একা দাঁড়িয়ে তুমি কি করছ ?আর বারবার ওইদিকে ফিরে কাকে দেখছ?”
“কিচ্ছু না।কাউকে দেখছি না।”
“ও আচ্ছা। এই খেয়েছ কিছু।”
“হুম”
“মিথ্যা বলিও না।বস এইখানে।”
“কেন?”
“উফ এত কেন কেন করবে না।বসতে বলছি বস।”
“হুম”
“নাও এই প্লেট থেকে এইবার খাইয়ে দাও আমাকে।”
“কিহ!”
“এত অবাক হওয়ার কি আছে।দেখতেই তো পাচ্ছ। আমার হাতে বেন্ডিজ। নিজ হাতে খেতে পারব না।তাই আমাকে খাইয়ে দাও আর নিজেও খাও।”

উফ কি মুসিবতে পরলাম। (মনে মনে)

“কি ব্যাপার!তাড়াতাড়ি খাইয়ে দাও।খুব ক্ষিদা লেগেছে।”
“দিচ্ছি।”
মুচকি হেসে,,”হুম”
.
.
খাওয়া তো শেষ হল এরপরও কেন আমার দিকে তাকিয়ে আছেন আল্লাহই জানে।

“কিছু বলবেন!”
“হুম।”

আমার হাত দুটো আলতো করে ছুঁইয়ে দিয়ে উনি বললেন,,”তোমাকে আজকে অনেক সুন্দর লাগছে।তোমার শ্যামলা চেহেরায় সাদা রংটা স্নিগ্ধ লাগছে।”

এরপর কথা ঘুরিয়ে বললেন,,,”আচ্ছা এখানে একা একা থেক না।আমার সাথে থাকবে। চল আমার সাথে।”

“আ…..আপনি যান আমি আসছি।”
“ঠিক তো।”
“হুম যান। আসছি।”
“ওকে।”(মুচকি হেসে)

একটু পর আবার আমার কাছে ফেরত এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে বললেন,,
“তিলোত্তমা,তাড়াতাড়ি চলে আসবে। আমার চোখের সামনে তুমি না থাকলে খুব ভয় করে।এতটা ভয় নিয়ে থাকা আমার জন্য খুব কষ্টের।তোমাকে কখনো আমি আমার চোখের আড়াল করতে চাই না।”

অবাক হয়ে উনার দিকে তাকিয়ে আছি।উনাকে বুঝতে খুব কষ্ট হয়।কি বলেন না বলেন কিছুই আমার মাথার মধ্যে ঢুকতে চায় না।

কপালে চুমো দিয়ে বললেন,,
“অপেক্ষায় থাকলাম।”
“………”

উনি যাওয়ার কিছুক্ষণ পর তানভীর আমার সামনে এল।তানভীরকে দেখেই আমি উল্টা দিকে হাঁটা শুরু করলাম।

তানভীর আমার হাত ধরে বলল,,

“তমা,,আমাকে কি মাফ করা যায় না।”
“হাত ছাড়ুন।”
“না, ছাড়ব না।আগে বল আমাকে মাফ করেছ।জানো,, আমার এই অপরাধটা আমাকে আজ কয়েকটা মাস ধরে খুব কষ্ট দিচ্ছে।রাতে এখন ঠিকভাবে ঘুমাতেও পারি না।বুকের ভিতরটায় খুব যন্ত্রণা হয়।আমি আর এই কষ্টের বোঝা বেয়ে চলতে পারছি না।প্লিজ আমাকে মাফ করে দাও।নাহলে আমি মরেই যাব।”

এবার আমার সহ্যশক্তি পার হয়ে গেল।জোর করে হাতটা ওর কাছ থেকে ছাড়িয়ে নিলাম।এরপর অনেকটা শান্ত কণ্ঠে ওকে বললাম,,
“ঠিক আছে মাফ করে দিতে পারি,, তবে একটা শর্ত আছে।”
“কি শর্ত!”
“আপনার ভুলের কারণে আমি আমার মূল্যবান যা কিছু হারিয়েছি তা ফেরত দিন।”
“এইসব কি বলছ?তা কিভাবে সম্ভব!”
“আপনার বেলায় যদি সম্ভব না হয় তাহলে আমার বেলায় কিভাবে সম্ভব বলেন।”(জোরে চিল্লিয়ে)
“………..”
“আপনি একটা কাপুরুষ। এই কাপুরুষতা নিয়ে আপনি রাজশাহী থেকে এতদূর আসছেন বিয়ে খেতে। তাও আবার আপনার স্ত্রীকে নিয়ে।যদি রাতের বেলায় কোন পুরুষ আপনার স্ত্রীকে নিয়ে টানাটানি করে,আপনার সামনেই আপনার স্ত্রীর গায়ে অন্য কোন পুরুষ হাত দেয়,তাকে একটা রাতের জন্য কাছে পাওয়ার জন্য হিংস্র হয়ে উঠে তাহলে আপনি শুধু চেয়েই থাকবেন কিছু বলবেন না।আর যদিউবা বিড়ালের বা**র মতন কিছু বলে আপনার স্ত্রীকে রক্ষা করতে চান তাহলে ওরা যদি আপনাকে মেরে ফেলার ভয় দেখায় তাহলে নিজেকে বাঁচাতে আপনি আপনার স্ত্রীকে ওদের কাছে ছেড়ে দিয়ে আসবেন!”
“তমা প্লিজ চুপ কর।”
“কেন চুপ করব। গায়ে লাগছে কথাগুলো।ব্যথা পাচ্ছেন আমার কথায়।আমারো সেদিন লেগেছিল এই যে এই মনটায়।আপনার সেইদিনের সেই কথা আর কাজে আমার মনটায় অনেক ব্যথা করেছিল ইভেন এখনো করছে।আপনার মতন একটা কাপুরুষকে ভালোবেসে আমাকে যে এত খেসারত দিতে হবে তা আমি ভাবতেই পারিনি।আমার সাথে যা হওয়ার তা তো হয়েই গেছে এখন আপনার স্ত্রীকেও যদি আপনার এই ভুলের জন্য মূল্য দেওয়া লাগে তাহলে ওর সামনে এই মুখ দেখাতে পারবেন তো!মরেই যাওয়া উচিত আপনার।আপনার মতন কাপুরুষদের বাঁচার কোন অধিকার নেই। আপনার মতন কাপুরুষকে আমি জীবনেও মাফ করতে পারব না।”
.
.
তাড়াতাড়ি সেখান থেকে চলে আসলাম।নিজের রুমে গিয়ে দরজা আটকিয়ে ড্রেসিং টেবিলের কাছে গেলাম।গলার দিকের ওড়নাটা খানিকটা সরিয়ে দিয়ে গলার দিকের আচড়গুলো দেখতে লাগলাম।কি ভয়ানক সেই আচড়গুলো!এই আচড়গুলোর দিকে যতবারই চোখ যায় ততবারি ভয়ে কেঁপে উঠি। অতীতের স্মৃতিগুলো তাজা করতে এই আচড়গুলোই যথেষ্ট।

তানভীরের বাসা থেকে সেদিন আসার পর মনের ভিতরে বারবার সেই খারাপ স্মৃতিগুলো ভাসছিল।বখাটে ছেলেগুলোর হাত থেকে হয়ত সেদিন ওই ২ টা মেয়ে বাঁচতে পারে নি।ভাবতেই কান্না চলে আসল।অনেক কষ্টে এই স্মৃতিটা ভুলে সেদিন ঘুমিয়ে গেলাম।

এরপরের দিন সকালে নিজেকে ভালো করে প্রিপেয়ার করে ভার্সিটি গেলাম।আর তখনি আমার হাতটাই কেউ শক্ত করে ধরল।

“এই কে রে?”
“আমি তানভীর।”

ওকে দেখে ভয়ে কাঁপতে লাগলাম।ও চোখ দুইটা বড় বড় করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।

“এইভাবে আমার হাত ধরলেন কেন?”
“বেশ করেছি।তুমি কি মনে করেছ তুমি তলে তলে এত কিছু করবে আর আমি টের পাবো না।আজকে সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি আমার সব কাপড় ইঁদুর কেটে রেখেছে।আমার রুমের একটা কাপড়ো ইঁদুরগুলো আস্ত রাখে নি।সব কাপড় ইঁদুর কুটিকুটি করে খেয়ে নিয়েছে।ভার্সিটিতে কাপড় ছাড়া কিভাবে আসব মাথায় আসছিল না।পরে বন্ধুর কাছ থেকে ১ দিনের জন্য কাপড় ধার নিয়ে ভার্সিটি আসলাম।সময়মত ভার্সিটির অনুষ্ঠানে আসতে না পারায়, আমি গানে পারফরমেন্স না করায় স্যার ম্যাডাম,বন্ধু বান্ধব ইচ্ছামত কথা শুনিয়েছে।আর এইসব কিছু তোমার জন্য হয়েছে।আর আজকে এই কি কাপড় পড়ে আসছ হ্যা।সালোয়ার কামিজ নাই বাসায়।আজকে তোমাকে ইচ্ছামতো টাইট দিব।এত কিছু করে ফেলবে আর আমি কিছু বুঝতে পারব না তা কিভাবে ভাবলে?বাইকে উঠ।কয়েকদিনের মধ্যে তোমাকে ঠিক করে ফেলব।কার সাথে পাঙ্গা নিয়েছ তা আজ থেকেই বুঝতে পারবে।”

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে