স্যার যখন স্বামী
পার্ট_৭
#লিখা জান্নাতুল ফেরদৌস
এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার আগ পর্যন্ত আমরা গ্রামেই থাকতাম।পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর আমরা ঢাকাতে চলে আসি। আমরা যে এলাকায় ছিলাম সেখানেই সাগররা থাকত। ঢাকায় আমি ইন্টারে পড়ার জন্য কলেজে ভর্তি হলাম।এখান থেকে আমার পড়ালেখা আবার শুরু করলাম। কলেজে আমিসহ আমার এক বান্ধবী একসাথে যেতাম।রাস্তায় একদিন আমার বান্ধবীসহ কলেজের পথে হেঁটে যাচ্ছিলাম।তখনি সাগরের সাথে আমার প্রথম দেখা হয়।
“তিশা কেমন আছিস?”
“জ্বী ভাইয়া, ভালো।”
” তা এই মেয়েটা কে, এলাকায় নতুন নাকি?”
“হ্যা ও… এলাকায় নতুন,ও আমার বান্ধবী ”
“ও,,,আচ্ছা। ”
“হাই,আমি সাগর,আপনার নাম কি?”
” ভাইয়া, ও মেঘ, আমাদের দেরি হয়ে যাচ্ছে,আসি তাহলে ভাইয়া,,”
“আচ্ছা, ঠিক আছে ,,সাবধানে যা,, ”
“জানিস মেঘ ও হচ্ছে আমার চাচাতো ভাই সাগর।
ও,,,আচ্ছা।”
“মেঘ তুই আমার ফ্রেন্ড,, তাই তোকে একটা সত্যি কথা বলি।ও কিন্তু মোটেও ভালো ছেলে না,,একটু স্মার্ট বলে এলাকার প্রায় সব মেয়ে ওর জন্য পাগল। আর ও তার সুযোগ নিয়ে ওদের সাথে ভালবাসার নাটক করে। একেকটা মেয়ের সাথে প্রেম করে,,শখ মিটে গেলে আরেকটার সাথে সেই একি খেলা। ভাই হয় তবুও কথটা বলতে খারাপ লাগছে ,,ওর থেকে একটু সাবধানে থাকিস।”
“হুম, ঠিকছে।”
.
.
এরপরে আমি প্রতিদিন কলেজে যাওয়ার পথে ওকে সহ ওর বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে দেখতে পেতাম।প্রথম প্রথম আমি তিশার কথার সেই আভাস সাগরের মধ্যে দেখি নি।কিন্তু হ্যা ওর পিছনে মেয়েদের লাইন লেগে থাকত সেটা ঠিক বলছে ও,,কিন্তু আস্তে আস্তে বুঝতে পারি তিশার কথায় ঠিক। ওকে দেখতে যতটা ভালোমানুষ মনে হয় ও আসলে তা না। ও হচ্ছে সুযোগের সন্ধানী মানুষ। আজ এর সাথে তো কাল ওর সাথে মিথ্যা ভালবাসার নাটক চালাচ্ছে।তিশা আমাকে আগে থেকে সর্তক করে দিয়েছে তাই আমি যতটা সম্ভব রাস্তাঘাটে সাবধানে চলি।বিশ্বাস নেই এলাকার সব মেয়ের সাথে এর মোটামুটি ভালো লাইন আছে,, না জানি কখন আমাকে ফাঁদে ফেলায় তাই একটু সর্তকতা অবলম্বন করি। এর কয়েকদিন পর দেখি ও সবসময় আমাকে ফলো করে,,,একদিন সাহস করে আমার সামনে এসে কথা বলল,,
“এই যে মেঘ তুমি এমন কেন বলত?”
“মানে?”
“এখানে আসছ একবারো আমার সাথে কথা বলোনি,”
“কেন আপনি কোন স্পেশাল লোক নাকি যে আমি সেধে আপনার সাথে কথা বলতে আসবো। ”
“না ঠিক তা না,,আসলে এখানে আসছ তুমি এতদিন হল,, তো দেখতেই পারছ আমার পিছনে মেয়েদের লাইন কেমন? সবাই আমার সাথে কথা বলতে আসে,একমাত্র তুমি ছাড়া,,, ”
“ও,,,,”
“আচ্ছা মেঘ আমরা ফ্রেন্ড হতে পারি না,,”
“না,,”
“কেন,,”
“আমি আসলে অপরিচিত কারো সাথে বন্ধুত্ব করি না,”
“আমি তো তোমার অপরিচিত না,,আমাকে তুমি চিন,,আমি তিশার চাচাতো ভাই,,প্লিজ শুধু বন্ধু হবো,,,অন্য কিছু না,,”
“সরি,,”
.
.
এইভাবেই প্রায়ই প্রতিদিনই আমার পিছনে লেগে থাকত আমার সাথে বন্ধুত্ব করার জন্য।পরে বিরক্ত হয়ে একপ্রকার বাধ্য হয়েই ওর সাথে বন্ধুত্ব করেই ফেলি।এরপরে হঠাৎ করে একদিন আমাকে সবার সামনে প্রপোজ করে বসে,,,তখনি বুঝলাম তিশার কথাই ঠিক ও আমাকে পটানোর জন্য এইসব করছে,,, ওর আসল উদ্দেশ্য আমি বুঝে গেছি।তাই ওকে না করে দিলাম।কিন্তু সেও ছাড়বার পাত্র নয়,,,আমার পিছনে প্রায়ই লেগে থাকত।হঠাৎ করে তিশার শরীর খারাপ থাকায় ওর পরবর্তীতে আমি আমার কলেজের ফ্রেন্ড রিশাবের সাথে একসাথে কলেজ আসতাম যেতাম।একা আসতে যেতে ভয় লাগত তাই ওকে সাথে নিয়ে যেতাম। আর সেটা সাগর একদিন দেখে ফেলে।পরেরদিন আমি শুনতে পারি আমার সেই ফ্রেন্ডকে কতগুলো ছেলে এসে মেরে চলে যায়। ওকে দেখার জন্য ওর বাসায় যায়। আমার ফ্রেন্ডকে ওরা এত মেরেছে যে ও দাঁড়াবার মতন অবস্থায় নায়।বুঝতে পেরেছি এই কাজ সাগরের।ওর সেই প্রপোজ মেনে না নেওয়া আর আমার সেই ফ্রেন্ডের সাথে একসাথে কলেজ আসা যাওয়া এটা ও মেনে নিতে পারেনি,, এই জিনিসটা ওর ইগোতে লেগেছিল।তাই আমার ফ্রেন্ডকে ইচ্ছেমত ও সহ ওর বন্ধুরা মেরেছে।এতে আমার খুব রাগ উঠে গিয়েছিল সেদিন,,,ও ওর ফ্রেন্ডদের সাথে সবসময় যেখানে আড্ডা দেয় সেখানে গিয়ে পাব্লিক প্লেসে ওর বন্ধুদের সামনে ওকে গাল কষে একটা থাপ্পড় মারি।তারপর কিছু কথা শুনিয়ে চলে আসি।
.
.
কয়েকমাস পর ওর মধ্যে পরিবর্তন আসে। আগের সেই সাগর আর আগের মতন নেই,,ও অনেক চেঞ্জ হতে থাকে,,,আগের মতন আর বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেয় না ,,,মেয়েরা ওর পিছনে লাগলেও ও এখন তার সুযোগ নিয়ে ওদের সাথে মিশে না,,,চাকরি করে সময় কাটাই,,সবার মুখে এখন ওর প্রশংসা শুনি। হ্যা আমিও দেখেছি ও আর আগের সেই নেই।কিন্তু ওর একটা জিনিসি খারাপ লাগত আমার পিছনে ঘুরাঘুরি। এখন ও সেই একি কাজ,, একদিন আবারও সে প্রপোজ করে বসে,,আমি এবার ও না করে দিই।এরপরেরদিন সকালে আমার মোবাইলে একটা মেসেজ আসে ও নাকি সুইসাইড করতে গিয়েছিল।এখন সে মেডিকেলে ভর্তি আছে।আমি দৌড়ে সে মেডিকেলে চলে যাই,,গিয়ে দেখি ওর হাত পায়ে ব্যান্ডেজ করা। ব্লেড দিয়ে ও নিজের হাত পা কেটেছে ।
“এইসব কি করেছেন আপনি? এভাবে নিজের ক্ষতিটা করার মানে কি?”
“তোমার জন্য এইসব হয়েছে।আমি জানি আমি আগে খারাপ ছিলাম,, তোমার সেইদিনের সেই থাপ্পড় খেয়ে বুঝেছি আমি কত খারাপ,, তাই সেদিনের পর থেকে নিজেকে পরিবর্তন করি।আসলে আমাকে এইভাবে কেউ থাপ্পড় মেরে আমার ভুলগুলো কেউ ধরে দেয় নি।কিন্তু তুমি আমার সেই ভুল তুলে ধরে আমাকে সঠিক রাস্তা দেখিয়েছো,,,এরপর থেকে আমি তোমাকে সত্যিকার অর্থে ভালবেসে ফেলি।কিন্তু তোমাকে সত্যিকারে যখন ভালবেসে ফেলেছি তখন থেকে আবারো তোমার পিছনে লাগি।তোমার অবহেলা আমি সয়ে নিতাম এতদিন কিন্তু সেইদিন আমার প্রপোজাল তুমি একসেপ্ট না করায় আমি পুরোপুরি ভেঙ্গে পড়ি,, তোমার এই না শব্দটা আমার সহ্য হচ্ছিল না খুব কষ্ট হচ্ছিল তাই নিজেকে শেষ করে দিতে চেয়েছিলাম,,,যদি বেঁচে থেকে তোমার ভালবাসা না পায় তাহলে এই জীবন রাখার মানেটা কি? এর থেকে মরে যাওয়া অনেক ভালো। ”
.
.
ওর এই কথা শুনে সেদিন বুঝতে পেরেছিলাম,, এই পাগলকে আর কষ্ট দেওয়া চলবে না,,,ও শুধু আমাকে শুধু আমাকেই ভালবাসে।সেদিন থেকেই আমাদের ভালবাসা শুরু হয়।ওকে আমি থাপ্পড় মেরে যে ভুল করেছিলাম সেদিনের সেই ভুলের জন্য আমি ওর কাছে ক্ষমা চেয়ে নিয়েছিলাম। ও বলেছিলো সেই দিনের সেই থাপ্পড়টা ওর জন্য দরকার ছিল নাহলে সে নিজের ভুল বুঝতে পারত না,,এতে ক্ষমা চাওয়ার কিছু নেই।কিন্তু আমি ভুল ছিলাম,, সেইদিনের সেই ঘটনা ওর ইগোতে খুব লেগেছিল তাই আমার উপর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য ও অনেক আগে থেকে সব প্ল্যান করে রেখেছিল। আমার সাথে এতদিন যে ভালবাসার নাটক করেছিল,,সেটাও ওর প্ল্যানের মধ্যে ছিল,, আমি ওকে পাব্লিক প্লেসে যেভাবে থাপ্পড় মেরে অপমান করেছিলাম সাগরও ঠিক একিভাবে তার প্ল্যান অনুযায়ী আমার বিয়ের দিন গ্রামের মানুষের সামনে আমাকে আর আমার পরিবারকে অপমান করিয়েছিল।
হঠাৎ কলিং বেলের আওয়াজ পেলাম।এই সময়ে কে এল,,ছবিটা বিছানায় ফেলে দিয়ে তাড়াতাড়ি করে দরজাটা খুলতে চলে গেলাম।দরজা খুলে আমি যা দেখলাম তার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না,, অনেক অবাকতো হয়েছি তারসাথে নিজের চোখকে আমি বিশ্বাস করাতে পারছি না,,
আপনি!!??
(আপনাদের কি মনে হয় মেঘ কাকে দেখে অবাক হয়েছে যার জন্য ও নিজের চোখকে বিশ্বাস করাতে পারছে না,ওর জীবনের অতীত ফিরে এসেছে নাকি অন্য কেউ? জানতে হলে আমার এই গল্পের সাথে থাকুন)