স্যার যখন স্বামী
পার্ট_২৯ Last part
#লিখা জান্নাতুল ফেরদৌস
এরমধ্যে আমি ঢাকা ভার্সিটির শিক্ষকতা পদে ঢুকলাম।মেয়েটাকে আমি তখনো ভুলতে পারেনি।আমার জীবনের প্রথম ভালবাসা বলে কথা।এত সহজে কি করে ভুলে যাব।ওর কথা সবসময় মনে পড়ত।ওইদিনের সেই শেষ দুষ্টুমির জন্য ওকে শাস্তি দিতে চেয়েছিলাম কিন্তু ৫টা বছর ধরে শাস্তি নিজেই পেলাম।
আমি অনার্স ১ম বর্ষে নিউ ছাত্র ছাত্রীদের ক্লাস নেওয়ার সময় হঠাৎ করে সেই মেয়েটাকে আমার ক্লাসে দেখি।৫টা বছর পর ওকে আমি আবার দেখি।ওকে দেখে মনে হল আকাশে চাঁদ পেয়ে গিয়েছি।এত খুশি লাগছিল বলে বুঝাতে পারবো না।অবশ্য এভাবে ওকে আমাদের ডিপার্টমেন্টে পাওয়া অনেকটা মিরাক্কালের মতনই ছিল তা নাহলে কিভাবে এই গাধী স্টুডেন্ট এখানে গণিতও করছে যে কিনা গণিতে একেবারে কাঁচা।
এই বলে মেঘের দিকে তাকালাম।এবার ওর সেই ভয় পাওয়া ফেইসটায় রাগ আর লজ্জার মিশ্রণ দেখতে পাচ্ছি।
.
.
এরপর ভাবলাম ৫টা বছর ওর জন্য অনেক ওয়েট করেছি,নিজেও অনেক শাস্তি পেয়েছি আর না।ও তো আগের সেই পিচ্চি নেই ছেলেমানুষিটাও আগের মতন নেই যদিউ পিচ্চি পিচ্চি ভাবটা এখনো ঠিক আগের মতন আছে।এখনতো আর প্রেম করার বয়স নেই ভাবলাম ওর বাবা মায়ের কাছে আমি বিয়ের প্রস্তাব দিব।ওকে একেবারে সারাজীবনের মতন আপন করে তারপর বউয়ের সাথে প্রেম করব।কারণ ওকে আমি এক ভুলে ১ম বার হারিয়েছি ২য় বার একি ভুল করে ওকে হারাতে চায় না।
কিন্তু এইসবের আগে ওর কি পছন্দ না পছন্দ ওর সম্পর্কে সব ইনফরমেশন নিতে হবে।এজন্য ওর বেস্ট ফ্রেন্ডকে আমি হাত করলাম।ওর বেস্ট ফ্রেন্ডের সাথে বন্ধুত্ব করলাম।জানতে পারলাম আমার ভালবাসার মানুষটার নাকি আরেকজনের সাথে রিলেশন আছে।মনে হচ্ছিল আমার পুরো দুনিয়াটা উল্টে গেছে।কয়েকদিন আগে ওকে আমি মাত্র পেলাম ভাবলাম আমার কষ্টের দিন শেষ।কিন্তু না এতো দেখি আমার কষ্টের মাত্রা আরো বেড়ে গেল।তখন ওর উপর এত্ত রাগ হচ্ছিল ইচ্ছা করছিল ওর গলাটা টিপে মেরে ফেলি।আবার আমাকে কষ্ট দেওয়ার জন্য সে এখানে এসেছে।৫টা বছর আমাকে শাস্তি দিয়ে কি ওর শান্তি হল না যে নতুন করে আবার আমার জীবনে দেখা দিয়ে আমাকে আগের থেকেও বড় শাস্তি দিয়ে তিল তিল করে শেষ করে দিতে চাচ্ছে।অনেক কষ্ট হচ্ছিল তখন।কি করব না করব বুঝতে পারছিলাম না।পরে অনেক কষ্টে নিজের মনকে বুঝালাম ভালবাসা মানে যে ভালবাসার মানুষটাকে পেতে হবে এমন কোন কথা নেই।ভালাবাসার মানুষের মুখে হাসি ফুটানো একজনের সত্যিকার প্রেমিকের রুপ।তাই ভাবলাম ও যাকে নিয়ে খুশি আছে তাকে নিয়েই ও খুশি থাকুক।আমার আর কিছু চাই না।কিন্তু মনের মধ্যে একটা দুশ্চিন্তা ছিল আমি ওকে যতটা ভালবাসি ঠিক ততটাই কি ওর ভালবাসার মানুষ ওকে ভালবাসে!?তা আমার জানা ছিল না।তাই সেটা নিশ্চিত হওয়ার জন্য ওর প্রেমিকের সম্পর্কে সব খোঁজখবর নিলাম।খোঁজ নিয়ে জানলাম আমার ভালবাসার মানুষটার প্রেমিক একটা প্রতারক।শেষ পর্যন্ত একটা প্রতারকের সাথে ওর প্রেম হল।একবার ভাবলাম ওকে সব সত্যি কথা বলে দিবো আবার ভাবলাম ওতো এখন ভালবাসায় অন্ধ বুঝাতে গেলে উল্টো আমাকে ভুল বুঝবে।তাই ওকে আর কিছু বলতে পারলাম না।ভাবলাম আগে প্রমাণ যোগার করব আর তারপরিই সব সত্যি কথা বলে দিবো।প্রমাণ যোগার করার পর আমার ভালবাসার মানুষটাকে সব সত্যি কথা বলে দিতে চেয়েছিলাম কিন্তু পরক্ষণেই ভাবলাম এই সত্যি কথা ওর কাছে ফাঁস হলে ও উল্টো কি করে বসে,ওর মনের অবস্থা কি হবে এইসব ভেবে আর কিছু বলতে চেয়েও বলতে পারলাম না।
.
.
এরপরে শুনি ও নাকি বিয়ে করবে।কিন্তু ফাজিল মেয়েটা চুপচাপ বিয়ে করে ফেলার প্ল্যান করল আমাকে দাওয়াতও দিলো না।ওর বান্ধবীকে বিয়ের কার্ড দেওয়ার আগের দিনেই ওকে মোবাইলে ওর বিয়ের কথা বলে।আর ওর বান্ধবী এই খুশিতে আমাকে মোবাইল করে বলে দিল ওর বেস্ট ফ্রেন্ড নাকি বিয়ে করছে।এই কথা শুনার পর সারাটারাত ঘুমাতে পারলাম না।পরেরদিন ওকে দেখা মাত্র ওর মুখ থেকে শুনে নিলাম সত্যিই সে ওই ফ্রড,প্রতারক ছেলেটাকে বিয়ে করছে।
.
.
ওকে বিয়ের বউ সাজে দেখার খুব শখ ছিলো।আমি জানতাম ও আমাকে বিয়ের দাওয়াত ভুলেও দিবে না তাই নির্লজ্জের মতন আমিই ওর কাছ থেকে বিয়ের দাওয়াত চেয়ে নিলাম।
ওর বিয়ের দিন ওদের বাড়িতে গেলাম।যেখানে ওর সাথে আমার অনেক স্মৃতি আছে।সেগুলো না চাইতেইও মনে পড়ে গেল।ওকে বউয়ের সাজে দেখে মনটা ভরে গেল।ইশ যদি এই বিয়ের সাজ ও আমার জন্য সাজত।ও আমার বউ হত তাহলে কতই না ভালো হত।
বিয়ের দিনে বর নাকি পালিয়ে গেছে।আরো অনেক এমন কান্ড হল যে বিয়ে বন্ধ হওয়ার মতন অবস্থায় পরিণত হল।অবশেষে অনেক কিছুর পর আমার ভালবাসার মানুষটাকে আমি নিজেই বিয়ে করে নিলাম।একদিকে ওর জন্য দুঃখ লাগলেও আরেকদিকে নিজের জন্য খুশি লাগছে।ওকে আমি বউ করে নিলাম সারাজীবনের জন্য।
.
.
“মেঘ, কাঁদছ কেন?আমার গল্পটা সুন্দর হয় নি?”
“আমি জানি তোমার সেই ভালবাসার মানুষটা কে?”
“হ্যা জানবেই তো।আমাকে এত কষ্ট যে দিয়েছে সে না জানলে আর কে জানবে।”
“সে মেয়েটা…বলে ওর কথা আটকে গেল।”
“হ্যা সেই মেয়েটা তুমি মেঘ।যে এখন আমার সাথে বসে আমার লাইফের ভালবাসার গল্প শুনছে আর বর্তমানে সে আমার স্ত্রী।আমার ভালবাসার মানুষ। আর আমার বোকা বউটা যখন আমার বাসায় প্রথম এসে আমাদের বেডরুমের সাজ,আলমারি ভর্তি শাড়ি, থ্রিপীচ, বারান্দার ফুল, দোলনা বলতে গেলে ওর পছন্দ অনুযায়ী সবকিছু সাজানো দেখে অবাক হয়েছিল।এর পরেই সে ভেবে নিয়েছিলো আমি অন্য কাউকে ভালবাসি।বিয়ের দিন রাতে আমাকে জিজ্ঞাস করে বসল আমি নাকি অন্য কাউকে ভালবাসি।বোকা পিচ্চি মেয়েটার কাছে এই কথা শুনে হাসবো না কাঁদবো বুঝতে পারছিলাম না।”
“সরিতো আমি তখন বুঝতে পারেনি।আমার এই ভুলের জন্য আমি নিজেসহ তোমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি।সেজন্য extremely sorry.এইভুল আর ২য় বার কখনো করব না।তোমাকে আর কখনোই ভুল বুঝবো না।আর তুমি যদি আমার জীবনে আরো আগে আসতে তাহলে এত ঝামেলা হত না। তোমাকে এত কষ্টের মধ্যে দিয়ে দিন পার করতে হত না।অতীতে তুমি আমার জন্য যে কষ্ট পেয়েছ তা আমি আমার ভালবাসা দিয়ে পূরণ করে দিব তাহলে হবে তো মিস্টার।”
“ম্যাডামকে আর ভুল বুঝার সুযোগ দিলেই না।সেই ভুল আমি আর করছি না।আমি পুরোটা জীবনে তোমাকে নিয়ে সুখে শান্তিতে কাটাতে চাই।আর হ্যা আমাকে একটু বেশি ভালবাসা দিতে হবে তাহলে তোমার সব ভুল ক্ষেমা করে দিবো ম্যাডাম।”
.
.
“এই নেন পেপার”
“কিসের পেপার।”
“ডির্ভোস পেপার ভেবে আপনি যেটাতে সাইন করেছেন ম্যাডাম সেই পেপার।”
“এটা আমাকে দিচ্ছ কেন?”
“দেখোই না আগে।”
“কিহ!ফাজিল ছেলে।এটাতো ডির্ভোস পেপার না।এটা হচ্ছে একটা এগ্রিমেন্ট পেপার।যেখানে আমার সাইন আছে।ইউ…. তুমি আমাকে আগে মিথ্যা বলছ যে এইটা ডির্ভোস পেপার।আর আমি সেটা ভেবে সাইন করছি।”
“যাকে এত ভালবাসি তাকে এত সহজে নিজের জীবন থেকে কিভাবে সরিয়ে দিবো বলত?তখন তোমার মাথায় পাগলামির ভূত ঢুকছিল তাই ভাবলাম এই সুযোগ।এই সুযোগ ২য় বার পাবো না।তাড়াতাড়ি করে একটা এগ্রিমেন্ট পেপার বানিয়ে ফেললাম যেখানে লিখা আছে আমার জন্য তোমাকে কি করতে হবে না হবে।কথার নড়চড় হলেই এবার তোমার খবর আছে।আমাকে ছেড়ে এবার কেমনে যাও সেটা আমিও দেখবো।ছেড়ে যেতে চাইলেই দেখছতো এই পেপার। এই পেপারের পাওয়ার কিন্তু এখন অনেক।”
ফাজিল ছেলে,বিচ্ছু ছেলে বলে লাগালাম কয়েকটা ধুমতাড়াকা মার।এই ছিল তোমার মনে মনে।
“এই এই স্বামীকে কেউ এভাবে মারে।গুনাহ হবে তো।”
“আচ্ছা আর এই ফাইজলামি যে করছ তার বেলায় কিছুই না।আমার সাথে ফাজলামি করতে আসলে এইরকম মার সহ্য করতে হবে।”
“এতো দেখি আগের মতন বান্দরনী হয়ে গেছে।সবসময় এরকমই থাকবে।তোমার এই বান্দরনী রুপ দেখেই তো আমি তোমার প্রেমে পড়ছি।”
“তাই না।আমি বান্দরনী।আরো কয়েকটা মার খাও।”সাথে সাথে ও আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল।
.
.
“আচ্ছা তন্ময় আমাকে বললে না যে তুমি পেনড্রাইভটা কোথা থেকে পেলে?”
“যে তোমার আমার মঙ্গল চায় সেই এই পেনড্রাইভ পাঠিয়েছে।মনে কর সে আমাদের well wisher.”
“সে well wisher এর নাম কি?”
“সে তোমাকে নাম জানাতে নিষেধ করেছে তাই নাম বলা যাবে না।কিন্তু বন্ধুর মতন সে সবসময় তোমার আমার পাশে থাকবে।”
“আল্লাহ তার ভালো করুক।”
“হুম ”
.
.
“এই আমাকে কোন গিফট দিবে না।”
“আইচ্ছা আমাকে এতদিন কষ্ট দিয়ে গিফট চাও।কোন গিফট নাই।”
“প্লিজ পুরানো কথা টেনে আনছো কেন?sorry তো বলেই দিলাম।”
“ওরে আমার পিচ্চি বউরে আমি just মজা করছিলাম।দেখি তোমার পা টা দাও ।”
“কেন?”
“এত প্রশ্ন কেন কর।যেটা করতে বলছি সেটা কর।”
“ওকে ওকে।”
এরপর ও আমার পায়ে পায়েল পড়িয়ে দিল।
“হুম এখন আমাকে গিফট দাও।”
“ও মা তোমাকে আবার কিসের গিফট দিবো।”
“এই this is cheating.নিজের বেলায় ভালো বুঝ আর আমার বেলায়।”
“আচ্ছা আমি না সিরিয়াসলি ভুলে গেছি।আমার কাছে আপাতত এখন কিছু নাই।”
“কিন্তু আমিতো এইসব কথা শুনবো না।আমার গিফট চাই মানে চাইইইই….”
“আচ্ছা কি চাই তোমার,”
“তোমার মতন একটা ছোট পরী চাই।”এই বলে আমার কপালে চুমো দিল।সেদিন লজ্জাই ওর বুকে মুখ লুকালাম।
“মেঘ এতদিনতো গণিত ক্লাস করলাম এখন চল কেমেস্ট্রি আর বায়োলজি ক্লাস করি।”
“মা..মা..মানে।এই তুমি আমার দিকে এইভাবে তাকিয়ে আছ কেন?ওর চোখে তখন একধরণের নেশা দেখছিলাম।ওর থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে আমি আস্তে আস্তে পিছাতে লাগলাম।”
“ওমা এখন ক্লাস নিবোনা।”
“কি ক্লাস? কিসের ক্লাস?”আমি এখন…কথাটা শেষ করার আগেই ও আমার মুখটা বন্ধ করে দিল।
ওকে নিয়ে আমার বিবাহিত জীবনের একটা বছর আল্লাহর রহমতে সুখের কাটল।আমি এখন আমার বিবাহিত জীবনে আমার স্বামীকে নিয়ে বেশ সুখেই আছি।আর কয়েকবছর পরেই আমি গ্রেজুয়েশন কমপ্লিট করব।ভাবছি চাকরী করলেই ওর ওইখানে শিক্ষকতা পদে চাকরী করব।যাতে ওকে সবসময় নিজের চোখের কাছে রাখতে পারি।সবাই আমাদের জন্য দুয়া করবেন।
আর হ্যা সবাই আবার এটা ভাবিয়েন না এটা কোন বাস্তব গল্প।এই গল্প সম্পূর্ণ আমার কল্পনা থেকে।তন্ময়ের যে চরিত্র এখানে প্রকাশ পেয়েছে সেটা আমার কল্পনা থেকে।বাস্তবে আর এই আধুনিক যুগে তন্ময়ের মতন স্বামী পাওয়া অনেকটা কল্পনার মতন।সব মেয়েদের ভাগ্যে এইরকম স্বামী জুটে না।শতে বা হাজারে এইরকম চরিত্র কয়েকজনের ক্ষেত্রে মিললে মিলতে পারে।
সর্বোপরি ভালবাসার মানুষের উপর বিশ্বাস রাখুন কারণ ভালবাসা বিশ্বাসের উপর গড়ে উঠে। ভালবাসার মানুষটাকে ভালবেসে সবসময় আগলিয়ে রাখুন।আর ভালবাসার মানুষকে মর্যাদা দিতে শিখুন।
নতুন লেখিকা হিসেবে এই গল্পে আমি আপনাদের কাছ থেকে অনেক অনেক ভালবাসা পেয়েছি।সেজন্য আপনাদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ।Thanks everyone.এই গল্পের সিজন ২ আমার অনার্স ২য় বর্ষের পরীক্ষার রেজাল্ট আর পরিস্থিতির উপর নির্ভর করছে।যদি সব কিছু স্বাভাবিক থাকে তাহলে ইনশাল্লাহ সিজন ২ লিখতে পারব।সবাই আমার জন্য বেশি বেশি দুয়া করবেন আর এইরকমভাবেই আমার গল্পের সার্পোট করবেন। ভুলত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন।
সমাপ্ত
গল্পটা খুব ভাল হয়েছে।এক কথায় অসাধার। গল্পের মাঝে এসে কেন জানি আমার বুকটা হঠাৎ মোচড় দিয়ে উঠল,যখন গল্পটা পড়ছিলাম তখন নিজেকে ‘তন্ময়’ মনে হচ্ছিল আর মনে হচ্ছিল এই বুঝি আমার মেঘ কে হারিয়ে ফেললাম।
ধন্যবাদ আপনাকে
এইরকম একটা গল্পের জন্য@জান্নাতুল আপু।??
Dhonnobad apnake comment korar jonno… Apne niomito golpo porar jonno amader website e apne apnar gmail diye account khole rakhon.. tar pore comment korte parben sora sori…
3 ba 4 din pore amora amader apps publish korbo oi somay apps ta download kore use korte parben
Nice story
Khub earings hoyacha golpo ta